তুমিময় প্রাপ্তি পর্ব-১৩+১৪

0
419

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৩
#মেহরিন_রিম
_এসব পরীক্ষা দিয়ে কি হবে বলতো মেহু? একদিন তো ম’রেই যাবো। শুধু শুধুই যত আজাইরা ঝামেলা। নতুন শিক্ষামন্ত্রী না আমাকেই বানানো উচিৎ ছিল বুঝলি, তাহলে এবছরের পরীক্ষা টাও বাদ দিয়ে দিতাম।

কদিন বাদেই পড়িক্ষা বলে ইশা বেশ চাপের মধ্যে আছে। সারাদিন শুধু তার কানের কাছে একটা কথাই বাজতে থাকে, “পরিক্ষা,পরিক্ষা,পরিক্ষা”
ব্যাচ শেষ করে বাড়িতে ফিরছে ইশা আর মোহনা। বরাবরের মতোই ইশা ননস্টপ বকবক করে চলেছে। অন্যসময় হলে হয়তো মোহনাও ওর সাথে যুক্ত হতো, কিন্তু আজ সে একদম চুপচাপ। হাটতে হাটতেই দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কি করে সায়ান এর এই জ্বালাতন থেকে মুক্তি পাবে।
এতক্ষন করে কথা বলার পরও মোহনার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ইশা জহুরি চোখে তাকায় তার দিকে। হাঁটা থামিয়ে মোহনাকেও হাত ধরে থামিয়ে দেয়। তবে এখনো মোহনা তার নিজের ধ্যানে মগ্ন। ইশা এবার মোহনার মাথায় গাট্টা মেড়ে ভ্রু কুচকে বলে,
_ঐ,তোর কি হয়েছে বল তো। কোন সাড়াশব্দ নেই, রোবটের মতো হাঁটছিস। এক্সাম এর টেনশন এ কি তুই ডিপ্রেশন এ পড়ে গেলি নাকি? অবশ্য এক্সাম নিয়ে এত প্যারা নেওয়ার মতো মেয়েতো তুমি,আমি না। তাহলে? হঠাৎ করে হলোটা কি তোর?

ইশার কথায় এবার ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো মোহনা। একবার ভাবলো ইশাকে বলবে সায়ান এর কথা, পরক্ষণেই ভাবলো ইশাকে বলা যাবেনা। তাহলে সে এটা নিয়ে তো মজা নেবেই, তার সঙ্গে বাকি বন্ধুদেরও জানিয়ে দেবে। আর যদি কোনোভাবে সায়ান এর থেকে ছবিগুলো নিয়ে নেয়,তাহলে কি হবে! এসব ভাবতেই চোখ বড়বড় হয়ে আসছে মোহনার।
মোহনাকে আবারো চুপ করে থাকতে দেখে ইশা তার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,
_আবার কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?

মোহনা ইশার দিকে তাকিয়ে দ্রুতগতিতে বলল,
_কি হবে? কিছু হয়নি তো। আসলে কালকে রাতে একটা ভুতের মুভি দেখেছিলাম,এখনো না ওটার থেকে বের হতে পারছিনা। তাই আরকি, হা হা..

ইশা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মোহনার দিকে। এরপর তার কপালে হাত দিয়ে চেক করে অবাক হয়ে বলল,
_মেহু,তুই একা একা ভুতের মুভি দেখেছিস? তাও আবার এক্সাম এর আগে?

ব্যাস,মোহনা এবার ভালোমতোই ফেসে গেলো। নিজেকে নিজেই বকতে লাগলো,একটা মিথ্যে কথাও ঠিক মতো বলতে পারলোনা! নরমালি অনেকের সাথে একসাথে বসেও মোহনা ভুতের মুভি দেখতে রাজি হয়না কখনো।সেখানে কিনা একা একা!

আদৃত এই রাস্তা দিয়েই বাইক নিয়ে যাচ্ছিল। ইশাকে দেখতে পেয়ে হুট করে তার একদম সামনে এসে ব্রেক কসলো। আকষ্মিক এমন বাইক সামনে এসে পড়ায় ইশা আর মোহনা দুজনেই খানিকটা ভয় পেয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড পড় ইশা চোখ খুলে বুঝতে পারে বাইকটা তাদের গায়ে উঠে যায়নি। মেজাজ টা এবার গরম হয়ে গেলো ইশার, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বুকে থুথু দিয়ে বলতে লাগলো,

_পাগল নাকি আপনি? বাইক চালানো না শিখেই নিশ্চই রাস্তায় বাইক নিয়ে বেড়িয়েছেন! ঠিক টাইম এ ব্রেক না করতে পারলে কি হতো? আপনার তো কিছু হতোনা ক্ষতি টা তো আমাদের ই হতো। আর আপনি রাস্তার এত জায়গা ছেড়ে সাইড দিয়ে কেন যাচ্ছেন? কি হলো কথা বলছেন না কেন?

আদৃত যে কেন এমনটা করলো তা সে নিজেও জানেনা। তবে ইশার এত কথা শুনে আর হেলমেট না খুলে থাকতে পারলো না।
আদৃত বাইক থেকে নেমে হেলমেটটা খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইশার দিকে। আদৃত কে দেখেই ইশার মুখটা একদম চুপসে যায়। এই লোকটা যে কেন বারবার তার সামনে চলে আসছে সেটাই বুঝতে পারছে না ইশা।
মাঝখান থেকে মোহনার বেশ লাভ হলো। আদৃত কে দেখে যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছে এই ভেবে যে, এই যাত্রার মতো অন্তত ইশার প্রশ্ন থেকে বেঁচে গেছে।

আদৃত কিছুক্ষন চুপ করে তাকিয়ে থেকে বলল,
_এত ঝগড়ুটে কেন তুমি? না মানে অল টাইম কি এভাবেই ঝগড়া করতে থাকো?

_দেখুন আমি মোটেই ঝগড়ুটে নই,আমি অত্যন্ত ভদ্র মেয়ে।

আদৃত সরু দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকাতেই সে শুকনো ঢোক গিলে করুণ সুরে বললো,
_দেখুন ওভাবে তাকাবেন না। আজকে কিন্তু দোষটা আপনার ই ছিল। ভুল যখন করেছেন তখন সরি বলে দিলেই ঝামেলা মিটে যায়।

_হুয়াট? আমি তোমাকে সরি বলবো?

ইশা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
_থাক থাক,আমি আবার মানুষকে এমনিতেই ক্ষমা করে দেই। আপনাকেও ক্ষমা করে দিলাম। এই মেহু চল তো।

_দাঁড়াও…
হাত বাড়িয়ে ইশাকে আটকে দিলো আদৃত। ইশা ভ্রু কুচকে বললো,
_আবার কি হলো? বললাম তো আপনার সরি বলতে হবেনা।

ইশার সামনে এসে দাঁড়ালো আদৃত। বুকে হাত গুজে বলল,
_বারবার আমার সামনে চলে আসছো কেন বলতো? ফলো টলো করছো নাকি আমাকে?

আদৃতের এমন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো ইশা। অতি বিস্ময়ের সাথে বললো,
_আমি আপনাকে ফলো করতে যাবো কেন? আর আপনাকে ফলো করে আমার কি লাভ?

নিজের করা এমন প্রশ্নে নিজেই লজ্জিত হলো আদৃত। মনে মনে ভাবলো,
_শিট! এটা কি বললাম আমি? সিরিয়াসলি আমার মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে এবার। না না,এখানে থাকলে চলবে না।

_কি হলো বলুন? আমি আপনাকে কোন দুঃখে ফলো করতে যাবো?

মোহনা এবার মাঝখান থেকে খুশিমনে বলে উঠলো,
_ফলো করছেনা ভাইয়া। আমি না শুনেছি,আমরা কারোর কথা খুব বেশি চিন্তা করলে তার সাথে আমাদের দেখা হয়ে যায়। আর আমি আপনার কথা এতবার মনে করেছি, তাই জন্যই হয়তো বারবার দেখা হয়ে যাচ্ছে।

আদৃত ইশার দিকে তাকিয়ে মোহনার বলা কথাটা ভাবতে লাগলো। আদৃত মনে মনে ইশার কথা ভাবতে না চাইলেও নিজের অজান্তেই ইশার কথা বারবার মনে পড়েছে তার। তার জন্যই কি দেখা হচ্ছে ইশার সঙ্গে?

ইশা মোহনার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
_তুমি চুপ করেই থাকো। সারাদিন পাগল ছাগল নিয়েই তো তোমার ভাব…

আদৃতের দিকে চোখ পরতেই ইশা মেকি হেসে বলে,
_আপনাকে বলিনি আপনাকে বলিনি, চিন্তা করবেন না। এই মেহু চল তো।

কথাটা বলেই মোহনাকে নিয়ে আদৃতের পাশ থেকে চলে গেলো ইশা। আদৃত হালকা পিছনে ঘুড়ে ওদের যাওয়া দেখলো। তারপর ইশার বলা কথাগুলো চিন্তা করে আনমনেই মুচকি হাসলো। পরক্ষণেই বিষ্মিত হলো সে,মনে মনে ভাবলো,
_ওয়েট! হাসছি কেন আমি? মেয়েটার এমন উদ্ভট কথাবার্তা আমার কাছে ভালো লাগছে কেন?

বেশি চিন্তা করতে পারলোনা আদৃত। সময়ের দিকে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো অনেকটা দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। মাথা ঝাঁকিয়ে হেলমেট টা পড়ে নিজের গন্তব্যে ছুটলো আদৃত।

___
কেটে গেছে আরো অনেকগুলো দিন। আজ ইশার এসএসসি পরীক্ষার শেষ দিন। প্রতিটা এক্সাম ই বেশ ভালো হয়েছে তার। আজকের এক্সাম টা শেষ হলেই তার শান্তি,যেন জেলখানা থেকে মুক্তি পাবে ইশা।
তবে পরিবর্তন এসেছে আদৃতের মাঝে। যতই ইশার কথা ভুলতে চাইছে ততই যেন আরো বেশি চিন্তা করছে তাকে নিয়ে। এমনকি ইশাকে দেখার জন্য দু তিন দিন তার বাড়ির আশেপাশে দাড়িয়েও ছিল একনজর তাকে দেখার জন্য। কেন এসব করছে তা জানা নেই আদৃতের।

গত এক্সাম এর দিন আদৃত ইশা আর মোহনার কথা দূর থেকে শুনেছিল, তারা বলছিল লাস্ট এক্সাম শেষে স্কুলে গিয়ে একটু আনন্দ করবে। তাই আজকে এক্সাম শেষ হওয়ার টাইম এ আদৃত কলেজে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। সঙ্গে সায়ান কেও নিয়ে এসেছে যেন কেউ সন্দেহ না করে।

আদৃত অনেক্ষন ধরে খেয়াল করছে, ইশা কলেজ এ আসার পর থেকেই নিরব এর আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। নিরব তার সাথে কথা বললেও তার আসল নজর ফোনের দিকেই। কিছু একটা সন্দেহ হলো আদৃতের। মোহনা কে এদিকে আসতে দেখে আদৃত কিছু না ভেবেই তাকে ডাক দেয়। মোহনাও সঙ্গে সঙ্গে এসে বলে,
_আরে আপনি এখানে!

_হ্যা একটু আসা হলো আরকি। আচ্ছা একটা কথা বলতে পারবে?

_হ্যা হ্যা বলুন।

আদৃত ইশা আর নিরব এর দিকে তাকিয়ে বলে,
_আচ্ছা ওরা কি রিলেটিভ?

মোহনা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
_আরে না,রিলেটিভ হতে যাবে কেন? নিরব ভাইয়া তো আমাদের সিনিয়র,আর ইশা ওকে…

চুপ করে গেলো মোহনা। আদৃত বলল,
_ইটস ওকে,তুমি বলতে পারো।

_কাউকে বলবেন না হ্যা, ইশা নিরব ভাইয়াকে অনেক আগে থেকেই লাইক করে। কিন্তু নিরব ভাইয়া সেটা বুঝতে পারে বলে আমার মনে হয়না…

#চলবে

#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_১৪
#মেহরিন_রিম
_কাউকে বলবেন না হ্যা, ইশা নিরব ভাইয়াকে অনেক আগে থেকেই লাইক করে। কিন্তু নিরব ভাইয়া সেটা বুঝতে পারে বলে আমার মনে হয়না…

মোহনার কথা শুনে আদৃত আবারো ইশার দিকে তাকায়, সে এখনো নিরব এর সাথে হেটে হেটে তাকে অনেক কিছু বলে চলেছে। ইশার কার্যকলাপ দেখে সে আগেই এমন কিছু আন্দাজ করতে পেড়েছিল।

_কি হলো ভাইয়া? কিছু ভাবছেন?

আদৃত মোহনার দিকে তাকিয়ে বলল,
_হুম, না না আর কিছু না।

_আচ্ছা।

মোহনা চলে যেতে নিলে আদৃত আবারো তাকে ডাক দিয়ে বলে,
_তোমার নাম যেন কি? হ্যা মোহনা, তুমি যে আমাকে কথাটা বললে এটা যেন ইশা জানতে না পারে ঠিক আছে?

_ওকে বলতে যাবো কেন?

_হুম দরকার নেই বলার। ঠিক আছে,তুমি কোথায় যাচ্ছিলে যেতে পারো।

মোহনাও মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। আদৃত কিছুক্ষন ইশা আর নিরব এর দিকে তাকিয়ে রইলো, নিরব কে দেখে কোনোভাবেই মনে হচ্ছেনা সে ইশাকে পছন্দ করে বা এমন কিছু।
আদৃত দু আঙুল কপালে স্লাইড করতে লাগলো, মুখ থেকে তার বিরক্তিসূচক ‘চ’ আওয়ার বেড়িয়ে এলো। মনে মনে ভাবলো,
_আমি ইশার লাইফ নিয়ে ভাবতে যাচ্ছি কেন? ওর লাইফ, ও যা খুশি করতে পারে তাতে আমার কি!

আশেপাশে তাকিয়ে সায়ানকে খুজলো আদৃত, তবে তার দেখা পেলোনা। সায়ান কে খোজার ইচ্ছে নেই এখন, তাই নিজের বাইক নিয়েই আদৃত বেড়িয়ে গেলো কলেজ থেকে।

___
অনেক্ষন ধরে নানান কথা বলে চলেছে ইশা, তবে নিরব তার খুব একটা পাত্তাই দিচ্ছে না। ইশা এসব নিয়ে না ভাবলেও এখন বেশ খারাপ লাগছে তার, কতদিন পর নিরবের সাথে কথা বলতে এসেছে আর তার মাঝে কিনা কোনো ভাবান্তর ই নেই। যেখানে ইশার আচরণ দেখে তার প্রায় সব ক্লাসমেট রাই বুঝতে পারে যে সে নিরবকে পছন্দ করে,সেখানে নিরব কি কিছুই বুঝতে পারেনা? বুঝতে পারেনা নাকি বুঝতে চায় না মাঝেমধ্যে এটাই ভাবে ইশা।

_এই নিরব ভাইয়া, একটু তো কথা বলবে নাকি। আমি কতক্ষন ধরে কতকিছু বলছি,আর তুমি সেই ফোনের মধ্যেই ঢুকে আছো। কি আছে এই ফোনে?

নিরব ফোনের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বলল,
_অমূল্য রত্ন,বুঝলি?

ইশা অন্য দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো। নিরব এবার ফোনটা পকেটে রেখে বলল,
_শোন, বলেছিলাম না তোদের সারপ্রাইজ দেবো?

_সে তো আরো দুমাস আগে থেকেই দাও।

_এবার আসলেই দেবো,সঙ্গে আমার তরফ থেকে ট্রিট ও পাবি। বিকেলে কলেজে চলে আসিস।

_আম্মু আসতে দিলে তো।

_আরে আন্টি কে ম্যানেজ করে নিস, না এলে কিন্তু অনেক কিছু মিস করবি।

কথাটা বলেই নিরব চলে গেলো সেখান থেকে। ইশা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে মাথা খাটিয়ে ভাবতে লাগলো,কি এমন সারপ্রাইজ দেবে নিরব?
এত কিছু নিয়ে ভাবার ইচ্ছে নেই ইশার,পরীক্ষা শেষ হওয়ার খুশিতে পারলে এখানে নাচা শুরু করে দেয় সে। অনেক্ষন ধরে মোহনাকে দেখতে পায়নি ইশা, তাই মোহনাকে খোজার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো সে।

___

মাঠের এক সাইড থেকে আইসক্রিম খেতে খেতে হাটছে মোহনা আর সায়ান। মোহনা আইসক্রিম খেতে খেতে আড়চোখে বারবার সায়ান এর দিকে। পরীক্ষার কারণে এই কদিনে সায়ানের সঙ্গে খুব বেশি কথা না বললেও রোজ অন্তত ১০ মিনিট এর জন্য বাধ্য হয়ে হলেও সায়ান এর সঙ্গে সুন্দর করে কথা বলতে হয়েছে মোহনার। প্রথমে বিরক্ত লাগলেও এখন আর কথা বলতে খুব বেশি খারাপ লাগেনা বা রাগ ও হয়না।

_আই নো আই এম সো হ্যান্ডসাম, কিন্তু এভাবে নজর দেওয়া তো উচিৎ নয় তাইনা?

খানিকটা থতমত খেয়ে যায় মোহনা। মাঠের সাইডে থাকা বেঞ্চে বসে বলে,
_আপনার দিকে নজর দিতে যাবো কোন দুঃখে।

সায়ান মোহনার পাশে বসে বললো,
_ছবিগুলো কিন্তু আছে আমার কাছে।

মোহনা করুণ দৃষ্টিতে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_এমন করছেন কেন? আমার মত একটা বাচ্চাকে এত ব্লাকমেইল করা কিন্তু ঠিক না।

_ওহ রিয়েলি! তুমি বাচ্চা?

_তা নয়তো কি? এত গুলুমুলু কিউট সা বাচ্চা আমি। আপনি শুধু শুধু আমায় ছবির কথা বলে ভয় দেখাচ্ছেন।

সায়ান কিছুক্ষন মোহনার দিকে তাকিয়ে হুট করে হো হো করে হেসে উঠলো। মোহনা কপাল কুঁচকে সায়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল,
_হাসছেন কেন আপনি? খুব মজা লাগছে আপনার তাইনা।

সায়ান অতি কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
_সিরিয়াসলি, সামান্য কিছু ছবির জন্য তুমি এত ভয় পাচ্ছো? হাউ ফানি!

_তো আপনি ছবিগুলো ডিলিট করে দিলেই তো পারেন।

সায়ান মোহনার দিকে কিছুটা এগিয়ে বলল,
_ডিলিট আমি করে দেবো। তবে তোমার ও প্রমিস করতে হবে যে, আমার সাথে এভাবেই কথা বলবে। যদি রাজি থাকো..

_রাজি রাজি…কিন্তু আপনি ছবিগুলো এক্ষুনি ডিলিট করবেন,আমার সামনে।

সায়ান আবারো হাসতে হাসতে নিজের ফোনটা বের করে মোহনাকে দেখিয়ে ছবিগুলো ডিলিট করে দিলো। মোহনা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল এবার। মনের আনন্দে আইসক্রিম খেতে লাগলো।
সায়ান এবার নিজের পকেট থেকে একটা ছোট্ট টেডিবিয়ার চাবির রিং বের করে মোহনার সামনে ধরে বলল,
_এটা তোমার জন্য।

মোহনা এক ঝটকায় সেটা হাতে নিয়ে নিলো। খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
_সিরিয়াসলি? কি কিউট এটা! থ্যাংক ইউ।

_মেহু…

বেশ গম্ভীর কণ্ঠের ডাকটা শুনে মোহনা আর সায়ান দুজনেই পিছনের দিকে তাকালো। ইশা কোমড়ে হাত দিয়ে সরু চোখে একবার মোহনার দিকে,আরেকবার সায়ান এর দিকে তাকিয়ে দুজনকে পর্যবেক্ষণ করছে।
ইশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মোহনা শুকনো ঢোক গিলে মেকি হাসলো। একনজর সায়ান এর দিকে তাকিয়ে নিজের ব্যাগটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম এর কাঠিটা সাইডে ফেলে দিলো। তারপর ইশার কাছে গিয়ে বলল,
_আরে দোস্ত,তোকেই তো খুজছিলাম।

কথাটা বলেই ইশার হাত ধরে অন্যদিকে নিয়ে যেতে লাগলো মোহনা। সায়ান আর ওদের মাঝে গেলোনা, উঠে দাড়িয়ে নিজের বাইকের দিকে অগ্রসর হলো।

ইশা সরু চোখে মোহনার দিকে তাকিয়ে থেকে ওর হাতটা ছাড়িয়ে দেয়। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
_কি চলছিল ওখানে?

_ক কী চলবে? আরে তুই যা ভাবছিস তেমন কিছুই না।

_তেমন কিছুই না তাই টেডিবিয়ার গিফট করা হচ্ছে তাইনা? আমাকে পাগল ভাবিস তুই?

_দোহাই লাগে বইন,আম্মুরে কিছু বলিস না। আর সেরকম কিছুই নেই,আমি তোকে যেতে যেতে সব বলতেছি চল।

কথাটা বলেই মোহনা ইশার সাথে হাটতে হাটতে তাকে সব কিছু খুলে বলে। সবশেষে মোহনা বলে,
_সত্যি বলতেছি দোস্ত,আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই নেই।

ইশা ভ্রু নাচিয়ে বলল,
_আচ্ছা….তাহলে তুই এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন শুনি?

মোহনা নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
_কোথায় লজ্জা পাচ্ছি!

_বুঝছি বুঝছি। এখন শোন, বিকেলে কলেজে যাবো একবার।

_কেন?

_নিরব ভাইয়া যেতে বলছে, কি যেন সারপ্রাইজ দিবে বললো।

_আন্টি যেতে দিবে তোকে?

_ফাইজা আপুকে নিয়ে যাবো,তাহলেই যেতে দিবে। এসব ভাবতে হবে না,তুই টাইমমতো চলে আসিস কিন্তু।

_ওকে..

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে