#তুমিই আমার পূর্নতা –[৪]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
______________________________
রত্না বেগম আমের মোরব্বা করতে আম কা’ট’তে গিয়ে হাতের একাংশ কে’টে ফেলেছেন! পুরো বাড়ি জুড়ে চিৎকার করা শুরু করে দিয়েছেন এটা নিয়ে। রত্না বেগমের চিৎকারের আওয়াজ শুনে কলি, প্রিয়তা সবাই নিচে নেমে আসলো। প্রিয়তা শাশুড়ি মায়ের চিৎকারের আওয়াজ শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো! কাছে গেলো কি হয়েছে সেটা দেখবার জন্য।
-‘ আরে এতো ব্যস্ত হচ্ছো কেনো? একটু ব্যান্ডেজ করে দাও ঠিক হয়ে যাবে।’
বেশ বুঝতে পারছে কলির কোনো কিছু যাবে আসবে না। এটা সে এই দু’দিনের ব্যবহারেই বুঝে গেছে।
কলি মেয়েটা নিজের স্বার্থ বুঝে যার ফল গতোকাল সকালেই বুঝেছি! মায়ের বয়সী একজন মহিলার হাত কে’টে যাওয়া সত্বেও যে কি করে এভাবে বলছে বুঝতেই পারছি না! আমি কলির কথা আমলে না নিয়ে মা’য়ের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিই। মা কিচ্ছু বলে না চুপচাপ ভাবে রয়েছে। হয়তো কিচ্ছু বলার নেই কলি যে ওনার আদরের বউমা! হয়তো এতোক্ষণে আমি হলে উনি যে কি করতে নিজেরও অজানা!
-‘ আম্মা এবার আপনি একটু বসুন তো প্রিয়তা ভাবী আম কে’টে দিবে নে, আপনি খালি মোরব্বা টা করবেন বুঝলেন তো?’
-‘ আমার হাত কে’টে গিয়েছে এরপরেও বলবে তুমি? ‘
-‘ আরেহ্ শাশুড়ি মা! বংশধর চাইলে তো একটু আধটু কষ্ট করতেই হবে তাই না বলুন? আপনি কাজে লেগে পড়ুন তো আমি রুমে যাচ্ছি।’
কলি উপরে চলে গেলো। মা’য়ের মুখখানি মলিন হয়ে গেলো কলির কথা শুনে তবুও মা কিচ্ছু বললো না কলিকে! অথচ আমি হলে এতোক্ষণ আমার উপর চিৎকার করে পুরো বাড়ি মা’থায় তুলে নিতেন উনি। আমার কাজ কর্ম, এমনকি মা’কে নিয়েও উনি কোনো কথা বলতে ছাড় দিতেন না! তবুও আমি আম কা’ট’তে বসে পড়লাম।
-‘ প্রিয়তা তুমি বসলে যে?’
-‘ সে আপনার আদরের বউমা যতোই বলুক কাজ করতে আমি তো জানি আপনার কষ্ট হবে। এই গরমের মধ্যে রান্নাঘরে যেতে পারবেন না তার উপর আপনার হাত ও কে’টে গেছে। আপনি চিন্তা করবেন না, কলির তো আচার খাওয়া নিয়ে কথা তাই না? সে আমি করে দিচ্ছি আপনি নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিন। আচার বানানো শেষ হলে তখন না হয় কলিকে গিয়ে বলবেন আপনি করেছেন।’
-‘ যা ভালো বুঝো।’
ব্যস আমার শাশুড়ি মা চলে গেলেন নিজের রুমে! কিন্তু আমি নিশ্চিত এই কথাটা যদি কলি বলতো উনি আহ্লাদে আটখানা হয়ে যেতেন। শুধু আমার বেলায়ই কেনো যে উনি এরকম করেন সেটা আমারও অজানা।
———————————
কলি সাগরের রুমে বসে ছিলো হঠাৎ চোখ যায় পুরনো একটা ছবির দিকে। যেখানে সাগর আর প্রিয়তার হাসোজ্জল মুখ ভেসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে দু’জনে কতোটা সুখী। শুধু মাঝখান দিয়ে সে এসে গড়বড় করে দিলো সবটা। কিন্তু এটা করা ছাড়া তার নিজের কাছেও তো অন্য কোনো উপায় ছিলো না আর। বাধ্য হয়েই সবটা করতে হচ্ছে! ছোটোবেলা থেকেই কলি অনাথ। বাবা মারা যাবার পর চাচাদের সংসারে বা সেই বাড়িতে ঠায় হয়নি কলির মায়ের। মামার বাড়িতে গিয়ে ওঠলেও মামারাও যেনো বিরক্ত হয়ে যেতেন ওদের দুজনের জন্য! বাধ্য হয়ে কলির মা সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। সম্বল ছিলো কলির বাবার গড়ে দেওয়া ক’টা গয়না। সেটা সঙ্গে নিয়েই কলির মা অন্য একটা শহড়ে আসে। শুরু করে সেলাই মেশিনের কাজ আর সেই এলাকার ক’টা ছোটো ছোটো বাচ্চাকে পড়ানোর কাজ। অনেকটা সংগ্রাম করে বড়ো হয়েছে কলি। সেই মা’কে অপ’হ’র’ন -করে যখন কোনো ব্যাক্তি তাকে এই জঘন্য কাজটা করতে বলে তখন কোনো উপায় না পেয়ে কলি নিজের মায়ের প্রান বাঁচাতে রাজি হয়ে যায়।
কলির মুঠোফোনটি বেজে ওঠলো! ভালো করে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখতে পেলো অচেনা নম্বর। এমনিই এক অচেনা নম্বরের ফোন ধরে কলি আজ এখানে। কলি জানেও না সেই ব্যাক্তির সঙ্গে সাগর বা প্রিয়তা কি শত্রুতা তবুও নিজের মায়ের জন্য এসব করছে। কলি ফোনটি ধরতেই ওপর পাশের লোকটি কথা বলা শুরু করলো,
-‘ তোকে যে কাজেন জন্য পাঠিয়েছি সে-ই কাজটা করছিস তো ভালো করে?’
কলি ঢোক গিললো, সে তো তেমন কিছু করেনি প্রিয়তার সঙ্গে তাহলে কি বলবে এখন?
-‘ সেটা তো আপনি কালকে আপনার লোক পাঠিয়েই দেখতে পেলেন তাই না বলুন? আমি যথাসম্ভব করছি সবটা। ‘
-‘ হ্যাঁ নাস্তানাবুদ করে ছাড়বি সবাইকে বুঝলি তো?’
-‘ আমার মা? মা ঠিকআছে তো? উনার সঙ্গে একটু কথা বলিয়ে দিবেন?’
-‘ হু তোর মা ভালোই আছে। এখন ঘুমাচ্ছে পরে কথা বলিয়ে দেবো। আমি ঠিক যা বলেছি তা-ই যেনো হয় বুঝলি? আর আমি অনেক টা খুশি হয়েছি কালকে আমার লোককে পাঠানোর পরও তুই কাউকে কিছু বলিস নি।’
-‘ কি করে বলবো বলুন? আমি বেশ ভালো করেই জননি, আমি যা-ই করি না কেনো আপনি টের পেয়ে যান আর তারপর আমার মায়ের ক্ষতি করবেন যা আমি সহ্য করতে পারবো না তাই চুপ করে রয়েছি।’
-‘ এভাবেই থাকবি, আর তোরা মা মেয়ে তো দিন এনে দিন পার করিস চিন্তা করিস না কিছু সাহায্যে আমিও করে দিবো। হাজার হোক তোরাও তো আমার কাজে আমাকে সাহায্য করছিস।’
কলি আর কিছু বলর সুযোগ পেলো না ফোনটি কে’টে গেলো। কলি ওই লোকটির কথা তো শুনছে ঠিকই কিন্তু এই বাড়িতে সে কিছু বদলও ঘটাতে চাইছে যা অতীব জরুরী। সে জন্যই তার এসব কার্য কলাপ।
———————-
সাগর নিজের বন্ধুকে সবটা বলেছে এবার সে গোপনে সব কাজ করছে। কিন্তু সাগর নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টা করছে যাতে মুখোশের আড়ালে থাকা লোকটিকে ধরতে পারে। অফিস শেষ বসে আছে একটি পার্কের মধ্যে একটি বাচ্চা শিশু ফুল বিক্রি করছে। বাচ্চা টাকে দেখে সাগরের কেমন মায়া হতে লাগলো সে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে সবগুলো ফুল কিনে নিলো। বাচ্চাটি চলে গেলো। সাগর বিমোহিতো দৃষ্টি নিয়ে বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে আছে। কি সুন্দর ফুটফুটে দেখতে বাচ্চাটি অথচ এরকম একটি বাচ্চা হলে তাদের সংসার টাও পরিপূর্নত হতো! মনে এক রাশ আক্ষেপ নিয়ে সেই জায়গা থেকে ওঠে গিয়ে বাড়িতে গেলো। বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে প্রিয়তার রুমে গেলো কিন্তু রুমে কেনো পুরো বাড়িময় কোথাও প্রিয়তাকে খুঁজে পেলো না সাগর! এবার মনের ভেতর বেশ ভয় ঢুকে গেলো ওই লোকটি প্রিয়তার কোনো ক্ষতি করে নিতো? কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সাগর কলির কাছে গেলো যদি কিছু জানা যায়, কলি এখন আর সাগরের রুমে থাকে না, পাশের রুমটায় থাকে। সবাই জানে কলি সাগরের রুমেই থাকে কিন্তু কলি রাতের আঁধারে পাশের রুমটায় চলে যায় সাগর সারাদিন অফিসেই থাকে সে হিসাবে দিনের বেলা সাগরের রুমে থাকতে কোনো অসুবিধা হয় না কলির।
-‘ প্রিয়তা কোথায় কলি? ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না কেনো বলো তো?’
সাগরের কথা শুনে কলিও বেশ অবাক হলো। বিকেলবেলা চোখটা একটু লেগেছিলো এর আগে তো প্রিয়তাকে নিচেই দেখেছিলো তাহলে এখন কোথায় গেলো?
-‘ আমি তো দেখিনি ওকে।’
-‘ তাহলে কোথায় গেলো?’
প্রিয়তার ফোনে কল লাগিয়েও কিছু হলো না! ফোন বন্ধ বলছে! সাগর ধপ করে নিচে বসে পড়লো! তাহলে কি হয়েছে প্রিয়তা সঙ্গে? ওই লোকটির জন্য কি কিছু হয়েছে? টেনশন নিতে পারছে না আর! সেই মুহুর্তেই একটা কল আসে সাগরের ফোনে, এখনো সেই অচেনা নম্বর। সাগর কল রিসিভ করতেই যা শুনতে পেলো তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না একেবারে!
#চলবে?