#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১৪
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
সোহা স্কেল দেখে থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ চুপথেকে পরে মিনমিন স্বরে বলে
” কি করবেন এটা দিয়ে ??” শান বড় একটা হাসি দিয়ে বলে
” এটা দিয়ে আপনাকে মারবো আমি। আমার কোনো কথাই তো শোনেন না তাই এখন এটা দিয়ে শোনাবো। এখন চুপচাপ বই খুলে পড়তে বসো নাহলে প্রথম দিনেই মার খাবা।” সোহা তাড়াতাড়ি করে একটা বই খুলে পড়তে থাকে। শান স্কেলটা সোহার চোখের আড়ালে রেখে ফ্রেশ হতে যায়। সোহা গরগর করে পড়া শুরু করেছে স্কেলের ভয়ে। শান ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে সোহা জোড়ে জোড়ে গরগর করে পরছে। শান ঠোঁট চেপে হেসে স্কেলটা বের করে সোহার সামনে বসে। সোহা আড়চোখে একবার শানের দিকে তাকিয়ে চোখ সড়িয়ে নেয়। শান তার অফিসের কিছু ফাইল নিয়ে কাজ করতে থাকে। আধ ঘন্টা পর শান ল্যাপটপে দৃষ্টি রেখে টাইপ করতে করতে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” কি পড়ছো ?? পড়া দাও তো আমাকে। মা ডিনার করার জন্য ডাকবে আবার।” কোনো উওর শুনতে না পেয়ে শান সোহার দিকে তাকিয়ে দেখে সোহা টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। শান কপালে হাত দিয়ে হতাশ স্বরে বলে
” হায় আল্লাহ !! পড়তে পড়তে ঘুমিয়েও পড়েছে ?? কি করবো আমি এখন ??” শান সোহাকে কোলে তুলে টেবিল থেকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়। বিছানায় রাখতেই সোহা আরো বিছানায় তলিয়ে যায়। শান সোহার গায়ে ব্ল্যাংকেট দিয়ে দেয়। নিচে গেলেই এখন বকা খাবে ভেবেই শান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো। ফাইলগুলো গুছিয়ে ডিনারের উদ্দেশ্যে নিচে চলে যায়। নিচে আসতেই দেখতে পায় সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। শানকে দেখে সামির বলে
বলে
” কি রে তুই একা কেনো ?? আমার শালিকা কোথায় ??” শান টেবিলে বসে শান্ত গলায় বলে
” পড়তে বসিয়েছিলাম কিছুক্ষণ পরে দেখি টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।” শাহানাজ বেগম কিছুটা অবাক স্বরে বলে
” তুই ওকে কি টেবিলেই রেখে এসেছিস নাকি ??” শান মার এমন কথায় কিছুটা বিরক্তবোধ করলো
শান্ত গলায় বলে
” তুমি কি মনে করো মা। আমাকে কি এইটুকু responsible নেই !! আমি ওকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে এসেছি বিশ্বাস না হলে গিয়ে চেক করে আসতে পারো।”
শাহানাজ বেগম চোখগুলো ছোট ছোট করে তাকায়। নিলা নাইসার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বলে
” সোহা কি খাবে না ??”
শান খেতে খেতে বলে
” ঘুমিয়ে আছে তো কিভাবে খাবে ?? আর যেভাবে ঘুমিয়ে আছে উঠবে বলে মনে হয় না।”
ইশান কড়া গলায় বলে
” তোমাদের আমি বলেছিতো ওর এইসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে। তোমরা তো কোনো কাজই করছো না। এভাবে খাবারের অনিয়ম করলে আবার কোনদিন জানি অসুস্থ হয়ে পরে।” সিমি মৃদু স্বরে বলে
” ভাইয়া আমি সোহাকে বলেছিলাম সন্ধ্যায় কিছু খেতে কিন্তু ও খায়নি। সোহা বলে ওর খুদা পায়না তাই ও খাবেনা।” ইশান হতাশার নিশ্বাস ফেলে বলে
” যার এসব দেখার কথা সেই তো এসবের খেয়াল রাখে না সারাদিন নিজের অফিস নিয়ে পড়ে থাকে। তোমরা যে চেষ্টা করছো সেটাই বেশি।”
শান মাথা নিচু করে নিলো ইশান যে এখনও শানের উপর রেগে আছে শান বুঝতে পারছে।
ডিনার শেষ করে শান রুমে এসে পরে। সোহাকে আরামে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে ধীর গলায় বলে
” তোমার জন্য আমি অনেক কথা শুনছি। কালকে থেকে সব বন্ধ করতে হবে আমার।” শান লাইট অফ করে গতকালকের মতো মাঝে বালিশ রেখে ঘুমিয়ে পরে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সোহা ফ্রেশ হয়ে নিচে দৌড়ে গেলো। নিলা আর সিমি রান্নাঘরে ব্রেকফাস্ট তৈরি করছিলো। সোহা সেখানে ঢুকে কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” ভাবি খেতে দাও। খিধে পেয়েছে আমার।” নিলা মুচকি হেসে বলে
” তুমি টেবিলে বসো। তোমার খাবার আমি আগেই তৈরি করে রেখেছি আমি এখনই আনছি সেটা।” সোহা তাড়াতাড়ি টেবিলে গিয়ে বসে পরে। নিলা এসে সোহার ব্রেকফাস্ট দিয়ে যেতেই সোহা তাড়াহুড়ো করে খেতে থাকে। নিলা গ্লাসে জুস ঢালছিলো সোহাকে এভাবে খেতে দেখে বলে
” আরে এভাবে খাচ্ছো কেনো ?? আস্তে ধীরে খাও নাহলে গলায় খাবার আটকে যাবে তো।” সোহা খাবার গতি কমিয়ে বলে
” খিধে পেয়েছে তো তাই। আচ্ছা টমি কোথায় ?? আসার সময় দেখতে পেলাম না রুমে।” নিলা মিটমিট করে হেসে বলে
” তোমার টমি আজকে শানের সাথে জগিং করতে গিয়েছে।” সোহা খাওয়া বন্ধ করে হা করে তাকিয়ে বলে
” উনি জগিং ও করেন ?? আর টমিকে উনি নিয়ে গিয়েছেন কিভাবে ?? উনি তো টমিকে সহ্যই করতে পারেন না।” নিলা রান্নাঘর থেকে খাবারের প্লেট গুলো আনতে আনতে বলে
” আমার দেবরজি তো জগিং করেই আবার জীমও করে তবে এতদিন বিয়ের ব্যস্ততায় যাওয়া হয় তাই আজকে সকালে উঠেই দৌড় দিলো। পেছন পেছন টমিও।” সোহার খেতে খেতে চোখ যায় দরজার দিকে। শান টমির গলায় বাধা বেল্ট ধরে ভেতরে ঢুকছে। টমির চেহারা দেখে সোহার মনে হলো টমি খুবই খুশি। সোহা খাবার রেখে উঠে টমির কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসে টমিকে ভালো করে দেখে ভ্রু কুচকে বলে
” টমির তো বেল্ট নেই এটা কোথায় পেয়েছেন আপনি ?? ” শান সোহার পাশ কাটিয়ে টেবিলের কাছে গিয়ে একটা গ্লাস হাতে নিয়ে রাগ দেখিয়ে বলে
” তোমার জন্য আমি প্রতিদিন বকা খাই আর এখন তোমার টমিও আমাকে জ্বালিয়ে খাবে। সকালে আমার পেছন পেছন জগিং পার্কে চলে গিয়েছে আমি কতোবার না করেছি তবুও কথা শোনেনি। সেখানে গিয়ে আবার অন্যান্য কুকুরদের দেখে তাদের কাছে চলে যায় আমি খুঁজেও বের করতে পারি না এতোগুলোর ভেতর থেকে। অনেক কষ্টে খুঁজে বের করলাম।পরে তোমার মতো তো আর কোলে নিয়ে ঘুরতে পারি না তাই একটা বেল্ট কিনতে হয়েছে। তোমার কুকুর কে সাবধান করে দাও এরপর থেকে আমি আর ওকে নেবো না।” কথা শেষ করে শান জুস খেয়ে তার গলায় ভিজিয়ে নেয়। সোহা টমিকে কোলে তুলে গম্ভীর গলায় বলে
” তুই শান ভাইয়ার সাথে কেনো গিয়েছিস ?? জানিস না উনি তোকে পছন্দ করে না!! কালকে গেলে বেধে রাখবো তোকে।” সিমি এগিয়ে এসে বলে
” হয়েছে যা এখন গিয়ে খাবারটা শেষ কর।” সোহা সিমিকে দেখে ভেংচি কেটে টেবিলে গিয়ে বসে পরে। সিমি হতাশার নিশ্বাস ফেলে সোহার দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা যে তার উপর এতো রাগ করবে সেটা জানতো না সিমি। আগে রাগ করলে তিন- চারদিনের বেশি রাগ করে থাকতে পারতো না কিন্তু এবার সাতদিন হতে চললো কিন্তু সোহা এখনও তার সাথে কথা বলেনি কথাটা ভেবেই সিমির মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়ে যায়।
সময় হতেই একে একে সবাই খাবার টেবিলে এসে উপস্থিত হয়। ইশান চেয়ার টেনে বসেই বলে
” সোহা তুমি খাবার নিয়ে হেলাফেলা করো কেনো ?? পরে তোমার শরীরের ক্ষতি হবে সেটা জানো কি তুমি ??” সোহা মুখে খাবারটা গিলে প্লেট দেখিয়ে বলে
” কোথায় ভাইয়া খাচ্ছি তো আমি। দেখো কতোগুলো খাবার খাচ্ছি আমি।” ইশান প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলে
” এইটুকু খাবার তোমার কাছে কতোগুলো মনে হচ্ছে !! কি আর বলবো তোমাকে ?? নাইসাও এর থেকে বেশি খাবার খায়।” সোহা মুখ ফুলিয়ে খেতে থাকে। সামির সিমির দিকে তাকিয়ে আছে সিমি মন খারাপ করে সোহার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সামির সিমির মন খারাপের কারণ বুঝতে পারে। সামির সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” শালিকা !! তুমি তোমার আপুর সাথে কথা বলছো না কেনো ?? তোমার আপু মন খারাপ করে থাকে।” সোহা আড়চোখে একবার সিমির দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মন দিয়ে বলে
” তোমার বউ আমাকে সবার সামনে সেইদিন বকা দিয়েছিলো কেনো সেটা আগে জিজ্ঞেস করো। আমাকে বাচ্চা পেয়ে সব সময় শুধু বকাবকি করে তোমার বউ আর তোমার ছোট ভাই। এই দুজন আমার হাড় মাংস জ্বালিয়ে খায় আর আমি দুইদিন কথা না বললেই দোষ তাই না?? আম্মু আর আব্বুকে আজকে ফোন করে বলবো তোমরা তোমাদের মেয়েকে নিয়ে যাও। শশুড় বাড়িতে এসে ছোট জা কে জ্বালিয়ে মারছে সে। পরে ছোট জা কিছু বললে তার বদনাম ছড়ানো হবে বাড়িতে।” সিমি চোখ বড়বড় করে তাকায় সোহার দিকে আর সবাই মিটমিট করে হাসতে থাকে। সোহা সিমির তাকানো দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ খেতে থাকে। শাহানাজ বেগম দুজনের মান-অভিমান দেখে হালকা হাসে। শান গলা ঝেড়ে বলে উঠে
” এই যে ম্যাডাম তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া শেষ করুন ভার্সিটিতে যেতে হবে।” সোহা হা করে তাকিয়ে থাকে শানের দিকে। শান ভ্রু নাচিয়ে বলে
” কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো ??” সোহা স্বাভাবিক হয়ে ভীতু স্বরে বলে
” ভার্সিটিতে কেনো যাবো আমি ?? যাবো না ওই ভার্সিটিতে আমি। আমাকে অন্য একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দাও ভাইয়া।” শান শীতল কন্ঠে বলে
” কিছু হবে না। আমরস কালকে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের সাথে কথা বলে এসেছি। আর কিছু করবে না তোমার আর তারপরও যদি কিছু করে তাহলে….পরে দেখে নেবো ওদের এখন তুমি খাওয়া শেষ করে তৈরি হয়ে নাও।” ইশান তাল মিলিয়ে বলে
” হ্যা সোহা আজকে যাও। আজকে কোনো প্রবলেম হলে তারপরের ব্যবস্থা আমরা করবো।” সোহা মাথা নিচু করে একটা বড়সড় ঢোল গিলে।
শান সোহাকে নিয়ে যাচ্ছে আজকে ভার্সিটিতে। সোহা চুপচাপ বসে আছে ফ্রন্ট সিটে আর শান ড্রাইভ করছে। সোহা হৃদয়ের ভয়ে চুপসে আছে একদম। শান সোহার চেহারা দেখে কিছুতা বুঝতে পেরে শান্তনা স্বরে বলে
” তুমি অযথা চিন্তা করছো দেখবে কিছু হবে না। আর কিছু হলে তো আমরা আছি !!” শানের শান্তনা দেওয়া কথায় সোহা কিছুটা স্বস্তি পেলেও পুরোপুরিভাবে স্বস্তি পেলো না। তারমধ্যেই শানের গাড়ি এসে ভার্সিটির গেটের সামনে থামে। সোহা গাড়ি খুলে বেড়িয়ে যায়।
” সোহা !! দাঁড়াও।” শান সোহাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিলো কিন্তু পেছন থেকে ইতির গলার শুনতে পেয়ে দুজন থেমে যায়। ইতি এসে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” কেমন আছো তুমি এখন ??” সোহা হালকা হেসে বলে
” অনেক ভালো। তুমি কেমন আছো ??” ইতি মুচকি হাসি দিয়ে বলে
” আমিও ভালোই। তোমার ভাইয়া কি তোমাকে ড্রপ করে দিতে এসেছে ??” ইতির কথা শুনে সোহা শানের দিকে তাকায়। শান কিছুটা অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে। সোহা জোরপূর্বক হেসে বলে
” ইনি তো আমার ভাইয়া না। আমার হাসবেন্ড। We are new happy marred copule.” ইতি অবাক হয়ে বলে
” কিন্তু কালকে তো তোমার ভাইয়ার সাথে ভাইয়া এসেছিলো প্রিন্সিপ্যাল স্যার বলেছিলো তোমার ভাইয়ার ছোট ভাই ইনি। তাহলে তো তোমার ভাই হয়।” শান হালকা হেসে বলে
” সরি। তোমাকে কালকে পরিচয় দেওয়া হয়নি তাই তুমি জানো না। ইশান চৌধুরি আমার বড় ভাই। ভাইয়া সোহাকে ছোটো বোনের মতো আদর করে তো তুমি ভেবেছো নিজের ভাই। আর আমি সোহার হাসবেন্ড শান চৌধুরি।” ইতু জিভ কেটে বলে
” সরি !!” সোহা মাথা নেড়ে বলে
” it’s ok. চলো আমরা ক্লাসে যাই।” ইতি মাথা নেড়ে হ্যা বলে। শানও দুজনের সাথে যেতে থাকে। মাঠের মাঝ বরাবর আসতেই তিনজের সামনে হুট করে হৃদয়ের গ্যাং এসে হাজির হয়। হৃদয়ের হাত ধরে রিমি দাঁড়িয়ে আছে। সোহা ওদের দেখে ভয় পেয়ে শানের শার্ট খামছে ধরে পেছনে লুকিয়ে যায়। শান একবার সোহাকে দেখে আবার হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে
” excuse me !! কি চাই তোমাদের ??” হৃদয় বাকা হেসে বলে
” যাই তো অনেক কিছুই তা দেবে নাকি ?? দিতে চাইলে তোমার পেছনে থাকা জিনিসটা কে দিতে পারো। আমি আবার ছোট খাটো জিনিস নিতে পছন্দ করি না।” সোহাকে জিনিস বলায় শানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সোহা ভয় পেয়ে আরো শক্ত হাতে শানের শার্ট খামছে ধরে। শান দাঁতের চেপে বলে
” মুখ সামলে কথা বলো নয়তো.. পরে নিজেকে সামলানোর জন্য কোনো ওয়ে পাবে না।” হৃদয় ভ্রু কুচকে দুই পা এগিয়ে এসে শানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে
” তো কি করবে আমার মিস্টার শান চৌধুরি ??”
চলবে~ইনশাল্লাহ……..
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১৫
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
শান দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” মুখ সামলে কথা বলো নয়তো.. পরে নিজেকে সামলানোর জন্য কোনো ওয়ে পাবে না।” হৃদয় ভ্রু কুচকে দুই পা এগিয়ে এসে শানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে
” তো কি করবে আমার !! মিস্টার শান চৌধুরি ??”
শান হৃদয়ের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে পিছিয়ে দেয় গম্ভীর গলায় বলে
” আমার এসব করার এখন কোনো মুড নেই তাই বলছি শুধু শুধু ঝামেলা না বাড়িয়ে ভালো মানুষের মতো থাকো।” হৃদয় রাগি গলায় বলে
” মিস্টার চৌধুরি !! আপনি কি বোঝাতে চাইছেন ?? আমি খারাপ মানুষ ??” শান তাচ্ছিল্য হেসে বলে
” আমি এসব কিছুই বোঝাতে চাইনি আপনি যদি তা ভেবে থাকেন তাহলে আমার কিছু করার নেই।” সোহা পেছন থেকে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” চলুন না এখান থেকে প্লিজ !!” সোহার কথা শুনে শান আর কথা বাড়ালো না সোহার হাত ধরে হৃদয়ের পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। হৃদয় রাগি দৃষ্টিতে শান আর সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। রিমি হৃদয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে
” ওদের খুব বেশিই সাহস। তোমার সাথে কিভাবে কথা বললো দেখেছো !! তুমি কিছু বলছো না কেনো ??” হৃদয় শান্ত গলায় বলে
” এখন আবহাওয়া গরম আছে। ওইদিনের ঝামেলার কথা পুরো ভার্সিটিতে ছড়িয়ে গিয়েছে। এখন কিছু করলেই আমরা সমস্যায় পড়বো। আর আমার বাবা !! তার কথা তো বাদই দিলাম। ক্লাসে চলো।” রিমি মাথা নেড়ে হৃদয়ের সাথে ক্লাসে চলে যায়।
শান সোহাকে ক্লাসে রেখে বের হতেই তার ফোন আসে। শান স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে সামির ফোন করেছে। শান কল রিসিভ করে বাইরের দিকে হাটতে থাকে। সামির অনুরোধ গলায় বলতে থাকে
” ভাই দয়া করে একটা কাজ করেদে প্লিজ ?? আমি অফিসে এসে পরেছি তাই এখন আবার গেলে আমার অনেক দেড়ি হবে।” শান গাড়িতে উঠে সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে
” কি কাজ সেটা তো বলো !!”
সামির অসহায় গলায় বলে
” আরে আমাদের বিয়ের জন্য ক্যামেরাম্যান এসেছিলো না ?? সেই ভিডিও তো এতোদিনে আনা হয়নি ওরা হেলাফেলা করছিলো। একটু আগে ফোন দিয়ে বললো সেইগুলো নিয়ে আসতে যতো তাড়াতাড়ি পারি। কিন্তু আমি তো যেতে পারবো না আর তুইও সেই রোডের ধারে পাশেই আছিস তাই তুই নিয়ে এলে ভালো হতো।” শান নিশ্বাস ফেলে বলে
” ঠিকাছে যাচ্ছি আমি।” সামির খুশি গলায় হলে
” thanks ভাই।” শান হালকা হেসে ফোন কেটে দেয়। গাড়ি ঘুড়িয়ে সেই স্টুডিওর দিকে রওনা দেয়।
বিকেলের দিকে সোহা বাড়ি ফিরে আসে। ইতির সাথে আজকে কিছুটা ভালো সম্পর্ক হয়েছে তাই সোহার মন কিছুটা ফুরফুরে। সোহা গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরে আসে। নিলা, সিমিকে নিয়ে বাগানের দিকে হাটছিলো আর নাইসা, টমিকে নিয়ে দৌড়াতে ব্যস্ত। সোহা দৌড়ে নাইসাদের কাছে যায়। নাইসাকে জড়িয়ে একটা চুমু দিয়ে টমিকে কোলে তুলে নেয়। টমির গাল গুলো টেনে আদুরে গলায় বলে
” কি করে আমার টমি বাবু আর নাইসু ??” নাইসা মিষ্টি হাসি দিয়ে সোহার হাত চেপে বলে
” আমরা তো খেলা করছি তুমি খেলবে মিষ্টিমনি ??” সোহা হেসে বলে
” হ্যা চলো আমরা খেলবো।” সোহা তার ব্যাগটা বাগানের দোলনার উপর রেখে নাইসা আর টমিকে নিয়ে খেলায় মেতে উঠে। নিলা আর সিমি সোহাকে দেখেনি কথা বলতে বলতে সেদিক দিয়ে আসতেই সোহাকে দেখতে পায়। সিমি বিরক্তকর গলায় বলে
” দেখেছো ভাবি ?? তোমাদের আদরের বোনের কাজ !! বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ না হয়ে খেলতে বসে গিয়েছে।” নিলা হালকা হেসে সিমিকে নিয়ে এগিয়ে গেলো সোহার কাছে। সিমি সোহার সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” সোহা !! আগে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করেনে তারপর খেলাধুলা করিস !!” সোহা একবার সিমির দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে বলে
” তোমার সাথে কথা বলবো না আমি যাও এখান থেকে। আমার খাতে ইচ্ছে করলে আমি ভাবিমনির কাছে চেয়ে নেবো, হুহ !!” সিমি ভেংচি কেটে বলে
” কালকে আমি আর তোর দুলাভাই ঘুরতে যাবো তখন যদি আমাদের পেছন পেছন ঘুরেছিস তাহলে দেখবি আমি কি করি !!” সোহা চোখ বড়বড় করে মাথা উঁচু করে সিমির দিকে।তাকিয়ে বলে
” কি কালকে তোমরা ঘুরতে যাবে ?? তাহলে আমিও যাবো।” সিমি দাঁত কেলিয়ে বলে
” জি না বাবু তোমাকে নিয়ে যাবো না আমি। হুহ আমার একটা কথাও শুনিস না তুই।” সোহা নাইসাকে ফিসফিস করে বলে
” নাইসু বাবু তুমি খেলো আমি পরে খেলবো ঠিকাছে ??” নাইসা মাথা নেড়ে ঠিকাছে বলতেই সোহা লাফিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সিমির সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” কে বলেছে আমি তোমার কথা শুনি না ?? আমি সবার কথাই শুনি বুঝেছো ?? আমি ভাবিমনির কথা শুনি এখন তোমার কথাও শুনছি। আমি এখনই ফ্রেশ হতে চলে যাচ্ছি। তবে কালকে আমাকে নিয়ে যেতে হবে কিন্তু !!” বলে দৌড়ে সোহা বাড়িতে ঢুকে গেলো। সিমি আর নিলা ফিকফিক করে হেসে দেয়। নিলা হাসতে হাসতে বলে
” তো সিমি রানী !!! তোমরা বেবি প্ল্যানিং করছো তো ??” সিমি লজ্জায় হাসি বন্ধ করে মাথা নিচু করে বলে
” ভাবি কি বলছো !!” নিলা হেসে বলে
” কি বলছি ?? সত্যি কথাই তো বলছি। বেশি দেড়ি করো না কিন্তু !! বাড়িতে এখন বাচ্চারও প্রয়োজন।” সিমি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে মিনমিন স্বরে বলে
” নাইসা তো আছে আর কি দরকার..” নিলা নাইসার সামনে গিয়ে বলে
” নাইসা !! তুমি আর সোহা তো সারাদিন একা একা খেলা করো। আচ্ছা তোমার কি কোনো বেবি বন্ধু চাই ??” নাইসা খুশিতে জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা, হ্যা চাই তো। আমাকে একটা বেবি এনে দাও মাম্মাম !!” নিলা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে
” আমি কোথা থেকে বেবি আনবো !! আমার বেবি তো একটাই সেটা হলো নাইসা। আচ্ছা তোমার যদি বেবি দরকার হয় তুমি তোমার সিমি মামনিকে গিয়ে বলো। তাহলে তোমার মামনি আর সামির চাচ্চু একটা বেবি নিয়ে আসবে।” নাইসা নিলার কথা শুনে দৌড়ে দৌড়ে সিমির কাছে চলে আসে। সিমির দুই হাত ধরে ঝাড়তে ঝাড়তে বলে
” মামনি ও মামনি একটা বেবি এনে দাও আমাকে !! আমার একটা বেবি বন্ধু লাগবে। একটা বেবি এনে দাও !!” সিমি পড়েছে বিপদে নাইসার সামনে কিছু বলতেও পারছে না। নিলা মুখে হাত দিয়ে হেসে যাচ্ছে সিমি নিলার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে নাইসার গালে হাত রেখে আমতা আমতা করে বলে
” নাইসা !! এ…এনে দদেবো তো বেবি। তুমি এখন রুমে গিয়ে খেলা করো। আ-আমি তোমার চ-চাচ্চুকে বলছি ঠিকাছে ??” নাইসা খুশি হয়ে ইয়েএএ বলে চিৎকার দিয়ে টমিকে নিয়ে নাচতে নাচতে ভেতরে চলে যায়। নাইসা যেতেই নিলা শব্দ করে হেসে উঠে। সিমি মুখ লুকিয়ে দৌড়ে বাড়িতে চলে যায় নিলাও হাসতে হাসতে ভেতরে এসে পড়ে।
রাতে শান অফিস থেকে ফিরে আসে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে নেয়। কলিংবেল এর শব্দে শাহানাজ বেগম টের পেয়েছে শান এসেছে। শাহানাজ বেগম রুম থেকে বেড়িয়ে এসে শানকে দেখে। টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে শানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। শানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” কাজ বেশি ছিলো নাকি ?? ক্লান্ত লাগছে তোমাকে।” শান চোখ খুলে মাকে দেখে একটা মন ভুলানো হাসি দেয়। শাহানাজ বেগম পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই শান হাতে তুলে নেয়। পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে কিছুটা ক্লানি দূড় করে বলে
” হ্যা বাবা নেই তাই কাজ বেশি। ভাইয়া আর আমাকে অনেক কাজ করতে হচ্ছে। বাবা যে কবে আসবে !!” শাহানাজ বেগম হেসে বলে
” এসে পড়বে এই সাপ্তাহেই। সামির তো একটু আগে আসলো ইশান এখনও আসেনি।”
” এসে পড়বে। ভাইয়ার তো কতো কাজ patient দেখতে হয়। আচ্ছা ভাইয়াকে ডাক দাও তো। আজকে ভাইয়ার বিয়ের ভিডিও গুলো আনতে গিয়েছিলাম। অফিসের একজন বললো বিয়ের ভিডিও এর সাথে নাকি বাড়িতে সিসি টিভিও লাগানো হয়েছিলো সেটারও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। সেগুলো দেখে নিতে।” শাহানাজ বেগম গলা ছেড়ে দুইবার ডাকতেই সামির আর সিমি বেরিয়ে আসে রুম থেকে। সামির আসতেই শান বলে
” ভাইয়া বিয়ের সময় বাড়িতে সিসি টিভি লাগয়েছিলি আমাকে জানালি না ??” সামির ভ্রু কুচকে বলে
” আমি !! আমি কখন এসব লাগিয়েছি ?? এসব তো ভাইয়া আর আব্বু দেখেছিলো। তবে আমার জানামতে সিসি টিভি আমাদের বাড়িতে লাগানো হয়নি।” সিমি এগিয়ে বলে
” ভাইয়া, আমাদের বাড়িতে লাগানো হয়েছিলো বাবা বাড়ির সিকিউরিটির জন্য পুরো বাড়িতে সিস টিভি লাগিয়েছিলো।” শান দাঁড়িয়ে বলে
” ওও আচ্ছা। আমি গাড়িতে রেখে এসেছি সব। আমি নিয়ে আসছি।” সিমি মাথা নেড়ে হ্যা বলে।
উপর থেকে ধুপধাপ শব্দ আসতেই সবাই সেদিকে তাকায়। সোহা এলোমেলো পায়ে দৌড়ে নিচে নামছে। নিচে আসতে পায়ের সাথে পা লেগে পরে যেতে নিলেই নিলা এসে ধরে ফেলে সোহাকে। সবাই এগিয়ে আসে সোহাকে এভাবে দেখে। সোহার চোখ টলমল করছে নাক মুখ লাল হয়ে আছে। সোহাকে এমনভাবে দেখে নিলা চিন্তিত হয়ে বলে
” কি হয়েছে সোহা ?? এমন লাগছে কেনো তোমাকে ??” শাহানাজ বেগম অস্থির হয়ে বলে
” সোহা কি হয়েছে তোর ?? বল আমাকে।” সোহা ফুঁপিয়ে কেঁদে দিয়ে বলে
” মামনি আম্মু-আব্বু আজকে গ্রাম থেকে আসছিলো তো। আমি এখন ওদের সাথে কথা বলছিলাম তখন শুনলাম ওদের এক্সিডেন্ট হয়েছে। আশেপাশে সবাই চিৎকার করছিলো।” সবাই চমকে যায় সোহার কথা শুনে। সোহা ঢুকড়ে কেঁদে যাচ্ছে সিমিও সব শুনে কেঁদে দেয়। শান চিন্তিত হয়ে বলে
” কোথায় আছে ওরা এখম ??” সোহা কাঁদতে কাঁদতে বলে
” সবাই চিৎকার করে ভাইয়া হসপিটালের নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলো শুনেছিলাম। ভাইয়ার হসপিটালের আশেপাশেই হয়তো ওরা। আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে চলুন।” শাহানাজ বেগম অস্থির হয়ে বলে
” আমরাও যাচ্ছি। কেমন অবস্থায় আছে কে জানে।” শান দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। শাহানাজ বেগম সহ সবাই বেড়িয়ে পরে নাইসা টমিকে নিয়ে খেলছিলো তাই নাইসা টমিকেও নিয়ে এসে পরে।
শান কিছুটা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে এসে পৌঁছায়। সোহা, সিমির হিচকি উঠে গিয়েছে কাঁদতে কাঁদতে। শান রিসিপশনে গিয়ে সোহার মা, বাবার ছবি দেখিয়ে সব ডিটেইলস জেনে নেয়। দুজনকে এইট নাম্বার ফ্লোরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শান, সামির সবাইকে নিয়ে লিফটে দিয়ে ফ্লোরে গিয়ে পৌঁছায়। রিসিপশনে বলা রুমে গিয়ে দেখতে পায় ভেতরে ইশান আর ইমতিয়াজ রহমান একে অপরের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। সোহা দৌড়ে ভেতরে গিয়ে পাশের বেডের রিয়ানা রহমানের গলায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। রিয়ানা রহমান হালকা হেসে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সিমি ভেতরে এসে ইমতিয়াজ রহমানের পাশে গিয়ে বসে চোখ মুছে নেয়। দুজনকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখে ইমতিয়াজ রহমানের হাতে আর রিয়ানা রহমানের মাথায় ছোট খাটো ব্যান্ডেজ করা। সবাই দুজনকে সুস্থ দেখে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে চিন্তির হয়ে বলে
” ঠিকাছেন তো আপনারা দুজন ?? এক্সিডেন্ট কিভাবে হলো হঠাৎ ?? আমরা কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” ইমতিয়াজ রহমান হালকা হেসে বলে
” তেমন কোনো বড় এক্সিডেন্ট না। আমাদের গাড়ির সাথে মোটরবাইক এর টক্কর লেগেছিলো তাই সামান্য চোট পেয়েছি সবাই। তবে আমরা দুজনই ঠিকাছি। ভাগ্য ভালো ছিলো ইশানের হসপিটালের সামনে এসে ঘটনাটা ঘটেছে নাহলে ওই বাইকের ছেলেটাও মরে যেতো।” নিলা আতঙ্কিত গলায় বলে
” কেনো আংকেল ?? উনি কি বেশি ব্যাথা পেয়েছে নাকি ??” সোহা কান্না বন্ধ করে নাক টেনে কাঁদোকাঁদো গলায় বলে
” একদম ভালো হয়েছে। এইভাবে বাইক চালায় কেনো বজ্জাত ছেলেটা ?? আমার আম্মু,আব্বু কে ব্যাথা দিয়েছে তাই নিজেও ব্যাথা পেয়েছে। একদম ঠিকাছে।” ইশান মুচকি হেসে বলে
” হ্যা একদম ঠিকাছে। তবে ছেলেটা মোটামুটি ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। হাত ভেঙে গিয়েছে সাথে হাতে দুইটা সিলাই লেগেছে আর কপালেও পাচঁটার মতো সিলাই লেগেছে।”
শান তাচ্ছিল্য গলায় বলে
“ওভার স্প্রিডে বাইক চালালে এমনই হয়। সত্যি!! একদম ঠিক হয়েছে। এবার যদি এদের একটু শিক্ষা হয়। মা, বাবা আপনারা ঠিকাছেন তো ??” ইশান শান্তনা দিয়ে বলে
” হ্যা আংকেল, আন্টি ঠিকাছে। দুইদিন রেস্ট করলে ব্যাথাও সেড়ে যাবে।”
চলবে~ইনশাল্লাহ……..