#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১০
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
শাহানাজ বেগম সোহাকে বুঝিয়ে টেবিলে বসিয়ে খাবার খেতে দেয়। কিছুক্ষণ পর শান নিচে নেমে আসে। শান আসতেই শাহানাজ বেগম শানের কান চেপে ধরে। শান হতবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকায়। শাহানাজ বেগম রাগি চেহারায় তাকিয়ে আছে শানের দিকে। শান কানে হাত রেখে অবাক স্বরে বলে
” মা কি করছো এসব !!” শাহানাজ বেগম রাগি গলায় বলে
” তুই সকাল হতে না হতেই সোহাকে বকাবকি শুর্য করেছিস কেনো ?? তোকে বলেছি না আমি সোহাকে কিছু বলবি না !! তারপরও তুই মেয়েটাকে সারাদিন বকাবকি করিস কেনো ??” শান কিড়মিড় করে সোহা দিকে তাকায়। সোহা মন খারাপ করে বসে ছিলো শানকে এভাবে তাকাতে দেখেই সোহা মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। শাহানাজ বেগম আরো জোড়ে কান টান দিয়ে ধমক দিয়ে বলে
” এই তুই আবার ওর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাচ্ছিস কেনো ??” শান কান ধরে হালকা জোড়ে বলে উঠে
” মা !! তুমি তোমার বউ মা কে কিছু না বলে আমাকে কথা শোনাচ্ছো কেনো ?? প্রতিদিন ওর বিচ্ছিরি গলার গান শুনতে একদমই ভালো লাগেনা আমার। তবুও ও গলা ছেড়ে গান গেয়ে আমার ঘুমের বারোটা বাজায়।” শাহানাজ বেগম শানের কান ছেড়ে দিয়ে সোহার কাছে এসে বলে
” আমার মেয়ের যেই ভাবে ইচ্ছে সেইভাবেই গান গাইবে। গলা ছেড়ে কেনো দরকার পরলে মাইকে গান গাইবে। আর যদি সোহাকে কিছু বলিস তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন। তোর বাবা আজ সকাল সকাল চলে গিয়েছে নাহলে এখনই সোহার জন্য মাইক আনিয়ে দিতাম।” শান দাঁতেদাঁত চেপে সোহার দিকে তাকিয়ে ধুপধাপ করে চেয়ারে বসে পরে। নিলা সোহার কাছে এসে বলে
” সোহামনি খাবার টা খেয়ে নাও !!” সোহা মন খারাপ করে টেবিলের উপর দুই হাত রেখে তার উপর মাথা রেখে বলে
” না আমার পেটে আজকে খাবারই ঢুকবে না। আজকে আমার কলেজের প্রথম দিন ছিলো। আর সকালে বকা দিয়ে আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলো। এখন দেখবে তোমরা, কলেজে গেলেও আমার দিনটা খারাপ যাবে। আমি আজকে যাবোই না।” শান মুখে বাকা হাসি ঝুলিয়ে বলে
” যাবে কি করে ?? ফাঁকিবাজরা কি কলেজ, ভার্সিটি যায় নাকি ?? ফাঁকিবাজের দল !!” পাশ থেকে নাইসা খিলখিল করে হেসে বলে উঠে
” মিষ্টিমনি তুমি ফাঁকিবাজি করো !! ভালো মেয়েরা ফাঁকিবাজি করে না তো।” সবাই মিটমিট করে হাসতে থাকে। সোহা কিছুক্ষণ শানের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো।সবাই হতবাক হয়ে যায় সোহাকে কাদঁতে দেখে। সোহা টেবিলে মাথা রেখে কাদঁতে থাকে। সামির অবাক হয়ে বলে
” সোহা কাঁদছো কেনো ??” নিলা সোহার মুখ তুলে বলে
” কি হয়েছে সোহা !! কাঁদছো কেনো ?? শান তো মজা করে বলেছে। তুমি বাচ্চাদের মতো কাঁদছো কেনো ??” শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে
” মা কাঁদে না। কি চাই তোর ?? মা-বাবার কাছে যাবি নাকি??” সিমি নিলার কাছে এসে ফিসফিস করে বলে
” ভাবি সোহার খিদে পেলে মুড সুইং থাকে। ওকে জোর করে কিছু খাইয়ে দাও। আমি গেলে খাবে না।” নিলা চোখ বড়বড় করে তাকায় সিমির দিকে। সিমি ইশারায় নিলাকে যেতে বলে। নিলা সোহার পাশে বসে সোহার মুখের সামনে খাবার ধরে বলে
” সোহা খেয়ে নাও।” সোহা কাদঁতে কাদঁতে মুখ সরিয়ে নিয়ে ভাঙা গলায় বলে
” না খাবো না আমি।” নিলা অসহায় ভাবে তাকায় সিমির দিকে। এদিকে শান শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে সোহাকে দেখছে। সোহার নাক আর গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে শানের কাছে সোহাকে দেখতে খুবই কিউট লাগছে।
ইশান এগিয়ে এসে নিলাকে বলে
” তুমি উঠো আমি দেখছি।” নিলা উঠে দাঁড়াতেই ইশান সোহার পাশে বসে পরে। ইশান সোহার চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে
” কাঁদে না সোহা বোনু। খেয়ে নাও সোহা আমি কালকে তোমাকে আর নাইসাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। আজকে ভার্সিটিতেও তোমাকে ড্রপ করে দেবো।” সোহা নাক টেনে ছলছল চোখে তাকিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলে
” আমাকে কালকে কোথায় নিয়ে যাবে ভাইয়া ??”
ইশান মুচকি হেসে বলে
” তুমি যেখানে বলবে সেখানে।” সোহা নাক টেনে আবার বলে
” তাহলে আমাকে তোমার ছোট ভাইয়ের রুম থেকে অন্যরুমে শিফট করে দাও। আমি থাকবো না এই লোকটার সাথে। সারাদিন বকে আমাকে।”
সবাই অবাক হয়ে যায় সোহার কথায়। শানও কিছুটা অবাক হয়েছে। সোহা ছোট একটা কারণে এসব কথা বলবে ভাবতেও পারেনি। ইশান বিস্ময় কাটিয়ে সোহাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য মাথা নেড়ে বলে
” ঠিকাছে আজকেই তোমাকে আমাদের পাশের রুমে শিফট করে দেবো। এখন ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নাও প্লিজ।” সোহা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে। ইশান মুচকি হেসে সোহাকে খাইয়ে দিতে থাকে। শান খুবই বিরক্ত হলো সোহার এইসব কান্নাকাটি দেখে যদিও সোহার কান্নাভরা চেহারাটা অসম্ভব কিউট লেগেছে।
ভার্সিটির গেটের সামনে গাড়ি থামাতেই সোহা গাড়ি থেকে নেমে গেলো। ইশান আর শান দুজনই নেমে দাঁড়ায়। ইশান মুচকি হেসে বলে
” all the best for your frist day in varsity.” সোহা মুচকি হেসে বলে
” thank you ভাইয়া।” শান শান্ত গলায় বলে
” all the best and ভার্সিটিতে সিনিয়ররা র্যাগিং করাতে পারে। তোমার সাথে সেইরকম কিছু করলে তুমি সোজা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে গিয়ে complain করবে। আর ছুটি হলে বাড়িতে চলে যেও।” ইশান ভ্রু কুচকে শানের দিকে তাকিয়ে বলে
” চলে যাবে মানে ?? তুই এসে ওকে ড্রপ করে নিয়ে যাবি বুঝেছিস ?? সোহা তুমি ক্লাসে চলে যাও। আর কোনো প্রবলেম হলে শান বা আমাকে ফোন করবে আমরা চলে আসবো।” সোহা মাথা নেড়ে ভার্সিটির ভেতর প্রবেশ করে। ইশান আর শান গাড়ি ঘুড়িয়ে নেয়।
ভার্সিটির ভেতরে ঢুকে সোহা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে যেতে থাকে। কিছুদূর সামনে যেতেই সোহা একটা মেয়ের সঙ্গে ধাক্কা খায়। সোহা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে
” সরি আমি দেখতে পাইনি।” মেয়েটা হালকা হেসে বলে
” it’s ok. তুমি ফার্স্ট ইয়ার এর ??” সোহা মাথা নেড়ে হ্যা বলে। মেয়েটা মুচকি হেসে বলে
” আমি ইতি। তোমার নাম কি ??” সোহা হেসে বলে
” মিসেস.সোহা রহমান।” ইতি অবাক স্বরে বলে
” তুমি মেরিড ??” সোহা জোরপূর্বক মাথা নেড়ে হ্যা বলে। ইতি হাত বাড়িয়ে বলে
” ফ্রেন্ড হবে আমার ??” সোহা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ইতি হাত গুটিয়ে বলে
” কি হলো ফ্রেন্ড হবে না আমার ??” সোহা মৃদু গলায় বলে
” আমার তো আগে কোনো ফ্রেন্ড ছিলো না। তাই…” ইতি হেসে বলে
” এই ব্যাপার ?? ওকে, তুমি আমার সঙ্গে কয়েকদিন নরমাল ফ্রেন্ড বা ক্লাস মিট এর মতো থাকতে পারো। পরে যদি আমাকে তোমার ভালো লাগে তাহলে বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারো। done ??” সোহা মুচকি হেসে মাথা নাড়ায়। ইতি আর সোহা দুজন হাটতে থাকে ক্লাসে যাওয়ায় উদ্দেশ্যে।
দুজন কথা বলতে বলতে মাঠের কাছে আসে।
” এই দুই বাচ্চা মেয়ে এদিকে এসো !!” পেছন থেকে ডাক শুনে সোহা আর ইতি দুজনই হাটা থামিয়ে পেছনে ঘুরে তাকায়। পেছনে দুইটা মেয়ে আর একটা ছেলেকে দেখতে পায়। তাদের মধ্যে একটা মেয়ে দুজনকে ইশারায় ডেকে আবার বলে উঠে
” তোমাদেরই ডাকছি এদিকে এসো জলদি।” ইতি আর সোহা দুজন একে অপরের দিকে তাকায়। সোহা সেদিকে যেতে নিলেই ইতি সোহার এক হায় ধরে আটকে দিয়ে বলে
” যেও না ওরা সিনিয়র স্টুডেন্ট মেবি। কোনো র্যাগিং ট্যাগিং এর ঝামেলায় ফেললে !!” সোহা মাথা নেড়ে ঠিকাছে বলে আবার সামনে ফিরে চলে যেতে নিলেই পেছন থেকে সেই মেয়েটা ধমক দিয়ে বলে উঠে
” এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো তোমরা ?? এদিকে এসো নাহলে দুজনের অবস্থা খারাপ করে দেবো।” সোহা ভয় পেয়ে ইতির হাত চেপে ধরে। ইতি সোহার হাতের উপর হাত রেখে শান্তনা দিয়ে বলে
” চলো দেখি। ওদের কথা শুনলেও, না শুনলেও র্যাগিং দেবে।” ইতি সোহার হাত ধরে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মেয়েটা ভ্রু কুচকে বলে
” কথা কানে যাইনি ?? কোথায় যাচ্ছিলে ??” ইতি সোজা গলায় বলে
“কোথায় যাবো আর !! ক্লাসেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনারা বাধা দিয়েছেন। আপনারা আমাদের ডেকেছেন কেনো সেটা যদি বলেন তাহলে ভালো হয়।” ছেলেটা বাকা হেসে বলে
” কেনো ডেকেছি সেটা সময় হলেই দেখতে পাবে। এবার আমাদের সাথে চলো। বাই দ্যা ওয়ে তোমরা ফার্স্ট ইয়ার তো !!”
” হুম কিন্তু কোথায় যাবো ??” ছেলে টা আর মেয়ে দুজন কোনো উত্তর না দিয়ে ইশারায় তাদের সাথে যেতে বলে। ইতি নিশ্বাস ফেলে সোহাকে নিয়ে ওদের পেছন পেছন যেতে থাকে।
কিছুটা পথ যাওয়ার পর তারা একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে মোটামুটি অনেক মানুষ রয়েছে। ইতি তাদের সবাইকে দেখেই বুঝতে পারলো ওরা র্যাগিং এর স্বীকার হয়েছে এখন নিজেরাও এগুলো মাঝে পরবে। কয়েকটা মেয়েকে কাদঁতে দেখে সোহা ফিসফিস গলায় বলে
” এরা কাদঁছে কেনো ??” ইতি আস্তে গলায় বলে
” কোনো কঠিম র্যাগিং দিয়েছে ওদের তাই বোধয়। এবার আমাদেরও দেবে।” সোহা শুকনো ঢোক গিলে সামনে তাকায়। মেয়ে দুটো সোহা আর ইতির হাত ধরে সেখানে নিয়ে যায়। সোহা সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে বাইকে হেলান দিয়ে উল্টো ঘুরে বসে আছে এক হাত থেকে সিগারেট এর ধোয়া উড়ছে অন্য হাতে একটা বোতল দেখতে পেলো তবে সেটা কিসের বোতল সেটা ধরতে পারলো না সোহা। ভাবতে ভাবতে তার পাশে থাকা মেয়েটা সম্ভবত ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে
” হৃদয় !! দেখো আরো দুজন নতুন স্টুডেন্ট এসেছে। তাদের ওয়েলকাম করবে না ?? আচ্ছা কি র্যাগিং দেবো ??” ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়ে পেছন ঘুরে তাকিয়ে মুখে থাক্ব সিগারেট এর ধোয়া টুকু ছেড়ে দেয়। সোহা ছেলেটার চেহারা দেখেই চমকে দুই পা পিছিয়ে যায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ছেলেটা এক হাত বাড়িয়ে সোহার পাশে মেয়েটাকে বলে
” রিমি বেবি কাম হেয়ার !!” মেয়েটা হেসে হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে। হৃদয় রিমি নামের মেয়েটার কোমড় জড়িয়ে ধরে সোহা আর ইতির দিকে তাকায়। হৃদয় ইতিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে সামনে আসতে বলে। ইতি একটা ঢোক গিলে সামনে এগিয়ে যায় হৃদয় তার হাতে থাকা সিগারেট টা এগিয়ে দিয়ে বলে
” নাও এটা হাতে নিয়ে একটা টান দাও।” ইতি অবাক হয়ে বলে
” কি !! এটা করতে পারবো না আমি।” হৃদয় গম্ভীর গলায় বলে
” আমি এক কথা দ্বিতীয়বার বলি না। যা বলেছি তাই করো নাহলে এর থেকেও বেশি টাফ র্যাগিং দেওয়া হবে।” ইতি ছলছল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সিগারেটের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। সোহার ইতির চেহারা দেখে খুব মায়া হয়। সোহা মনে হাজারো ভয় আর জড়োতা নিয়ে বলে উঠে
” এটা করা উচিত হচ্ছে না আপনাদের। এভাবে কাউকে জোড় করে কিছু করানোর মানে হয় না।”
হৃদয় তীক্ষ্ণচোখে সোহার দিকে তাকায়। সোহা হৃদয়ের তাকানো দেখে চোখ নামিয়ে নেয় আর ভয়ে কাপঁতে থাকে। হৃদয় রিমির দিকে তাকিয়ে বলে
” বেবি !!সবাইকে একটু আমার নিয়ম গুলো বলে নিয়ে আসলে ভালো হতো। তুমি বলোনি কেনো ওদের যে আমি আমার কাজে কারো নাক গলানো পছন্দ করি না !! এবার ওকে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলো তো !!” রিমি বাকা হেসে হৃদয়ের হাত জড়িয়ে বলে
” আমাদের রুমের দুই রুম পরে যে পুরো বই, খাতা রাখার স্টোর রুমটা আছে না !! সেটা অনেক ময়লা হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় ওকে দিয়ে সেটা পরিষ্কার করালেই ভালো হবে।” হৃদয় মুচকি হেসে সোহার দিকে তাকায়। সোহার কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..
#তুমিময়_ভালোবাসা
#পর্ব: ১১
#লেখিকা: মার্জিয়া রহমান হিমা
রিমি বাকা হেসে হৃদয়ের হাত জড়িয়ে বলে
” আমাদের রুমের দুই রুম পরে যে পুরো বই, খাতা রাখার স্টোর রুমটা আছে না !! সেটা অনেক ময়লা হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় ওকে দিয়ে সেটা পরিষ্কার করালেই ভালো হবে।” হৃদয় মুচকি হেসে সোহার দিকে তাকায়। সোহার কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।
হৃদয় তার পাশে থাকা ছেলে মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলে
” যা তোরা নতুন ম্যাডামকে স্টোর রুমটা দেখিয়ে দিয়ে আয়। নতুন তো কিছুই জানে না। আর এই মেয়ে শনো রুমটা ভালো করে পরিষ্কার করবে। যদি একটুও ময়লা থাকে তাহলে তোমার কি হবে সেটা দেখতেই পাবে।” সোহা হৃদয়ের কথা শুনে ছলছল চোখজোড়া নামিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” আমার Asphyxia আছে। আমি ধুলোবালিতে যেতে পারবো না।” রিমি দাঁত কিড়মিড় করে বলে
” দেখেছো হৃদয় এই মেয়ের কতোবড় সাহস !! তোমার কথা অমান্য করছে ও, কিছু বলছো না কেনো তুমি ??” ইতি এগিয়ে এসে সোহার পাশে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে
” কি বলবে উনি ?? সোহার এইসবে সমস্যা আছে বলছেই তো আর আমাদের সাথে এইসব করলে আমরা মাথা নিচু করে কাদঁবো না সোজা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে যাবো।” হৃদয় রেগে খুব জোড়ে ধমক দেয়। সোহা আর ইতি ধমক শুনে চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠে। হৃদয় রাগি গলায় বলে
” আর একটা কথা বললে তোদের দুইজনকেই পেছনের লেকের পানিতে গিয়ে ফেলে দিয়ে আসবো। লিমন এই মেয়েটাকে এখানেই আটকে রাখ। এই মেয়ের মুখ থেকে পটরপটর কথা বের হয়।” হৃদয় ইতির দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলে। হৃদয়ের পাশ থেকে ছেলেটা এগিয়ে আসতে নিলেই ইতি রেগে বলে
” এটা কিন্তু বেশি বেশি করছেন আপনারা !! আমাকে ছোঁয়ার কোনো রাইট আপনাদের নেই।”
লিমনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হৃদয় তার হাতের বোতলটা সজোরে মাটিতে ছুড়ে মারে।কাচের বোতলটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। হৃদয়
লিমনের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলে
” শালা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তুই ?? ওর হাত গুলো ধরে ওকে বেধে রাখ।” লিমন দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ইতির হাত জোড়া পেছন দিক থেকে তার শক্ত হাতে ধরে রেখে বলে
” হৃদয় দড়ি তো নেই হাত ধরে রাখলে চলবে ??”
