তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর পর্ব-২৮+২৯

0
1194

#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (২৮)

অফিসে গিয়ে নবনী জানতে পারলো অফিস থেকে তাদেরকে তিন দিনের একটা ট্যুরে নেওয়া হবে।যার সম্পূর্ণ খরচ কোম্পানি বহন করবে।শফিক আহমেদ এবং মাসুমা বেগমের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে এই ট্যুর। এবং সেখানেই তাদের এনিভার্সারির অনুষ্ঠান করা হবে।

নবনী ডেস্কে বসে কাজ করছে।কিছুক্ষণ পর পর মাথা তুলে মেঘের কেবিনের দিকে তাকাচ্ছে। দুএকবার দুজনের চোখাচোখি হচ্ছে। এরমধ্যে শিমলা কল দিলো।
অনেকদিন পর শিমলার কল পেয়ে নবনী লজ্জা পেলো কিছুটা। অনেক দিন ধরে নবনী শিমলাকে কল দেয় না।দিবে দিবে করে দেওয়া হয় না। কে জানে, শিমলা হয়তো রেগে আছে।

কল রিসিভ করতেই শিমলা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, “নবনী, আমি আর তুমি কিন্তু একসাথে বসবো বাসে,কেমন? ”

নবনী আমতাআমতা করে বললো, “আমি যাবো কি-না তা তো এখনো শিওর না। ”

শিমলা অবাক হয়ে বললো, “কি বলো তুমি? তোমার জন্য এতো প্ল্যান মেঘের, তুমি না গেলে কিভাবে হবে!”

নবনী হতভম্ব হয়ে বললো, “আমার জন্যে প্ল্যান মানে?”

শিমলা ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে বললো,”তুমি একদিন কথায় কথায় আমাকে বলেছিলে তোমার কখনো কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি।তোমার ভীষণ ইচ্ছে জাফলং যাবার।আমি ও তখন মেঘকে বলেছিলাম।মেঘের সেটা মনে আছে।
মামা মামীর এনিভার্সারি উপলক্ষ্য করে মেঘ তাই প্ল্যান করলো জাফলং যাবার।শুধু তোমার ইচ্ছে পূর্ণ করতেই অফিসের সব স্টাফ,নিজেদের সব আত্মীয়স্বজন নিয়ে জাফলং যাবার প্ল্যান করেছে। প্লিজ নবনী, তুমি অমত করো না।”

নবনী হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। ফোন রাখতে যেতেই দেখে মেঘ মেসেজ দিয়েছে, “এক গ্লাস পানি দরকার। ”

নবনী রিপ্লে দিলো না।মেঘের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো, এই যে এতো ভালোবাসা, এতো যত্ন,এসব কতোদিন থাকবে?
এটা কি সত্যিই ভালোবাসা না-কি ক্ষণিকের মোহ!
এসব যদি অভিনয় হয়,তাহলে নবনী কি সহ্য করতে পারবে?
নবনী কি আরো একবার হৃদয় ভাঙ্গার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারবে?

মেঘ নবনীর চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেই চিন্তায় পড়ে গেলো। এই মেয়েটা হঠাৎ করে এরকম কি ভাবছ?

মেঘ উঠে এলো কেবিন থেকে। নবনীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”নবনীতা, কি হয়েছে তোমার? আমাকে বলো নবনীতা? তোমাকে এরকম ফ্যাকাসে লাগছে কেনো?”

নবনীর কান্না এলো।মেঘকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো নবনী। মেঘ দিশেহারা হয়ে গেলো নবনীর কান্না দেখে,নবনীর চেয়ারের পাশে হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো ফ্লোরে। তারপর ব্যাকুল হৃদয়ে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো নবনীকে।

মেঘের ব্যাকুল স্বর প্রায় সবাই শুনতে পেলো।নবনী কান্না থামাতেই মেঘ উঠে দাঁড়ালো। নবনী মেঘের এরকম ব্যাকুলতা দেখে কিছুটা লজ্জা পেলো।নিজের কান্নাকাটির জন্য নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ইমোশনাল হয়ে কান্না করে ফেলেছিলো কিন্তু তাতে মেঘ যে এরকম রিয়েক্ট করবে নবনী ভাবে নি।লজ্জায় নবনীর মাথা কা/টা গেলো।
রক্তিম হয়ে নবনী বললো, “আপনি এরকম ব্যস্ত হচ্ছেন কেনো?”

মেঘ বিষণ্ণ হয়ে বললো, “তুমি কাঁদলে যে আমার পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যায় নবনী।তোমার মুখে হাসি না থাকলে আমার পুরো পৃথিবীতে মেঘের ঘনঘটা দেখা দেয়।”

নবনী জিজ্ঞেস করলো, “এই ব্যাকুলতা, এই টান,এই ভালোবাসা কতোদিন থাকবে?
এক সময় যদি বদলে যায়? ”

মেঘ উত্তর দিলো, “মেরি জান,যদি কখনো এরকম হয় তবে মনে রেখো এই পৃথিবী থেকে ভালোবাসা শব্দটা উঠে গেছে। সেদিন আর গাছেরা ভালোবেসে ফুল ফুটাবে না,পাখি ভালোবেসে গান শুনাবে না,নদী ভালোবেসে সাগরে মিশে যাবে না।যতোদিন এসব স্বভাবিক নিয়মে চলবে,ততদিন এই মেঘ ও তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসে যাবে।নিশ্বাস থাকা পর্যন্ত এই ভালোবাসা কমবে না।”

নবনী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

লাঞ্চের সময় নবনী ক্যান্টিনে যেতেই দেখতে পেলো কর্ণারের টেবিলে ছোট একটা ঝটলা।৪-৫ জন মেয়ে মাথা এক করে হাসাহাসি করছে।
নবনী আশেপাশে তাকালো।সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে।কেউ মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে,কেউ ফোনে কথা বলছে আর খাচ্ছে,আবার কেউ কেউ চ্যাটিং করছে।

কেউ-বা ফাইল নিয়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে,পাশে গরম কফির মগ ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ক্লান্ত হয়ে থেমে গেছে।
নবনী একটা স্যান্ডউইচ আর একটা কফি নিয়ে মাঝখানের টেবিলে বসলো।নবনী জানে সিসি ক্যামেরায় মেঘ নবনীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাই সেভাবেই বসলো যাতে মেঘের দেখতে অসুবিধা না হয়।

আশেপাশে কোথাও তামিম অথবা নিতুকে দেখা যাচ্ছে না। নবনী কিছুটা চিন্তিত হলো।নিতু মেয়েটার জন্য নবনীর মনে কেমন একটা মায়া জন্মেছে।মেয়েটাকে দেখলেই মনে হয় যেনো নবনীর ভীষণ চেনা।নবনী আগে অবাক হতো খুব।যেই মেয়েটার জন্য তার সংসার ভেঙেছে সেই মেয়েটার সাথে সে কেমন নির্দ্বিধায় হেসে কথা বলছে।বস্তুত সবার চাইতে বেশি ভালো লাগছে তার সাথে কথা বলতে।
এখন অবশ্য নবনীর অবাক লাগে না।নবনী বিশ্বাস করে, তার জন্য উত্তম কিছু ছিলো বলেই আল্লাহ তামিমের জীবন থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।
নয়তো কি নবনী কখনো এরকম পাগল করা ভালোবাসা পেতো?মেঘকে কখনো ভালোবাসতে পারতো?

ভালোবাসার এই অংশ তো নবনীর কাছে আজীবন অজানা থেকে যেতো।

খাবার শেষ করে নবনী বের হতে যেতেই শুনতে পেলো গোল হয়ে বসে থাকা সব ক’টা মেয়ে সমস্বরে হেসে উঠেছে। নবনী পিছনে ফিরে তাকালো।
দেখলো ওরা সবাই নবনীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলছে আর হাসছে।
পাত্তা না দিয়ে নবনী চলে গেলো ক্যান্টিন থেকে।

অফিস ছুটির পর নবনী বাসের জন্য দাঁড়ালো। মেঘ এসে নবনীর পাশে দাঁড়ালো। নবনী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এখানে কেনো?”

মেঘ হেসে বললো, “কি জানি,বুকের ভেতর কেমন আনচান করছে বারবার। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে ভীষণ। তাই ছুটে এলাম।আজকাল নিজেকে আঠারো বছর বয়সী তরুণ মনে হয়, সদ্য যে ভালোবেসেছে কাউকে।”

নবনী আর কথা বাড়ালো না।লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেঘের এসব কথা নবনীকে রক্তিম করে তোলে। নবনীর নিজেকে খোলা ফসলের মাঠ মনে হয়, যেখানে বাতাস হয়ে মেঘ নবনীর সর্ব অঙ্গে শিহরণ তুলে যায়।কেঁপে কেঁপে উঠে নবনী তখন।

কিছুক্ষণ উসখুস করে মেঘ বললো, “নবনীতা, অফিস থেকে জাফলং ট্যুরে যাবে,আমাদের সিইওর এনিভার্সারি উপলক্ষ্য করে।
অফিসের সবার যেতে হবে।আমি ভীষণ খুশি হবো তুমি যদি আমার সাথে গাড়িতে করে যাও।”

নবনী হাসলো মেঘের কথা শুনে।জাফলং কেনো যাওয়া হচ্ছে তা শিমলার থেকে নবনী জেনেছে।মেঘকে সেসব না বলে নবনী বললো, “অন্য সবাই কিভাবে যাবে?”

মেঘ বললো, “বাস নেওয়া হবে সবার জন্য। ”

নবনী বললো, “অন্যরা যেভাবে যাবে আমি ও সেভাবেই যাবো।পার্সোনাল কোনো সুবিধা আমি চাই না।”

মেঘ আশাহত হলো কিছুটা। নবনী বললো, “আচ্ছা, ট্রেনে যাওয়া যায় না? আমার ট্রেনে চড়া হয় নি কখনো। ”

মেঘ বললো, “তুমি বললে তো আমি তোমার জন্য ফ্লাইটে যাবার ব্যবস্থা করতে ও রাজি, ট্রেন সেখানে কি আর ব্যাপার। ”

নবনী মেঘের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বললো, “এতো ভালোবাসা? ”

মেঘ দু পা এগিয়ে এসে বললো, “অনেক ভালোবাসা।”

নবনীর ভীষণ কাছে গিয়ে মেঘ দাঁড়ালো, জেন্টস পারফিউমের ঘ্রাণ নবনীর নাকে ভেসে এলো। কি মাতাল করা একটা স্নিগ্ধ ঘ্রাণ।নবনী পিছিয়ে গেলো দ্রুত।এই মাতাল করা ঘ্রাণ নবনীর সহ্য হচ্ছে না।

মেঘ মুচকি হেসে বললো, “ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে রাঙিয়ে দিতে চাই নবনী।”

————–

তামিম সারা দিনে আর বাসায় ফিরে নি।ফোন ও অন পায় নি নিতু তামিমের।এই পর্যন্ত প্রায় ৭৮ বার ট্রাই করেছে নিতু।বিষণ্ণ হয়ে নিতু নিজের রুমে ফ্লোরে বসে রইলো। নিতুর নিজেকে কেমন অচেনা বলে মনে হয়। একটা মানুষের ভালোবাসা পাবার জন্য সে এতো অস্থির হয়ে আছে ভাবতেই নিতুর কান্না পায়।
শুধুমাত্র ভালোবাসার মানুষটার জন্য নিতু এতো উতলা হয়ে উঠেছে তা কি সেই মানুষটা কখনো জানতে পারবে?
সারাদিন নিতুর এভাবেই কেটেছে বুকের ভেতর দমবন্ধ করা যন্ত্রণা নিয়ে কাউকে বলতে পারে নি নিতু এই অসহ্য যন্ত্রণার কথা।
সন্ধ্যায় তাহেরা বেগম বাসার রুমে বসে নিতুকে ডাকলেন। তারপর কঠোর স্বরে বললেন, “কুরবানির ঈদ চলে এসেছে জানোই তো,তোমার বাবা মা’কে কি বলেছ গরু কেনার কথা? ”

নিতু অবাক হয়ে বললো, “আমার বাবা মা গরু কিনবে না-কি কিনবে না সেটা তাদের ব্যাপার। সেখানে আমি কথা বলতে যাবো কেনো?”

তাহেরা বেগম দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললেন, “কেনো,তোমার বাবা মা জানে না মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে প্রথম কুরবানির ঈদে গরু পাঠানোর প্রচলন রয়েছে? এমনিতেও তো তোমার বাবা মা কোনো দায়িত্ব পালন করছে না।রমজানের ঈদে ইফতার আইটেম,সেমাই চিনি এসব কিছুই পাঠালো না,আমাদের সবার জন্য পোশাক ও পাঠালো না।এবার কুরবানির ঈদে গরু না পাঠালে ভীষণ খারাপ হবে।”

নিতু হেসে জিজ্ঞেস করলো, “এতো বছর বুঝি আপনারা রমজানে ইফতার না করে থাকতেন?নাকি আপনাদের বাসায় কখনো সেমাই আনা হয় নি,সেই সামর্থ্য আপনাদের নেই?অনেক সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান আছে এখন,যারা মানুষকে এসব দিয়ে থাকে রমজানে,এতো অভাব হলে সেখান লাইনে দাঁড়ালেই পারতেন সবাই মিলে।
এত বছর কি আপনারা পোশাক পরতেন না ঈদের দিন, তাহলে আমার বাবার বাড়ি থেকে পোশাকের অপেক্ষায় থাকার মানে কি?

আর আমার বাবার বাড়ি থেকে পাঠানো গরু দিয়ে আপনার কুরবানি দিতে হবে কেনো?আপনার যদি সামর্থ্য না থাকে আপনি কুরবানি দিবেন না।এতো বছর কি আশেপাশের লোকজন আপনার জন্য গরু কিনে পাঠাতো না-কি? ”

তাহেরা বেগম অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন,”মুখে চ্যাটাংচ্যাটাং কথা বলা ছাড়া আর কি জানো?
বিয়ের পর মেয়ের বাড়িতে খাট, ফার্ণিচার,নানা জিনিসপত্র দেওয়া লাগে যে এসব কি জানে না তোমার বাবা মা।তোমার বাবা মা কি শুধু এটাই জানে কিভাবে মেয়েদের বেতনের টাকায় ভাগ বসাতে হয়?
ফকিন্নির ঘরের মেয়ে বউ করে আনার এই এক সমস্যা। এরা ক্লাস মেইনটেইন করে চলতে জানে না।”

নিতু মুচকি হেসে বললো, “আপনারা বুঝি এতোদিন ফুটপাতে ঘুমাতেন,তাই ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে ফার্নিচার দিয়ে ঘর সাজাবেন সেই আশায় বসে ছিলেন।আপনি এতো বছর সংসার করেও নিজের সংসার নিজের মন মতো সাজান নি কি ছেলেদের শ্বশুর বাড়ির আশায়?
তাহলে তো বলতে হয় আসলে ফকিন্নি আপনি নিজেই।যে অন্যের বাড়ির জিনিসপত্র আশা করে থাকে।আমার বাবা মা আমার উপার্জনের টাকা নেয়।আপনার বা আপনার ছেলের এক পয়সা ও সেখানে নেই।আমার টাকা আমার বাবা মায়ের জন্য সম্পূর্ণ বৈধ,তাদের হক আছে এই টাকায়।বরং আপনার কোনো অধিকার নেই আমার টাকায়,আমার বাবার বাড়ি থেকে ফার্নিচার আশা করার।”

সামিম পত্রিকায় মুখ গুঁজে হাসতে লাগলো নিতুর কথা শুনে। তাহেরা বেগম বলার মতো কথা খুঁজে না পেয়ে বললেন,”বেয়াদবের মতো মুখেমুখে তর্ক শিখেছ,সংসার করা তো শেখো নি।কেমন বউ হলে স্বামী দুই দিন, একরাত বাসায় ফিরে নি অথচ সে বেহায়ার মতো ৩ বেলা খাবার গিলছে।স্বামীর চিন্তা মাথায় নেই তার।আমার সাথে আবার তর্ক করতে বসেছে।”

নিতু বিরক্ত হয়ে বললো, “আপনার মতো আমি। যেমন মা হলে আপনি একটু আগে জানতে পারলেন আপনার ছেলে গতকাল সকালে বাসা থেকে বের হবার পর আর বাসায় আসে নি।আপনি মা হয়ে নির্বিকার থাকতে পারলে আমি বউ হয়ে কেনো পারবো না?বউ হয়েছি বলে কি সব দায় আমার একা’র? ”

তাহেরা বেগম লজ্জা পেলেন শুনে।মেয়ের বিয়ের উত্তেজনায় তার মনেই ছিলো না বড় ছেলের কথা।একটু আগে সামিম পত্রিকা পড়তে বসে তাকে জিজ্ঞেস করলো তামিম বাসায় নেই কেনো।তখন তিনি সামিমের থেকে জেনেছেন তামিম যে গত সন্ধ্যায় বাসায় আসে নি।
তিনি ভেবেছেন নিতু জানে না এটা তিনি যে একটু আগে এই খবর পেয়েছেন। এখন দেখতে পেলেন এই মেয়ে সব শুনেছে।এর কান খরগোশের কানের মতো মনে হয়।

তামিম বাসায় ফিরলো রাত সাড়ে ১০ টায়।

তামিমকে দেখে বাসার সকলে চমকে গেলো। নিতুর হাত থেকে পানির গ্লাস মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেলো।

চলবে……..?

রাজিয়া রহমান

#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (২৯)

পুরো বাসায় পিনপতন নীরবতা। সবাই চমকে তাকিয়ে আছে তামিমের দিকে।তামিমের দুই পাশে দুজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। শক্ত করে তামিমকে ধরে আছেন তারা।তামিম সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
সামিম ছুটে গিয়ে তামিমকে জড়িয়ে ধরে সোফায় এনে বসালো। লোক দুটো সামিমকে উদ্দেশ্য করে বললো, “মানুষ এরকম মাতালামি করে না-কি? ছি ছি!উনি কি সব বাজে কথা বলছিলেন বারে বসে।মেয়েদের নিয়ে কেমন সব নোংরা কথা।রাস্তায় নবনী বলে কাউকে নিয়ে কি সব আবোল তাবোল কথা বলেছেন!”

লোক দুজনের কাছে সামিম ক্ষমা চেয়ে নিলো ভাইয়ের এরকম ব্যবহারের জন্য।
তামিম অকারণে খিলখিল করে হাসতে লাগলো। তারপর দুই চোখ ছোট করে নিতুর দিকে তাকিয়ে বললো, “এই!এই!তুই কোন সাহসে আবার বাসায় এসেছিস?শা/লী!
তোর বস কই এখন?কুত্তার মতো পা চাটতে চলে এসেছিস আমার কাছে?তুই কি ভেবেছিস তোর মতো বিবাহিতা মহিলাকে মেঘের মতো লোক ভালোবাসবে?মোটেও না।ওর ও তোর শরীরের উপর নজর। হা হা হা। ” এসব বলেই তামিম অপ্রকৃতিস্থের মতো খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে লাগলো।

নিতুর বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলো তামিমের দিকে। এই কাকে দেখছে সে?
এই কি সত্যি তামিম?যাকে নিতু নিকের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছিলো?
এই কি তার প্রতিদান?
বর্ষার ধারা বইতে লাগলো নিতুর দুই চোখ বেয়ে।মাথার ভেতর বজ্রপাত হচ্ছে যেনো!
একটা অচেনা ঝড়ে উড়ে গেছে নিতুর সব ভালোবাসা, ভরসা,বিশ্বাস।ভেতর থেকে কেউ একজন চিৎকার করে নিতুকে বলছে, “ভুল,ভুল,ভুল।সবকিছু তোর ভুল ছিলো নিতু।অনেক বড় ভুল করেছিস তুই।”

নিতু দাড়ানো থেকে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।চেয়ার চেপে ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

তামিম কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে পড়ে রইলো অজ্ঞানের মতো। তারপর আবারও চেঁচিয়ে উঠে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “নবনী,আমার নবনী।আমি তোমাকে ছাড়া ভালো নেই নবনী।আমি অনেক বড় ভুলে করেছি।আমাকে ক্ষমা করে দাও নবনী।আমি সব ছেড়ে দিবো।কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবো না।কোনো মেয়ের সাথে রুম ডেটে যাবো না নবনী।একবার চান্স দাও আমাকে।আমি ভীষণ নিঃস্ব তোমাকে ছাড়া। আমার বুকের ভেতর সারাক্ষণ তুমি থাকো।আমি কোনোকিছুতে শান্তি পাই না।কতো রাত আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারি না। বাসায় আসলে তোমার পুতুলের মতো মুখখানা দেখি না।এই দুনিয়াদারি সব আমার কাছে অসহ্য লাগে তোমাকে ছাড়া। তোমাকে হারিয়ে ফেলার পর আমি তোমার মূল্য বুঝতে পেরেছি। আমি ভীষণ ভীতু ছিলাম নবনী,মনে মনে তোমাকে চাইলেও মায়ের ভয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারি নি। নিতুকে আমি ভালোবাসতে পারি নি।নিতু ছিলো আমার ক্ষণিকের মোহ নবনী।আমি কোনটা মনের ভালোবাসা আর কোনটা মোহ তার পার্থক্য বুঝতে পারি নি।নিতুকে তো আমি শুধু বিছানা পর্যন্ত চেয়েছি,সংসার করার জন্য নয়।নিতু আমার জন্য পারফেক্ট নয়,আর না আমি নিতুর জন্য।আমার মন তো তোমাকে চেয়েছে।তুমি কেনো আমার মনের কথা বুঝতে পারলে না।
কি থেকে কি হয়ে গেলো! আমি কিছু করতে পারলাম না।তুমি এই থাপ্পড় আমাকে আরো আগে কেনো দাও নি।তাহলে তো আমার হুঁশ হতো।আমি সহ্য করতে পারি না নবনী। তোমার পাশে অন্য কেউ আমার সহ্য হয় না।বুকের ভেতর ঈর্ষার আগুন জ্বলতে থাকে।”

নিতু ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। তাহেরা বেগম ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললেন,”সামিম,তোর ভাইকে আমার রুমে নিয়ে শুইয়ে দে।ওর মাথা ঠিক নেই।কি সব বলছে ও!”

সামিম ধরতে যেতে তামিম পায়ের জুতা ছুঁড়ে মারলো সামিমের দিকে।তারপর টলমল কণ্ঠে বললো, “কোনো শা/লা আমাকে ধরতে আসবি না।আজ আমি সব বলে দিবো আমার নবনীকে।অনেক সহ্য করেছি শালা।আর না।নবনী শুধু আমার।এই তাহেরা,চুপ হারা/মির বাচ্চা, তোর জন্য আমার নবনীকে হারিয়ে ফেলেছি।আমি তোকে শেষ করে ফেলবো। ”

বলতে বলতে তামিম বমি করে দিলো। সামিম উঠে গিয়ে তামিমকে ধরে তাহেরা বেগমের রুমে নিয়ে গেলো। বিছানায় শুইয়ে দিতেই তামিম উঠে বসলো। তারপর চিৎকার করে বললো, “কোন শা/লা আমাকে কি করবে?আমি কি কাউকে ভয় পাই না-কি? দরকার হলে আজ সারারাত ও মেয়ে নিয়ে কাটাবো, নবনীকে আমি কি ভয় পাই না-কি? ও যদি ওই শা/লার মেঘের সাথে লাইন করতে পারে আমি কেনো পারবো না। আমার নবনী আমার কাছে আর আসে না কেনো?কতোদিন আমার খোলা বুকে নবনী আছড়ে পড়ে না।আমার বুকের বাম পাশে ভীষণ কষ্ট হয়।”

তারপর সামিমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললো,”ভাই আমার,তোর ভাবীকে বল আমার সাথে যেনো রাগ না করে। আমি সত্যি ভালো হয়ে যাবো।নিতুর সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবো না।বাবাকে বল আমাকে মাফ করে দিতে।আমি নবনীকে সত্যি ভালোবাসি।আর কখনো এসব করবো না।নবনীকে বল ও যাতে না যায় আমাকে ছেড়ে।বাবাকে বল নবনীকে বুঝিয়ে বলতে। আমি নবনীর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো।বিয়ের আগে মেয়েদের সাথে রাত কাটানোর জন্য,নিতুকে ভালোবাসার জন্য,সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইবো ”

বলতে বলতে কাঁদতে লাগলো তামিম।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলো। পাশের রুম থেকে নিতু সব শুনতে পেলো। শূন্যদৃষ্টিতে নিতু সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।মাথার উপরে ঘুরতে থাকা বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে জানালার পর্দা থরথর করে কাঁপছে। সেই কাঁপন নবনীর সর্ব অঙ্গ প্রতঙ্গে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে যেনো।দুচোখ অশ্রুতে টলমল হয়ে আছে।
এতোদিন ধরে মাথার ভেতর ঘুরতে থাকা প্রশ্নেরা আজ জবাব পেয়ে গেলো।অথচ এই জবাবে নিতুর বুক ফেটে গেলো যেনো।একরাশ শূন্যতা বুকের ভেতরটা ক্রমে দখল করে নিচ্ছে।নিতুর মনে হচ্ছে নিতু স্বপ্ন দেখছে।এসব কিছুই হচ্ছে না।তামিম এখনো বাসায় আসে নি।

বুকের ভেতরটা ক্ষণে ক্ষণে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে নিতুর সারা দেহ।তীক্ষ্ণ ছু/রি দিয়ে কেউ যেনো কু/পি/য়ে ফালা/ফালা করে দিচ্ছে নিতুর কলিজা।
চিৎকার করে নিতু আল্লাহকে ডেকে বললো, “হায় আল্লাহ, এতো যন্ত্রণা কেনো হচ্ছে!কেনো এরকম হলো আমার সাথে!আমার ভালোবাসা তো সত্যি ছিলো। তবে কেনো আমার জন্য কারো ঘর ভাঙ্গলো! ”

তামিম প্রলাপ বকে যাচ্ছে ঘুমের মধ্যে ও।বারবার নবনীকে ডাকছে,কখনো গালাগাল করছে,কখনো ক্ষমা চাচ্ছে।
নিতুর সমস্ত পৃথিবী যেনো অন্ধকার হয়ে আসছে।যন্ত্রণায়,বিশ্বাস ভেঙে যাওয়ায় বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে নিতু।মনের ভেতর এক কোণে একটা আশার প্রদীপ তবুও টিপটিপ করে জ্বলছে।এসব যেনো মিথ্যে হয়।এসব যেনো তামিমের প্রলাপ হয়।

সামিম বাহিরে এসে দেখে নিতুর বেহাল অবস্থা। সামিম ছুটে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।নিতুকে একটু পানি খাইয়ে দিয়ে মাথায় একটু পানি দিলো।তারপর উঠিয়ে নিয়ে সোফায় বসালো।

ক্লান্তিতে, অবসাদে,ব্যথায় নিতুর অবস্থা ভীষণ খারাপ। তবুও নিতু থেমে থেমে বললো, “ভাই,আপনি আমার ছোট ভাইয়ের মতো। আমি আপনার পায়ে পরি আপনি আমাকে সত্যি করে বলুন এসবের মানে কি।নবনীর সাথে তামিমের কীসের সম্পর্ক ছিলো? ”

সামিম সোফায় হেলান দিয়ে বসে বললো,”এখন আর আপনার থেকে লুকানোর মতো কিছু নেই।আগেই জানার দরকার ছিলো আপনার এসব ব্যাপার। এখন যখন জেনে গেছেন তখন সবই বলবো। আপনি আমার ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। নবনী ভাবী ছিলো প্রথম স্ত্রী। ”

নিতুর মাথায় আসমান ভেঙে পড়লো শুনে।যে আশার প্রদীপ নিভু নিভু করে জ্বলছিলো এক ঝটকায় তাও নিভে গেলো।

নিতু দুই হাতে বুক চেপে ধরে সোফায় শুয়ে পড়লো। নিজের কানকে নিতুর বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুতে।

সামিম একটু থেমে বললো, “আমার বিয়ে হয় ভাইয়ার বিয়ের আগে। এজন্য বাবা ভীষণ রেগে ছিলেন আমার উপর।অল্প বয়সে দিশার প্রেমে পড়ে যাই।মা জানতেই উঠেপড়ে লাগেন বিয়ের জন্য।নিজে থেকে আমার আর দিশার বিয়ে দেন।দিশার বাবার টাকা পয়সা আছে,এই লোভ মা সামলাতে পারেন নি।মা চেয়েছিলো ভাইয়াকেও এরকম একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করাবে।কিন্তু বাবার জন্য তা আর পারে নি।ভাবীকে দেখেই বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন ভাইয়ার বউ করার।কারো অনুমতি না নিয়েই ভাইয়ার বিয়ে দিলেন।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো ভাবী আর ভাইয়ার মাঝে।যদিও মায়ের উষ্কানিতে ভাইয়া ভাবীর সাথে প্রায় সময় ঝামেলা করতো।তবুও ভাবী সেসব গায়ে মাখতো না।হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলতো সংসার করতে গেলে এরকম কতো কিছুই হয়।মা ভাবীর বাবার বাড়ির অবস্থান নিয়ে সবসময় ভাবীকে কথা শুনাতো।ভাবীকে কখনো টু শব্দ করতে দেখি নি।ভাইয়াকে কখনো ভাবীর হয়ে প্রতিবাদ করতে দেখি নি।
ভাবীর মুখে অভিযোগ দেখি নি।এতো শক্ত,ধৈর্যশালী ভাবী আমার মুষড়ে পড়লো সেদিন যেদিন আপনার আর ভাইয়ার সম্পর্কের কথা জানতে পারলো।
মা জানার পর থেকে ভাইয়াকে ইন্ধন দিতে লাগলো ভাবীকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। ভাবী ও এই অপমান সহ্য করতে পারেন নি।বাসা ছেড়ে চলে গেছেন।আমার ভাই সবসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন,নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারেন না।তাই আবারও মায়ের কথা মতো ভাবীকে ছেড়ে দিলো।এই আঘাত আমার বাবা সহ্য করতে না পেরে মারা গেলেন।
আপনি চাকরিজীবী মেয়ে,মাস শেষে মা আপনার বেতনের টাকায় ভাগ বসাতে পারবেন এই স্বপ্ন দেখেই মা দ্রুত আপনার আর ভাইয়ার বিয়ে দেন।ভাইয়ার প্রেমে অন্ধ হয়ে আপনি ও বিয়ে করে চলে এলেন।মধ্যখানে শেষ হয়ে গেলো ভাবীর সংসার। আমার বাবার জীবন।ভাবীকে হারিয়ে ফেলার পর ভাইয়া ভাবীর শূন্যতা অনুভব করতে শুরু করলো। আপনাকে বিয়ে করে আনার পর ভাইয়া বুঝতে পারলো সে আসলে ভুল করেছে।আপনার প্রতি ভাইয়ার ভালো লাগা ছিলো। কিন্তু ভালোবাসা ভাবীর জন্যই ছিলো। ”

নিতুর বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা করতে লাগলো কেউ।কাঁদতে কাঁদতে নিতু ফ্লোরে পড়ে গেলো। কি করলো সে এটা!
একটা মেয়ের স্বপ্নের সংসারে সে অভিশাপের ছায়া হয়ে এলো।তার জন্য ভেঙে গেলো কারো তিন বছরের সাজানো স্বপ্ন!
কিভাবে পারলো সে এই কাজ করতে?

নিতুর মনে হলো তার যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে।এতো বড় প্রতারণা নিতু সহ্য করতে পারলো না।সে তো সরল মনে ভালোবেসেছে,তবে কেনো এভাবে ঠকে গেলো সে?ভালোবাসার এই প্রতিদান কেনো পেলো?একজন প্রতারকের সাথে এতোগুলা দিন কাটিয়ে দিলো কিভাবে?

————–

বাঁধভাঙ্গা চাঁদের আলোয় আলোকিত চারপাশ। মৃদুমন্দ শীতের হাওয়া বইছে।নবনী দাঁড়িয়ে আছে রুমের সাথে লাগোয়া ব্যালকনিতে। কানে ফোন ধরে আছে এক হাতে,অন্য হাতে একটা কফির মগ।
মেঘ ফিসফিস করে বললো, “নবনীতা! ”

নবনী চুপ করে রইলো।

মেঘ বললো, “আকাশের বুকের ওই চাঁদটা দেখেছো নবনীতা? আমার অন্ধকার জীবনে তুমি ও তেমন পূর্ণিমার চাঁদ।আমি আজীবন আর কিছু চাইবো না।তুমি শুধু আমার আকাশের চাঁদ হয়ে থেকো।আমি আজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। ”

নবনী হেসে বললো, “ভালোবাসা এতো সুন্দর কেনো বলুন তো?আমার মাঝেমাঝে নিজেকে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া কিশোরীর মতো মনে হয়। যার জীবনে আপনি প্রথম বসন্তের কোকিল হয়ে এলেন।বুকের ভেতর যার জন্য ভালোবাসার ফুল ফুটেছে।
আমাকে এই অপূর্ব সুন্দর অনুভূতির সাক্ষী করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”

মেঘ ফিসফিস করে বললো, “একবার শুধু বৈধভাবে আমার হও,আমি তোমাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই সুন্দর সুন্দর অনুভূতির মুখোমুখি করবো নবনীতা। ”

নবনী চুপ করে রইলো।

মেঘ আপনমনে বলতে লাগলো, “নবনী,আমরা একটা ছোট ঘর বানাবো কোনো এক অজপাড়া গাঁয়ে।বাড়ির পিছনে একটা সরু নদী থাকবে। বৃষ্টির সময় আমরা সেখানে চলে যাবো।ঝুম বৃষ্টিতে দুজন মন ভরে বৃষ্টিতে ভিজবো। উথাল-পাতাল জোছনা রাতে দুজনে খোলা আকাশের নিচে বসে জোছনার আলো গায়ে মাখবো। এই যান্ত্রিক শহর থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাবো তোমাকে নিয়ে। আমাদের স্পেশাল দিনগুলো আমরা দুজন সেখানে একান্ত সময় কাটাবো।
রাতে দুজন নৌকায় ঘুরে বেড়াবো। আমার দুচোখ জুড়ে হাজারো স্বপ্ন নবনীতা। তুমি কখনো আমার থেকে দূরে চলে যাও না।আমি তোমাকে নিয়ে জীবনের শেষ স্বপ্নটা ও পূর্ণ করতে চাই।তুমি না থাকলে এই জীবনের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।”

নবনী কেঁদে উঠলো। কাঁপা গলায় বললো, “আমি আজীবন আপনার সাথে থাকতে চাই।আল্লাহ যতো দিন বাঁচিয়ে রেখেছেন, আপনার পাশে থাকতে চাই আমি।”

ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম এবং মধুর ব্যাপার। কখনো কারো দুচোখ জুড়ে সুখ স্বপ্ন এনে দেয়। আবার কখনো কারো জীবনের বেঁচে থাকার শেষ স্বপ্ন ও কেড়ে নেয়।দেয়ালের এই পাশে নবনী সুখের স্বপ্ন দেখছে আর ওপাশে নিতুর সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
আহা ভালোবাসা!
আহারে ভালোবাসা!

চলবে….

রাজিয়া রহমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে