তুমি আমার পর্ব-১০

0
969

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_10

গাড়ি ছুটছে তার আপন গতিতে। বড় বড় দালান পেরিয়ে বড় বড় ফসলের মাঠে দেখা যাচ্ছে এখন। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, রাস্তার পাশে বড় বড় গাছ সারিবদ্ধ হয়ে আছে। নিশি তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। যত দুর চোখ যাচ্ছে শুধু সবুজ আর সবুজ। নিশি গাড়ির দরজার বাইরে মুখটা নিয়ে প্রান ভরে শ্বাস নিলো।
গাড়ি থেমেছে একটা বড় বিলের পাশে। বিলের জলে ভেসে আছে লাল রং এর পদ্ম ফুল। পুব দিকের আকাশটা লাল আভায় পরিনত হয়েছে সূর্যের আলোতে। একটু পরেই সূর্য ডুবে অন্ধকার নেমে আসবে। নিশি হাসি মুখে চারিদিক মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে উপভোগ করছে। হঠাৎ করেই নজর যায় রেহান নামক ব্যক্তিটির দিকে যে আপতত নিশির দিকে হাসোজ্জ্বল চেহারা নিয়র তাকিয়ে আছে। রেহানের চোখে চোখ পড়াতেই লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলে নিশি। রেহান তা দেখে মুচকি হেসে বলে

–নামো গাড়ি থেকো।

নিশি রেহান দুজনেই এক সাথে গাড়ি থেকে নেমে বের হয়। কয়েক জন কপোতকপোতিও আছে এখানে। এরকম জায়াগতে নিশি এই প্রথম বার এসেছে। চারিদিকে কি সুন্দর মুক্ত বাতাস বইছে। নিশির খোপা থেকে ছোট ছোট চুল গুলা বাতাসে দোল খাচ্ছো, বাতাসের কারনে বার বার কপালের ছোট চুল গুলা মুখের সামনে আছরে পড়ছে আর নিশি অবাদ্ধ চুল গুলা কানে গুজে দিছে।

রেহান নিশির পাশে দাঁড়িয়ে বলে

–কেমন জায়গাটা?

–অনেক সুন্দর। আপনি কি এর আগেও এখানে এসেছিলেন।

–হুমম এটা আমার প্রিয় একটা জায়গা মন ভীষণ্ন থাকলে এখানে আসি।

–একা আসতেন?

রেহান নিশির এই প্রশ্নের উত্ত না দিয়ে বলে

–বিলের সামনে চলো।

নিশিও আর কিছু না বলে রেহানের পাশাপাশি হাটছে শাড়ির কুচিটা ধরে॥ বিলের পাশে দাঁড়িয়ে নিশির মনে এক ইচ্ছে জাগলো বিলের পারে পা ডুবাতে। কিন্তু নিশি রেহানের ভয়ে কথাটা ঠিক বলতে পারছে না হাসফাস করছে নিশি কথা বলার জন্য। নিশির এমন অবস্থা দেখে রেহানেই বলে উঠে।

–বিলের জলে পা ডুবাতে চাও।

নিশি রেহান দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে মাথা নাড়ায়। রেহানও ঠোটের কোনে হাসি নিয়ে বলে

–যাও।

নিশি এক দৌড়ে বিলের কাছে এসে পড়ে। রেহান নিশির পিছন পিছন ধীর পায়ে হেটে আসে। নিশি পায়ের জুতা খুলে শাড়িটা দু হাত দিয়ে কিছুটা উপর তুলে যাতে ভিজে না যায়। নিশি বিলের জলের পা ডুবিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। রেহানও চুপচাপ নিশিকে দেখে যাচ্ছে। হঠাৎ করে নিশি রেহানের দিকে ফিরে বলে

–একটা ছবি তুলে দিবেন আমাকে।

–ফোনটা দাও তোমার।

–এই যা আমার ফোনটা গাড়িতে ফেলে রেখে এসেছি আমি নিয়ে আসি দাড়ান।

–না না থাক তোমাকে যেতে হবে না আমার ফোন দিয়ে তুলে দিছি পরে তুমি ছবি গুলা নিয়ে নিও তোমার ফোনে আমার ফোন থেকে।

–আচ্ছা।

রেহান একটা ক্লিক করতে নিশি বলে উঠে

–থাক আর তুলতে হবে না।

–কেন?

–এমনি।

নিশির ভীষন লজ্জা লাগছে রেহানের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে তাই না করে দিলো। কিন্তু রেহানের নিশির আড়ালে অনেক গুলাই ছবি তুলে নেয়। রেহান এবার বলে উঠে

–পানি থেকে উঠে এসে না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

নিশিও বাধ্য মেয়ের মতো উঠে আসে। না হলে পরে দেখা যাবে রেহান নিশিকে বকাঝকা শুরু করে দিবে। রেহান পুনরায় বলে

–চা খাবে।

হুমমমম।

–তুমি দাড়াও আমি নিয়ে আসি।

রেহান চলে যায় আর নিশি একা একা দাঁড়িয়ে থাকে। নিশির থেকে প্রায় কিছুটা দুর দুই জন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে যারা আপতত নিশির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটা ছেলর বলে উঠে

–ভাই মেয়েটাকে দেখেছিস কি হট।

–হুমরে ভাই ফিগারটা তো আরও আর্কষনীয়।

–চল মেয়েটার কাছে যাই।

রেহান ছেলে গুলা পাশ দিয়ে যাওয়া সময় কথা গুলা শুনে ফেলে। এটাও বুঝতে পারে নিশিকে ইংগিত করেই কথা গুলা বলছে। ছেলে গুলা নিশির দিকে যেতে চাইলে রেহান সামনে এসে দাড়ায়। রেহান এমন ভাবে ছেলে গুলার দিকে তাকায় ছেলে গুলা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। একটা ছেলে বলে উঠে

–কে রে ভাই এভাবে আমাদের পথ আটকাস।

রেহান ছেলেটার কলার ধরে বলে

–যে মেয়েটার নামে এত বাজে কথা বলেছিস সেই মেয়েটা হাসবেন্ড আমি। তদের সাহস কি করে হলে ওকে নিয়ে খারাপ কথা বলার।

হেংলা পাতলা ছেলেটার কাছে যেন রেহানকে একজন ধানবেই মনে হচ্ছে। ঠাস করেই চড় মেরে বসে ছেলেটার গালে।

–ভাই আমাদের ভুল হয়ে গেছে আর এমন করবো না।

–নেক্সট টাইম যদি দেখি কোনো মেয়েকে বাজে কথা বলেছিস তাহলে মেরে হাড় ভেঙ্গে দিবো বুঝলি।

রেহানের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে ছেলে গুলা দৌড়ে চলে গেলো। রেহান নিজের রাগটা খুব কষ্টে কন্ট্রোল করে। ইদানিং নিশির দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেই রেহানের গা জ্বলে যায়। কিন্তু এটা নিশির প্রতি ভালোবাসা নাকি দায়িত্ব বোধ সেটা এখনও রেহান বুঝে উঠতে পারছে। রেহান নিশির দিকে ফিরে তাকাতেই মেজাজ আবার গরম হয়ে যায়। এবার রাগ উঠছে খুব নিশির উপর রেহানের মনে হচ্ছে ছেলে গুলার কোনো দোষ নেই দোষ হচ্ছে নিশির,, শাড়ি পড়ে যদি কোনো মেয়ে এভাবে বডি সেইপ দেখায় তাহলে তার উপর ছেলেদের খারাপ নজর পড়বেই এটাই স্বাভাবিক। নাকের পাটা ফুলে আসছে রেহানের দাতের চোয়াল শক্ত করে রেখে নিশির দিকে এগিয়ে যায় আর বলে

–এই মেয়ে তোমাকে বলেছি না শাড়ি সামলে রাখবে। শাড়ি যখন পড়তে পারো না তখন পড়ো কেন?

নিশি ভ্যাবলার মতো রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ করে রেহানের কি হয়ে গেলো এটা ভেবে। নিশির এমন ভ্যাবলা মার্কা চেহারা দেখে রেহানের আরও রাগ উঠে যায়।

–এই মেয়ে তুমি কি বোকা কথা বুঝো না। শাড়িটা ঠিক করতে বলেছি আমি।

নিশি এবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে পেট থেকে শাড়িটা সরে গেছে যার জন্য সাদা পেটটা দৃশ্যমান হয়ে আছে। নিশি তাড়াতাড়ি শাড়িটা ঠিক করে রেহানের দিকে মলিন চোখে তাকায়।

–শাড়ি যখন সামালাতেই পারো না তখন শাড়ি পড়ো কেন হুম? নাকি নিজের শরীর দেখাতে খুব ভালো লাগে মানুষজন।

নিশি রেহানের কথায় পুরাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। নিশি ভাবতেই পারে নি রেহান এভাবে ওকে বলতে পারে। নিশি তো ইচ্ছে করে এমন করে নি ভুলে শাড়িটা সড়ে গিয়েছিলো তার জন্য রেহান এভাবে বলবে। না চাওয়া স্বস্তেও নিশির চোখ বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। নিশির কান্না দেখে রেহান রেগে বলে উঠে

–এই তোমরা মেয়েরা এমন কেন বলো তো কেউ কিছু বললেই এমন প্যাচ প্যাচ করে কাদো কেন?

নিশি নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। আশে পাশের মানুষজন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে রেহান আর নিশির দিকে। আশেপাশের মানুষজনদের দেখে রেহান নিশির বা হাতটা ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজেও এসে ড্রাইভিং সিটে বসে চুপচাপ গাড়ি চালাতে শুরু করে। পুরাটা রাস্তা নিশি নিচের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কান্না করেছে। গাড়ি থামে রহমান ভিলার সামনে রেহান নিশিকে বলে

–তোমার বডির সাইজ কত?

নিশির লাল আর ফোলা চোখ গুলা দিয়ে রেহানের দিকে আবাক দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু রেহানের নজর সামনের রাস্তার দিকে।

–তোমাকে কিছু জিঙ্গেসা করছি আমি।

–কেন আমার বডির সাইজ জেনে আপনি কি করবেন? [ভাঙ্গা গলায়]

রেহান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে

–তোমাকে বলতে বলছি বলবা উল্টা প্রশ্ন করতে বলে নি।

নিশিও বাধ্য মেয়ের মতো বডির সাইজটা বলে দেয়।

–এবার বাসায় যাও।

নিশি গাড়ি থেকে নেমে বাসার গেইটে ডুকতেই রেহান গাড়ি নিয়ে চলে যায়। নিশির খুব কান্না পাচ্ছে রেহানের আজকের ব্যবহারের জন্য। তাই এক প্রকার দ্রুত পায়েই বাড়ির ভিতরে ডুকে পড়ে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে