তুমি আমার পর্ব-০১

0
2555

#তুমি আমার (পর্ব ০১)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
কলেজ ছুটির পর রিক্সার জন্য রাস্তায় প্রায় ১৫ মিনিট দাড়িয়ে আছে মেঘা। কড়া রোদে কপাল বেয়ে ফোটা ফোটা ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে নিজে নিজেই বিড়বিড় করছে মেঘা……উফ এই রিক্সা গুলোর কি হলো আজ,সবগুলো কি ধর্মগট করে বসে আছে আমাকে নিতে হবে বলে! এই রোদে তো দাড়িয়ে থাকাও সম্ভব নয়।
.
মেঘা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে পুরো নাম মেঘা আফরোজ এবার ইন্টারে ভর্তি হয়েছে। ওর বাবা ছোটখাটো একটা চাকরি করে মেঘার ছোট একটা ভাই আছে নাম তন্ময় সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।
.
মেঘা আর কোনো উপায় না পেয়ে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাটতে লাগলো। কিছুদুর এগোতেই চোখ পড়লো একটি বাচ্চার দিকে,বাচ্চাটি রাস্তার মাঝের দিকে যাচ্ছে। দুপুর টাইম তাই রাস্তায় তেমন গাড়ি ছিলো না তবে ছোট ছোট গাড়ি গুলো দ্রুত গতিতে ছুটছে। মেঘা আর দেরি না করে দৌড়ে গেলো বাচ্চাটির দিকে,বাচ্চাটিকে কোলে তুলে ঘুরে দাড়াতেই বড় একটা গাড়ি ওর এক থেকে দেড় হাত দুরত্বে ব্রেক করলো। মেঘা ভয় পেয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলো গাড়িটা দাড়িয়ে পড়েছে,মেঘা আর দেরি না করে সরে গেলো।

হঠাৎ এভাবে গাড়ি ব্রেক করায় গাড়ির পেছনে বসে থাকা রেহান কপাল কুঁচকে ড্রাইভারকে বললো
– কি ব্যাপার এভাবে ব্রেক করলে কেনো?
– ছোট স্যার সামনে একটা মেয়ে একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে পড়েছিলো।
– কোথায় মেয়ে কেউ তো নেই! সামনে তাকিয়ে।
– মেয়েটা ওই যে রাস্তার পাশে চলে গিয়েছে।
ড্রাইভারের চোখ অনুসরণ করে রেহান সেদিকে তাকালো। দেখলো একটি মেয়ে একজন মহিলার কোলে বাচ্চাটিকে দিলো। আর সে মহিলাটি হাসি মুখে মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কিছু বলছেও কিন্তু বুঝা যাচ্ছে না। রেহান নিজের চোখ সরিয়ে নিলো সেদিক থেকে। শান্ত গলায় ড্রাইভারকে বললো
– দাড়িয়ে আছো কেনো চলো।
.
রেহান ধনী ঘরের ছেলে পুরো নাম আহনাফ আহমেদ রেহান,অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। বাবা বড় বিজনেসম্যান।ওরা দুভাই বড় ভাই রাফসান বাবার সাথে বিজনেস সামলায়।
.
🌿
.
মেঘা রোজকার মত আজও খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে নিলো। তারপর রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো সকালের নাস্তা বানাবে বলে। ৭ টার মধ্য নাস্তা রেডি করে তন্ময়কে ডেকে তুললো,বাবাকেও ডাকলো।
খাবার টেবিলে রাশেদ সাহেব(মেঘার বাবা)মেঘাকে বললো
– মেঘা মা তোমার খুব কষ্ট হয় তাইনা একা সব সামলাতে?
– না বাবা কষ্ট কেনো হবে!
– এই যে এই বয়সে তুমি সংসার সামলাচ্ছো তন্ময়ের দেখাশুনো করছো আর নিজের পড়াশুনায় তো আছেই। আজ যদি তোমার মা থাকতো তাহলে তোমাকে এত দিক দেখতে হতো না। চোখের পানি মুছে।
(মেঘার মা নেই ৩ বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। ছেলে মেয়ের কথা ভেবে রাশেদ সাহেব আর দ্বতীয় বিয়ে করে নি।)
– আমার কোনো কষ্ট হয় না বাবা তুমি ভেবো না এত।
রাশেদ সাহেব মেয়ের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে হাসি মুখে বললো
– আমার ছোট্ট মেয়েটা সত্যি বড় হয়ে গেছে। মেঘার মাথায় হাত রেখে।
তন্ময় খেতে খেতে বললো
– বাবা আমিও কিন্তু বড় হয়ে গিয়েছি,আপু যেমন আমার খেয়াল রাখে আমিও তেমন আপুর খেয়াল রাখি।
তন্ময়ের কথা শুলে মেঘা আর ওর বাবা দুজনেই হেসে উঠলো।
.
🌿
.
দুদিন পর মেঘা আজ কলেজে এসেছে। দেরি হয়ে গিয়েছে তাই তাড়াহুড়া করে কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো। কাধে থাকা ব্যাগটা মাটিতে পড়ে গিয়েছে।মেঘা নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাড়ালো। সরি বলার জন্য সামনে তাকাতেই দেখলো একটি ছেলে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। ছেলেটি রেগে বললো
– এই মেয়ে চোখে দেখো না নাকি! দিলে তো আমার পেপারস গুলো ফেলে।
মেঘা খেয়াল করলো নিচে অনেকগুলো কাগজ পড়ে আছে,মেঘা কাগজ গুলো মাটি থেকে তুলে ছেলেটির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– সরি ভাইয়া আসলে ক্লাসে লেট হয়ে গেছে তাই তাড়াহুড়োতে খেয়াল করি নি। অপরাধী স্বরে বললো।

মেঘার এভাবে কথা বলাতে সামনে থাকা ছেলেটি ওর মুখের দিকে তাকালো তারপর মেঘার হাত থেকে পেপারস গুলো নিলো। মেঘা আর কিছু না বলে নিজের ব্যাগটা তুলে ক্লাসের দিকে চলে গেলো।
ছেলেটি আর কেউ নয় রেহান ছিলো,মেঘার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলো
– এই মেয়েটিকে কোথায় যেনো দেখেছি আমি!!
এর মাঝেই তানভির এসে রেহানকে খুচিয়ে বলল
– কিরে রেহান মেয়েটি তোর পেপারস গুলো ফেলে দিলো তুই কিছু না বলেই ওকে যেতে দিলি।
– আরে মেয়েটি ইচ্ছে করে ফেলেনি তাড়াহুড়ো করে আসছিলো খেয়াল করেনি হয়তো।
তানভির হা করে রেহানের দিকে তাকিয়ে রইলো
– ওই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো তুই?
– দেখছি তোকে আচ্ছা তুই রেহান তো??
– তানভির কি যা তা বলছিস তুই!!
-ভুল তো বলিনি এর আগেও তো দুইটা মেয়ের সাথে তোর ধাক্কা লেগেছিলো তুই ওদেরকে ইচ্ছে মত ঝেড়েছিলি আর আজ!!
– আগের মেয়েগুলো ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলো তাই ওভাবে বলেছিলাম। কথা না বাড়িয়ে চল তো এখন।
.
🌿
.
রাতে রেহান নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাৎই মেঘার মুখটা ভেসে উঠলো ওর চোখে। রেহান চোখ বন্ধ করে আবার খুলে নিজে নিজেই বলতে লাগলো
– কি হলো ব্যাপারটা! ওই মেয়েটির মুখ আমার চোখে ভেসে উঠলো কেনো! এমনটা কেনো হচ্ছে আমার। রেহান আবার চোখ বন্ধ করলো ভেসে উঠলো
মেঘার সে মায়াবি মুখটা।
রেহান ধপ করে চোখ খুলে বিড়বিড় করে বললো
– আজব তো! মেয়েটিকে চিনি না জানি না আজই প্রথম দেখলাম,মুখের দিকেও তো তেমন নিখুত ভাবে তাকাইনি!তবে মেয়েটির মুখে যে একটা মায়া জড়িয়ে ছিলো এটা বুঝতে পারছি।দেখে তো মনে হলো বয়স খুব একটা বেশি নয়। কিন্তু এটাই তো বুঝতে পারছি না ওই মেয়েটি কেনো আমার চোখে ভেসে উঠছে?

রেহান ল্যাপটপটা অফ করে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাড়ালো। তারপর ডায়েল করলো রুহির নাম্বারে দুবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো,ওপাশ থেকে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো
– হ্যালো রেহান বলো।
রুহির কথা শুনে মনে হচ্ছে ব্যাস্ততার মাঝে এসে ফোনটা ধরেছে সে।
– রুহি তুমি কি বিজি ছিলে?
রেহানের প্রশ্নে রুহি কিছুটা চমকালো নিজেকে সামলে বললো
– না না কি নিয়ে বিজি থাকবো আমি। আসলে রেহান আমার না খুব ঘুম পেয়েছে কাল কথা বলবো।
রেহান কিছু না বলেই ফোনটা কেটে ব্যালকনিতে থাকা সোফায় ছুড়ে মারলো।
.
🌿
.
রুহি রেহানের গার্লফ্রেন্ড দের বছরের রিলেশন ওদের। শুরুর দিকে ওদের রিলেশন ভালোই চলছিলো। কিন্তু ইদানীং রুহির মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখছে রেহান। রুহির ফোনে কল দিলে বেশি সময়েই ওয়েটিং পাওয়া যায় আর যদিও রিসিভ করে বেশিক্ষণ কথা বলে না। তবে রেহান এ নিয়ে কিছু বলেনি ভাবে হয়তো কোনো রিলেটিভ এর সাথে কথা বলছে বা ব্যাস্ত আছে।

কিন্তু রুহির এমন ইগনোর করাটা রেহান আজ মানতে পারছে না ফোনটা হাতে তুলে আবারো কল দিলো রুহির নাম্বারে। একবার রিং হলো ধরে নি দ্বিতীয় বার রিং হওয়ার পর কেটে দিলো। এতে রেহানের রাগ উঠে গেলো আবারো কল দিলো তখন রিসিভ হলো ফোনটা।
ওপাশ থেকে কড়া গলায় রুহি বলে উঠলো
– রেহান তোমাকে না বললাম আমার ঘুম পেয়েছে।
– সত্যিই কি তুমি ঘুমাবে নাকি অন্য কোনো কাজে বিজি তুমি?
রেহান নিজেও জানে না ও কি বললো মুখ ফসকেই কথাটা বলে ফেলেছে।
রুহি এবার কেঁপে উঠলো আমতা আমতা করে বললো
– রে রেহান বেবি অ অন্য ককি কাজে বিজি থাকবো আমি!!
– রুহি এভাবে কথা বলছো কেনো মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছো!কোনো প্রবলেম?
– না আমি ভভয় কেনো পাবো।
রেহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেই ফোনটা কেটে দিয়ে সোফাতে বসে গা এলিয়ে দিলো।

রেহান ফোনটা কাটার পর রুহি কপালের ঘাম মুছে শান্ত হয়ে বসলো। পেছন থেকে রুহিকে কেউ জড়িয়ে ধরে বললো
– রুহি বেবি কি বলেছে রেহান ঘামছো কেনো তুমি?
– আমার মনে হচ্ছে রেহান আমাকে সন্দেহ করছে।ধরে ফেলবে না তো আবার!
– আরে রুহি ঘাবড়াচ্ছো কেনো। কিছুই হবে না তুমি শুধু কৌশলে ওকে হাতে রাখো,ওকে সময় দাও বেশি বেশি তাহলে আর ওর মাথায় কিছু আসবে না।
– হুম ঠিক বলেছো।
তারপর দুজনেই রুম কাপিয়ে হেসে উঠলো।
·
·
·
চলবে…………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে