#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব_৪
স্যারের কথা শেষ হতেই শাফিন ভাইয়া পরিচয় দিয়ে বললো, হাই আমি শাফিন। এই ভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
তোমাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই, সেটা হলো সবার মধ্যেই একটা সুপ্ত প্রতিভা থাকে যেটা হয়তো আমরা কখনো প্রকাশ করি আবার হয়তোবা কখনো প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনা।তোমরা চাইলে সেই প্রতিভার প্রকাশ করতে পারো,তাহলে সকলের সহযোগিতায় অনুষ্ঠান টা আরও সুন্দর মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠবে। তোমাদের উপর কোনো চাপ নেই যে তোমাদের পারফর্ম করতেই হবে।এটা জাস্ট মনের ইচ্ছে। তোমাদের ভালো লাগলে পার্টিসিপেট করবে না হলে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে হ্যা ঐ অনুষ্ঠানে সবাইকে এটেন্ড থাকতে হবে। আর তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন লিস্টের দায়িত্ব নাও। লিস্ট শেষে আমার হাতে সেটা দিতে হবে। আর যে এই দায়িত্বটা নেবে তাকে আমাদের সাথে অনুষ্ঠানের কাজে থাকতে হবে। এ কথা শুনে সবাই সবার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কেউ দায়িত্ব টা নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে না।
এমন অবস্থা দেখে স্যার সবাইকে বললো ওকে ফাইন, তোমরা যেহেতু ডিসিশান নিতে পারছোনা তাহলে আমি কি সিলেক্ট করে দিবো? সবাই স্যারের কথায় রাজি হয়ে গেলো।
স্যার একবার সবার দিকে তাকিয়ে বর্ষাকে দাঁড় করায়। বর্ষার যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো সবকিছু। বর্ষা কিছু বলবে তার আগেই স্যার সবার উদ্দেশ্যে বললো তোমাদের কারও কোনো আপত্তি আছে ? সবাই সবার মতামত জানালো তাদের কোনো আপত্তি নেই বরং তারা সবাই খুশি।
বর্ষা তখন নদীর দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে আর নদী মিটিমিটি হাসছে। নদীর হাসি দেখে বর্ষা ক্ষেপে আগুন হয়ে যায়।আর ভাবে কিভাবে নদী বদমাইশটাকে শায়েস্তা করা যায়।বর্ষা হুট করে স্যারকে বলে স্যার আমার সাথে আরও কাউকে লাগবে। স্যার সম্মতি দিয়ে নাম জানতে চাইলে বর্ষা নদীকে দেখায়। স্যার নদী আর বর্ষাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলতেই শাফিন নদী আর বর্ষার নাম লিস্ট করে নেয়।
সিনিয়র ভাইয়ারা ক্লাস-রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সারা রুম গুন গুন শব্দে ভরে ওঠে। টপিক নবীন বরণ।
কে কি পারফর্ম করবে, কার ফ্রেন্ড কি পারফর্ম করবে সেটা জানতে আর জানাতে ব্যস্ত সবাই।আর নদী বর্ষা ঝগড়া করতে ব্যস্ত।টপিকঃ বর্ষা নদীর নাম স্যারকে কেনো বলতে গেলো।
বর্ষা সবাইকে বললো তোমরা সবাই আজ ভেবে দেখো কে কে পার্টিসিপেট করতে চাও আর কে কি পারফরম্যান্স করবে।আগামিকাল লিস্ট করা হবে।বর্ষার কথায় সবাই একমত পোষণ করলো।
রাতে বর্ষা নিপু আর রমা বেগম একসাথে বসে চা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে। বর্ষা রমা বেগমকে ভার্সিটির নবিন বরণের কথা বললো । রমা বেগম এটা শুনে বর্ষা কি পারফর্ম করবে তা জানতে চাইলো।বর্ষা রমা বেগমকে বললো তোমার ছেলেকে চিনোনা?এই বর্ষা পারফর্ম করলে বর্ষণ তো তাকে পুরোই চিবিয়ে খেয়ে নেবে। বলেই তিনজনই শব্দ করে হেসে ওঠে।সেই সময় বর্ষণের গাড়ির শব্দ পেয়ে নিপু উঠে দরজা খুলে দেয়। বর্ষণ কাউকে কিছু না বলে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। রায়হান খান ভেতরে ঢুকতেই রমা বেগম বর্ষণের মুড অফের কারণ জানতে চাইলেন।
রায়হান খান বললো ওয়েট করো জানতে পারবে বলেই রুমে চলে যায়।
বর্ষণ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখে বর্ষা কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বর্ষার হাত থেকে কফি নিতে নিতে বর্ষণ কপাল কুচকে বললো কি বলবি বলে ফেল। বর্ষণের কথায় বর্ষা মাথা নিচু করে বললো তেমন কিছু না, ঐ তোমার মুড অফের কারণ টা জানতে…. বলেই বর্ষা জিভ কাটে।
বর্ষাঃ হায় হায়! গর গর করে তো সব বলে দিচ্ছিস বর্ষা। তোর মাথায় কি কিছুই নাই! বোধ বুদ্ধি সব লোপ পেয়েছে? বর্ষা তখন কথা ঘুরিয়ে বলে নাহ ভাইয়া কিছু বলবোনা এই তোমার কফি দিতে এসেছিলাম।
বর্ষণ ভ্রু নাচিয়ে বললো সত্যি কি তাই?
বর্ষাঃ হুম তাই তো। তা নয়তো কি আমি এটা জানতে এসেছি যে তোমার মুড অফ কেনো? কখনোই না। আমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই নাকি! বলেই বর্ষা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে বর্ষণের দিকে।
বর্ষণ কিছু না বলে শুধু ঠোঁটের কোনায় হাসি টেনে বর্ষার দিকে তাকিয়ে আছে।
বর্ষা আর কিছু না বলে দিলো এক ভোঁ দৌড়। বর্ষাকে দৌড়াতে দেখে বর্ষণ শব্দ করে হেসে ওঠে আর বলে পুরোই পাগলি একটা।
সবাই ডাইনিংয়ে বসে আছে বর্ষনের অপেক্ষায়।সে আসলে একসাথে ডিনার করবে।নিপু খাবার এনে রাখছে টেবিলে।বর্ষণ এসে বসতেই খাবার সার্ভ করে দিলো।
খাওয়ার মাঝেই বর্ষণ বললো তোমাদের সবাইকে আমার কিছু বলার আছে। যদি ও তোমাদের বলাটা ততোটা ইম্পর্ট্যান্ট না, তবুও। আমি সামনের সপ্তাহে ব্যাবসায় এর কাজে বাইরে যাচ্ছি, আই মিন মালায়শিয়ায় আমাদের যে কোম্পানি টা আছে সেখানে একটু ঝামেলা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার একটা মিটিং এটেন্ড করা হয়েছে। আমাকে সেখানে থাকতে হবে। আর ঐ কোম্পানির ফাইলগুলো ও চেক করতে হবে। তাই আগামী শনিবারের ফ্লাইটে আমি মালয়েশিয়ায় যাচ্ছি।
রায়হান খানঃ কি বলছিস এসব তুই? আমায় তুই আগে কেনো বলিসনি ঝামেলা হয়েছে? তোকে যেতে হবে না। আমি যাবো।তুই এদিকটা সামলা।
বর্ষণঃ তুমি গেলে হবেনা পাপা। আমায় যেতে হবে। এটা আমার কাজ তোমার নয়।
রায়হান খান বুঝতে পেরে আর কিছু বললোনা।
ডিনার শেষ করে বর্ষণ উঠে হাত ধুয়ে রুমে চলে যায়।
বাকি সবাই যে যার রুমে চলে যায়। বর্ষা ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।সকালে আবার ক্লাসে যেতে হবে।বিছানায় গা দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে বর্ষার চোখে।
ফোন বাজতেই ঘুম ঘুম চোখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন তুলে বর্ষা। স্ক্রিনে নদীর নাম দেখে ফোনটা রিসিভ করেই ঝারি দিতে শুরু করে বর্ষা।
বর্ষাঃঐ পেতনী, ডায়নি, রাক্ষসী, পিশাচিনী সারাদিন আমার পিছনে পরে থেকেও তোর শান্তি হয়নি? এখন আবার এই মাঝ রাতে ঘুমের মধ্যেও জ্বালাতে আসছিস😡?
নদীঃবইন তোর ঝাড়ফুঁক দেওয়া হইলে এবার থাম। আমার কথাটা শোন। আমি কি তোরে সাধে ফোন করেছি? প্রয়োজন যদি না থাকতো না! তাহলে আমি মাঝরাতে গাছে উইঠা বইসা থাকতাম তবুও তোরে ফোন দিতাম না হুহ্😏
বর্ষাঃ আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে! বল কেনো ফোন দিয়েছিস?
নদীঃশোন আমার না টেনশন হচ্ছে। তুই আমার নামটা বাদ দিয়ে দিস বইন। আমি এসব দায়িত্বে ফায়িত্বে থাকতে পারবো না।
বর্ষাঃ আরে মেরি পেতনী, চিন্তা মাত কার ম্যায় হু না!। এখন ফোন রাখ নিশ্চিন্তে ঘুম দে। কাল ক্যাম্পাসে কথা হবে বাই।
বলেই ফোন রেখে ঘুমিয়ে পরে বর্ষা।
রাত ১ টা কিছুতেই ঘুম আসছেনা বর্ষণের। বিছানা ছেড়ে উঠে ডায়েরি টা নিয়ে বসে পরে সে।লিখতে শুরু করে তার মনের কথাগুলো আর তার প্রেয়সীর পাগলামিগুলো।
ডায়েরি লেখা শেষে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় বর্ষণ। আজ বর্ষণের মনটা খুব অস্থির। তার কারণটা কি অফিসিয়াল নাকি ব্যাক্তিগত সেটাও বুঝতে পারছে না সে।
তবে কি বর্ষণ তার দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পারছে না?
চলবে….
(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।)
হ্যাপি রিডিং 🥰