# তুমি আছো হৃদয়ে
# পর্ব-১
লেখাঃ আমিনুর রহমান
যেদিন আমার গার্লফ্রেন্ড মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিলো সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের তিন বছরের সম্পর্কটা হয়তো শেষ হতে চলেছে। তাই হয়তো নুসরাতের মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার খবর শুনে কেনো জানি আমি খুশি হতে পারিনি। কারণ আমি তখন গ্রামের একটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব সাধারণ একটা ডিপার্টমেন্টে অধ্যয়ন রত। আমার ভয় হতে লাগলো নুসরাত হয়তো আমাকে ভুলে যাবে। আমার থেকে হাজার হাজার ভালো ছেলে তাঁর জন্য প্রস্তুত থাকবে,তাঁর সাথে প্রেম করার জন্য,তাকে বিয়ে করার জন্য।
তবে নুসরাত তেমন কিছু করলো না। চান্স পাওয়ার পর সে খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,
“আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আমিনুল। অনেক ছোট থেকেই আমার ইচ্ছে ছিলো আমি ডাক্তার হবো। বাবা মাও আমাকে সাপোর্ট করে এসেছেন সবসময়। এই দিনটির জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। আজ আমার থেকে হয়তো এই পৃথিবীতে সুখী কেউ নেই।”
আমি তখন কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। নুসরাত হঠাৎ করেই আমার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে একটু দূরে চলে যায়। আমি বুঝলাম আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। সেদিনই নুসরাতের সাথে আমার শেষ দেখা হবে আমি কোনোদিন কল্পনাও করিনি। নুসরাত আমার কাছ থেকে সেদিন চলে যাওয়ার পর তাঁর সাথে কিছুদিন কথা হয় না। একসময় সে তাঁর নতুন গন্তব্যে চলে যায়। এই সময়ের মাঝেও তাঁর সাথে আমার দেখা হয়নি,কথাও হয়নি। হয়তো বা চলে যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করবার প্রয়োজন মনে করেনি। তবে আমাকে ফোন দিয়ে দুমিনিট কথা বলেছিলো। এটাই আমার কাছে অনেক কিছু মনে হয়েছিলো। অন্তত যাওয়ার আগে আমাকে মনে করে কথা বলেছে।
আমি নুসরাতকে খুব বেশি ফোন দিতাম না,মেসেজও করতাম না খুব একটা। আমি কখনোই চাইতাম না আমার কারণে নুসরাত এর পড়ালেখায় কোনো ডিস্টার্ব হোক। কারণ আমি জানতাম মেডিক্যালে অনেক পড়াশোনা করতে হয় তাই ফোন দিয়ে তাঁর মূল্যবান সময়টুকু আমি নষ্ট করতে চাইতাম না। তবে মাঝে মাঝে আমি মেসেজ করতাম,ফোন দিয়ে কথা বলতাম। তখন অনেক ভালো লাগতো,সেও আমার সাথে অনেক মুগ্ধতা নিয়ে কথা বলতো অামি বুঝতে পারতাম।
তবে আমাদের খুব বেশি সময় ধরে কথা হতো না। আগে যেমন আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলতাম। কেউ ভুলেও কখনো ফোন রাখতে চাইতাম না। এমনও রাত গিয়েছে যে রাতে আমরা দুজন না ঘুমিয়ে কথা বলে কাটিয়েছি। কিন্তু এখন দশ মিনিট কথা বললেই নুসরাত ফোন রেখে দিতে চায়। আমি যখন বলতাম এতোদিন পরপর আমাদের কথা হয় তারপরেও এতো কম সময় কথা বলে তোমার ভালো লাগে?
তখন সে বলতো কিছু করার নেই।
“এমন একটা সময় থাকে যখন চাইলেই সবকিছু করা যায় না। আমি চাইলেও তোমার সাথে লংটাইম কথা বলতে পারবো না।”
আমিও তাঁর কথাগুলো বোকার মতো বিশ্বাস করতাম। ভাবতাম হয়তো হোস্টেলে থাকে সেজন্য ফোনে কথা বলতে সমস্যা। আর সেও তো বড় আপুদের সাথে রুম শেয়ার করে থাকে। তাই কম কথা বলেই সন্তুষ্ট থাকতাম আমি। এভাবে খুব ভালোই চলছিলো আমাদের দুজনের দিনকাল। প্রায় ছয়মাস খুব ভালোভাবেই গেলো। আমি যা ভেবেছিলাম তা হয়নি। নুসরাত এখনও আমাকে আগের মতোই ভালোবাসে।
একদিন হঠাৎ করেই দেখলাম নুসরাত তাঁর ফেসবুক আইডিতে কয়েকটা ছেলে আর মেয়ের সাথে একসাথে দাঁড়িয়ে কিছু পিক আপলোড করেছে। তখন আমার বুকের ভিতরটাতে একটু ব্যাথা অনুভব করলাম। যে মেয়েটা কোনোদিন নিজের পিক ফেসবুকে দিতো না সেই মেয়েটাই আজ সাজগোছ করে খুব সুন্দর করে পিক আপলোড করেছে। ভাবলাম নুসরাতকে একবার জিগ্যেস করি কেনো সে আমার অনুমতি না নিয়ে নিজের পিক ফেসবুকে দিলো। অন্তত আমাকে তো জিগ্যেস করা উচিত ছিলো। সে তো কোনো কিছু করার আগে অন্তত আমার কাছে বলে। কিন্তু আবার মনে হলো এটাতে হয়তো সে রাগ করতে পারে,কষ্ট পেতে পারে। তাই আর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালাম না। তুচ্ছ ভেবে এড়িয়ে গেলাম। প্রথমে জিনিসটা খারাপ লাগলেও পরে কিছু মনে হলো না। কারণ শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সাথে সাথে মেয়েদের অনেক পরিবর্তন হয়,মেয়েরা আগের থেকে অনেক আপডেট হয়। আর সেটা যদি পাবলিক ভার্সিটি কিংবা মেডিক্যাল কলেজ হয় তাহলে তো কোনো কথায় নেই। একটু পরে হলেও জিনিসটা বুঝতে পারলাম। তাই এটাকে সাধারণ ভাবেই নিলাম।
কিন্তু কিছুদিন পর যখন দেখলাম নুসরাত মাঝে মাঝেই তাঁর ছেলে বন্ধুদের সাথে পিক তুলে,তাও খুব কাছাকাছি ঘেষে পিক উঠে আবার সেই পিক ফেসবুকে আপলোড করে তখন কেনো জানি আমার সহ্য হলো না। আমি যাকে ভালোবাসি সে কেনো অন্য কোনো ছেলের এতো কাছাকাছি থাকবে? তাঁর কিসের এতো সম্পর্ক ছেলেদের সাথে? নিজের কাছেই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকলাম আমি। আমার খুব খারাপ লাগতো। যখন দেখতাম নুসরাত কোনো ছেলের কাঁধে হাত রেখে ছবি উঠেছে। আমি নুসরাতকে ফোন দেই কিন্তু সে ফোন ধরে না।
দুইদিন পর যখন সে ফোন ধরলো তখন আমি তাকে প্রথম যে কথাটা বলি সেটা হলো,
“তুমি আর তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরবে না। আমার অনেক খারাপ লাগে তোমাকে অন্য কোনো ছেলের পাশে দেখলে।”
কিন্তু নুসরাত আমার কথায় অনেক রাগ করে ফেলে। আমাকে অনেক কথা শোনায়। যে কথাগুলো প্রমাণ করে দেয় সে আমার সাথে থাকতে চায় না।
“তুমি আমাকে না করার কে? আমার জীবন,আমার যেভাবে ইচ্ছে,যার সাথে ইচ্ছে তাঁর সাথে ঘুরবো। তুমি আমাকে না করার কে? যেখানে আমার বাবা মা আমার স্বাধীনতায় কোনো হস্তক্ষেপ করে না সেখানে তুমি আমাকে এসব বলার কে? আমি যেসব ছেলের সাথে ঘুরে বেরাই তাদের যোগ্যতা,স্ট্যাটাস তোমার থেকে অনেক ওপরে। তুমি এখনও আপডেট হতে পারোনি। আমার মনে হচ্ছে আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত। কারণ তোমার জন্য আমি আমার লাইফ স্টাইল,চলাফেরা পরিবর্তন করতে পারবো না। আমি আমার মতো করেই নিজের জীবনটাকে চালাতে চাই। আমার স্বাধীনতায় কারো হস্তক্ষেপ আমি মেনে নিবো না,সে যেই হোক না কেনো। আশা করি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো।”
নুসরাত যখন কথাগুলো বলল তখন আমি কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু ভাবছিলাম এতোদিন ধরে এতো যত্ন করে গড়ে তোলা সাড়ে তিন বছরের সম্পর্কটা মাত্র একমিনিটেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস হচ্ছিলো না। তবে আমারও কেনো জানি এই সম্পর্কটার প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছে খুব করে বুঝতে পারছিলাম। তাই হয়তো আমিও নুসরাতকে কিছু কথা বলার মতো সাহস কুড়িয়ে ছিলাম।
” যেদিন তুমি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছিলে সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম তোমার সাথে আমার রিলেশনটা টিকবে না। লাস্ট ছয় মাসে আমিই সবসময় ফোন দিয়েছি তোমাকে,তোমার খোঁজ নিয়েছি। তুমি কখনো নিজ থেকে আমাকে কল করোনি। কখনো মনেও করোনি যে তোমাকে একজন মানুষ অনেক ভালোবাসে। যে মানুষটা তোমার ফোন পেলে কতোটা খুশি হয় সেটা হয়তো তুমি বুঝেও বুঝতে না। তুমি জানতে আমি তোমাকে অন্য কোনো ছেলের সাথে সহ্য করতে পারবো না। তাই তুমি ইচ্ছে করেই তোমার ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়াতে। তাদের সাথে ছবি উঠতে। সেগুলো তুমি আমাকে দেখানোর জন্য আপলোড করতে। আমি কিছুটা হলেও বুঝতাম,তবে সহ্য করতাম। তুমি এটাই চেয়েছিল আমি যেনো রাগ করে তোমাকে এমন কিছু বলি যেটার সাহায্যে তুমি আমাদের সম্পর্কের ইতি টানতে পারো। আজ তুমি সফল। আর কখনো কথা হবে না,দেখা হবে না তোমার সাথে।”
কথাগুলো বলে আমি ফোনটা চিরদিনের জন্য রেখে দেই। মনে মনে একটা জেদ করি কোনোদিন আমি তাকে ফোন দিবো না।
চলবে………