তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর পর্ব-৩২+৩৩

0
1201

#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (৩২)

শীতের আগমনে প্রকৃতিতে শূণ্যতা দেখা দিয়েছে।ঝরে পড়ছে গাছের পাতারা।হুহু করে আসা উত্তরের হাওয়া কাঁপিয়ে দিয়ে যায় সকলের শরীর।শীত জানান দিচ্ছে আমি আসছি তোমাদের দুয়ারে।অন্য রকম এক আমেজে মেতে উঠবে সবাই।

অফিসে গিয়ে তামিম একেবারে নির্বিকার রইলো। নোটিশ দেখতে পেলো আগামীকাল জাফলং যাওয়া হবে।তামিমের ভ্রু কুঁচকে গেলো।
জাফলং!
শুধুমাত্র শফিক আহমেদের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে!
তামিমের মনে সন্দেহ দেখা দিলো।চাতকের ন্যায় সিলিং এর দিকে তাকিয়ে তামিম ভাবতে লাগলো রহস্য কি!

রহস্য উদঘাটন করতে তামিমের খুব একটা সময় লাগলো না।নবনীর শখ ছিলো জাফলং যাবার।প্রায় সময় নবনী বলতো,”আমাদের হানিমুনে আমরা জাফলং যাবো।”
বিয়ের পর দিশা,লুবনা তাদের বন্ধুদের সাথে জাফলং গিয়েছিলো ঘুরতে।নবনীর সেদিন ভীষণ মন খারাপ ছিলো।বারকয়েক তামিমের সামনে বলেছিলো,”জাফলং জায়গাটা কি ভীষণ সুন্দর! টিভিতে দেখলেই আমার যেতে ইচ্ছে করে।”

তাহেরা বেগম মুখ বাঁকিয়ে বলেছিলেন,”জাফলং যাওয়া আসা,থাকার জন্য যে টাকা লাগে,তোর বাপে জীবনে চোখে দেখছে সেই টাকা একসাথে?”ফকিরের মেয়ের স্বপ্ন দেখো না।!”

লজ্জায়,অপমানে নুইয়ে গিয়ে নবনী বলেছিলো,”আমি তো যেতে বলছি না মা।এমনিতেই বলেছিলাম আমার ভীষণ ভালো লাগে।”

লুবনারা ফিরার পর নবনী ভীষণ আগ্রহ নিয়ে ওদের ঘুরাঘুরির ছবি দেখছিলো।তামিমের সামনেই লুবনা নবনীকে বললো,”তোমার তো এসব দর্শনীয় জায়গায় যাবার ক্ষমতা হবে না ভাবী,তুমি বরং টিভিতে, আমাদের ছবি দেখেই মনকে বুঝ দাও।”

অপমানে নবনীর মুখ কালো হয়ে গিয়েছিলো। কাজ আছে বলে নবনী ছুটে রান্নাঘরে চলে গিয়েছিলো। তামিমের এখন ভাবতেই হাসি পায়।অথচ লুবনা আর দিশার ট্যুরের সম্পূর্ণ টাকা তামিম নিজেই দিয়েছিলো।

আর হানিমুন!
কখনোই তো তামিম ভাবে নি হানিমুন নিয়ে।

যাকে সবাই মিলে সব সময় ডমিনেট করে আসছিলো আজকে সেই মেয়েকে ইমপ্রেস করতেই কি না একটা অফিসের বস অফিসের মানুষ সবাইকে নিয়ে যাচ্ছে জাফলং!

তামিমের রাগ হলো খুব।নিজের উপর,মায়ের উপর।তবে সবচেয়ে বেশি রাগ হলো নবনীর উপর।এই মেয়েটা কেনো সবকিছু নীরবে সহ্য করে গেছে?কেনো কোনো প্রতিবাদ করে নি নিতুর মতো।কেনো নিতুর মতো সবার কথার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয় নি?
তাহলে তো তামিমের তাকে হারাতে হতো না।

নিজের সব ভুল আজ তামিমের চোখে ধরা দিচ্ছে,সেই সাথে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে রাগ।যেভাবেই হোক নবনীকে চাই তার।
যেসব ভুলের জন্য নবনীকে হারিয়েছে আর একবার নবনীকে ফেলে সব ভুল শুধরে নিবে তামিম।

মেঘ নবনীকে টেক্সট দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,”ট্রেনেই যাবো তো,ডিসিশন ফাইনাল?”

নবনী কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবে বললো,”না,বাসেই যাবো।ট্রেনে অন্য সময় যাবো।এবার বাসে।”

মেঘ উৎফুল্ল হয়ে বললো,”হানিমুনে যাবার সময় ট্রেনে যাবে?আমরা কিন্তু ১ মাসের নিচে হানিমুনে যাবো না আগেই বলে দিলাম।”

নবনী ফিক করে হেসে বললো, “সবসময় এতো বেশি ভেবে নেন কেনো আপনি?একটু কম ভাবতে পারেন না এসব নিয়ে?”

মেঘ দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বললো,”মোটেই না।আমি ভীষণ এক্সাইটেড এসব নিয়ে।বিয়ে,বাসর,হানিমুন,বেবি প্ল্যানিং এসবে সব পুরুষের মতো আমার ও ভীষণ ইন্টারেস্ট বিবিজান।হয়তো একটু বেশি ইন্টারেস্ট এসবে।
নিজের ভালোবাসার মানুষকে পেলে সব পুরুষের মনে হয় আমার মতো মাথা খারাপ অবস্থা হয়ে যায় নবনী।”

নবনী হেসে ফেললো মেঘের কথা শুনে।

কাঁচের দেয়ালের অপরপাশ হতে মেঘ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো নবনীর দিকে।নবনী মাথা নিচু করে নিজের কাজে মন দিলো।
কাজ করতে গিয়ে নবনীর মনে পড়লো,তামিম ও নিশ্চয় নিতুকে নিয়ে এভাবেই প্ল্যানিং করছে।ভালোবাসার মানুষকে তো তামিম ও পেয়েছে। নবনীকে নিয়ে না দেখা,না ভাবা স্বপ্ন হয়তো নিতুকে নিয়েই তামিম ভেবে রেখেছিলো।নবনীর মোটেও মন খারাপ হয় না এখন আর তামিম নিতুর কথা ভাবলে।
নবনী বরং খুশি হয় এই ভেবে তামিমের সাথে বিচ্ছেদ হবার কারনেই মেঘের মতো সুন্দর মনের একজন মানুষকে নবনী পেয়েছে। নবনীর মনের একটা সুপ্ত ইচ্ছে,মেঘের সাথে বিয়ে হবার পর নবনী তামিমকে ধন্যবাদ দিবে।

১০ মিনিট পর মেঘ ব্যস্ত হয়ে নবনীকে কেবিনে ডাকলো।নবনী যেতেই মেঘ একটা মেইল ওপেন করে বললো,”নিতু রেজিগনেশন লেটার পাঠিয়েছে,দেখো।”

নবনী অবাক হলো দেখে।হঠাৎ কি এমন হলো যে নিতু চাকর ছেড়ে দিলো!
নিতু মেয়েটাকে নবনীর এমনিতেই ভীষণ ভালো লেগেছে। কি ভীষণ বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে,শুধু একটাই ভুল করেছে সে।সঠিক মানুষ চিনতে পারে নি।

কিন্তু তাতে কি?নবনীর জন্য তামিম হয়তো সঠিক মানুষ ছিলো না তাই নবনীর চোখে তামিম ভুল মানুষ কিন্তু নিতুর সাথে তো তেমন কিছু নয়।বরং নিতু আর তামিম মেইড ফর ইচ আদার।তাহলে কি এমন হলো যে নিতু চাকরি ছেড়ে দিলো?গতকাল ও তো নিতু অফিসে আসে নি।

নবনী নিজের ডেস্কে আসার কিছুক্ষণ পর মেঘের কল এলো।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিতুর গলা ভেসে এলো।

কোনো ভণিতা ছাড়াই নিতু সালাম দিয়ে বললো,”আমি নিতু স্যার।একটু আগে আমি রেজিগনেশন দিয়েছি।আমার পক্ষে আর চাকরিটা করা সম্ভব নয়।”

মেঘ বললো,”আপনি কি অফিসিয়াল কোনো প্রবলেমের জন্য জব ছেড়ে দিচ্ছেন মিসেস নিতু?এরকম কিছু হলে আমাকে বলুন।আমি ব্যাপারটা দেখবো,কোনো প্রবলেম থাকলে তাও সলভ করবো।”

নিতু মলিন হেসে বললো,”না স্যার,এরকম কিছুই নয়।বরং আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনার অফিসের মতো ফেসিলিটিজ আমি অন্য কোথাও পাবো না।”

মেঘ বললো,”দ্যান আপনার অন্য কোনো প্রবলেম হলেও বলুন আমাকে।আপনি চাইলে ছুটি নিতে পারেন।কিছুদিন ছুটি কাটান না হয় মিসেস নিতু।”

নিতু হেসে বললো,”স্যার,আমি কিছুতেই আর এই জবটা করতে চাই না।আমার আর আমার হাজব্যান্ডের মধ্যকার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে।আমি আমার জব ছেড়ে দেয়ার খবরটা বলার জন্য আপনাকে কল দেই নি স্যার।আমি কল দিয়েছি এটুকু বলতে যে,আমি জানি আপনি নবনী ম্যাডামকে ভীষণ ভালোবাসেন।আপনি নিশ্চয় ওনার অতীত সম্পর্কে ও সবটা জানেন।আমি সেই কালপ্রিট যার কারণে ম্যাডামের সংসার ভেঙে গেলো।তবে বিশ্বাস করুন স্যার আজকের আগে আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাই নি তামিমের এক্স ওয়াইফ ছিলো। অথবা রিলেশন থাকাকালীন ও যদি আমি জানতাম তবে কিছুতেই নিজের হাতে কারো সংসার আমি ভেঙ্গে দিতাম না।অন্ধ ভালোবাসার মোহে পড়ে আমি বিয়ে করে ফেলেছি । গতকাল যখন সব জানলাম আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে যেনো।আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
এজন্যই জবটা ছেড়ে দেওয়া। আমি স্যার নবনী ম্যাডামের মতো সাহসী নই,তাই একই অফিসে থেকে তামিমকে সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।আমি ভীষণ ভীতু স্যার।
স্যার,আপনাদের সম্পর্কটা যতো শীঘ্রই সম্ভব কাগজে কলমে স্বীকৃতি দিয়ে ফেলুন।তামিম উঠেপড়ে লাগবে ম্যাডামকে আবার নিজের করে নেয়ার জন্য।গতরাতে ড্রাঙ্ক হয়ে তামিম অনেক প্রলাপ বকেছে।ম্যাডামকে আর ওই নরকে যাতে যেতে না হয় স্যার,ওই নরকে ম্যাডামকে যাতে আর নিতে না পারে তামিম।আপনি স্যার একটু সতর্ক থাকবেন।রাখছি স্যার।”

একদমে সব বলে নিতু ফোন রেখে দিলো।

মেঘের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো ক্রোধে।ইচ্ছে করলো তামিমের টুঁটি চেপে ধরতে।

রেবেকা বেগম চিৎকার করে বরকত সাহেবকে ডেকে বললেন,”তোমার মেয়ে এখন ড্রামাকুইন হয়েছে।ড্রামা করার জন্য সংসার ভেঙ্গে এসেছে।এখন আবার চাকরিও ছেড়ে দিয়েছে তোমার মেয়ে।এটা কি নাট্যশালা পেয়েছে নাকি ও?জীবন কি ওর কাছে রঙ্গমঞ্চ?
ওর যখন যা মন চাইবে তাই করবে?”

বরকত সাহেব শান্তস্বরে বললেন,”তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে রেবেকা?ওই কুলাঙ্গারের সাথে একই অফিসে আমার মেয়ে জব করবে এতো কিছুর পরেও?তুমি কি এটুকুও বুঝো না ওই ছেলেকে দেখলে আমার মেয়ের মানসিক অবস্থা কেমন হবে?
মেয়েটা আজকেই এসেছে, ওকে একটু পার্সোনাল স্পেস দাও।আমার মেয়ে একটু নিজেকে সময় দিক।লেখাপড়া যখন দুই কলম শিখেছে তোমার মাথায় বোঝা হয়ে থাকবে না আমার মেয়ে।”

রেবেকা বেগম চেয়ারে হেলান দিয়ে বললো,”তোমার মনে আছে,আমার ছোট বোনের ডিভোর্সের পর কি হয়েছিলো?
পুরো সমাজের মানুষ আমার বাবা মা’কে ছি ছি করতো।দোষ কার,সমস্যা কি,কেউ তা জানতে চাইতো না।আমার বোনটাকে যেই দেখতো সেই ভ্রু কুঁচকে বলতো, এই মেয়েটা তো ডিভোর্সি!
যেনো ডিভোর্সি মানেই একজন অপরাধী। মানুষ খুন করার চাইতেও বড় অপরাধ এটা।

তোমার মাও আমাকে সুযোগ পেলে এই নিয়ে কথা শুনিয়ে দিতো,আমার বাকি অন্য দুই বোনের শাশুড়ি ও এরকমভাবে আমার বোনদের কথা শোনাতেন।
অথচ কেউ জানতে চায় নি ৬ বছরের সংসার জীবনে আমার বোনটাকে কতো যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে।

সারা অঙ্গে মারের কালশিটে দাগ দেখে আমরা চার বোন হাউমাউ করে কেঁদেছি, আব্বা আম্মাকে ও সেসব জানাই নি।আমার বোনটা কোথাও স্বস্তি পায় নি।কেউ তাকে একটা বার কোমল স্বরে বলে নি,মন খারাপ করো না।তোমার জন্য আল্লাহ ভালো কিছু রেখেছে।
আমার বোনটা আমাদের তিন বোনের কাছে এসে দুটো দিন থাকতে পারে নি আমাদের শ্বশুর বাড়ির লোকের ভয়ে।তুমি হয়তো এসব জানতে না।আমি ও বিচার দিই নি কখনো এসব নিয়ে।কিন্তু বুকের ভেতর সেই যন্ত্রণা আজও রয়ে গেছে।
সবার এতো অপমান, অবহেলা সহ্য করতে না পেরে আমার রেণু,আমার ছোটবোন,আমার আদরের পুতুলটা গলায় দড়ি দিলো।আমার বোনের মৃত্যুতেও এই সমাজের মানুষের কথা শোনানো বন্ধ হলো না।আমরা তিন বোনেই পান থেকে চুন খসলেই শুনতাম সবাই বলছে,এর বোনের মতোই অবস্থা হবে এদের।সংসারী মেয়ে না এরা,এরকম হলে কি আর ছোট বোন সংসার ছেড়ে আসতো,কতো বড় পাপ করছে কে জানে,তা না হলে কি এমনি এমনি গলায় দড়ি দেয়!
তোমার বাবা মাও শিক্ষিত ছিলো,তোমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও ভালো ছিলো,আমার বাকি তিন বোনের শ্বশুর বাড়ির মানুষ ও শিক্ষিত।অথচ সবাই সুযোগ পেলেই আমাদের এই দুর্বল জায়গায় আঘাত দিতে ছাড়তো না।

সেই থেকে আমার ভীষণ ভয়।আমি এই শব্দটাকে ভয় পাই।আমার মেয়েটার কপাল পুড়লো একদিকে,অন্যদিকে বড় মেয়েটাকেও আজীবন এই খোঁটা শুনতে হবে।তুমি পুরুষ মানুষ, তোমাকে এসবে আঁচড় কাটবে না।কিন্তু ক্ষতবিক্ষত করে দিবে আমাকে।আমার নিতুও শান্তি পাবে না।যেদিকে তাকাবে সেদিকেই দেখবে সবাই নাক শিটকাচ্ছে ওকে ডিভোর্সি বলে।আমাকে তোমাদের খারাপ মনে হতে পারে,কিন্তু এটাই বাস্তবতা। একে তোমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারবে না।
মাঝখান থেকে আমার মেয়ে মানসিক আঘাতে শেষ হয়ে যাবে।”

নিতু চুপ করে রইলো।মা যা বলেছে তার কোনোটাই মিথ্যে নয়।এই সমাজ বড়ই নিষ্ঠুর। তাই বলে কি সমাজের চোখ রাঙ্গানির ভয়ে নিতু এরকম অন্যায়,অপমান,প্রতারণা সহ্য করে ফিরে যাবে?
কিছুতেই না।

রাতে খাবার টেবিলে বসে শফিক আহমেদ মাসুমা বেগমকে বললেন,”এবার তো জানালে না তুমি কি গিফট চাও।”

মেঘ সায় দিয়ে বললো,”হ্যাঁ মা,অন্যবার তো আগে থেকেই বলতে থাকো তোমার কি গিফট লাগবে।”

মেঘলা মুরগির রান চিবুতে চিবুতে বললো,”মনে হয় মায়ের সব চাওয়া ফুলফিল হয়ে গেছে।তাই চাওয়ার মতো কিছু পাচ্ছে না।মা,তুমি এবার অন্তত বাবা আর ভাইয়াকে বলো যে মেঘলার জন্য একটা বর চাই এবার।ধরো যদি তোমাদের বিবাহবার্ষিকীর দিনে আমার ও এনগেজমেন্ট হয়ে যায়,তাহলে ভীষণ ভালো হবে না ব্যাপারটা? ”

মেঘ বোনের মাথায় চাটি মেরে বললো,”অসম্ভব, আমি বড় তাই আগে আমার বিয়ে হবে।তুই আগে আমার থেকে এই পর্যন্ত যতো টাকা মেরে খেয়েছিস,তার বদলে আমার বউয়ের সেবা যত্ন করে তা সুদেআসলে শোধ করবি।তারপর তোর বিয়ে।”

মাসুমা বেগম চুপ করে রইলেন।তারপর থমথমে স্বরে বললেন,”আমি যা চাইবার আমাদের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সবার সামনে চাইবো।মেঘের কাছে চাইবো শুধু।বলতে পারো,এটাই আমার জীবনে ছেলের কাছে শেষ কিছু চাওয়া।মা হিসেবে আমি যদি কোনো দায়িত্ব পালন করে থাকি ওর,অথবা আমার প্রতি ওর কোনো দায় থাকে তাহলে সেটা যেনো মেঘ আমার ইচ্ছেটা পূর্ণ করার মাধ্যমেই পরিশোধ করে থাকে।”

সবাইকে হতভম্ব অবস্থায় রেখে মাসুমা বেগম টেবিল থেকে উঠে গেলেন।
পিছনে রেখে গেলেন চিন্তিত তিন জোড়া চোখ।

চলবে……..

রাজিয়া রহমান

#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (৩৩)

ছোটবেলা থেকেই মেঘ সিরিয়াস টাইপের মানুষ। লেখাপড়া, মিউজিক,অফিস সবকিছুতেই নিজের সিরিয়াসনেস দেখিয়েছে। ছেলের এই গুণের জন্যই শফিক আহমেদ ছেলের উপর ভীষণ সন্তুষ্ট।
তিনি এটুকু বিশ্বাস করেন,তার ছেলে অন্তত ভুল কিছু করবে না।
ভালোবাসার ক্ষেত্রেও যে মেঘ ভীষণ সিরিয়াস হবে তা শফিক আহমেদের কাছে অজানা নয়।সারারাত শফিক আহমেদ ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে গেছেন মাসুমা বেগম কি এমন চাইতে পারে ছেলের কাছে!
স্ত্রীকে তিনি চিনেন,চঞ্চল,অস্থির স্বভাবের ভীষণ নরম মনের মহিলা তিনি।কখনো স্বামীর কাছে এমন আবদার করেন নি যা অশোভন অথবা যা চাইলে শফিক আহমেদ দিতে পারবেন না।সবার সাথে সহজে মিশে যাবার এক অদ্ভুত ক্ষমতা মাসুমা বেগমের আছে।স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় একটা মন আছে তার।
যে কারো বিপদের খবর শুনলে মাসুমা বেগম অস্থির হয়ে পড়েন।নিজের একাউন্টের সব টাকা অসহায়, গরীব,এতিমে পিছনে ব্যয় করতে কখনো দুই বার ভাবেন না।

শফিক আহমেদের ভীষণ ভয় হলো স্ত্রীর এরকম সিরিয়াস টাইপ কথা শুনে।সবার সামনে যদি তিনি এমন কিছু চেয়ে বসেন যা ছেলের পক্ষে অসম্ভব, তখন শফিক আহমেদ কাকে সামলাবেন?

আর ভাবতে পারছেন না তিনি।বিছানা থেকে উঠে গিয়ে অযু করে তাহাজ্জুদ নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন।খোদার দরবারে দুই হাত তুলে কেঁদে বললেন,”সব কিছু তুমি সহজ করে দাও আল্লাহ।ছেলের আর ছেলের মায়ের মধ্যে যেনো কোনো ঝামেলা না হয়।তুমি তো সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।”

আজকের দিনটি অন্যদিনের মতো রঙ্গিন মনে হচ্ছে না মেঘের।কেমন গুমোট ভাব যেনো চারদিকে।মন খারাপ করা রোদ উঠেছে মেঘের মনকে আরো বিক্ষিপ্ত করে দিতে।মেঘ বের হয়ে নিচে গিয়ে দেখে ইতোমধ্যে আত্মীয়রা সবাই এসে হাজির হয়েছে। চাচাতো, মামাতো,খালাতো,ফুফাতো ভাইবোন সবাই এসে হাজির।চাচী,মামি,খালা,ফুফুরা সবাই মিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।সবাই আড্ডায় ব্যস্ত।কেউ চা খাচ্ছে,কারো হাতে কফির মগ,কেউ লাচ্ছি,কেউ শরবত।কেউ সোফায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে,কেউবা চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।কেউ ফ্লোরে শুয়ে সোফায় পা তুলে রেখেছে।একদল ব্যস্ত সেলফি তোলায়।শফিক আহমেদ আর মাসুমা বেগমের বিবাহবার্ষিকীর জন্য সবাই মুখিয়ে থাকে।কেননা,প্রতিবছর এটাই হয় সবার মিলন মেলা।মেঘ চারদিকে তাকিয়ে শিমলাকে খুঁজলো।সবাই এসে হাজির শিমলা ছাড়া।

মেঘের কেমন যেনো বুকের ভেতর চিনচিন করে উঠলো শৈবালকে দেখে। অন্য সময় হলে মেঘ নিজে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তো দলের মধ্যখানে।মেঘকে দেখে কয়েকজন হৈহৈ করে ছুটে এলো।মেঘ মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।

শৈবাল এগিয়ে গিয়ে মেঘকে জড়িয়ে ধরে বললো,”কি রে,আমাকে ইগনোর করছিস মনে হচ্ছে?”

মেঘ হেসে বললো, “না,ইগনোর কোথায়।কেমন আছিস?চাকরি কেমন চলে?”

শৈবাল ফিসফিস করে বললো,”মাম্মা,কাহিনী তো ঘটে গেছে অন্যখানে।তোর সাথে দেখা করন আমার জন্য মনে কর একেবারে ফরজ হয়ে গেছে।আমি তো মাম্মা ঝামেলায় জড়িয়ে একেবারে ছ্যাড়াবেড়া অবস্থা। আম্মা তো গতকাল সকালে ছোট আম্মারে নিয়ে গিয়ে একটা মেয়ে দেখে আসছে। মেয়ের ছবি এনে আমারে দেখাইলো।প্রথমে আম্মা রাজি হয় নি,মেয়ে ডিভোর্সি শুনে।পরে কি হলো কে জানে,আম্মা এখন ওই মেয়ের সাথেই নাকি আমার বিয়া দিবো।কিন্তু কাহিনী হলো গিয়ে,আমি তো আরেকজনরে ভালোবাসি।মনে কর,আমার এই যে দিল আছে না,দিলের পুরোটা আমি তারে দিয়ে দিছি।এখন তুই আমারে বাঁচা।আমার মুশকিলের আসান মাম্মা তুই শুধু।”

মেঘের মুখ ২০০ ওয়াটের লাইটের মতো উজ্জ্বল হয়ে গেলো শৈবালের অন্য মেয়ে পছন্দ আছে শুনে।শৈবালকে জড়িয়ে ধরে বললো,”তুই কোনো চিন্তাই করবি না।তোর পছন্দ করা মেয়েটার পরিবারে কথা বলছস তুই?ওরা জানে?”

শৈবাল মাথা চুলকে বললো,”সেখানেও তো মাম্মা আরেক কাহিনী। মনে কর ওর বাপ,ভাই খুবই প্রভাবশালী লোক।ওরা তো সহজে রাজি হইবো না।ভয়ে এখনো ওর পরিবারে জানাতে পারি নি।”

মেঘ শৈবালের কাঁধ চাপড়ে বললো,”দূর,এসব কোনো ব্যাপারই না।আমি আছি তো।ওর বাবা,ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলবো।১ সপ্তাহের মধ্যে তোর বিয়ে দিবো।”

শৈবাল মেঘের হাত চেপে ধরে বললো,”প্রমিস?”

মেঘ বললো,”প্রমিস,প্রমিস,প্রমিস।মেয়ের নাম কি বল,বাবা,ভাইয়ের নাম বল।মেঘ তোরে কথা দিছে।দুনিয়া উলটে যাবে মেঘের প্রমিস এদিক সেদিক হবে না।”

শৈবাল রিল্যাক্স মুডে বললো,”মেয়ের নাম মেঘলা আহমেদ,বাবার নাম শফিক আহমেদ,ভাইয়ের নাম মেঘালয় আহমেদ।”

মেঘের মনে হলো সে কানে ভুল শুনছে।শৈবালকে আবার জিজ্ঞেস করতেই শৈবাল রোবটের ন্যায় রিপিট করে বললো।

হতভম্ব মেঘ প্রথমে বুঝতেই পারলো না ব্যাপারটা। তারপর বুঝতে পারতেই হাহা করে অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়লো। শৈবালের কান টেনে বললে,”এজন্যই তো বলি মেঘলা হঠাৎ গতরাতে নিজেই বিয়ের কথা কেনো বললো।তলে তলে এতোদূর!
শা/লা,আমার বোনের সাথে লাইন করে নিয়ে আমাকে দিয়েই প্রমিস করিয়ে নিলি।”

শৈবাল হাসলো।হেসে বললো,”মেঘ,আমি মেঘলাকে ভীষণ ভালোবাসি রে।হতে পারে আমি তোদের মতো এতো বিলাসিতায় মেঘলাকে রাখতে পারবো না।হতে পারে মেঘলার এখনকার লাইফ স্টাইল তখন চেঞ্জ হয়ে যাবে।কিন্তু একটা ব্যাপারে আমি গ্যারান্টি দিতে পারি,মেঘলার প্রতি আমার ভালোবাসা আজীবন একই রকম থাকবে।তা কখনো চেঞ্জ হবে না।আমার ভালোবাসায় কোনো কমতি থাকবে না।আমি বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে ফেলেছি।আমাকে ফিরিয়ে দিস না।আমি আর মেঘলা কেউই সুখী হবো না তাহলে।”

মেঘ শৈবালকে জড়িয়ে ধরে বললো,”মেঘলা আমার বোন,আমার কলিজার টুকরো ও।ওকে আদর ভালোবাসা দিতে আমরা কখনো কার্পণ্য করি নি।সবসময় চেয়েছি আমার ভালোবাসার পুতুলটাকে এমন কারো হাতে তুলে দিবো যে কখনো ওকে ভালোবাসতে কার্পণ্য করবে না।যার কাছে আমার বোনের হাসিমুখের সামনে সারা পৃথিবীর সুখ তুচ্ছ হয়ে যাবে।তোর চাইতে বেটার অন্য কেউ হবে না মেঘলার জন্য।তুই ভাবিস না,আমি বাবা মা’কে ম্যানেজ করে নিবো। ”

শৈবাল হেসে বললো,”আমি জানতাম মাম্মা,তুমি ছাড়া আমার এই বিপদে কেউ সাহায্য করবে না।”

শিমলা এলো আরো কিছুক্ষণ পরে।নীড়ের পরনে একটা শেরোয়ানি।নীড় এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে শফিক আহমেদকে বললো, “বুঝলে নানুভাই,আজকের অনুষ্ঠানের মূল কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু আমি।আমাকে আমার ডার্লিং বলেছে আমাকে নিয়েই কেক কাটবে।বুড়ো শফিক আহমেদকে কোনো পাত্তাই দিবে না।”

শফিক আহমেদ নীড়কে কোলে তুলে নিয়ে বললো, “ওকে ডিয়ার,তোমার ডার্লিং কে বলে দিও এক মাঘে শীত যায় না।আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমি ও আমার ছেলের ঘরের নাতনিকে নিয়ে কেক কাটবো।তোমার ডার্লিং তখন আউট হয়ে যাবে আমার লাইফ থেকে।”

নীর শফিক আহমেদকে খামচি দিয়ে বললো,”নো,নো,তখন আমার ডার্লিং দুইজন হবে।ও তোমার ডার্লিং হবে না,আমার হবে।”

শফিক আহমেদ হাসতে লাগলেন নীড়ের কথা শুনে।

মেঘ শিমলাকে একপাশে টেনে নিয়ে বললো,”আপা,মা কি কাল অথবা আজ তোর সাথে কোনো পরামর্শ করেছে?মা’র প্ল্যান কি জানিস কিছু?”

শিমলা আড়মোড়া ভেঙ্গে বললো, “সর এখান থেকে,এসেছি একটু আনন্দ করতে তুই আসছিস আমার সাথে ষড়যন্ত্রের আলাপ করতে।মামীর সাথে দীর্ঘদিন আমার কথা হয় না।আমি কিছুই জানি না।”

মেঘ ভ্রু কুঁচকে বললো, “সত্যি জানিস না?”

শিমলা আগের মতো নির্বিকার থেকে বললো,”না জানি না।”

মেঘের বিশ্বাস হলো না।কিছুক্ষণ শিমলার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,”মা’র সব আবদার আমি মেনে নিবো আপা,তবে মনে রাখিস নবনীতাকে নিয়ে আমি কারো সাথে আপোষ করবো না।এই একটা ব্যাপারে আমি আপোষহীন,পুরো পৃথিবী আমার বিপক্ষে যাক তবুও আমার নবনীতাকে আমার চাই-ই চাই।আমি সারা পৃথিবী তছনছ করে দিবো যদি মা আমার কাছে এরকম কোনো অন্যায় আবদার করে।”

মেঘের লাল টকটকে মুখের দিকে তাকিয়ে শিমলার ভীষণ হাসি পেলো। একটা ছেলে কারো প্রেমে পড়লে কেমন শান্ত হয়ে যায় আবার কোনো বিপদে কেমন উগ্র হয়ে যায় মেঘ তার স্পষ্ট প্রমাণ। শিমলা মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।এই তো তার সেই ভাই যে কিনা কোনো মেয়ে তাকে প্রপোজ করলে কেমন বিরক্ত হতো।অথচ সেই আজ একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে নিজের স্ট্যাটাস,নিজের অবস্থান সব ভুলে কেমন ক্রেজি হয়ে গেছে।

শিমলা কঠোর হয়ে বললো, “ছি মেঘ!এই তোর শিক্ষা?তুই ওনাদের একমাত্র ছেলে।তোর কাছে ওনাদের এক্সপেকটেশন থাকতেই পারে।মামীর যদি সত্যি এরকম চিন্তাভাবনা থাকে তবে তোর উচিৎ সেটা মেনে নেওয়া।জীবনে এরকম কতো মেয়ে আসবে,বাবা মা কি আসবে আর?”
মেঘ হতভম্ব হয়ে বললো,”ট্রিপিক্যাল বাঙ্গালি মহিলার মতো কথা বলছিস কেনো আপা তুই?তোর থেকে এরকম কথা এক্সপেক্টেড না আপা।তুই তো জানিস নবনী আমার জীবনে কি?বাবা মা’কে তো আমি অস্বীকার করছি না।কিন্তু তাই বলে নিজের ভালোবাসা,যাকে নিজের স্বত্তা হিসেবে জানি তাকে অস্বীকার করবো?সরি আপা,আমি সেই মানুষ না।”

শিমলার সাথে কথা না বাড়িয়ে মেঘ উঠে চলে গেলো।শিমলা ব্যস্ত হয়ে পড়লো অন্যদের সাথে কথা বলায়।

বিকেল হতেই তামিম নিজের ব্যাগ গুছিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।মাগরিবের পর পরেই বাস ছাড়বে।অফিসের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ করে যেনো কি হলো।চার পাঁচটা ষন্ডা টাইপের ছেলে হকিস্টিক,স্ট্যাম্প নিয়ে তেড়ে এসে তামিমকে মারতে লাগলো। একজন বললো,”শা/লা মারুফের বাচ্চা,আর জীবনে দেখমু তোরে আমার বোনকে ডিস্টার্ব করছিস,আমার বোনের পিছু নিয়েছিস তবে বুঝবি তমার ভাইয়েরা বোনকে প্রটেক্ট করার জন্য তোর কলিজা ছিঁড়ে আনতেও দুই বার ভাববে না।”

তামিম চিৎকার করে বললো,”আমার নাম তামিম,আমি মারুফ নই।আপনাদের ভুল হচ্ছে।তমা নামে কাউকে আমি চিনি না।”

কেউ তার কথা শুনলো না।৫ মিনিট এলোপাথাড়ি মেরে হাওয়ার মতো মিলিয়ে গেলো।

কয়েকজন পথচারী তামিমকে ধরে একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলো।দু একজন দেশটা রসাতলে গেলো বলে ও গালি দিলো।নয়তো দিন দুপুরে এরকম করে নাকি!

তামিমের কপালে,মাথায় স্টিচ দেওয়া লাগলো। পায়ে ভীষণ চোট পেলো।ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে তামিম তবুও অফিসের দিকে গেলো।
নিজের শারীরিক অবস্থার চাইতে তামিমের কাছে বড় হয়ে উঠলো জাফলং গিয়ে মেঘ আর নবনী প্রেম করবে,আর সে বাসায় বিছানায় পড়ে থাকবে?
অসম্ভব!

মেঘের মোবাইলে একটা টেক্সট এলো,”মিশন তামিম কমপ্লিট গুরু।ব্যাটারে হালকার উপর ঝাপসা করে কয়েকটা দিয়েছি। আপনি বলায় গুরুতর কিছু করি নি,শুধুমাত্র ট্রেইলার দেখিয়ে ছেড়ে দিয়েছি,নয়তো পুরো সিনেমা দেখাতাম ওরে।রাস্তার সাথে পিষে ফেলতাম।”

মেঘ মুচকি হেসে ফোনটা ব্যাগে রাখলো।সবাই নিজেদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে।
তিনটা এনা বাসে সবাই রওয়ানা হলো সিলেটের উদ্দেশ্যে।সিদ্ধান্ত হলো সকালে আগে এনিভার্সারি সেলিব্রেট করা হবে।তারপর সবার ঘুরাঘুরি।

শুনে মেঘ মায়ের দিকে তাকালো। কথা তো ছিলো সন্ধ্যায় এনিভার্সারির পার্টি হবে,তবে হঠাৎ টাইম এগিয়ে আনার কারন কি?
কেমন নির্বিকার ভঙ্গিতে মাসুমা বেগম বসে আছেন।নিজের মা’কে মেঘের নিজের কাছেই অচেনা মনে হলো।

নবনীকে শিমলা নিজের পাশে বসিয়ে ছাড়লো।মেঘ কয়েকবার শিমলার আশেপাশে ঘুরে ঘ্যানঘ্যান করলো নবনীর সাথে বসার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য।শিমলা ব্যাপারটা পাত্তাই দিলো না।

নয়ঘন্টা জার্নি করার পর সবাই হোটেল নুরজাহান গ্রান্ডে বুক করা রুমে গিয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়লো। ঘুম এলো না শুধু মেঘের চোখে।শিমলার কথার ধরন থেকে মেঘ ৯০% শিওর হলো মাসুমা বেগম মেঘের বিয়ে রিলেটেড কিছু চাইবেন।

কিন্তু কি চাইবেন……?

চলবে…..

রাজিয়া রহমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে