#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৮
বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা বললো না ভাইয়া এতো রাতে ছাদে যাবোনা চাঁদ দেখতে।
বর্ষণঃ কেনো?
বর্ষা বললো এতো রাতে ছাদে চাঁদ দেখতে গেলে যদি ভুত এসে ঘাড় মাটকায়!
বর্ষণঃ কিছু হবেনা পাগলি কোথাকার! আমি আছি না?
বর্ষাঃ হুম সেটাই তো ভয়ের 🤭
বর্ষণ বর্ষার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলে মানে?
বর্ষাঃ ভূত সাহেব তোমাকে মেরে যদি আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন! তখন কি হবে বলো? সেই আমাকেই তো টুপ করে তুলে নিয়ে যাবে। আর তা না হলে আমার ঘাড়ে চেপে সারা এলাকা ঘুরবে!
বর্ষার কথা শুনে বর্ষণ মাথায় হাত দিয়ে বেডে বসে পরে। আর বলে হইছে আমার চাঁদ দেখা যা এবার তুই। অনেক রাত হয়েছে ঘুমোতে যা।তোর ঘুম পেয়েছে ঘুমের ঘোরে কি বলছিস বুঝতে পারছিস না।
বর্ষাঃ কিন্তু আমার তো ঘুম পায়নি।
বর্ষণঃ আমার ঘুম পেয়েছে।তুই যাহ্ আমি ঘুমোবো।
বর্ষাঃ ঠিক আছে ঘুমাও বলে চলে গেলো বর্ষা।দরজার কাছে যেতেই হঠাৎ কিছু একটা ভেবে আবার ফিরে এলো।
বর্ষণ কিছু বলবে তার আগেই বর্ষা বর্ষণের হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এলো।
বর্ষণঃ আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস এভাবে টানতে টানতে বলবি তো।
বর্ষাঃ বর্ষণের কথার জবাবে বললো কোথায় নিয়ে যাচ্ছি গেলেই সেটা জানতে পারবে। এখন কোনো কথা না বলে চুপ চাপ চলোতো।
বর্ষণ ও আর কিছু বললো না। বর্ষার পিছু পিছু যেতে থাকলো। বর্ষণ জানে হাজার বার জিজ্ঞেস করলেও এ পাগলি এখন কিছুই বলবে না। তাই এখন কিছু জিজ্ঞেস করাটাই বেকার।
বর্ষা ছাদে গিয়ে বর্ষণের হাত ছেড়ে দেয়।বর্ষণ বললো তুইনা বললি ভুত তোকে টুপ করে তুলে নিয়ে যাবে বলে তুই ছাদে আসবিনা। আবার ছাদে এলি যে!
আরে ভুত রাজা আমাকে নিতে পারবে না, তুমি আছো না!
বর্ষণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো কেউ একজন বলেছিল আমায় মেরে নাকি তাকে তুলে নিয়ে যাবে ভুত বাবাজী।
বর্ষাঃ ইশশ!! বললেই হলো? আমি মারতে দিলে তো!আমি তো তোমায় আগলে ভুতের সাথে লড়তাম।
বর্ষণ চোখ বড় বড় করে বললো তাই! তা কি করতেন আপনি!
বর্ষাঃ কি আর করতাম, ভুত দেখলেই তো আমি অজ্ঞান হয়ে যাইতাম। ভুত বাবাজী ভাবতো আমি মারা গেছি…..
আর বাকিটুকু বলতে পারলোনা বর্ষা। বর্ষণ ওর মুখ চেপে ধরে রেখেছে হাত দিয়ে। বর্ষণ বর্ষার খুব কাছে চলে এসেছে।বর্ষণের গরম নিঃশ্বাস পরছে বর্ষার চোখে মুখে। চাঁদের আলোয় এটুকু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বর্ষণ খুব রেগে আছে। আর শুধু রেগেই নেই কষ্টও যে পেয়েছে সেটা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। চোখ দুটো টলমল করছে মনে হচ্ছে এখনি নোনাজল গড়িয়ে পরবে।দাঁতে দাঁত চেপে বর্ষণ বললো Don’t dare to say that.
বর্ষা বুঝতে পেরেছে বর্ষণ এ বিষয়ে সিরিয়াস।তাই মুখ থেকে বর্ষণের হাত সরিয়ে বললো এটা তো জাস্ট কথার কথা ছিলো।আমি তো মজা করছিলাম।
বর্ষণঃ তোর মুখ থেকে এ কথাটা যেন আর না শুনি কখনো। এটা মজার কথা নয় আর এটা মজার বিষয় ও নয়।
বর্ষাঃ আচ্ছা সরি সরি। এই দেখো কান ধরেছি( দুই হাতে দুই কান ধরে) । এবার বলো উঠবস করতে হবে? কতোবার উঠবস করবো বলো?
বর্ষণ তো বুকে দুই হাত গুজে ভ্রু কুচকে বর্ষার পাগলামি দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে।তারপর বলে ঠিক আছে আজ ক্ষমা করে দিলাম। আবার কখনো বললে সেদিন শাস্তি দিবো।
বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা হাত পা ছড়িয়ে লাফিয়ে ওঠে। বর্ষাকে এমন করতে দেখে বর্ষণ বলে লাফালাফি করিসনা পরে যাবি তো।
বর্ষা চাঁদের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে দুই হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে বর্ষা চোখ বন্ধ করে চাঁদের আলোর পরশ নিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে এই চাঁদনি রাতটাকে।
আর বর্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একমনে দেখে যাচ্ছে বর্ষাকে। চাঁদের আলোতে বর্ষাকে যেন আরো সুন্দর লাগছে।আজকের চাঁদ রাত যেনো বর্ষণের স্বপ্নের রাত লাগছে।
বর্ষাঃ কটা বাজে ভাইয়া?
বর্ষার কথায় ঘোর কাটে বর্ষণের। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে তিনটা চার মিনিট।
বর্ষাঃনিচে চলো ভাইয়া।
বর্ষার কথায় বর্ষণ বললো এখনি যাবি?
বর্ষা মাথা নাড়লো( হ্যা সূচক)। বললো তোমার কাল ফ্লাইট। তোমার রেস্টের প্রয়োজন আছে।
বর্ষণঃ ঠিক আছে চল।
বর্ষা নিচে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো, ফিরে আসবে কবে ভাইয়া?
বর্ষণ বললো আগামী শুক্রবার। বর্ষণ বর্ষাকে রুমে দিয়ে নিজও রুমে চলে যায়।
বর্ষা ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরে।
বর্ষণ রুমে গিয়ে ডায়রি নিয়ে লিখতে শুরু করে-
জানি না কেউ কখনো দুটে চাঁদ একসাথে দেখেছে কি না। তবে আমি দেখেছি। চাঁদের আলোয় চাঁদমুখটা কি সুন্দর লাগছিলো।যে কেউ দেখলেই হয়তো হারিয়ে যাবে। আমিও ওর মাঝে নিজেকে হারাতে চাই বার বার।
ডায়েরি লেখা শেষ করে বর্ষণও ঘুমিয়ে পরে।
সকালে…
ব্রেকফাস্ট করে আবার ঘুমিয়ে পরেছে বর্ষা বর্ষণ দুজনেই।
১২ টায় ঘুম ভাঙে বর্ষার। ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হয়। নিচে এসে দেখে রমা বেগম রান্নার কাজে ব্যাস্ত। নিপু সাহায্য করছে তাকে। আজ অনেক পদের রান্না হচ্ছে। ভাইয়া এক সপ্তাহ থাকবেনা কি খাবে কি না খাবে তাই এসব আয়োজন।
রান্না প্রায় শেষের দিকে। বর্ষাকে নিচে দেখে রমা বেগম বললো তোর জন্য স্পেশাল কি আইটেম করবো বল।আবার বলবি শুধু ছেলের জন্য করেছি তোর জন্য করিনি।শুধু ছেলেকে ভালোবাসি তোকে ভালোবাসিনা।
বর্ষা একটু হেসে রমা বেগমের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো আমার জন্য আলাদা কোনো আইটেম লাগবেনা। তোমার ছেলের জন্য যেটা করেছো সেটা থেকেই একটু ভাগ দিও তাতেই হবে।
বর্ষণঃ আমার থেকে তোকে কেনো ভাগ দিবো? আমার জিনিসের ভাগ আমি কাউকেই দেইনা। বলেই নিপুকে একগ্লাস পানি দিতে বললো বর্ষণ। নিপু পানি দিয়ে এসে বর্ষার পাশে দাঁড়ায়।
বর্ষাঃ কিন্তু আমি তো ভাগ নিয়ে নিয়েছি। তোমার পাপা আমার ভালো বাবা। তোমার মম আমার মামনী। তুমি ও তো আমার…… বলতেই বর্ষণের বিষম লেগে যায়।
এমন অবস্থা দেখে বর্ষা আর নিপু দৌড়ে গিয়ে বর্ষণের মাথায় আর পিঠে চাপড়াতে(থাপর দিতে) থাকে। বর্ষা আস্তে করে বলে কি হলে ভাইয়া বিষম খেলে কেনো। আমি তো বলতে চাচ্ছিলাম তুমিও ও আমার ভাইয়া 😊 বলেই একটা রহস্যজনক হাসি দিয়ে উপরে চলে যায় বর্ষা।
রমাঃ তোরা যে কি করিসনা! সাবধানে পানি খাবি তো।এখনি কি হতো বলতো?
বর্ষণঃ না মম কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি।বলে বর্ষণ রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকতেই বর্ষণের ফোন বেজে ওঠে।
ফোন রিসিভ করে বর্ষণ বললো তুই সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে চলে আসবি একসাথে বের হবো বলেই ফোনটা রেখে দেয়।
কিছুক্ষণ পরে,রমা বেগম নিপুকে পাঠায় বর্ষা, বর্ষণ আর রায়হান খানকে ডাকতে। সার্ভেন্টদের বলে খাবার টেবিল সাজাতে।
সবাই একসাথে লাঞ্চ করে নেয়।
বর্ষণ নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা কাজ করছিলো হয়তো অফিসিয়াল কোনো কাজ হবে।
চলবে………..
হ্যাপি রিডিং 🥰