#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (১২)
নবনীরা পরদিন রাত দুইটার সময় গ্রাম থেকে বের হলো শহরের উদ্দেশ্যে। সাথে শুধু নিজেদের ব্যবহার করার কাপড় নিলো।নবনী নিজের সব গহনা এবং হামিদুর রহমানের দেওয়া সব টাকা নিলো অনেক দিন আগে নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত নবনী ভুলে যায় নি।
বাসে বসে হাশেম আলী নবনীকে জিজ্ঞেস করলো,”আমরা এখন কোথায় যাবো রে মা?কোনো বস্তিতে থাকনের ব্যবস্থা করা লাগবে মনে হয়। ”
নবনী বাবার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,”বস্তি নয় বাবা,আমরা এখন সরাসরি গিয়ে একটা হোটেলে উঠবো।দুই দিনের ভেতর একটা ফ্ল্যাটে উঠবো।”
রাবেয়া জিজ্ঞেস করলেন,”সে তো অনেক টাকার কারবার। ”
নবনী হেসে বললো,”টাকা আমার কাছে আছে মা।তোমরা চিন্তা করো না।”
হাশেম আলী বললেন,”না না,তোর ওই টাকা শুধু তোর মা।তোর কাছে রাখ।আমাদের জন্য টাকা খরচ করতে হবে না।”
নবনী বাবাকে বললো,”কেনো বাবা,আমি কি তোমার মেয়ে না?আমার কি শখ নেই নিজের বাবা-মা এর জন্য কিছু করার? তাছাড়া এই টাকা যদি আমার স্বামীর দেওয়া হতো,বৈবাহিক সম্পর্ক থাকতো তাহলে আমি তোমাদের জন্য এই টাকা খরচ করতে চাইতাম না তার অনুমতি ছাড়া। এখন আমার কাউকে জবাব দিতে হবে না।আমার টাকা আমার বাবা মায়ের জন্য খরচ করার পূর্ণ অধিকার আছে। ”
হাশেম আলী তবুও লজ্জা পেলেন।নিজে সন্তানের জন্য কিছুই করতে পারছেন না।অথচ নির্দ্বিধায় মেয়ে তাদের জন্য কতো কিছু করতে চাচ্ছে।
গাড়ি থেকে নেমে নবনীরা সিএনজি নিয়ে বনানীতে এলো।বনানী একটা হোটেলে তিনটা রুম নিলো। দুপুর পর্যন্ত বিশ্রাম নিয়ে নবনী বাবাকে নিয়ে বের হলো।
এই প্রথম বার নবনী সাহস করে বের হলো নিজের ইচ্ছে তে।রাস্তায় বের হতেই নবনী বুঝতে পারলো তার ভীষণ ভয় করছে।গলা শুকিয়ে আসছে।দোকান থেকে একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল নিয়ে নবনী বাবাকে নিয়ে রিকশায় উঠলো। গন্তব্য বেশিদূর না।
রিকশাওয়ালা কে এড্রেস বলতেই হাশেম আলী চমকে গেলেন।
নবনীর হাত ধরে বললো,”কি বলছস তুই এইটা?ওই বাসায় যাবি ক্যান?”
নবনী বললো,”ওই বাসায় যাবো না তো বাবা,ওই বিল্ডিং এ ফ্ল্যাট নিবো আমরা। ”
হাশেম আলী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন।কি বলছেন তার মেয়ে এটা?
ওখানে কেনো থাকবে?নবনীকে জিজ্ঞেস করতেই নবনী বললো,”বাবা,আমি ভুলে যাই নি সেদিনের কথা।যেদিন তুমি আমাকে দেখতে গিয়েছিলে সেদিন কি করেছিলো ওরা?
ওই মহিলা পাশের বাসার লোকদের কাছে তোমাকে আমার বাবা বলে পরিচয় দেয় নি।তার মান সম্মান না-কি চলে যাবে লোকে যদি জানে তুমি আমার বাবা।ওনার স্ট্যাটাস নষ্ট হবে।
আমার বাবা যেমনই হোক,যতোই খারাপ হোক তার আর্থিক অবস্থা,আমার জন্য তো তিনি আমার বাবা।আমার তো জন্মদাতা।আমার তো লজ্জা লাগে না তাকে বাবা বলতে।তাহলে ওদের কেনো লজ্জা লাগবে?
তারপর থেকে তুমি আর আমাকে দেখতে আসো নি।সেদিনের সেই অপমান আমি ভুলি না বাবা।আমি সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি একদিন না একদিন এই বিল্ডিং এ আমার বাবা মা’কে এনে রাখবো।এটাই হবে আমার বাবাকে অপমান করার উত্তম প্রতিশোধ ”
হাশেম আলীর ভীষণ লজ্জা লাগলো। কবে কে কি বলেছে তিনি এসব নিয়ে মাথা ঘামান নি।তবে তারপর থেকে আর মেয়েকে নিজে দেখতে ও যান নি।তিনি এতোদিন ভাবতেন তার প্রবল আত্মসম্মানবোধ,এখন দেখলেন তার মেয়ের ও কোনো অংশে কম নেই।
১০ তলা বিল্ডিংটির সামনে রিকশা থেকে নামতেই নবনীর শরীরে অন্যরকম একটা শিহরণ বয়ে গেলো।একদিন এই বিল্ডিং থেকে অপমান আর হতাশা নিয়ে ফিরে গিয়েছিলো,আজকে আবার সেই বিল্ডিং এ এসেছে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে।
দারোয়ান নবনীকে দেখে অবাক হয়ে বললো,”আপনি তামিম ভাইয়ের বউ না?”
নবনী হেসে বললো, “আগে ছিলাম এখন নেই,এখন তো তার সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। ”
দারোয়ান অবাক হলো শুনে।তারপর বললো,”কি কন ভাবী?এই জন্যই কি আপনি হামিদ চাচা মরনের পরেও আসেন নাই? ”
নবনীর মাথায় যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো। নবনী এই কথাটা শুনে সেখানেই সেন্স লেস হয়ে পড়ে গেলো। হাশেম আলী ভয় পেয়ে গেলেন মেয়ের অবস্থা দেখে। দারোয়ান আর তিনি মিলে পাঁজাকোল করে তাকে দারোয়ানের রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো।তারপর পানির ছিটকা দেয়ার পর নবনীর জ্ঞান ফিরে এলো। নবনী বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
হামিদুর রহমান মারা গেছেন এটা নবনীর কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। সুস্থ একটা মানুষ কিভাবে মারা গেলো,তাকে কেউ কিছু জানালো ও না পর্যন্ত?
দারোয়ান বললো,”আপনি খবর পান নাই ভাবী?চাচা একদিন সকালে লিফটেই অজ্ঞান হয়ে পইরা আছিলো।তারপর সামিম ভাই হাসপাতালে নিয়া গেলো।ডাক্তার কইলো স্ট্রোক করছে উনি।মইরা ও গেছে।”
নবনী জিজ্ঞেস করলো,”কতোদিন হয়েছে?”
দারোয়ান ভেবে বললো,”এই ধরেন ৩ মাসের মতো তো হইছে।”
নবনী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এতোক্ষণে বুঝা গেছে কেনো হামিদুর রহমানের সাথে সে ফোনে যোগাযোগ করতে পারে নি।
হতবিহ্বল হয়ে নবনী বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর দারোয়ান কে বললো,”ম্যানেজার আংকেল কে একবার কল দেন তো ভাই।”
দারোয়ান নবনীর কথামতো ম্যানেজারকে কল দিলো। ম্যানেজার থাকে ৭ তলায়।দারোয়ানের কল পেয়ে নিচে এলো। নবনীকে দেখে বললো,”তুমি তো মনে হয় তামিমের বউ?”
নবনী বললো,”এখন আমি কারো বউ না চাচা।আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি এসেছি একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়ার জন্য। ফ্ল্যাট খালি আছে কি কোনো? ”
ম্যানেজার বললো,”হ্যাঁ তা তো আছেই।দুই তলায় একটা খালি আছে আর চার তলায় একটা। ”
নবনী যেনো আকাশের চাঁদ পেলো।বললো,”আমরা চার তলার ফ্ল্যাটে উঠতে চাই চাচা।”
চারতলায় তামিমরাও থাকে।নবনী এডভান্সের টাকা দিয়ে এলো ম্যানেজারকে।এরপর সোজা চলে গেলো হোটেলে।হোটেলের বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।
রাবেয়া মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মেয়ের মন খারাপ। হাশেম আলীকে জিজ্ঞেস করতেই হাশেম আলী বললো,”নবনী বাসা ঠিক কইরা আসছে।কোথায় জানো?তামিমদের পাশের বাসা নিছে নবনী।”
রাবেয়া চমকে গেলেন এই কথা শুনে। হাশেম আলী বললো,”রাবেয়া,হামিদ ভাই আর বাঁইচা নাই।আমার মাইয়া এই জন্য এরকম ভাইঙ্গা পড়ছে।”
রাবেয়া এই কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলেন। সাব্বির,চৈতালী,ফাল্গুনী ও অবাক হলো শুনে।কেউ ভাবতেও পারে নি এরকম কিছু হতে পারে।
————–
নিতু আর তামিমের বিয়ে আজকে।তাহেরা বেগমের চাপে পড়ে তামিম বিয়ে করে নিতে বাধ্য হলো।তামিম আরেকটু সময় নিতে চেয়েছিলো সব জড়তা কাটিয়ে উঠার জন্য।নবনীকে ভুলতে।কিন্তু তাহেরা বেগম সেই সুযোগ দিলেন না।বিয়েতে তেমন কোনো আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয় নি।তামিম আর নিতুর কয়েকজন কলিগ,অফিসের বস,লুবনা,তাহেরা,দিশা,তাহেরার দুই বোন আর পাশের ফ্ল্যাটের কয়েকজনকে বলা হয়েছে।সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ জনের মতো মেহমান হলো।বউ নিয়ে বরযাত্রী রাতে ফিরে এলো তামিমদের বাসায়।
বউ নিয়ে তামিম লিফটের জন্য অপেক্ষা করছিলো লিফট উপর থেকে নামার।লিফট নামতেই দরজা খুলে নবনী আর সাব্বির বের হয়ে এলো।
নবনীকে দেখে তামিম একটা ধাক্কা খেলো যেনো।নবনী ভালো করে তাকালো নিতুর দিকে।তাকিয়ে বুঝতে পারলো এই সেই মেয়ে যার ছবি নবনী দেখেছে।
তাহেরা বেগমসহ যারা ছিলো নবনীকে চিনতো তারা সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো নবনীকে এখানে দেখে।নবনী কারো সাথে কোনো কথা না বলে বের হয়ে গেলো লিফট থেকে।তারপর লিফটের সামনে থেকে সাব্বির আর নবনী দুইটা তোষক মাথায় নিয়ে লিফটে গিয়ে দাঁড়ালো। তামিমেরাও লিফটে উঠলো।
চারতলায় লিফট থামতেই নবনী আর সাব্বির বের হয়ে গেলো। তারপর সোজা নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো। পিছনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বাকিরা সবাই।
সবাইকে এরকম অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিতু বললো,”কি হয়েছে?বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকবো না-কি? ”
তাহেরা বেগম নিজেকে সামলে ফ্ল্যাটের দরজা খুললেন। তামিম সোফায় বসে পড়লো ধুম করে। অনেকদিন পরে আজ নবনীকে দেখতে পেয়েছে সে।সেই নবনী যে কি-না তিন বছর তামিমের অর্ধাঙ্গিনী ছিলো।অথচ আজ দুজনের মধ্যে কতো যোজন যোজন দূরত্ব।
নবনীকে আজ ভালো করে খেয়াল করলো তামিম।খেয়াল করতেই দেখতে পেলো নবনী যেনো নিতুর চাইতে হাজার গুণ বেশি সুন্দর।
তামিমের মনে হলো নবনী আগের চাইতে অনেক বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছে। অনেকদিন পরে তামিম নবনীর হাতে সবুজ রেশমি চুড়ি দেখেছে।ফর্সা হাত দুটো কেমন কোমল মনে হচ্ছে।
তামিমের চরম অশান্তি শুরু হলো। বাসায় সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী আছে সেই কথা বেমালুম ভুলে গেলো তামিম।
দিশা মোটামুটি বিরক্ত এই বিয়েতে।দিশা চেয়েছিলো তামিমের বিয়ে তার বান্ধবী রুমির সাথে করাতে।তাহলে দুজন মিলে যখন যা ইচ্ছে করবে কিন্তু তাহেরা বেগম যেনো পাগল হয়ে গেছেন নিতুকে বিয়ে করাতে।
দিশা তবুও হাল ছাড়ে নি।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো,যেভাবেই হোক তামিমের সাথে নিতুর ও বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ছাড়বে সে।
তাহেরা বেগম ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন নবনীকে দেখে।নিতু এখনো জানে না তামিমের আগে বিয়ে হয়েছে।জানলে হয়তো বিয়ে করতে রাজি হতো না সে।এজন্য তাহেরা বেগম তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করিয়ে আনেন।এখন তার মনে হচ্ছে নিতু যেকোনো সময় জেনে যাবে সব।
তাহেরা বেগম ভেবে পেলেন না কি করবেন তিনি এখন।
নিতু অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তামিমের জন্য।কিন্তু তামিম ড্রয়িং রুম থেকে যাচ্ছে না এখনো। ঘড়িতে রাত ১১ টা বাজে।নিতু এবার আর অপেক্ষা করলো না।উঠে এসে দেখে তামিম শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছাদের দিকে। নিতু এসে একটা ধাক্কা দিলো তামিমকে।তারপর বললো,”আমাকে একা রেখে তুমি এখানে এভাবে বসে আছো কেনো? সমস্যা কি তোমার? ”
তামিম জবাব দিতে পারলো না।তার যে আসলে কি সমস্যা তা সে নিজেই ভেবে উঠতে পারছে না।নিতু কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। তামিম ও চলে গেলো। পরনের পাঞ্জাবি খুলে শুয়ে পড়লো বিছানায়। নিতুকে বললো,”আমার প্রচন্ড টায়ার্ড লাগছে নিতু।আজকে ঘুমাও।তুমিও টায়ার্ড। ”
নিতু ভীষণ অবাক হলো তামিমের কথায়।যে লোকটা সারাদিন নিতুর সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করার জন্য ঘ্যানঘ্যান করতো সে কি-না আজকে বিয়ে হয়ে আসার পরেও তার সাথে একটা কথাও বলছে না।অন্যসব তো পরের বিষয়। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো নিতুর।নিজেকে মনে হলো ফেলনা কেউ।
রেগে গিয়ে সেই অবস্থায় নিতু শুয়ে পড়লো।
সকালে নিতুর ঘুম ভাঙলো তাহেরা বেগমের ডাকে।ঘড়িতে সবে সাতটা বাজে। নিতু বিরক্ত হলো। আটটার আগে নিতু ঘুম থেকে উঠে না।তাহেরা বেগমের ডাক শুনে নিতু বের হলো রুম থেকে শাড়ি চেঞ্জ করে।
তাহেরা বেগম মিষ্টি হেসে বললো,”নিতু মা,গহনাগাঁটি আমার কাছে দাও,আমি রেখে দিচ্ছি আমার আলমারিতে। ”
নিতু ভীষণ অবাক হলো শুনে।তারপর বললো,”কেনো মা?আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর একজন মেয়ে,নিজের জিনিস নিজে সামলে রাখতে পারি। ওগুলো আমার স্বামীর দেওয়া অর্নামেন্টস,ওগুলো আমার কাছেই থাকবে।”
তাহেরা বেগমের মনে হলো তার গালে যেনো নিতু দুটো জুতার বারি মেরেছে। এরকম মুখের উপর কেউ তাকে মুখের উপর জবাব দিবে তা সে কখনো ভাবতে পারে নি।
নিতু আর কথা না বলে চলে গেলো।আজকে অনেকক্ষণ ঘুমাবে সে।তিন দিনের ছুটি পেয়েছে অফিস থেকে। এই তিন দিন ঘুমাবে সে।
তাহেরা বেগমের সারা শরীর ঘামে ভিজে গেলো। মনে মনে তাহেরা বেগম ভাবলেন,”আমি কি খাল কেটে কুমির নিয়ে এসেছি না-কি! ”
চলবে……..
রাজিয়া রহমান
#তুমি_অন্য_কারো_সঙ্গে_বেঁধো_ঘর (১৩)
সকালের অপমানের কথা তাহেরা বেগম ভুলেন নি,একটু আগে খেতে বসে নিতুর করা বেয়াদবির কথাও মনে আছে তার
।তাই রাতে ১০ টার সময় মধুর স্বরে নিতুকে ডাকলেন তিনি।মিষ্টি হেসে বললেন,”আমার পা টা ব্যথা করছে একটু টিপে দাও তো মা।”
নিতু কথা না বাড়িয়ে পা টিপে দিতে লাগলো।নিতু ২০ মিনিট পরে বললো,”মা আমি এবার যাই?”
তাহেরা বেগম করুণ স্বরে বললো,”আমার তো পা ব্যথা এখনো কমে নি।”
নিতু বললো,”তাহলে লুবনা অথবা দিশাকে ডেকে নিন।আপনার ছেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ”
তাহেরা বেগমকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিতু চলে গেলো রুমের দিকে। তাহেরা বেগম হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিতুর দিকে।তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না নিতু তার মুখের উপর কথা বলে চলে গিয়েছে।
রুমে গিয়ে দেখে তামিম স্মোক করছে বসে বসে। নিতু বুঝতে পারলো তামিমের কোনো একটা সমস্যা হয়েছে।নয়তো গতকাল থেকে এখনো এরকম ভরসাহারার মতো বসে থাকতো না।সারাদিনে নিতুর সাথে তেমন একটা কথাও বলে নি তামিম।দুপুরে ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে গিয়েছে বাসা থেকে।যাবার সময় নিতুকে বলে গিয়েছে দুপুরে খেয়ে নিতে।
নিতু দুপুরে খেয়ে নিয়েছে ঠিকই কিন্তু খাবার তার মনের মতো হয় নি।এরা বাহিরের হোটেল থেকে খাবার এনে খায়।খাবার খুব একটা ভালো হয় নি।
তবুও দুপুরের খাবারের পর নিতু চুপ হয়ে ছিলো।রাতেও নিতু দেখলো তামিম আসার সময় ভাত তরকারি নিয়ে এসেছে। ভাত আর হাঁসের মাংস নিয়ে এসেছে তামিম।নিতুর রাতের খাবারটা ভালো লাগলো ভীষণ। মাংস রান্নাটা বেশ ভালো হয়েছে। নিতু সবাইকে বেড়ে দিলো খাবার। সবার প্লেটে দুটো করে মাংস দিয়ে নিজে রানের দুই পিস মাংস নিজের প্লেটে নিলো।
তাহেরা বেগম হা করে তাকিয়ে রইলেন নিতুর কান্ড দেখে।এই বাসায় রানের দুই পিস মাংস লুবনা আর দিশার জন্য বরাদ্দ থাকে।
লুবনা আর দিশা ও তেমন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিতুর দিকে। নিতু সেসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে খেয়ে উঠলো।
খাবার পর তাহেরা নিতুকে বললো,”বউ মা,আমাদের বাসায় মাংস রান্না হলে সবসময় দিশা আর লুবনা রানের পিস খায়।এরপর থেকে এই ভুল করো না”
নিতু সোজা জবাব দিলো, “কি বলেন মা,আমি নিজেও তো রানের পিস না হলে খেতে পারি না।তাহলে কিভাবে হবে?আচ্ছা এবার থেকে তাহলে হাঁস,মুরগী যাই আনুক ২ টা করে আনতে বলবেন আপনার ছেলেকে,তাহলে ওরা দুজন দুটো খাবে আর আমি দুটো খেতে পারবো। ”
তাহেরা বেগম মুখ কালো করে খাবার শেষ করলেন।
নিতু এখনো এই বাসার হাবভাব বুঝতে পারছে না ভালো করে। তবে এটুকু বুঝতে পারছে তার শাশুড়ী খুব একটা সুবিধার মানুষ না।
তামিমের পাশে বসে নিতু জিজ্ঞেস করলো,”তোমার কি মন খারাপ? কোনো সমস্যা? আমার সাথে শেয়ার করো তাহলে। তুমি এভাবে চুপ হয়ে থাকলে আমি কিভাবে বুঝবো?
বিয়েটা আমাদের দুজনের সম্মতিতে হয়েছে।এমন নয় যে জোর করে তোমাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।তাহলে আমার সাথে এরকম ব্যবহার করার মানে কি?”
তামিম নিজেই বুঝতে পারছে না তার আসলে কি করা উচিত। নবনী যদি এতো কাছে না থাকতো তবে তামিমের হয়তো কোনো অসুবিধা হতো না। একটু কষ্ট হলেও মানিয়ে নিতো।কিন্তু এখন মাথায় বারবার নবনী ঘুরছে।
এই প্রথমবার তামিম বুঝতে পারলো এক নারীতে আকৃষ্ট থাকার মতো সুখের পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কিছু নেই।
বিয়ের আগ থেকে তার চান্স পেলেই লাইন মারার স্বভাব ছিলো।যে কারণে তামিমের মন নিজেও কনফিউজড হয়ে গেছে যে সে আসলে কাকে চায়,কাকে নিয়ে সুখী?
বহুগামী হওয়াতে সবার কথাই মনে পড়ে তামিমের।এজন্যই নবনী থাকতে মনে হয়েছে নিতু ভালো হবে তার জন্য। আর এখন নিতু আসায় মনে হচ্ছে নবনী তার জন্য বেস্ট ছিলো।
তামিম নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো।নিজের মনে যাই চলুক নিতুকে তা বুঝতে দিবে না বলে ঠিক করলো।তাই জোর করে হেসে বললো,”তেমন কিছু না নিতু,বাবার কথা মনে পড়ছে আসলে।বিয়ে করলাম অথচ বাবা তোমাকে দেখে যেতে পারে নি।বাবার এভাবে চলে যাওয়াটা আমি মানতে পারছি না।”
নিতু তামিমকে নিজের কাছে টেনে নিলো। তামিম নিতুর শরীরে পারফিউমের হালকা ঘ্রাণ পেলো।অন্য সময় এই ঘ্রাণ তামিমের মাথা ধরয়ে দিতো কিন্ত আজকে তেমন কিছু হচ্ছে না।তবুও নিতুকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তামিম এগুলো সামনে।
অনেকক্ষণ পরে নিতুর বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো তামিম।নিতু ঘুমিয়ে পড়লো খুব তাড়াতাড়ি। তামিমের আর ঘুম এলো না সহজে।
আজ সকালেও নিতুর ঘুম ভাঙলো তাহেরা বেগমের ডাকাডাকিতে।রাতে দেরিতে ঘুম হওয়ায় নিতুর দুচোখে রাজ্যের ঘুম এসে জমা হয়েছে।তার উপর মাঝখানে একবার উঠে গোসল করে নামাজ পড়ে শুয়েছে নিতু।
তাহেরা বেগম এক নাগাড়ে দরজায় নক করতে লাগলেন। নিতু তামিমকে ডেকে বললো,”তোমার মা কি এলার্ম-ঘড়ির দায়িত্ব পালন করছে না-কি? ঘুমিয়েছি কতোক্ষণ হলো যে উনি এভাবে ডাকছে?
নতুন বিয়ে হলে ছেলে বউকে এভাবে সাত সকালে ডাকা যে অনুচিত তা কি উনি জানে না?”
তামিম কি বলবে ভেবে পেলো না।মায়ের এভাবে ডাকাডাকি যে অনুচিত তা তামিম বুঝে কিন্তু তাই বলে নিতু এভাবে তার মা’কে নিয়ে কথা বলাটাও তামিমের পছন্দ না।
নিতুকে তাই রাগ না দেখিয়ে গম্ভীরমুখে বললো,”মা এই পরিবারের কর্ত্রী। মা যা বলে সবাইকে তাই করতে হয় নিতু।এসব নিয়ে কখনো মায়ের সাথে তর্ক করবে না।আমার পছন্দ না। ”
নিতু অবাক হয়ে বললো,”না আমি তো এসব মেনে নিবো না।তোমার মা পরিবারের কর্ত্রী বলে ওনার যা মনে চায় তাই করবে,উচিত অনুচিত না ভেবে কাজ করবে?
তুমি যদি আমাকে শাবানা টাইপের মেয়ে ভেবে থাকো তবে আমি তোমাকে আগেই সরি বলে নিচ্ছি।আমি ওসব টলারেট করার মেয়ে না।আমি স্বাধীনচেতা মেয়ে।কেউ আমাকে ডমিনেট করবে আমি সেটা মোটেও সহ্য করবো না।তুমি নিশ্চয় এটুকু বুঝেছ এতো দিনে আমি অন্যের কথায় প্রভাবিত হই না।যদি হতাম তবে বিয়ের আগেই তোমার কথা শুনে সুড়সুড় করে বিছানা পর্যন্ত চলে যেতাম।
তোমাদের বাড়ির এরকম অবস্থা হলে তুমি আমাকে আগেই বলে দিতে,আমি তাহলে বিয়ের আগে ভেবে দেখতাম বিয়ে করাটা ঠিক হবে কি-না। ”
তামিম নিতুর থেকে এরকম কথা প্রত্যাশা করে নি।এখন এরকম কথা শুনে তামিম বিস্মিত হয়ে গেলো।
তাহেরা বেগমের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো নক করতে করতে।তারপর বিরক্ত হয়ে চলে গেলেন রুমের দিকে।
তামিম ও আজ ঘুম থেকে উঠে বাহিরে থেকে নাশতা আনতে পারে নি।
নয়টা বাজতেই দিশার চিৎকার শুরু হয়ে গেলো। তার নাশতা এখনো দেওয়া হয় নি।
তাহেরা বেগম দিশার চিৎকার শুনে ছুটে গেলেন রান্নাঘরে দিশার জন্য নাশতা বানাতে।আর সেই সাথে নিতুর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেললেন।
নিতু উঠে দেখলো দিশা নাশতা করছে।শাশুড়ীকে ডাক দিয়ে নিতু বললো,”মা আমার নাশতাটাও দিয়ে যান।ভীষণ ক্ষিধে লেগেছে আমার ও।”
তাহেরা বেগম লুবনার জন্য নুডলস বানালেন,সেখান থেকে অর্ধেকের কম নিতুকে এনে দিলেন।নিতু দেখলো পিরিচে নুডলস অল্প পরিমাণে। নিতু বুঝলো এই মহিলা আসলেই সুবিধাজনক না।নিজেরটা খেয়ে নিতু কিচেনে গিয়ে বাকি নুডলসটাও নিয়ে নিলো।তারপর তাহেরার রুমে গিয়ে বিছানায় পা তুলে বসে বললো,”নুডলস ভীষণ ভালো হয়েছে মা।আমি তো কড়াইতে রাখা বাকিটা ও নিয়ে নিয়েছি।”
তাহেরা বেগম চমকালেন।এটুকু নিজের মেয়ের জন্য রেখেছেন তিনি।
————–
বাসায় সব ঠিক করার পর নবনী চৈতালী আর ফাল্গুনী কে নিয়ে বনানীর একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে এলো।তারপর বাসায় বসে ভাবতে লাগলো কিছু একটা করতে হবে। এভাবে তো দিন যাবে না।এসব গহনা,টাকা একদিন ওদের ফেরত দিয়ে দিতে হবে।কিন্তু তার জন্য কিছু একটা করা দরকার তার।
চাকরির কথা মনে পড়তেই নবনীর মন খারাপ হলো ভীষণ। তামিম তাকে বলেছিল নিতু সোনার ডিম পাড়া হাঁস,২৫ হাজার টাকা বেতন পায়। অথচ নবনীর নিজের ১০ টাকা ও নেই।
চাকরি তো আর বললেই হয়ে যায় না। তাই নবনী সিদ্ধান্ত নিলো আপাতত টিউশন করবে আর এর মধ্যে চাকরি খুঁজবে,চাকরির জন্য পড়বে।
সাহস করে বের হলো নবনী ১০ টার দিকে বাসা থেকে একা।কোথায় যাবে,কার কাছে বলবে তাকে একটা টিউশন জোগাড় করে দিতে খুঁজে পেলো না নবনী।
তবুও হাটতে লাগলো উদ্দেশ্যহীনের মতো।
নবনীর নজর রাস্তার পাশের দেয়াল,পিলারে।এসব জায়গায় সবসময় লিফলেট দেখা যায় শিক্ষক চেয়ে।দেখতে দেখতে নবনীর নজর গেলো ৬-৭ বছর বয়সী একটা ছেলে দুষ্টুমি করতে করতে রাস্তার মাঝখানে চলে যাচ্ছে। অপরদিক থেকে ধেয়ে আসা বাসটা দেখে নবনী আর্তনাদ করে উঠে ছুটলো বাচ্চাটি কে বাঁচাতে।
ততক্ষণে বাচ্চার মায়ের ও চিৎকার শুরু হয়ে গিয়েছে। ঝড়ের মতো নবনী ছেলেটাকে জড়িয়ে নিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়।
নবনীর পাশ ঘেঁষে বাসটি চলে যায়। রাস্তায় শুয়েই নবনী টের পায় তার হার্টবিট বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। একটুর জন্য কতোবড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো।
আল্লাহ রক্ষা না করলে আর বাঁচার উপায় ছিলো না দুজনের।
আশেপাশের লোকজন এসে নবনী আর বাচ্চাটাকে রাস্তা থেকে তুললো।
ভারী শাড়ি পরা এক মহিলা এসে বাচ্চাটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন।নবনী বুঝলো বাচ্চাটা এই মহিলার।কিছুক্ষণ কান্নার পর মহিলাটি নবনীর দিকে তাকালেন।কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললেন,”মাফ করবেন,বাচ্চার জন্য কাঁদতে গিয়ে আপনার কথাই ভুলে গেছি।আপনার তো কপালে আঘাত লেগেছে।আমার সাথে চলুন হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
নবনী কপালে হাত দিয়ে দেখল সত্যিই কপাল কেটে গেছে।হেসে বললো,”না তা লাগবে না।আমি নিজেই যেতে পারবো।আপনি বাচ্চার দিকে আরেকটু ভালো করে খেয়াল রাখবেন,রাস্তায় বের হলে বাচ্চার হাত ছাড়বেন না।”
মহিলাটি নবনীর হাত ধরে বললো,”আপনি আগে আমার সাথে চলুন প্লিজ,আপনার জন্য কিছু করতে না পারলে আমার ভীষণ খারাপ লাগবে।প্লিজ না করবেন না,প্লিজ।
আর আমি আসলে ওর বাবার সাথে কথা বলছিলাম ফোনে,ছেলেটা হাত ছেড়ে কখন যে চলে এলো বুঝতে পারি নি।
প্লিন আসুন আপনি। ”
নবনীকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো।
নবনীর আঘাত তেমন গুরুতর না।ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে ডাক্তার।
মহিলাটি নবনীকে জিজ্ঞেস করলো,”আপনার নাম কি?এতোক্ষণে নামও জানা হলো না।”
নবনী বললো,”নবনী আমার নাম।”
মহিলাটি বললো,”আমি শিমলা।আর আমার ছেলের নাম নীড়।আপনি থাকেন কোথায়?”
নবনী বললো,”বনানীতেই থাকি।”
শিমলা বললো,”আমরা ও তো বনানীতেই থাকি।কি করেন আপনি? ”
নবনী কিছুটা বিব্রতবোধ করলো এই প্রশ্নের জবাব দিতে। ইতস্তত করে বললো,”আপাতত কিছুই করছি না।চাকরি খুঁজছি।অনার্স শেষ করেছি,সামনের বছর মাস্টার্সে এডমিশন নিবো।বের হয়েছি টিউশন খুঁজতে। ”
শিমলা নবনীর হাত চেপে ধরে বললো,”কি আশ্চর্য!আমি ও তো আমার ছেলের জন্য একজন টিচার খুঁজছি।নীড়কে পড়াবার জন্য তেমন কোনো টিচার পাচ্ছি না।ছেলেটা ভীষণ দুষ্ট বলে কোনো টিচার টিকে না।আপনি একটু চেষ্টা করে দেখুন না প্লিজ।”
নবনী ছেলেটির দিকে তাকালো। ফর্সা গোলগাল মুখ,দেখলে মনে হয় এই পৃথিবীতে বুঝি এর চেয়ে শান্ত বাচ্চা আর দুটি নেই।
নবনীকে চুপ থাকতে দেখে শিমলা নবনীর হাত চেপে ধরে বললো, “প্লিজ না করবেন না।একবার চেষ্টা করে দেখুন,আপনার সম্মানী নিয়ে ভাববেন না।আপনি শুধু একবার আমার ছেলেটাকে পড়াতে আসেন।”
নবনী কিছুক্ষণ ভেবে রাজি হয়ে গেলো। ঠিক করা হলো আগামীকাল থেকে নবনী নীড় কে পড়াতে যাবে।শিমলা নবনীকে নিজেদের গাড়িতে করে নিয়ে বাসা দেখিয়ে এলো।নবনী গেইটের ভেতর আর গেলো না।বাহিরে থেকে বাসা দেখে চলে এলো।শিমলা জোর করে ও নিতে পারলো না ভেতরে।
নবনী বাসায় ফিরতেই তামিমের সাথে দেখা হয়ে গেলো। তামিম বের হচ্ছে বাসা থেকে নবনী দাঁড়িয়ে ছিলো কলিং বেল বাজিয়ে ভেতর থেকে দরজা খোলার অপেক্ষায়।তামিমের দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
বুকের ভেতর কেমন একটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
যেই মানুষটা একসময় চির আপন ছিলো সেই কিনা আজ সবচেয়ে পর!
তামিম নবনীর কপালে ব্যান্ডেজ দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। দ্বিধাবোধ ফিরে এলো আবারও। নবনীকে দেখলেই কেনো এমন অশান্তি লাগে তার ভেবে পেলো না।
তামিম দুপুরের খাবারের জন্য যাচ্ছিলো কিন্তু নবনীকে দেখার পর পা আর সামনে যেতে চাইলো না। বাসায় ফিরে গেলো আবার।
তাহেরা বেগম জিজ্ঞেস করতেই বললো,”শরীর খারাপ লাগছে।বাসায় রান্না করে নাও।”
তাহেরা নিতুকে ডাকলেন।নিতু চুলে বিনুনি করছিলো রুমে বসে।ডাক শুনে বের হয়ে এলো। তাহেরা বেগম বললো,”দুপুরের জন্য রান্নাটা বসাও তো মা।তামিম আজকে বাহিরে থেকে খাবার আনতে চাচ্ছে না। বলছে তোমার হাতের রান্না খাবে।”
নিতু তামিমের দিকে তাকালো। তাকিয়েই বুঝতে পারলো, এটা তাহেরার একটা চাল তাকে দিয়ে কাজ করানোর।নিতু হাসিমুখে রান্না করতে গেলো।
বিকেলে খেতে বসে তাহেরা বেগম চমকে গেলেন। সব খাবারে লবন বেশি দেওয়া।নিতু মুচকি হেসে নিরবে খেতে লাগলো। কষ্ট হলেও খাবে সে।তাকে দিয়ে রান্না করানোর মজা সে বুঝাবে এভাবেই।
তাহেরা চোখ সরু করে তাকিয়ে রইলো নিতুর দিকে।নিতু মনে মনে বললো,”আপনি যেমন বুনো ওল,আমি তেমন বাঘা তেঁতুল।”
চলবে…….
রাজিয়া রহমান