#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_1
–মা আমি এ বিয়ে করতে পারবো না। যে কাজিনকে ছোট বেলা থেকে বোনের চোখে দেখে এসেছি হঠাৎ করেই তার সাথে বিয়ে এটা পসিবল না আমার জন্য মা। আর তুমি কি এটা ভুলে গেছো আমার অতিতের কথা।
রেহান একদমেই এই কথাটা বলে উঠে রেহেলা বেগমের সাথে। রেহানের কথা শুনে রেহেলা বেগম বলে উঠে
–এসব তুই কি বলছিস রেহান সারা বাড়িতে মানুষ জন ভর্তি আর তুই বলছিস এই বিয়ে তুই করবি না। আর অতিতের কথা চিন্তা করেই তর বিয়ে দিতে চাইছি আমি।
–তুমি আমাকে মিথ্যে কথা বলে গ্রামে এনেছো মা। আমি তো জানতামেই না এই বিয়ের কথা। যদি জানতাম তাহলে কোনো দিনেই আমি গ্রামে আসতাম না।
–এখন তো জানলি এই বিয়ের কথা। আর যাকে বোনের চোখে আগে দেখতি এখন না হয় বউয়ের চোখে দেখবি। আর ও তো তর আপন বোন মামাতো বোন আর মামাতো বোনের সাথে বিয়ে য়ো হয়।
–মা তুমি কেন বুঝতে চাইছো না আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। এই বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
–রেহান তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে কিন্তু তুই আমার মরা মুখ দেখবি।
–মা তুমি এসব কি বলছো??
–রেহান বাবা এই বিয়েটা করতে তুই রাজি হয়ে যায়। আমি আমার ভাইকে যে কথা দিয়েছি। এখন যদি তুই এই বিয়ে না করিস তাহলে আমার ভাইটা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবে না গ্রামে ওর একটা নাম আছে। আর তুই একবার নিশির কথা ভাব এই বিয়েটা ভেঙ্গে গেলে মেয়েটার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।
–এসব বিষয়ে ভাবার আগে আমাকে জানানো উচিত ছিলো তোমার মা।
–ঠিক আছে তকে এই বিয়ে করতে হবে না। তবে মনে রাখিস এই বিয়ে তুই না করলে তর মাকে হারাবি।
এই কথাটা বলেই রেহেলা বেগম দরজাটা খুলে বের হতে নিবে তখনেই রেহান বলে উঠে।
–আমি এই বিয়েটা করবো মা তবে আমার শর্ত আছে। এই বিয়েটা মেনে নিতে আমাকে কিছুটা সময় দিতে হবে মা।
রেহেলা বেগম ছেলের মুখে এই কথা শুনে ছেলের কাছে এসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।
–নিশি খুব ভালো মেয়ে ও তকে সুখে রাখবে। আর যার জন্য তুই এত বছর অপেক্ষা করছিস সে কোনো দিন ফিরে আসবে না। সে তকে ঠকিয়ে চলে গেছে অন্যের হাত ধরে। যে তকে কোনো দিন চাই নি তার জন্য অপেক্ষা করে কেন নিজের জীবনটা নষ্ট করছিস বাবা। এবার তর জীবনটাকে সুন্দর করে সাজানো দরকার। তর জীবনটাকে এখন এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে অতিত নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। দেখিস একদিন নিশি তর জীবন থেকে অতিতের সব কালো ছায়া মুজে দিবে। একবার ওকে ভালোবেসে কাছে টেনে নে দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।
রেহান আর কিছু না বলেই মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। আর চোখ দু ফোটা নুনা জল গড়িয়ে পড়ে আর মনে মনে বলতে থাকে।
–আমি ওকে কোনো দিনও ভুলতে পারবো না মা কোনো দিনও না। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি না ভুলতে। যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসার পরও যখন সে চলে গেছে তখন নিশি.. নিশি তো অনেক দুর ও হয়তো একদিন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। তাই নিশিকে ভালোবাসা আমার পক্ষে সম্ভব না। ভালোবেসে একবার ঠকেছি আমি আর ঠকতে পারবো না। কারন এবার যে আর সইতে পারবো না এই ভালোবাসার বেদনা।
__________
নিশি আর রেহানের বিয়ে সুষ্টুসুন্দর ভাবে হলো। নিশি তো মহা খুশি রেহানকে বিয়ে করে। রেহানের উপর নিশির অনেক আগে থেকে ক্রাশ ছিলো। কিন্তু নিশি কল্পনাও করতে পারে নি রেহানের সাথে যে ওর বিয়েটা হয়ে যাবে। রেহানকে শুধু নিশি গ্রামে বেড়াতে আসার কারনে তিন চার বার দেখেছিলো এর বেশি দেখি নি। এই কয়েকবার দেখেই নিশি রেহানের উপর পুরাই ফিদা।
নিশি এক হাত ঘোমটা দিয়ে বসে আছে রেহানের রুমে। পুরা ঘর ফুলের গন্ধে ভড়ে আছে। লাইট অফ চারিদিকে বাহারি রং এর মোমবাতি চলছে। চাদের আলো আর মোমবাতির আলোতে ঘরটা আলোকিত হয়ে আছে। নিশির লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে আছে। বুকটা কেন জানি আজকে একটু বেশিই ধুকপুক করছে৷ অনেক চেষ্টা করছে নিশি এই ধুকপুক কমানোর জন্য কিন্তু কিছুতেই পারছেই না। আজানা এক ভয় কাজ করছে মনের মাঝে। নিশির স্বপ্নের সেই পুরুষ আজ তার স্বামী ভাবতেই শরীরের কাটা দিয়ে উঠছে।
দরজায় শব্দ হওয়ার সাথে সাথে নিশি কেপে উঠে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। নিস্তব্ধ রুমে রেহানের পায়ের শব্দ স্পষ্ট কানে আসছে নিশির। নিশির মনে পড়ে গেল মায়ের বলা কথা বাসর রাতে স্বামীকে সালাম করতে হয়। নিশি নিজেকে সামলিয়ে বিছানা থেকে চটজলদি নেমে রেহানকে সালাম করে নেয়। নিশির কাজে রেহান কিছু আবাক হয়ে বলে।
–এটা কি করলে??
–মা বলেছে বাসর ঘরে স্বামীর পা ধরে সালাম করতে।
রেহান দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে
–এরপর থেকে আর আমাকে সালাম করবে না কারন আমাদের ইসলামে পায়ে ধরে সালাম করার জায়েজ নেই। মুখে সালাম দিবে তাহলেই হবে বুঝেছো।
–জি।
একরাশ লজ্জা নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিশি রেহানের সামনে। আর সমানে শ্বাস নিচ্ছি মনে হচ্ছে কেউ যেন বুকের মাঝে হাতুরি পিটাছে। রেহান নিশির থেকে দু কদম পিছিয়ে বলে
–তোমার সাথে আমার কিছু কথা।
–কি কথা?
নিশি তো লজ্জায় রেহানের দিকে তাকাতেই পারছে না নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রেহান ডুক গিলে বলা শুরু করে ।
–আমি তোমাকে কোনো দিনও হয়তো আমার স্ত্রীর মার্যাদা দিতে পারবো না।
রেহানের কথা শুনে এবার নিশি রেহানের দিকে তাকায়। এবার আর লজ্জায় নয় আবাক হয়ে তাকায় রেহানের দিকে। কাপাকাপা গলায় নিশি রেহানকে বলে
–মানে ঠিক বুঝলাম না আমি, একটু পরিস্কার করে বলবেন।
–দেখো নিশি আমি জানি তুমি এটা শুনার পর হয়তো ভেঙ্গে পড়বে কিন্তু আমি এই বিয়েটা করতে চাই নি।
–করতে চান নি মানে। তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আপনি নিজের ইচ্ছেতে বিয়েটা করেন নি।
–নাহ মা আমাকে বাধ্য করেছে। ইমোশনাল ব্লাকমেল করে বিয়েটা করতে বাধ্য করেছে।
নিশি কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ধপ করে বেডে বসে পড়ে রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে।
–আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে যার জন্য আমাকে মেনে নিতে পারছে না।
–আমি তোমার সাথে আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না।
নিশির হঠাৎ করেই কেন জানি রাগ উঠে যায় আর বেড থেকে উঠে রেহানে কলার চেপে ধরে বলে
–কিসের পার্সোনাল বিষয় হুম কিসের পার্সোনাল বিষয়। আমি আপনার স্ত্রী এখন আপনার লাইফে কে আছে না আছে তা আমার জানা খুব দরকার। যার জন্য আপনি আমাকে মেনে নিতে পারছেন না তার কথা জানা দরকার। মানছি আপনি আমাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছেন। কিন্তু এখন আমি আইগত আর ইসলামের শরিয়ত মতে আপনার স্ত্রী। তাই আপনার সব কিছু জানার অধিকার আছে।
রেহান কিছু ভড়কে যায় নিশির ব্যবহারে। কিছুটা রাগ নিয়ে নিশিকে বলে
–কি করছোটা কি নিশি আমার কলার ছাড়ো।
নিশি কালার না ছেড়ে রেহানের কলারটা ধরে নিজের আর একটু কাছে এনে।
–কেন কলার ছাড়বো? আপনি আমার স্বামী তো আপনার কলার ধরবো না তো অন্য কারোর স্বামীর কলার ধরবো। শুনুন মিস্টার রেহান আহমেদ আপনি এটা ভাববেন না আপনার প্রেমিকা আছে বলে আমি আপনাকে ডির্বোস দিয়ে দিবো আর বলবো যান তাকে বিয়ে করে নেন। তা হবে না এত সহজে আমি আপনাকে ছাড়ছি না বুঝেছেন। নেন এবার আপনার কলার ছেড়ে দিলাম।
রেহান নিশির সামনে তুড়ি বাজাতেই নিশি নিজের কল্পনার জগত থেকে ফিরে আসে।
–কোথায় হারিয়ে গেলে কিছু তো বলো।
–এতক্ষন যা বলেছি ওনাকে সব কল্পনা ছিলো আমার। [মনে মনে বলে নিশি]
–কি হলো কথা বলছো না কেন??
–কি বলবো?? সব তো আপনিই বলে দিলেন।
–নিশি আমি জানি তুমি কষ্ট পেয়েছো কিন্তু আমি চেষ্টা…
রেহানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিশি বলে উঠে
–থাক আপনাকে কিছু বলতে হবে না আমি যা বুঝার বুঝে গেছি। আপনি শুয়ে পরেন আমি নিচে শুয়ে পড়বো।
–নাহ তুমি বেডে থাকো আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি।
নিশি আর কিচ্ছু বলে না ফ্রেস না হয়েই শুয়ে পড়ে। অন্য দিকে রেহান ফ্রেস হতে চলে যায়। নিশি মুখে বালিশ গুজে নিশব্দে কান্না করছে। ওর এই রাতটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো কিন্তু রেহান সব শেষ করে দিলো। রেহান ফ্রেস হয়ে আসতেই নিশি কান্না থামিয়ে ঘুামনোর ভান করে। রেহানও নিশির দিকে এক পলক তাকিয়ে চুপচাপ সোফাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষন পর নিশি চোখ মেলে তাকায় আর মনে মনে বলে।
–এত সহজে আমি হার মানবো না যেই শাকচুন্নি আপনার জীবনে থাকুক না কেন। তাকে আপনার জীবন থেকে সারা জীবনের জন্য মুজে দিয়ে নিজেকে আপনার জীবনে আনবো। আপনি আমার স্বামী আপনাকে আমি অন্য কারোর সাথে শেয়ার করতে পারবো না কিছুতেই না। এত সহজে আমি আপনাকে ছাড়বো না।
চলবে…..