তুমি আমার পর্বঃ ০৫

0
3031

তুমি আমার পর্বঃ ০৫
– আবির খান

আমি নাতাশার অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। ও তাকিয়ে আছে। আমরা কেউ কোনো কথা বলছি না। কিন্তু আমাদের চোখ অনেক কথা বলছে। হয়তো একটা বইও লেখা যাবে সে কথাগুলো দিয়ে৷ হঠাৎই ইশা এসে হাজির। ইশার ডাকে আমার আর নাতাশার ঘোর ভেঙে যায়।

ইশাঃ ভাইয়া….

আমিঃ কি বল। (অপ্রস্তুত হয়ে।)

ইশাঃ আপুকে ডাকে৷

নাতাশাঃ চলো চলো।

নাতাশা ইশার সাথে চলে যাচ্ছিল। আর বারবার ঘুরে ঘুরে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছিলাম। ওরা চলে গেলে আমিও বাসায় চলে আসি। এভাবে আমাদের মাঝে চোখাচোখি আর হঠাৎ করে দেখা চলছিল।

৩/৪ দিন পর,

একদিন সকালে মা আমাকে ডাক দেয়। আমি মায়ের ডাক শুনে রান্না ঘরে ছুটে যাই।

আমিঃ হ্যাঁ বলো মা।

মাঃ আবিদ, নাতাশাকে একটু ভার্সিটিতে দিয়ে আয়তো বাবা। ওর বাবা আজ তোর বাবার সাথে শহরে গেছে।

আমিঃ আচ্ছা।

আমি রেডি হয়ে বাইরে উঠানে বসে আছি। আর ভাবছি, আজ অনেকটা সময় আর অনেকটা পথ দুজন একসাথে পাড় করবো। ভাবতেই মনের মধ্যে কেমন জানি করছে৷ হঠাৎই কারো মধুর কণ্ঠ কানে ভেসে আসলো পিছন থেকে।

নাতাশাঃ আমি রেডি।

আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি নাতাশা সুন্দর করে একটা বোরখা আর হেজাপ পরে আছে। ওকে এখন খুব সুন্দর আর অনেক বেশি মায়াবী লাগছে।

নাতাশাঃ কি হলো যাবেন না।

আমি যেন ঘোরে পরে গিয়েছিলাম। ওর ডাকে হুশ আসে। আমি তাড়াতাড়ি বলি,

আমিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ চল।

ও আমার অবস্থা দেখে হেসে দেয়। আমি লজ্জা পেলাম।

আমিঃ হেঁটে হেঁটে যাবে??

নাতাশাঃ চলুন আজ হেঁটেই যাই।

আমিঃ আচ্ছা।

অনেক খুশি হলাম আমি। হেঁটে হেঁটে গেলে অনেকটা সময় পাবো ওর সাথে কথা বলার জন্য। ও আর আমি পাশাপাশি হাঁটছি। রাস্তার দুপাশে বিশাল বিশাল গাছ। সবুজের সমাহার। বাতাসে মিষ্টি ঘ্রাণ। আর ফ্রেশ অক্সিজেন। বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু কীভাবে যে নাতাশার সাথে কথা বলা শুরু করবো তাই বুঝতে পারছি না। অনেক ভেবে বললাম,

আমিঃ আজ তোমার বাবা বাইরে গিয়ে ভালোই হলো কি বলো??

নাতাশাঃ কেন??

আমিঃ এই যে তোমার সাথে দুকদম হাঁটার সৌভাগ্য হলো আমার৷

নাতাশাঃ আমাকে লজ্জা দিতে পারলে আপনার ভালো লাগে বুঝি??

আমিঃ কি বল?? কই লজ্জা দিলাম। মনের কথাতো বললাম।

নাতাশাঃ কি তার মনের কথা। হুহ। (রসিকতা করে।)

আমিঃ আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি??

নাতাশাঃ জ্বি করেন।

আমিঃ ধর, আমি কাউকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি কি সত্যিই তাকে ভালোবাসি কিনা তা কিভাবে বুঝবো??

নাতাশা আমার এমন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায়। তারপর অাবার সামনে তাকিয়ে বলে,

নাতাশাঃ যদি কাউকে সত্যিই মন থেকে ভালোবাসেন তাহলে তার কথাই সবসময় মাথার ভিতর ঘুরবে। তাকে নিয়ে সবসময় ভাবতে ইচ্ছা করবে। তার জন্য সবসময় মন কাঁদবে। মোট কথা আপনার সব কিছু জুড়েই শুধু সে থাকবে।

কথাটা বলেই নাতাশা যেন থমকে যায়। আমি স্পষ্ট ওর চোখেমুখে চিন্তার ছাপ দেখছি। কারণ ও একটু আগে যা বলেছে ও নিজেই তার মুখোমুখি হচ্ছে। সত্যিকারের ভালোবাসার সংজ্ঞা আমার জানা। শুধু নাতাশাকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এই প্রশ্ন।

নাতাশা মনে মনে ভাবছে, আমি একটু আগে যা বললাম তা তো আমি নিজেই ফেইস করছি। আমার এখন পুরোটা সময় কাটে আমার পাশে থাকা এই মানুষটার সাথে। তাকে নিয়েই তো সবসময় ভাবি। তার জন্যই তো মন কাঁদে। তাহলে কি আমিও তাকে ভালোবাসি??

আমিঃ হ্যাঁ।

নাতাশা আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকায়।

আমিঃ ও বাবা এভাবে তাকাচ্ছো কেন??

নাতাশাঃ আপনি হ্যাঁ বললেন কেন?? (অবাক হয়ে।)

আমিঃ মনে হলো তোমার মনের ভিতর একটা প্রশ্ন ঘুরছিল। তাই তার উত্তর দিলাম। সঠিক হয়েছে কি??

নাতাশাঃ এই আপনি কি মনের কথা শুনতে পান নাকি?? (ভয়ে ভয়ে।)

আমিঃ আরে না না। তবে শুনেছি মনের মানুষের কথা আরেক মনের মানুষ স্পষ্ট শুনতে পারে।

নাতাশাঃ কচু শুনেছেন আপনি। (মজা করে।)

নাতাশা একটা হাসি দিয়ে আবার নিজের ভাবনায় হারিয়ে যায়। নাতাশা ভাবছে, আমি কি সত্যিই তাকে ভালোবেসে ফেলেছি?? হয়তো। কেনই বা বাসবো না। পাজি লোকটা আসছে পর থেকে সারাদিন আমার সাথে লেগে থাকে। আমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। আমার একাকিত্বকে ঘুচে দিয়ে আমাকে সময় দেয়। আর পঁচাটা দেখতেও কত সুন্দর। আর মনের দিক থেকেও অনেক ভালো। কিন্তু খালি আমাকে লজ্জা দেয়। বদ একটা। আমাকে নিজের প্রেমে ফেলে এহহ কি সুন্দর হাসছে পাজিটা। মনটা চায় গাল দুটো টেনে দি।

আমিঃ আমাকে বকা দেওয়া শেষ হলে বলো আর কতদূর তোমার ভার্সিটি। হাহা।

নাতাশা আমার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। ও ভেবেই পাচ্ছে না আমি কিভাবে ওর মনের কথা বুঝতে পারছি।

নাতাশাঃ আরেকটু সামনেই। আস্তে করে।

আমিঃ আচ্ছা।

নাতাশাঃ আচ্ছা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি??

আমিঃ হ্যাঁ করো??

নাতাশাঃ আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে??

আমিঃ হ্যাঁ আছেতো। (মজা করে।)

বলা মাত্রই মুহূর্তেই নাতাশার মায়াবী মুখখানা আমাবস্যা রাতের মতো কালো হয়ে যায়। মাথা নিচু করে ফেলে। বুঝলাম অনেক কষ্ট পেয়েছে মহারাণী। তাই বললাম,

আমিঃ এই যে মহারাণী মজা করেছি। আমার কেউ নেই। আপনার মতোই আমি।

নাতাশা খুশী হয়ে যায় অনেক। আর বলে,

নাতাশাঃ সত্যিইই??

আমিঃ জ্বি। কিন্তু আপনি এত্তো খুশী হচ্ছেন কেন হুম??

নাতাশা অনেক লজ্জা পায় আর বলে,

নাতাশাঃ কই না তো। আপনিও না।

আমিঃ আমিও না কি?? হুম??

নাতাশাঃ পঁচা।

আমিঃ আচ্ছা।

নাতাশা হাঁটতে হাঁটতে ভাবছে, উনাকে ভালোবাসাটা কি ঠিক?? কোথায় উনি আর কোথায় আমি। কোনো ভাবেই সম্ভব নয় এই সম্পর্ক। তবে আমিতো আড়ালে তাকে ভালোবাসতেই পারি। সে কি আর বুঝবে।

আমিঃ তোমার ছুটি কখন??

নাতাশাঃ ১ টায়।

আমিঃ আচ্ছা। আমি নিতে আসবো নে।

নাতাশাঃ হুম। ওইতো আমার ভার্সিটি। আপনি এখন যান। আমি একা যেতে পারবো। আমার বান্ধবীরা আপনাকে দেখলে সমস্যা হবে।

আমিঃ আচ্ছা যাও।

নাতাশাঃ সাবধানে যাবেন।

আমিঃ শোনো।

নাতাশাঃ জ্বি।

আমিঃ নিজের খেয়াল রেখো।

নাতাশা একটা হাসি দিয়ে ভিতরে চলে যায়। আমিও এরপর চলে আসি।

ভার্সিটিতে,

রুমিঃ এই নাতাশা দাঁড়া দাঁড়া।

নাতাশা দাড়িয়ে ঘুরে তাকিয়ে দেখে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড রুমি।

নাতাশাঃ হ্যাঁ দোস্ত বল।

রুমিঃ এই এই, ওই সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেটা কেরে??

নাতাশাঃ তুই দেখে ফেলেছিস?? (অবাক করে।)

রুমিঃ জ্বি। এখন বলেনতো ছেলেটা কে হুম??

নাতাশাঃ আচ্ছা চল বসে সব বলছি।

রুমিঃ আচ্ছা চল।

এরপর নাতাশা রুমিকে ওর সব মনের কথা বলল। রুমি শুনে কিছুটা দুঃখী হয়ে নাতাশাকে বলল,

রুমিঃ দোস্ত, এখন কি করবি??

নাতাশাঃ জানি না দোস্ত। কিন্তু উনাকে হয়তো আমি পাবো না। কিন্তু উনাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে ভাবতেও পারছি না। উনি প্রচুর ভালো একটা মানুষ।

রুমিঃ হুম বুঝলাম। কিন্তু তার পরিবার কি তোদের মেনে নিবে বল??

নাতাশার মুখখানা চিন্তায় মলিন হয়ে যায়। হতাশা নেমে আসে নিজের মধ্যে।

রুমিঃ আরে চিন্তা করিস না। যা আছে হবে।

নাতাশাঃ দোস্ত ওনাকে যে আমি ভালোবাসি তা কখনোই বলবো না। কখনোই না।

রুমিঃ না বললে পাবি কীভাবে??

নাতাশাঃ না পাই। কিন্তু বলবো না। আমরা অনেক গরীব পরিবারের। উনি আমার থেকে আরো ভালো এবং বড় পরিবারের মেয়েকে পাবে। আমাকে না। আমি উনার যোগ্য নারে দোস্ত।

রুমিঃ মন খারাপ করিস না দোস্ত। তোর কি মনে হয় ভাইয়া তোকে ভালোবাসে??

নাতাশাঃ জানি নারে। কিন্তু তার কথা বার্তা শুনলে মনে হয় সে আমাকে অনেক ভালোবাসে।

রুমিঃ তাহলে ভাইয়াকে বলে দে।

নাতাশাঃ না না দোস্ত। এ সম্ভব না। তার চেয়ে আমি আর তার সাথে বেশি কথা না বলি। তার থেকে এড়িয়ে চলবো। এতেই সবার ভালো। নাহলে তার প্রতি আমি আরো অনেক দুর্বল হয়ে যাবো।

রুমিঃ আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস তাই করিস।

নাতাশাঃ হুম। চল ক্লাসে যাই।

এরপর নাতাশার ক্লাস শেষ হলে আমি আনতে যাই। কিন্তু আসার সময় নাতাশা আমার সাথে একটা কথাও বলে নি। চুপচাপ মাথা নিচু করে ছিল। আমি কোনো কথা বললেও তেমন কোনো জবাব দেয় নি। বুঝলাম না হঠাৎ ওর কি হলো। এভাবে আরো কয়েকদিন চলে গেল। কিন্তু নাতাশা আমার সাথে ঠিক মতো কথাই বলছে না। আমাকে এড়িয়ে চলছে। আমি কোনো ভাবেই বুঝতে পারছি না যে নাতাশার কি হয়েছে। একদিন বিকেলে যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল তখন ও আমার রুমের সামনে দিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছিল। আমি সেই সুযোগে হঠাৎ করে ওর হাত ধরে টান দিয়ে ওকে আমার রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দি। নাতাশা চমকে যায় ঘটনার আকষ্মিকতায়। প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে ও। কারণ ও হয়তো ভাবতেই পারে নি ওর সাথে এমন কিছু হবে। আমার চোখগুলোও রাগে লাল হয়ে আছে। আমি নাতাশার কাছে যাচ্ছি আর নাতাশা পিছনে যাচ্ছে। ও ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে।হঠাৎই ও…

চলবে…

কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। আর সাথে থাকবেন সবসময়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে