তুমিময় পর্ব-০১

0
3312

#গল্প-তুমিময়
#Aysha_Khan
#পার্ট ১

মেহেদী অনুষ্ঠান থেকে গরুর মতো টানতে টানতে আদনান ভাই আমাকে তার রুমে নিয়ে যাচ্ছেন। ভয়ে গলা শুকিয়ে আমার! কী কী অন্যায় করেছি আজ ভাবতে লাগলাম একটু পর যে সেগুলোর শাস্তি ভোগ করতে হবে আমাকে। তীক্ষ্ণ হাতে আমাকে টেনে রুমে ঢুকিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললেন উনি! ইতিমধ্যে কেঁদে দিয়েছি আমি হাতের ব্যথায় তবুও দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম! আদনান ভাই ততক্ষণে তার চমৎকার পুরুষালী কণ্ঠে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,
‘ অসভ্য মেয়ে, শরীর দেখিয়ে শো অফ করতে খুব ভালো লাগে তোমার? আমার নিষেধ অমান্য করে শাড়ি পরে অনুষ্ঠানে কোন সাহসে গেলে তুমি? পাখা গজিয়ে উঠেছে বাসায় নেই বলে? তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে আমার কথা অমান্য করার শাস্তি দিবোনা?’

কথা গুলো তীক্ষ্ণ স্বরে বলে আর সময় নষ্ট করলেন না! কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। আমার মনে হলো। গাল ফেঁটে গিয়েছে, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে গালে, যার ফলস্বরূপ গাল জ্বরে যাচ্ছে! নিঃশব্দে ক্রন্দনরত, হতবিহ্বল অবস্থায় আমি শুধু এক পকল। অত্যন্ত অত্যধিক রাগান্বিত আভা মুখ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা আদনান ভাইয়ের দিকে তাকালাম। তার সুদর্শন বলিষ্ঠ চেহারার চোয়াল অসম্ভব শক্ত, তার শক্ত চোয়াল দেখেই বুঝতে বাকি রইলোনা আদনান ভাই ভীষণ রেগে! কিন্তু কেন শুধু মাত্র আমি শাড়ি পরেছি বলে? নিচে সকলেইতো পরেছে শাড়ি আদনান ভাইকি সকলকেই এভাবে হামকি, ধামকি, শাস্তি দিবে? না কাউকে দিবেনা শুধু আমার বেলাতেই যত শাস্তি! চোখ রাঙানো, চড়, থাপ্পড় আরও কতকি! বড্ড স্পেশাল আমি! ভাবনার মাঝেই আদনান ভাই স্তম্ভিত কঠিন স্বরে দাঁত কিরমির করে, আমাকে শাসিয়ে বলে উঠলেন,

‘লাস্ট টাইম অয়ত্রী! এটাই লাস্ট টাইম। আর একদিন, আর জাস্ট একদিন যদি আমি তোমাকে হায়াদ এর সাথে দেখেছি। ছেলেদের সাথে ঘেষাঘেষির অপরাধে আমি তোমাকে চিবিয়ে খাবো! মার্ক মাই ওয়ার্ড? ‘

এতটুকু বলেই আমার দিকে শীতল, স্থির, পূর্ণ দৃষ্টি মেলে চাইলেন উনি! তার শীতল চাহুনিতে ভেতর টা নড়ে উঠলো! বাম গালে হাত দিয়ে ভয়ে পাঁচ ছয় কদম পিছিয়ে গেলাম আমি। আমাকে পিছাতে দেখে দিগুণ রেগে গেলেন মনে হয় উনি। অর্থাৎ চিল্লিয়ে বললেন,

‘গেট আউট!’

এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করলাম না আমি! ঠোঁটে হাত চেপে ক্রন্দনতর অবস্থায় দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম তার রুম থেকে। রুম থেকে বেরুতেই আদৃতা আপুর মুখোমুখি হলাম। আপু এই রুমেই আসছিলো। এই মহান নির্দয় মেয়ে আর কেউ নন! পাষণ্ড, জালিম আদনান ভাইয়ের একমাত্র গার্লফ্রেন্ড! আপু আমাকে এভাবে ছুটে তার বয়ফ্রেন্ড এর রুম থেকে বেরুতে দেখে আমাকে দ্রুত বললেন,
‘আলো দাঁড়ায়ও কি করছিলে তুমি আদনানের ঘরে? এভাবে ছুঁটে কোথা যাচ্ছো? ‘

আমি বাম গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। আপু আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে আমার চিবুকে হাত রেখে মুখ উপরে তুলে আমার ক্রন্দিত মুখ দেখতে দেখতে বিদ্রুপের স্বরে বললেন,

‘ গালে স্পষ্ট মারের দাঁগ! আদনান মেরেছে নিশ্চয়ই? হ্যাঁ, আর মারবে নাই বা কেন। নিজের পরিচয় কী জানার পরেও হায়াদের সাথে বেহায়া দের মতো কেন করো তুমি! পুরো মেহেদী অনুষ্টানে হায়াদের সাথে ডলাডলি, ঘেষাঘেষি করে গেছো! আমি হলে তোমাকে বাড়ি থেকেই বের করে দিতাম। যানতো একটা প্রবাদ আছে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ঢের ভালো!’

অপমানে চোখ দিয়ে ঝরনার মতো পানি উপচে পরছে! কেঁদে কেঁটে নাজেলাম আমি যখন দৌড়ে চলে যাবো এই নির্দয় মেয়েটার সামনে থেকে। কেউ স্বজরে আমার হাত চেপে ধরলো, আমি সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম। হায়াদ দাঁড়িয়ে, রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জালিম লোকটার নির্দয় গার্লফ্রেন্ড এর দিকে অর্থাৎ আদ্রিতা আপুর দিকে। চোখে চোখে সংঘর্ষ লেগে গিয়েছে দুজনের মধ্যে! এদিকে আমি ভয়ে ভয়ে একবার হায়াদ আমার হাত চেপে ধরে রেখেছে সেদিকে তাকাচ্ছি। আর একবার আদনান ভাইয়ের কামরার দিকে তাকাচ্ছি। এবং হায়াদের থেকে হাত ছাড়াবার জন্য মুচরাচ্ছি! কারণ একটাই আদনান ভাই এই দৃশ্য দেখলে আমার হাতটাই কেঁটে জলে ভাসিয়ে দিবে। আমি সেটা মোটেও চাইনা! এদিকে হায়াদ রাগী গলায় বিদ্রুপের স্বরে আদৃতা আপুকে খোঁচা মেরে বলল,
‘ নিজের বয় ফ্রেন্ডকে নিজে হেন্ডেল করতে পারোনা! আর ঝাজ দেখাও নির্দোষ অয়ত্রীর সাথে। যার জন্য তোমার বয়ফ্রেন্ড এক প্রকার মরিয়া? তা তুমি কেমন গার্লফ্রেন্ড আদৃতা যে তুমি থাকতেও তোমার বয়ফ্রেন্ড অন্য একটা মেয়ে নিয়ে এতো পজেসিভ? তোমাকে আসলেই আদনান ভালোবাসে তো? আমার তো অন্যকিছু মনে হয়!’

বলে হায়াদ রহস্যময় হাসলেন! আদৃতা আপু আমি দুজনেই স্তব্ধ। আমি টাস্কি খেয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করেদিলাম হায়াদ ভাইয়ার কথা শুনে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম! কি বলছে এগুলো উনি? আগুনে ঘী কেন ঢালছেন এভাবে? আদৃতা আপু আমাকে একদম পছন্দ করে না তার একটাই কারণ আদনান ভাইয়ের আমাকে নিয়ে ওভার পজেসিভনেস। তার উপর সেটাই আঙুল তুলে মিন করে খোঁচা মেরে আদৃতা আপুকে বলা হচ্ছে। আদৃতা আপু নিশ্চয়ই দিগুণ রেগে গেছেন। আমি আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম আপু আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে! ইয়া আল্লাহ… আমি কিছু বলবো হায়াদকে! সেই অবস্থায় আদনান ভাই তার রুম থেকে বেরুলেন। এবং ডান পাশে আমাদের দিকে চোখ পরতেই সবার আগে আমার হাতের দিকে তাকালেন উনি। যা কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ও স্পষ্ট দেখলাম আমি! চমকে গেলাম, ভেতরটা শূন্য হয়ে গেলো! ভয়ে দিশেহারা হয়ে হায়াদ ভাইয়ার হাত ঝটকায় ছাড়িয়ে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলাম দরজা লাগিয়ে বসে পরলাম মেঝেতে!

আদনান ভাইয়ের পাশের রুমটাই আমার। এটা একটা ফাম হাউজ বিশাল বাড়ি। আজ আমার ছোট্ট মামার মেয়ে আহির মেহেদী ছিলো। এটা হায়াদের ফাম হাউজ ঢাকা থেকে কিছু দূরেই বটে। আর হায়াদের বড় ভাই আয়াত তার সাথেই আহির বিয়ে। আয়াত সম্পর্কে আমার বড় মামা অর্থাৎ আদনান ভাইয়ের বাবার বন্ধুর ছেলে। দুই ফ্যামিলিতে অনেক মিল রক্তের সম্পর্ককেও হার মানায় যেন! তাই তো দুই ফ্যামিলি একসাথে থেকেই আহি, আয়াতের বিয়ে দিচ্ছে বিশাল আয়োজন করে! সব ছাপিয়েও আদনান ভাই আমাকে হায়াদের পাশে সহ্য করতে পারেনা। যার জন্য এতো কিছু হয়ে গেলো। তবে সন্ধ্যায় আমাকে শাড়ি পরতে মানা করেছিলো সে।কিন্তু বরাবরের মতোই গার্লফ্রেন্ড রেখে আমার জীবন ত্যাজপাতা করায় কিছুটা ত্যাড়ামো করেই আমি তার কথা শুনিনি! আর এত সুন্দর কলাপাতা রঙা শাড়িটা পরার লোভ সামলাতে পারিনি। যদি ও বাড়িতে থাকলে তার কথা অমান্য করার সাহস হতোনা আমার যেহেতু একটা বিয়ে বাড়ি আছি আমারা চারপাশে মেহমানে ভরপুর লোক লজ্জায় কিছুই করবেনা ভেবেছিলাম সেগুরে বালি আমার ভাবনা! সে আমার ভাবনার বাহিরে আমার বুঝার উচিৎ ছিলো! তার মধ্যে লজ্জার ‘ল’ ও নেই সেটাও মনে রাখার উচিৎ ছিলো! তা না হলে কী আর ছোট বনের বিয়েতে নিজের গার্লফ্রেন্ডর কোমর চেপে ধরে ঘুরেবেড়ায় বিয়ে বাড়ি জুড়ে! যেখানে ছোটো বড় সকলে উপস্থিত এসব তার ধারাই সম্ভব! ইনফেক্ট তার ধারা এভরিথিং ইজ ফ্যায়ার এন্ড পসিবল। কারণ কেউ তাকে কিছুই বলতে পারবেনা! এটা ওয়ান এন্ড অনলি আদনান ভাই বলে কথা!

মেঝেতে বসে রীতিমতো হাপাচ্ছি! আর হাবিজাবি ভাবছি ভয়ে শরীর মৃদু কাঁপছে এখনও। লোকটাকে প্রচণ্ড ভয় পাই। ভয় না পেয়েও উপায় নেই। তার দয়াতেই বেঁচে আছি! না চাইতেও তার অযুক্তিযুক্ত শাসন আমাকে হজম করতে হয়। বড় মামা, মামী, ছোট মামা, নানু আরও বড়বড় মেম্বার বাসায় থাকতেও আমার ব্যাপারে সকল সিদ্ধান্ত ফয়সালা সে নিবে! কেউ কিছু বলবেনা বলতে পারবেনা কারণ তার রাগ। তার রাগকে সবাই ভয় পায়। সেখানে সে বাঘ আমি ইঁদুর আমি কে? উনার সিদ্ধান্ত অমান্য করার! উনি খুন করতেও আমাকে দুবার ভাববেনা। আমাকে তার সহ্য হয়না। তাই আমাকে প্রাণ খুলে উনি বাঁচতে দেন না!

আমার মা নেই। সেই ছোট্ট থেকেই। বাবাই আর দাদুর সাথেই বড় হই আমি। যখন ক্লাস নাইনে ছোট্ট চাচি সবাইকে বুঝিয়ে বিয়ে ঠিক করে ফেলে আমার। সেটা নানুর বাসায় সবাই জানতেই সেই খবর বাসাতের গতিতে আদনান ভাইয়ের কানে চলে গেলো ! তারপর আমার জীবন বদলে গেলো! আদনান ভাই আমার সামনে আমার বাবাকে চরমভাবে শাসালো। এতো ছোট্ট মেয়েকে বিয়ে দিতে চেষ্টা করার জন্য। ভয়ে আদনান ভাইয়ের হাতের নিচে আমি রীতিমতো ফোফাচ্ছিলাম তার গ্রাম কাঁপিয়ে চিৎকারে! ভয়ে নাকি অন্যকিছু যানা নেই কিন্তু বাবা কেন যেন সেদিন মাথা নিচু করে ছিলেন। আর আদনান ভাই? সে আমাকে সবার সামনেই তুলে নিয়ে এলো সেদিনই নানুবাড়ি! ব্যাস আর ঢাকা ছেলে মফস্বল শহরে যাওয়া হয়নি কোনদিন। বাবা দাদু প্রায় প্রতি মাসে আমার সাথে দেখা করে যায়। এখন যদিও দাদু বেঁচে নেই কিন্তু আমাকে তুলে আনাতে দাদু, বা বাবাইয়ের চোখে কষ্ট কোনও দিন দেখিনি আমি। কিন্তু আমার বেশ কষ্ট হতো এখানে। সবাই আমাকে আপন করে নিলেও অনেক ভালোবাসলেও যে তুলে নিয়ে এলো সেই আমাকে চোখের কাঁটার মতো বিহেভিয়ার করতে লাগলো। শুধু শুধু আমার সাথে নির্দয় জালিমের মতো আচরণ আমার ছোট মনকে কষ্ট দিতো খুব! তাকে এড়িয়ে চলাও দায় তাতেও শাস্তি। এই যেমন মাথায় পানি ঢেলে দেওয়া আমার ঘুমন্ত অবস্থায়! তার রুম পরিষ্কার করানো, বাথরুম পর্যন্ত পরিষ্কার করাতো সে। কেঁদে কেঁটে জীনের চাঁরটি বছর চলে যায়। আমি বুঝে নেই আমাকে ঐ জালিমের অত্যাচার সহ্য করতেই হবে। তানাহলেই বেশি কষ্ট। এক সময় মানিয়ে নেই। তারপর বুঝতে পারি সে আমাকে হয়তো পছন্দ করে! কিন্তুনা আমি যখন ভেবেই নেই সে আমাকে ভালোবাসে? ঠিক তখন সে আমাকে তার গার্লফ্রেন্ড আদৃতা আপুর সাথে পরিচয় করিয়ে আমাকে বলে আমি তার পার্মানেন্ট কাজের লোক। আমার সকল ভাবনা তখন সমুদ্রের জলেভেসে যাচ্ছে! কেঁদে কুঁটে আমি যখন নাজেহাল। অনেক বছর ধরে নাকি সে আদৃতা আপুকে পটাতে চেষ্টা করছে সত্যি পটে যাওয়াতে! রিলেশনে যাওয়ার খুশিতে তার ফ্রেন্ডদের ট্রিট দিবে বলে সেই আমাকে দেই একগাদা স্ট্রিট ফুড বানাতে বাধ্য করলো!

বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছিলো কত নির্দয় লোক! তখনবাড়ির সবাই আমাকে সান্ত্বনা দেয় এই বলে। গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছে তারমানে তোকে আর বিরক্ত করবেনা। তোর তো খুশি হওয়ার কথা বোকা মেয়ে! আর তুই কাঁদছিস? চিন্তায় কপালে ভাজ পরেলেও সবার যুক্তিতে আমি তখন সত্যি খুশি হয়ে যাই। আসলেই গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে নিশ্চয়ই আমি কী করিনা করি এসব সে দেখবেনা? এতবড় জালিম, আমার একমাত্র শনি আমার কপাল থেকে সরে যাবে ভেবে আমি রাতে শান্তির ঘুম দেই। অতপর খুশিতে আপ্লুত হয়ে আমি পরদিন সেই মাঞ্জা মেরে কলেজ যাই। কপালের শনিতো যায়নি দিগুন হয়ে আমার জীবনের ব্যান্ড আজ পর্যন্ত বাজিয়ে যাচ্ছে আজও! সেদিনের পর আমি এক্সাম ছাড়া কলেজ যেতে পারতাম না। একা বাইরে বেরুনো সম্পূর্ণ নিষেধ হয়ে গেলো। বাড়ির কেউ আর আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভুল করলেন না। উল্টো ভয়ে নিজেরাই গুটিয়ে আজ পর্যন্ত।

আমি এক নিরহপ্রাণী যে মানুষ হয়েও চিরিয়াখানায় বসবাস করছি! শুধু মাত্র আদনান ভাইয়ের জন্য। ব্যাটা আস্ত খাটাশ তেমনি একটা জুটিয়েছে আদৃতা ফাদৃতা। সে আমাকে দেখলেই জ্বলতে থাকে টিউব লাইটের মতো। তার ধারণা আদনান ভাইকে আমি ফাঁসিয়ে রেখেছি। কিন্তু উনি আজও বুঝলেন না আমি নিজেই ফেঁসে আছি। যার কাছে ফেঁসে আছি তাকে ফাঁসানো আমার পক্ষে অসম্ভব!

আদনান ভাই আমার আশেপাশে কোনও ছেলে! কাজিন ভাইদেও সহ্য করেনা! ভ্যায়লেন্ট হয়ে যায় আমার উপর। জীবনে আমি কোনও ছেলের দিকে এক পলক তাকাতে পারিনি। একদল সিসিটিভি আমার উপর স্থাপন করা কিভাবে তাকাবো আমি?, জানি তাকালেই কপালে শনি! যেখানে আমার জীবনটাই শনি আরও শনি বারিয়ে লাভ কি! এদিকে আদৃতা আপু এসব দেখে। আমাকে সামনে পেলেই প্রথম দিন পরিচয় করে দেওয়ার আদনান ভাইয়ের সেই কথার রেশ ধরে গাঁ জ্বালা করা কথা বলে আমাকে অপমান করবে। সে চায় আমি যেন চলে যাই আদনান ভাইয়ের বাড়ি থেকে। আমিও ভাবি আদনান ভাইয়ের তৈরী করা এই চিরিয়াখানা ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো কিন্তু সেটা করে সত্যি কি তার চিরিয়াখানা থেকে মুক্তি পাবো? তাতে আমি ভীষণ ভাবে সন্দিহান। তাই সাহস করতে পারিনা। আর সন্দেহ নিয়ে কিছু করা ঠিকনা! আমি জানি এরকম কিছু চিন্তা করলেও আমাকে সে মেরে ফেলবে! তারপর চিবিয়ে খাবে!

দরজার তীক্ষ্ণ করাঘাতের শব্দ কানে আসতেই। দু হাতে কান চেপে ধরি। এখন আমি মরে গেলেও দরজা খুলবোনা আমি জানি দরজার পিছনে আমার শনি দাঁড়িয়ে! দরজা খুললেই শনি আমার কপালে আছড়ে পরবে আমি কিছুতেই নিজের শরীরের ক্ষতি করতে পারিনা! লক্ষ্মী বাচ্ছার মতো উঠে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলাম মাত্র ১ টা বাজে নিচে অনুষ্ঠান এখনও শুরুই হয়নি! আর আমার করা একটা ভুলের জন্য আমি আহির মেহেদী অনুষ্টান থেকে বাতিল দেখতেও পারবোনা। কচু! সব ঐ নির্দয় লোকটার চালাকি জানি আমি সে তো চাইছিলোই এটা আমি যথেষ্ট শালীনতা বজায় রেখে শাড়ি পরেছি অসংখ্য পিন লাগিয়েছি শুধু মাত্র তার ভয়েই। তবুও সে ভয়ই দেখালো আমাকে! আর কৌশলে আমাকে অনুষ্ঠান থেকে তারালো। আমি জানি আর কেউ না ডাকবে আমাকে আর না খুঁজবে! বাড়ি সকলেও আদনান ভাই সম্পর্কে আইডিয়া রাখে! আর আমি শুধু দোয়া করি ঐ পাষণ্ড লোকটার বিয়ে না হোক! জালিম একটা!

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে