তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
1850

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৫

বর্ষণ- আমি যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, কাউকে যে আমি কথা দিয়েছি সেটা কি তাহলে আমি ফুলফিল করতে পারবোনা? আমি কি হেরে যাবো অবশেষে? না না এসব আমি কি ভাবছি, এটা কখনোই হতে দেওয়া যাবেনা। আমার আইডলকে দেওয়া কথা আমায় রাখতেই হবে। এজন্য আমায় যা যা করতে হবে আমি করতে প্রস্তুত।
বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে শুয়ে পরে বর্ষণ।

সকালে…

তারাহুরো করে নিচে নামছে বর্ষণ। আজ বড্ড লেট করে ফেলেছে ঘুম থেকে উঠতে।তাই একেবারে রেডি হয়েই নিচে নামছে বর্ষণ। ব্রেকফাস্ট করতে করতে বর্ষণ বর্ষাকে বললো তুই কি রেডি?ব্রেকফাস্ট শেষ হলে গাড়িতে গিয়ে বস আমি আসছি। তোকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আমি অফিস যাবো।

বর্ষাঃ আমি ভার্সিটি চলে যাবো। তুমি অফিস যাও ভাইয়া, তোমার তো অনেক তাড়া আছে।

বর্ষণঃ তোকে গাড়িতে বসতে বলেছি। পাকামি করে পরামর্শ দিতে বলিনি।

বর্ষা আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে।বর্ষণ ও ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে আসে।

বর্ষাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ বলে আজ আমি আসতে পারবোনা অফিসে ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। আর প্রচুর কাজের চাপ সময় ও পাবোনা। তাই ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। বাসায় চলে যাস।

বর্ষা- হুম,
আর তুমি সময়মতো লাঞ্চ করে নিও ভাইয়া। সবসময় শুধু কাজ কাজ করে কাজের মধ্যে ডুবে থেকোনাতো!

বর্ষণ – হুম তুই যাহ্ তোর লেট হয়ে যাবে। আমিও যাই বলে বর্ষণ চলে যায়।

বর্ষা গেট দিয়ে ঢুকবে তখনি দেখতে পেলো নদী ও ভেতরে ঢুকছে।

বর্ষকে দেখে নদী তো আনন্দে লাফিয়ে ওঠে।বর্ষা নদীর লাফানো দেখে বলে আস্তে লাফা পইরা ঠ্যাং ভাঙলে তখন বুঝবি।

নদী – গেট দিয়ে ঢুকতেই যে তোর সাথে দেখা হবে ভাবিনাই রে দোস্ত।

বর্ষা-আমিও ভাবিনি গেট দিয়ে ঢুকতেই শাঁকচুন্নির সাথে দেখা হবে।
নদী আর বর্ষা কথা বলতে ক্যাম্পাসে হাটছে। তখন হঠাৎ কেউ ডেকে ওঠে আরে নদী – বর্ষা কেমন আছো তোমরা?

কথা শুনে দুজনেই ঘুরে তাকায়। দেখে শাফিন ওর বন্ধুদের সাথে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।

বর্ষাঃ জ্বি ভাইয়া ভালো আছি।
শাফিনঃ তোমরা দুজন চলো আমাদের সাথে।
নদীঃ কো কো কোথায় যা যাবো ভাইয়া!
শাফিনঃহলরুমে চলো এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার থেকে কাজের কথাগুলো কাজের জায়গাতে বলাই ভালো।কিন্তু নদী কি হয়েছে তোমার? এমন তোতলাচ্ছো কেন?

বর্ষাঃ নদীকে কিছু না বলতে দিয়ে বলে ওঠে ও কিছুনা ভাইয়া। ওর মাঝে মাঝে তোতলানোর অভ্যাস আছে।
বর্ষার কথা শুনে নদী অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছে গেছে।হা করে বর্ষার কথা শুনছে নদী। আর ভাবছে আল্লাহ জানে এই মেয়ে আমাকে আর কি কি বানাবে তোতলা পর্যন্ত ঠিক আছে।🥴বর্ষা নদীর দিকে তাকিয়ে বললো হা বন্ধ করে এবার চল ভাইয়ারা তো হলরুমে চলে গেছে তোর যদি হাওয়া খাওয়া শেষ হয়ে থাকে তো আমরাও এবার যাই।এই বলে নদী আর বর্ষাও হল রুমে চলে যায়।

শাফিনঃ নামের লিস্ট গতকাল করেছিলে তোমরা? তোমরা কি কোন কোন প্ল্যান করেছো নবীনবরণ অনুষ্ঠান ব্যাপারে? কিভাবে প্রস্তুতি নিলে পার্টিসিপ্যান্টরা আরও ভালো করে পারফর্ম করতে পারবে?কারণ সময় তো বেশি নেই। সামনের বৃহস্পতিবার আমাদের নবীনবরণ।

বর্ষাঃ কোন লিস্ট করা হয়নি ভাইয়া, গতকাল ওদের সময় দেওয়া হয়েছে যেন ওরা ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কে কি পারফর্ম করবে। আজ লিস্ট করা হবে। আজ তো মঙ্গলবার, যারা পারফর্ম করতে চাইবেনা তারা ই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় পাবে লিস্ট থেকে নাম কাটার। শনিবার থেকে আর কোন পার্টিসিপ্যান্টকে লিস্ট থেকে বাদ করা হবেনা। কিন্তু কেউ চাইলে পার্টিসিপ্যান্ট করতে পারবে। আর আমি ভেবেছি শনিবার থেকেই রিহার্সাল শুরু করা হবে।

শাফিনঃ গুড গুড!
না বলাতেই এতো কিছু প্ল্যান করার জন্য থ্যাঙ্কস।সবই ঠিক আছে। শুধু ঐ রিহার্সাল এর ব্যাপারটা ওটা আগামীকাল থেকে শুরু করতে হবে। সবাই সমান ট্যালেন্টেড না তাই একটু আগে থেকেই শুরু করতে হবে। আর লিস্টের কাজটা আজই কমপ্লিট করে এক কপি তোমার কাছে রেখে অন্য কপি আমায় দেবে। এখন তোমরা ক্লাসে যাও।

বর্ষা আর নদী হলরুম থেকে বের হতেই শাফিনের ফ্রেন্ডরা বললো, দোস্ত মেয়েটা কিন্তু হেব্বি চালাক আর বুদ্ধিমতি।এক কথায় রুপে গুণে সর্বগুণ সম্পুর্না।

শাফিন ওদের কথা থামিয়ে দিয়ে বললো তোদের হঠাৎ এমন মনে হওয়ার কারণটা কি জানতে পারি? শাফিনের একটা ফ্রেন্ড ঠোঁটের কোনায় হাসি ঝুলিয়ে বললো জানবি জানবি একটু ধৈর্য্য ধর বৎস্য এতো তারা কিসের।ওর কথা শুনে বাকি সবাই হো হো করে হেসে ওঠে যেটা পুরো হলরুমে প্রতিধ্বনি হতে থাকে। শাফিন তখন ভ্রু কুচকে বলে তোদের খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই তাইনা? যার যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা কর। হাতে একদম সময় কম।

বর্ষা আর নদী ক্লাসে এসে নাম লিস্ট করা শুরু করেছে। নামের পাশে কে কি পারফরম্যান্স করবে সেটা উল্লেখ করে রেখেছে বর্ষা। কেউ নাচবে কেউ গাইবে কেউ আবৃতি করবে আবার কেউ অভিনয় করবে।

লিস্ট শেষে বর্ষা সবাইকে জানিয়ে দেয় যে আগামীকাল থেকে রিহার্সাল শুরু। সবাই যেন টাইমলি চলে আসে। সবাই যার যার সিটে বসে আছে নদী আর বর্ষা পাশাপাশি বসেছে।

নদীঃ কিরে সবার নাম লিস্টে উঠালি তোর নাম কই।

বর্ষাঃ নারে আমার প্রবলেম আছে আমি পারফর্ম করতে পারবো না। বাসায় জানতে পারলে ঝামেলা আছে।

নদীঃ বাসায় জানতে পারলে নাকি তোর বর্ষণ জানতে পারলে ঝামেলা আছে কোনটা!

বর্ষা নদীর কথা এড়াতে বললো কিরে খুবতো আমায় নিয়ে ভাবছিস তা তুই কি পারফর্ম করবি তাতো বললি না।

নদীঃ পাগল না কি 😲 আমি নিজের তো কোন ক্ষতি চাই ই না, আবার এটাও চাইনা যে, কারও সর্বনাশ হোক আমার দ্বারা।

বর্ষা বুঝতে না পেরে বললো কি যা তা বলছিস?

নদীঃযা তা না রে বইন। আমি চাইনা নাচতে যাইয়া এই বয়সে কোমরডারে ভাঙি। কারণ আমার এখনো নিজের হবু জামাইডারে দেখার বাকি আছে।আর আমার কন্ঠে গান শুনাইয়া আমি কাউরে বধির বানাইতে চাই না। আমার কন্ঠে গান শুনলে সে ঐ কান দিয়ে আর কিছু শুনতে চাইবে না।

বর্ষাঃ আমি কি তোরে শুধু শুধু পেতনী বলি? তোর গুন আর পেতনী রানির গুণের অনেক মিল হা হা😂

নদীঃ তুই তো সব পারিস নাচ, গান, আবৃতি, অভিনয় তাতে লাভ টা কি হলো বল। সেগুলো যদি কাজেই না লাগলো।

বর্ষাঃ সবসময় সবকিছুতে লাভ খুঁজতে নেই। কিছু কিছু জিনিস নিজের জন্য করতে হয় বুঝলি! যেগুলো একান্তই নিজের। ও তুই বুঝবিনা। চল এবার এটা শাফিন ভাইয়া কে দিয়ে বাসায় যাই। আমার আবার গাড়ি চলে আসবে। বলেই শাফিনের কাছে চলে গেলো দুজন।

নদীঃগাড়ি আসবে মানে? বর্ষণ ভাইয়া আসবেনা?
বর্ষাঃ না রে ভাইয়ার কাজের চাপ তাই আসতে পারবে না।

শাফিনঃ আরে নদী বর্ষা, তোমরা! কোথায় যাচ্ছো?
বর্ষাঃ লিস্ট দিতে আসলাম ভাইয়া।

লিস্ট দিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে হাটা ধরে নদী আর বর্ষা। হাঁটতে হাঁটতে মেইন গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুজন।
তখনি বর্ষণের গাড়ি এসে থামে ওদের সামনে।

নদী বলে এই নে তোর বর্ষণ ভাইয়া চলে এসেছে।এই তো বললি ভাইয়া নাকি আসবেনা।

বর্ষণকে দেখে বর্ষা তো হা হয়ে আছে ।বর্ষণ গাড়ি থেকে নেমে এক হাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে, ফিল্মের হিরোদের মতো আরেক হাতে সানগ্লাস খুলতে খুলতে বললো। দেখা শেষ হলে গাড়িতে বস।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে