তুমি অপরূপা পর্ব-৩৮+৩৯+৪০

0
816

#তুমি_অপরূপা(৩৮)

সমুদ্র এগিয়ে গিয়ে মায়ের সামনে দাঁড়ালো। রেখা অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রর বুকের ভেতর সমুদ্রের উত্তালতা। টালমাটাল অবস্থা সমুদ্রের।বুকের ভেতর বিশ্বাসের,ভরসার ভীতটা কেউ যেনো এক ধাক্কায় গুড়িয়ে চুরমার করে দিয়েছে।

মা বলে ডাকলে বুকের যেখানে এক রাশ প্রশান্তি এসে জমা হতো সেখানে কেমন কষ্ট জমেছে হঠাৎ করেই।
এমন লাগছে কেনো!

রূপক নিঃশব্দে এসে সমুদ্রের পিছনে দাঁড়ালো।

সমুদ্র অস্থির হয়ে বললো “মা,এসব কি সত্যি মা?”

রেখা অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। তার কাছে ভীষণ অসহ্য লাগছে সবকিছু। ইচ্ছে করছে প্রচন্ড আক্রোশে সালমার গলা চে*পে ধরতে।
কেনো ফিরে এলো এই মহিলা?
না এলে তো কখনো কেউ জানতো না।সালমার অধ্যায় মুছে যেতো পৃথিবীর বুক থেকে।

সমুদ্র ধৈর্য ধরতে পারছে না আর।এজন্যই কি মা সালমা ফুফুকে অপছন্দ করতো!
আর এজন্যই কি রূপাকে মায়ের অপছন্দ!

সেলিম খান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।এতো কিছু ঘটে গেলো অথচ কেউ-ই টের পেলো না!

তানিয়া এগিয়ে এসে রেখার হাত ধরে বললো, “এই তো রেখা ভাবী আছেন। আমি সব বলবো, দেখি উনি অস্বীকার করতে পারেন কি-না।

কবির তখন আমেরিকায় সেটেল।সমানে টাকা কামাচ্ছে। সালমার প্রেমে পাগল সে।নারী জাতি এরকমই, একে অন্যের ভালো সহ্য করতে পারে না। তেমনই সালমাকে আমার ও হিংসা হতো। তার উপর সালমার প্রতি আমার শ্বশুর শাশুড়ির,তার দুই ভাইয়ের ভালোবাসা, আদর এসব আমার সহ্য হতো না। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু তাদের কাছে তাদের মেয়ে থাকতো আমি এটা মানতে পারতাম না।আবার কোথাও গেলে সবার চোখ সালমার উপরেই পড়তো এসব কিছুই সহ্য হতো না আমার।

অস্বীকার করবো না, সালমা রূপে,গুণে সবদিক থেকে আমার উপরে ছিলো, তেমনই রেখা ভাবীর ও।
আর এজন্যই আমার মন কিছুতেই সহ্য করতে পারে নি,তাই আমি চাইতাম সালমা যাতে এমন জায়গায় যায় যেখানে এতো সুঝ,সাচ্ছন্দ্য কিছুই পাবে না।

আর রেখা ভাবীর উদ্দেশ্য ছিলো আরেকটা। এই দুনিয়ায় কোনো জা চায় না তার অন্য জা তার থেকে সুন্দরী হোক,গুণবতী হোক বা তার থেকে এগিয়ে থাক।লোকে বলে জা’য়ের শত্রু জা।
রেখা ভাবীও চায় নি সালমা ওই বাড়ির বউ হোক,এতো বিলাসিতা পাক।ওনার ছোট বোনকে উনি কবিরের বউ বানাতে চাইতেন।যাতে কবিরের টাকা পয়সা ভোগ করতে পারেন।কবিরের এতো টাকা পয়সা বাহিরের কেউ ভোগ করবে,সালমা কে নিয়ে কবির আমেরিকায় থাকবে এসব কিছু রেখা ভাবী মানতে পারে নি। তাই উনিও আমার সাথে যুক্ত হলেন।কবিরের থেকে সালমার কথা বলে বলে অনেক টাকা হাতিয়েছেন উনি।কবির জানতো এসব টাকা সালমাকে দেয় ভাবী।সালমা কবিরের প্রতি দুর্বল শুধু মুখে প্রকাশ করে না এসব বলে বলে ভাবী কবিরের থেকে অনেক টাকা মেরে খেয়েছেন।
সালমার ভালোবাসায় কবির এতো অন্ধ ছিলো যে রেখা ভাবী যেভাবে বুঝিয়ে বলতো সেভাবেই বুঝতো।

উনি আর আমি যুক্তি বুদ্ধি করে ঠিক করলাম সালমা কে কবিরের বউ হতে দিবো না।

আর তাই আমি সালমাকে ইন্ধন দিতাম।বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতাম অনেক কিছু। শুনে সালমা ভয়ে তটস্থ হয়ে যেতো।

আর সালমা পালিয়ে যাওয়ার পর আমার বাবার বাড়ির ঠিকানায় চিঠি দিতে বলতাম,যাতে এই বাড়ির কেউ কখনো সালমার সাথে আমার যোগাযোগের কথা জানতে না পারে।
সালমা কে আমি উত্তর দিতাম না বেশি একটা। দুই একটা চিঠি যা দিয়েছি তাতে সবসময় বলতাম বাড়িতে অনেক ঝামেলার কথা, আব্বা আম্মার রাগের কথা।

তারপর সালমা ভেবে নিলো আব্বা ওকে মেনে নিবে না।তাই আর সালমার আসা হয় নি এই বাড়িতে।”

সমুদ্রের মাথা ঘুরে উঠলো। এতো নোংরা মানসিকতা তার মা’য়ের?
রূপক তার মা’কে কেনো ঘৃণা করতো সমুদ্র বুঝতো না কিন্তু আজ বুঝতে পারছে এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি তার মা।
একজন মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এভাবে খেললো?
এতো লোভ!

সমুদ্র টলতে লাগলো। মাথা ঘুরে পড়তে গিয়ে পেছনে কারো কাঁধ পেলো।তাকিয়ে দেখে রূপক নিজের কাঁধ এগিয়ে দিয়েছে। সমুদ্র আর সহ্য করতে পারলো না। রূপককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। সমুদ্রের হাউমাউ করে কান্না করা দেখে রেখার বুকের ভেতর কেমন হুহু করে উঠলো।
তার কোমল মনের ছেলে,নরম মনে আজ এতো বড় আঘাত পেলো!
রেখার আবারও রাগ হলো সালমার উপর। সব কিছুর জন্য এই মহিলা দায়ী।

সমুদ্র রূপককে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমি ভুল করে ফেলেছি ভাই,অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
আজ নিজের উপর নিজের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দিস তুই।কিভাবে পারিস তুই সব যন্ত্রণা চেপে রাখতে?এতগুলো বছর ধরে কিভাবে সব সহ্য করে এসেছিস?
আমি যে আজ একদিনেই মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে মা,,রা যাবো।
কখনো তোর যন্ত্রণা কি তা বুঝি নি। আজ বুঝতে পারছি তুই বুকের ভেতর কতো আঘাত সযত্নে লুকিয়ে এসেছিস!
কেনো এমন হলো বল তো!
চাচা যদি এসব জানতে পারে তবে হয়তো আজীবনের জন্য সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে।
ওনাদের দুই জনের লোভের জন্য কতগুলো মানুষ এলোমেলো হয়ে গেছে!

রূপক চুপ করে রইলো। রেখা প্রতিবাদ করে যে মিথ্যা কিছু বলবে সেই সাহস পেলো না। ছেলের সামনে আর কতো ছোট হবেন!
কেমন থমথমে হয়ে গেলো পরিস্থিতি। সবাই নিশ্চুপ।
সালমা বাকরুদ্ধ হয়ে আছে।তাকে ঘিরে এতো কিছু ঘটেছে?
অথচ তিনি কিছুই জানতে পারেন নি।
হায়রে মানুষ!
এতো নিচু মনের ও মানুষ হতে পারে!

রেখা দুপদাপ পা ফেলে চলে গেলো সেখান থেকে। সালমা সিরাজ হায়দারের হাত ধরে বললেন, ” আমারে বাড়ি নিয়া চলেন।এই বাড়ি আমার না,আপনার হাত ধরে সব কিছু ছাড়ছি একদিন সবার অলক্ষ্যে, আইজ সবার সামনে দিয়া সব ছেড়ে একেবারে চলে যামু।এই শহরের মানুষ ভীষণ স্বার্থপর। এরা দূষিত বাতাস, দূষিত পরিবেশে থাকতে থাকতে এগো মন ও দূষিত।
আর এক মুহূর্ত ও এইখানে থাকমু না।

ভাইজান, আপনে ভাবছেন জায়গা জমির লোভে আমি আবারও আইছি?
না ভাইজান।আমি যে মানুষটার কাছে গেছি তার অনেক কিছুর অভাব আছে।সেই সঙ্গে লোভ লালসার ও অভাব আছে।আপনাগো মতো হয়তো তিন বেলা ভালো খাইতে পারি না,কিন্তু দুই বেলা হইলেও আমার স্বামী শাকপাতা দিয়া খাওয়াইতে পারে,সেই তৌফিক আছে।আমার কিছু লাগবো না।
সেই ২৩-২৪ বছর আগেও যারে চাইছি,আইজ ও আমি তারেই চাই।আমার সবচাইতে সব সম্পদ সে-ই। ”

অন্তরা,রূপাকে নিয়ে সালমা সিরাজ হায়দারের হাত ধরে বের হয়ে এলো বাসা থেকে।

রূপক বাঁধা দিলো না,নিজেও বের হয়ে এলো। এতো দিন ধরে মনে যেসব সন্দেহ ঘুরপাক করছিলো সেসব আজ সত্যি বলে প্রমাণিত হলো।
বিড়বিড় করে রূপক বললো, “তুমি আমার মা,আমার সবচেয়ে আপন মানুষ। অথচ তোমাকেই আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি মা।তুমি সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি।
অথচ হওয়ার কথা ছিলো সবচেয়ে ভালোবাসার ব্যক্তি তুমি। ”

স্টেশনে গিয়ে সবার জন্য টিকিট কাটলো রূপক।
অন্তরা রূপকের হাতে টিকিট দেখে বললো, “আমরা তো ৫ জন,টিকিট ৬ টা কাটলেন কেনো?”

