তুই হবি শুধু আমার পর্ব-২৪

0
1512

#তুই হবি শুধু আমার
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_চব্বিশ

‘ অয়ন্তি প্রেগনেন্ট ‘ বাক্যটি খাঁন ম্যানশনে খুশির জোয়ার নিয়ে আসলো। ফারহানের পরিবারও এসেছে অয়ন্তিকে উপহার দিতে ও শুভেচ্ছা জানাতে। অয়ন্তির চোখজোড়া ভিজে আছে। এখনও ওর বিশ্বাস হচ্ছে না ওর পেটে ছোট্ট একটা প্রাণ আছে। ওর ভেতরে কারোর অস্তিত্ব আছে, ওর বেবি আছে। রেডিও সেন্টারে এক বেলার খাবারের ট্রিট দিয়ে আরশান সবেমাত্র বাড়িতে ঢুকেছিলো। এমন সময় ডেলিভেরি বয় এসে একটা নীল রঙা পার্সেল ধরিয় দিলো ওর হাতে। প্রেরকের নামটা পড়তেই আরশানের দৃষ্টি প্রখর হলো ‘রোজ’। রোজ পাঠিয়েছে? তার মানে রোজ বেঁচে আছে। খুশিতে আটখানা হয়ে আরশান বাড়ির ভেতর ঢুকেই রোজের কথা জানালো। ফারহান নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে রইলো। এ সংবাদ নতুন নয়, যদি রোজ নিজে আসতো তাহলে খুশিটা প্রকাশ করা যেত।

অয়ন্তি পার্সেল খুললো। একটা স্বর্নের বর্ডার দেওয়া আয়না ও চামচ। নীলরঙা চিরকুটে লেখা, “স্বর্ণের চামচ মুখে দিয়েই জন্মাবে সে।তাঁর যেন কোনো অযত্ন না হয়। আমার জাদুর জুটির প্রাণ সে। তাঁর খেয়াল রাখবে। দাদাই কাজ কাম বাদ দিয়ে বউয়ের সেবা করবে। তাকে একা রাখবে না। এ সময় মুড সুইং চলে, কখনও বিরক্ত হবে না হীরামনের ওপর। হীরামন যা চাইবে তাকে তাই দেবে। হীরামন, তোমাকে ধন্যবাদ মিষ্টি জান’টাকে আনার জন্য। ”

ফারহান সরুচোখে তাকালো। আরশান হেসে বলল,
-কি হয়েছে?

-রোজের শো, আমি করবো। আর কোনো কাজ নেই আমার। অভিনয়, দল সব তো বাদ দিয়ে দিলাম।

-রিয়েলি? তুই কথা বলতে পারিস? রোজের শো’য়ের তো বারোটা বাজায় দিবি। তুই বরং তোর এগ্রেশন কি করে কমবে তার উপায় খুজে সেটা প্রাকটিস কর।

-জোক্স ছিল?

-হু! কবে থেকে করবি বল? আজ বুধবার। পরশু রাতে আছে।

-পরশু না। দু একদিন অবজার্ভ করবো তারপর। এটায় কিভাবে কথা বলতে হয়, গান চালানো কিছুই তো জানি না।

-আর ইয়্যু শিওর?অভিনয় একেবারে ছাড়ছিস?গতবার তো না, না করে আবার ঢুকলি।

-এবার কনফার্ম।প্রডিউসারের লস হয়েছে। সেই টাকাটা দিয়ে একেবারে বিরতি নিয়েছি এই জগৎ থেকে।

-গুড!

___________

ডিভানে বসে গান শুনছিল রোজ। পাশেই আগুণ জ্বলছে। আরও একটা বছর পার হয়েছে। রোজের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। জার্নালিজমে এটাই ওর লাস্ট ইয়ার। পড়া শেষ করে সে দেশের বাইরে চলে যাবে। মুগ্ধতা বা ফারহানের খোঁজ সে রাখেনি। এমনকি ফারহান অভিনয় ছেড়েছে কিনা সেটাও জানে না সে। এতদিন সে শুধু নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছে। চাঁদের কথাও তাকে প্রভাবিত করেনি। ফারহানের কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু মুগ্ধতার কথা মনে পড়লে সেই প্রবৃত্তি অন্তরেই চাপা পড়ে যায়। মেয়েটা ভালোবেসে ভুল করেনি তাহলে রোজের জন্য সে কেন নিজের ভালোবাসা পাবেনা?

রিমোটটা চিবুকে স্পর্শ করে চ্যানেল পাল্টাচ্ছে রোজ। হঠাৎ ওর চোখে পড়ে একটা নিউজ। মূলত ফারহানের ইন্টারভিউ। যেখানের সারমর্ম হচ্ছে সে আর অভিনয়ের জগতে ফিরবে না। কারন হিসেবে দাঁড় করিয়েছে ইচ্ছে। ওর আর ইচ্ছে নেই অভিনয় করার তাই গত একবছর ধরে সে নতুন কোনো প্রজেক্টে কাজ করেনি। রোজের কপালে ভাঁজ পড়লো। দৃষ্টি প্রখর হলো। অভিনয় ছেড়ে দিয়েছে ফারহান? আর দল? রোজ সিয়ামকে ফোন করল তৎক্ষণাৎ। সিয়াম ফোন রিসিভ করতেই রোজ কোমল কন্ঠে বলে,

-হ্যালো,আনসারী স্পিকিং, মানে রোজ বলছি। তোমার স্যার কোথায়?

-ম্যাম আপনি? কেমন আছেন? কোথায় আছেন?

-পরে বলছি। আগে বলো তোমার স্যার কোথায়? তাকে দাও ফোনটা।

-আজ সোমবার! স্যার তো রেডিও সেন্টারে।

-রেডিওতে কি করে?

-আপনার শো এখন স্যার করছেন।

-হোয়াট?

-জি ম্যাম। ফারদিন আঙ্কেল বারবার করে বলেছিলেন ওনার ব্যবসায় হাত লাগাতে কিন্তু স্যার ব্যবসা বাদ দিয়ে আপনার শো করার কথা ভেবেছেন।

-হোয়াট দ্যা… অভিনয় ছেড়েছে কেন? অভিনয় ছাড়লে কষ্ট পাবে জানো না?

-আমি কি করবো? স্যারই তো করতে চান না।

-কোথায় তুমি?

-বাড়িতে। ফারদিন আঙ্কেলের সামনে। স্যার তাঁর একটা কাজের জন্য ডেকেছিলেন।

-ফোন দাও বাবাকে।

সিয়াম ফারদিন সাহেবে হাতে ফোনটা দিতেই রোজ বলে ওঠে,
-কি হয়েছে? হঠাৎ উনি সব ছেড়ে দিলেন কেন? মুগ্ধতা কেমন আছে? ওকেও দেখছি না কোনো মুভিতে।

-আমার কথা জিজ্ঞেস কর। আমি কেমন আছি আগে শোন। সব ম্যানারস ভুলে গেছিস?

-ওহ! কেমন আছো?

-ভালো। তুই?

-আমি তো ভালোই থাকি। কিন্তু ওখানে কি হচ্ছে সেটা বলবে?আমি ফিল্ম নিয়ে গবেষণা করিনি এতদিন। তার মধ্যেই এতকিছু হয়ে গেলো? মুগ্ধতাও অভিনয় ছেড়ে দিল কেন? প্লিজ বলো বাবা।

-মুগ্ধতা বেঁচে নেই। তোর সঙ্গে শত্রুতা করেছিল বলে ফালাক ওকে মে’রে ফেলেছে। তুই সব ভুল জানতিস মা। ফালাকের সঙ্গে ওর তেমন কিছু হয়নি। মুগ্ধতা সব বানোয়াট কথা রটিয়েছিল। ছেলেটা একদম বদলে গেছে। অভিনয় ছেড়েছে, ওর কালো দুনিয়াও ছেড়েছে। তোর মতই একাকিত্বকে সঙ্গী হিসেবে বেঁছে নিয়েছে। ওর দিকে তাকানো যায় না। খায় না, ঘুমায় না, ছেলেটা আমার শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফিরে আয় না, তুই এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আর কতদিনই বা বাঁচবো? ম’রার আগে অন্ততো তোদের একসাথে দেখে ম’রতে চাই। আসবি তুই?

-উনি সব ছেড়েছে?

-বিশ্বাস না হলে, তুই নিজে চেক করে দেখ।

-ছাড়লে আমি ফিরবো বাবা। তোমাদের ছেড়ে আমিও ভালো নেই। তবে কবে ফিরবো সেটা বলতে পারছি না। ভালো থেকো।

_________

অয়ন্তি আর আরশানের ছেলে ‘আরহান খাঁন অনন’। আজ একমাস পূর্ণ হলো ওর বয়স। বাচ্চা হিসেবে কিছু দিক থেকে আলাদা সে। হাসে না, কাঁদে না, সবসময় একটা গম্ভির মুখ করে রাখে। যেন মাত্রই কেঁদে এসেছে বা পেটের গন্ডোগোল হয়েছে। অনেকটা ফারহানের মত স্বভাব। তা নিয়ে সবার হাসিহাসির শেষ নেই। আরশান প্রায়ই অয়ন্তিকে খোঁচায় এটা বলে, ‘আমার বাচ্চা ওর চাচার মত কি করে হল? ‘ অয়ন্তি বরাবরের মতই চটে যায়। ফারহান মাঝে মাঝে আসে, আর অননকে দেখে। রোজ থাকলে ওদেরও হয়তো এমন একটি বেবি থাকত। ফারহান সর্বদা তাকে কোলে কোলে রাখতো। রোজের কাছে একদম দিত না। রাতে সে কেঁদে উঠলে ফারহান নিজে ওর ডাইপার বদলে দিত, ওকে খাইয়ে দিত। রোজকে একদম জ্বালাতো না। কিন্তু রোজ তো সেটুকু করার সুযোগও দিলো না। একা করে দিয়ে চলে গেলো। আগামীকাল শুক্রবার। রোজের জন্মদিনও। সকালে রোজ ফোন দিয়েছিল শোনার পর থেকে সবাই অস্থির হয়ে আছে। ফারহান মনে মনে ঠিক করলো আজ রাতে রেডিওতে সে রোজের কথা বলবে। রোজ নিশ্চই রেডিও শুনবে। এসব ভাবনার মাঝেই অয়ন্তি ডেকে উঠলো,

-ভাইয়া অননকে একটু ধরো না। আমি ছাদে যাচ্ছি। কাপড় তুলতে।

ফারহান অননকে কোলে নিতে চাইলো। কিন্তু বাচ্চাটা এত নরম যে ফারহানের হাত কাঁপছে। যদি পড়ে টরে যায়? অয়ন্তি হেসে বলে,

-তোমার বাচ্চা হলে কি করবে? পড়ে যাওয়ার ভয়ে কোলে নেবে না? নাও, কোলে নাও। ও পড়বে না।

-অনেক নরম অয়ন্তি। আমি ধরতেও পারছি না। তুমি রজনী ভাবির কাছে দিয়ে যাও।

-ভাবি বাড়িতে নেই। অয়নকে নিয়ে স্কুলে গেছে। বুষ্টি পড়ছে আমাকে কাপড় তুলতে যেতে হবে। ওকে একটু নাও না।

-দাদাই কোথায়?

-বাথরুমে। উফ এত কথা বলো না তো। ধরো। আমার ছেলে যেন ব্যাথা না পায়, ওকে বিছানায় শোয়াবে না। কোলেই রাখবা। বুঝেছ?

অননকে ফারহানের কোলে শুইয়ে অয়ন্তি চলে গেলো। ফারহান অননের ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুলের মাঝে নিজের তর্জনি ঢুকিয়ে দিতেই অনন তা শক্ত করে চেপে ধরল। কেঁপে উঠলো ফারহান। এই অনুভূতিটা এত ভালো লাগে কেন ওর? ফারহানের মনে পড়ে রোজও এমন করতো। নিশ্চই ওদের বাচ্চারাও এমন করবে। ফারহান অননকে উঁচু করে ওর কপালে চুঁমু খেলো। বুকের সঙ্গে মিশিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।


রাত এগারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। রেডিও চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফারহান। বারোটা বাজতে যখন দুইমিনিট বাকি তখন ফারহান শো চালু করে।

“হ্যালো ডিয়ার লিসেনার! আপনারা শুনছেন ভালোবাসার রং মহল। এবং আমি ফালাক আছি আপনাদের সঙ্গে। কেমন আছেন সবাই? নিশ্চই ভালো। আমিও ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের একটা গল্প শোনাতে চাই। গল্পটা কার? কেন শোনাচ্ছি এটা নিশ্চই জানতে চান আপনারা,গল্পটা আমার খুব কাছের একজন মানুষের। যার আজ জন্মদিন। বারোটা বাজতে এখনও ত্রিশ সেকেন্ড বাকি। তাই তাকে উইশ করার পূর্বে তাঁর নাম জানিয়ে দেওয়া উচিত। যে নামে আমি তাকে ডাকি সেই ডাকনামটা হচ্ছে চাঁদ। এক অভিশপ্ত রাজকুমারের ভালোবাসার নাম চাঁদ। এই ভালোবাসার রাজ্যের একমাত্র রাজকন্যার নাম চাঁদ। শুভ জন্মদিন চাঁদ! যেখানেই থাকিস, ভালো থাকিস।

ফার্স্ট কলার ‘চাঁদ? ইন্টারেস্টিং নাম। কিন্তু শেষের কথার অর্থ কি? চাঁদ কি আপনার সঙ্গে নেই? ‘

‘আমার পৃথিবি যতদিন থাকবে চাঁদও ঠিক ততদিনই থাকবে। হয়তো কাছে, নয়তো দূরে। ‘

সেকেন্ড কলার ‘গল্পটা বলুন।’

‘গল্পের শুরুটা অনেক বছর আগের। এক রাজার ঘরে এক ছোট্ট, দুষ্টু, মিষ্টি রাজকন্যার জন্ম হয়েছিল। রাজার মিত্র নতুন অতিথিকে দেখার জন্য তাঁর দরবারে হাজির হয় নিজের রানি ও রাজপুত্রের সঙ্গে। ধীরে ধীরে সেই রাজকন্যা আর রাজপুত্রের বন্ধুত্ব হয়। রাজপুত্র বুঝতে পারে এটা শুধু বন্ধুত্ব নয়, তার থেকেও বেশি কিছু। কিন্তু রাজকন্যা তা বুঝতে পারেনা। রাজকুমারের জেদ ও রাগ অনেক বেশি ছিলো। রাজকন্যাকে নিয়ে অনেক পসেসিভ ছিল। রাজকন্যা যদি কারোর সামনে দাড়িয়ে একটু হেসেও কথা বলতো, সেই রাজকুমার তা সহ্য করতে পারতো না। রাজকন্যাকে শাস্তি দিত, ধমকাতো। অথচ রাজকন্যা রাজকন্যা তা বুঝতো না।রাজকুমারের মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ করত। রাজকুমারকে শাস্তি দেওয়াতো। কিন্তু বড় হওয়ার পর রাজকন্যাও বোঝে যে সেও রাজকুমারকে চায়। কিন্তু একটা দূর্ঘটনায় ওদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। রাজকুমার নিজের মাত্রার থেকে অতিরিক্ত রাগ জেদ নিয়ে রাজকন্যাকে ছেড়ে চলে যায়। খারাপ হয়ে যায়, অভিশপ্ত হয়ে যায়। কয়েক বছর পর রাজকন্যার সঙ্গে তাঁর আবার দেখা হয়। সব ভুল বোঝাবুঝি মেটানোর আগেই নতুন করে ঝামেলা সৃষ্টি হলো। রাজকন্যার আগের অভিমানের সঙ্গে নতুন অভিমান যুক্ত হয়ে তা পাহাড়সম গড়ে উঠলো। সেই এক পাহাড় অভিমান নিয়ে রাজকন্যা পুনরায় ছেড়ে চলে যায় এই অভিশপ্ত রাজকুমারকে। রাজকুমার তাঁর রাগ ভা’ঙানোর সুযোগটুকুও পায়না। কারন সে আগে যেসব ভুল করেছিল তাতে রাজকন্যা কষ্ট পেয়ে ওর সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিল। অবশেষে যখন সেই রাজকন্যা রাজকুমারকে ছেড়ে চলে যায় তখন রাজকুমার বুঝতে পারে জীবনের সবথেকে মূল্যবান জিনিসটাই হারিয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে অনুভূতি, আর অনুভূতিটা হচ্ছে ভালোবাসা।সে জানে না রাজকুমারের জীবনে তাঁর ভূমিকা কি? রাজকুমার তাকে কতটা চায়, কতটা ভালোবাসে। তাঁর জন্য এখন রাজকুমার নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে। তাকে একনজর দেখার জন্য সবকিছু করতে পারে।নিজের স্বপ্ন-ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিতে পারে। রাজকন্যা রাজকুমারের কোনো খবরই রাখে না। রাখলে জানতো তাঁর ভালোবাসার জন্য সেই রাজকুমার কি কি করতে পারে। কি কি করেছে। কি কি বদলেছে। রাজকুমারের এখন বড্ড একা লাগে। সে শুধু রাজকন্যার শূণ্যতা অনুভব করে। রাজকন্যার অভিমান ভা’ঙানোর সময়টার অভাব বোধ করে। রাজকন্যাকে দেখার তৃষ্ণা রাজকুমারের নয়নের কখনও ফুরাবে না। তাঁর মুচকি হাসি, গাল ফুলিয়ে অভিমান জাহির করা, রাগ হলেই জেদ করে বলা, ‘পা ধরে স্যরি বলতে হবে’, কষ্ট পেলে গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদা। সবকিছুর শূণ্যতা অনুভব করছে রাজকুমার। অপেক্ষা করছে তাঁর ফিরে আসার। রাজকুমার জানে না সে ফিরবে কিনা, কিন্তু সে জীবনের শেষ সময়পর্যন্ত অপেক্ষা করে যাবে।’

থার্ড কলার ‘অনেক ভালোবাসেন তাকে তাইনা? সে নিশ্চই ফিরবে। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাকে বিশেষ কোনো সার্প্রাইজ দিন। মেয়েরা উপহার পেলে খুশি হয়।’

‘তাঁর ঠিকানা জানা নেই আমার। তবে আমার গলার গান তাঁর বড্ড প্রিয়। সে সবসময় বলত অভিনেতা ফারহান মাহতাব থেকে বেরিয়ে যেদিন সাধারণ এক ফালাক হয়ে আসবে আমি সেদিন ফিরবো। ‘

ফোর্থ কলার, ‘আপনি ফারহান মাহতাব? ফারহান মাহতাব ফালাক? সুপারস্টার ফারহান? আই কান্ট বিলিভ ইট। আপনি আপনার ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে এই রেডিও শো হোস্ট করছেন?’

‘হুম। চাঁদের ইচ্ছে ছিল এটা।’

ফিফ্থ কলার, ‘মেয়েটা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী যে সে আপনার মত একজনের ভালোবাসা পেয়েছে। তবুও সে চলে গেল কেন? তাঁর আসল পরিচয় কি? কি করে সে?’

‘সে আরজে। ‘

‘আর’জে? সামান্য একটা আর’জের জন্য নিজের সমগ্র ক্যারিয়ার বাদ দিলেন? এটা বোকামি। যে ছেড়ে যায় তাকে ভুলে যাওয়া উচিত। আমাদের পুরাতন আর’জে রোজ বলতো এটা। যে পাখি ভালোবাসে সে নীড়ে ঠিক ফিরে আসে। আর যে বাসে না সে ঠিক মুক্ত আকাশ খুজে চলে যায়। আজ রোজ থাকলে সে এটাই বলতো। ‘

‘আপনাদের রোজ যথার্থই বলে। কিন্তু তাঁর মত একজন খুজে পাওয়া দূর্লভ। এজন্যই তাকে পাওয়ার জন্য এই কষ্টটুকু সহ্য করা যায়। পৃথিবিতে কোনো জিনিসই সহজে পাওয়া যায়না। সেখানে ভালোবাসার মত এক জটিল অনুভূতির মানুষ সহজে পাওয়া যাবে? ‘

‘সে আপনাকে ভালোবাসে?’

‘হ্যাঁ।

‘তাহলে চলে গেল কেন? কি নাম তাঁর? নাম বলতে কি অনেক সমস্যা? তাঁর কি বিয়ে হয়ে গেছে? তাই তাঁর নাম নিচ্ছেন না।’

সিক্সথ কলার, ‘তাঁর নাম কি? সে কেন চলে গেছে? ‘

‘তাঁর নাম সাইরাহ্ আনসারী রোজা ওরফে রোজ। যে ভালোবাসার রংমহলের আর’জে। আর সে অভিমানের কারনে আমাকে ছেড়ে গেছে। ফিরবে বলেছে। কিন্তু যখন আমি বদলে যাবো। আজ হয়তো রোজও শুনছে শো’টা। তাই বলছি।তুই ঠিক যে যে পরিবর্তন চেয়েছিলি সবটা করেছি চাঁদ। যেমন ফালাককে চেয়েছিলি তেমন ফালাক হয়েছি। আমার গান তোর প্রিয় ছিল তাই আজ তোর বার্থডে গিফট হিসেবে গানটাই দিলাম। তোকে বিশেষ কিছু দেওয়ার মত সামর্থ্য আজ সত্যিই আমার নেই। হয়তো তুই নেই বলে মনে হয় আমার কিছু নেই, আমার আমিত্ব নেই, কোনো অনুভূতি নেই, কোনো ভালোলাগা নেই। শুধু এটুকুই বলবো। ফিরে আয়, সব কিছু ছেড়ে শুধু আমার হতে আয়। রাগ, জেদ, অভিমান ভুলে আমার হয়ে যা প্লিজ! শুধু আমার।

♪♪♪♪♪তুই ছাড়া লাগে, শূন্য এ জীবন।
আমার বেঁচে থাকার, শুধু তুই কারণ।
কত চাইলে তোকে বল,
ফিরে আসবি তুই আবার।
কত বাসলে ভালো বল,
#তুই_হবি_শুধু_আমার।

অভিমান যত আছে,
করে নিস ভালোবাসা।
দূরত্ব সব’ই ভুলে,
শুরু হোক কাছে আসা।

তুই বিহীন ভালো নেই,
প্রহরগুলো লাগে একা।
এ মনে তোর তরে,
কত প্রেম আছে যে রাখা।

কত চাইলে তোকে বল,
ফিরে আসবি তুই আবার।
কত বাসলে ভালো বল,
#তুই_হবি_শুধু_আমার♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

নিজের গলায় গানটুকু গেয়ে থামল ফারহান। চোখজোড়া ভিজে উঠলো। ঠিক তখনই ফোন বেজে ওঠে। আননোন নাম্বারের কল। প্রায় দশবার কল দিয়েছে। মিসড কল নোটিফিকেশন জ্বলছে। কে এত বার ফোন দিয়েছে? তাও এত রাতে?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে