তুমি অপরূপা পর্ব-৯+১০

0
789

#তুমি_অপরূপা (০৯)
টানা ১২ দিন বৃষ্টি হওয়ার পর আজকে বৃষ্টি থেমেছে। আকাশের মুখ ভার যদিও,সূর্য মামার দেখা নেই এখনো।
সকাল না সন্ধ্যা তাও বুঝার উপায় নেই।
রূপা খুব সাবধানে ঘরের কাজকর্ম করতে লাগলো মায়ের সাথে।
সালমার আচার আচরনে বেশ পরিবর্তন এসেছে। শান্ত নদীর মতো নিরিবিলি থাকা মানুষটাকে দেখলে মনে হয় খরস্রোতা নদী। যেকোনো মুহূর্তে একূল ওকূল সব ভেঙে চুর/মার করে দিবে।
যেই মুখে এতোদিন ছিলো স্নিগ্ধতা সেই রূপ বদলে দিন দিন সেখানে রূঢ়তা দেখা দিচ্ছে।
সুরাইয়া বেগম ও কি-না আজকাল মুখে একটু লাগাম টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

রূপার স্কুলে যাওয়া সালমার পছন্দ না।কোনো মতেই রূপাকে পড়তে দিতে রাজি না সে।রূপা এতে মায়ের দোষ দেয় না।মা’কে মাঝেমাঝে রূপার অপ্রকৃতস্থ লাগে।কেমন যেনো কোথাও সুর কেটে গেছে। আজীবন দেখে আসা মানুষটার সাথে আজকের সালমার বড়ো বেশি অমিল।

পরপর দুই বোন যখন একই কান্ড ঘটায় তখন রূপাকে অবিশ্বাস করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রূপা জানে সে এমন না,কিছুতেই এরকম সে করবে না।
বাবার পরাজিত চেহারা রূপা দেখেছে।কেমন নিস্তেজ, নিষ্প্রাণ, হতভাগ্য মানুষের মতো বাবা সেদিন বারান্দায় বসে পাথরের মূর্তির ন্যায় সকলের সব অভিযোগ শুনে গেছেন।
শাহেদের বাবা মায়ের বলা ঘৃণ্য, নোংরা কথাগুলো বাবা কেমন করে হজম করে গেছেন তা রূপা দেখেছে। এরপরে ও যে বাবা তাকে বিশ্বাস করছে,পড়তে দিচ্ছে তারজন্য রূপার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই বাবার কাছে। রূপা জানে স্রোতে ভেসে যাওয়া মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় বাবা ও তাকে ঠিক এভাবে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। রূপা কিছুতেই বাবাকে ডুবে যেতে দিবে না।

সালমা নাগা মরিচ,শুটকি, পেঁয়াজ একটা বাটিতে করে রূপাকে দিয়ে বললো, “ভর্তা বানিয়ে ফেল এগুলো দিয়ে। ”

রূপা এক নজর তাকিয়ে মুচকি হাসলো। প্রচন্ড ঝাল এই নাগা মরিচ এক সময় মা তাকে গাছ থেকে ছিঁড়তে ও দিতো না।বলতো কোনোক্রমে যদি হাতে একটু লেগে যায় তবে হাত জ্ব/ল/বে।
অথচ এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। আজ রূপার প্রতি মায়ের অবহেলা চূড়ান্ত পর্যায়ে।

রূপা কথা না বাড়িয়ে সাবধানে ভর্তা করতে লাগলো। ভর্তা করে রূপা আর দাঁড়ালো না। রুমে গিয়ে দ্রুত স্কুল ড্রেস পরে দৌড়ে বের হলো স্কুলের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে।
সালমা পিছন থেকে চিৎকার করে বললেন,”যাস না রূপা, আমি কইতাছি যাবি না।গেলে আজকে আর ঘরে জায়গা নাই তোর।খু**ন কইরা ফেলমু আজ তোরে আমি।”

রূপা ততক্ষণে অনেক দূর চলে গিয়েছে।

ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চুলে দুই ঝুঁটি করে মিতা ধীরেসুস্থে বের হলো ঘর থেকে।তারপর ডেকে মা আর নানীর থেকে বিদায় নিয়ে স্কুলের পথে পা বাড়ালো।
সুরভি মেয়েকে বিদায় দিয়ে সালমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো, “আল্লাহ মানুষের ঘরে কু**ত্তা, বি**লাইয়ের ছাও দেয় এডি,বাপ মা’র কথা না ভাইবা না**গরের কথা ভাবে।বাপ মা’র মুখ ডুবায়।
মাইয়া তো আল্লাহ আমাগোরে ও দিছে কই কোনোদিন দেখি নাই এসব করতে।এলাকার দশজনে কতো সুনাম করে। পোলাপানের কি দোষ, গাই যেমন বাছুর তো তেমনই অইবো।”

সালমা নিরবে সব শুনলো।সুরভির কথার তীক্ষ্ণ ফলা ছু/রির ন্যায় আঘাত করলো সালমার বুকে।
না না,সুরভি তো মিথ্যে বলে নি। সত্যি তো সে খারাপ বলেই মেয়েরা এরকম হয়েছে।

লজ্জায়,অপমানে সালমার ইচ্ছে করলো ম/রে যেতে।

————–

শাহেদ বাড়িতে এসেছে আজ দুই দিন।ছেলেকে ছাড়া রোজিনা বেগম থাকতে পারছিলেন না।একমাত্র ছেলে তার।এরইমধ্যে খবর পেয়েছেন ছেলে একটা চালের আড়তে চাকরি নিয়েছে, মাসে ১২ হাজার টাকা বেতনের।

রোজিনা হিসেব কষে দেখলো বাড়িতে যদি শীঘ্রই না আনা হয় ছেলে আর বউকে তবে এভাবেই ছেলের হাতের বাহিরে চলে যাবে তার।
শাহেদ খালার বাড়ি গিয়ে উঠেছে। শাহেদের খালা কল করে রোজিনাকে জানিয়েছে যে,শাহেদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজারে এক রুমের একটা বাসা খুঁজে নিবে।তারপর অনামিকাকে নিয়ে সেখানেই থাকবে।

রোজিনা হিসেব করে দেখলো ১২ হাজার টাকায় ওদের সংসার স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যাবে।

বুকের ভেতর সাথে সাথে রাগ,জেদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। এতো বছর ধরে ছেলে পেলেপুষে কিনা বউ আসতে না আসতে ছেলের কামাই বউ খাওয়া শুরু করে দিবে আর তিনি লবডঙ্কা!
এ কিছুতেই হতে পারে না।

এতোই যখন বিয়ের শখ হইছে ওই মেয়েরে মজা বুঝাবে রোজিনা। এই মেয়ের জন্য ৩ লাখ টাকা হাতছাড়া হয়ে গেছে এর ফল তাকে পেতেই হবে।

হাসানুজ্জামানকে সব বুঝিয়ে বলতে হাসানুজ্জামান ও বুঝলো ব্যপারটা। দুজনে মিলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করলো। তারপর রোজিনা বোনের বাড়ি গিয়ে ছেলে আর বউকে নিয়ে বাড়ি এলো।

শাহেদ বাড়ি এসেই অনামিকাকে বললো, “অনামিকা, পরিস্থিতি কেমন তুমি বুঝতাছো।আব্বা আম্মা দুজনেই যে এখনো রাইগা আছে সেটা বুঝতে পারছো নিশ্চয়।
আমি তো সারাদিন থাকমু না,আম্মা কিছু নিয়ে রাগারাগি করলে মন খারাপ কইরো না।নিজের মা ভাইবা সব ভুইলা যাইও।মানাইয়া নেওনের চেষ্টা নিও সবকিছু। ”

অনামিকা মাথা নাড়িয়ে সাঁয় দিলো।শাহেদ সকালে উঠে নাশতা করেই চলে গেলো আড়তের উদ্দেশ্যে। অনামিকা উঠে কি করবে ভেবে পেলো না। রোজিনা কিছু বলছেন না,গাল ফুলিয়ে বারান্দায় থম মেরে বসে রইলেন।অনামিকা ঝাড়ু হাতে নিয়ে ঘর ঝাড়ু দিলো।

হাসানুজ্জামান বারান্দায় বসে গলা চড়িয়ে বললো, “কই,তোমার পুত্রবধূ কই?নবাবজাদী কি এখনো ঘুমায় নি!
ভাগ্য কইরা বউ পাইছো রোজিনা,যাও বউয়ের লাইগা নাশতা বানাইয়া গিয়া তুনুমুনু কইরা ঘুম থাইকা তোলো।
নবাবজাদি আসছে আমার ঘরে। তার সেবাযত্নের যেনো কোনো ত্রুটি না হয় বুঝলা।”

রোজিনা ঠোঁট টিপে হেসে কড়া গলায় জবাব দিলো, “হ আমি তো বান্দি,বান্দিগিরি করার লাইগা আইছি এই সংসারে।এক জীবন গেছে তোমার বান্দিগিরি কইরা আর এখন করমু তোমার ছেলের বউয়ের বান্দিগিরি। আল্লাহ আমারে তুইলা নেয় না ক্যান?”

অনামিকার ভয়ে হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো। দুচোখের পানি মুছে অনামিকা ঘর ঝাড়ু দিয়ে বের হয়ে এলো। তারপর রোজিনা বেগমকে বললো, “কি রান্না করতে হইবো আম্মা?আমাকে কয়েকদিন আপনে দেখাইয়া দেন একটু।”

রোজিনা ঠোঁট উল্টে বললো, “লাগবো না কারো আমার সংসারের কাম করন।”

অনামিকা ভয়ে চুপ করে রইলো। তারপর আরো নরম স্বরে বললো, “আম্মা কি করন লাগবো আমারে কন,আমি কইরা দিতাছি।”

রোজিনা চুপ করে রইলো। অনামিকা জবাব না পেয়ে কালির হাড়ি পাতিল,বাসি প্লেট নিয়ে ধুঁতে গেলো পুকুরে।
দুই চোখ মুছে অনামিকা কাজে মন দিলো।মনে মনে বললো, “আমারে মাফ কইরা দিয়েন আব্বা আম্মা।আবেগের বশে কি থাইকা কি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিছি জানি না।আমারে মাফ কইরা দিয়েন।”

চলবে….

রাজিয়া রহমান

#তুমি_অপরূপা(১০)

উঠানের প্রায় পুরোটা জুড়ে শ্যাওলা ধরা। পিচ্ছিল হয়ে আছে পুরো উঠান। খোয়াড়ে থাকা হাঁসগুলো সবেমাত্র বের হয়েছে। আর বেরিয়েই উঠানে মল ত্যাগ করলো।
ডিমে তা দেওয়া দুটো মুরগী বের হয়ে তারাও মল ত্যাগ করলো।
অনামিকা সব ধুয়ে সাজিয়ে রাখলো উঠানের মাচার উপর।
রোজিনা বারান্দায় বসে আপনমনে বলতে লাগলো, “আল্লাহর দুনিয়ার যত আজেবাজে জিনিস সব আমার কপালে জুটে।হাঁস মোরগ গুলাও হইছে অসভ্য।মাইজ উঠানে ময়লা করে। আমার পেটের পোলা কথা শুনে নাই,আমারে দাম দেয় নাই হাঁস মোরগ আর কি দাম দিবো।”

অনামিকা কথা না বলে সুপারি পাতা নিয়ে উঠান থেকে সব ময়লা তুলে ফেললো। রোজিনার ঠোঁটের কোণে বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠলো। ময়লা তুলে ফেলতে গিয়ে শ্যাওলা ধরা উঠানে পা পিছলে পড়ে গেলো অনামিকা।
মুহূর্তেই যেনো সারা পৃথিবী ঘুরতে লাগলো তার চোখের সামনে। বড় ঘর থেকে রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে বর্ষাকালে আসা যাওয়া করা যায়।সেই ইটের উপর অনামিকার মাথা পড়লো।
১ মিনিট, ২ মিনিট… ৫ মিনিট হয়ে গেলো। অনামিকা উঠছে না মাটি থেকে। রোজিনা বিরক্ত হয়ে বললো, “ফকিন্নির বেটির ঢং কতো! আমি গিয়া তুলমু ভাবছে,জিন্দেগীতে ও না।”

অনামিকার জ্ঞান ফিরলো প্রায় আধাঘন্টা পরে।রোজিনা বারান্দায় বসে দেখতে লাগলো। অনামিকা উঠে বসলো মাটিতে। মাথা ভীষণ ভার ভার লাগছে তার।এক পলক রোজিনার দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনো রোজিনা বসে আছে বারান্দায় ভাবলেশহীন ভাবে।
কান্না পেয়ে গেলো অনামিকার এরকম নিষ্ঠুরতা দেখে।
নিজেকে সামলে জামা কাপড় বদলে নিলো অনামিকা।

এরপর আবার রোজিনাকে বললো,”কি রান্না করতে হবে আম্মা?”

রোজিনা মুখ বাঁকিয়ে বললো,”ভাত,বুটের ডাল,শাক ভাজি আর মাছ।মাছ দোপেঁয়াজো করে নিলেই হবে। ”

অনামিকা ভয়ার্ত স্বরে বললো, “আমাকে আইজ একটু দেখাওয়া দেন আম্মা।”

রোজিনা ভ্রু কুঁচকালো।অনামিকা আর কিছু না বলে নিজে নিজেই চলে গেলো রান্না করতে।

নিজে নিজে যতটুকু পারছে অনামিকা রান্না করে নিছে।রান্না করতে গিয়ে সকালের নাশতা করা ও হয় নি অনামিকার। রোজিনা এক ফাঁকে ঘরে ঢুকে এক বাটি মুড়ি দুধ আর কলা দিয়ে মাখিয়ে খেয়ে নিলেন।অনামিকাকে সাধাসাধি করার ধারেকাছেও গেলেন না।রান্না শেষ হলো প্রায় বারোটা বাজে।ততক্ষণে ক্ষিধেয় অনামিকার পেটে ছুঁচো দৌড়াদৌড়ি করছে।

অনামিকা রান্না শেষ করে সব খাবার অন্য পাতিলে ঢেলে নিলো,ভাত ঢেলে নিলো একটা ডিশে।তারপর সব কালির পাতিল নিয়ে, জামাকাপড় নিয়ে গোসল করতে গেলো পুকুরে।রোজিনা ততক্ষণে একটা ডিম ভেজে নিয়ে ভাত খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষ করে আবার ভাত হাত দিয়ে সমান করে দিলো যাতে বুঝা না যায় এখান থেকে ভাত খাওয়া হয়েছে ।
এক পিস মাছ,একটু ডাল ও নিলো রোজিনা। খেয়ে দেখলো রান্না মোটামুটি হয়েছে। রোজিনা ভেবেছিলো হয়তো রান্না খারাপ হবে তাহলে শাহেদ আসলে কিছুটা অপমান করতে পারবে।
আশাহত হয়ে রোজিনার মন খারাপ হয়ে গেলো। তারপর মনে হতেই রান্নাঘর থেকে মরিচের বাটি এনে ডাল আর মাছে মরিচ মেশাতে লাগলো এক এক করে।
অনামিকা গোসল সেরে নামাজ পড়ে নিলো।তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো রোজিনা বেগম কখন খেতে ডাকবেন।

অপেক্ষা করতে করতে দুপুর কেটে গেলো, রোজিনা বেগমের পক্ষ থেকে কোনো ডাক আসে না।লজ্জায় অনামিকা বলতেও পারছে না ভাত খাওয়ার কথা। রোজিনা বারান্দায় বসে কাঁথা সেলাই করতে লাগলো।
ক্ষিধেয় অনামিকার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো।পানি ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হলো না তার।

————–

বিকেলে রূপা স্কুল থেকে ফিরে দেখলো সালমা বসে আছে বারান্দায়। কেমন উদভ্রান্তের মতো লাগছে তাকে!
রূপাকে দেখেই সালমা চমকে উঠে বললো, “কে কে!অন্তরা?আমার অন্তরা মা আসছস?”

রূপা চমকে উঠে বললো, “না মা,আমি,আমি…”

রূপা কথা শেষ করতে পারলো না, তার আগেই সালমা বললো, “ও চিনছি,আমার অনামিকা! মা’গো কই ছিলি তুই?”

রূপা কাঁদোকাঁদো হয়ে বললো, “আমি অপরূপা মা”

সালমাকে কেমন যেনো হতভম্ব মনে হলো এরপর তার খেয়াল হতেই ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন।বসা থেকে উঠে রূপার চুল চেপে ধরে বললেন, “খা**কির বেটি,বোইনেগো মতো না*গর খুঁজতে গেছস?এই বয়সেই ন-স-টা-মি শুরু করছস তুই ও?আইজ তোর এক দিন কি আমার এক দিন।”
চুল চেপে ধরে সালমা রূপাকে ঘরের দিকে নিয়ে গেলো। রান্নাঘর থেকে চ্যালাকাঠ এনে বেধড়ক মা-র-তে লাগলো রূপাকে।যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো সালমা ততক্ষণ থামলো না সে।

রূপা নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। সালমা কেমন হাফাতে লাগলো।
রূপা উঠে গিয়ে মা’কে এক গ্লাস পানি এনে দিলো। সালমা ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।
রূপা স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে বাড়ির জামা পরে বের হতেই মিতার মুখোমুখি হলো।
মিতা হেসে বললো, “কিরে,এতো তাড়াতাড়ি ব্যথা শেষ হইয়া গেছে? এতো গুলো মা-ই-র খাইলি,কোনো শব্দ করলি না কেম্নে রে?”

রূপা কিছু না বলে ভাত খেতে গেলো।সুরভি এসে মিতাকে ভাত বেড়ে দিলো।
নিজের প্লেট নিয়ে রূপা বারান্দায় চলে গেলো।

খাওয়ার পর রূপা চলে গেলো তার টিউশনি করতে।

রাতে সিরাজ হায়দার বাড়িতে এলো। হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো সবাইকে নিয়ে। সালমা পাথরের মতো মুখ করে রেখেছে। সিরাজ হায়দার রূপাকে বললেন, “তোর মায়ের কি হইছে?”

রূপা জবাব দিলো না তার আহে মিতা বলে উঠলো, “মামির মনে হয় মেজাজ খারাপ মামু,আইজ রূপারে যেই পিডান দিলো।কু*ত্তা পিডা দিছে।”

মিতার কথায় সুরাইয়া বেগম, সুরভি দুজনেই হেসে উঠলো। সিরাজ হায়দার হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন নিজের মা বোনের দিকে।খাওয়ার পর ঘরে গিয়ে সালমাকে ধরলেন।সালমা বিছানা ঠিক করছিলো সেই সময় সিরাজ হায়দার এসে শক্ত করে সালমার হাত চেপে ধরলেন।তার দুই চোখ লাল হয়ে গেছে ক্রোধে। সালমার হাতে জোরে চাপ দিয়ে বললেন,”এতো সাহস কে দিছে তোরে?আমার মাইয়ার গায়ে হাত তুললি ক্যান তুই?”

সালমা ও কম যান না,মুখের উপর জবাব দিয়ে বললো, “এরকম মাইয়ার গায়ে হাত দিলে পাপ হইবো না।আগের হাল যেমনে যায় পেছনের হাল ও তেমনে যাইবো।ওকে আমি আর স্কুল পাঠামু না।”

সালমার হাতে আরো জোরে চাপ দিয়ে হায়দার বললেন, “আমারে আবার আগের সিরাজ হইতে বাধ্য করিস না সালমা,আমার মাইয়ার গায়ে আর এক বার হাত দিলে তোরে শ্যাষ কইরা দিমু আমি।”

বাবা মায়ের এরকম চিৎকার শুনে রূপা আর অনিতা দৌড়ে এলো। সালমার রাগ আরো বেড়ে গেলো মেয়েদের দেখে।ঝাটকা মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রূপার চুল ধরতে নিলেন।তার আগেই সিরাজ হায়দার ধরে ফেললো সালমার হাত।

রাতে শুয়ে সিরাজ হায়দার সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়ের পরীক্ষা শেষ হলেই তাকে ঢাকা পাঠিয়ে দিবেন।রূপাকে তিনি পড়ালেখা করাবেন যাই হোক।
—————

সারাদিনের অনাহারে অনামিকার শরীর দুর্বল হয়ে গেলো। শাহেদ বাড়িতে ফিরলো যখন অনামিকা তখন বিছানায় শুয়ে আছে। এশার নামাজের পর অনামিকার আর নড়াচড়া করার শক্তি রইলো না।
শাহেদ আসতেই দেখলো রোজিনা বেগম বারান্দায় বসে বসে নারিকেল কুড়াচ্ছেন আর আপন মনে বলছেন,”আল্লাহ আমাকে কামের বেটি বানাই পাঠাইছে,দুনিয়ার সবাই হইলো গিয়া জমিদারের বেটি।আজরাইল সবাইরে দেখে আমারে একলা দেখে না।”

মায়ের কথা শুনে শাহেদ অনামিকাকে গিয়ে বললো, “শুয়ে আছো কেনো এমনে এই সইন্ধা বেলা?মা’রে কামে সাহায্য করতে পারো না একটু?উনি একলা একলা কাম করতাছে।”

এই নিষ্ঠুর অভিযোগের প্রতিত্তোরে কি বলবে অনামিকা খুঁজে পেলো না।

কাপড় পালটে শাহেদ মা’কে বললো, “ভাত খামু,ভাত দেও মা।”

হাসানুজ্জামান ও ফিরলেন তখন।শাহেদ অনামিকাকে ডাকলো।অনামিকার একটুও খেতে ইচ্ছে করলো না তখন আর।বুক ভরা ব্যথা আর অভিমান নিয়ে অনামিকা শুয়ে রইলো।
অনামিকা না আসায় শাহেদ উঠে এলো। অনামিকার গায়ে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে সারা শরীর।

শাহেদের আর খাওয়া হলো না। রোজিনা বেগমের তাতে ভীষণ রাগ হলো। ভেবেছিলেন ছেলেকে খেতে দিয়ে অনামিকার রান্না নিয়ে খোঁচা দিতে পারবেন।এখন তা আর হলো কই!
এরকম জানলে কি অযথা মরিচের গুড়া দিয়ে খাবার নষ্ট করতেন!

চলবে….

রাজিয়া রহমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে