#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৪
#মেহরিন_রিম
অবশেষে আদৃতের সেই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং সম্পন্ন হয়েছে কাল। কথা ছিল মিটিং শেষ করে সন্ধ্যার দিকেই তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়বে। তবে তা হয়নি, আদৃত নিজেই বাধা দিয়েছে। আদৃতের এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় বেশ অবাক হয় সায়ান,পূর্ণ। দুদিন আগে যে আর একদিনও এখানে থাকতে চাইছিল না,সে কিনা কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পড় এখন ইনজয় করতে চাইছে। ব্যাপারটা হজম করতে কিছুটা কষ্ট হলো সায়ানের,এমনিতেও অনেকদিন হয়েছে মোহনার সাথে দেখা হয়না। তারও আর এখানে মন টিকছে না,তবে আদৃতের এক কথা তাড়া আরও একদিন পর যাবে।
এই দুদিনে ইশাকে বহুবার দেখেছে আদৃত, অনেক সময় ইচ্ছে করেই ইশার আশেপাশে চলে এসেছে তবে সেটা কাউকে বুঝতে দেয়নি। আর ইশা প্রতিবার ই আদৃত কে না দেখার ভান করে চলে গেছে, বিষয়টাতে আদৃত এর ভীষণ রাগ হয়েছে। আদৃত তো মনে মনে চাইছিল যেন ইশা এসে তার সঙ্গে ঝগড়া করে অন্তত। তবে সেই আশা আর পূরন হয়নি। তবে পূর্ণ ফাইজার থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেছে। পূর্ণ চায়না তার জন্য ফাইজাকে কোনোরকম অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হোক। ফাইজা ব্যাপারটা কয়েকবার খেয়াল ও করেছে, ফাইজাকে দেখলেই পূর্ণ তার বিপরীত দিকে চলে যায়। অবশ্য এটা ফাইজার জন্য ভালোই হয়েছে।
তিনদিন এর জন্যই এসেছিল তাড়া, জহির সাহেব ঢাকায় ফিরে পরদিনই আবার কুমিল্লায় যাবেন। তবে এই অল্প সময়েই ইশা অনেক বেশি ইনজয় করেছে,পরিবারের সাথে লাস্ট কক্সবাজার ঘুড়তে গিয়েছিল দু বছর আগে। তারপর যাবো যাবো করে যার কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই জন্যই ইশা আদৃতকে সম্পূর্নভাবে এড়িয়ে গেছে, সে তার মতো থাকুক তাকে কার কি।
তবে আদৃত দুদিনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে ফাইজার সঙ্গে কথা বলার,কিন্তু যখনই ওর দেখা পায় তখনই ইশা তার সঙ্গে থাকে। কথায় কথায় শুনেছিল ওরা কাল বিকেলেই চলে যাবে,এর মধ্যেই ফাইজার সঙ্গে কথাটা বলতে হবে আদৃত এর। পূর্ণ বরাবরেই নাছোড়বান্দা,ও একবার কিছু ভাবলে তাতেই অনড় থাকবে। তাই পূর্ণকে না জানিয়েই ফাইজার সঙ্গে কথা বলতে হবে। একটা উপায় ছিল,ফোনে কথা বলা। তবে ফোনে সবটা ঠিককরে বলা যাবে না।
রাতে ডিনার করার সময় আদৃতদের কিছুটা দূড়েই ইশা,ফাইজা,জহির এবং রুকসানা ছিলেন। আদৃত ভেবে নেয় আজকেই ফাইজার সঙ্গে কথা বলবে। অন্যসময় আদৃত সবার আগে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায় তবে আজ ইচ্ছে করেই লেইট করছে। পূর্ণর খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় সে রুমে চলে যায়ার সায়ান ও তার পরপরই চলে যায়। আদৃত বিরক্ত হয়ে মনে মনে ভাবে, “মেয়েদের খেতে এতো টাইম লাগে!”
ইশা আর ফাইজা খাচ্ছে কম গল্প করছে বেশি। রুকসানা নিষেধ করায় এবার কথা না বলেই খাওয়া শেষ করে তারা। খাওয়া শেষে জহির আর রুকসানা তাদের রুমে চলে যায়। ইশা আর ফাইজাও নিজেদের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। ফাইজার ফোনে তখন ই একটা কল আসে, রুমে মাঝেমধ্যে নেটওয়ার্ক পেতে প্রবলেম হয় বলে ফাইজা ইশাকে বললো,
_ইশা তুই যা আমি দু মিনিট এ আসছি।
ইশাও ওকে বলে রুমে চলে যায়। আদৃত এর এতে বরং সুবিধাই হলো। ফাইজা একটু পাশে গিয়ে কথা শেষ করে পিছনে ঘুরতেই আদৃত তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
হুট করে আদৃত কে দেখে ফাইজা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। আদৃত তখনি স্মিত হেসে বলে,
_কেমন আছো?
ফাইজাও মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
_জি ভাইয়া ভালো আছি,আপনি?
_হুম,ভালোই। ফাইজা,আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং।
_জ জি বলুন।
_কথাটা পূর্ণকে নিয়ে।
পূর্ণর কথা শুনে ফাইজার মুখটা মুহূর্তেই চুপসে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
_আমিতো ওনার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইনি।
_হ্যা তুমি জানতে চাওনি। বাট আই থিংক,কথাগুলো তোমার জানা উচিৎ।
ফাইজা নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো।
___
পূর্ণর খুব বেশি সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস নেই, তবে মাঝেমধ্যে মন চাইলে একটা দুটো খেয়ে থাকে। ব্যালকনি তে এসে সিগারেট ধরাতে যাবে তখনি তার মনে হয় আশেপাশে কেউ নিরবে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নিজের ধারণা অনুযায়ী পাশের ব্যালকন তে তাকায় পূর্ণ, ঠিকই ধরেছিল। ব্যালকনির গ্রিল এ মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে ফাইজা। মৃদু বাতাসে তার চুলগুলো সামান্য উড়ছে। তারই সঙ্গে কিছুক্ষন পরপর কেঁপে উঠছে তার শরীর। ফাইজা কি কাঁদছে? কিন্তু কেন?
অবাক চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে পূর্ণ,ফাইজা অন্যদিকে ঘুরে থাকায় দেখতে পায়নি পূর্ণ কে। কিন্তু হঠাৎ করে কি হলো তার? পূর্ণর স্পষ্ট মনে আছে কিছুক্ষন আগে ডিনার এর সময় সে বেশ হাসিখুশি দেখেছিল ফাইজা কে। তবে এতটুকু সময়ের ব্যাবধানে সে কাঁদছে কেন? কিসের কষ্ট তার? নিজের চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য পূর্ণ মনে মনে ভাবে,
_আমার বোধ হয় এতকিছু ভাবা ঠিক হচ্ছেনা। ওর পারসোনাল লাইফ, কিছু একটা হতেই পারে তাই হয়তো কাঁদছে।
সিগারেটটা আবারো প্যাকেটে রেখে দেয় পূর্ণ। এই মুহূর্তে ব্যালকনি তে থাকাটা ঠিক হবেনা হয়তো, ফাইজা দেখলে অস্বস্তিতে পড়তে পারে। আরো একবার ফাইজার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে এলো পূর্ণ। আদৃতের দিকে তাকাতেই দেখলো সে ল্যাপটপ এ কাজ করছে। রাত প্রায় একটা বাজে, পূর্ণও তাই আর দেড়ি না করে ঘুমোতে চলে গেলো।
___
_আপু?তোমার চোখগুলো এমন লাল হয়ে আছে কেন?
রেডি হতে হতে প্রশ্নটা করলো ইশা। ফাইজা হকচকিয়ে উঠে চোখে হাত দিয়ে বললো,
_ঐতো কাল চিংড়ি মাছ খেয়েছিলাম না, তাও এলার্জি টা বেড়েছে হয়তো।
_ঔষধ আনোনি?
_না,আনা হয়নি। আর চলেই তো যাবো এখম,বাসায় গিয়ে ঔষধ খেয়ে নেবো তাহলেই হবে।
ইশা চুলে বেণী করতে করতে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বললো,
_আমার রাতে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল,তোমাকে তো পেলাম না পাশে।
_ঘুম আসছিলো না তাই ব্যালকনি তে বসেছিলাম।
_তোমার কি কিছু হয়েছে আপু?
ইশা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো কথাটা। ফাইজা আবারো নিজেকে লোকানোর চেষ্টা করে বললো,
_না না কিছু হয়নি। তুই রেডি হয়ে নে, ছোট আব্বু অলরেডি একবার তাড়া দিয়ে গেছে।
ইশা আর কথা বাড়ালো না। জহির সাহেব তার পাঁচমিনিট পড়ে এসেই ব্যাগগুলো নিয়ে যান আর ওদের বেড়োতে বলে। ইশাও তার সাথেই রুম থেকে বের হয়। ফাইজা আবারো আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে, তবে সেটা খুব বেশি সম্ভব হচ্ছে না।
অত:পর সেও রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। দু কদম পা রাখতেই পিছন থেকে কারোর ডাক আসে,
_ফাইজা দাড়াও..
থেমে যায় ফাইজা, কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারে পিছনে পূর্ণ দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজা ধীরেধীরে তার দিকে ঘুড়ে তাকায়। ফাইজার মুখটা দেখে পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় রাতে সে কাঁদছিল। নিজের অজান্তেই প্রশ্ন করে বসে,
_ঠিক আছো তুমি?
ফাইজা অবাক চোখে তাকায় পূর্ণর দিকে। সেও জিজ্ঞাসার সুরে বলে,
_কী হবে আমার?
নিজের করা প্রশ্নে নিজেই অবাক হয়ে যায় পূর্ন। এমন প্রশ্ন করা তার উচিৎ হয়ন। কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে হাত থাকা বইটা ফাইজার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
_হ্যা সেটাই। আসলে এই বইটা… আমি পড়েছি এটা, তুমি চাইলে এটা রাখতে পারো। সেদিন যে আমার জন্য বইটা নাওনি সেটা…
_দরকার নেই,আপনার কাছেই থাক। কখনো যদি সুযোগ হয়,নিজেই বরং পড়ে শোনাবেন। আসছি…
আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না ফাইজা। তার শেষ কথাটায় পূর্ণ বেশ অবাক হয়। ফাইজা বেশ নরম কণ্ঠে বললো কথাটা। পূর্ণ ফাইজার এমন কথার অর্থ খুজে পেলোনা। স্থির দৃষ্টিতে কেবলই তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো…
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৫
#মেহরিন_রিম
কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। ইশা বেশ আনন্দে দিন কাটালেও আদৃত এর দিন কাটছে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে। সিলেট থেকে ফেরার পর অনেকগুলো কনসার্ট তার সঙ্গে অফিস এর কাজে বিশ্রামের সময়টুকুও বের করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে এর মধ্যেও সময় করে ইশাকে ঠিকই দেখয়ে যাচ্ছে। কদিন বেশ ঝামেলা হলেও ইশা ইন্টার এর জন্য নতুন কোচিং এ ভর্তি হওয়ায় রোজ ই তার দেখা পাচ্ছে আদৃত। আরো একটা সুবিধা রয়েছে, সায়ান ও এক দুদিন পরপর মোহনার সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে কোচিং এর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আদৃত ও কোনো বাহানায় তার সঙ্গে চলে আসে, মাঝেমধ্যে ইশাকে তার দেখা দেয় আবার মাঝেমধ্যে দেখা দেয়না।
সায়ান আর মোহনার সম্পর্ক এখনো কোনো নাম পায়নি। সায়ান বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও নিজের মনের কথা জানাতে পারেনি মোহনাকে, আর মোহনাও তার অপেক্ষায় রয়েছে।
পূর্ণ সিলেট থেকে ফেরার দুদিন পরেই নতুন একটা কেস এর ইনভেস্টিগেশন এর জন্য কুমিল্লা চলে যায়,সেখান থেকে আরো বেশ কিছু যায়গায় ঘুড়তে হচ্ছে তাকে। তাই ফাইজার সামনে আসা টা আর হয়ে ওঠেনি,এতে পূর্ণর কোনো আফসোস ও নেই। তবে ফাইজার হঠাৎ করে অন্যরকম কথা বলার ব্যাপারটা সে এখনো বুঝতে পারেনি।
রাত বাজে একটা। তবে ইশা,মোহনা কারোর চোখে আজ ঘুম নেই। মোহনা তো খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে, সেই সন্ধ্যা থেকে জায়নামাজ এই বসে আছে। তার মা এসে রাতের খাবার এর জন্য বেশ কয়েকবার ডাকলেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে তিনিও হাল।ছেড়ে দিয়েছেন।
মোহনা এখনো জায়নামাজ এ বসে দোয়া করে চলেছে। ফোনের আওয়াজ পেয়ে হাত থেকে তসবিহ টা রেখে উঠে দাঁড়ায় সে। বিছানায় বসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সায়ান ফোন করেছে। মোহনা ফোনটা রিসিভ করেই বলে,
_অনুগ্রহ করে আজকে আমাকে ডিসটার্ব করবেন না। এমনিতেই বহুত টেনশন এ আছি।
সায়ান অপর প্রান্ত থেকে শব্দ করেই হেসে দিলো, তার হাসির শব্দ মোহনার কানে পৌঁছোতেই সে মুখ ফুলিয়ে বললো,
_আপনি হাসছেন?
_হাসবো না তো কি করবো? তুমি যেমন টেনশন করছো তাতে তো মনে হচ্ছে রেজাল্ট দেওয়ার আগেই আইসিইউ তে চলে যাবে।
_হ্যা হ্যা আপনি ওভাবেই হাসুন। আমি আছি আমার চিন্তায়, আম্মু তো বলেই দিয়েছে পাশ না করলে আমাকে মাছ বিক্রেতার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।
_কেন কেন? রিক্সাওয়ালা মামারা কি দোষ করলো?
_মজা নিচ্ছেন আপনি তাইনা? যদি সত্যি সত্যি ই আমার বিয়ে দিয়ে দেয় তখন?
_দিলে দিবে,তাতে আমার কি?
সায়ান এর কথায় খানিকটা কষ্ট পেলো মোহনা। করুন সুরে বললো,
_আপনার কিচ্ছু যায় আসেনা?
_একদমই না।
মোহনা ঠোঁট উল্টে কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো,
_হ্যা তাইতো,আপনার কি ই বা হবে। আমাকে আর ফোন দিবেন না আপনি।
_আরে আরে কথাটা তো শোনো…
কথাটা মোহনার কান অবধি গেলো না। তার আগেই সে ফোনটা কেটে বিছানার উপর আছাড় মাড়লো। পরক্ষণেই বললো,
_না না এখন এসব নিয়ে ভাবলে চলবে না। আল্লাহ,আর আমি কিচ্ছু চাইবো না,এবারের মতো পাশ করায় দাও।
আবারো জায়নামাজে বসে পড়লো মোহনা,রেজাল্টের আগে পর্যন্ত এভাবেই থাকবে সে।
সায়ান আরো পাঁচবার কল দিলো মোহনার নম্বরে, তবে একবারো সে রিসিভ করলো না কলটা। শেষ পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়ে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সায়ান।
____
_অন্যান্য মেয়েদের চিন্তাহ খাওয়া দাওয়া বন্ধ হওয়ার পালা। আর আমার অতি গুণধর মেয়ে,সে কিনা এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠে শান্তিতে টিভি দেখছে। আরে তোর কি মনে একটুও ভয়ডর নেই?
ঘর গোছাতে গোছাতে ইশার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো রুকসানা। ইশা তার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো চিপস খেতে খেতে টিভি দেখায় মনোযোগ দিলো।
_এই ব্যাপারে কিন্তু আমি ছোট আম্মুর সাথে একমত ইশা। তোর কি একটুও টেনশন হচ্ছেনা, লাইক একটুও না?
সিঁড়ি থেকে নামতে নামতে কথাটা বললো ফাইজা। ইশা তার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বললো,
_কি শুরু করেছো বলতো তোমরা? এখন তো দেখছি আমার রেজাল্ট এর চিন্তায় তোমাদের ই ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে!
রুকসানা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে বললেন,
_হ্যা হ্যা তুমি থাকো খুশিমনে। রেজাল্ট খারাপ করলেনা তোর বাবাকে বলে রিক্সাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিবো।
_জানতো ঐ একটাই ডায়লগ,কিছু হলেই বিয়ে দিয়ে দিবো। বাবাই কখনো আমায় এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবেনা হুম।
_ফাইজা এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো বলতো?
ফাইজাও সামান্য হেসে ইশার পাশে বসে বললো,
_কিছুই করতে হবেনা ছোট আম্মু। ইশা অনেক ভালো রেজাল্ট করবে,তুমি মিলিয়ে নিও। আর ও তো ঠিকই বলেছে, যা হওয়ার হবে। এখন তা নিয়ে চিন্তা করে কোনো লাভ আছে নাকি! কিন্তু ইশা,সময়তো হয়ে গেলো। দেখনা রেজাল্ট পাবলিশ হয়েছে কিনা।
_চেক করছি তো আপু,আসছে না এখনো।
___
স্কুলে এসেও এক ঘন্টা যাবৎ কেঁদেই চলেছে মোহনা। ইশা তাকে কয়েকবার ধমক দেওয়ার পড়ও তার কান্না থামার কোনো নাম নেই। রেজাল্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাড়া স্কুল এ এসে উপস্থিত হয়েছে। ইশা,মোহনা দুজনেই গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। আর সেই খুশিতেই মোহনার কান্না থামছেনা। সবাই স্কুলে এসে আনন্দ উৎযাপন করছে আর মোহনা তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে কেঁদেই চলেছে।
ইশা বরাবরেই রেজাল্ট নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করেনা,আর মনেমনে চিন্তা হলেও তা কারো সামনে প্রকাশ করেনা। আজকেও তার চিন্তা হচ্ছিল কিছুটা তবে সেটা কাউকে বুঝতে দেয়নি। আর রেজাল্ট পাওয়ার পর থেকে তো খুশি ধরেই রাখতে পারছেনা। এতকিছুর মাঝে যে একজোড়া চোখ তার হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা ইশা খেয়াল ও করেনি।
নিজেদের আনন্দের মাঝে ইশার চোখ গেলো গাছের পাশে বসে থাকা নিরবের দিকে। নিরবকে সে অনেকদিন পর দেখছে,স্কুলেই অনেকদিন পড়ে এসেছে। নিরবকে দেখতে পেয়েও একবার অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো ইশা। তারপর আবারো তার অবাধ্য চোখ যায় নিরবের দিকে,খানিকটা মনমরা হয়েই বসে আছে। কারোর সঙ্গে কথাও বলছে না, ফোন স্ক্রোল ও করছে না। নিরবের কাছে গিয়ে একবার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো ইশার, এত পরিপাটি একটা ছেলে এমন চুপচাপ। বিষয়টা ঠিক মানতে পারছে না ইশা। নিজে একবার তার কাছে যেতে গিয়েও গেলোনা, তার বদলে মোহনার কাছে গিয়ে তাকে মৃদু স্বরে বললো,
_এই মেহু,নিরব ভাইয়ার কি হয়েছে বলতো?
মোহনার চোখ মুছতে মুছতেই বললো,
_কেন? ওর আবার কি হবে?
_দেখছিস না কেমন একাএকা চুপচাপ বসে আছে,কিছুটা একটা হয়েছে।
_তুই যেখানে আমিও সেখানে।
পাশ থেকে একটা মেয়ে ইশার কথা শুনে ওর সামনে এসে বললো,
_ঠিকই ধরেছিস ইশা। ঐযে নিরব ভাইয়া একটা মেয়ের সাথে রিলেশন এ গিয়েছিলো না? তার বাবা নাকি এসব জানতে পেরে গিয়েছিল,পরে সেই মেয়ের বিয়েও ঠিক করেছে। এতদিনে বোধহয় বিয়ে হয়েও গেছে। তার পর থেকেই তো নিরব ভাইয়া এমন আপসেট হয়ে বসে থাকে।
ইশা দৃষ্টি সরিয়ে আবারো নিরবের দিকে তাকাতেই মোহনা তার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
_ভালোই তো হলো বল, এবার কিন্তু তোর রাস্তা ক্লিয়ার ইশা।
ইশা স্থির দৃষ্টিতে একবার মোহনার দিকে তাকিয়ে আবারো নিরব এর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আদৃত কিছুটা দূড়ে দাঁড়িয়ে ইশার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তবে ইশাকে এতবার নিরব এর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় সে। এক অজানা ভয় ধীরেধীরে গ্রাস করতে থাকে তাকে। কিছু হারিয়ে ফেলার চিন্তা মাথায় আসতেই অন্যদিকে ঘুড়ে যায় আদৃত। কেন যেন এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা তার।
#চলবে
#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৬
#মেহরিন_রিম
কয়েক মিনিট একইভাবে দাঁড়িয়ে ছিল আদৃত, এর মাঝেই কখন ইশা তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছি এটা সে বুঝতেও পারেনি। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে পিছন ঘুড়তেই দেখে ইশা বুকে হাত গুঁজে সরু চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে ইশাকে দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে আদৃত, তবে সেটা ইশাকে বুঝতে দেয়না। বেশিক্ষণ নজর লুকোতে হয়নি,তার আগেই ইশা জিজ্ঞেস করে,
_আপনি এখানে কি করছেন?
আদৃত কিছুটা গম্ভীর ভাব নিয়ে বলে,
_জায়গাটা নিশ্চই তোমার কেনা নয়। তাই তোমায় কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি।
_সবসময় এমন ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলেন কেন? জন্মের সময় কেউ মুখে মধু দেয়নি নাকি?
_সময়ের অনেক দাম আছে আমার।
কথাটা বলে হাঁটা ধরলেই ইশা দ্রুত আদৃত এর সামনে গিয়ে বলে,
_এই এই কোথায় যাচ্ছেন? দাঁড়ান দাঁড়ান।
_প্রতিটা কথা দু তিনবার রিপিট করতেই হবে?
_সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো গিয়ে আপনার সঙ্গে আমার কিছু ইম্পর্টেন্ট কথা আছে।
আদৃত কপাল কুঁচকে বলে,
_আমার সঙ্গে ইম্পর্টেন্ট কথা? কি কথা,জলদি বলো।
_আপনি সেদিন ফাইজা আপুকে কি বলছিলেন?
অবাক হয়ে যায় আদৃত,তার মানে ইশা সেদিন ওদের কথা বলতে দেখে নিয়েছিল? কিছু শুনে ফেলেনি তো? আর শুনলেই বা কি!
_কি হলো বলুন? কি বলেছিলেন আপুকে?
_কবে? আর আমি কি বলবো ওকে?
_দেখুন মিথ্যে কথা বলবেন না। আমি নিজের চোখে দেখেছি আপনি আপুকে কিছু বলছিলেন। নেহাত আমার লুকিয়ে লুকিয়ে মানুষের কথা শোনার অভ্যাস নেই তাই কিছু শুনিনি।
আদৃত ইশা দিকে এক কদম এগিয়ে বলে,
_ছোটদের এত কথা জানতে নেই।
ইশা কিছুটা তেতে উঠে বলে,
_আমি ছোট হতে পারি,কিন্তু এতটা ছোট নই যে কিছুই বুঝতে পারবো না। আমি বেশ ভালো করেই খেয়াল করেছি,সেদিনের পর থেকেই আপু কেমন মনমরা হয়ে আছে। আমি আপুকেও জিজ্ঞেস করেছি অনেকবার,কিন্তু কিছুই বলেনি। তাইতো বাধ্য হয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি। আচ্ছা আপনি কি আপুকে আগে থেকে চেনেন?
_হয়তো..
_হয়তো মানে? সোজাসুজি কথা বলতে পারেননা?
_না পারিনা, এবার যেতে দাও আমাকে।
_আপনি বলবেন না তাইতো?
আদৃত কোনো উত্তর দিলোনা। ইশার পাশ থেকে গেইটের বাহিরে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। ইশা রাগে গটগট করতে করতে মনে মনে কয়েকশো গা*লি দিয়ে লাগলো আদৃতকে। তখনি মোহনা ওর পাশে এসে বলে,
_এখানে কি করছিস তুই? আর আমি তোকে কি বললাম বুঝতে পারিসনি? নিরব ভাইয়া তো এখন…
_ওহ প্লিজ মেহু, আমি এতটাও সস্তা না যে নাচতে নাচতে নিরব ভাইয়ার কাছে চলে যাবো।
_কিন্তু তুই না ওকে ভালোবাসিস?
_ভালোবাসলেই তাকে পেতে হবে? আর যে কখনো আমার ভালোবাসা বোঝার চেষ্টাই করেনি তার কাছে তো আমি কখনই যাবোনা।
মোহনা হেসে ইশার গাল টেনে দিয়ে বললো,
_এতদিনে একদম ঠিক বুঝেছিস তুই। আর তোর পাশে না নিরব ভাইয়াকে মানায় ও না, তোর পাশে তো ওর চেয়ে আরো হ্যান্ডসাম ছেলেকে মানায়। লাইক আদৃত ভা..
_কানের নিচে এক থাপ্পড় দিলেনা তোর আলতু ফালতু কল্পনা সব ঠিক হয়ে যাবে। বলার মতো আর কাউকে পেলিনা তুই?
_আমিতো শুধু কথার কথা..
_এমন কথার কথাও আর জীবনে বলবিনা নাহলে..
_আচ্ছা বাবা বলবোনা। বাসায় যাবি তো নাকি?
_হ্যা চল।
_____
_দেখেছিস কতোটা দেড়ি হয়ে গেলো। নয়টার বেশি বাজে, কতক্ষন ধরে বলছি বেরোনোর কথা কিন্তু তোদের তো টাইম এর দিকে খেয়াল ই নেই।
ফ্রেন্ড এর বাসা থেকে বেরোতে বেরোতে কথাগুলো বললো ফাইজা। দিশা ফাইজা কে চুপ করানোর উদ্দেশ্যে বললো,
_বার্থডে তে এসেছি,একটু মজা করবো না? তুই শুধু শুধুই টেনশন করছিস। আর তোর কাকি ও তো কিছু বলবে না দেড়ি করে ফিরলে।
_বলবে না কিন্তু…
_আর কথা বাড়াস না তো। এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে, তোকে কিছু না বললেও বাসায় গিয়ে আম্মুর থেকে ঝাড়ি খেতে হবে। গেলাম আমি টাটা।
কথাটা বলে দিশা ওর বাসার দিকে চলে গেলো,এখান থেকে ওর বাসায় যেতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। ফাইজার সঙ্গে আরো দুজন মেয়ে ছিলো, তারা দুজন ও তাদের হোস্টেল এর দিকে চলে গেলো, ফাইজা কে এখন একা একাই যেতে হবে।
অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরও কোনো রিক্সা বা সিয়েনজি পেলোনা ফাইজা,তাই বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করলো। মেইনরোড এ না গিয়ে রিক্সা পাওয়ার কোনো চান্স নেই।
রাস্তাঘাটে একা চলাফেরায় খুব বেশি ভয় নেই ফাইজার। তবে এই রাস্তাটা বেশ অন্ধকার হওয়ায় কিছুটা অস্বস্তি হচ্ছে তার,ফোনের ফ্লাশ লাইটটা জ্বালিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেইনরোড এর দিকে।
মেইনরোড এর কাছাকাছি চলেও এসেছে ফাইজা। ঠিক সেই মুহূর্তেই দুজন ছেলে ওর পাশ থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলো,ফাইজা একবার ওদের ছোটার দিকে তাকালেও খুব বেশি মাথা ঘামালো না। আরো কয়েক কদম হাঁটার পর পাশে একটা চিকন গলির দিকে নজর যায় তার। অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেয়ে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটা সেদিকে ধরতেই চোখ বড়বড় হয়ে যায় তার।
গলির সামনের দিকেই একটা পুড়নো বিল্ডিং এর সাথে ঠেশ দিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চেপে ধরে আছে পূর্ন। ফাইজা ছুটে পূর্ণর সামনে যায়। পূর্ণ হাতে র*ক্ত দেখতেই তার হাত কাঁপতে শুরু করে। আতঙ্ক নিয়ে কাপাকাপা গলায় বলে,
_ক কী হয়েছে ত তোমার?
হঠাৎ মুখের উপর ফ্লাশ লাইটের আলো পড়ায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিয়েছিল পূর্ণ। ফাইজার গলার আওয়ার শুনে দ্রুত চোখ খুলে তাকায় সে,সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কপাল থেকে হাত নামিয়ে নেয়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
_তুমি এখানে কি করছো?
_আমি কি করছি সেটা বড় কথা নয়। তোমার কপালে কি হয়েছে?
একেতো ফাইজার থেকে তুমি ডাক শুনে অবাক হয়েছে পূর্ণ। তার উপর এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
_কিছু হয়নি,ঐ অন্ধকারে হাটতে গিয়ে দেওয়ালে ধাক্কা খেয়েছিলাম।
_বোকা পেয়েছো আমাকে? দেওয়ালে ধাক্কা খেলে এভাবে কপাল কাটে?
_ছাড়ো তো,তুমি কোথায় যাচ্ছিলে যাও।
ফাইজা পূর্ণর কপালের দিকে একবার হাত বাড়িয়েও তা সরিয়ে নেয়। ব্যথিত কণ্ঠে বলে,
_কতটা কেটে গেছে দেখেছো? ব্লি*ডিং হচ্ছে কপাল থেকে।
পূর্ণ ফাইজার দিকে তাকায়, ফ্ল্যাশ লাইটের আলোতে তার টলমলে চোখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পূর্ণ অন্যদিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
_এইটুকুতে কিছু হবেনা, তুমি..
ফাইজা কিছুটা শক্ত গলায় বললো,
_আমি কখন যাবো না যাবো সেটা আমার ব্যাপার। র*ক্ত পড়া তো বন্ধই হচ্ছে না। পাশেই ফার্মেসী আছে, এক্ষুনি ফার্মেসি তে চলো আমার সঙ্গে।
_বললাম তো তার কোনো দরকার নেই।
_সারাজীবন তো নিজে যা ভালো বুঝলে তাই করলে। এখন অন্তত আমি যা বলছি সেটা করো,চলো আমার সঙ্গে।
পূর্ণ বুঝতে পারে এখন ফাইজার সঙ্গে না গিয়ে কোনো উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে ফার্মেসি তে যেতেই হয় তাকে। বেশ অনেকটাই কেটে গিয়েছিল,তাই ড্রেসিং করে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়। পুড়োটা সময় ফাইজার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল পূর্ণ, ফাইজাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অতি কষ্টে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছে। তবে পূর্ণ ভাবছে অন্য কথা, ফাইজা তাকে তুমি করে বলছে তার উপর এভাবে জোড় করে নিয়ে এলো। বিষয় গুলো কেমন অদ্ভুত লাগছে পূর্ণর কাছে। এমন কি হলো যার কারণে ফাইজা এতটা পরিবর্তন হয়ে গেলো…
#চলবে