#তুই হবি শুধু আমার
#সাইরাহ্_সীরাত
#পর্ব_তেরো
রোজ যে মনে মনে কোনো গন্ডোগোল ঠিক পাঁকাচ্ছে তা ফারহান আগে থেকেই টের পেয়েছিল তাই সঙ্গে করে হ্যান্ডকাফও জোগাড় করে এনেছে। বলা যায়না মেয়েটা যদি পালিয়ে যায়? চমককে চমকে দিয়ে আজ থার্ড ডিগ্রি দেওয়ার সময় রোজকে তো সঙ্গে নেওয়া যাবে না। রোজ জানালার বাইরে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। ফারহান তা লক্ষ করেও গাড়ি চালানোয় মন দিল। রাগে পা’র তলা থেকে মাথার চুল অবধি জ্বলছে। কোথাকার কোন ছেলেকে ভালোবাসে আজ সে দেখেই ছাড়বে। ফারহান রোজের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে তা স্টিয়ারিং’য়ের সাথে জুড়ে দিল। রোজ হতবাক দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করে আছে। ফারহান গাড়ি লক করে চলে গেল রেডিও সেন্টারের ভিতরে। আরশান দারোয়ানকে বলে রেখেছিল তাই ফারহানকে দেখামাত্র দারোয়ান দরজা খুলে দেয়। ফারহান লিফটে উঠতেই রোজ হাই তুলে হাতের হ্যান্ডকাফ খুলে ফেললো। ছোট থেকে বাবার এসব হ্যান্ডকাফ নিয়ে খেলতে খেলতে বড় হয়েছে সে। এসবে তাকে আটকে রাখার মত বোকা বুদ্ধি ফারহানের মাথায় আসলো কি করে? হ্যান্ডকাফ খুলে রোজ বেশ লম্বা একটা চিঠি সাতমিনিটে লিখে, তিনমিনিটে পেছন থেকে রড এনে গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেললো। এরপর বের হয়ে সে ওরনা ঠিক করে স্টিয়ারিং’য়ে কাগজটা সেটে দিতে দিতে বলে,
-দুঃখিত জনাব! গাড়ির কাঁচটা ভাঙার জন্য। কিন্তু কি করবো বলুন? আমাকে আটকে রাখার মত সামর্থ্য আপনার নেই। আমাকে ভালোবাসতে হলে আপনাকেও সেই একই যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে যা আমি করেছি। আর আমি মানুষটা খাঁচায় বন্দি থাকা পছন্দ করিনা। তাই আমি তো যাচ্ছি, পারলে খুজে বের করুন আমাকে। টাটা!!!
ভেতরে এসে নামের তালিকা বের করে ”চমক” নামে কোনো নাম বা মানুষকে পেল না ফারহান। রাগে এবার মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। রোজ এমন একটা বিষয় নিয়ে মজা করেছে? শুধু ওকে রাগানোর জন্য? মেজাজ চড়াও হতেই ফারহান চোখমুখ খিচে ফেলল। মনে পড়ল রোজ গাড়িতে।
-হোয়াট দ্যা…… তুই যদি পালাস চাঁদ। ট্রাস্ট মি তোকে খুজে আমি যাস্ট শেষ করে ফেলবো।
গাড়ির কাছে এসে গাড়ির ভা’ঙাচোরা অবস্থা দেখে ফারহান গাড়ির বাকি উইন্ডোগুলো ভেঙে ফেললো। কাঁচ শক্ত করে চেঁপে ধরতেই হাতের শিরা কেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়লো।ফারহান তা তোয়াক্কা না করে কাগজটা মেলে ধরে সামনে।
অপ্রিয় সাইকো,
প্রথমেই বলেছিলাম রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখুন। রাগের সময় যে আপনার মাথা কাজ করে না তা খুব ভালো করেই জানি আমি। তাই এমন চমকের ব্যবস্থা করলাম। কেমন লাগলো চমকটা?
মন ভা’ঙলে কতটা কষ্ট হয় তা আমি জানি। আপনার রাগ তখন জায়েজ ছিল, কিন্তু আপনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে পারতেন আমি কেন ওসব বলেছি। বা কি হয়েছে? কিন্তু না। আপনি আমাকে টানতে টানতে নিয়ে ইচ্ছেমত ঝারলেন। আমার চরিত্র তুলে কথা বললেন। বলেছেন ভালো করেছেন। কিন্তু রাগ মিটে গেলে কেন ফিরলেন না? কেন আমাকে অবিশ্বাস করে এতগুলো বছর আমাকে একা করে রাখলেন? আমার কষ্ট, আপনাদের কাছে কষ্ট মনে হয় না তাইনা? কি ভাবেন? আমার কষ্ট হয় না, রাগ হয় না, অভিমান হয় না। যা হয় সব আপনার হয়? ভালোবাসলে বিশ্বাস করতে জানতে হয়। জেলাসি ভালো তবে যে মানুষটা আপনার, যেটা আপনি জানেন, নিশ্চিত। তাকে নিয়ে জেলাস ফিল করে ওই ঘটনা ওই কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি আপনার। আমার আত্মসম্মানে আঘাত করেছেন আমাকে ছোট করেছেন, আমাকে বলেছেন আমি নাকি টাকার পেছনে ছুটি। কয়টা মেয়ে দেখেছেন? আপনার জীবনে কয়টা মেয়ে ছিল? যারা টাকার পেছনে ছুটে আপনাকে ফেলে গেছে? যাক সেটা আপনার ব্যক্তিগত জীবন। আমি জানি আপনি আপনার বাবার প্রথম প্রেমিকার কথা ভেবে ওসব রাগে দুঃখে কষ্টে বলেছেন। কিন্তু আমি এতটাও ভালো নই, আরশানের অয়ন্তির মত নরম নই যে আপনার ভালোবাসা দেখে গলে যাবো। এসব পরনারীর শরীর হাতানো ছেলে আমার পছন্দ ছিল না। আপনার স্বপ্ন অভিনয়, তাই তখন কিছু বলিনি কারন তখন আপনাকে আমি নিজের সবকিছু ভাবতাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে আমার ভাবনা পাল্টে গেছে। সবসময় আমি আপনার মন রাখার চেষ্টা করেছি কারন আমার প্রতিটা ইচ্ছে আপনি পূরণ করতেন। সব কথা শুনতেন। আমাকে ভালোবাসতেন। কিন্তু এটা কি সেই ভালোবাসা? আপনি আসলে আমাকে কোনোদিন ভালোই বাসেননি। শুধু আমাকে নিজের সম্পত্তি ভেবে এসেছেন। আমি পুতুল নই, আমাকে নিয়ে যখন ইচ্ছে খেলা করবেন, যখন ইচ্ছে সন্দেহ করে চলে যাবেন। এটা আমি কেন মানবো? আপনি যে অভিনয় করতেন। কত হিরোইনের সঙ্গে ইন্টিমেট সীন করতেন। আমি কি কখনও কিছু বলতাম? না! কারন আমি ভাবতাম ওই মানুষটা আমার। শুধু আমার। ভুল ভাবতাম। আপনাকে যখন আমার সবথেকে বেশি প্রয়োজন ছিল, আমার মা বাবার মৃ’ত্যুর পর। যখন ছোট্ট আমি ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। সারাদিন সারারাত একা একা কাঁদতাম তখন কোথায় ছিলেন? কোথায় ছিল এই ভালোবাসা? উতলে পড়া ভালোবাসার বুঝি এখন দেখা মিলল। তার কারন কি? কারন হচ্ছে, আপনি বুঝেছেন আপনি ভুল করেছিলেন আমাকে অবিশ্বাস করে, আপনি বুঝেছেন রাগের মাথায় আপনার দ্বারা অন্যায় হয়ে গেছে। তো আমি কি করবো? আমি তো ভুলতে পারবো না। আমার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা ভুলবো কি করে? এখনও ওই ঘটনা মনে পড়লে আমার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। আমার মনে হয় আমি আর বাঁচবো না, ম’রে যাবো। দিনের পর দিন নিরবে মৃ’ত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করেছি। আর আপনি কি করেছেন? নিশ্চই এতদিন আমাকে ঘৃণা করেছেন। হু! জানেন একসময় ভাবতাম এভাবে পাগলের মত যে মানুষটা আমাকে ভালোবাসে তাকে ছাড়া এক মুহূর্তও চলবে না আমার। আর আজ ভাবি আপনি কেন আমার জীবনে আসলেন? কেন ভালোবাসি আপনাকে? কেন এত কষ্ট পাই? আমার জীবনের ভুল আপনি। আপনি হয়তো বলবেন রাগের মাথায় ওমন হয়েছে। সত্য কি জানেন?মানুষ রাগের মাথায় সম্পর্ক ভাঙে, রাগের বশে তালাক দেয়,রাগের বশেই সুস্থ স্বাভাবিক একটা সম্পর্ক ধ্বংস হয়। আপনার জীবনে রোজ ও চাঁদের ধ্বংস তো সেদিনই হয়েছিল।
আপনার প্রিয় ফুল গোলাপ। তাই আমার বয়স যখন ছ মাস তখনই আমার রোজা নামটা কে’টে রোজ করে দিয়েছিলেন। বাবা আপনার কথা শুনে আমার ডাকনাম রোজ চালু করে ভুল করেছিলেন। আমি রোজ নামটার জন্য আনন্দ অনুভব করতাম, ভাবতাম আপনার অতি প্রিয় বস্তুটা আমি। ভুল ছিলাম। আজ নিজের কাজের জন্য বড্ড রাগ হয় আমার।নিজের রোজ নামটাও আমি সহ্য করতে পারি না শুধু আপনার জন্য। আমাকে চাঁদ বলে কেন ডাকতেন? আপনার জীবনের একমাত্র উপগ্রহ হিসেবে তো! সেই উপগ্রহ মহাকাশে ভেসে গেল অথচ আপনি নির্বিকার, নির্লিপ্ত! এটাকে ভালোবাসা বলে? আমার তো মনে হয়না। আমি আপনাকে ছাড়া কোনো দ্বিতীয় পুরুষের কথা কল্পনাও করতে পারিনা এটা আমার জীবনের অন্যতম বাজে আবেগ, বাজে অভ্যাস, বাজে অনুরাগ। আমার জীবনে কেউ কখনও আসতে পারবে না। তবে এর মানে এই না যে আপনাকে গ্রহণ করবো। আমাকে ভালোবাসেন তাইনা? তাহলে সে ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হবে। আমি দেখতে চাই চাঁদ আপনার জীবনে কি! আপনার স্বপ্ন অভিনয়, আপনার রাগ, আপনার লাইফস্টাইল সব বদলাতে হবে। সাধারন হতে হবে, লোকাল বাস, লোকাল সকল যানবাহন ব্যবহার করতে হবে। সাধারণ খাবার খেতে হবে, সাধারণ পোশাকে চলতে হবে। যেমনটা গত পাঁচ বছরে আমি ছিলাম।অসাধারণ ফারহান থেকে সাধারণ ফালাক হয়ে যেদিন আসবেন সেদিন পাবেন আমাকে। আমার মত পাঁচবছর কষ্ট সহ্য করুন। তারপর নাহয় ভেবে দেখি আপনার জীবনে ফিরবো? কি ফিরবো না? তবে আমি নিশ্চিত আপনি এসব পারবেন না। কারন আপনি আপনার পাঁচ বছর বয়স থেকে হিরো হবার স্বপ্ন দেখে এসেছেন। আর আপনার জন্মগত রোগ এই রাগ। এইদুটো ছাড়া আপনার পক্ষে কঠিন। তারওপর বড়লোক বাপের ছেলে, কখনও তো এসি কার,প্রাইভেট কার ছাড়া চলেন নাই। আমার মতে আপনার এবার একটু নিজের লাক্সরিয়াস জীবন থেকে বের হওয়া উচিত। যা বলার দরকার বলে দিলাম। কি করবেন সেটা আপনার ইচ্ছে।
ইতি আপনার জীবনের একমাত্র ভুল,,
সাইরাহ্ আনসারী রোজা।
কাগজটি মুচড়ে পকেটে ভরে রাখলো ফারহান। এরপর হাটতে শুরু করলো।দূরে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রোজ এটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফারহানকে বুঝতে হবে ভালোবাসা শুধু স্বৈরাচারী অধিকারবোধ নয়। ভালোবাসায় দুটো মানুষ থাকে। দুজনেই সমান গুরুত্বপূর্ণ থাকে।শুধু একজনের জোর-জবরদস্তি চলবে না এখানে। একজন নিজের মর্জিমত কষ্ট দেবে তা কেন চলবে? তাকেও কিছুটা কষ্ট পেতে হবে। সব একমুহূর্তে ভুলে ফিরে আসবে,, এতটা মহান হতে পারবে না রোজ। তাছাড়া ফারদিন আঙ্কেল চান ওনার ছেলে স্বাভাবিক হোক। তেজ, জেদ রাগ, কমাক। রোজকে অনুরোধ করেছেন তিনি, যেন রোজও ওকে স্বাভাবিক করার একটু চেষ্টা করে। তাই রোজ নরম হলে ফারহানের রাগ দূর করা যাবে না। ওর সাইকিক চরিত্র দূর করতে রোজকে কঠিন হতে হবে।এভাবে কাজ হলে রোজ ফিরে আসার কথা ভাবলেও ভাবতে পারে। নাহলে এই মানুষটা বরং নিজের জেদ নিয়েই থাকুক। হুহ!!
_________________
গায়ে হলুদের দিন এলো।অয়ন্তিদের বাড়িতে হলুদ নিয়ে এসেছে রজনী ও ফারহান। ফারহানকে দেখে রীতিমত অয়ন্তির কয়েকডজন বন্ধু বেহুশ। ফারহান অস্বস্তিতে পড়ে গেল। এমন ঘটনা ঘটবে জানলে সে আসতোই না। নেহাৎ আরশান জোর করলো, বলল, ফারহান যদি না আসে তাহলে সে ভাববে ফারহান এখনও তাঁর ওপর রেগে আছে। বাধ্য হয়েই তাই ফারহানকে আসতে হলো। অয়ন্তি ফারহানকে একা দেখে ফারহানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
-একা কেন?
-দোকা কোথায় পাবো?
-কেন তোমার চাঁদ।
-আমার কোনো চাঁদ নেই। ওর কথা তুলবে না তুমি। তাহলে কিন্তু চলে যাবো।
-এই না, না। তোমাকে দেখবে বলে অনেকে এসেছে। আমি বলেছি তুমি আমার জামাইয়ের বন্ধু। তুমি যদি চলে যাও আমি কালারিং হয়ে যাবো।
-তাহলে চুপচাপ গিয়ে নিজের কাজ করো। বিরক্ত করো না আমাকে।
অয়ন্তি গাল ফুলিয়ে রাগ দেখালো। মনে মনে বললো, ‘আসলেই খাঁটাশ, খচ্চর পোলা। রোজ একে সহ্য করে কিভাবে? বেয়াদব।’ ফারহান অয়ন্তিকে দেখলোও না। রোজকে কথা দেওয়ার পর থেকে প্রয়োজন ছাড়া ও মেয়েদের দিকে তাকায় না, কথাও বলে না। আর ওর সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার পর থেকে তো মেয়েদের সহ্যই করতে পারে না। এটা নিয়ে হিরোইনদের সঙ্গেও মাঝে মাঝে গন্ডোগোল হয়। ফারহান তবুও নারীজাতি সহ্য করতে পারে না। একমাত্র ওর মা ছাড়া কোনো নারীর সঙ্গেই তার বনে না, সে যেই হোক না কেন। এখানে এসেও ওর স্বভাবের পরিবর্তন হয়নি। অয়ন্তি যে আরশানের বউ হতে চলেছে তাতেও কোনো প্রভাব পড়েনি ফারহানের ওপর।অয়ন্তি আরশানের বউ হচ্ছে, ফারহানের তো নয়। তাহলে ফারহান কেন মধুর বাক্য শোনাবে? বিরক্তিকর!
আরশান ফোন করেছে দেখে ফারহান চরম বিরক্ত। কি এত দেখবে অয়ন্তিকে? দুদিন পরেই তো বিয়ে। বিয়ের পর কোলে তুলে, ঘাড়ে তুলে দেখুক। কে দেখতে যাচ্ছে তখন?ফারহানের এমন মারাত্মক সময়ে সে ফারহানকে পিয়নের কাজ করাচ্ছে। অসহ্যকর। ফারহান ফোন রিসিভ করে বলে,
-বলো।
-তোর ভাবিকে কেমন লাগছে? একটা ছবি তুলে পাঠা।
-জানি না। দেখিনি, আর ছবিও তুলতে পারবো না। ওর বন্ধুরা সেন্সলেস হচ্ছে বারবার। ছবি তুলতে দেখলে যদি সেলফি তোলার আবদার করে বসে? ওসব ফালতু ঝামেলা সহ্য করা ইমপসিবেল। তার চেয়ে তুমি রজনী ভাবিকে কল দিয়ে বলো।
-তোর মাথা খারাপ? ভাবি জানলে পঁচানি দেবে।তুই দে, তুই না আমার ছোট্টভাই। বেবির সাথে তোর বিয়ের সব কাজ আমি করে দেবো। আমার কাজটা করে দে।
-লাগবে না। আমার বিয়েতে কোনো কাজ হবে না। তোমার বোনকে দেখামাত্র তুলে নিয়ে রেজিস্ট্রি করে কাজির সামনে কবুল বলে বিয়ে সেরে নেবো।খচম কম, ওর পালানোর সুযোগও কম এতে।
-কিপ্টামি করবি? ছি! তোর এত টাকা রাখবি কই?
-আমার একপাল বাচ্চার অনুষ্ঠান বড় করে করবো। ওখানে সব হিসেব সুদে আসলে মিটিয়ে নিও।
-বাচ্চা? তাও একপাল? তুই দেখি প্লেনের গতিতে দৌড়াচ্ছিস।
-তোমার বোনকে একবার পাই দাদাই, তারপর দেখো কি করি। রাতারাতি বাচ্চা হওয়ানোর প্রসেসিং কমপ্লিট করে ফেলবো। এরপর দেখি পালায় কোথায়।
-বড় ভাইয়ের সামনে এসব বলিস লজ্জা লাগে না?
-লজ্জা আমার কোনো কালেই ছিল না।
-ওকে।এবার একটা ছবি পাঠা প্লিজ। কোনো না শুনবো না। রাখছি।
ফারহান বিরক্তচোখে তাকালো। চারপাশের মানুষজন চোখ দিলে গিলে খাচ্ছে ওকে। সিয়ামকেও আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। গেল কই কাজচোরটা? ফারহান উঠে দাঁড়ালো। অয়ন্তি কোথায়? কার কাছে শুনবে? রজনী ভাবিকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ফারহান এক মুরব্বি ভদ্রলোককে ডেকে অয়ন্তির খোঁজ করতেই বৃদ্ধ চটে গেলেন। ফারহানকে কয়েকটা কথাও শুনিয়ে দিলেন মুহুর্তেই। তাঁর কথার মর্ম ফরহান যা বুঝলো তা হচ্ছে লোকটা তাকে বখাটে ভাবছে। ফারহান অন্যদিকে ফিরে হাটা ধরলো। বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলছে লোকটা। সিড়ির সামনে একটা মেয়েকে পেল ফারহান। তাকে জিজ্ঞেস করতেই সে লাজুক হাসলো, লজ্জায় চোখমুখ লাল করে ফেললো। ওরনার মাথা আঙ্গুলে পেঁচাতে লাগলো। ফারহান ভ্রু কুঁচকে ওখান থেকে চলে যেতে লাগলে মেয়েটি নাম্বার চেয়ে বসে। ফারহান মনে মনে একটা খুবই অভদ্র গালি দিয়ে এড়িয়ে গেল ওকে। সব মেয়েরা যেখানে ফারহানের জন্য পাগল সেখানে রোজ ফারহানকে চরকি ঘুল্লি দিচ্ছে। এই না হলে চাঁদ! ফালাকের চাঁদের সঙ্গে বাকি মেয়েদের পার্থক্য ঠিক এখানেই। অয়ন্তিকে পেতে প্রায় একঘন্টা লেগে গেলো ফারহানের। ছাদে মেয়েলী অনুষ্ঠানে আছে সে। ফারহান সরাসরি গিয়ে অয়ন্তিকে বলল,
-একটু দাড়াও, তোমার ছবি তুলবো।
-কেন?
-দাদাই চেয়েছে।
-তুলবো না ছবি। তখন আমাকে ইগনোর করে অপমান করেছো তুমি। স্যরি বলো।
-ফারহান কাউকে স্যরি বলে না।
-রিয়েলি? আমি তো শুনেছি রোজকে সকাল বিকাল স্যরি বলতে। এমনও নাকি হয়েছে, ও জেদ ধরে বসে থাকতো যে ওর পা ধরে ক্ষমা না চাইলে, স্যরি না বললে ও মাফ করবে না।
ফারহান বিব্রতভঙ্গিতে নড়েচড়ে দাঁড়ালো। দাদাই কি সব গোপন কথা ফাঁস করে দিয়েছে? এই অপরাধে ছবি তোলা’টা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ওর বিয়েটাও বয়কট করা উচিত। আস্ত জাঁদরেল ভাই। ফারহানকে অপ্রস্তুত হতে দেখে হেসে উঠল অয়ন্তি। বলল,
-সম্পর্কে আমি তোমার বড় ভাবি! সুতরাং মাফ না চাইলে ছবি তুলতে দেবো না।
-চাঁদ আর বাকি সবাই আলাদা। চাঁদকে কথা দিয়েছি অন্য মেয়েকে স্যরি বলা যাবে না, সুন্দর বলা যাবে না। প্রশংসা করা যাবে না, প্রয়োজন ছাড়া তাকানোও যাবে না।
-কত বছর আগে?
-চৌদ্দবছর আগে। যখন ওর বয়স চারবছর।
-দুধের শিশুর সঙ্গে লুতুপুতু করেছো নাকি?
-করলেও, তোমার কি? ছবি তুলতে দাও। আর এসব আলোচনা এখানেই থামাও।
-আবারও অপমান?
-নিজেই করালে। এত কথা বলো কেন?
-ওকে। স্যরি বলতে হবে না। রোজের প্রতি তোমার ফিলিং ফার্স্ট কখন কিভাবে আসলো সেটা বলো। কি দেখে পছন্দ হলো? বলো বলো!
-এক্সাক্টলি কি বলবো?
-রূপের কথাই বলো।
-ওর সাড়ে তিনবছর বয়স পর্যন্ত, ওকে গোসল করিয়ে আমি নিজে ওর কাপড় বদলে দিতাম।
কথাটুকু শুনেই স্তব্ধ অয়ন্তি।ভারি নির্লজ্জ তো নায়কটা। এক কথাতেই মুখ বন্ধ করে দিল। একেবারে টক্সিক! অয়ন্তি চোখমুখ খিচে দাড়াতেই ফারহান ফটাফট দুটো পিকচার তুলে আরশানের হোয়াট্স এ্যাপে পাঠিয়ে দিল। আরশান ছবিগুলো দেখে গালে হাত দিয়ে বসল। অয়ন্তির মুখ এমন লাগছে কেন? দুঃখি আর রাগি! কি হয়েছে? ফারহান মিসবিহেভ করেছে নাকি? আরশান দ্রুত অয়ন্তির বাবার ফোনে ফোন দিয়ে ডাহা মিথ্যে এক বাক্য বলে অয়ন্তিকে চাইলো। আশরাফ সাহেব দ্রুত ছুটে গেলেন অয়ন্তির কাছে। অয়ন্তির শশুড় অয়ন্তির সঙ্গে কথা বলতে চান, তাঁর চাওয়ার প্রাধান্যই এখন সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আশরাফ মীর্জার কাছে। অয়ন্তি ফোন ধরতেই আরশান বলল,
-চিপায় যাও।
-মানে, কি? (থতমত খেয়ে)
-মানে মানুষজন থেকে একটু দূরে গিয়ে দাড়াও। কথা বলবো।
-ওহ, ওকে।
অয়ন্তি নেমে নিজের ঘরে চলে আসলো।
-বলুন।
-ফারহান কিছু বলেছে নাকি? তোমার চোখমুখ কালো হয়ে আছে। ওর কোনো কথায় মন খারাপ করো না। ও ওমনই।
-ওমনই মানে? এত নির্লজ্জ?
-নির্লজ্জ? কি বলেছে তোমাকে? কুসুম!
অয়ন্তি সবটা বলতেই হেসে উঠলো আরশান। অয়ন্তি এখনও লজ্জা পাচ্ছে। ফারহানের কথা মনে পড়লেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ছে। আরশান হেসে বলে,
-আমি গিয়েও এটাই দেখেছি। তবে রোজকে আমাদের সামনে চেঞ্জ করাতো না। বুঝতে পারছো ফালাকের নজর কত আগে থেকে বেবির ওপর ছিল? ভাবতেই তো অদ্ভুত লাগে। বাচ্চা ছিল বেবি। আর বেবি নাকি ফারহানের ব্যক্তিগত বন্ধু। আমাদের সাথে তো মিশতেই দিত না বেবিকে। প্লাস বেবিও ওকে ছাড়া কিছু বুঝতো না।
-মানে, বন্ধুত্ব থেকে পরে প্রেম?
-হুম তেমনটাই। আমাকে যখন ও নিজের মনের কথা বলে তখন বেবির বয়স নয়-দশ ছিল হয়তো। তবে প্রথমে বন্ধুত্বও ছিল না। রেণু আর ফারিয়া আন্টির কাছে শুনেছিলাম, ফারদিন আঙ্কেল ও ফারিয়া আন্টি যখন বেবি জন্মানোর পর ওকে নিয়ে যায় তখন ফালাক বেবির ধারে কাছেও যায়নি।
-কেন?
-সাতদিনের বাচ্চার পেট খারাপ হয়েছিল। গন্ধে নাকি ওর বমি আসছিল।
-সেখান থেকে এখানে ক্যামনে আসলো?
-ফারিয়া আন্টি জোর করে ওর কোলে তুলে দিয়েছিল।
-তারপর?
-টানা চারঘন্টা কোলে নিয়েই বসেছিল। অতসময় কি করেছে জানি না। আন্টি নাকি পরে ওকে দিয়ে বেবির নষ্ট হয়ে যাওয়া কাঁথা ধুইয়েছিল। আসলে আন্টিরা দেখতে চেয়েছিল ফালাক কি করে। কিন্তু ব্যাটা নাকি চুপচাপ ধুয়ে দেয়।
-বুঝেছি।
-কি?
-মানে রোজের কাঁথা ধোয়ার সময় মনে হয় হিরো সাহেব মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলেন রোজের বাচ্চার কাঁথাও ধোবেন। আর সে বাচ্চা পয়দার দায়িত্বও নিজে নেবেন। হাহ!
-বাহ! তুমি দেখছি বড় হয়ে গেছ। আমার আর কোনো চিন্তাই থাকলো না। ফালাক আর রোজেরটা যেমন বুঝে গেছ, আমাদেরটাও দ্রুত বুঝলে খুশি হবো। রাখছি, কে যেন ডাকছে।
-হু।
চলবে?