#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৭
#মেহরিন_রিম
এসএসসির রেজাল্ট দেওয়ার অনেকগুলো দিন পেড়িয়ে গেছে। ইশা,মোহনা তাদের কলেজেই ভর্তি হয়েছে। ইশার অন্য কলেজে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও মোহনার জন্য এখানেই থেকে গেছে। আজ তাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান। আদৃতকে এখন প্রায়ই কলেজে দেখা যায়, ইশা সেটা খেয়াল করলেও কিছু বলেনা। সেলফি তোলার আশা সে এমনিতেও ছেড়ে দিয়েছে, লাগবেনা তার অনেক অনেক লাইক। তবুও এই লোকের কাছে গিয়ে সে সেলফি তোলার রিকুয়েস্ট করবেনা। নিরব কে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে ইশা, যতটা না বললেই ঠিক ততটাই কথা বলে। নিরবের ও পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। এখন অ্যাডমিশন এর প্রিপারেশন নিচ্ছে, তবুও কলেজে আসাই হয়।
ইশা যে স্বেচ্ছায় নিরবের থেকে দূড়ে থাকছে এটা বুঝতে পেরে আদৃত মনে মনে শান্তি পেয়েছে। নিজের অনুভূতি নিয়ে সে এখনো দ্বিধার মধ্যে আছে। তাই সময় কে নিজের মতোই চলতে দিচ্ছে, এর মাঝে যে তার অনুভূতিরা আরো প্রখর হয়ে উঠছে তার খুব একটা খেয়াল নেই আদৃতের।
সায়ান আর মোহনার সম্পর্ক ঠিক আগের মতোই রয়েছে। টুকটাক ঝগড়ার মধ্যেই দিন কেটে যাচ্ছে, বিশেষ করে ঝগড়ার সূত্রপাত টা মোহনাই করছে। সায়ান এখনো তাকে ডিরেক্টলি কিছু বলছেনা,এই কারণেই মোহনা ছোটখাটো বিষয়ে রেগে যাচ্ছে। তবে সেই রাগ খুব বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনা,সায়ান ঠিক কিছু না কিছু করে তার রাগ ভাঙিয়ে দেয়। মোহনা নিজেও বুঝতে পারছে, ধীরে ধীরে সায়ান তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
ফাইজার বিষয়টা নিয়ে পূর্ণ সেদিন অনেক্ষন চিন্তা করেছে, তবে কোনো উত্তর পায়নি। ফাইজা তাকে জ্ঞজ্ঞজ্ঞজ্ঞগতুমি করে বলছে, তাকে দেখে অস্বস্তিতে পরছে না বিষয়গুলো ভাবাচ্ছে পূর্ণ কে। কপালের ক্ষত অনেকটাই কমে গেছে, ব্যান্ডেজ খুলে এখন সাধারণ ব্যান্ড এইড দেওয়া আছে ক্ষতস্থানে। সেদিন দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে নয় বরং পাথর এর আঘাতেই কপাল কেটে গিয়েছিল পূর্ণর। খুব কাছে গিয়েও ছেলেদুটো সেদিন হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল,যদিও খুব বেশিদিন পালাতে পারেনি। কদিন পড়েই তাড়া ধরা পরে গিয়েছিল। পূর্ণ আরো অবাক হয়েছে এই বিষয়ে ফাইজা কোনো প্রশ্ন না করায়। একবার জিজ্ঞেস করার পর আর জিজ্ঞেস করেনি এই ক্ষত নিয়ে, কেন হয়েছে কিভাবে হয়েছে কিছুই বলেনি। সে কিছু আন্দাজ করতে পেরেছে কিনা জানা নেই পূর্ণর। তবে তার ধারণা অনুযায়ী ফাইজার কিছু জানার কথা নয়।
আদৃতের সাথে কলেজের পুড়নো শিক্ষক দের বেশ সখ্যতা তৈরি হয়েছে,সবাই যেনো তাকে চোখে হারাচ্ছে। সব স্টুডেন্ট দের কাছে তার প্রশংসা করে বেরাচ্ছে। বিজনেস সামলাচ্ছে তার উপর এত ভালো গান করে। একটু এদিক সেদিক হলেই টিচার রা আদৃত এর উদাহরণ দেখায়, এতে প্রচুর বিরক্ত ইশা। কলেজের যেকোনো প্রোগ্রাম এ প্রিন্সিপাল স্যার নিজে আদৃতকে আমন্ত্রন জানাবেন,তেমন আজকেও জানিয়েছে। আদৃত ও হাসিমুখে রাজি হয়ে গেছে। আদৃত এর কিছুকিছু বিষয়ে এই পরিবর্তনগুলো বেশ ভাবাচ্ছে সায়ানকে, পূর্ণ খুব একটা মাথা না ঘামালেও সায়ান এ নিয়ে অনেক চিন্তা করেছে। তবে আদৃতের কাছে জিজ্ঞেস করলে সে কোনো উত্তর দিবেনা।
সায়ান আদৃত এর সঙ্গেই এসেছে,তাদের আসতে কিছুটা দেড়িই হয়ে গেছে। ইশা নাচের জন্য রেডি হচ্ছে, আজ সে গান করবেনা, ইচ্ছে নেই তাই। শুধু নাচবে তাও চারজন মিলে আর সেখানে গান গাইবে আদৃত, এটা শোনার পরে সে থাকতেই চাইছিল না। তবে দলের বাকি সবাই ভীষণ খুশি,আর ইশা নেতৃত্ব দেওয়ায় সে বেরিয়েও যেতে পারবে না। তাই বাধ্য হয়ে নাচতেই হবে।
ফাইজা মাঠের অন্যদিকে দাঁড়িয়ে ছিলো, সায়ান আর আদৃতকে আসতে দেখে কিছুটা আন্দাজ করেছে যে এখানে পূর্ণ ও আসবে। সেদিনের পর আর পূর্ণর খোজ নেওয়া হয়ে ওঠেনি, ফোন নম্বরটা আছে ফাইজার কাছে। যদিও সেই নম্বর এখনো ইউজ করে কিনা সেটা জানা নেই। আর ইউজ করলেও, পূর্ণকে কল দিয়ে খোজ নিতে মনটা খচখচ করছিলো তাই আর খবর নিতে পারেনি।
ফাইজার ধারণা ঠিক ই ছিলো। আদৃতেরা ভিতরে যাওয়ার পাঁচমিনিট পরেই পূর্ণ ঘড়ির দিকে নজর রেখে প্রবেশ করে কলেজে। ফাইজা তার কিছুটা সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। পূর্ণ কে আসতে দেখেই তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ফাইজা। পূর্ণ হাতের ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই ফাইজাকে দেখতে পায়।
_কেমন আছো এখন? কপালের ক্ষতটা কমেছে?
আবারো অবাক হয় পূর্ণ। ফাইজার কণ্ঠে কোনো জড়তা নেই, সে পূর্ণকে দেখার পরও একদম স্বাভাবিক রয়েছে। ফাইজা যে এখানে আসবে সেটা অবশ্য আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল পূর্ণ।
_কী হলো বলো! ব্যাথা কমেছে?
পূর্ণকে চুপ থাকতে দেখে আবারো কথাটা বললো ফাইজা। পূর্ণ এবার চোখের পলক ফেলে কিছুটা শান্ত কণ্ঠে বললো,
_ঠিক আছি আমি। আর সেদিনের জন্য থ্যাংকস।
_থ্যাংকস বলার মতো কিছুই নেই। আর যাই হোক, আমার মধ্যে একটু হলেও মনুষ্যত্ব আছে।
পূর্ণ কিছু না বলে চলে যেতে নিলেই ফাইজা নিজের জায়গায় স্থির থেকে স্মিত হেসে বলে,
_আমায় এতটা ইগনোর না করলেই পারো।
এক ঝটকায় পিছনে ফিরে তাকায় পূর্ণ। ফাইজাও ঘাড় ঘুরিয়ে তার চোখে চোখ রাখে। চোখ নামিয়ে আবারো সামান্য হাসলো ফাইজা। অত:পর আরো একবার পূর্ণ দিকে তাকিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আর পূর্ণ কেবলই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে।
_____
আদৃর ভেবেছিল তাদের অনেকটাই দেড়ি হয়ে গেছে। যদিও সেটা সত্যি নয়, সবে মাত্র অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। নাচগান শুরু হবে আর কিছুক্ষন পড়ে। আজ গিটার নিয়ে নয়,হারমোনিয়াম বাজিয়েই গান গাইবে। হারমোনিয়াম বাজানোটা খুব ছোট বেলায় মায়ের কাছে শিখেছে আদৃত। মায়ের কথা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মাঠের দিকে চোখ যায় আদৃত এর। সেখানে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলার দিকে তাকাতেই চোখ আটকে যায় তার। চোখদুটো ধীরেধীরে লাল বর্ণ ধারণ করতে থাকে,চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। পূর্ণ আর সায়ান তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। আদৃতকে হঠাৎ অন্যরকম হয়ে যেতে দেখে সায়ান একবার পূর্ণর দিকে তাকিয়ে আদৃতের হাতে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলে,
_আদি? কি দেখছিস ওদিকে?
ধ্যান ভাঙে আদৃত এর। চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারো তাকায়, না সে ঠিকই দেখছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিচের দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলে,
_ঐ মহিলা এখানে কি করছে?
আদৃত এর দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালে পূর্ণ আর সায়ান দুজনেই অবাক হয়ে যায়। আদৃতের হঠাৎ এমন আচরণ এর কারণ স্পষ্ট হয়ে যায়। সায়ান আতঙ্কিত চোখে পূর্ণর দিকে তাকায়। পূর্ণ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আদৃত কে কিছুটা পাশে নিয়ে গিয়ে বলে,
_কাম ডাউন আদি। হয়তো ওনার মেয়ে এই কলেজে পড়ে তাই এসেছেন। তুই ওনার দিকে খেয়াল না করলেই তো হয়..
আদৃত কিছুটা উচ্চস্বরে বলে ওঠে,
_নো ওয়ে পূর্ণ। উনি এখানে থাকবেন আর আমি স্টেজ এ উঠে গান গাইবো? ইম্পসিবল…
কথাটা বলেই আদৃত দ্রুত পায়ে অন্যদিকে চলে যায়। সায়ান পূর্ণর পাশে এসে বলে,
_আরে ওকে যেতে দিলি কেন? আটকাতে পারলি না?
পূর্ণ বিরক্তিসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
_তোর মনে হয় ওকে এখন কেউ আটকাতে পারবে?
ইশা শাড়ি পরে সাজগোজ শেষ করে এদিকেই দাঁড়িয়ে ছিল। আদৃতকে হঠাৎ এমন অদ্ভুতভাবে চলে যেতে দেখে কিছুটা খটকা লাগে তার। যতটুকু শুনতে পেলো তাতে বুঝতে পারলো আদৃত হয়তো কোনো ব্যাক্তির জন্য রেগে আছে। তাহলে কি আদৃত গান গাইবে না? একমুহূর্তের জন্য খুশি হয়েও ঠিক খুশি হতে পারলোনা ইশা। মনের মধ্যে খচখচ করতে লাগলো। স্টেজ এ তাকিয়ে দেখলো টিচাররা তাদের বক্তব্য দিচ্ছেন। এখন নাচগান শুরু করতে দশমিনিট তো লাগবেই। আর কিছু না ভেবেই আদৃত যেদিকে গিয়েছে সেই দিকে এগোলো ইশা। কলেজ গেইট এইদিকে না তার মানে আদৃত বেরিয়ে যায়নি। ক্যাম্পাসের পাশে পুকুরের দিকেই গিয়েছে সে। যেতে গিয়ে দু বার থামলো ইশা। পরিশেষে শুকনো ঢোক গিলে পা বাড়ালো।
ঠিক ই ধরেছিল ইশা। আদৃত পুকুরের পাশের বেঞ্চে দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। ইশা ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাড়ালো। এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা খাঁকড়ি দিয়ে বললো,
_এহেম এহেম…
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৮
#মেহরিন_রিম
মেয়েলি কণ্ঠস্বর কানে আসতেই ভ্রুযুগল সঙ্কুচিত হলো আদৃতের। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো ইশা এদিক ওদিক তাকিয়ে নজর আড়াল করার চেষ্টা। আদৃত ইশাকে দেখতে পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ইশা এখনো শাড়ির কিছুটা অংশ আঙুলে প্যাঁচাচ্ছে আর আশপাশে তাকাচ্ছে। আদৃত ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে কড়া গলায় বললো,
_তুমি এখানে কি করছো?
হঠাৎ আদৃতের গলা শুনে কিছুটা কেপে উঠলো ইশা। শুকনো ঢোক গিলে তাকালো আদৃতের দিকে, তার ভ্রুযুগল এখনো কুঁচকানো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম বিদ্যমান, দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগ নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে সে। ইশা এত সাহস নিয়ে এসেছিল,কিন্তু এখন তার কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা। কি বলবে এখন? কেনো এসেছে? না আসলেই বোধহয় ভালো হতো। আরো বিভিন্ন কথা মনেমনে আওড়ালো ইশা। তবে এখন চুপ করে থাকলে চলবে না। তাই বড়বড় নিঃশ্বাস নিয়ে যথাসম্ভব সাহস সঞ্চয় করে বললো,
_আপনি চলে এলেন কেনো এভাবে?
আদৃত একনজর ইশার দিকে তাকিয়ে বললো,
_তোমার জানার দরকার নেই।
কথাটা ইশার কাছে বেশ অপমানের মনে হলেও সে আবারো আদৃতের উদ্দেশ্যে বললো,
_হ্যা হ্যা,আমার এমনিতেও কোনো দরকার নেই। তবে আপনি তো গান গাইবেন বলেছেন কিনা,তাই আপনি না থাকলে আবার অনেকে কষ্ট পাবে। তাই বলতে এসেছিলাম।
চোখ বন্ধ করে দুই আঙুল কপালে স্লাইড করলো আদৃত। তারপর বিরক্তির সূরে বললো,
_আমি না থাকলে অনুষ্ঠান নষ্ট হয়ে যাবে না,যাও এখন।
কথাটা বলে আবারো বেঞ্চে বসে পড়লো আদৃত। হঠাৎ যেন ইশার মনে বিশাল সাহস চলে এলো। সে আদৃতের দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আচ্ছা আপনি কি অন্য কারোর জন্য গান গাইতে চাইছেন না? লাইক কোনো শত্রু বা…
_ইশা আই সেইড গেট আউট অফ হেয়ার..
ইশার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা জোড়েই বললো কথাটা। অন্যসময় হলে হয়তো ইশা ভয়ে পালাতো,তবে আজ কোনো কারণে তার ভয় করছে না। ইশা আবারো ঢোক গিলে বললো,
_দেখুন এভাবে ঝাড়ি দেওয়ার কিছুই বলিনি। কলেজে তো আমারো কত অপছন্দের মানুষ আছে যাদের আমি সহ্য করতে পারিনা। এখন তাদের জন্য কি আমি পালিয়ে যাচ্ছি? যাচ্ছিনা তো। তাদের দিকে না তাকালেই হয়, আমি আমার মতো থাকছি তাড়া তাদের মতো।
আদৃত গম্ভীর গলায় চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
_জ্ঞান দিচ্ছো আমায়?
_জ্ঞান দেওয়ার কি হলো? আর যদি দিয়েও থাকি তাতে দোষের কি আছে? হ্যা আপনি আমার চেয়ে বড় হতে পারেন, তবে ছোটদের থেকেও অনেক কিছু জানার থাকে। আর কোথায় লেখা আছে যে ছোটরা বড়দের কিছু বোঝাতে পারবে না?
কিছুটা থামলো ইশা। আদৃতের চোখে চোখ রেখেই কথাগুলো বলেছে সে। এবার ভীতু চোখে আদৃতের দিকে তাকালো,আদৃত কিছু বলছেনা দেখে ইশা আবারো বললো,
_আমি তখন স্পষ্ট শুনলাম আপনি বলছিলেন, উনি এখানে থাকলে আপনি কিছুতেই স্টেজ এ উঠবেন না। কাকে দেখে এমন বলেছেন আমি জানিনা, তবে আপনি যে কাউকে এত ভয় পাবেন সেটা ভাবিনি।
_হোয়াট? আমি কাকে ভয় পাচ্ছি?
_এইযে যার জন্য অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে এলেন। যদি তাকে ভয়ই না পাবেন,তাহলে তার থেকে পালাচ্ছেন কেন?
আদৃতের দিকে তাকিয়েই বললো ইশা। আদৃত নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইশার চোখের দিকে,মোটা করে কাজল লাগানো দুটি চোখে। এই চোখ দুটোই পাগল করে দিচ্ছে আদৃত কে। এর আগে বিদায় অনুষ্ঠান এর দিনও এভাবে কাজল পড়েছিল ইশা, এর মাঝেও দু একদিন পড়েছিল তবে খুব বেশি নয়। ইশার প্রশ্নের দিকে খেয়াল না করে আদৃত তার চোখের দিকেই তাকিয়ে রইলো। অদ্ভুত এক কথা বলতে ইচ্ছে হলো ইশাকে, “তুমি সবসময় এভাবে কাজল পড়োনা কেন?”
কথাটা নিজের মনেই থেকে গেলো,মুখ ফুটে সেটা বলা হলোনা। আদৃতের নজর খেয়াল না করলেও তাকে চুপ করে থাকতে দেখে অবাক হলো ইশা। সঙ্গে আরো কিছুটা সাহস পেয়ে বললো,
_আপনি থাকলেন কি না থাকলেন তাতে আমার কিছুই যায় আসেনা। আমার এমনিতে ইচ্ছে হলো তাই বললাম কথাটা। বাকিটা আপনার ব্যাপার, চাইলে আসবেন না চাইলে আসবেন না। অ্যাজ ইয়োর খায়েশ।
ইশার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো আদৃত,এভাবে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকাটা ঠিক হচ্ছেনা। ইশা আর আদৃতের কথার অপেক্ষা না করে উলটো দিকে ঘুড়ে পা বাড়ালো। তবে আদৃতের কিছু না বলা তার মনে ভীতির সৃষ্টি করছে। উনি কি রেগে গেলেন আমার কথায়? রাগলে রাগুক আই ডোন্ট কেয়ার। আর কিছু না ভেবে স্টেজ এর পিছনে গিয়ে দাড়ালো ইশা।
নাচের বাকি মেয়েরাও সেখানে অপেক্ষা করছে। ম্যাম তাদেরকে খুঁজেছিল তবে ইশাকে না পাওয়ায় অন্য এক ছেলে আবৃত্তি করতে উঠেছে স্টেজ এ। সে নামলেই তাড়া যাবে। সায়ান আর পূর্ণ সামনের দিকের চেয়ারেই বসে ছিল। জয়নাল স্যার এসে সামনে দাঁড়াতেই তাড়া দুজন উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। স্যার ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম’ বলে নিজের চশমাটা ঠিক করে আশেপাশে তাকিয়ে আদৃতকে দেখতে না পেয়ে বললেন,
_তা আদৃত কোথায়? একটু আগেই তো দেখলাম এখানে।
পূর্ণ সায়ান এর দিকে একবার তাকিয়ে নিচু স্বরে বলতে নিলো,
_স্যার আসলে আদৃত বোধ হয়..
_আরে ঐতো আদৃত।
পাশে তাকিয়ে হেসে কথাটা বললেন স্যার। পূর্ণ আর সায়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলো আদৃত গম্ভীর মুখ করে এদিকে আসছে। সায়ান এর মুখ আপনা আপনি খুলে গেলো। হা করে তাকিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
_ইয়ে ক্যাসে হুয়া ভাই?
পূর্ণ ও আদৃতের দিকে তাকিয়ে একইভাবে বললো,
_আই ডোন্ট নো..
ছেলেটির আবৃত্তি করাও শেষ হয়ে গেছে। এবার ইশাদের স্টেজ এ যাওয়ার পালা। আদৃতকে আসতে দেখে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো ইশার। আদৃত তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো ইশা।
অত:পর সকলে একসঙ্গে স্টেজ এ উঠলো। আদৃত স্টেজ এর একপাশে বসে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান ধরলো, আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচ শুরু করলো ইশা এবং বাকি মেয়েরা।
পুড়োটা সময় আদৃতের নজর ছিলো ইশার দিকে। স্টেজ এর সামনে কারা আছে তার দিকে সে খেয়ালই করেনি, ইশার কথা অনুযায়ী কাজটি করেছে আদৃত। সামনে তাকিয়ে কোনোভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ব্যাক্তির দিকে চোখ পড়লে যে স্থির হয়ে থাকতে পারবে না সেটা ভালো করেই জানে আদৃত। অবশ্য সেসবের কথা মাথাতেও নেই আদৃতের। গান গাওয়ার মাঝে সে কেবলই মুগ্ধ নয়নে ইশাকে দেখছে।
সকলের হাততালির আওয়াযে হুশ ফিরলো আদৃতের। চোখের পলক ফেলে নিচের দিকে তাকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ইশাসহ বাকিরাও ধন্যবাদ বলে স্টেজ থেকে নেমে এলো। নামার সময় একবার পাশ ফিরে আদৃতের দিকে তাকিয়েছিল ইশা, পরমুহূর্তেই চোখ সরিয়ে নেমে আসে। আদৃত ও নেমে যায় স্টেজ থেকে। সায়ান হাসিমুখে হাততালি দিলেও পূর্ণর নজর ছিলো আদৃত এর দিকে। ইশাকে পুকুরের দিকে যেতে দেখেছিল পূর্ন, তাহলে ইশার কথাতেই আদৃত চলে এলো!
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে কিছুক্ষন আগে। আদৃত স্টেজ থেকে নেমে কোথায় গেছে খেয়াল করেনি কেউ। স্টুডেন্ট রা নিজেরা আনন্দ করছে এখন, রঙ মাখাচ্ছে কেউ কেউ। সায়ান এক সাইডে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিল। পুর্ন ওর পাশে এসে ধাক্কা দিয়ে বললো,
_কিরে,ওদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখছিস?
_আরে ভাই,ঐ মেয়েটাকে দেখ? কি সুন্দর! একদম জিরো ফিগার। তার সঙ্গে হাইটও মাশাল্লাহ। ঐ মেয়েটার বড় বোন হবে বোধ হয় তাইনা?
_তুই আর ভালো হবিনা তাইনা? আর মোহনার সঙ্গে কি করছিস তুই? তুই কি ভেবেছিস,লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করবি আর আমরা কেউ জানতে পারবো না?
পূর্ণর কথা শুনে সায়ান হঠাৎ হো হো করে হাসতে লাগলো।
সায়ানকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার কাছেই আসছিল মোহনা। তবে কিছুটা দূড়ে থাকতেই সায়ান এর কথা শুনে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায় সে। খুব রাগ হয়েছিল তখন। তবে এখন সায়ান কে এভাবে হাসতে দেখে আর এক মুহূর্ত সেখানে দাঁড়াতে পারলো না মোহনা। চোখ থেকে নোনাজল গাড়িয়ে পড়তেই অন্যদিকে ঘুড়ে ছুটে চলে যায় একটা ক্লাসরুম এ।
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৯
#মেহরিন_রিম
স্টেজ থেকে নেমে আবারো পুকুরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো আদৃত,সম্পূর্ন স্বাভাবিক সে। ক্ষনিক আগের রাগের লেশমাত্র তার মাঝে নেই তার চোখেমুখে। এমনটা হওয়া তার জন্য অস্বাভাবিক। কিছুক্ষন আগে রাগে সবকিছু ভাঙচুর করতে ইচ্ছে হচ্ছিল,সেখানে এখন সে শান্ত। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক, কোনো চিন্তাই যেন তাকে ছুতে পারছে না। এমনটা কি করে হলো? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে আদৃত।
ইশার বলা কথাগুলো ভেবেছিলো আদৃত,ইশা চলে যাওয়ার পর একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টায় সফল ও হয়েছে, যার কারণেই স্টেজ এ উঠেছে। ঐটুকু মেয়ের কথার এতটা প্রভাব পড়লো যে নিজের চিরচেনা রূপ থেকেই সরে এলো। শান্ত মস্তিষ্কেই পিছনে হাত গুজে কথাগুলো ভাবছে আদৃত। তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে মনে হতেই ঘুড়ে তাকায় আদৃত। ধারণা সঠিক, কয়েক হাতের ব্যাবধানে ইশা দাঁড়িয়ে আছে। খুব বেশি অবাক হলোনা আদৃত, এমনিতেই তার মনে হচ্ছিল ইশা আসলে আসতেও পারে।
ইশা মাত্রই এসেছিল,আদৃত কে ঘুড়তে দেখে সে কয়েক সেকেন্ড একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর কিছুটা সামনে এগিয়ে বললো,
_আপনি তো বলেছিলেন যাবেন না,তাহলে গেলেন কেনো?
_তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?
গা ছাড়া ভাব নিয়ে কথাটা বললো আদৃত। ইশাও এবার কিছুটা ভাব দেখিয়ে বললো,
_দেখেছেন ইশার কথার কত্ত ইফেক্ট!
আদৃত তাচ্ছিল্যের সুলভ হেসে বললো,
_ওহ হ্যালো, আমি তোমার কথায় গিয়েছি এমনটা ভাবার কোনো কারণ যেই। আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই গিয়েছি দ্যাটস ইট।
ইশা পাশ ফিরে সামান্য ভেংচি কেটে বিরবির করে বললো,
_আপনি যে জীবনেও স্বিকার করবেন না এটা জানা আছে আমার।
_এই,কি বললে?
_ক ক কই? কিছু বলিনি তো। কিন্তু আপনার পারমিশন থাকলে,একটা কথা বলবো?
_সব কথা তো পারমিশন না নিয়েই বলছো।
_তাও অবশ্য ঠিক। কিন্তু কথাটা হচ্ছে গিয়ে, আপনি কাকে দেখে ওভাবে রেগে চলে এসেছিলেন?
_আগেই বলেছি,তোমার এতসব জানার দরকার নেই।
_আপনার আম্মুর সঙ্গে কখনো যদি দেখা হতো,আমি সত্যিই জিজ্ঞেস করতাম জন্মের পর আপনার মুখে মধু দেয়নি কেন? আপনার সঙ্গে তো ভালোভাবে কথাই বলা যায় না,যাই বলিনা কেন তাতেই প্রবলেম।
ইশার কথা শুনে আদৃত আবারো তাচ্ছিল্যের সুরে সামান্য হাসলো। ইশা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আপনি হাসছেন? পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি?
ইশার কথায় হাসি সরিয়ে নিলো আদৃত। তবে পরমুহূর্তেই অনাকাঙ্ক্ষিত একটি প্রশ্ন করে বসলো,
_তুমি নিজেও তো পালিয়ে যাচ্ছিলে ঐ ছেলেটাকে দেখে।
আদৃত এর প্রশ্নে ইশার মনে পড়লো কিছুক্ষন আগের কথা। নিরবকে কলেজে আসতে দেখেই সে বন্ধুদের থেকে অন্যদিকে চলে গিয়েছিল,আদৃত সেটাও দেখে ফেলেছে!
_আমি কারোর থেকে পালিয়ে যাইনি।
আদৃত কোন ধরণের কথা বলছে তা ওর মাথাতেই নেই। বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আবারো বললো,
_তাহলে? উবে গেল তোমার সো কলড ভালোবাসা?
ইশা আদৃতের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
_সেটা কি বলেছি আমি?
_তা না হলে ওকে দেখে অন্যদিকে চলে গেলে কেন?
_জানিনা.. আর আপনি আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনি তো অনেক বড় আমার থেকে,তাই আপনার তো এসব বিষয় আরো ভালো জানার কথা।
_কিভাবে?
_কেন? কখনো ভালোবাসেন নি কাউকে?
ইশার প্রশ্নে যেন বাস্তবে ফিরে এলো আদৃত। মনের অজান্তেই কিসব জিজ্ঞেস করছিল! বিভ্রান্তি প্রকাশ না করে আদৃত ছোট করে উত্তর দেয়,
_জানিনা..
_জানেন না মানে? এটা কোনো উত্তর হলো? ভালোবাসতে গেলে না কনফিডেন্স লাগে। আমি কিন্তু ভীষণ কনফিডেন্স ছিলাম শুধু বলতে পারিনি।
আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। ইশা তার দিকে তাকিয়ে বললো,
_সময় থাকতে না বললে আপনিও আমার মতো তাকে হারিয়ে ফেলবেন। একটা সাজেশন দেই,কাউকে ভালোবাসলে সরাসরি গিয়ে বলে দিয়েন,নাহলে পরে পস্তাবেন।
কথাটা বলে একটু পিছনে তাকাতেই দেখলো ফাইজা মাঠের বিভিন্ন জায়গায় তাকে খুজছে। ইশা আদৃতের দিকে তাকিয়ে তড়িঘড়ি করে বললো,
_আপু আমাকে খুজছে, আমি গেলাম। আর হ্যা,আসার জন্য থ্যাংক ইউ নট।
চলে গেলো ইশা,আর আদৃত একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। ধীরেধীরে যেন নিজের অনুভূতিগুলোর মানে বুঝতে পারছে সে। নিজের মনে পুষে রাখা সব প্রশ্নের উত্তরগুলো পাচ্ছে আদৃত। আর তারই সঙ্গে ইশার বলা শেষ কথাগুলো ভেবে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে তার। সত্যিই কি তাই? সময় পেড়িয়ে গেলে পস্তাতে হবে!
_____
ফাইজা আর ইশা কলেজ থেকে বেড় হতে যাবে তখন ই সায়ান তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ইশার উদ্দেশ্যে বলে,
_ইশা তুমি মোহনাকে দেখেছো? আসলে আমি অনেক্ষন ধরে খুজে চলেছি,কোথাও পাচ্ছি না। ফোন করলাম,ফোন টাও বন্ধ।
_না ভাইয়া আমি তো..
_হ্যা হ্যা আমি দেখেছি। এইতো কিছুক্ষন আগে,মোহনা বলছিল ওর শরীরটা ভালো লাগছে না তাই বাসায় চলে যাচ্ছে। ইশাকে খুজে পাচ্ছিল না তাই আমাকে বলে গেছে। আর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে হয়তো তাই ফোন ধরতে পারছেনা।
ফাইজার কথা শোনার পর আর এই নিয়ে মাথা ঘামালো না সায়ান। কিন্তু মোহনা তো কখনো এভাবে না বলে চলে যায়না, আরো আজকে সায়ান ওকে বলেছিল একটা জায়গায় ঘুড়তে নিয়ে যাবে। শরীর খারাপ লাগছিলো বলে না জানিয়ে চলে গেলো?
কিছুটা চিন্তা হচ্ছে সায়ান এর। তবে সেটা প্রকাশ না করে ‘আচ্ছা’ বলে চলে গেলো সেখান থেকে। সায়ান চলে যেতেই ফাইজা ইশার উদ্দেশ্যে বললো,
_উনি বোধহয় মোহনা কে আসলেই ভালোবাসে রে ইশা। দেখলি না, মেহু চলে গেছে শুনে মুখটা কেমন কালো হয়ে গেলো?
_আমারো তাই মনে হচ্ছে। কি জানি, যদি তেমনটা হয় তাহলে তো ভালোই। মানুষটা ভালোই আছে, মিস্টার করলা যে এমন বন্ধু কি করে পেলো সেটাই বুঝতে পারি না।
_এই মিস্টার করলা টা কে রে?
_কেন? ঐযে মিস্টার আদৃত, ওনার সাথে এই নামটাই মানায়। কিন্তু ওনার এই দুজন বন্ধু বেশ ভালো, সায়ান ভাইয়া তো বেশ হাসিখুশি।
_আর আরেকজন?
_আর ঐযে পূর্ণ ভাইয়া,তিনিও ভালোই আছেন। কত সুন্দর করে কথা বলে, কি দেখে যে তারা এমন একজন বন্ধু বানিয়েছে?
পূর্ণর কথা শুনে মনে মনে হাসলো ফাইজা। সত্যিই পূর্ণ অনেক সুন্দর করে কথা বলে, পরিস্থিতির সঙ্গে ভালো করে মানিয়ে নিয়ে কথা বলতে পারে, যা তার বিচক্ষণতার পরিচয় দেয়।
_কোথায় হারিয়ে গেলে আপু? মেহু নাকি চলে গেছে, তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন? বাসায় যাবে না?
_হুম,হ্যা চল।
_____
দুপুর গড়িয়ে রাত হয়েছে,তবে মোহনা সেই যে কলেজ থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেছে তার আর বের হওয়ার কোনো নামগন্ধ ও নেই। দুপুরে কিছু না খেয়েই ঘরে চলে এসেছে। সন্ধ্যা তার মা এসে অনেক্ষন ডেকেছে,মোহনা তবুও ঘর থেকে বেড় হয়নি।
রাতে খাবার সময় হতেই মোহনার বাবা এসে দড়জায় নক করতে লাগলেন।
_মোহনা? মা কি হয়েছে তোর? দুপুরেও নাকি কিছু খাসনি? এতক্ষন তো তুই না খেয়ে থাকতে পারিস না মা, এবার তো শরীর খারাপ করবে।
এর আগে তার মা ও এসে রাতে খাবারের জন্য ডেকে গিয়েছেন। এখন আবার বাবাও এসে খাওয়ার কথা বলতেই মোহনার মেজাজ টা বিগড়ে যায়। রুমের ভিতর থেকেই রেগে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে,
_সমস্যা কি তোমাদের? কখন থেকে খেয়ে নে খেয়ে নে কি শুরু করেছো এসব? একদিন না খেলে তোমার মেয়ে মরে যাবেনা। খাবোনা আমি,কিচ্ছু খাবোনা। চলে যাও তোমরা এখান থেকে।
#চলবে
[রিচেক করা হয়নি,ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
হ্যাপি রিডিং।]