তুমিময় পর্ব : ২
গল্পবিলাসী – Nishe
বেড়েই যাচ্ছিলো
মেঘ : এই পাগলি এইভাবে কান্না
কেনো করছো তাকাও আমার দিকে
তাকাও বলছি কিছু হয়নিতো আমার। আর
কি করে হবে? এই মেঘপরী
থাকতে এই মেঘের কি হবে ?কে
নিবে এই উষ্ণ ঠোটের ছোয়া। কে
বলবে প্রতিটা ভোর তুমিময় চাই কবে
নিয়ে আসবে তোমার কাছে। এই
আবদার গুলো পূরনের জন্য হলেও
তো আমি বাঁচতে চাইগো বউ।
রুহি : সেই কান্নাময়ী মুখটা কতটা সময়
পার করেছে শুধু মেঘের
চোখেচোখে তারপর মুখখুলে
শুধু এইটাই বললো ভালোবাসি
মেঘ : আমিওতো ভালোবাসি আমার
পাগলি বউ। এমন করে কেউ মাত্র
তো কয়েক ঘন্টা।
রুহি : আর একদিন এমন করলেনা
মেঘ : মাথা খারাপ! এই যে কান ধরেছি
আর জীবনেও না। কি করবো
বলোতো খুব দেখতে ইচ্ছে
করছিলো আর তাছাড়া কাল রাজশাহী
যেতে হবে কিছুদিন সময় লাগবে কাজ
কমপ্লিট করতে এতোদিন আমার
মহারানীকে ছেড়ে কিভাবে
থাকবো? আর তাইতো তোমাকে
নিয়ে একটু সময় কাটাতে চাইছিলাম। কিন্তু
তুমি তো সেই তুমি! যে কিনা একমাত্র
কলেজ ছাড়া আমার সাথে দেখা
করবেই না তাই এমন করতে হলো
রুহি : ইস আমাকে বললে আমি বুঝি
আসিনা
মেঘ : কিভাবে আনতে হয় সেটা
নাহয় নাই বল্লাম। আচ্ছা এখন কথা কম
ফ্রেশ হয়ে আসো যাও।
রুহি : পারবোনা আমি বাসায় যাবো
আম্মুকে বলে আসিনি
মেঘ : পারবেনা শিয়র তো?
রুহি : একদমমম যখনি মেঘের দিকে
তাকায় মেঘকে এগিয়ে আসতে
দেখেই
রুহি : আচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি
মেঘ : এখন কেনো যাচ্ছো জান?
আমিতো কিছুই বলিনি বলেই হাসতে
লাগলো
রুহি : পুরাই বদের ডিব্বা তুমি মাথায় খালি বদ
বুদ্ধি ঘুরঘুর করে।
মেঘ : যাই হইনা কেনো তোমারি
জামাই জানেমান বলেই হাসতে
লাগলো।
ফ্রেশ হচ্ছিলাম তার মধ্যেই দরজায় নক
হলো
রুহি : আবার কি হলো?
মেঘ : ড্রেস নাও
রুহি : লাগবেনা এইটা তোমার বাহানা আমি
বুঝিনা
মেঘ : খুলবে না ভাঙবো
রুহি : এইটাই পারো শুধু যত্তোসব
বলে দরজা খুলতে আর হলোনা
মেঘ চলে এসেছে অলরেডি।
কিছুসময় পর।
দুজনেই ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে
এলো
রুহি : এই ভেজা চুল নিয়ে বাসায় যাবো
কিভাবে।
মেঘ : যেতে দিলেতো
রুহি : মানে?
মেঘ : মানে হলো মেম আজরাতটা
হবে আমার তুমিময়। যেখানে হাজার বার
আমার মাথার চুল ঝাঁকাবে আর ঝড় যাবে
আমার নাক গলা এইগুলোর উপর।যদিও
আমার এইতুমিময় চাইনা মধুময় চাই
রুহি :এইগুলোই দরকার তোমার। আর
উল্টাপাল্টা কথা বললে কিন্তু এখনি
বেড়িয়ে যাবো মেঘ শুধু হাসলো।
পাঁজাকোলা করে পাশের রুমে নিয়ে
এলো খুব অন্ধকার রুমটা। রুহিকে
নামিয়ে লেপটপে কি যেনো
করছিলো হঠাৎ করেই পাশের
ওয়ালস্ক্রীনে আমার আর মেঘের
কিছু স্মৃতিময় ছবি ভেসে উঠলো।খুব
স্লোলী ভাবে চেঞ্জ হচ্ছে
ছবিগুলো। অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি
হয়ে গেলো। মৃদু আলো তারউপর
ভালোবাসার মানুষের পাশে নিজেকে
খুব হ্যাপি মনে হচ্ছিলো এই
মানুষটাকেই ডিভোর্স দিতে
উঠেপড়ে লেগেছিলাম।
ইস কি ভূলটাই না করতে যাচ্ছিলাম।
মেঘকে ছাড়া নিজেকে ভাবতেই
শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। মেঘকে
জড়িয়ে মেঘের বুকে মাথা গুঁজে
আছে এই মানুষটা আমার ভাবতেই
নিজেকে পৃথিবীজুড়ে সবচেয়ে
সুখী মনেহয়।
মেঘ : মন ভালো হলো আমার
মহারানীর?
রুহি : হুম।মেঘের পায়ে পা রেখে
দুহাতে মেঘের গলা জড়িয়ে ধরে
তাকিয়ে আছি
মেঘ : মৃদু হাসছে মেঘ।
মায়া : সরি সরি আমি কিছু দেখিনি বলেই
চোখ চেপে ধরলো মায়ার কথা
শুনে দুজনেই আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে
গেলো
রুহি : তুই?
মেঘ : হ্যা আমিই বলেছি মায়াকে আর
মায়ার বয়ফ্রেন্ড কে আসতে
রুহি : কিন্তু কেনো?
মেঘ : কারন আমরা যেমন
টাইমস্পেন্ড করতে ইচ্ছা হয় ওদের
ওতো ইচ্ছে হয় তাইনা? আর আমার
মহারানী তো মায়ার বাসায় ই আছে
বলেই হেসে দিলো
মায়া : আমি ডিস্টার্ব করতে চাইনি তুই
এসেছিস কিনা যাস্ট দেখতে আসছি
ওকে আসছি বলেই চলে গেলো।
মেঘ : তুমিতো মায়ার বাসার কথা বলেই
এসেছো জানি আর মায়াকে নিয়ে
একটা কাজে বেড়িয়েছো সো
লেইট
হলেও কোনো প্রবলেম নাই
আটটার মধ্যে পৌঁছে যাবে।
রুহি : ওহু যাবোনা থাকবো
মেঘ : মুখেই বলেন কাজে তো
ঢেড়স। রুহি : মুখটা মলিন করে আমার না
খুব ভয় করছে যদি বাবা না মেনে নেয়
তখন কি হবে? আর ভাইয়া?
মেঘ : তোমাকে কিচ্ছু ভাবতে
হবেনা যা করার আমিই করবো তুমি
রিলেক্স মোডে লেখাপড়া করো।
আর কেনো দিবেনা? আমাকে
কোনদিকে অযোগ্য মনেহয়
তোমার?
রুহি : কিছুই জানিনা আমি কিন্তু খুব ভয় হয়
তো
মেঘ : কোনো ভয় নেই চলো
খাবে। দুজনে মিলে খাবার খেয়ে
বেলকনিতে এলো। রুহিকে পেছন
থেকে জড়িয়ে আছে মেঘ
মেয়েদের ভেজা চুল সত্যিই
মাদকীয় ভাব এনে দেয় রুহির চুলে
মুখ ডুবিয়ে আছে মেঘ হাত দুটো
কোমড়ে খেলা করে বেড়াচ্ছে
স্পর্শ অনুভবে মাতোয়ারা রুহি।
মেঘ : কফি? চা? আইসক্রিম?
রুহি : ওহু
মেঘ : তাহলে কি ফুসকা?
রুহি : পেছন ফিরে মেঘের গলা
জড়িয়ে দুষ্টু হাসছে
মেঘ : চোখের ইশারায় হাসির কারন
জানতে চাইলে রুহি তার উষ্ণ ঠোট দুটি
মেঘের ঠোটে মিলিয়ে দিলো।
মেঘ পুরাই শক।কিছুক্ষন পর
মেঘ : আমার ইজ্জতের ফালুদা করে
দিলা এইটা কি করলে গো
রুহি : একদম চুপ বেশি করলে কিন্তু
রাজশাহী যাওয়া বন্ধ করে দিবো
মেঘ : প্রেগন্যান্ট করে দিবে?
রুহি : চোখ বড় করে তাকিয়ে আছি
এমন কেনো মেঘ মুখে কিছুই
আটকায় না
একদম কামড়ে দিবো কিন্তু তখন
সিগন্যাল নিয়া যাইয়েন আপনি বলেই
রুমে এসে বোরকা পড়তে শুরু
করলো
মেঘ : এখনি চলে যাবে?
রুহি : তোমার বদ কথা শুনার ইচ্ছা নাই
আমার বাইদা ওয়ে কাল্ ফুপ্পির বাসায়
যেতে হবে দুদিন থেকে চলে
আসবো
মেঘ : আর কে যাবে?
রুহি : এম নট এ চাইল্ড স্যার আমি নিজেই
যেতে পারি
মেঘ : একা যাওয়া লাগবেনা রোহান
নিয়ে গেলে যেও আর নাহলে
দরকার নেই
রুহি : ওকে দেখা যাক।
মেঘ : মাত্র দুদিন ফিরে এসে
যেনো বাসায় শুনতে পাই বিকেল
চারটার মধ্যে। আমি ফিরতে সন্ধ্যা
হবে তারপরদিন সকালে এখানে
আসবে মনেথাকেযেনো
রুহি :ওকে।
মেঘ : হুম। মায়া ড্রইংরুমে আছে
রুহি :কেনো ওর বয়ফ্রেন্ড?
মেঘ : চলে গেছে গেইটের
শব্দ শুনেছিলাম
রুহি : আমার সাথে কেনো পরিচয়
করিয়ে দাওনা
মেঘ : সময় হলেই দিবে ওকে বাদ
দাও আটটা বেজে যাচ্ছে চলো
বেড়িয়ে পরতে হবে আর মায়ার বাসায়
গিয়ে রোহানকে কল করে আসতে
বলবে তারপর ওর সাথে বাসায় যাবে
রুহি : ওকে মহারাজ। মেঘ এগিয়ে
এসে রুহির কপালে চুমু খেলো
চলো মেঘ ড্রাইভ করছে রুহি তার
পাশে আর পেছনে মায়া তার
বয়ফ্রেন্ডের সাথে মেসেজিং
করে যাচ্ছে। মেঘ ওদেরকে মায়ার
বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে এলো
কিছুক্ষন পরই রুহি টেক্সট দিলো বাসায়
চলে এসেছে। রুহি রুমে এসে
আগে বোরকা খুলে ড্রেসটা
চেঞ্জ করে নিলো কেউ
দেখলে অবস্থা খারাপ তাই ইচ্ছে না
থাকা সত্ত্বেও চেঞ্জ করতে হলো
আর রাতে টুকটাক কথা বলেই ঘুমিয়ে
পড়েছিলো রুহি। আর আজ সকালেই
চলে এলো ফুপ্পির বাসার
উদ্দ্যেশে।
ভাবনায় ছেদ ঘটলো মোবাইলের
রিংটোনে। স্ক্রিনে মেঘের ছবিটা
ভাসছে। কিন্তু কিছুতেই রিসিভ করতে
ইচ্ছে হচ্ছিলোনা তাই আর রিসিভ ও করা
হয়নি। মোবাইলটা সাইলেন্ট মোড
করেই ঘুমিয়ে পরলো। অতিরিক্ত
ভিজার জন্যই মাথাটা কেমন ভার হয়ে
আছে মনেহচ্ছে জ্বর আসবে।
চোখ গুলোও খুব জ্বলছে। চোখ
খুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে
আবিষ্কার করলাম পাশে তাকাতেই ভাইয়া
আর ফুপ্পি দাঁড়িয়ে আছে।
রোহান : তুই কি আসলেও মানুষ হবিনা?
অলওয়েজ প্যারার মধ্যে রাখোছ
আমারে। বাসায় তো একদন্ড শান্তি
দেসনা এখানে আইসাও না। রুহির চোখ
দিয়ে পানি পরছে মাথাটা তীব্র ব্যাথা
করছে মাইগ্রেনের ব্যাথাটা মনেহয়
আবার শুরু হয়েছে।
রুহি : মাথা ব্যাথা করছে বলেই কান্না শুরু
করলো তারমধ্যেই রুবা এলো
খুশিতে আত্নহারা হয়ে আছে।
মনেহয় সব ঠিক হয়ে গেছে।
রুবা : কিরে রাঁধুনি তিনদিন পর ঘুম শেষ
হলো? রুহি হালকা হেসে উঠলো
রুহি :পেঁচি খুব খুশি মনেহচ্ছে?
রুবা : হু ফিফটি
রুহি : আবার ফিফটি কেনো?
রুবা : এইযে তুই অসুস্থ হয়ে গেলি
তারজন্য ফিফটি মন খারাপ আর রায়হানের
সাথে সব ঠিক হয়ে গেছে তাই বাকিটা
ভালো। রায়হানের নামটা শুনেই
আবারো মেঘের কথা মনেহলো
খুব কষ্ট হচ্ছিলো কেনো মেঘ
এমন করলো আমার সাথে। আজকে
রুহিকে বাসায় নিয়ে যাবে। তাই
হসপিটালের যাবতীয় কাজ শেষ করে
ওকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলো
রোহান। খুব জ্বর রুহির। ডাক্তার কিছুদিন
রেস্ট এ থাকতে বলে দিলেন। বাসায়
আসাতেই মা রুহিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে
পড়লো। একটু পর পর খাওয়া। মেডিসিন
খুব বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলো।
বিকেলবেলা কিছুটা ভালো লাগছিলো
তাই ভাবলাম একটু মায়ার বাসা থেকেই
ঘুরে আসি পাশের গলিতে বাসা তাই আর
বোরকা পড়তে হয়নি গলির মাথায়
আসতেই পিছন থেকে কেউ মুখ
চেপে গাড়িতে তুলে ফেলে। গাড়ির
গ্লাস উঠিয়ে মুখটা ছেড়ে দেয়। আর
একটু হলেই মনেহয় দমটা বেড়িয়ে
যেতো খুব জোড়ে নিঃশ্বাস
নিচ্ছিলাম। কে এমন করলো তাকাতেই
দেখি মেঘ। এবার যেনো রাগটা
আরো বেশি বেড়ে যায়। চুপচাপ
বসে আছে রুহি যা বলার বাসায় গিয়েই
বলবে এখানে কোনো ঝামেলা
করবেনা। বাসার সামনে আসতেই
বের হয়ে বাসার ভেতরে চলে এলাম
ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি মেঘ
লক খুলতেই ভিতরে চলে এলাম।
মেঘ ভেতরে এসে খুব জোড়ে
দরজাটা বন্ধ করে দিলো। রুহিকে
দেখেই খুব রেগে গিয়েছিলো
মেঘ। যখনি রোহান কল দিয়ে
বললো রুহি বেরোবে এখন অফিস
থেকেই সেখানে গাড়ি নিয়ে
অপেক্ষা করছিলাম। আসতেই মুখ
চেপে নিয়ে এলাম। পুরো তিনদিন
কোনো খবর নেই মোবাইল বন্ধ
রোহানেরও মোবাইল বন্ধ কিছুতেই
যোগাযোগ করতে পারছিলাম না
টেনশনে মাথা পুরাই কাজ করা বন্ধ
হয়ে গিয়েছিলো। গতকালই রোহান
ফোন দিয়ে সব বললো এতো
কেয়ারলেস কেনো মেয়েটা?
মেঘ : রুহির সামনে এসে খুব শখ না
তিনঘণ্টা গোসল করার আজ দেখবো
কতো গোসল করতে পারো তুমি
বলেই টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে
যেতে নিলে
রুহি চেঁচিয়ে উঠলো রুহি একদম
ধরবেনা আমাকে
চলবে