হৃদয় দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” কোনো কাজ ঠিক মতো করতে পারিস না আবার জিজ্ঞেস করছিস হবে কিনা ?? ভালো করে ধরে রাখ এখন পরে দড়ি দিয়ে বাধবি। আর প্রমা তুই এই সোহা নাকি কি নাম মেয়েটার !! একে স্টোর রুমটা দেখিয়ে দে আর কোনো কথা বললে আমার কাছে নিয়ে আসবি।” প্রমা মাথা নেড়ে সোহার এক হাত ধরে টেনে সোহাকে নিয়ে যেতে থাকে।
সোহা চুপচাপ মেয়েটার সাথে যেতে থাকে। হৃদয় নামের এই ছেলেটা এখানে কি করছে সোহা বুঝতে পারছে না। সোহা যদিও হৃদয়ের নাম জানতো না তবে এখন জেনেছে কিন্তু হৃদয়কে দেখেই সোহার মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। সোহা চাইলেও মুখের উপর কিছু বলতে পারছে না হৃদয়কে দেখে। প্রমা সোহাকে একটা রুমে ভেতরে নিয়ে যায়। সোহা ভেতরে ঢুকে দেখে রুমে হাজার হাজার বই খাতা আর মাকড়শার জাল , ধুলোবালি সহ যতো ময়লা থাকে সবই এখানে রয়েছে। সোহা মুখে কাপড় দিয়ে বলে
” এগুলো আমি একা পরিষ্কার করবো কি করে?? এতো এতো ময়লা !!” প্রমা হেসে বলে
” তোমাকে একাই করতে হবে বাবু। দাড়াও তোমার জিনিস গুলো এসে দিচ্ছি।” প্রমা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সোহা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে শানের নাম্বার ডায়াল করে শানকে কল করে। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হয়।
সোহা অসহায় গলায় বলে
” শান ভাইয়া আমি একটা প্রবলেমে পরেছি। আপনি তাড়াতাড়ি আসতে পারবেন প্লিজ ??”
ওপর পাশ থেকে শান ব্যস্ত গলায় বলে
” কিন্তু আমি তো মিটিং এ আছি। আর আমার অফিসও কিছুটা দূড়ে। তুমি কিছুক্ষণ ওয়েট করো আমি ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিচ্ছি তোমার কাছে যেতে।” সোহা আর কিছু বলার আগেই শান ফোন কেটে দেয়। সোহা ছলছল চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার দরজার দিকে তাকায়। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রমা এসে পরিষ্কার করার সব জিনিস নিয়ে এলো। সব রেখে হাফ ছেড়ে বলে
” নাও কাজ শুরু করো আর একদম ফাঁকিবাজি করবে না তাহলে তোমারই ভাগ্যে দুঃখ আছে।” সোহা পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে জড়ানো গলায় বলে
” কিন্তু আমি পারবো নাতো আমার Asphyxia problem আছে।” কথা শেষ করতেই শব্দ শুনে সোহা পেছনে তাকিয়ে দেখে দরজা বন্ধ হয়ে আছে। সোহা দৌড়ে দরজার কাছে এসে দরজায় টান দিয়ে দেখে দরজায় বাইরে থেকে বদনহ হয়ে আছে। সোহা দরজায় বাড়ি দিয়ে বলে
” তোমরা দরজা বন্ধ করেছো কেনো ?? আমি বের হবো কি করে ?? দরজা খুলে দাও প্লিজ!!”
বাইরে থেকে হাসির গলা শুনতে পেয়ে সোহা চুপ হয়ে যায়। প্রমা হেসে বলে
” আগে পুরো রুম পরিষ্কার করো তারপর বের হওয়ার চিন্তা করবে। কাজে লেগ৩ পরো বুঝেছো ?? আমি চলে যাচ্ছি আবার পরে আসবো আর তুমি অযথা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে নিজের গলস ব্যাথা করো না কারণ এখানে এখন কেউ আসবে না সবার ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে।” সোহা জড়ানো গলায় বলে
” এমন করছো কেনো ?? খুলে দাও না প্লিজ !!” বাইরে থেকে কোনো আর কোনো শব্দ না পেয়ে সোহা ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। দুই অয়া পিছিয়ে যেতেই পিঠ লেগে এক স্তুপ থেকে কয়েকটা বই পরে যায়। সোহা মুখে ওড়না দিয়ে কাশে উঠে। ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে আবার শানকে ফোন লাগায় কিন্তু ফোন রিসিভ হয় না। সোহা ইশানকে ফোন দেওয়ার জন্য ডায়াল লিস্টে যেতেই সোহার মনে পরে নতুন ফোনে কারোর নাম্বারই নেই। আর সোহার কারোর নাম্বারই মুখস্থ থাকে না তাই অন্য কাউকে ফোন দিতে পারলো না। সোহা মাথায় মাত দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে
” এখন কি…করবো আমি?? শান ভাইয়ার নাম্বার নাইসা তো সেভ করে দিয়েছে কিন্তু….. উনি তো ফোনই….ধরছে না !!” সোহা চোখ মুছে ভীতু দৃষ্টিতে চারপাশে তাকিয়ে রুমের কিছুটা ভেতরে যেতে থাকে। চারপাশে এতো এতো বইয়ের স্তুপ, সব গুলোতে ময়লা পড়ে আছে। সোহা ওড়না মুখে দিয়েই বই হাতে নিয়ে সেগুলো ঝাড়া দেয়। ময়লা উড়তেই সোহা আবার কাশতে থাকে।
শান সোহার ফোন কেটে ইশানকে ফোন করেছিল কিন্তু ইশান এখন একটা সার্জারিতে থাকায় যেতে পারবে না। কয়েক মিনিট পর আবার ফোন করবে বলে ফোন রেখে দেয়।
সোহার আরো কয়েকটা বই ঝাড়তেই সোহার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। সোহা সেখান থেজে সড়ে আসে। পাকনামি করে বই কেনো ঝাড়তে গেলো ভেবেই সোহার নিজের মাথায় বারি দিতে ইচ্ছে করছে। সোহা জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে এলোমেলো পায়ে এগিয়ে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে আবার শানকে ফোন করে। ফোন ধরছে না দেখে সোহা অনবরত শানকে ফোন দিতে থাকে।
শান মিটিং করছিলো সোহার এতো ফোন দেখে শান সবাইকে উদ্দেশ্য করে
” excuse me !!” বলে দূড়ে সরে আসে। ইশানকে ফোন লাগায়।
ইশান মাত্রই সার্জারি থেকে বেড়িয়ে এসে তার কেবিনে বসেছিলো শানের কল দেখে রিসিভ করে বলে
” হ্যা বল !!” শান ব্যস্ত গলায় বলে
” ভাইয়া সোহা অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে আমাকে। তখন বললো কি প্রবলেম হয়েছে আমাকে যেতে কিন্তু আমার এদিকে ইম্পরট্যান্ট একটা মিটিং কান্টিনিউ হচ্ছে। তুমি জলদি যাবে প্লিজ ?? তোমার হসপিটাল থেকে তো কাছে হবে।”
ইশান ক্ষিপ্ত গলায় বলে
” আরো আগে আমাকে ফোন দেওয়া যায়নি ??” শান ঠান্ডা স্বরে বলে
” দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি সার্জারিতে ছিলে তাই।” ইশান কিছু না বলে ফোন কেটে হন্তদন্ত হয়ে কাউকে কিছু না বলে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে যায়।
এদিকে সোহার হাপানি প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। শরীর পুরপ অবশ হয়ে মোবাইলও হাত থেকে পরে গিয়েছে। সোহা নিচে বসে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু সোহা ব্যর্থ হচ্ছে। গলা দিয়ে আওয়াজও বের হচ্ছে না। আস্তে আস্তে সোহার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসে। সোহা লুটিয়ে অচেতন হয়ে মাটিতে শুয়ে পরে।
ইশান অনেক দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ভার্সিটিতে এসে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে বেরিয়েই দৌড়ে ভেতরে ঢুকে যায়। মাঠের কাছে আসতেই ইশানের ভ্রু কুচকে যায় মাঠের এক পাশের বড় গাছের নিচে একটা মেয়েকে বেধে রাখা দেখে। ইশান দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। মেয়েটার সামনে আসতেই ইশারায় দড়িটা খুলে দিতে বলে। ইশান তাড়াতাড়ি দড়িটা খুলে দেয়। হাত, পায়ের বাধন খুলতেই ইতি নিজের মুখে কাপড়টা খুলে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নেয়। ইশান অবাক হয়ে বলে
” আপনাকে এভাবে বেধে রেখেছে কে ??” ইতি কান্না গলায় ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে
” সিনিয়ররা আমাকে আর আমার ফ্রেন্ড সোহার সাথে এমন করেছে। মেয়েটা স্টোর রুমে বন্ধ করে রেখেছে আমাকে যেতে হবে সেখানে।” ইশানের বুক ধক করে উঠে সোহার নাম শুনে। ইশান জিহ্বা দিয়ে অধর জোড়া ভিজিয়ে বলে
” সোহা !! কোথায় সোহা ?? আমাকে নিয়ে চলো এখনই।” ইতি অবাক গলায় বলে
” আপনি সোহাকে চিনেন ?? কি হন আপনি ??” ইশান অস্থির হয়ে বলে
” আমি ভাই হই এখন এসব বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি সোহার কাছে নিয়ে চলো আমাকে।” ইতি মাথা নেড়ে ইশানকে নিয়ে সেদিকে যায়। দুই একজনকে জিজ্ঞেস করে স্টোর রুমে সামনে গিয়ে পৌঁছায় দুজন। স্টোর রুমে বাইরে থেকে বন্ধ দেখে ইশান দ্রুত দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই ইশানের চোখ যায় অচেতন হয়ে পরে থাকা সোহার দিকে। ইশান দৌড়ে সোহার কাছে যায়।
” সোহা !! সোহা মনি চোখ খোলো। সোহা !!” কয়েকবার ডেকেও কোনো সারা পায় না। ইশান সোহার নাকের সামনে আঙুল রেখে চেক করে দেখে সোহার শ্বাস একদম ধীরে ধীড়ে পড়ছে বলতে গেলে পরছেই না। ইশান দেড়ি না করে সোহাকে কোলে তুলে সেখাম থেকে বেড়িয়ে আসে। ইতিও ইশানের সাথে আসে।
বাড়িতে খবর দিতেই শান বাদে সবাই ইশানের হসপিটালে ছুটে আসে। শান এখনও সোহার কোনো খবর পায়নি। পাবে কি করে ?? ইশান ধানের ফোনে রাস্তায় আসতে আসতে ট্রায় করেছিলো কিন্তু শানের ফোন বন্ধ। শাহানাজ বেগম এসেই কান্না শুরু করে দিয়েছে সিমিও ভয় নিয়ে বসে আছে যেকোনো সময় কেঁদে দেবে। সামির শাহানাজ বেগমের কান্না থামানোর চেষ্টায় আছে।
সোহাকে কেবিনে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। সোহার এখনও জ্ঞান ফিরেনি। ইশান অনেক সময় নিয়ে সোহাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। ইশান কেবিন থেকে বেড়িয়ে মায়ের সামনে যায়। শাহানাজ বেগম চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
“সোহা কেমন আছে ইশান?? কি হয়েছিলো ওর ??” ইশান নিশ্বাস ফেলে বলে
” সোহার Asphyxia problem এর কারণে ধুলোবালিতে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিলো। ইনহেইলার না নেওয়ায় এমন হয়েছে। আমি আরেকটু দেড়ি করে গেলেই বোধয় সব শেষ হয়ে যেতো।” শাহানাজ বেগম চেয়ারে বসে পরে। ইশান ইতির সামনে দারিয়ে বলে
” তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তুমি না থাকলে আজকে সোহাকে খুঁজতে আরো সময় লাগতো আমার।” ইতি হালকা হেসে বলে
” এতে ধন্যবাদের কিছু নেই। আপনিও আমাকে বাঁচিয়েছেন। আপনি সময় মতো না আসলে আমিও আপনাকে নিয়ে সোহার কাছে যেতে পারতাম না। যাই হোক আমি আজকে আসছি অন্য একদিন আসবো।” নিলা এগিয়ে এসে বলে
” সেকি !! সোহাকে না দেখেই চলে যাবে ??” ইতি মুচকি হেসে নিলার দিকে তাকিয়ে বলে
” নাহ আপু অন্যদিন আসবো। এখানে আপনারা সবাই ফ্যামিলি মেমবাররা রয়েছেন। এতোজন অপরিচিত মানুষের মাঝে থাকতে অস্বস্তি লাগছে।” নিলা হালকা হেসে বলে
” তুমি তো সোহার ফ্রেন্ড তাহলে তুমিও তো এখন আমাদের ফ্যামিলির একজন।” ইতি হেসে বলে
” সেটা এখনও পুরোপুরি ভাবে হইনি। যেদিন হবী সেইদিন ইনভাইটেশন ছাড়াই আপনাদের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত খেয়ে আসবো।” ইতি নাইসার গাল টিপে বলে
” হাই কিউটি বেবি !! তোমার নাম কি ??” নাইসা মুখ ফুলিয়ে বলে উঠে
” তুমি আমার উপর নজর লাগাচ্ছো কেনো ?? আমার মিষ্টিমনি বলে মাশাল্লাহ আমার নাইসু কতো কিউট !! মিষ্টিমনি বলেছে মাশাল্লাহ বললে নজর লাগে না। তুমিও মাশাল্লাহ বলো নাহলে তোমার নজর লাগবে আমার উপর।” ইতি ফিকফিক করে হেসে দেয় নাইসার কথা শুনে। নাইসার গালে চুমি দিয়ে বলে
” ঠিকাছে, মাশাল্লাহ নাইসু বাবু অনেক কিউট।” নাইসা মুচকি হাসি দেয়। ইতি বিদায় নিয়ে চলে যায়। সামির ইশানের কাছে এসে বলে
” ভাইয়া সোহা ধুলোবালিতে কেনো গিয়েছিলো ??” ইশান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” এসব ওই ভার্সিটির সিনিয়র দের কাজ। কালকেই আমি ভার্সিটিতে গিয়ে ওদের প্রত্যেকটার নামে রিপোর্ট করবো। একটাকেও ছাড় দেবো না।”
রাতে বাড়িতে আসতেই শান অনুভব করলো গত কয়েক দিনের তুলনায় আজকে বাড়িটা একদম নিস্তব্ধ হয়ে আছে। রান্নাঘর থেকে সালমা আর শাহানাজ বেগমের গলা শুনতে পেয়েছে এছাড়া আর কাউকে দেখতে পায়নি। শান ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে আসে। রুমের সামনে এসেই ভেতরে সবাইকে দেখে ধীর পায়ে রুমে এসে ঢোকে শান। শান ভেতরে এসে দেখে ইশান একটা ফাইল দেখছে সাথে রুমে নিলা, সামির, সিমিও রয়েছে। বিছানায় সোহাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে শান অবাক হয়ে বলে
” তোমরা সবাই একসাথে এই রুমে কি করছো ?? আর সোহা এখন ঘুমিয়ে আছে কেনো ?? কি হয়েছে ??” ইশান অগ্নিদৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে হাতের ফাইলটা ছুড়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে রাগি গলায় বলে
” নিজের বউ এর যখন খেয়ালই রাখতে পারবি না তাহলে বিয়ে কেনো করেছিলি তুই ?? সোহা প্রবলেমে আছে শুনেও তুই সোহার কি হয়েছে সেটা জেনে নিজের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলি। তোর কাছে কি নিজের মিটিং এতো ইম্পরট্যান্ট যে একটা মানুষের প্রাণের পরোয়া করিস না !! আজকে আমি না গেলে সোহাকে তো মৃ…।” কথা শেষ না করেই থেমে গেলো ইশান। শান অবাক হয়ে তাকায় সোহার দিকে। সোহা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে পাশে নাইসা সোহার পাশে মন খারাপ করে বসে আছে টমিকে নিয়ে। শান ঢোক গিলে বলে
” কি হয়েছিলো ওর ??” সামির গম্ভীর গলায় শানকে সব খুলে বলে। শান সব শুনে কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ইশান আবার ফাইলটা হাতে নিয়ে নিলা আর সিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে
” একজন সুস্থ মানুষের তুলনায় সোহা খুব চিকন
মানে ওর শরীরের ওজন কম এভাবে থাকলে কয়েকদিন পর ওর শরীরে রক্তের ঘাটতি সাথে আরো রোগ দেখা দিবে বা বেবি কনসিভেও প্রবলেম হবে। সোহাকে প্রতিদিন ফ্রুটস সহ সব ভিটামিন খাবার খাওয়াতে হবে। কিন্তু এখন সোহাকে নরম বা পানিয় খাবার। সুপ, চিকেন ষ্টু এসব খাওয়াবে।” নিলা চিন্তিত হয়ে বলে
” কিন্তু সোহা তো কিছুই খেতে যায় না।” ইশান ফাইল বন্ধ করে বলে
” সমস্যা নেই তোমাকে যেভাবে মা আর আমি মেরে, ধমক দিয়ে খাইয়ে খাইয়ে মোটা বানিয়েছি সেইভাবেই এখন সোহার ওজন স্বাভাবিক ওজনে আনতে হবে।” নিলা রেগে বলে
” তুমি আমাকে কোন দিক দিয়ে মোটা দেখো ??” ইশান মাথা চুলকে বলে
” মোটা না তবে আগে তো সোহার মতোই ছিলে পরে ফিটফাট হয়েছো সেটাই বলছি।” বলে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায়। সিমি আর সামির মিটমিট করে হাসতে থাকে। শান চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
চলবে~ইনশাল্লাহ……..