#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৭
বক্স খুলতে শুরু করে বর্ষা। বক্স খুলে যা দেখলো তাতে সবাই তো হা হয়ে গেছে।একটা সুন্দর কিউট টেডিবিয়ার💕 আর বক্সের মধ্যে যতোটুকু জায়গা বাকি ছিলো সেটাও বাহারি চকলেট দিয়ে পরিপূর্ণ।
বর্ষা তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে। একসাথে এতোগুলো চকলেট আবার তার পছন্দের কিউট টেডিবিয়ার।
সবচেয়ে মজার বিষয় যেটা সেটা হলো টেডির বুকের উপর লাভ শেপের মাঝে ছোট্ট করে লেখা আছে বর্ষণ। সেটা দেখেই বর্ষা চুপ হয়ে যায়। আর ভাবতে থাকে তাহলে কি এটা বর্ষাণ ভাইয়ার কাজ?
তখনি নিপু বলে বর্ষা আপু দেখো বক্সে একটা কাগজ ও আছে। মনে হয় কিছু লেখা আছে তাতে।
নিপুর কথা শুনে বর্ষা তারাহুরো করে কাগজটা নিয়ে পড়তে শুরু করে।তাতে লেখা ছিলো—
🍁🏵️🍁
–পিচ্চির জন্য উপহার হিসেবে এর থেকে ভালো কিছু আর খুঁজে পেলাম না। যেদিন বড় হবি সেদিন ভেবে দেখবো কি গিফট দিবো।এলোমেলো ভাবে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমানো বাদ দিয়ে এটাকে জড়িয়ে ঘুমাস। আর চকলেট গুলো সব তোর জন্য।
—– বর্ষণ🌿
কাগজটা পড়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো বর্ষা। নিপু বললো কি লেখা আছে বর্সা আপু? বর্ষা কিছুনা বলে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে দিলো এক দৌড়।
বর্ষণ নিপুকে চকলেট আর টেডিটা বর্ষার রুমে রেখে আসতে বলে উপরে চলে গেল। রায়হান খান ও নিজের রুমে চলে যায়। নিপু বর্ষার রুমে ঢুকতেই দেখলো বর্ষা ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে ভার্সিটির জন্য।
রমা বেগম টেবিলে খাবার রেডি করতে বললো। সবাই নিচে এসে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে যে যার কাজে বেরিয়ে পরে।
রায়হান খান অফিসে চলে যায়। বর্ষণ বর্ষাকে নিয়ে ভার্সিটিতে যাচ্ছে।
বর্ষাঃ তুমি যে বক্সটা এনেছিলে আগে বলোনি কেনো।তাহলে তো আমি সবার সামনে নিয়ে এভাবে দেখাতাম না।
বর্ষণঃ বক্সটায় তোর নাম লেখা ছিলো , তুই নিজে না দেখে নিচে নিয়ে গেলি কেনো।তুই কবে কবে বড় হবি আর কবে বুঝবি?
বর্ষাঃ আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না, তুমি যখন বাসায় এসেছিলে তখন কেউ তোমায় দেখেনি?
বর্ষণঃ হুম দেখেছিল।
সার্ভেন্টরা, নিপু, মম, আর এগুলো যখন কিনেছি তখন পাপা সাথে ছিলো।
বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা তো হা হয়ে আছে। বর্ষা একটু অভিমানের সুরে বললো – ওহ্! তার মানে সবাই জানে শুধু আমি ছাড়া।মামনী আর নিপুও কিছু বললোনা আমায়?
বর্ষণঃ হুম বলেনি। কারণ আমি বলতে নিষেধ করেছিলাম।
বর্ষাঃ কেনো নিষেধ করেছিলে?
বর্ষণঃ হঠাৎ করে গিফট টা পেয়ে যে খুশি হয়েছিস, বলে দিলে কি এতোটা আনন্দ পেতিস নাকি এতোটা সারপ্রাইজড হতিস।
বর্ষা কিছু বলবে তার আগেই গাড়ি ভার্সিটির গেটে এসে থামে। বর্ষাকে পৌঁছে দিয়ে বর্ষণ অফিসে চলে যায়।
বর্ষা আর নদী ক্লাসে বসে আছে। শাফিন ভাইয়া এসে বললো যারা রিহার্সাল করবে তারা হলরুমে চলে আসো আর নদী বর্ষা তেমরা আমার সাথে এসো।
বর্ষা নদী আর শাফিন ভাইয়া এবং তার বন্ধুরা একসাথে আলোচনা করছে রিহার্সাল এর ব্যাপারে।
যারা রিহার্সাল করবে তাদের গাইড করার জন্য একজন কে খুঁজতে হবে।
শাফিনঃ নদী তুমি কি ওদের গাইড করতে পারবে? যদি তুমি গাইড করতে পারো তাহলে ভালো হয়।
নদীঃ কি বলেন ভাইয়া আমি গাইড করলে তো সবাই একি ড্যান্স করবে। কারণ আমি ঐ একটা ড্যান্স ই পারি সেটা হলো – ব্রেক ড্যান্স।
নদীর কথা শুনে সবাই হাসতে শুরু করে।
বর্ষাঃ নদীকে থামিয়ে দিয়ে বলে আহ্! নদী কি হচ্ছে কি থাম এবার। সিরিয়াস মুহুর্তে ও ফাজলামো না করলে তোর শান্তি হয়না তাইনা?
নদীঃ ওমা! আমি ফাজলামো কখন করলাম , যেটা সত্যি সেটাই তো বললাম।
শাফিন ওদের দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বলে এবার হয়েছে থামো তোমরা। ঝগড়া বাদ দিয়ে বলো কি করা যায়, এখন এমন মেয়ে পাই কোথায়? ছেলেদের ব্যাপারটা না হয় আমি বুঝে নিবো কিন্তু মেয়েদের?
নদীঃ চোখের সামনে ভরা কলসি থাকতে পানি খুঁজতেছেন ভাইয়া?
নদীর কথা শুনে বর্ষা শাফিন সহ সবাই নদীর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
শাফিন বললো মানেটা কি?
তখন নদী বললো এই যে আমাদের বর্ষা আছেনা? ও থাকতে তো চিন্তা নাই ও নাচ গান অভিনয় আবৃত্তি সব কিছুতেই এক্সপার্ট।
নদীর কথা শুনে সবাই বর্ষার দিকে তাকাতেই বর্ষা বলে,কিহ্! আমি!
বর্ষা বললো আমার প্রবলেম আছে আমি পারবেনা।
শাফিন বললো তোমায় তো পারফর্ম করতে বলছিনা জাস্ট গাইড করতে হবে।না করোনা প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
বর্ষাও আর না করতে পারলোনা। রিহার্সাল করার জন্য সবাই চলে এসেছে। সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হলো মেয়েদের গাইড করবে বর্ষা আর ছেলেদের গাইড করবে শাফিন।
সবাইকে নিজেদের মতো গান choose করতে বলা হয়। এদিকে শাফিন, বর্ষা আর নদী ব্যাস্ত আছে কাকে কি কাজ দেওয়া হবে তার লিস্ট দেখতে।
শাফিন সব কাজের লিস্ট এবং কাকে কি কাজ দেওয়া হবে তার ও লিস্ট করে ফেলেছে এই দুদিনে।এখন শুধু সেটা চেক করে নিচ্ছে কোন কিছু বাদ পরেছে নাকি।
সবাই রিহার্সাল নিয়ে ব্যাস্ত। বর্ষারও খুব ব্যাস্ততার মাঝে সময়টা কেটেছে।
রাতের খাবার শেষ করে তারাতারি ঘুমিয়ে পরেছে বর্ষা। শরীর টা খুবই ক্লান্ত। কাল আবার সকাল সকাল ভার্সিটিতে যেতে হবে।
রাত ১ঃ৩০ মিনিট। বর্ষণ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বেডে বসলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুইটা বেজে দুই মিনিট। কি একটা ভেবে বর্ষার রুমের দিকে পা বাড়ায় বর্ষণ।
বর্ষার রুমে গিয়ে বর্ষণ দেখে টেডিটাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে বর্ষা। এমন ভাবে ধরে রেখেছে মনে হচ্ছে ও এটা ছেড়ে দিলেই কেউ হয়তো কেড়ে নিয়ে যাবে। বর্ষণ বর্ষার এমন কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসে।
বর্ষণ বর্ষার মাথার পাশে বসে, বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে আসে।
সকালে…..
ব্রেকফাস্ট করছে সবাই। বর্ষণ বললো আমি আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি।
রমা বেগম বললো তুমি তো বলেছিলে শনিবার যাবে।
বর্ষণ বললো হুম বলেছিলাম। বাট, শনিবার অফিসে কাজ আছে। সেদিন গেলে অনেক লস হবে। যে প্রয়োজনে যাবো হয়তো সেটা হবেই না। তাই আমি এ ব্যাপারে কোন রিস্ক নিতে চাইনা। শুক্রবার রাতের ফ্লাইটেই যেতে চাই।
বর্ষণ বর্ষাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে অফিসে।
সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বসে আছে বর্ষণ।
তখন ওর কেবিনে সাগর আসে।সাগর বললো তুই নাকি আমায় আসতে বলেছিস?
বর্ষণঃ হুম বোস এখানে তোর সাথে আমার কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। তুই তো জানিস আমি কালকের ফ্লাইটে চলে যাচ্ছি তাই কথাগুলো বলা জরুরি। বলেই দুজন অনেক সময় ধরে ব্যাবসায়িক আলোচনা করে।
রাত ১০ টা..
আজ সবাই একসাথে বসে ডিনার করছে। ডিনার শেষে প্যাকিং নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে বর্ষণ।
প্যাকিং কমপ্লিট?
কথাটা শুনে পিছনে তাকায় বর্ষণ।বর্ষন বললো আরে বর্ষা তুই এতো রাতে? ঘুমাসনি এখনো?
বর্ষাঃ না ভাইয়া ঘুম পাচ্ছে না। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম , তাই ভাবলাম তোমার সব গোছানো হয়েছে কিনা দেখে আসি৷
বর্ষণঃ একা একা বেলকনিতে দাঁড়িয়েছিলি কেনো?
বর্ষা বললো এমনি বাইরে তো অন্ধকার নাই জ্যোৎস্না রাত।
বর্ষার কথা শুনে বর্ষণ বললো এই বর্ষা! চাঁদ দেখবি? ছাদে যাবি?
চলবে…….