#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_8
ভোরের আলো চোখ পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে যায় রেহানের। ঘুম ভাঙ্গার পরপরেই বুঝতে পারছে বুকের উপর ভারি কিছু একটা জিনিস রয়েছে যেটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে রেখেছে। নিভুনিভু চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আসলে তার বুকের উপর ঠিক কি আছে। রেহান এবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নিশি ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু রেহানের স্পষ্ট মনে আছে নিশিকে ওর নিজের জায়গাতে শুয়ে দিয়েছিলো। মেয়েটা রাতে আসলো কখন ওর বুকে সেটাই রেহানকে ভাবাচ্ছে। রেহান এবার কিছুটা নড়ে উঠাতে নিশি ঘুমের মাঝেই রেহানের উপর এক পা তুলে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রেহানকে নিশি কোলবালিশ ভাবছে হয়তো তাই এভাবে জড়িয়ে ধরেছে। রেহানের ভীষন হাসি পাচ্ছে নিশির এই অবস্থা দেখে জেগে থাকলে হয়তো নিশি খুব লজ্জা পেতো নিজের কার্যকলাপ দেখে। রেহানও নিশির ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে আর এভাবেই শুয়ে থাকে নিশিকে নিজের বুকের উপর নিয়ে। রেহানের ভালোই লাগছে নিশিকে নিজের বুকে রাখতে। প্রায় আধ ঘন্টা পরে নিশির ঘুম ভাঙ্গে। নিশির ঘুম ভেঙ্গে গেছে বুঝতে পেরে রেহান নিজের চোখ দুটো তাড়াতাড়ি বন্ধ করে নেয় তা না হলে দেখা যাবে নিশি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছে।
নিশি আড়মোড়া ভেঙ্গে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রেহানের বুকের উপর শুয়ে আছে তাও আবার খুব বিচ্ছিরি ভাবে। রেহান যদি নিশির এ অবস্থা দেখে তাহলে কি ভাববে এটা ভেবে নিশির লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। রেহানের দিকে নিশি তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে এটা ভেবে রেহান এখনও ঘুমিয়ে আছে। তড়িৎ গতিতে রেহানের কাছ থেকে নিশি সরে আসতে যাবে তখনেই বাদে এক বিপদ রেহানের শার্টের খোলা বোতামে নিশির চুল আটকে যায় আর চুলে টান পড়াতেই নিশি শব্দ করে আর্তনাত করে উঠে। নিশির চিৎকার শুনে রেহান চোখ খুলে বলে
–কি হয়েছে নিশি??
নিশি শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে
–মানে আসলে।
–হুম কি?
–চুল আটকে গেছে আপনার শার্টের বোতামে।
রেহান শুয়া থেকেই একবার নিশির দিকে আরেক বার শার্টের বোতামের দিকে তাকায়। আর নিশি বেচারি তো মুখটা কালো করে রেখেছে আর সাথে এক রাশ লজ্জা নিয়ে এটা ভেবে রেহানের কাছে নিশি ধরা খেয়ে ফেলেছে যে নিশি রেহানের বুকের উপর ছিলো। রেহান উঠে বসার সাথে সাথে নিশিও উঠে বসে। রেহান বোতাম থেকে চুল খুলতে অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারছে না। এমন ভাবে প্যাচ লেগেছে যে চুল কাটা ছাড়া কোনো রাস্তা নেই। রেহান নিশির দিকে দৃষ্টিপাত করে বলে
–কাচি আছে।
নিশি মাথায় হ্যা বলে
–নিয়ে আসো যাও চুলটা কাটতে না হলে ছাড়াতে পারবো না বোতাম থেকে।
রেহান কি বোকা নাকি সে কি বুঝতে পারছে না নিশি কি করে যাবে ওর চুল যে তার বোতামে লেগে আছে। যেতে হলে দু জনকে এক সাথে যেতে হবে। নিশিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রেহান নিশির দিকে তাকিয়ে আবার বলে
–কি হলো বসে আছো কেন যাও?
–কি করে যাবো উঠলেই তো চুলে টান পরবে।
রেহান একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে শার্টের অন্য বোতাম গুলা খোলা শুরু করে। নিশি তা দেখে চোখ বড় বড় করে অন্য দিকে ফিরে বলে
–একি কি করছেন আপনি? শার্ট কেন খুলছেন আমার সামনে?
রেহান পুরা শার্টটা খুলে নিশির হাত ধরিয়ে বলে
–এবার যাও।
নিশি আরেক বার রেহানের দিকে তাকিয়ে তড়িৎ গতিতে অন্য দিকে ফিরে তাকায়। রেহান পুরোপুরি খালি গায়ে, রেহাননের সুঠাম দেহ দেখে নিশির সারা গায়ে শিহরন বয়ে যাচ্ছে। রেহানের দিকে আর দ্বিতীয় বার তাকানোর সাহস পেলো না নিশি। তাড়াতাড়ি করে রেহানের শার্টটা হাতে নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকতে যাবে তখনেই রেহানের ডাকে নিশির পা জোড়া থমকে যায়।
–ওয়াসরুমে যাচ্ছো কেন আগে শার্ট থেকে চুলটা কাটো তারপর যাও।
নিশি কোন রকম ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে কাপাকাপা হাতে কাচিটা নিয়ে বোতাম থেকে চুল কেটে শার্টটা বেডের এক সাইডে রেখে ওয়াসরুমে দৌঁড়। নিশির পায়ে যে ব্যাথা আছে সেটা যেন নিমিষেই সেড়ে গেছে এখন। নিশি ওয়াশরুমে যেতেই রেহান শব্দবিহীন ভাবে হাসছে আর বেডে ঘড়াঘড়ি খাচ্ছে এক প্রকার নিশির কান্ড গুলা দেখে।
নিশি ওয়াসরুমে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর একটু হয়ে নির্ঘাত শ্বাস কষ্টে মারা যেতে। নিশি নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা কিন্তু বারবার রেহানের উনমুক্ত বুকটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে আর লজ্জাও লাগছে নিশি কিছুক্ষন আগে এই বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে ছিলো। নিশির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে তাই শাড়ির আচল দিয়ে মুছছে আর বলছে
–হায় আল্লাহ সকাল সকাল একি দেখলাম আমি আমার চোখ।
বলেই ঠোট কামড়ে ধরছে।
______
প্রায় বিশ মিনিট হয়ে যাচ্ছে নিশির ওয়াসরুম থেকে বের হওয়ার নামেই নেই। এবার রেহান ওয়াসরুমে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে
–নিশি তাড়াতাড়ি করো লেইট হচ্ছে কিন্তু। আজকে আমাদের রওনা দিতে হবে। তোমাকে বাড়িতে রেখে আমাকে অফিসে যেতে হবে।
নিশি রেহানের কথাটা শুনার কিছুক্ষন পরেই নিশি কাচুমাচু হয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়। নিশিকে দেখেই রেহান বলে উঠে
–এতক্ষন লাগে ফ্রেস হতে।
–না মানে লেইট হয়ে গেছে আজকে একটু।
–তাড়াতাড়ি রেডি হও নাস্তা করেই রাওনা দিবো।
নিশি মাথা দোলায় শুধু। রেহান ওয়াসরুমে ডুকে পড়ে ফ্রেস হতে। নাস্তা করে নিশি আর রেহান বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পড়ে। নিশি গাড়িতে বসতেই চোখ যায় লুকিং গ্লাসটার দিকে যেটাতে নিশি ওই দিন দুইটা বেলি ফুলের মালা ঝুলিয়েরেখেছিলো। বেলি ফুলের মালা গুলা একে বারে নেতিয়ে গেছে। নিশি লুকিং গ্লাস থেকে মালা গুলা সরাতে যাবে তখনেই রেহান বলে উঠে
–এই কি করছো?
–মালা গুলা নষ্ট হয়ে গেছে তাই ফেলে দিছি।
–তোমাকে কে বলেছে এগুলা ফেলে দেওয়ার জন্য।
–না মানে আমি ভাবলাম এগুলা নষ্ট হয়ে গেছে তাই ফেলে দেওয়া উচিত।
–তোমাকে এত ভাবতে হবে না আমার গাড়ি আমি ভেবে নিবো।
নিশিও আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে। প্রায় দেড় ঘন্টা পর আহমেদ ভিলার সামনে এসে রেহানের গাড়ি থামে। রেহান নিশিকে বলে
–তুমি বাড়িতে যাও আমাকে অফিসে যেতে হবে।
নিশিও আচ্ছা বলে বাড়িতে ডুকে পড়ে।
__________
কিছু দিন পর আহমেদ বাড়ির সকালে ব্রেক ফাস্ট করছে এক সাথে বসে এরেই মাঝে রেহেলা বেগম রেহানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।
–রেহান আজকে তো তর অফিস নেই তাই আজকে একটু বেরুতে পারবি আমার সাথে।
রেহানের স্পষ্ট জবাব
–আমার অফিসের কাজ আছে যে গুলা আজকের মাঝে ঠিক করতে হবে। ড্রাইভার আছে তুমি ড্রাইভারকে সাথে করে নিয়ে যাও।
রেহেলা বেগম রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো
–তদের বাপ-বেটার কারোরেই সময় থাকে না আমার সাথে বেরুনো সময়। সবসময় শুধু কাজ আর কাজ আরে পরিবারকেও সময় দিতে হয় মাঝে মাঝে বুঝলি।
রায়হান আহমেদ স্ত্রীর কথা শুনে অসহায় ভাব ধরে বলে উঠে
–এই এখন তুমি আমাকে ধরলে কেন?
–তো ধরবো না ছেলেটা তো একে বারে তোমার মতো হয়েছে। আমার মতো যদি হতো তাহলে আমার কথা শুনতো এমন ভাবে মায়ের মুখের উপর না করতে পারতো না।
রাহি আর নিশি নিচ দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছে। রেহানও চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে কারন জানে এখন যদি রেহান কিচ্ছু বলে তাহলে ওর মা রনচন্ডি ধারন করবে তাই চুপ থাকাটাই বেটার মনে করছে আপতত রেহান। রেহেলা বেগম রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
–রাহি নাস্তা করে সুন্দর করে রেডি হবি তর বাপ আর ভাইয়ের কোনো দরকার নেই আমার। আমি আর তুই যথেষ্ট
–আচ্ছা মা।
#চলবে