রূপক জবাব না দিয়ে মুচকি হাসলো।

বাস চলে এসেছে কিছুক্ষণ পর। রূপক অস্থির হয়ে তাকাচ্ছে এদিক ওদিক।
একে একে মানুষ উঠছে বাসে।শেষ মুহূর্তে দেখা গেলো সমুদ্র দৌড়ে আসছে কাঁধে একটা ব্যাগ নিয়ে।
রূপক হাত ইশারা করে বললো বাসে উঠে আসতে।

দেরি না করে সমুদ্র বাসে উঠে এলো।
তারপর রূপকের পাশের সীটে বসে বললো, “টিকিট তো কাটা হলো না!”

রূপক হেসে একটা টিকিট বের করে সমুদ্রের হাত দিলো।

হেসে ফেললো সমুদ্র,তারপর রূপকের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, “আজও আগের মতোই আছিস তুই,সব বুঝে যাস তুই।কিভাবে বুঝলি আমি যে আসবো?কিভাবে আগেই টিকিট কেটে ফেললি!”

রূপক জবাব না দিয়ে হাসলো।সমুদ্র মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো সেই হাসি।কতো দিন,কতো ঘন্টা, কতো মিনিট, কতো সেকেন্ড পর এই হাসি দেখছে সে!

পাশের সীটে রূপা আর ওর বোন বসেছে।সমুদ্র সেদিকে তাকালো না।আজ শুধু সে তার বন্ধুকে নিয়ে ভাবতে চায়।সবকিছু আজ ভীষণ তুচ্ছ তার কাছে।

চলবে

#তুমি_অপরূপা (৩৯)

যাত্রা বিরতি দিতে বাস থামলো হোটেলের সামনে। সবাই বাস থেকে নামলো হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিতে।
হোটেলের বাহিরে খোলা জায়গায় ও বসার ব্যবস্থা আছে।
কৃত্রিম এসির বাতাসের চাইতে সবাই প্রাকৃতিক বাতাস উপভোগ করতে বেশি আগ্রহী হলো, তাই সবাই বাহিরে বসলো।
রূপার পাশের চেয়ারে এসে সমুদ্র বসলো। আর মুখোমুখি রূপক। রূপার হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
এতোক্ষণ তো বাসে ভালোই ছিলো, এখন কেমন অস্বস্তি লাগছে তার।
অথচ ওরা দুজনেই নির্বিকার। যেনো রূপাকে কেউ-ই চেনে না।
দুজন কথা বলছে নিজেদের মধ্যে।

রূপা থেকে থেকে রূপকের দিকে তাকালো। রূপক ওর দিকে তাকাচ্ছে না।
অথচ রূপার হঠাৎ করেই রূপকের জন্য ভীষণ মায়া লাগছে।
এই মানুষটাকে সে যতটা খারাপ ভেবেছিলো এই মানুষটা তেমন নয়।
সে ভাই হিসেবে যেমন পারফেক্ট, তেমনই ভাইপো হিসেবে ও দায়িত্ববান, বন্ধু হিসেবেও তেমন বুক ফুলিয়ে সামনে দাঁড়ানোর মানুষ।
এই মানুষ স্বামী হিসেবেও তেমন হবে।
এ’কে যে স্বামী হিসেবে পাবে তার মতো সৌভাগ্যবতী মনে হয় আর কেউ নেই এই দুনিয়ায়।

সেই মেয়ে নিজেও জানে না,একটা খাটি সোনা সে পেতে যাচ্ছে যে কি-না সারাটা জীবন ছায়ার মতো তার পাশে থাকবে।

ভাবতে ভাবতে রূপা লজ্জা পেলো।
কি ভাবছে এসব সে!কেনো ভাবছে?
মন কে কেনো আর আটকে রাখতে পারছে না।
কিন্তু কি করবে রূপা,না রূপককে সে ভালোবাসে না কিন্তু তবুও কেনো এসব এলোমেলো ভাবনা মাথায় আসছে!

ভাবতে ভাবতে রূপা পানির বোতলের জন্য হাত বাড়ালো।
রূপা হাত বাড়াতে বাড়াতে রূপক বোতলের ক্যাপ খুলে রূপার দিকে এগিয়ে দিলো।
আরো একবার রূপা মুগ্ধ হলো। রূপক সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে তার সাথে কথা বলতেছিলো। কিন্তু তবুও তার খেয়াল রেখেছে ঠিকই।
এরকম একজন যত্নবান মানুষ কে না চায়?

রূপার বুক কেঁপে উঠলো। এই মানুষটা অন্যের হয়ে যাবে একদিন।রূপা ও একদিন অন্যের হয়ে যাবে।
আচ্ছা, রূপা যার হবে সে কি এভাবে রূপার যত্ন নিতে পারবে?

এই প্রথম বারের মতো রূপার ইচ্ছে হলো রূপককে ভালোবাসতে।একটা মানুষ যে কি-না জীবনে কারোরই ভালোবাসা পায় নি সে ও তো কারো না কারো ভালোবাসা ডিজার্ভ করে।
অথচ রূপার হাত পা বাঁধা। মনে সে পাথর চাপা দিয়ে হলেও বাবার কথা রাখবে।

রূপার খাওয়া শেষ হয়ে গেলো সবার আগে। একটা ব্যাপারে রূপা অবাক হলো। তার পাশাপাশি বসে ও সমুদ্র একবার ও তার দিকে তাকায় নি অথবা একটা কথা ও বলে নি।অথচ এই ছেলেটা অন্যান্য দিন হলে ৫ মিনিটেই রূপাকে অস্থির করে ফেলতো।
হারানো বন্ধু খুঁজে পেয়ে এখন আর রূপার দিকে তাকাচ্ছে ও না।
হাসলো রূপা।বন্ধুত্ব ভীষণ দামী শব্দ।সবার বন্ধু ভালো থাকুক।এভাবেই পাশাপাশি থাকুক।

বাসে উঠে রূপা তার মায়ের পাশে বসলো।
সালমা মেয়ের মাথা নিজের কাঁধের উপর এনে রাখলেন।
সিরাজ হায়দারের থেকে শুনেছেন মেয়ের সাথে কতো বাজে ব্যবহার করেছেন তিনি।শুনে লজ্জায় একটুকু হয়ে গেছেন যেনো।
তার কতো আদরের মেয়ে এরা,তা তিনি জানেন আর আল্লাহ জানে।

গাড়ি চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর রূপা বললো, “মা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

সালমা বেগম মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,”হ্যাঁ, বল।”

রূপা সোজা হয়ে বসে বললো, “মা,রূপকদার সাথে তার মায়ের কেনো এতো অমিল?
মা ছেলে কেউ কাউকে পছন্দ করে না।আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম আর উনি বলেছেন তুমি সুস্থ হলে তোমার থেকে শুনতে।”

সালমা একটা নিশ্বাস ফেলে রূপকের দিকে তাকালেন।তারপর বললেন,”তানিয়া ভাবীর সাথে আমার ভাইজানের যখন বিয়ে হয় তখন ভাবী অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়েন।ভাবী ভীষণ চঞ্চল মেয়ে ছিলো। সাজগোজ, ঘুরাঘুরি, বাহিরে খাওয়া দাওয়া এসবের প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ।
মা চাইতেন ভাবী সংসারী হোক।কিন্তু তিনি এসব চাইতেন না একটুও।
বিয়ের পর পরই ভাবী গর্ভবতী হইয়া যান।এতে আমাগো
দিক থাইকা সবাই খুশি হইলেও ভাবীর বাপের বাড়ির সবাই নারাজ হয়।তাদের কথা তাগো মাইয়া ছোট, এখনই ক্যান বাচ্চা নিতে চায় ভাইজান।

ভাবী জেদ ধরলেন বাচ্চা নষ্ট করে ফেলবেন।তার সামনে লেখাপড়া, ক্যারিয়ার পইড়া আছে।
এইটা লইয়া ভাইজানের লগে প্রতিদিন ঝগড়াঝাটি। একদিন তো নিজে নিজে সবাইরে ফাঁকি দিয়া হাসপাতালে চইলা গেছে। ভাগ্যিস ডাক্তাররা কইছিলো ভাইজানরে নিয়া যাইতে।

এই দিকে ভাইজান কিছুতেই রাজী হন না বাচ্চা নষ্ট করতে। এসব নিয়ে রাগারাগি কইরা ভাইজান দুই দিন ভাবীর গায়ে হাত তোলেন।

ভাবীর বাপের বাড়ির মানুষ আসে ভাবীরে নিতে কিন্তু আব্বাজান দেয় না।ভাইজান আব্বাজান রে নিষেধ কইরা দিছিলো বাচ্চা হওনের আগে ভাবীরে কোনো খানে যাইতে না দেয় যাতে।
সবাই ভয় পাইতো ওই বাড়ি গেলে ভাবী বাচ্চা নষ্ট করবো।

এরপর যখন ভাবী দেখলো বাচ্চা রাখতেই হবে সেই থেকে ভাবী বাচ্চার উপরে রাগ।সবসময়ই কইতো এই বাচ্চারে উনি দুই আঙুল দিয়া ধইরা ও দেখবেন না।বাচ্চা পালতে যাইয়া নিজের ক্যারিয়ার শেষ করনের মতো বোকামি করবেন না উনি।

তারপর যখন রূপক হইলো, সত্যি সত্যি ভাবী রূপকরে তেমন একটা নিতে চায় না।
জন্মের পর থাইকা রূপকরে কৌটার দুধ খাওয়ায়।
ভাইজান রাগারাগি, গায়ে হাত তোলা সব ভাবেই চেষ্টা করছেন কিন্তু ভাবীর এক কথা। বুকের দুধ তিনি খাওয়াইবেন না।

তার সমস্ত রাগ তখন রূপকের উপর। রূপকের খাওয়া, ঘুম,গোসল,বাথরুম, কাথা ধোওন সব কিছু আমি করতে শুরু করি।
ভাবী ওনার পড়ালেখা লইয়া ব্যস্ত হইয়া যায়।রূপকের যখন ৯ মাস বয়স তখন ভাবীর অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা।
ভাবী বাপের বাড়ি পরীক্ষা দিতে গেলো রূপকরে নিয়া।

ভাবী যাওনের এক সপ্তাহ পর ভাইজান ওই বাড়ি যায় রূপকরে দেখতে। যাইয়া দেখে রূপক একলা এক রূমে শুইয়া কানতাছে আর ভাবীরা সবাই মিইল্লা আরেক রুমে গল্প গুজব করে।
রূপকের নানী ভীষণ ভালো মানুষ আছিলেন।কিন্তু উনি ও অসুস্থ মানুষ। ভাইজান যাওনের পর মাওই মা ভাইজানরে কইলো রূপকরে যাতে ভাইজান সাথে কইরা নিয়া আসে,ভাবী ওরে ঠিকঠাক মতো ফিডার ও দেয় না,বুকের দুধ তো না ই।পোলাডা সারাদিন কান্দে শুইয়া শুইয়া।ভাইজান রাগ কইরা রূপকরে নিয়া আইলো।ভাবী একবার ও বাঁধা দিলো না।

তারপর থাইকা ভাবী কোনো খানে যাওনের সময় ও আর রূপক রে নেয় না।উনি জানেন রূপকরে রাখনের মানুষ আছে।
এরপর চাকরিতে ঢুকেন।ভাইজান ও ভাবীরে ভাবীর মতো কইরা ছাইড়া দিছে।যেমনে ইচ্ছে চলুক ভাইজান আর কিছু কয় না।

এমনেই মা পোলার দূরত্ব। আমি চইলা আসনের পরেও এখনো আর মা পোলা এক হইলো না।
আমার রূপকের লাইগা কেউ রইলো না। ”

রূপা জানে না কেনো ও কাঁদতে লাগলো এসব শুনে। তার ইচ্ছে করলো ছুটে গিয়ে রূপককে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করে বলে, “আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসবো।আপনার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবো।”
চাইলেই যেমন সব করা যায় না তেমনই রূপা ও পারলো না। শুধু মনে মনে বললো, “সৃষ্টিকর্তা আপনার জন্য এমন কাউকে রাখুক যার বুক ভর্তি ভালোবাসা শুধু আপনাকে ঘিরেই থাকবে।”

বাড়ি পৌঁছাতেই সিরাজ হায়দার দুই হাত ভরে বাজার করে আনলেন।আজ তার আনন্দের দিন।তার ঘরের মানুষ আজ আবারও ঘরে ফিরে এসেছে সুস্থ হয়ে।

সালমা রান্না করতে বসলো। গ্রামের সবাই সালমাকে দেখতে আসতে লাগলো।

রান্না হতে হতে দুপুর গড়িয়ে গেলো।বিকেলেই সবাই মিলে খেতে বসলো। সিরাজ হায়দার খাবার মুখে দিয়ে চুপ করে রইলেন।টপটপ করে তার দুই চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। সালমা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি নিজে রান্না করতেন।যা পারতেন করতেন।কতো মাস সালমার হাতের রান্না খান নি।তখন তিনি বুঝতে পেরেছেন একজন স্বামীর জীবনে স্ত্রী কতো অমূল্য সম্পদ।

কতো দিন খাবার খেয়েছেন নুন বেশি দেওয়া, অথবা নুন না দিয়ে অথবা মরিচ বেশি দিয়ে।
তৃপ্তি পান নি খাবারের। অথচ আজ এক লোকমা মুখে দিতেই মন ভরে গেলো।

খাওয়ার পর সিরাজ হায়দার দোকানের জন্য বের হলেন।রূপক বাহিরে পাটিতে শুয়ে পড়লো।

সমুদ্র সিরাজ হায়দারের কাছে গিয়ে বললো, “ফুফা,আমি ও আসি আপনার সাথে?আমার কিছু কথা বলার ছিলো আপনার সাথে। ”

সিরাজ হায়দার হেসে বললেন, “আসো বাজান।”

সমুদ্র সিরাজ হায়দারের সাথে বাজারে চলে গেলো।

চলবে…….

#তুমি_অপরূপা(৪০)

রাতে সমুদ্র আর সিরাজ হায়দার একসাথেই ফিরে এসেছে। সিরাজ হায়দারের মুখ থমথমে। আষাঢ়ের মেঘ জমেছে যেনো তার মুখে।
রূপক সমুদ্র কে কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করলো না। তবে রূপক বুঝলো সমুদ্র হয়তো রূপার কথা বলেছে রূপার বাবাকে তাই উনি এরকম গম্ভীর হয়ে আছেন।

রূপক ঠিক করলো ওকে যদি কেউ এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে তবে অবশ্যই সে সমুদ্রর কথা বলবে।
এতো ভালোবাসা বৃথা যেতে দিবে না।
তার না হোক,তবুও রূপা ভালো থাকুক।এমন কাউকে পাক যে কি-না এক আকাশ ভালোবাসতে জানে।

অন্তরা খাবার সাজাচ্ছিল বারান্দায়।বারান্দার আবছা আলোয় খেয়াল করলো কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে উঠানে।

অন্তরা ভয় পেয়ে সেদিকে তাকালো। তাকিয়েই চমকে উঠলো। জুয়েল দাঁড়িয়ে আছে উঠানে।
আর্তচিৎকার করে অন্তরা ঘরের দিকে গেলো ছুটে।

অন্তরার চিৎকারে সবাই ছুটে এলো। সমুদ্র আর রূপক দুজনে এসে দেখে অন্তরা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে।

সিরাজ হায়দার এগিয়ে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,”কি হইছে রে মা?”

অন্তরা মাটির দিকে তাকিয়ে বললো, “বাহিরে জুয়েল আসছে আব্বা। ”

চমকে সিরাজ হায়দার সালমার দিকে তাকালেন।রূপা রূপকের দিকে তাকিয়ে দেখলো রূপকের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে।
সমুদ্র চিনতে না পেরে রূপকের দিকে তাকাতেই রূপক বললো, “অন্তরার হাজব্যান্ড। ১ম স্ত্রীর কথা গোপন করে ওকে বিয়ে করেছে। ওর ১ম স্ত্রী আরেক লোকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিলো, ব্যাটা ১ম স্ত্রী আবার ফিরে আসার পর ভোল পাল্টে ফেলে। তাই অন্তরা চলে আসে।ডিভোর্সের কথা চলছে ওর সাথে। ”

সমুদ্র বললো, এখন কেনো এসেছে তাহলে? ”

রূপক সিরাজ হায়দারের দিকে তাকিয়ে বললো, “ফুফা,আপনি আসুন।আপনি আগে জিজ্ঞেস করুন কি জন্য এসেছে। ”
সিরাজ হায়দার দৃঢ়তার সাথে বাহিরে গেলেন।সাথে রূপক,সমুদ্র দু’জনেই গেলো।

জুয়েল বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে উসখুস করছে।
সিরাজ হায়দার বের হয়ে এসে বললো, “কে আপনি? ”

জুয়েল ইতস্তত করে বললো, “জি আমি জুয়েল।”

“জুয়েল কে?আমার চেনা জানা কেউ তো জুয়েল নাই।”

“আমি অন্তরার হাজব্যান্ড চাচা।অন্তরাকে একটু ডেকে দেন।”

সিরাজ হায়দার বললেন, “আমি অন্তরার বাবা। অন্তরা এখন বাহিরে আইবো না।এইখানে আইছেন ক্যান আপনি? ”

জুয়েল কি বলবে ভেবে পেলো না। তার মাথা কাজ করছে না কিছুতেই।কিভাবে রেশমার ফাঁদে পা দিলো ভেবে পাচ্ছে না।
১ সপ্তাহ আগে রেশমা টাকা পয়সা,গহনা যা ছিলো সব কিছু নিয়ে আবারও সেই আগের ছেলেটার সাথে পালিয়ে গেছে রানাকে রেখে।
অফিস থেকে বাসায় এসে জুয়েল দেখে বাহিরে থেকে দরজায় ছিটকিনি দেওয়া। ছিটকিনি খুলে ভেতরে যেতেই দেখে রানা কান্না করছে।
জুয়েলকে দেখে রানা ছুটে এসে কাঁদতে লাগলো। অনেকবার জিজ্ঞেস করে জুয়েল জানতে পারলো সকালে একটা লোক এসেছে বাসায় জুয়েল অফিসে যাওয়ার পর। অন্তরা ব্যাগ গুছিয়ে, আলমারি খুলেছে। তারপর কি সব নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে রানাকে একটা চিপস এনে দিয়ে বলেছে চিপস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে।রেশমা কিছুক্ষণ পর ফিরে আসবে।
রানা ও মায়ের কথা শুনে ঘুমিয়ে গেলো। কিন্তু এখনো মা এলো না।
জুয়েল আলমারি খুলে দেখে সব ফাঁকা।আলমারিতে অফিসের দেড় লাখ টাকা রাখা ছিলো। রেশমার কাপড় তো নেই সেই সাথে অন্তরার কাপড় ও নেই।

জুয়েল একেবারে ভেঙে পড়লো। এতো গুলো টাকা!
রেশমাকে দ্বিতীয় বার বিশ্বাস করা অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে জুয়েলের।এখন আর শুধরাবার ও উপায় নেই।

জুয়েল পাগলের মতো হয়ে গেলো। বাড়িতে মা’কে কল দিয়ে বললো রানাকে তার কাছে রেখে আসবে,জুয়েলের মা সোজাসাপটা জানিয়ে দিলেন তার বয়স হয়েছে, এখন রানাকে পেলেপুষে বড় করার মতো শক্তি তার নেই।
বাধ্য হয়ে জুয়েলের অন্তরার কাছে আসতে হলো আবারও।
যেই কাজ অন্তরার সাথে করেছে সে তার কোনো উপায় নেই আবারও ফিরে আসার অন্তরার কাছে।
কিন্তু উপায় নেই।অন্তরা ছাড়া কেউ নেই যে রানাকে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করবে।

অন্তরার বাবার এই অযথা রাগারাগি জুয়েলের পছন্দ হলো না। মানসিকভাবে সে বিপর্যস্ত এখন।অন্তরাকে ভীষণ দরকার এই মুহূর্তে । একবার অন্তরার কাছে কান্নাকাটি করে যদি সবটা বুঝিয়ে বলা যায়,দরকার হলে মাফ ও চাইবে সে।এতেই অন্তরা গলে যাবে জুয়েল জানে।

অন্তরার বাবার পেছনের ছেলে দুটোকে জুয়েলের বিরক্ত লাগলো। এরা কারা?
অন্তরার তো ভাই নেই।

সিরাজ হায়দার আবারও বললেন,”চুপ কইরা আছেন ক্যান?”

জুয়েল বিরক্তি নিয়ে বললো, “আপনি অন্তরাকে ডেকে দেন,যা বলার অন্তরাকে বলবো আমি।আপনাকে বললে আপনি বুঝবেন না।এতো কথা বাড়ানোর সময়
আমার নেই।”

ঘরের ভেতর থেকে অন্তরা কান পেতে শুনতে লাগলো বাহিরের সবকিছু। জুয়েলের এরকম রুক্ষ কথাবার্তা অন্তরার অন্তরে লাগলো । প্রথম বারের মতো জুয়েল অন্তরার বাবার সাথে কথা বলছে অথচ এ কেমন ব্যবহার তার!
এতো অধঃপতন!
কাকে ভালোবেসেছে সে!

ঘৃণায় মন বিষিয়ে গেলো অন্তরার।এক প্রকার চাপা ক্ষোভ নিয়ে বের হয়ে এলো বাহিরে।
রূপক চোখের ইশারায় অন্তরাকে সামনে আসতে বললো ।
অন্তরা বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, “কি বলতে চান?”

এদের সবার সামনে কিভাবে কথা বলবে জুয়েল বুঝতে পারলো না। সে ভেবেছিলো অন্তরাকে একা পেলে সব বুঝিয়ে বলবে।তাই বললো, “আমি তোমার সাথে একা কথা বলতে চাই।”

রূপক এগিয়ে এসে বললো, “আপনার যদি কিছু বলার থাকে এখানে সবার সামনে বলবেন।আর তা না হলে চলে যেতে পারেন।অযথা দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করবেন না।অন্তরা এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলবে,আলাদাভাবে না।”

জুয়েল রাগান্বিত হয়ে রূপকের দিকে তাকালো। এই ছেলে কে এখানে মাতাব্বরি করছে!

উপায় না পেয়ে জুয়েল বললো, “রেশমা আবারও পালিয়েছে রানাকে রেখে।রানা ভীষণ কান্নাকাটি করছে অন্তরা।মা মা বলে ছেলেটা কাঁদছে। তুমি প্লিজ ফিরে চলো।আমি জানি আমি অন্যায় করেছি,তার জন্য আমাকে ক্ষমা করে দাও।রানাকে রাখার মতো তুমি ছাড়া আর কেউ নেই।”
অন্তরার এই প্রথম ভীষণ আত্মসম্মানে লাগলো। শুধু মাত্র রানাকে রাখতে হবে বলে জুয়েল এসেছে এখানে?

অন্তরার প্রতি ভালোবাসা থেকে আসে নি?

অবশ্য এটা অন্তরার আরো আগেই বুঝা উচিত ছিল। ভালোবাসা থাকলে তো অন্তরা যেদিন চলে এসেছে সেদিনই ছুটে আসতো অন্তরার জন্য। এতো দিন পর যখন এসেছে তখন বিপদে পড়ে এসেছে সেখানে ভালোবাসা নেই।
অথচ একটু ভালোবাসা পেলেই অন্তরা সব আঘাত ভুলে যেতে পারতো । এখন উল্টো আরো সব আঘাত তাজা হয়ে উঠেছে। বুকের ভেতর দগদগে ঘা জানান দিচ্ছে অন্তরা জুয়েলের কাছে শুধুমাত্র প্রয়োজন, প্রিয়জন নয়।
কখনো প্রিয় ছিলো না। জুয়েল মূলত রানার দেখাশোনা নিশ্চিত করতেই অন্তরাকে বিয়ে করেছে।
আর আজও তা-ই প্রমাণ করে দিলো।

অট্টহাসি দিয়ে অন্তরা বললো, “অন্তরা কি মুশকিল আসান না-কি!
রানা আমার সন্তান না। রানা আপনার আর আপনার স্ত্রীর সন্তান। আমাকে তো শুধু কাজের মেয়ে হিসেবে রেখেছেন। ন্যাড়া বেল তলায় এক বার যায়। বারবার না।
আপনি চলে যান।”

জুয়েল হতভম্ব। এই কাকে দেখছে সে!
সেই গ্রাম্য,সহজ মেয়ে,যার মনে শুধু ভালবাসা ছিল। যার কথায় গ্রাম্য টান ছিলো। সেই মেয়ের কতো পরিবর্তন।
এভাবে ফিরিয়ে দিবে জুয়েলকে!

অন্তরা থেমে বললো, “ডিভোর্স পেপার আমি পাঠিয়ে দিবো।আর আমার দেনমোহরের টাকা লাগবে না।মাফ করে দিলাম।”

রাগে জুয়েলের বুকের ভেতর ঝড় উঠলো যেনো। রূপক সমুদ্র দু’জনে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

সমুদ্র এগিয়ে এসে বললো, “কথা শেষ, এবার রাস্তা মাপেন।”

জুয়েল ক্রুদ্ধ স্বরে বললো, “অন্তরারে না নিয়া আমি যাবো না।অন্তরা যাইবো, ওর চোদ্দগুষ্টি যাইবো।”

রূপক হেসে বললো, “এতো সোজা!অন্তরা এক পা যাওয়ার আগে আপনার লাশ পড়ে যাবে এখানে।”

জুয়েলের মাথা এলোমেলো হয়ে গেলো। এতো অপমান!
সে ও কম যায় না।
শান্ত স্বরে বললো, “যাবে না যে তা তো বুঝতেই পারছি।ঘরে এরকম পুরুষ মানুষ নিয়ে সময় কাটানোর সুযোগ পেলে স্বামীর সংসারে কে যেতে চায়!
আমোদ ফুর্তি সব তো ভালোই চলে। ”

অন্তরার গা শিউরে উঠলো ঘৃণায় জুয়েলের কথা শুনে। এতো নোংরা মন ওর!
অন্তরাকে এরকম ভাবে সে!

অন্তরা চোখের পলক না ফেলতেই দেখে রূপক উড়ে গিয়ে হামলে পড়েছে জুয়েলের উপর। জুয়েলের ছোটখাটো শরীরটাকে উপরে তুলে একটা আছাড় মারলো।তার পরপরই নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে বসলো।

রূপককে অবাক করে দিয়ে সমুদ্র একটা ডাল এনে জুয়েলের পায়ে জোরসে আঘাত করলো।
জুয়েল মাটিতে পড়ে গেলো।

অন্তরার একটু ও কষ্ট হলো না। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে রূপা সবটা দেখতে লাগলো।
রূপকের এরকম লাফিয়ে গিয়ে জুয়েলকে আঘাত করা দেখে রূপা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। সবসময় শুনেছে রূপকের মারামারির কথা, আজ নিজ চোখে দেখলো।

সিরাজ হায়দার এগিয়ে গিয়ে বললো, “ছেড়ে দাও ওরে।তুমি এইখান থাইকা চইলা যাও।আর কোনো দিন যাতে না দেখি।”

সমুদ্র বললো, “আবারও যদি অন্তরার আশেপাশে দেখি,এই বাড়ির আশেপাশে দেখি তবে দুই চোখ উপড়ে ফেলবো।”

জুয়েল খোঁড়াতে খোঁড়াতে বের হয়ে গেলো।

রূপক মাথানিচু করে বললো, “আমি দুঃখিত ফুফা।আসলে এরকম নোংরা কথা শুনে মাথা ঠিক রাখতে পারি নি।আমার আপন মানুষদের কেউ বাজে কথা বলবে সেটা আমি সহ্য করতে পারি না।”

সিরাজ হায়দার হেসে উঠলেন শুনে।

চলবে….

রাজিয়া রহমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে