তুমিময় পর্ব : ৩

0
1764
তুমিময় পর্ব : ৩ গল্পবিলাসী : Nishe . চেঁচিয়ে উঠলো রুহি একদম ধরবেনা আমাকে। লজ্জা করেনা আমার সামনে আসতে তোমার? বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন রাখতে? কি করে পারো এমন নিখুঁত অভিনয় করতে? মেঘ : রুহির কাধ ঝাঁকিয়ে একদম চেঁচাবেনা আর কি বলছো এইগুলো? কার রিলেশন কিসের রিলেশন? মাথা ঠিক আছে তোমার? জ্বরে কি মাথা গেছে তোমার? রুহি : একদম নাটক করবেনা। কেনো করলো এমন মেঘের কলার ধরে কান্না করতে করতে বলতে শুরু করলো।কি দোষ ছিলো আমার? বলবে? নিজেই তো সব ঠিক করলে তাহলে কেনো এমন করলে তুমি? আমিতো চেয়েছিলাম শেষ করতে তুমিইতো বেধেছিলে তোমার ভালোবাসায়।সকালবিকাল পাশে রেখে ভালোবাসা শিখিয়ে আজ কেনো দূরে ফেলেদিচ্ছো?আজ কেনো এমন হলো আমার সাথে? একবারও ভাবলেনা আমি কিভাবে থাকবো তোমাকে ছেড়ে? আমিতো পারবোনা তাহলে কেনো করলে এমন? ? মেঘ : কি বলছো এসব আমি কেনো এমন করবো? কি হয়েছে তোমার? একদম কান্না করবেনা। কি হয়েছে বলো আমাকে রুহি : একদম ভালোমানুষ সাজতে আসবেনা। তুমি থাকো তোমার রুবাকে নিয়ে আমিই চলে যাবো কালকেই উকিলের সাথে কথা বলবো আর কল দিবেনা আমাকে একদম না বলে চলে যেতে নিলে মেঘ ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। মেঘ : চেঁচিয়ে একদম চুপ। কি বললি উকিলের কাছে যাবি আর কি বললি? আমার রিলেশন? মেরে হাত পা ভেঙে রুমে ফেলে রাখবো। একদিন বলেছি কি হয়েছে ক্লিয়ারলি বলে তারপর সব ডিসিশন নিবে।রাগ অভিমান করবে। তা না করে উল্টো মেজাজ দেখাচ্ছো যার কোনো কারনই আমি জানিনা রুহি শুধু কান্নাই করে যাচ্ছে। রুহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয় রুহি ছাড়াতে গেলে মেঘ : একদম নড়বেনা এভাবে থাকো নিজের রাগটাকেও কিছুটা কন্ট্রোল করে রুহির মুখটা উচু করে তুলে। কান্না করে করে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। কে কিসব বলেছে কে জানে আমাকে জিজ্ঞাসা না করেই নিজে গুমরে আছে।রুহি তখনো মেঘকে ধরেনি মেঘ রুহির হাত দুটো দিয়ে নিজের শরীরের মধ্যে নিয়ে নেয়। রুহি ছেড়ে দেয়। মেঘ হেসে উঠে এতো অভিমানী এই মেয়ে। কিন্তু কেনো এমন করছে রুহি? কি হয়েছে তাতো জানতেই হবে। আসরের আযানের সুর কানে এলো। মেঘ নিজ থেকেই বলতে শুরু করলো সেদিন রাজশাহী যাওয়ার প্রোগ্রাম থাকলেও আমার কাজিনকে রাজশাহী পাঠিয়ে দেই আর অফিসে আমি বসি। রাতেই বাসায় চলে আসি। তোমাকে কল দিলাম এই ভেবে যেনো তুমি পরদিন ভোরেই চলে আসো কিন্তু তুমি কোনো রেসপন্স ই করছোনা তারমধ্যে পুরো তিনদিন কোনো যোগাযোগ নেই। যে মেয়ে কিনা ঘন্টায় আমাকে কম করে হলেও দশটা মেসেজ দেয় সে পুরো তিনদিনে একটা কল কিংবা মেসেজ করেনি আমার টেনশন হবেনা? আর আজকে অফিস থেকে আসার পথেই তোমাকে দেখতে পাই তুমি আমার গাড়ি দেখেও চলে যাচ্ছিলে তাইতো এভাবে আনতে হলো আর তুমি কি সব রিলেশনের কথা বলছো কোন রুবার কথা বলছো সত্যি বলছি আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা প্লিজ এভাবে নিজের মধ্যে রাখলে তো সলভ হবেনা দুজনেই কষ্ট পাবো কি হয়েছে বলো আমাকে। আর রুবাই বা কে? রুহি চুপচাপ বসে আছে কি হলো বলো আচ্ছা এখন বলতে হবেনা চলো ফ্রেশ হবে রুহি : আমি বাসায় যাবো। মেঘ : প্রবলেম সলভ না করে আমি বাসায় যেতে দেবোনা সেটা তুমি ভালোভাবেই জানো সো যা বলছি করো যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। রুহি ফ্রেশ হতে গেলে মেঘ একমগ কফি নিয়ে আসে। রুহির মোবাইল থেকে কিছু কাজ অপেক্ষা করছে তার রেজাল্ট এর জন্য। তার কেনো জানি মনেহচ্ছে রুবা নামটা আরো কোথাও সে শুনেছে তাহলে কোথায়? সেটাই ভেবে যাচ্ছে। ভাবনার ছেদ ঘটলো মেসেজ টোন শোনে যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে আকাশকে কল দিয়ে ডিটেইলস জেনে আবার রুহির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। মেয়েরা সব দিতে রাজি কিন্তু নিজের বরকে নয় ভেবেই খুব হাসি পেলো মেঘের। রুহিকে নিয়ে ওদের কনফারেন্স রুমে যায়। ছবিগুলো ছেড়ে দিয়ে রুহিকে বসিয়ে কফি খাইয়ে নেয়। না খেতে চাইলে জোড় করে খাইয়ে দেয়। এবার বলেন মহারানীর কি হয়েছিলো? তুমি তো ফুপ্পির বাসায় গেলে এরপর এমন কি হলো যে এতো অসুস্থ হয়ে গেলে? আর কিসব রুবা টুবার কথা বলছো। রুহি তখনো চুপ করে আছে দেখে মেঘ : বলবে নাকি ফুপ্পির বাসায় যাবো আমি? রুহি মেঘের দিকে তাকালে মেঘ আবারো বলে উঠে তুমি খুব ভালোভাবেই জানো আমি প্রয়োজনে ঠিক কতোটা খারাপ হতে পারি। আমি চাইনা তুমি আবারো আমার সেই রূপ দেখো। আর যদি ভেবে নাও তুমি বলবেনা তাহলে কথা বের করার ওয়ে আমার অনেক জানা আছে। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তোমারি প্রবলেম হবে রুহি খুব ভালোভাবেই জানে মেঘ কতোটা ভয়ানক হতে পারে। সে নিজেও চায়না মেঘ এমন হোক তারপর রুহি ফুপ্পির বাসায় কি কি হলো সব মেঘকে খুলে বলে। মেঘ হাসতে শুরু করে এমন পাগল ও বুঝি মানুষ হয়? তুমি তখন আমাকে কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারতে তা না করে নিজে জ্বলে পুড়ে মরছো। আর রুবার হয়তো কোথাও ভূল হয়েছিলো আর তুমিতো জানোই আমি এখানের অফিসেই থাকি বাবা আমাকে এই অফিসের দায়িত্ব দিয়েছে ঢাকায় যখন ইম্পরট্যান্ট কোনো কাজ থাকে তাহলেই যাই। এবার ভূল ভাঙলো তো? হঠাৎ করেই রুহির মোবাইল থেকে এক্টা পিক দেখায় মেঘ। মেঘ : এইটা হচ্ছে রুবার লাভার। আর সে কে জানো? আমার কাজিন। আমার মেজো চাচুর বড় ছেলে আকাশ চৌধুরী। ওর নানুবাড়িতে সবাই রায়হান বলেই ডাকে। আমাদের পেছন দিক থেকে দেখতে অনেকটাই এক শুধু আমি আর আকাশই না আমাদের সব কাজিনদের বডি দেখতে একি রকম সেখানে আকাশ নয় আমিই ছিলাম আর আমাকেই আকাশ ভেবে নিয়েছিলো রুবা আর আমি রাজশাহী যাইনি আকাশকেই পাঠিয়েছিলাম।আর সেই আকাশের সাথেই তোমার কাজিন রুবার রিলেশন। এবার বুঝলে? না জেনে কি একটা ভূল করতে যাচ্ছিলে? রুহি : কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে এইসব? তুমি কি রুবার রিলেশন সম্পর্কে জানতে? মেঘ : রুহিকে আরো কাছে টেনে না মেডাম একটু আগেই জানতে হলো বউয়ের ভ্রান্ত ধারনা দূর করার জন্য আপনি যখন ওয়াশরুমে ছিলেন তখন আপনার ফোন থেকেই রুবাকে টেক্সট করলাম ওর বয়ফ্রেন্ড এর পিক দেখতে চাই তখন ও পাঠালো সেই পিকটা ছিল আকাশের ওরফে রায়হানের। তারপরেই আকাশকে কল করে জেনে নিলাম রুহি চুপ হয়ে আছে দেখে মেঘ রুহিকে জড়িয়ে ধরে এবার হ্যাপি? সব শেষ? এবারতো হাসো প্লিজ। রুহি : সরি। আমিতো এতোকিছু জানতাম না যখন রুবা তোমাকে দেখিয়েছিলো আমার মাথা আর কাজ করছিলো না বাসায় ফিরে রুবাকে বলেওছিলাম ওর কোথাও ভূল হচ্ছে কিন্তু ও ওওর কথায় অনড়। তাইতো এমন হলো মেঘ : তোমার উচিত ছিলো আমাকে জিজ্ঞাসা করা কিন্তু মহারানীর তো ভয় হচ্ছিলো যদি ওনার মহারাজকে কেউ কেড়ে নেয় আর তাই তিনঘণ্টা শাওয়ার নিয়ে ওনি হসপিটালে। বলেই হেসে উঠলো। রুহি মেঘকে জড়িয়ে ধরে সরি প্লিজ মাফ করে দাও মেঘ : ওহু দিবোনা রুহি : সরিতো আর কখনো এরকম হবেনা এইযে কান ধরছি প্লিজ মেঘ : ঠোট দেখিয়ে রুহি :এহ পারবোনা মেঘ : তাহলে আমিই নেই কি বলো বলেই রুহির ঠোটে চুমু খেলো রুহি : ইস কি ভূল করেছে মেঘ কে কিনা কি ভেবে বসেছে। মেঘ : এবার কিছু বলিনি তারমানে এইনা আমি সবসময় তোমাকে বুঝাবো সবসময় আগে সত্যি যাচাই করবে তারপর সব ভাববে। রুহি : হুম। বাসায় যেতে হবেতো। মেঘ : আর একটু থাকো রুহি : কিন্তু মেঘ রুহির ঠোটে আঙুল রেখে থামিয়ে দেয় মেঘ এইটা ভেবে সমন্ধি যখন জানেই আর কিসের টেনশন। মেনেজ করে নিতে পারবে রোহান। কিন্তু রুহি নিজেও জানেনা রোহান ওদের সম্পর্কে সব জানে। রোহান নিজেই বলেছে রুহি যেনো কিছুতেই জানতে না পারে। পেছন থেকে সব ধরনের হেল্প সে করবে বলেছে মেঘকে। এইসব ভেবেই একটু হেসে নেয় মেঘ। রুহি : বাসা থেকে এখন বেরোনো পসিবল না কারন এখন তো কলেজ নেই একসপ্তাহ দেখা করতে পারবেনা। তারপর কোচিং এ ভর্তি হলে দেখা হবে। মেঘ : তোমার জন্যই তো ভালো হয়েছে বলো রুহি : মানে? মেঘ : তুমিই তো দূরে দূরে থাকো রুহি : ইমোশন নিয়ে মজা করছো তাইনা? ওকে কোনো ব্যাপার নয় বলেই উঠতে নিলে মেঘ আবারো জড়িয়ে ধরে মেঘ : মজা করলাম তো আচ্ছা তো কি হয়েছে বাসায় চলে যাবো তোমার রুহি :পাগল তুমি? ভাইয়া জানলে কি হবে জানো? মেঘ : একদিন তো জানবেই আচ্ছা বাদ দাও। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে গোসল করানোর ইচ্ছা ছিলো মহারানী রুহি : একদম না এমনিতেই ঠান্ডা আমার। মেঘ কিছু হবেনা যাও কাবার্ডে তোমার আগের রেখে যাওয়া ড্রেস্টা আছে ওইটা পড়ে আসো। রুহি : পারবোনা আমি বাসায় যাবো মেঘ : কোনো ব্যাপার নয় আমিই করাতে পারি বলে উঠতে নিলে রুহি : যাচ্ছিতো। রুহি কাবার্ডে একটা কালো শাড়ি দেখতে পেলো ম্যাচিং ব্লাউজ। ইচ্ছে করছে শাড়ি পরে মেঘকে চমকে দিতে কিন্তু সময় ইতো নাই তাই আরেকদিনের জন্য ইচ্ছে ঝুড়িতে জমা রেখে দেয়। তারমধ্যেই মেঘ ডাকতে শুরু করে ওর এখনি বের হতে হবে কি ইম্পরট্যান্ট কল আসছে তাই রুহিকে নিয়েই বেড়িয়ে পড়ে। বাসায় আসতেই বাবার মুখোমুখি হতে হলো রুহিকে। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো রুহি। বাবা হঠাৎ। ব্যবসায়ের কাজে খুব বেশিই মালয়েশিয়া তে থাকতে হচ্ছে বাবাকে। হঠাৎ করে বাংলাদেশ এ তাও আমাকে না জানিয়ে। কিছু জানতে পারলো নাকি ভেবেই গা শিউরে উঠছে রুহির। এই ভয়ের মধ্যে ভাইকে কে দেখে ভরশার হাতটা খুঁজে পেলো রুহি : কেমন আছো বাবা? বাবা : এইতো আলহামদুলিল্লাহ। অসুস্থ শরীর নিয়ে বের হবার কি দরকার ছিলো? রোহান : আমিতো সাথে গিয়েছিলাম বাবা ওর কোচিং এর ব্যাপারে আম্মু : আমাকে বলে গেলেই হতো রোহান : আমি গিয়েছিলাম তাই আর জানাতে চায়নি হয়তো কিরে আম্মুকে বলে যাসনি? রুহি : আমিতো মায়াকে নিয়ে যাবো ভাবছিলাম পরে ভাইয়া নিয়ে গেলো। বাবা : ওকে তোমরা রুমে যাও খাবার টেবিলে কথা হবে। বলে বাবাও রুমে চলে গেলো রুহি এসে রোহানকে জড়িয়ে ধরে রুহি : থ্যাংকস ব্রো। রোহান : ভাগ্য ভালো আমি ছিলাম এতো দেরী কেনো করছিলি মায়ার বাসায়? যদিও রোহান জানে রুহি কোথায় ছিলো। মনটা খুব ফুড়ফুড়ে লাগছে রুহির। রুহি :এখন কি বলবো? ভাইয়া আমি ফ্রেশ হয়ে আসি কেমন। বলেই চলে গেলো রোহান ও হালকা হেসে চলে গেলো রুহি আজ পর্যন্ত তাকে মিথ্যা বলতে পারেনা যখনি মিথ্যা বলতে হবে ব্যাপারটা পুরো পরিবর্তন করে ফেলে কিন্তু মিথ্যা বলেনা বোনের এইরুপ টা খুব ভালোলাগে রোহানের। এদিকে মেঘ বাবার কল পেয়েই সিরাজগঞ্জ ছুটে যায়। সিরাজগঞ্জ মেঘদের দেশের বাড়ি ওখানেই সবাই থাকে মেঘ আর আকাশ দুজন বাহিরের অফিস দেখাশুনা করে তাই পরিবারের বাহিরে থাকে। ওদের জয়েন ফেমিলি তিন দুই চাচা আর বাবাকে নিয়েই একসাথে পুরো পরিবার। বাসায় পৌঁছাতেই অনেক মানুষের সম্মুক্ষীন হতে হয় মেঘকে। পরিবারের সবাই বসে আছে। প্রথমে ভয় পেকেও সাহস করে সবার খোজ খবর নিয়ে বাবার পাশে বসে পরে। বাবার পাশে বসে পরে। কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাষ মেঘ বুঝতে পারছে চলবে


( প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি আমার গল্প পরে ভালোলেগে থাকে তাহলে আরো নতুন নতুন গল্প পড়ার জন্য আমার facebook id follow করে রাখতে পারেন, কারণ আমার facebook id তে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গল্প, কবিতা Publish করা হয়।)
Facebook Id link ???
https://www.facebook.com/nishe.ratri.9809

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে