#তুই হবি শুধু আমার
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_তেইশ
-সি ইজ নো মোর আমীর খাঁন। ওর লা’শটা পাওয়া যায়নি, তবে ওর জামা কাপড় জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। চাইলে অফিসে এসে সেগুলো দেখে নিশ্চিত হয়ে যেতে পারেন।
আরিফিনের ফোনটা রেখে আমীর সাহেব বিছানার ওপর বসে পড়লেন। সমগ্র শরীর কাঁপছে। চোখের বাঁধ ভে’ঙে গেছে। রোজ আর নেই, বাক্যটা কল্পনা করতেই তো জান যায় যায় অবস্থা হয়ে যায় সকলের। সেখানে এটা সত্য মানতে কেমন লাগবে? আমীর সাহেবের সামনে সবাই রোজের সংবাদ শোনার জন্য প্রবল আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমীর সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-রোজ নেই।
সবাই সচকিত দৃষ্টিতে ফারহানের দিকে তাকালো। চোখ মুখ শুকিয়ে যাওয়া ছেলেটা নির্নিমেষে আমীরের দিকে চেয়ে আছে। অনিশ্চয়তার ছাঁপ চেহারায়, অবিশ্বাসী দৃষ্টি। সবার চোখে পানি সেখানে ফারহানের চোখ শুষ্ক। আরসালান এগিয়ে এসে ফারহানের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-পাথরের মত দাড়িয়ে থাকিস না। কেঁদে নে। মন হালকা হবে।
ফারহান ফিচেল হেসে জবাব দেয়।
-তোমাদের মনে হয় চাঁদ মা’রা গেছে? ও নিজেকে দূরে রাখছে আমাকে শাস্তি দিতে। আমি জানি ওর কিছু হয় নি।হতে পারে না। কারন আনসারীর মেয়ে প্লান বি রেডি রেখেই কাজ করে। ও নিশ্চই অন্য কোনো কারনে এই মৃ’ত্যুর সংবাদ ছড়িয়েছে। ও ফিরে আসবে দাদাভাই। আমি জানি, ও ফিরবে। আমাকে কষ্ট দিতে চায় তো। পাচ্ছি আমি কষ্ট। দেখি আর কত কষ্ট দেখতে চায় ও। আমিও দেখতে চাই আরও কত ভালোবাসলে ও শুধু আমার হবে। ওর জীবনের সকল বেদনাদায়ক অনুভূতি ও ত্যাগ করবে।
আমীর সাহেব ইশারায় সবাইকে বললেন, ফারহানকে ওর অবস্থাতেই ছেড়ে দিতে। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে। বাস্তবতা ও কল্পনার এক ঈন্দ্রজাল বুনে রেখেছে সে। যেটা ভা’ঙতে সময় লাগবে। আপাতত তা ভা’ঙার প্রয়োজন নেই। রাতারাতি, অভিনয়, দল বাদ দেওয়ার পর রোজের এমন খবর ও মেনে নিতে পারছে না। সবাই আমীর সাহেবের সঙ্গে সহমত পোষণ করল।
_______
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে আছে অয়ন্তি ও আরশান। জেগে আছে দুজনেই, কিন্তু কারোর মুখে কোনো শব্দ নেই। আরশানের ফুঁপিয়ে কাঁদার শব্দ কানে আসতেই অয়ন্তি উঠে বসলো। সারাদিন কাঁদেনি ছেলেটা তাহলে এখন কাঁদছে কেন? অয়ন্তি লাইট জ্বালিয়ে আরশানের কাছে আসলো। আরশান চোখ বুজে আছে। অয়ন্তি ওর মাথায় হাত রাখতেই আরশান অয়ন্তির হাতে হাত রেখে শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
-জানো কুসুম। রোজ কখনও রাগ করে না। ও তো রাগ করতেই জানে না। ওর রাগের অর্থ অভিমান। ফালাক আর আমার ওপরই ওর বেশি অভিমান হয়। কারন ও আমাকে দাদাভাইয়ের থেকেও বেশি আপন ভাবে। ও ভাবে ওর ভাইয়া থাকলে সে হুবহু আমার মত হতো। আর ফালাককে তো ভালোবাসে। সেই ভালোবাসার মানুষ আর ভাইয়ের কাছ থেকে কষ্ট পেয়ে ও আর ফিরে আসবে?
-শান্ত হন। এত কাঁদলে শরীর খারাপ করবে তো।
-ও আর ফিরবে না কুসুম। বেঁচে থাকলেও না। ফালাকই একমাত্র ওকে ফেরাতে পারতো কিন্তু ফালাক তো চায় না বেবিকে জোর করতে।
-জোর করে কাউকে পাওয়া যায়না। ফালাক ভাইয়া এটা জানে।আর রোজকে বন্দি করে রাখা তো অসম্ভব। আপনি চিন্তা করবেন না ওদের মান-অভিমান ঠিক মিটে যাবে। রোজ বেঁচে থাকলো নিশ্চই ফিরবে।
-বেঁচে থাকলে না, বেঁচে আছে। আনসারীর মেয়ে এতো সহজে মরবে না। ঘটনা যা শুনলাম, পানিতে ও পড়েনি। নিজেই ঝাঁপ দিয়েছে। এর কারন কি? কি হতে পারে?
-তার মানে ফালাক ভাইয়া আর আপনি নিশ্চিত রোজ বেঁচে আছে?
-হুম। কিন্তু ওর অভিমান বড্ড খারাপ। একটি সর্বনাশা অনুভূতি। ওর অভিমান হলে ও সবার থেকে দূরে চলে যায়। কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তুমি এতদিনে এটুকু বোধ হয় জেনেছো।
-হুম।
-ঘুমাও। তোমার শরীর ভালো নেই। কাল ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে। তোমার মাথা ঘুরছে কেন সেটা পরীক্ষা করতে হবে। আচ্ছা তোমার পিরিয়ড হচ্ছে তো?
অয়ন্তি এবার লজ্জায় নুইয়ে গেল। এটা কেমন প্রশ্ন? হুট করে এমন প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়া যায়? আরশান ভ্রু কুঁচকে আবারও প্রশ্ন করে,
-লজ্জা পাচ্ছো কেন? দুই বছর হয়ে গেল বিয়ের। এখন তো স্বাভাবিক হও। তোমারই স্বামী আমি, পরপুরুষ না। আর এটা স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন, এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? হচ্ছে নাকি হচ্ছে না?
-হচ্ছে না।
-কতদিন?
-মাসখানেক হলো।
আরশানের কপালের ভাঁজ দৃঢ় হলো। ঠোঁট কামড়ে সে হেসে ওঠে। অয়ন্তি চোখ-মুখ খিচে তাকায়। কাঁদার মাঝে আবার হাসে কেন লোকটা? অধিক শোকে পাগল হয়ে গেল নাকি? আরশান চোখের পানি মুছে বলল,
-ঘুমাও। কাল সকালে যাবো হসপিটালে।
-হাসছেন কেন?
-তুমি বুঝবে না। এখনও তেমন পাঁকোনি তুমি। তা বুঝে হাসছি। গুড নাইট কুসুম।
-আমি পাঁকিনি?
-পাঁকলে মানে বুঝতে। বুঝেছো মানে?
-না তো।
-ঘুমাও। চিন্তা বাদ দাও।
অয়ন্তি শুয়ে পড়লো। আরশান লাইট অফ করে এসে অয়ন্তির কোমর পেঁচিয়ে ওর কাঁধে মুখ গুজে শুয়ে পড়ে। বাড়ির নতুন অতিথির আগমনে নিশ্চই পুরাতন প্রিয় মানুষটা ফিরবে। এই সুখ থেকে নিজেকে সে বঞ্চিত করবে না।
___________
আরিফিন রোজের বাবার ডায়েরিটার কপি নেড়েচেড়ে দেখছে।কোড টা বোঝাই যাচ্ছে না। কিভাবে সেটা নিয়ে এ্যাকাউন্টের টাকাগুলো তুলবে? রোজ কেমন জানি প্রহেলিকা ছেড়ে গেছে। আরিফিনের রাগ হচ্ছে। টাকাটা না পাওয়া অবধি শান্তি পাচ্ছে না। এখানে শুধু টাকার কথা, ব্যাংকের কথা, পেনড্রাইভ আর বিশ্বাসঘা’ত’কের কথাই বলা আছে। কিন্তু পিন কোড? আরিফিন কাগজ মুচড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।
রোজের লা’শটা পাওয়া যায়নি কেন? ইরফানের মৃ’ত্যুর সঙ্গে ওর কাহিনিও তো শেষ হওয়ার কথা ছিল। তাহলে নতুন কোন খেলা শুরু হলো?আরিফিন নিজের কেবিনে বসে কফি পান করছে। এমন সময় ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। আরিফিন খেয়াল করলো চারিদিকে পিনপতন নিরবতা। নিরব থাকারই কথা, কারন ইউনিটের অর্ধেক বিশ্বাসঘা’ত’ক গতকাল মা’রা গেছে। আর এখন রাত তিনটে বাজে বলে সবাই চলে গেছে। আরিফিন এখানে ছিল শুধুমাত্র টাকা তোলার কোডটা বের করার জন্য।
থাই গ্লাসের সামনের গ্রিল ভেদ করে শো শো করে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে। আরিফিন কফিমগ তুলে সেখানে গিয়ে দাড়ায়। শীতল শুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিয়ে সে কফিকাপে আবারও চুঁমুক দিলো। মনে মনে নিজেকে বাহবাও জানায় নিজের চতুর মস্তিষ্কের জন্য। এতদিন ভালো মানুষ সেজে থাকার কি দারুন অভিনয়টাই না সে চালিয়ে গেছে। রোজ টেরও পায়নি। ওর পিঠের গুলিটা ইরফান নয় ও করেছিলো। ভাবতেই আরিফিনের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। ডুবুরি পাঠানোর পরিকল্পনা সে এমনি এমনি করেনি। আর্মিরা চলে আসায় ওটা করতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ সেখানেও সব কৃতিত্ব সেই পেলো। সব পরিকল্পনা ও সাহসিকতার কৃতিত্ব শুধু আরিফিনের।
আরিফিনের চোখ হঠাৎ গ্রিলের ওপর পাশে নিচের দেওয়ালের ওপর যায়। কেউ দেওয়াল টপকে ভেতরে আসছে। কে? চোর? আরিফিন নিজের বন্দুক খুজতে থাকে। কিন্তু অন্ধকারে পায়না। সে দ্রুত ডাস্টবিন থেকে কাগজগুলো কুড়িয়ে নিলো। এগুলোর জন্য আসেনি তো চোর? সব দিলেও এই একশ কোটি টাকার খোজ সে কাউকে দেবে না। কাউকে না।
আরিফিন কাগজগুলো পকেটে গুজতেই ওর কেবিনের দরজা খুলে যায়। ভেতরে প্রবেশ করে একটা অবয়ব। আরিফিন কঠিন গলায় বলে,
-কে তুমি? কি চাও?
অবয়বটি জবাব দিল না। কফি মেকার থেকে কফি বানিয়ে আয়েশ করে চেয়ার টেনে বসে, চুঁমুক দিয়ে সরু চোখে আরিফিনের দিকে তাকালো। পকেটে হাত শক্ত করে চেপে দাড়িয়ে আছে সে। চৈতালি পূর্নিমার বড় রুপোর চাঁদের আলোয় সবটা আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। অবয়বটি কফি পান করে কাপটা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। যাওয়ার পথে সেটা কোনো ড্রেনে ফেলতে হবে। ও যে এখানে এসেছিল তার প্রমাণ রাখা যাবেনা।
-কে তুমি?
অবয়বটি এবার শব্দ করে হাসে। সেই হাসির ঝংকার শুনে আরিফিনের পা টলে উঠলো। কোনোরকমে সে চেয়ার ধরে বসে পড়লো। আরিফিন অস্পষ্ট স্বরে বলে,
-রোজ। তুমি?
রোজ হাসি থামিয়ে গম্ভির কন্ঠে বলে,
-বাবাকে বলতে শুনেছিলাম, ‘ টাকা দেখলে কাঠের পুতুলও হা করে। ‘ বাস্তবে বাক্যটির উপযুক্ত দর্শন করানোর জন্য ধন্যবাদ আরিফিন সাহেব। আপনাকে বিশ্বাস করে নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিলাম। আর সেই আপনিই কিনা আমাকে উপরে পাঠাতে চাচ্ছিলেন? এটি কি ঠিক করেছেন?
-তুমি আমার কথা শোনো। আমি ওসব..
-আর একটা কথা বললে, গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেবো আপনার হৃদপিন্ড। আপনার চৌদ্দগুষ্টির কথা এবার, একবারও ভাববো না। কারন আমাকে ধোকা দেওয়ার শাস্তি শুধু মৃ’ত্যু।
আরিফিন চুপ হয়ে যেতেই রোজ বলতে শুরু করে,
-সেদিন কেন আপনার এ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করি নি জানেন? কারন আপনাকে হাতে রাখতে চেয়েছিলাম আমি। আপনাকে হাতে না রাখলে এদের ধরা যেত না। পাশাপাশি টাকা এমন একটা বস্তু যা লোভের সৃষ্টি করে। কথায় বলে, লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। আপনি লোভ করেছেন, পাপ করেছেন এবার মৃ’ত্যুর স্বাদটাও গ্রহণ করবেন। তার আগে ব্যাংকের কোডটা জেনে নিন। আমার বাবা কাঁচা খেলোয়ার ছিলেন না। তিনি সব জানতেন, তিনি যদি সবটা তখনই ফাঁস করতেন তাহলে আমার আর মামনির জীবন ঝুঁকিতে পড়তো বলে নিজে মৃ’ত্যুকে বরণ করেছিলেন। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। ভালোবাসার মত মানুষ ছিলেন। আমি ওতটাও ভালো নই বলেই হয়তো একে একে বাবার সব বিশ্বাসঘা’ত’ককে মা’রতে পেরেছি। এবার আসি পিনে! বাবার লিখে গেছে, ‘বিশ্বাসে বিষ’ এটা পিনকোড ছিল। তবে এর অর্থ কি জানেন? মূল যে বিশ্বাসঘা’ত’ক তাঁর নাম। অর্থাৎ ব্যাংকের পিনকোড হচ্ছে আরিফিন আদ্র। আপনার কৌতুহল মিটেছে?
-তাহলে আমি ছাড়া তোমার ব্যাংকের কাজ?
-ওটা?ওটা হয়ে যাবে।বাবার টাকা নিজের করতে বেশি সময় লাগবে না আমার। এতোদিনের সব গেমপ্লান তো শুধু আপনার জন্য ছিল। আমার বা হাতে আ’ঘাত লাগার পর সেখানে যে ব্যান্ডেজটা করা হয়েছিল, সেই চামড়ার ভেতরে আপনি মাইক্রোফোন রেখেছিলেন। এজন্যই তো আপনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে এত কাহিনি করতে হলো।
-তুমি জানতে সব?
-প্রথম দিকে জানতাম না। পরে হাতে ব্যাথা পাচ্ছিলাম বলে নিজেই চামড়া কে’টে ফেলেছিলাম। জানেনই তো আমার কা’টাছেড়া করতে ভালো লাগে। (বিদ্রুপ হেসে)
-এখন কি চাও?
-সংশোধন। নিজের ভুলের। শেষ বিশ্বাসঘা’ত’ককে বাঁচিয়ে রেখে যে ভুলটা করেছি তার সংশোধন করতে এসেছি। গুড বাই আরিফিন সাহেব।
বলে আরিফিনের বন্দুক দিয়েই আরিফিনের কান বরাবর শ্যুট করলো। হাতে গ্লাভস পড়া ছিল যার দরুন রোজের হাতের ছাঁপ বন্দুকে পড়েনি। আরিফিন সাহেব মা’রা গেলে রোজ বন্দুকটা ওনার হাতে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়। এরপর আরিফিনের হাতের লেখা নকল করে একটা কিউট সুইসাইড নোট লিখে সেটা চাপা দিল ওনার কেসের ফাইলের ওপর। সেটা সবার আগে মানুষের নজরে পড়ে।
শেষ অপরাধির মৃ’ত্যুর শেষে সে বেরিয়ে আসলো এই ইউনিট থেকে। বিক্ষিপ্ত মন শান্তির খোঁজে বের হয়। রোজের বরাবরই শান্ত নিরব রাত প্রিয়। ওর ইচ্ছে ছিল প্রতিরাতে ফারহানের সঙ্গে সে হাটতে বের হবে, ঘুরবে, আইসক্রিম খাবে। এখন যেহেতু ফারহান নেই তাই সে নিজের ইচ্ছেগুলো নিজেই পূরণ করবে।
যেতে যেতে রোজ আকাশের দিকে তাকায়। মেঘে ঢাকা নিষ্প্রভ চাঁদটাকে দেখে ওর মনে হলো এই চাঁদের মনেও হাজার অভিযোগ, অভিমান জমা আছে। রোজ চাঁদকে প্রশ্ন করে,
-কি হয়েছে তোমার?
চাঁদের রাগান্বিত জবাব, ‘কিছু না।’
-না বললে তো জানতে পারবো না। যদি বলতে না চাও তাহলে শুনবো না।
-তা কেন শুনবে? তুমি তো কারোর কথাই শোনো না।
-হতে পারে। কিন্তু কেউ কি আমার কথা শোনে?
-শোনে কিনা জানো না?
-জানতে গেলে, তাকেও যে জানাতে হবে। সে যদি ঠিক করে আমায় জানাতে না পারে আমি কি করে জানবো?
-মানুষটা তোমাকে ভালোবাসে। আমার সঙ্গে কতবার তোমার তুলনা করেছে। আমার সামনে তুমি নিতান্তই তুচ্ছ এক মানবী। আমার সৌন্দর্যের সামনে তুমি ক্ষুদ্র। অথচ সে আমার সৌন্দর্যকে অবহেলা করে তোমাতে মুগ্ধ হয়েছে। কতবার এই চাঁদ অপমানিত হয়েছে তোমার তাঁর চাঁদের সামনে।
-আমি ফিরে গেলে মুগ্ধতার কি হবে? ভালোবাসায় সব জায়েজ! আমার মতে ও ভুল করেনি। ফালাকেরই উচিত ছিল সাবধান থাকা, সতর্ক থাকার। সে বিয়েতে সায় দেওয়ামাত্র তাঁর জীবন থেকে রোজ নামক চাঁদ নির্বাসিত হয়েছে।
-কেউ যদি সন্তান নিয়ে মিথ্যে কথা বলে কাউকে জোর করে তখন তার কি করার থাকে? তোমার ফালাক অসহায় হয়ে বিয়েতে মত দিয়েছিল। তুমি ফিরে যাও ওর কাছে।
-যে তোমাকে অপমানিত করেছে, অবহেলা করেছে তাঁর হয়ে সাফাই গাইছো কেন? আত্মসম্মানবোধ নেই তোমার?
চাঁদের পাশে কয়েকটা তারা মিটিমিটি জ্বলে উঠলো। রোজের মনে হলো ওরাও রোজকে দেখে হাসছে। রাস্তার পাশেই বসে ছিল রোজ। আগে থেকেই যে ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়ে ছিল তা কেউ টের পায়নি। এই নাটকের উদ্দেশ্য ছিল সবার সামনে নিজেকে মৃ’ত প্রমাণ করা যেন ফারহান মুগ্ধতাকে বিয়ে করে নেয়। আর আরিফিনের ম’রার সম্পূর্ণ দোষ গিয়ে বর্তায় আরিফিনেরই উপর। নাহলে নতুন করে প্রতিশোধের অনল জ্বলে উঠতো। রোজ আবারও চাঁদের দিকে তাকালে চাঁদ জবাব দেয়।
-সে তোমাকে ভালোবাসে।তাঁর ভালোবাসার কাছে দুটো মিথ্যে কথা স্বীকার্য নয়।
-তাঁর পেশা?
-যদি ছেড়ে দেয়?
-তার কালো জগৎ?
-সেটাও যদি ছেড়ে দেয়?
-আমার মত সাধারণ জীবন?
-যদি সেও তোমার মত সাধারণ জীবন অতিবাহিত করে? তোমাকে নিয়ে থাকে? তোমার সকল অনুভূতির সম্মান দেয়? তোমাকে আর মিথ্যা না বলে, তোমাকে আর দূরে ঠেলে না দেয়? তোমার থেকে কিছু না লুকায় তাহলে?
-ফিরে যাবো।
চলবে?