#তুমি আমার (পর্ব ০৩)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
আজ শুক্রবার কলেজ অফ এই একটিদিন বাবা ভাইয়ের সাথে থেকে সময় কাটায় মেঘা। সকালের নাস্তা সেরে মেঘা নিজের রুমটা গুছাচ্ছিলো তন্ময় রুমে আসলো তখন এসেই খাটের ওপর বসে মেঘার কাজ করা দেখছিলো। মেঘা তন্ময়ের সামনে এসে বললো
– ভাই কিছু বলবি?
– হুম,মাথা নিচু করে।
– বলনা কি বলবি?
– আপু স্কুল প্রাইভেটের জন্য তো কোথাও যেতে পারি না আজ বিকেলে বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরতে যাবো। প্লিজ আপু না করো না।
মেঘা হেসে তন্ময়ের পাশে বসে বললো
– ভাই আমি না করবো কেনো হুম। বাবাকে বলেছিস?
– সাহস পাইনি বলার তুমি বলে দাওনা আপু।
– ঠিকআছে আমি বাবাকে বলে দিবো। তবে শোন সন্ধার আগে বাড়িতে ফিরবি বলে দিলাম।
তন্ময় খুশিতে লাফিয়ে উঠে মেঘা হাত ধরে বললো
– আপু তুৃমি চিন্তা করো না আমি ঠিক সময়ে চলে আসবো।
তন্ময় বেরিয়ে যেতেই মেঘা আবার কাজে মন দিলো। একটু পর দরজায় দাড়িয়ে কেউ বলে উঠলো
– আসবো আপুনি।
মেঘা ঘুরে তাকালো
– আরে আশা তুই! আয় ভেতরে আয়।(আশা মেঘার মামাতো বোন,মেঘার থেকে এক বছরের ছোট।)
আশা এসে খাটে পা ঝুলিয়ে বসলো,মেঘা হাতের কাজ করতে করতে বললো
– আপুনিকে এতদিন পর মনে পড়লো তাইনা।
– আর বলো না ভাইয়াকে তো যানোই কোথাও যেতে দিতে চায় না আজ অনেক বুঝিয়ে চলে এসেছি তোমার সাথে দেখা করতে।
– মামা মামি ভাইয়া কেমন আছে?
– সবাই ভালো আছে।
– এসেছিস কার সাথে?
– ভাইয়া নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে আবার সন্ধার পর এসে নিয়ে যাবে।
– এটুকু সময়ের জন্য কে আসতে বলেছে তোকে?আশার পাশে বসে বললো।
– আসতে পেরেছি তাই তো আমার ভাগ্য। বড় ভাই থাকাটা সত্যিই প্যারাময় একটা ব্যাপার। সারাক্ষণ শুধু পড়তে বলে।
– তা তো বলবেই সামনে এস এস সি পরীক্ষা দিবি তার জন্যই তো বলে।
– উফ আপুনি পড়ার কথা বাদ দাও তো।
.
🌿
.
আশাকে সাথে নিয়ে মেঘা বিকেলে হাটতে বেড়িয়েছে। মেঘাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দুরে একটা লেক আছে সেখানেই এসেছে ওরা। মেঘা আর আশা লেকের পার ধরে হাটছিলো আর টুকটাক গল্প করছিলো।
রেহান অবসর সময় পেলেই এই লেকের পারে এসে একাই সময় কাটায় আজও এসেছে। বড় একটা গাছের নিচে সবুজ ঘাসের ওপর বসে আছে রেহান তার দৃষ্টি লেকের সচ্ছ পানির দিকে। হঠাৎ হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে রেহান পেছনে তাকালো। নিজেকে আবারো হারিয়ে ফেললো সেই মনোমুগ্ধকর হাসিতে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।
মেঘারা রেহানের থেকে একটু সামনে বসেছিলো আর গল্পের ছলে হাসছিলো মেঘা। কেউ যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে ওর কোনো খেয়াল নেই।
ফোনের শব্দে রেহানের ধ্যান ভাঙলো মেঘার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রুহি কল করেছে। রেহান রিসিভ না করে ফোনটা রেখে দিলো। রেহান রুহির ফোন পেলে এক সেকেন্ড ও দেরি করতো না ধরতে আর আজ সে ফোনটা কেটে দিলো এ কথা ভেবেই অবাক হচ্ছে রেহান!
রেহান নিজে নিজেই বলতে লাগলো…এ কি হচ্ছে আমার? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। এই মেয়েটিকে দেখার পর থেকে সব কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে। বারবার শুধু কৌতুহল জাগছে মেয়েটির সম্পর্কে জানতে। মেয়েটির নামও তো জানি না,একবার কি জিগ্যেস করে দেখবো ওর নাম কি?
রেহান আর কিছু না ভেবে উঠে পা বাড়ালো মেঘাদের দিকে।
মেঘারা সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো। রেহান মেঘার পেছনে গিয়ে দাড়ালো,কিন্তু কি বলে কথা শুরু করবে সেটাই বুঝতে পারছে না। রেহান হঠাৎ করে বলে উঠলো
– এক্সকিউজমি। আমি কি তোমাদের পাশে একটু বসতে পারি?
মেঘা আশা দুজনেই তাকালো রেহানকে দেখে মেঘা কিছুটা অবাক হলো,অবাকভঙ্গিতেই বললো
– ভাইয়া আপনি!!
রেহান মুচকি হেসে বললো
– আমাকে চেনো তুমি?
– না মানে হ্যা গতকাল কলেজে আপনার গান গাইতে শুনেছিলাম,আর সেদিন আমার কারনে আপনার পেপারস গুলো পড়ে গেলো।
– বাহ ভালোই তো মনে রেখেছো। তো কাল লুকিয়ে আমার গান শুনেছিলে নাকি সামনে এসেই?
– লুকিয়ে কেনো শুনবো সামনে দাড়িয়েই শুনেছি!
– ওও আচ্ছা, তো বসতে পারি এখানে?
মেঘা একটু ইতোস্থবোধ করছিলো,মনে মনে ভাবছে এ ছেলেটি হঠাৎ যেচে কথা বলছে কেনো খারাপ কোনো উদ্দেশ্য নেই তো?
আশা মেঘার উত্তরের অপেক্ষা না করে হেসে বললো
– হ্যা ভাইয়া বসুন না।
রেহান আশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
– থ্যাংকস। বলেই ওদের থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে বসলো।
.
🌿
.
মেঘার খুব বিরক্ত লাগছিলো অপরিচিত একটা ছেলে এভাবে পাশে বসে আছে ব্যাপারটা ওর কাছে ভালো লাগছে না। রেহানও কিছু বলছে না। আসলে রেহানও বুঝতে পারছে না কি বলে শুরু করবে তাই চুপচাপ বসে আছে।
মেঘা নিজেই বললো
– ভাইয়া আপনি কি কিছু বলবেন?
রেহান তাকালো মেঘার দিকে দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেলো মেঘা মুহুর্তেই চোখ নামিয়ে নিলো কিন্তু রেহান তাকিয়ে রইলো সেই মায়াবি মুখটির দিকে।
পরক্ষণেই রেহানের খেয়াল হলো ও কি করছে,নিজেকে সামলে বললো
– তুমি আমাদের কলেজেই পড়ো তাইনা?
– জ্বি ভাইয়া। সামনে তাকিয়ে।
– কিসে পড়ো? আই মিন ইন্টার নাকি অনার্সে?
– আমি ইন্টারে ভর্তি হয়েছি।
রেহান একটু অবাক হলো…..মেয়েটি ইন্টারে পড়ে! অথচ ওর চলাফেরা দেখে বোঝাই যায় না এতটা ছোট! মনে মনে।
– তোমার নাম কি জানতে পারি?
মেঘা মনে মনে খুবই অবাক হচ্ছে বুঝে উঠতে পারছে না কি বলা উচিৎ ওর।
মেঘা কিছু বলছে না দেখে আশা বললো
– ভাইয়া আপুনির নাম মেঘা।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে ভাবলো….বাহ নামটাও তো এই মেয়ের সাথে মিলে গেছে। এ নামটি একমাত্র ওকেই মানিয়েছে। রেহান আশাকে বললো
– তোমার নাম কি কিসে পড়ো তুমি?
– আমার নাম আশা,আমি দশম শ্রেণীতে পড়ি।
– ও আচ্ছা খুব ভালো মন দিয়ে পড়াশোনা করো।
রেহান চাইছে মেঘা কিছু বলুক কিন্তু না মেঘা কিছুই বলছে না। রেহানের ফোনটা আবার বেজে উঠলো,পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলো ওর মা কল দিয়েছে।
– হ্যা মা বলো।
…………
– ঠিকআছে আসছি আমি।
রেহান উঠে দাড়িয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– মেঘা আসছি তাহলে,কলেজে কোনো প্রবলেম হলে আমাকে জানিয়ো।
আশা হুট করেই বললো
– ভাইয়া আপনার গান শুনবো একদিন শুনাবেন?
– আবার যদি দেখা হয় অবশ্যই শুনাবো। ভালোথেকো তোমরা।
রেহান চলে গেলো মেঘা আশার দিকে তাকিয়ে বললো
– আশা তোকে এত কথা বলতে কে বলেছে হ্যা?
– কই এত কথা বললাম! ভাইয়াটা খুব ভালো আপুনি দেখেছো কত ভদ্রভাবে কথা বললো এসে।
– এটাই তো ভাবাচ্ছে আমাকে।
– ভাবনার কি আছে খারাপ কিছু তো বলে নি,তুমি ওনাদের কলেজে পড়ো তাই নাম কিসে পড়ো জানতে চাইলো।
– হয়েছে বাদ দে চল বাড়িতে ফিরি এখন।
– হুম চলো।
.
🌿
.
রেহান ছাদে দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখছিলো আর মেঘার কথা ভাবছিলো। মেঘাকে দেখার পর থেকে ওর কথাই বেশি ভাবে না চাইতেও ভাবনাতে চলে আসে। তবে এর কি কারন রেহান জানে না। রেহান আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে।
আচ্ছা আমি তো রুহিকে ভালোবাসি কিন্তু প্রথম থেকে কখনো তো রুহিকে নিয়ে এতটা ভাবি নি যতটা মেঘাকে নিয়ে ভাবছি!
পরের দিন রেহান কলেজে এসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে আর একটু পর পর গেটের দিকে তাকাচ্ছে,তানভির রেহানকে বললো
– কিরে গেটের দিকে তাকাচ্ছিস কেনো বার বার কেউ আসবে নাকি?
– নাহ কে আসবে এমনি।
– ওহ, এই রুহির কি খবর রে কথা হয় তোর সাথে?
– হুম হয়।
– যাক এখনো তাহলে ঝুলে আছে তোর গলায়। তাচ্ছল্যের স্বরে বললো।
– ঝুলে আছে মানে! তানভির কি বলতে চাইছিস তুই?
– আমি বলতে চাইছি কি সেটা তুই ভালো করেই জানিস। তোকে আগেও বলেছি এখনো বলছি রুহির থেকে দুরে সরে আয়। ওই মেয়ে সুবিধার না।
– স্টপ তানভির কি বলছিস তুই! রুহিকে আমি ভালোবাসি আর ও খুব ভালো মেয়ে। কিছুটা রেগে বললো।
– রেগে যাচ্ছিস কেনো,এখন আমার কথা কানে তুলছিস না ঠিকি তবে একদিন তুই নিজের ভুলটা ঠিক বুঝবি মিলিয়ে নিস আমার কথা।
রেহান তানভিরের কথায় আর কোনো উত্তর দিলো না।
আসলে রেহান ও কিছুটা বুঝতে পারে রুহির পরিবর্তন মাঝে মাঝে ওর কথা বলা চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হয় ওর কাছে।
রেহান একটা গোলোক ধাঁধায় পড়ে গিয়েছে একদিকে রুহি অন্যদিকে মেঘা। রুহিকে তো সে ভালোবাসে কিন্তু মেঘা! ওকে কেনো মনে পড়ে বারবার এটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না রেহান। রেহান গেটের দিকে আবার তাকালো কিন্তু এবারো হতাস হলো মেঘাকে না দেখে।
·
·
·
চলবে………………..