#তুমি_অপরূপা (১১)
বর্ষাকালের এক মেঘাচ্ছন্ন সকাল। অন্ধকার হয়ে আছে চারদিকে। শাহেদ ভাবলো আজকে কাজে যাবে না।অনামিকার জ্বর কমছে না দেখে শাহেদের ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।
সকাল বেলা ক্ষিধে,অসুস্থতায় অনামিকা আরো কাহিল হয়ে গেলো। রাতে জ্বরে বেহুশ ছিলো বলে কিছু খাওয়াতে পারে নি শাহেদ তাই সকাল হতেই অনামিকাকে জিজ্ঞেস করলো, “কি খাইবা অনামিকা? আমারে কও,দোকান থাইকা কিছু আইনা দিই?”
অনামিকা মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো। বুকের ভেতর এক পাহাড় সমান অভিমান। শাহেদ যদিও সেই অভিমানের খোঁজ পেলো না তবে উঠে গেলো বাহিরে।রোজিনা থমথমে মুখে রান্নার আয়োজন করছেন।শাহেদ বের হতেই জেদ দেখিয়ে রান্নাঘরের হাড়িপাতিল অযথা ঠুসঠাস শব্দ করে রাখতে লাগলেন।মায়ের এই অযথা রাগ শাহেদের ভালো লাগলো না।তাই মাকে আর কিছু না বলে বের হয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
দোকান থেকে কনডেন্স মিল্কের কৌটায় করে এক কৌটা দুধ চা,৮ টা পরোটা নিয়ে বাড়ি এলো।
তারপর রুমে গিয়ে অনামিকাকে জোর করে তুলে এনে বারান্দায় বসিয়ে দিলো।
অনামিকার ভীষণ শীত লাগছিলো দেখে রোজিনার একটা শাল এনে গায়ে দিয়ে দিলো।তারপর কাপে চা নিয়ে অনামিকাকে পরোটা চুবিয়ে চুবিয়ে খাওয়াতে লাগলো।
এই একটু যত্ন,একটু ভালোবাসায় অনামিকার মনে জমে থাকা সব অভিমান গলে জল হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ করে অনামিকা মনে মনে বললো, “আপনার এই একটু ভালোবাসা,যত্নের জন্য আমি আপনার মায়ের সব অবহেলা সহ্য করতে রাজি আছি।”
রোজিনা রান্নাঘর থেকে ছেলের এসব দেখছেন আর ফুঁসছেন।
ছি ছি ছি! কতো নির্ল/জ্জ ছেলে হলে মায়ের সামনে বউয়ের এরকম গোলামী করে রোজিনা ভেবে পেলেন না।বিয়ে হতে না হতে এই ছেলের লাজ লজ্জা সব উদাও হয়ে গেছে!
শেষে কি-না বইয়ের গো/লামী করছে সে!
তার ছেলেটা যে এরকম ভেড়া হয়ে যাবে তা তো তার ভাবনাতেও ছিলো না।
অনামিকাকে খাইয়ে দিয়ে শাহেদ একটা ভেজা ন্যাকড়া এনে অনামিকার হাতের তালু,পায়ের তালু মুছে দিলো।পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে চুল কোনোমতে বেঁধে দিলো।তারপর ঔষধ এনে দিলো।
কিছুক্ষণ পর অনামিকা শরীরে একটু শক্তি পেলো,আস্তে আস্তে জ্বর ছেড়ে দিলো।
রোজিনা নীরবে ভাবতে লাগলেন ছেলের এই অধঃপতনের কথা!
শেষে কি-না বউয়ের পা ও মুছে দেয়! নিশ্চয় তাবিজ করে ছেলেকে বশ করেছে এই মেয়ে।রোজিনা ধৈর্য ধরতে পারলো না। কখন হাসানুজ্জামানকে জানাবেন এই ভেবে অধৈর্য হয়ে গেলো।
শরীর একটু ভালো লাগতেই অনামিকা শাহেদকে বললো, “আপনে আপনার কাজে যান,আমি এখন ঠিক আছি।”
শাহেদ সময় দেখে বললো, “আইজ তো দেরি হইছেই, থাকুক আইজ যামু না আর।”
রোজিনার ভীষণ রাগ হলো ছেলের কথা শুনে। কই,এই বয়সে শাহেদের বাপ তো কোনো দিন এরকম করে তার সাথে কথা বলে নি। এখনো কি বলে!
না তো!
শারীরিক প্রয়োজনে কাছে আসা ছাড়া কখনো কি একবার জিজ্ঞেস করেছে ভালো আছে কিনা!
কখনো না।
আর এখন তো এসব করার বয়স,মানসিকতা কোনোটাই নেই।অথচ এই মেয়েটার কি ভাগ্য!
রোজিনার ভীষণ হিংসা হলো।শাহেদ মায়ের কাছে পরোটা নিয়ে দিয়ে এলো।রাগ করে রোজিনা ছুঁড়ে ফেলে দিলো উঠানে।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো শাহেদ!
রোজিনা নির্বিকার কাজ করতে লাগলো। অনামিকা বুঝতে পারলো এই রাগ কেনো।
তবুও কিছু বললো না। শাহেদ কথা না বাড়িয়ে অনামিকাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো।
বিছানায় শুয়ে অনামিকার মনে হলো যেদিন বাড়ি থেকে এসেছে বাবার ভীষণ জ্বর ছিলো দেখে এসেছে, বাবার জ্বর কি সেরেছে?
দুপুরে শাহেদের বাবা বাড়ি এলেন।রোজিনার মুখ থমথমে দেখে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে। রোজিনা জবাব দিলো না। বিরক্তি নিয়ে শাহেদকে ডাকলেন খেতে যেতে।
শাহেদ অনামিকাকে নিয়ে খেতে এলো।
অনামিকা খেয়াল করেছে রোজিনা কিন্তু অনামিকাকে খেতে আসতে বলে নি। অনামিকা এসে পাটিতে বসার পর রোজিনা প্লেট আরেকটা এনেছেন। যেনো রোজিনা জানতেন-ই না ঘরে চতুর্থ একজন মানুষ ছিলো বা আছে।
লজ্জা লাগলো অনামিকার।
অনামিকার কান্না এলেও কাঁদলো না সে।ভুলের মাশুল যে দিতে হবে তা তো জানাই ছিলো।
হাসানুজ্জামান গমগমে গলায় বললেন,”তোর ভিসা আইছে,এখন টাকা জোগাড় কর। কেমনে করবি তুই জানস।”
অনামিকা চমকে উঠলো। শাহেদ বিদেশ চলে যাবে তাকে রেখে!
এই বাড়িতে তাকে রেখে যাবে!
কই শাহেদ তো তাকে কিছু বলে নি।
এই বাড়িতে অনামিকাকে একা রেখে যাওয়া আর জিন্দা ক-ব-র দেওয়া একই কথা। রোজিনা আর হাসানুজ্জামান তাকে থাকতে দিবে না কিছুতেই তখন।
শাহেদ খেতে খেতে বললো, “আমি বিদ্যাশ যামু না আব্বা।বিদ্যাশ আমার ভাল্লাগেনা।ওই দ্যাশে মেলা গরম।আর মরুভূমি আপনে বুঝেন আব্বা!
দ্যাশে যেমনে আছি,আলহামদুলিল্লাহ এমনেই থাকি,আর চাকরির লাইগা চেষ্টা করি।”
হাসানুজ্জামান ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,”দ্যাশের এই ২ টাকার চাকরি আমার দরকার নাই।আমার ট্যাকা লাগবো। এই ২ ট্যাকার চাকরি কইরা ভাত খাওন এতো সোজা না।এখন তো আমার ঘাড়ে বইসা বউ লইয়া খাইতাছেন,এর লাইগা বুঝেন না। লাত্থি দিয়া বউ সহ যদি বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিতাম তাইলে বুঝতেন আপনের ১০ হাজার ট্যাকার কামে তিন বেলা ভাত পেটে ঢুকতো না।এতো দিন একলা করতেন আর এখন তো দুই জন মিইল্লা আমার অন্নধ্বং/স করতাছেন,গায়ে লাগে না।আমার তো গায়ে লাগে।”
অনামিকার দুই চোখ টইটম্বুর হয়ে গেলো জলে।এরকম কথা অনামিকা কোনো দিন শুনে নি।তাদের সংসারে তো তারা ৯ জন মানুষ ছিলো। সিরাজ হায়দার একা ৯ মানুষের প্রতিদিন ৩ বেলা খাবারের জোগাড় করতেন।কই,কখনো তো তিনি বলেন নি যে সবাই মিলে তার অন্নধ্বংস করছে!
তিনি একজন মানুষ তো খাওয়া দাওয়া, কাপড় চোপড়,অসুখ,পড়ালেখা সব কিছু করতেন সবার জন্য। কখনো তো কাউকে অভিযোগ করেন নি তিনি।অথচ এখানে অনামিকা আসছে দুই দিন।এখনই খাওয়ার খোঁটা শুরু করে দিছে!
শাহেদ অনামিকার চোখ মুছে দিয়ে বললো, “খাবার শেষ করো।এতো অল্পতেই যদি এভাবে ভেঙে পড়ো তবে সামনে আগাবো কিভাবে দুজনে?আমারে যখন বিশ্বাস করছো তুমি, তবে মনে রাইখো তোমার বিশ্বাস ভুল মানুষের উপরে ছিলো না। ”
বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, “আব্বা,১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি কইরা আমি আর আমার বউ দুজন শান্তিতে সংসার করতে পারমু।কিন্তু তা যদি করি তবে তোমরা সেটা মেনে নিবা না। চিন্তা কইরো না,আইজ ১০ হাজার টাকা বেতন পাই তো কি হইছে একদিন আরো বেশি ও পামু।”
রোজিনা বিরক্ত গলায় বললেন, “দুনিয়া থাইকা লাজ লজ্জা সব উইঠ্যা গেছে। বাপ মায়ের সামনে আমার বউ,আমার বউ করতে তোর শরম করে না?
আমাগো সময় তো তোর বাপে গুরুজনের সামনে আমার দিকে তাকাইয়া ও দেখতো না,আমার বউ কইয়া কথা কওন তো দূরের কথা।
আর এখন কতো অসভ্যতা দেখি,বউয়ের গোলা/মী করে বিয়ার ২ দিন না যাইতেই।”
শাহেদ হাত ধুয়ে প্লেটে পানি দিয়ে প্লেট ধুয়ে দিয়ে বললো, “না মা,আমার একটু ও শরম করে না। ক্যান করে না জানো?কারণ অনামিকা আমার বউ।আমি তো পাশের বাড়ির কারো বউরে আমার বউ কইতাছি না।যারে কালেমা পইড়া বিয়া করছি তারে কইতাছি।যতোদিন বাঁইচা আছি এক পৃথিবী মানুষের সামনে ও চিৎকার কইরা কইতে পারমু,অনামিকা আমার বউ।আমি আমার বউরে অনেক বেশি ভালোবাসি।এটা অসভ্যতা না মা এটা মানসিক শান্তি।
কে কি মনে করবো এতে সেটা আমার চিন্তার বিষয় না।
হালাল সম্পর্কের শান্তি তো এইখানেই মা।”
রোজিনা বেগম আর হাসানুজ্জামান যেনো বোবা হয়ে গেলেন ছেলের উত্তর শুনে।মুহুর্তেই হাসানুজ্জামানের মুখ থমথমে হয়ে গেলো।
চলবে……
#তুমি_অপরূপা (১২)
রূপার সাথে মায়ের আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। রূপাকে দেখলেই সালমা খেঁকিয়ে উঠে। এরমধ্যে দুইবার সালমা রূপার বই খাতা পুড়িয়ে ফেলেছে,রূপাকে ঘরে বন্দী করে রেখেছে যাতে রূপা স্কুলে যেতে না পারে।
সিরাজ হায়দার মেয়ের পক্ষে ছিলেন বলে রূপা এখনো পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতো দিন!
দিন দিন সালমার অবস্থার অবনতি দেখে সিরাজ হায়দার সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিবেন। এই মেয়েকে তিনি কিছুতেই বন্দী পাখির মতো খাঁচায় পুরে রাখবেন না।তার রূপা তার জীবনের শেষ বাজি,এই বাজিতে যদি হেরে যান তবে বুঝে নিবেন বাবা হিসেবে তিনি ব্যর্থ, আর তাহলে এই জীবনের কোনো দাম থাকবে না তার কাছে।
অনামিকা যাবার পর থেকে সালমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া, ঘুম, গোসল কোনো কিছুই ঠিক নেই।রান্না ও করে না এখন আর।আপন মনে কথা বলেন আর রূপাকে সারাদিন গালাগালি করা ছাড়া তার করার মতো কিছু নেই।
সকালে উঠে রূপাকেই রান্না চাপাতে হয়।মায়ের শাপ শাপান্ত শুনতে শুনতে রূপা ঘরের কাজ সামলে নিয়ে স্কুলের জন্য তৈরি হয় যদি মুহূর্তে ঠিক সেই মুহুর্তে সালমা ঝাঁপিয়ে পড়ে রূপার উপর।
ক্রমে রূপার এসএসসি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসতে লাগলো আর রূপার ভয় বাড়তে লাগলো। পরীক্ষার দিন সকালে সালমা দা** নিয়ে বারান্দায় এসে বসলো। দুই চোখ তার টকটকে লাল হয়ে আছে। রূপা সকালেই তৈরি হয়ে নিলো সিরাজ হায়দার গম্ভীর কণ্ঠে সালমাকে বললেন,”আইজ আমার মাইয়া পরীক্ষা দিবার যাইবো,আইজকের দিনে আমি কোনো ঝামেলা দেখতে চাই না সালমা।আইজ যদি তুমি বেতাল করো তবে খুব খারাপ হইবো। ”
সালমা কি বুঝলো কে জানে!
তবে সিরাজ হায়দারের কথা শুনে সালমা দা** ফেলে দিয়ে ঘরে চলে গেলো। মা’কে এতো সহজে শান্ত করা যাবে রূপা বুঝে নি।
দুই চোখ ভরা অশ্রু নিয়ে রূপা পরীক্ষার হলে গেলো মিতা আর বাবার সাথে। রিকশায় বসে সিরাজ হায়দার মেয়েকে বললেন, “অপরূপা মা,আমি সিদ্ধান্ত নিছি তোর পরীক্ষা শেষ হওনের পর তোরে আমি ঢাকা পাঠাইয়া দিমু।তুই আমার শেষ ভরসা।হয় তুই আমার মুখ উজ্জ্বল করবি,আমার বাঁইচা থাকনের শক্তি হবি আর নয়তো তোর বড় দুই বোইনের পথে হাঁইটা আমারে মৃত্যু পথযাত্রী বানাবি।”
রূপা চমকে উঠে বললো, ” এসব কথা কেনো বলেন আব্বা?
আমারে ভরসা করেন আব্বা,আমি আপনার ভরসা কিছুতেই বৃথা যাইতে দিমু না।আমারে আপনি অবিশ্বাস কইরেন না আব্বা।”
সিরাজ হায়দারের অশ্রু সজল চোখের দিকে তাকিয়ে রূপা সিদ্ধান্ত নিলো পথে যতোই বাঁধা আসুক কিছুতেই সে থামবে না।দুই বোনের করা ভুলের পথে কিছুতেই হাটবে না।
রূপাকে হলে পৌঁছে দিয়ে সিরাজ হায়দার নিজের দোকানে চলে গেলেন।দুপুরে মেয়ের পরীক্ষা যখন শেষ হবে তার আগ মুহূর্তে আবার চলে গেলেন মেয়েকে নিয়ে আসতে।
উচ্ছ্বসিত মনে রূপা বের হলো। পরীক্ষা ভীষণ ভালো হয়েছে তার। বাবার সাথে বাড়ি ফিরে সিরাজ হায়দার আর রূপা দুজনেই চমকে গেলো।
সালমা ঘরের বেড়া দেওয়া সব টিন কে**টে ফেলেছে দা*** দিয়ে কু**পিয়ে।
উদভ্রান্তের মতো বারান্দায় বসে আছে সালমা। রূপা ভীষণ ভয় পেলো। সিরাজ হায়দারের রাগ হতে গিয়ে ও হলো না। মনে পড়ে গেলো এই মানুষটাকে একান্ত নিজের করে নেওয়ার জন্য কতো কষ্ট, কতো আঘাত হজম করেছেন। হৃদয়ের পুরোটা জুড়ে যার বসবাস তার উপর কেনো রাগ করবেন!
রাজকন্যাকে এনে মাটির ঘরে রেখেছেন, ধনীর দুলালিকে দুই তিন মাসে একটা শাড়ি কিনে দেওয়ার ক্ষমতা তার ছিলো না অথচ সে সব সহ্য করে হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। আজ মানসিক আঘাতে সে যখন বিপর্যস্ত তখন তার ভুলবাল কাজের জন্য তার উপর কিভাবে রাগ করবেন তিনি!
সালমাকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলেন সিরাজ হায়দার। পাশের ঘরের বারান্দায় বসে থাকা সুরাইয়া বেগম আর সুরভির হাসি মুখ মলিন হয়ে গেলো। ভেবেছিলো বাড়িতে এসে এরকম অবস্থা দেখলে সিরাজ হায়দার রেগে সালমাকে ইচ্ছেমতো পে*টাবেন।কিন্তু কই!
কিছুই তো হলো না।
————–
অন্তরার সাথে রানার সাথে খুব একটা ভাব হয় নি এখনো। তবে অন্তরা ভীষণ চেষ্টা করে রানার সাথে ভাব জমাতে।দিন দিন ছেলেটার উপর অন্তরার মায়া জন্মে গেছে।
জুয়েল অফিসে গেলে অন্তরা টুকটাক এটা সেটা বানিয়ে রানাকে খাওয়ায়।রানা অন্তরাকে ডাকে অন্তর বলে। এত্বি অন্তরা ভীষণ খুশি।
তবে মাঝেমাঝে অন্তরা রানাকে কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, “মা বল না একবার আমায়।আমি ও তো মা তোর।মা বল,মা বল।”
রানা খিলখিল করে হাসে অন্তরার কথা শুনে। রানা এবং অন্তরা দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভীষণ স্বাভাবিক তবে স্বাভাবিক নয় জুয়েলের সাথে অন্তরার সম্পর্ক। কিছুতেই অন্তরা এখনো মেনে নিতে পারছে না জুয়েল তার সাথে মিথ্যে বলেছে।
————–
ঝড়ের আগে প্রকৃতি যেমন শান্ত হয়ে যায় তেমনি শান্ত হয়ে গেলো হাসানুজ্জামান এবং রোজিনা। স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে ভেবে দেখলো রাগ দেখিয়ে ছেলের সাথে কাজ হবে না উল্টো ছেলের কাছে দুজন খারাপ হবে।তার চেয়ে বরং মধুর ব্যবহার করে ছেলেকে আগে সৌদি পাঠাতে হবে।একবার ছেলেকে বাড়ির বাহির করতে পারলে বাকিটা আর সমস্যা নেই।অনামিকাকে বাড়ি থেকে বের করা তখন দুই মিনিটের ব্যাপার।
হঠাৎ করেই শ্বশুর শাশুড়ির ব্যবহার এরকম বদলে যাওয়ায় অনামিকা প্রথমে অবাক হলো। শাহেদ কিংবা অনামিকা কেউই বুঝতে পারলো না এর পিছনে লুকিয়ে থাকা উদ্দেশ্য।
শাহেদ আড়তে যাবার সময় মা’কে বললো, “অনামিকারে আমি লইয়া যাইতাছি মা।ওর কলেজে একটু কাজ আছে।কয়দিন পর ওর পরীক্ষা শুরু হইবো। ”
রোজিনা হাসিমুখে ছেলে আর বউকে বিদায় দিয়ে হাসানুজ্জামানের কাছে এলেন।হাসানুজ্জামান তখন সিগারেটে সুখটান দিচ্ছে।
রোজিনা বিরক্ত হয়ে বললো, “আপনে বিরি খাইতাছেন,ওই দিকে আপনের পোলায় তো মহারানী ভিক্টোরিয়ারে লইয়া গেছে কলেজে।বউয়েরে পড়ালেখা করাইবো আপনার পোলায়।”
হাসানুজ্জামান সিগারেট শেষ করে বললেন,”আর কয়টা দিন।একটু সইয্য কইরা থাক।জানো না,সবুরের ফল মিঠা হয়!”
কলেজে কাজ শেষ করে অনামিকা কে শাহেদ নিজের আড়তে নিয়ে গেলো। তারপর দুপুরে মালিকের থেকে ছুটি নিয়ে দুজনে রিকশায় করে একটু ঘুরতে বের হলো। রিকশায় বসে শাহেদ অনামিকাকে শক্ত করে ধরে রাখলো। পরম নির্ভরতায় অনামিকা শাহেদের কাঁধে মাথা রাখলো।
দুপুরে খেয়ে শাহেদ অনামিকার জন্য জামা কিনলো,মায়ের জন্য শাড়ি,বাবার জন্য লুঙ্গি কিনে নিলো।
ভেতরে প্রচন্ড ক্ষোভ থাকার পরেও রোজিনা হাসিমুখে ছেলের থেকে এগুলো নিলেন।
বাবা মা’কে এরকম স্বাভাবিক ব্যবহার করতে দেখে শাহেদ নিশ্চিন্ত হলো।
সপ্তাহ খানেক পর খাবার খেতে বসে হাসানুজ্জামান আবারও কথা তুললেন। তবে এবার আর আগের মতো রাগারাগি করার মতো বোকামি করলেন না।
খেতে খেতে শান্তভাবে বললেন,”এই আড়তের চাকরি দিয়া কি আমগো পোষাইব শাহেদ?
আমি এখন আগের মতো নাই,দিন দিন বয়স হইতাছে।কাম কাজ ও করবার পারি না আগের মতো। তোর যদি একটা লাইন হইতো তাইলে আমি সব ছাইড়া দিয়ে একটু বিশ্রাম নিতাম।
আল্লাহ নাতি নাতনি দিলে তাগোরে লইয়া খেলাধুলা করতাম।”
লজ্জায় অনামিকার গাল লাল হয়ে গেলো এই কথা শুনে।
শাহেদ খেতে খেতে বললো, “আমি চেষ্টা করতাছি আব্বা,ভালো একটা চাকরি আমি ও খুঁজতাছি।কিন্তু কইলেই তো চাকরি পাওন যায় না।সময় লাগবো। ”
রোজিনা হতাশার ভঙ্গিতে বললেন, “আমাগো জীবনডা এরকম দুঃখেই কাটবো।আশে পাশের সবাই পোলাগোরে বিদ্যাশ দিয়া বছরের মাথায় পাকাঘর তুলছে।আমি মনে হয় মরনের আগে নিজেগো পাকা ঘরে একটা রাইত ঘুমাইতে পারমু না।সেই ভাইগ্য আমার হইবো না।
জীবন কাটাইলাম ভাঙ্গা ঘরে, বেড়ার ফাঁক দিয়ে চান্দের আলো দেখতে দেখতে জীবন যাইবো। ”
শাহেদ কিছু বললো না। অনামিকার খুব খারাপ লাগলো শাশুড়ীর আক্ষেপ শুনে। সিদ্ধান্ত নিলো যেভাবেই হোক,শাহেদকে বিদেশে যাওয়ার জন্য রাজি করাবে সে।
চলবে…..
#তুমি_অপরূপা (১৩)
দুই তলার দক্ষিণের রুমের দরজা দুপুরের পর থেকে বন্ধ। রত্না,পান্না দুই বোনের মুখ শুকিয়ে একটুখানি হয়ে আছে। দাদা নির্ঘাত আজ খুব বকবে দুই বোনকে।
পান্না ফিসফিস করে বললো, “আপা চল মোনাজাত ধরি,আজকে যাতে দাদা আর না বের হয় রুম থেকে। ”
রত্না ছোট বোনের মাথায় মৃদু আঘাত করে বললো, “তুই কি চাস দাদা সারাদিন না খেয়ে রুমে বসে থাকুক?সব দোষ তোর।বলেছিলাম কোনো দরকার নেই এতো দূরে বান্ধবীদের সাথে যাওয়ার। তা না,নিজে তো গেলি সাথে আমাকে ও নিয়ে গেলি।দেখলি এখন কেমন হলো ব্যাপারটা? ”
পান্নার মুখ শুকিয়ে গেলো বোনের কথা শুনে। বান্ধবীদের কাছে সবসময় শুনেছে একটা জায়গায় নাকি ভীষণ ভালো মালাই চা পাওয়া যায়।আর সেই চা’য়ের নাকি একেবারে রাজকীয় স্বাদ,এক কাপ চা পান করলে পরপর আরো দু কাপ লাগবে যে কারো।কিন্তু সমস্যা একটাই চা বিক্রেতা খালা একজনকে এক কাপের বেশি চা দেয় না।
তার রুলস নাকি একেবারে কঠিন রুলস।
শুনেই পান্নার লোভ জাগলো। তিন ভাই বোন চা প্রেমি হওয়ায় চা’য়ের কথা শুনলে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। তাই বড় বোনকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে নিয়ে গেলো সাথে করে চা খেতে।
ভাইয়ের আদর,শাসনে বেড়ে উঠা দুই বোনের কাছে ভাইয়ের আদেশ শিরোদার্য।যার কারণে কখনো স্কুল,কলেজ ছাড়া বান্ধবীদের সাথে ও কোথাও যায় না কেউ ভাইকে ছাড়া।
এই প্রথম বার দুই বোন চা’য়ের লোভে গেলো। কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয়,সেখানে সন্ধ্যা হয়
তেমনি হলো । গিয়ে দেখে রূপক বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। হাতে চায়ের কাপ।দুই বোনকে দেখে যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো রূপক।
ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো দুই বোন দাদাকে দেখে।
রূপক বন্ধুদের পাশ থেকে উঠে গিয়ে বোনদের সামনে দাঁড়াতেই রত্না,পান্না দুজনেই ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো।
কিছু না বলে রূপক চায়ের অর্ডার দিলো।তারপর চা পান শেষ হতেই বাইক স্টার্ট দিয়ে চুপ করে বসে রইলো।
কিছু বলতে হয় নি দুই বোনকে।দুজনেই সুড়সুড় করে দাদার বাইকে উঠে বসলো।
সেই যে বাসায় এসে রূপক রুমের দরজা বন্ধ করেছে এখনো সেই দরজা বন্ধ আছে।
রূপকদের পাঁচ তলা বাড়ির প্রতি তলাতে ৪ টি ফ্ল্যাট। দুই তলার দুইটা ফ্ল্যাটে রূপকেরা থাকে,বাকি পুরো বিল্ডিং এ ভাড়াটিয়া আছে।দুই তলার বাকি দুই ফ্ল্যাটে কয়েকটা মেয়ে ভাড়া থাকে।
আজকে 2C তে নতুন একটা মেয়ে উঠেছে। পান্না ফিসফিস করে রত্নাকে বললো,”আপা,নতুন উঠা ওই মেয়েটার কথা মনে আছে তোর?মনে হয় মেয়েটা…….
কথা শেষ করতে পারলো না পান্না,রত্না বিরক্ত হয়ে বললো, “বকবক করিস না পান্না,দাদা এখনো বের হচ্ছে না। মা ও এখনই চলে আসবে।আর এর পর বাবা মায়ের সাথে আবারও এক পালা ঝগড়া হবে দাদার।”
পান্না কি করবে ভেবে পেলো না। বোনকে রুমে রেখে দাদার রুমের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে পান্না ভাইকে ডেকে বললো, “দাদা,ও দাদা।”
রূপক তখন ল্যাপটপে কাজ করছিলো। তাই আনমনা হয়ে জবাব দিলো, “হু।”
কাঁদোকাঁদো হয়ে রত্না বললো, “আপার কোনো দোষ নেই দাদা,আমি আপাকে জোর করে নিয়ে গেছি ওখানে।তুমি আমাদের উপর রাগ করো না দাদা।আর কখনো এরকম হবে না।তোমার কথার অবাধ্য আর কখনো হবো না আমরা। প্লিজ দাদা দরজা খোলো,আমরাও এখনো কিছু খাই নি।তুমি না খেলে আমরা ও খাবো না।”
ছোট বোনের কথা শুনে রূপকের ভীষণ হাসি পেলো। রূপক জবাব দেওয়ার আগেই রূপকের মা তানিয়া জবাব দিলো, “কি হয়েছে এখানে?তোমার দাদা আজকে আবার কিসের রংতামাশা দেখাচ্ছে? ”
মায়ের কথা শুনে রূপকের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু টগবগিয়ে উঠলো। বিড়বিড় করে রূপক বললো, “আমি তোমাকে ঘৃণা করি মা।জাস্ট হেইট ইউ এন্ড ইওর ফ্যামিলি। ”
মুখে কিছু না বলে রূপক দরজা খুললো। তারপর মায়ের সামনেই পান্নাকে বললো, “নেক্সট টাইম যদি দেখেছি অথবা শুনেছি এরকম সাহস দেখিয়েছিস দুজনের একজন, তবে মনে রাখিস সেদিনই তোদের শেষ দিন।খান বাড়ির মেয়েদের এসব ছ্যাচড়ামি মানায় না পান্না।খান বাড়ির রক্তে এসব নেই অন্য বাড়ির মেয়েদের মতো। ”
ছেলের করা সুক্ষ্ম অপমান তানিয়া তীব্রভাবে অনুভব করলো। রূপক কি তাকে,তার বোন মুনিয়াকে,তাদের ফ্যামিলিকে উদ্দেশ্য করে এসব বললো?
প্রচন্ড রাগে তানিয়ার হিতাহিতজ্ঞান লোপ পেলো। পান্নাকে কষে এক থাপ্পড় মেরে বললেন, “নিজেদের রক্ত কতটা বিশুদ্ধ সেটা আমার জানা আছে। এজন্যই তো এখনো এক মেয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে আছে।তারা আবার বড়াই করে। ”
রূপক সদর দরজায় এক লা/থি দিয়ে বললো, “পান্না,ওনাকে নিষেধ কর কথা যাতে না বাড়ায়।তা না হলে আমি এখন যে কি করবো তা আমি নিজেও জানি না।”
ভয়ে পান্নার হাত পা কাঁপতে লাগলো মায়ের আর দাদার এসব কথা কাটাকাটি শুনে ।
কবে যে এরা দুজন এক হবে কে জানে!
বাহিরে এতো জোরে শব্দ শুনে রূপা চমকে উঠলো। বের হতে যেতেই সহপাঠী নিপা বললো, “আজকে নতুন তো তুই, তাই অবাক হচ্ছিস।বাড়িয়ালাদের বাসায় এসব নিত্যদিনের কাহিনী। হিরো আর হিরোর মা’য়ের মধ্যে আবারও লেগে গেছে মনে হয়। ”
কিছু বুঝতে না পেরে রূপা দরজা খুলে বের হলো। রূপাকে দাঁড়িয়ে মজা নিতে দেখে রূপকের মেজাজ সপ্তমে উঠে গেলো। ঝাঁজালো কণ্ঠে বললো, ” নাটক দেখতে এসেছেন এখানে?মঞ্চ নাটক হচ্ছে, যান এবার আর কেউ থাকলে সবাইকে নিয়ে আসেন।”
রূপা হতভম্ব হয়ে গেলো রূপকের কথায়।সেই সাথে ভীষণ অপমানিত ও বোধ করলো। রূপা যেতে যেতে শুনতে পেলো রূপক বলছে,”যতোসব ফালতু লোকজন। ”
রূপার ভীষণ গায়ে লাগলো রূপকের কথা।ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো, “কি বললেন আপনি? কাকে ফালতু বললেন আপনি? আপনি নিজেই ফালতু,অসভ্য লোক।মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেই ম্যানার ও জানেন না আপনি। ”
রূপককে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রূপা দরজা বন্ধ করে দিলো।
হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে রূপক বিড়বিড় করে বললো, “আশ্চর্য! এই মেয়েটা আমাকে এসব বললো কেনো?আমি তো এই মেয়েটাকে কিছু বলি নি।যা বলার আমার নানার বাড়ির লোকদের উদ্দেশ্য করে বলেছি।তাহলে মেয়েটা ভুল বুঝলো কেনো আমাকে? ”
ভেতরে যেতেই নিপা বললো, “হিরোকে দেখলি তো?ক্রাশ খেয়ে বসিস না আবার।অলরেডি মাহি আপা ক্রাশ খেয়ে হিরোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। মাহি আপা যদি জানতে পারে কেউ তার হিরোর দিকে নজর দিয়েছে তবে তাকে এই মেস থেকে বের করে দেয় বুঝলি।তাই সাবধান। ”
রূপা ভ্রু কুঁচকে বললো, “রূপা এখানে বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করতে এসেছে নিপা,কারো প্রেমে হাবুডুবু খেতে নয়। ওসব ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমার একটাই লক্ষ্য আমাকে বাবার সব ইচ্ছের মূল্য দিতেই হবে।”
মোবাইল বের করে রূপা বাবাকে কল দিলো। সিরাজ হায়দার তখন দোকানে বসে ছিলেন।মেয়ের কল পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে রিসিভ করলেন।
বাবার সাথে কথা বলে রূপার মন কিছুটা হালকা হলো।
আজ প্রায় এক মাস হলো রূপা ঢাকা এসেছে। প্রথমে একটা লেডিস্ হোস্টেলে বাবা তাকে তুলে দিয়ে গিয়েছিলো। হোস্টেলের চাইতে এখানে খরচ কম হওয়ায় রূপা বাবার সাথে কথা বলে এই বাসায় এসে উঠে। রূপা জানে না হোস্টেল পরিবর্তনের সাথে সাথে তার জীবনে আর কি কি পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।
————–
অনেক বুঝানোর পর অনামিকা শাহেদকে রাজি করাতে পারলো বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে। অবশেষে শাহেদের সৌদির ভিসা এলো। একটা দোকানের সেলসম্যানের চাকরি।মাসে বেতন ২ হাজার রিয়াল।
যেদিন ভিসা পেলো সেদিন রাতেও শাহেদ অনামিকাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমার মন টানতাছে না অনামিকা। আমি তোমারে ছাইড়া যাইতে চাই না।আমার বেশি টাকা পয়সা কামানোর শখের চাইতে তোমার কাছে থাকনের শখ বড় বেশি। আমারে এমনে দূরে পাঠাই দিও না।”
অনামিকার ও কি ইচ্ছে করে শাহেদকে ছেড়ে থাকতে? কিন্তু কি করবে সে।শ্বশুর, শাশুড়ী নয়তো মনে কষ্ট পাবে।শেষ বয়সে তাদের অনেক কিছুরই শখ আহ্লাদ,অনেক টাকা ইনকাম করতে না পারলে সেই শখ শাহেদ পূর্ণ করতে পারবে না।তাই নিজের আবেগকে দমিয়ে রেখে অনামিকা বললো, “আপনি এরকম করলে হইবো! আপনার কি আর ভাই আছে যে আব্বা আম্মার শখ তারা পূর্ণ করবো। তাছাড়া ভবিষ্যতে দেখবেন আমাগো নিজেগো জন্যও টাকা পয়সা দরকার অনেক।”
শাহেদ অনামিকার বুকে মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো, “তাহলে চলো,আমার টাকা পয়সা খরচ করার লাইগা একজনরে দিয়া যাই তোমারে।”
অনামিকা আৎকে উঠে ছিটকে সরে গেলো শাহেদের আলিঙ্গণ থেকে। তারপর বললো, “এতো তাড়াহুড়া ক্যান!
আপনি একবার ঘুরে আসেন ওই দ্যাশ থাইকা।তারপর এসব ভাবনা চিন্তা করমু।”
শাহেদ মুচকি হেসে বললো, “এখন বুঝতাছো না অনামিকা। আমি চইলা গেলে বুঝবা।তখন কইবা যদি একটা বাবু থাকতো তাইলে সময় কাইটা যাইতো আনন্দে। আমারে ও পাইবা না,বাবু নাই,একলা একলা খুব যন্ত্রণা পাইবা।আমার কথা শুনো অনামিকা,পিল খাইও না এই কয়টা দিন।”
অনামিকা ভেংচি কেটে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। কি করবে অনামিকা, শাহেদকে তো সে বলতে পারবে না শাহেদের মা অনামিকাকে বলেছিলো এতো তাড়াতাড়ি যাতে বাচ্চার চিন্তা না করে। তার ছেলেই নাকি এখনো ছোট। এখন বাচ্চা নিলে লোকে হাসাহাসি করবে। শাহেদ ও ওই দেশে থাকতে চাইবে না।একটা উছিলায় দেশে চলে আসবে।
বোকা অনামিকা বুঝলো না শ্বশুর শাশুড়ির উদ্দেশ্য।
চলবে…..
রাজিয়া রহমান