তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব-৩৩

0
1634

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব৩৩

থাপ্পড় খেয়ে শাফিন কিছু বলতে যাবে তখনি বর্ষা বলে। পৃথিবীতে অনেক খারাপ লোক দেখেছি। অনেক নিচুস্তরের মানুষ দেখেছি কিন্তু তোর মতো, আর তোদের ফ্যামিলির মতো এত নিচু মনের মানুষ, এতোটা জঘন্য মনের মানুষ আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। শয়তানও তোদের কার্যকলাপ দেখে লজ্জা পেয়ে যাবে। আমি আইনি ব্যাবস্থা নেওয়ার আগেই তুই এখান থেকে বেরিয়ে যা, তা না হলে কিন্তু সারাটা জীবন জেলখানায় পঁচে মরতে হবে।

রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে, গরগর করে এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে বর্ষা।বর্ষার এমন রুপ দেখে শাফিন একটু ভরকে যায়।
মনে মনে ভাবে আর বেশি বাড়াবাড়ি করাটা ঠিক হবে না। শেষে আবার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু হয়ে যাবে। এটা ভাবতে ভাবতে এদিক ওদিক তাকালো শাফিন।
দেখলো সবাই বর্ষাকে নিয়ে ব্যাস্ত সবাই ওকে শান্ত হতে বলছে। সেই সুযোগে শাফিনও চম্পট দিলো।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বর্ষণ এসে হাজির। বর্ষণকে দেখে সবাই বর্ষাকে আর বর্ষণকে একা রেখে চলে গেলো।বর্ষার রাগে দুঃখে চোখে জল চলে আসে।

বর্ষণ বর্ষার দুই গালে হাত দিয়ে মুখটা উঁচিয়ে ধরে বলে কি হয়েছে আমার পরীটার! মন খারাপ কেন। বর্ষণের কথা শুনে বর্ষার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে।

বর্ষণঃ আরে আরে! আবার চোখের পানি ফেলে!চোখের জল মুছে দিয়ে বলে এর আগে কি বলেছিলাম মনে নেই বুঝি!
ঠিক আছে ব্যাপার না। মনে না থাকলে আমি আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমি বলেছিলাম, আমার পরীটা যেন কোন অবস্থাতেই চোখের জল না ফেলে। তার চোখের জল আমাকে বড্ড অস্থির করে তোলে।সহ্য করতে পারিনা আমি তার চোখের জল। তা এবার কি জানতে পারি আমার পরীটার মন খারাপ কেন?
বর্ষণের কথা শুনে বর্ষা তখন সব কথা বলতে শুরু করে। বর্ষণ তখন সব শুনে সে তো বুঝলাম। কিন্তু একটা বিষয় বুঝতে পারছি না, আমার এই ছোট্ট পরীটা এতোটা বড় আর এতোটা সাহসী কবে হয়ে গেলো, যে একটা কালপ্রিট কে মেরে তাড়িয়ে দিতে পারলো। বর্ষাও বর্ষণের সাথে দু একটা কথা বলতে বলতে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

রাতে মেহেদী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান এসেছে সবাই মিলে আনন্দ মজাতে মেহেদী অনুষ্ঠান পার করেছে। মেহেদী শেষে সবাই যার যার মতো চলে যায়। সবুজ ও এসেছিল আজকের মেহেদী অনুষ্ঠানে।

সবুজের বাসা অনেক দুরে বলে রাফসানদের বাসায় সবুজের বিয়ের সকল ব্যাবস্থা করা হয়েছে। রাফসানের পরিবার এসেছে বর্ষণদের বাসায় আর বর্ষণের মম আছে বর্ষাদের বাসায়।

সকাল থেকে গায়ে হলুদের ধুম পরে গিয়েছে। সবাই খুব ব্যাস্ত। কারণ লোকজন কম তাই কাজের চাপটা একটু বেশি। একটা বিয়ে হলে তো কোন কথা ছিল না। কিন্তু বিয়ে তো হচ্ছে চারটা। আই মিন এক আত্নীয় স্বজনরা আর কতো বাড়ি দৌড়াবে বলুন তো!

হলুদের আয়োজন করা হয়েছে বর্ষাদের বাসার ছাদে। আর শুধু বর্ষা আর নিপুর জন্য নয়, বর্ষণ আর সবুজের জন্য ও স্টেজ সাজানো হয়েছে। একি ছাদে চার জনের ই গায়ে হলুদের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
অবশ্য প্ল্যানটা করেছিল বর্ষণ। আর সেটা কার্যক্রম করেছে সাগর নদী আর ঋতু।মানে বর্ষণের মমকে রাজি করিয়েছে ওরা।

সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। পুরো বাড়ি লাইটিং করা। চারিদিকে আলো ঝলমল করছে। সবাই ছাদে হলুদ দেওয়া নিয়ে ব্যাস্ত।শুধু বর্ষা আর নিপু নেই। কারণ বর্ষণের মম বলেছে ওরা রুমেই থাকবে আগে সবুজ আর বর্ষণকে হলুদ মাখানো হবে। তারপর নিপু আর বর্ষাকে এখানে আনা হবে। ততক্ষণ ওরা রুমে বসে থাকবে। তবে ওদের একা রাখা হয়নি। বর্ষার পাশে নদী আর নিপুর পাশে ঋতু বসে আছে।

এদিকে বর্ষণকে হলুদে ডুবিয়ে দিয়েছে রাফসান, সাগর আর সবুজ। পুরো মুখে হলুদ মেখে ভুত করে দিয়েছে রাফসান। সাগর আর সবুজ বললো আমরাই বা বাদ যাবো কেন? বলে ওরাও হলুদ মাখাতে শুরু করে দেয়। বর্ষণ কিছু বলতে যাবে তখন রাফসান উঠে বলে, নো নো আজ তো তুই আর সবুজ কিছু বলতে পারবিনা! তোরা এখন বিয়ের পাত্র, আই মিন বিয়ের পাত্রদের মুখে রুমাল চেপে রাখতে হয়, নো টকিং ওকে। বর্ষণ আর কিছু বলেনা। বর্ষণের সাদা গেঞ্জি টা পুরো হলুদ হয়ে গিয়েছে।

বর্ষণদের হলুদ দেওয়ে শেষ এখন বর্ষা আর নিপুর গায়ে হলুদ। নদী হলুদের সবকিছু নিয়ে ছাদে চলে যায়। বর্ষা রুমে বসে আছে একা।

হঠাৎ লোডশেডিংয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায় । বর্ষা উঠে হাতড়াতে হাতড়াতে দরজার দিকে যাচ্ছে। কারণ ক্যান্ডেলটা রেখেছে নদী। কোথায় যে রেখেছে আর বর্ষা অন্ধকারে কোথায় খুঁজবে। তার থেকে ভালো হবে নদীকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া।

দরজার সামনে যেতেই কেউ একজন এসে বর্ষার হাত ধরে। এতে বর্ষা খুব ভয় পেয়ে যায়। বর্ষা চিৎকার করবে তার আগেই ছেলেটা বর্ষার মুখ চেপে ধরে। বর্ষা আর কিছু বলতে পারেনা, তবে বর্ষা বুঝে গিয়েছে এটা কার কাজ।বর্ষা ভয়ে এক পা একপা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটিও বর্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পিছতে পিছতে দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে থেমে যায় বর্ষা। ছেলেটিও বর্ষার একদম কাছে দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলেটি কিছু না বলেই বর্ষার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দেয়। বর্ষা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ফলাফল শুন্য। কিছুক্ষণ পরে বর্ষার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,আমার পরীটার গায়ে প্রথম আমিই হলুদ ছুঁইয়ে দিলাম। তারপর আবার বলে, তোকে কতোবার বলেছি মেঘু! আমার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা কখনো করিসনা। তাতে কোন লাভ হবেনা।

এতোক্ষণে বর্ষা বুঝতে পারলো বর্ষণ তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছিল! বর্ষা তখন বর্ষণকে বলে এটা আবার কেমন হলুদ দেওয়া হুমমম্।মানুষ হলুদ মুখে লাগায়, হাতে লাগায় পায়ে লাগায় কিন্তু গলায়,আর ঘাড়ে হলুদ লাগায় সেটা তো কখনো শুনিনি।

বর্ষার কথা শুনে বর্ষণ একটু ভাব নিয়ে বলে এটা হলো ইউনিক স্টাইল, বুঝলেন তো ইউনিক ম্যাডাম।
আর আপনার মুখে যদি হলুদ মাখাই তাহলে তো সবাই জেনে যাবে যে আমি আপনাকে হলুদ মাখিয়েছি। কিন্তু আমি তো সেটা চাইনা। আমি চাই এটা শুধু আমার মেঘুপরীটাই জানুক আর এটা সারাজীবন মনে রাখুক বলেই একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
বর্ষণ বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুৎ চলে আসে। সারা ঘর, সারা বারি আালোয় আালোয় ভরে ওঠে।

বর্ষা তো মাথয় হাত দিয়ে বেডে বসে পরে আর ভাবে তবে কি এটা বর্ষণের ই কাজ! লোডশেডিং করিয়ে সবাইকে ব্যাস্ত রাখা!
এসব ভাবনার মাঝেই নদী এসে বললো চল ছাদে যেতে হবে সব ঠিকঠাক করে রাখা হয়েছে।
বর্ষা আর কিছু না বলে হুম বলে ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে নদীর সাথে ছাদে চলে যায়।

প্রথমে বর্ষাকে হলুদ মাখাতে যায় রমা বেগম আর রায়হান সাহেব। রমা বেগম বর্ষার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে মাশাআল্লাহ! আমার ছেলের পরীটাকে তো আজ সত্যিকারের পরী লাগছে।
তারপর নিপুকেও হলুদ মাখিয়ে দিয়ে উঠে যেতেই একে একে সবাই হলুদ দিতে থাকে।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই নিচে চলে আসে। বার্ষা আর নিপুও রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে।

সকাল থেকে সারাটা বাড়ি জুড়ে হৈচৈ, আড্ডা আর ব্যাস্ততা। বাগানের একপাশে ফাঁকা জায়গায় প্যান্ডেল করা হয়েছে সেখানে খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। একপাশে রান্নার তোরজোর চলছে।

ড্রইং রুমে বর বসার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে রুমটা।
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো খাওয়া দাওয়া কমপ্লিট করে এখন বিদায়ের পালা। নিপু বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসেছে। গেস্টরাও কিছু বিদায় নিয়েছে। এখন বর্ষার পালা।বর্ষাকে আর কি বিদায় দেবে। বর্ষাতো রমা বেগমের কাছেই যাচ্ছে । বর্ষা দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির জন্য পেছন থেকে বর্ষণ আচমকা বর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে। বর্ষা অবাক হয়ে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বর্ষাকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বর্ষণ বলে এভাবে তাকি থাকলে নতুন করে আবার প্রেমে পরে যাবে বউ।
বর্ষণের মুখে বউ ডাক শুনে বর্ষার বুকের ভেতর কেমন একটা করে ওঠে। লজ্জায় লাল হয়ে বর্ষণের বুকেই মুখ লুকায় বর্ষা।
বর্ষণ বাসার গেটে ঢুকতেই রাহেলা বেগম মিষ্টি নিয়ে আসে।বর্ষাকে কলে নিয়েই মিষ্টি মুখ করে সোজা উপরে চলে যায়। রাফসান দৌড়ে গিয়ে রুম খুলে দিলে বর্ষণ বর্ষাকে নিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়। বর্ষা তো লজ্জায় মাথা তুলছেই না মাথা নিচু করে বসে আছে। বর্ষণ ও বেডের একপাশে বসে আছে।
বর্ষণের পিছে পিছে নদী, সাগর, রাফসান আর ঈশিতা ঢুকে পরে। তারা তো গান প্লে করে এলোপাতাড়ি নাচতে শুরু করে।
নাচ শেষে বর্ষণের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঈশিতা বলে এখন ট্রিট দাও।
বর্ষণ অবাক হয়ে বলে ট্রিট! কিন্তু কিসের ট্রিট দিবো?

ঈশিতাঃ নিজেকে খুব চালাক ভাবো তাইনা, সেই তো বউকে নিয়ে রুমে ঢুকে ঢুকে পরলে তা সব নিয়ম কি ভুলে গেছো!
আর ভুলে গেছো তো গেছো সেটা আমি বলছি না, আমি যে এতো সুন্দর করে নেচে তোমায় বিনোদন দিলাম সেটার জন্য ট্রিট দাও।

বর্ষণঃ কিহ্! এটা এতো সুন্দর নাচ! এর জন্য আমায় ট্রিট দিতে হবে! উল্টে আপনি যদি আমায় ট্রিট দিয়ে এই নাচ দেখতে বলেন তবুও আমি দেখবো না। আমি তো আমার পরীর নাচে মুগ…আউচ! বলেই থেমে যায় বাকিটুকু আর বলতে পারেনা।
বলবে কি করে বর্ষা তো চিমটি কেটে থামিয়ে দিয়েছে।

ঈশিতাঃ ওহ্ রিয়েলি! ঠিক আছে, ট্রিট চাইনা আজ তো আমি এই রুম থেকে বের হচ্ছি না তার পর দেখি আমার দেবর আমায় ট্রিট না দিয়ে কি করে থাকে। এই কথা বলেই ঈশিতা বর্ষার পাশে গিয়ে শোয়ার মতো ভাব করতেই। বর্ষণ পকেট থেকে কার্ড বের করে দিয়ে ঈশিতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে এই যে, ভাবি ডেবিট কার্ড ক্রেডিট সব আছে যা খুশি শপিং করবেন আগামিকাল, আর মনে চাইলে এক্ষুনি যান তাতেও আমার প্রবলেম নাই। বিনিময়ে শুধু যেটা করতে চাইছেন সেটা করবেন না।

বর্ষণের কথায় বর্ষা ছাড়া বাকিরা শব্দ করে হেসে ওঠে। বর্ষা তো লজ্জায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে।

নদীঃ বর্ষণ ভাইয়া আমার কিন্তু স্পেশাল গিফট চাই। আমায় কথা দিয়েছিলেন।আপনার এসবের পেছনে কিন্তু আমিই আছি..

চলবে……

হ্যাপি রিডিং 🥰

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে