তুমি আমার পর্ব-০২

0
1141

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_2

সকালের মিষ্টি রোদের আলো নিশির চোখে পড়তেই নিশির ঘুম ভেঙ্গে যায়। নিশি শরীরটা টানটান করে উঠে বসার সাথেই সাথেই নিশির চোখ যায় রেহানের দিকে। নিশি এক ধ্যানে রেহানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে।

–আহারে কি সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে লোকটা কোনো চিন্তা নেই। চিন্তা থাকবে কি করে সব চিন্তা যে আমাকে দিয়ে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আচ্ছা ওনার গার্লফ্রেন্ড দেখতে কি আমার থেকে সুন্দর। ওই শাকচুন্নিটা কি রকম দেখতে আল্লাই জানে। আচ্ছা আতোও কি ওনার গার্লফ্রেন্ড আছে কালকে রাতে তো ওনাকে ওনার কথার মাঝে থামিয়ে বলে দিয়েছি যা বুঝার বুঝে গেছি আমি। ধুর ভালো লাগে না। সব মসিবত কি আমার কপালেই এসেই পড়ে।

নিশি একরাশ রাগ নিয়ে বেড থেকে নেমে ব্যাগ থেকে শাড়ি বের করে ওয়াসরুমে চলে যায় শাওয়ার নেওয়ার জন্য। কিছুক্ষন পরেই নিশি একটা লাল কাতানের শাড়ি পড়ে বের হয় ওয়াসরুম থেকে। চুল ছাড়তে ছাড়তে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ায়। নিশি ভেজা চুল ছাড়ার সময় চুলের পানি কিছুটা রেহানের মুখের উপর গিয়ে পড়ে যার জন্য রেহানের ঘুমটাও ভেঙ্গে যায়। রেহান চোখ মেলে তাকাতেই নজর পড়ে সদ্য গোসল করা নিশির উপর যার ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। চুলের পানি পড়ার কারনে নিশির ব্লাউজের একটা সাইড ভিজে গেছে। রেহান শুয়া থেকে উঠে বসে। রেহান নিশিকে যতবার দেখেছে এতটা গভীর ভাবে দেখে নি নিশিকে দেখায় প্রয়োজন বোধ করে নি তাই হয়তো নিশির মায়বী চেহারাটা ভালো করে দেখে নি রেহান।‌ কিন্তু আজ রেহান মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে আয়নাতে পড়া নিশির মুখের দিকে। কেন জানি রেহানের নিশির মায়বী চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালোই লাগছে। রেহানের এখন একটা কথাই বলতে ইচ্ছে করছে

–গোসল করার পর কি প্রত্যেক নারীদের এমন সিগ্ধ আর মায়বী লাগে নাকি এটা শুধু মাএ নিশির ক্ষেএেই।

নিশি হালকা কিছুটা সাজুগুজো করে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে রেহান ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। প্রথমে নিশি কিছুটা লজ্জা পেলেও পরক্ষনে নিশি ছোট ছোট চোখ করে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে

–এই যে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কোন দিন সুন্দরী মেয়ে দেখেন নি?

নিশির কথায় রেহানের ধ্যান ভাঙ্গে আর বলে উঠে

–মানে!
–মানে হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে। আমার মুখে কি কিছু হয়েছে? যার জন্য আপনি এমন ডেবডেব করে তাকিয়ে আছেন। অবশ্য আমি সুন্দরী তাকাতেই পারেন আমার দিকে।

–কিহ তুমি নিজেকে সুন্দরী মনে করো নাকি। [বসা থেকে উঠে দাড়ায়]
–অবশ্যই আমি নিজেকে সুন্দরী মনে করি। আপনার কোন সন্দেহ আছে নাকি।
জানেন গ্রামে আমার জন্য কত ছেলে পাগল ছিলো সারাদিন আমার পিছু পিছু কত ছেলেরা ঘুড়তো হিসাব ছিলো না। ও সরি আপনি জানবেন কি করে? আপনি তো আর আমাদের গ্রামে থাকতেন না।

–কেমন ছেলেরা যে ঘুরতো তোমার পিছনে তা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি আর হে আমার সমানে এমন ভাবে ঘুরাফেরা করবে না একদম।
–কিভাবে ঘুরছি আপনার সামনে হুম?
–নিজের দিকে তাকাও তাহলে বুঝতে পারবে।

এই কথা বলেই রেহান টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে যায়। আর নিশি নিজের দিকে তাকিয়ে পুরাই ভরকে যায়। কারন বুকের এক সাইডের শাড়িটা সরে গিয়েছে। নিশি তাড়াতাড়ি করে শাড়িটা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।

–লুচু কোথাকার নজর ভালো না এই বেডার। তার জন্যই তো এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো।

ঠিক এমন সময় দরজায় শব্দ হয় নিশি গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখে রাহি দাড়িয়ে আছে। রাহি রেহানের ছোট বোন এমন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। নিশিকে দেখে রাহি বলে উঠে

–ওয়াও নিশু আপু তোমাকে লাল শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে।
–যাহ এভাবে কেউ বলে আমার বুঝি লজ্জা লাগে না।
–আর লজ্জা পেতে হবে না চলো মা ডাকছে তোমাকে নিচে।
–আচ্ছা চলো।
–ভাইয়া কি ওয়াশরুমে।
–আচ্ছা তুমি চলো।

এদিকটা রেহান ওয়াশরুমে ডুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে আনমনেই বলে উঠে

–আসলেই তুমি অনেক সুন্দরী। রাগলে আরও ভয়ংকরী সুন্দরী লাগে।

কথা বলেই মুচকি হেসে উঠে রেহান। কিন্তু পর মুর্হূতে রেহান নিজের কথা বুঝতে ভীষন ভাবে আবাক হয়। আর মুখের হাসিটা মলিন হয়ে যায়।

______

নিশি ডায়নিং টেবলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কাজে করতে হচ্ছে না নিশিকে শুধু ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই রেহেলা বেগম নিশির হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বলে

–রেহানকে কফিটা একটু দিয়ে আসবি মা।
–ঠিক আছে ফুফি।
–এখনও ফুফি ডাকবি নাকি। আজ থেকে মামনি বলে ডাকবি কেমন!
–আচ্ছা মামনি।

নিশি কফির মগটা নিয়ে ঘরে ডুকে দেখে রেহান রুমে নেই। নিশি ভাবলো হয়তো বেলকনিতে আছে রেহান। নিশির ভাবনাটাই ঠিক হলো রেহান গ্রিলে হাত দিয়ে দুরের অরন্যের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। নিশি রেহানের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রেহানের দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বলে

–আপনার কফি।

হঠাৎ কারোর কন্ঠ শুনাতে রেহান চমকে যায়। চমকে পাশে ফিরতেই রেহানের হাত লেগে কফির মগটা থেকে কিছুটা কফি নিশির হাত পড়ে যায়। গরম কফি হাতে পড়ার কারনে নিশি আর্তনাত করে উঠে। রেহান তাড়াতাড়ি করে নিশির হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে বলে

–সরি সরি নিশি আমি দেখি নাই যে তুমি আমার পাশে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো।
–না না আমি ঠিক আছি [হাতটা চেপে ধরে]
–কি ঠিক আছো তুমি হাতে গরম কফি পরেছে আর তুমি বলছো ঠিক আছো। চলো আমার সাথে।

রেহান নিশির হাতটা ধরে বেডে এনে বসায় আর কফির মগটা সেন্টার টেবলে রেখে বলে।

–এখানে চুপ করে বসো আমি আসছি।

রেহান ফাস্টএড বক্সটা এনে নিশির পাশে বসে আর নিশির লাল হয়ে যাওয়া জায়গাতে মলম লাগিয়ে দেয়। নিশি হালকা আর্তনাত করে উঠাতে রেহান ফু দিয়ে মলম লাগাতে থাকে। নিশি পলকহীন দৃষ্টিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর রেহান মুখ তুলে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে

–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
–এটা করা কি খুব দরকার ছিলো আমার সাথে??
–কি করেছি আমি দেখো নিশি আমি তার জন্য সরি বললাম তো।
–আপনি কেন আমাকে বিয়ে করে আমার জীবনটা নষ্ট করলেন বলেন তো। আপনি চাইলেই বিয়েটা না করতে পারতেন। আমি তো মেয়ে তাই নিরুপায় হয়ে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু আপনি তো চাইলে মামনি কে বুঝাতে পারতেন যে আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে আর আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান না।

–গার্লফ্রেন্ড? আমার গার্লফ্রেন্ড আছে কে বলল তোমাকে??
–কেন এটার জন্য তো আপনি এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছেন না?
–আমি বিয়েটা এখন মেনে নেয় নি ঠিকেই কিন্তু মেনে নিতে কতক্ষন। আমি অবশ্যই এই বিয়েটা মেনে নিবো তত দিন না হয় আমাকে একটু সময় দাও।
–মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বে এই বিয়েটা মেনে নিবেন।
–আমার গার্লফ্রেন্ড আছে কি নেই এটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা না করলেও চলবে। আপতত তুমি তোমার চিন্তা করো।

কথাটা বলেই রেহান ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আর নিশি সে তো হা করে বসে আছে রেহানের কথা শুনে।

–এই লোকের মাথায় নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে আমি শিউর।

রেহেলা বেগম নিশিকে নিচ নামার জন্য ডাক দিতেই নিশি নিচে নেমে ডায়নিং টেবলি বসে রেহানের পাশে। রেহেলা বেগম বলে উঠে

–রেহান কালকে কিন্তু নিশিদের বাড়ি যেতে হবে মনে রাখিস।
–হুম।
–আর নিশি মা সব কিছু গুছিয়ে নিস কেমন।
–আচ্ছা মামনি।

রেহান ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পড়লো। সারাদিন রেহান আর বাড়ি ফিরে নি। রেহান মাকে একবার ফোন করে বলেছে লেইট হবে এই পর্যন্ত।

_________

সাড়ে দশটা রেহান বাড়ি ফিরে। এসেই বিছানায় শুয়ে পড়ে। রেহানের শুয়া দেখে নিশি বলে উঠে

–একি আপনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন কেন??
–তো কই শুবো??
–কই শুবো মানে সোফায় শুবেন গত কালকের মতো।
–পারবো না সোফায় ঘুমাতে। সোফাতে ঘুমানোঅভ্যাস নেই আমার।
–তাহলে আপনি বিছানায় ঘুমালে আমি কই ঘুমাবো।

রেহান এবার উঠে বসে নিশির দিকে তাকিয়ে বলে।

–আমার বিছানাটা না অনেক বড়। এই বিছানায় কমপক্ষে তিন জন শুতে পারবে আর তুমি বলছো কোথায় ঘুমাবে।
–আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবো আপনার কোনো অসুবিধা হবে না।
–না কোনো অসুবিধা হবে না চুপচাপ শুয়ে পড়ো আর আমাকে একটু ঘুমাতে দাও।

বলেই রেহান ওপাশে ফিরে শুয়ে পড়ে। নিশিও গুটিগুটি পায়ে বিছানারে এক পাশে এসে জড়োসরো হয়ে শুয়ে পড়ে।
গভীর রাতে নিশির কেন জানি মনে হচ্ছে ওর দিকে কেউ তাকিয়ে আছে। কিন্তু নিশি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে রেহান ঘুমিয়ে আছে। এক ধ্যানে ঘমন্ত রেহানের দিকে নিশি তাকিয়ে আছে। নিশির ইচ্ছে করছে রেহানের কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো ছুয়ে দিতে কিন্তু এটা নিশি করতে পারবে না ওর যে সে অধিকার নেই। তাই নিশি রেহানের দিকে হাত বাড়ালে আবার হাতটা নিয়ে এসে পড়ে। নিশি ওপাশ ফিরতেই রেহান চোখ মেলে তাকায় আর ভারী একটা নিশ্বাস ছেড়ে মনেমনে বলে

–আমি জানি নিশি তুমি আমাকে মনে মনে পছন্দ করো। সেটা আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছি কিন্তু তখন পাত্তা দিতাম না তোমাকে। কারন তখন অন্য কেউ ছিলো আমার লাইফে তাই পাত্তা দেওয়ার প্রশ্নেই ছিলো না। কিন্তু এখন যে ছেড়ে চলে গেছে তাকে নিয়ে আর ভাবলে হবে না এখন যে আমার লাইফে অন্য একজন আছে আমার স্ত্রী হয়ে তাকে নিয়ে ভাবতে হবে। কিন্তু তার জন্য আমার অনেকটা সময় লাগবে,, নিশি কি আমাকে সেই সময়টা দিবে নাকি ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। নাহ নিশি আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ওকে নিজের করে নিতে হবে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে