তুই শুধু আমার ভালোবাসা পর্ব-১৩+১৪

0
1802

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৩

বর্ষা ভাবছে এই ছেলের মাথায় কোনো গন্ডগোল আছে নাকি! এতো তারাতারি আপনাআপনি পরিবর্তন ঘটে কি করে এর মাঝে? এই রেগে গিয়ে যা নয় তাই বলছে, আবার কিছু সময় পরে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে। ওহ্ আল্লাহ! এই ছেলেটার সাথে সাথে আমাকেও পাগল করে দিও না।

বর্ষণঃ ধমক দিয়ে,, কিরে এমন হা করে কি ভাবছিস? আমি কতোটা খারাপ সেটা?

বর্ষাঃ এমা! না না! ছিঃ ছিঃ! এসব তুমি কি বলছো ভাইয়া?
আমি ওসব কেনো ভাবতে যাবো বলো? আমি তো ভেবেছিলাম…

বর্ষণঃ কি ভেবেছিলি? আমি আর তোর সাথে কথা বলবোনা? নাকি ভেবেছিলি আমি আর কখনো তোর মুখটাই দেখতে চাইবোনা হুমমমম!

বর্ষাঃ ঠোঁটের কোনায় হাসি ঝুলিয়ে মনে মনে বলে এসব কেনো ভাবতে যাবো। আমায় না দেখে আমার সাথে কথা না বলে যে তুমি থাকতে পারোনা সেটা আমি খুব ভালো করে জানি ভাইয়া।

বর্ষণঃ কিরে কিছু না বলে হাসছিস কেনো?

বর্ষাঃ না ভাইয়া তেমন কিছু না, আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমাকে আর ভার্সিটি যেতে দেবেনা। কারণ ভার্সিটি গেলে তো শাফিন ভাইয়ার সাথে আমার দেখা হবে।আর দেখা হলে তো শাফিন ভাইয়া আমার সাথে কথা বলবে।

বর্ষণঃ শোন চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো মানুষ আমি নই।কোথায় কে কি করলো I don’t care.
যাকে কেয়ার করি সে কি করলো, কিভাবে চললো সেটাই জানার বিষয়। তাই এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মন দিয়ে পড়াশোনা কর।আর প্রথম দিন যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো মেনে চল তাতেই হবে।

ফ্ল্যাশব্যাক—

শুক্রবার সকালে কফিমগ রেখে বর্ষণের রুম থেকে বর্ষা বের হওয়ার পর পর ই বর্ষণের ফোনে ফোন আসে।

বর্ষণঃ হ্যালো

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ যাকে সবসময় চোখে হারান, যাকে এতোটা মিস করেন, যাকে অন্য কোন ছেলের পাশে দেখলে সহ্য করতে পারেন না। যার ছোট খাটো ইচ্ছে সখ আহ্লাদ আপনার কাছে এতোটাই ইম্পর্ট্যান্ট তাহলে তার উপর এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন না? তাকে এতোটা কষ্ট দেন কেনো?

বর্ষণঃ কি বলতে চাও কি তুমি!

শুভাকাঙ্ক্ষীঃ হুম! আমি এটাই বলতে চাই যে, সেদিন বর্ষা নৃত্যে নাম লেখায়নি ইনফ্যাক্ট সে তো জানতোই না যে তার নাম লিস্ট করা হয়েছে। আর কেউ যদি কাউকে প্রশংসা করে তবে তার জন্য কি কাউকে দায়ী করা যায়?হয়তো সে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য বলেই প্রশংসা পেয়েছে। তবে হ্যা বর্ষা এসব দায়িত্বে জরাতে চায়নি।স্যার আর আপনার মায়ের জোরাজোরিতে রাজি হয়েছে।শুধু শুধু কি ওকে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলছেন না?

বর্ষণ কিছু না বলে ফোন রেখে দেয়।

বর্তমান—

ভার্সিটির গেটে বর্ষাকে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ অফিসে চলে যায়।
বর্ষা ক্লাসে বসে আছে। অনেকেই বর্ষাকে জিজ্ঞেস করেছে বর্ষণের ব্যাপারে যে ঐ হ্যান্ডসামবয়টা কে।বর্ষা বলেছে ওটা তার ভাইয়া বর্ষণ। ভাইয়া হয় শুনে অনেকে বর্ষাকে বলেছে তোমার ভাইয়ার সাথে একটু সেটিং করিয়ে দাওনা বর্ষা।আবার কেউ বলছে শোনো বর্ষা আজ থেকে আমাকে ভাবি ডাকবে।
কেউ বলছে ক্রাশ খেয়ছি, কেউ বলছে প্রেমে পরেছি । আবার কেউ কেউ বলেছে এমন চকলেট বয় পার্টনার হলে তো নাচের মঞ্চ এমনিতেই মেতে উঠবে।

বর্ষা কিছু না বলে চুপচাপ বসে শুনছে আর মনে মনে বলছে এই পেত্নী গুলোর যে খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই সেটা ভালোই বুঝতে পারছি। তা না হলে কি আমার বর্ষণ ভাইয়ার দিকে নজর দিতো? আর ক্যাম্পাসে আসতে দিবোনা। পেত্নী গুলোর কত্তবড় সাহস বলে কিনা সেটিং করিয়ে দিতে হুহ্।

এমন সেটিং করিয়ে দিবো না! দৌড়াইয়াও কূল পাবিনা। আশি বছরের বুইড়ার সাথে সেটিং করিয়ে দিবো একসাথে বসে পান চিবুতে চিবুতে গল্প করবি। সবগুলো শাঁকচুন্নির কপালে বুইড়া জুটবো বদ দোয়া কইরা দিলাম। আমার পছন্দের মানুষের উপর নজর দিস।

এর মধ্যে নদী এসে বর্ষার কাছে বসে বলে কিরে কি ভাবিস?
বর্ষাঃ কিছু না।

স্যার ক্লাসে আসায় সবাই চুপ হয়ে যায়। ক্লাস শেষে নদী আর বর্ষা হেঁটে গেটের দিকে যাচ্ছে তখন শাফিন এসে সামনে দাঁড়ায় ।

নদীঃ কি হলো ভাইয়া? কিছু বলবেন!
শাফিনঃ নাহ্ কিছু বলবো না। এমনিতেই বাসায় যাচ্ছিলাম তোমাদের দেখে বাইক থেকে নামলাম।
নদীঃ ওহ্ আচ্ছা। তাহলে আমরা এখন আসি ভাইয়া?
শাফিনঃ ওকে যাও।
নদী আর বর্ষা শাফিনকে পাশ কাটিয়ে চলে আসে। গেটের পাশে দাঁড়াতেই বর্ষণ আসে।বর্ষাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ অফিসে চলে যায়।

প্রায় এক মাস খুব সুন্দরভাবে কাটছে বর্ষণ বর্ষার দিন। বর্ষণ বর্ষাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে যায় আবার ক্লাস শেষে বাসায় নিয়ে যায়। এদিকে শাফিন সুযোগ পেলেই বর্ষার সাথে কথা বলার জন্য যায়। কিন্তু বর্ষা শাফিনের সাথে কোনো কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসে। দু চারটা কথা বলার হলে নদী কথা বলে শাফিনের সাথে।

বর্ষার পাগলামি ছেলেমানুষীতে অভস্ত্য বর্ষণ। বর্ষা বর্ষণ একে অন্যকে ছাড়া যেনো একটা মুহুর্ত ও চলতে পারেনা। কিন্তু আজ অবদি মনের কথাটা কেউ কাউকে বলেনি।

বর্ষণ ভাবে তার পরীটা এখনো অনেক ছোট্ট।
আর বর্ষা ভাবে তার বর্ষণ ভাইয়া শুধুই তার। সেটা বললেই কি আর না বললেই বা কি।

এইসব ভেবে কেউ কাউকে কিছু বলনি। তবে সারা বাড়ি হাসি আনন্দ হৈচৈ তে মাতিয়ে রাখে বর্ষা আর বর্ষণ।

প্রতিদিন সকালে বর্ষণের কফিটা বর্ষাই নিয়ে যায়।বর্ষার যতো আবদার সব বর্ষণের কাছে। আর যতো অভিযোগ সেগুলো রায়হান খান আর রমা বেগমের কাছে। আর এ অভিযোগগুলো অন্য কাউকে নিয়ে নয় শুধু বর্ষণকে নিয়ে।

আজ বৃহস্পতিবার,
সকালে কফি নিয়ে বর্ষণের রুমে গেলো বর্ষা।গিয়ে দেখে বর্ষণ ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠছে মাত্র।
বর্ষাঃ গুড মর্নিং ভাইয়া।তোমার কফি।
বর্ষণঃগুড মর্নিং। থ্যাংকস।এবার গিয়ে রেডি হয়ে নে ভার্সিটি যাবিনা?

বর্ষাঃ চুপচাপ দাড়িয়ে আছে কোনো কথা বলছেনা।
বর্ষণঃ কি হলো কিছু বলবি?
বর্ষাঃ হুম। আমি আজ ভার্সিটি যাবোনা। আমাকে একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে ভাইয়া?

বর্ষণঃ ক্লাস বাদ দিয়ে ঘুরতে যাবি? কোথায় যাবি বল?

বর্ষাঃ দুরে কোথাও না এই কাছে পিঠে কোথাও। বাসায় থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছেনা তাই আর কি

বর্ষণঃ কফি খেতে খেতে বললো – ঘুরতে যাওয়ার জন্য ক্লাস মিস করতে হবে না। তুই ক্লাসে যা। আমার ১২ টায় একটা মিটিং আছে তাই এখন যেতে পারবোনা।

বর্ষা মন খারাপ করে মাথা নিচু করে রুম থেকে বের হতে নিলে, দরজার পাশে আসতেই বর্ষণ বর্ষাকে ডাকলো।বললো বর্ষা শোন, বর্ষা বর্ষণের কথা শুনে ঘুরে দাঁড়ায়।

বর্ষণঃজলদি রেডি হয়ে নে আমি ও রেডি হয়ে আসছি তোকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে অফিস যাবো।

বর্ষাঃ কিছু না বলে মাথা উপর নিচ করলো যার মানে দাড়ালো হুম।
বর্ষা ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে এলো। নাস্তা করে গাড়িতে গিয়ে বসে পরে।বর্ষাকে ভার্সিটির গেটে নামিয়ে দিয়ে বর্ষণ অফিসে চলে যায়।

অফিসে মিটিং শেষ করে সব দায়িত্ব সাগরের কাঁধে চাপিয়ে বর্ষণ বর্ষার ভার্সিটিতে চলে আসে।

চলবে….

#তুই_শুধু_আমার_ভালোবাসা
#Hridita_Hridita
#পর্ব১৪

বর্ষণ ভার্সিটির গেটে এসে দেখে বর্ষা চুপচাপ একপাশে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মিটিং সেরে আসতে লেট হয়ে গেছে বর্ষণের।

বর্ষণকে দেখে বর্ষা এসে গাড়িতে উঠে বসে। বর্ষা কোনো কথা বলছে না বাইরে তাকিয়ে আছে। বর্ষণ বার বার বর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। বর্ষণ খুব ভালো করে জানে তার পরীটা খুব রেগে আছে।

বর্ষণের গাড়ি বাড়ির গেটে আসতেই দাড়োয়ান গেট খুলে দেয়। বর্ষণ গাড়ি পার্ক করে নামতেই বর্ষাও গাড়ি থেকে নেমে গট গট করে ভেতরে চলে যায়। বর্ষা ওয়াশরুম থেকে সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বেলকনিতে বসে আছে।

সচারাচর এই সময়টাতে বেলকনিতে আসেনা বর্ষা। মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে এমন সময় বেলকনিতে আসে তা ছাড়া আসা হয়না।কিন্তু প্রায় বিকেলটা বর্ষার বেলকনিতেই কাটে।

নিপু এসে ডেকে গেছে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য। বর্ষা নিচে এসে দেখে সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে। সবাই বলতে বর্ষণ, রমা বেগম, নিপু । বর্ষা আসতেই নিপু খাবার সার্ভ করে নিজেও খেতে বসলো।

রমা বেগম খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দু একটা কথা জিজ্ঞেস করছে বর্ষাকে। বর্ষা শুধু হু, হ্যা, না, আচ্ছা, ঠিক আছে এভাবে জবাব দিয়েছে এর বেশি কিছু না।

রমা বেগম বর্ষার জবাব দেওয়ার ধরণ দেখে বর্ষার দিকে তাকায়। কারণ অন্য দিন হলে বর্ষা তো বর্ষণকে আর রমা বেগমকে হাজারটা প্রশ্ন করতো।বর্ষণকে এসময়ে বাসায় দেখে।
রমা বেগম বর্ষণের দিকে আড়চোখে তাকায়। বর্ষণ বাঁকা হেসে খাবারে মনোযোগ দেয়।
রমা বেগমের আর বুঝতে বাকি রইলো না দুইজন আবার ঝামেলা পাকিয়েছে। রমা বেগম আর কিছু জিজ্ঞেস করলোনা। কারণ এখন জিজ্ঞেস করলে বর্ষা কিছু বলবেনা।

বর্ষা খাবার খেয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরে। অন্যান্য দিনে বর্ষা খাওয়া দাওয়া করে নিপু আর রমা বেগমের মাথা খারাপ করে কথা বলে বলে।কিন্তু আজ তার উল্টো। কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পরেছে।

বর্ষণ বর্ষাকে ডাকতে এসে দেখে বর্ষা ঘুমিয়ে পরেছে। বর্ষার পাশে বসে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত বর্ষাকে দেখে বর্ষণ। সেই টেডিটাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে পাগলিটা।

বর্ষা ঘুমিয়ে আছে দেখে বর্ষণ ও ডাকেনি তাকে। বর্ষণ মনে মনে ভাবছে ঘুমোচ্ছে ঘুমোক। হয়তো খুব ক্লান্ত আজ পিচ্চিটা আর না হয় এই বর্ষণের উপর রেগে ঘুমিয়ে পরেছে, এটা ভেবে বর্ষণ একটু হাসি দিয়ে উঠে যায়।

এক ঘন্টা পরে বর্ষণ বর্ষার রুমে এসে দেখে বর্ষা এখনো ঘুমোচ্ছে। বর্ষণ ফিরে এসে নিজের রুমে না গিয়ে নিচে চলে যায়। নিপুকে বলে কফি করে দিতে।

বর্ষণ কফি খাচ্ছে আর রমা বেগমের সাথে গল্প করছে।
এদিকে বর্ষা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় চা খাওয়ার জন্য। সোফায় বর্ষণকে বসে থাকতে দেখে বর্ষা কিচেনে চলে যায়।বর্ষা চা করছে।

বর্ষণ রমা বেগমকে কিছু একটা বলেই সোফা থেকে উঠে কিচেনে যায়। কিচেনে গিয়ে বর্ষাকে বলে এই যে ম্যাডাম রেডি হন জলদি করে।

বর্ষা শুনেও না শোনার ভাব ধরে চা করা নিয়ে ব্যাস্ত। নিপু খাবার পানি টেবিলে রাখতে গেছে। বর্ষণ বর্ষাকে হাত ধরে টেনে উপরে নিয়ে আসে।

বর্ষাঃ কি ব্যাপার এভাবে নিয়ে আসলে কেনো?
বর্ষণঃ কোনো কথা না বলে চুপচাপ রেডি হয়ে নে বের হবো। বেডের উপর যে শাড়ি আছে সেটা পরে নে।
বর্ষাঃ আমি কোথাও যাবোনা তুমি যাও ভাইয়া। আমাকে জোর করোনা প্লিজ।

বর্ষণঃ ওকে ঠিক আছে, জোর করবো না। তুই যদি আধা ঘন্টার মধ্যে রেডি না হোস তাহলে আমি নিজে তোকে রেডি করাবো আই মিন আমি নিজে হাতে তোকে শাড়ি পরাতে বাধ্য হবো।তুই কি চাস আমি তোকে শাড়িটা পরাই? যদি আমার হাতে শাড়ি পরতে না চাস তাহলে রেডি হয়ে নে জলদি করে। আমি মমকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

বর্ষণ রুম থেকে বের হয়ে রমা বেগমকে পাঠিয়ে দিলো।রমা বেগম শাড়ি পরিয়ে চুল খোপা করে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিলো বর্ষাকে।

ব্ল্যাক স্টোনের শাড়িতে অপরুপ সুন্দর লাগছে বর্ষাকে।ব্ল্যাক শাড়ির সাথে ম্যাচিং ব্ল্যাক স্টোনের বড় দুল, ফর্সা হাত ভর্তি ব্ল্যাক স্টোনের চুড়ি ফুটে উঠেছে। এই চুড়িগুলো যেন বর্ষার হাতের জন্যই গড়ানো হয়েছে। কপালে ব্ল্যাক স্টোনের সিম্পল টিকলি।

বর্ষা রুম থেকে বের হতেই থমকে যায় বর্ষণ ব্ল্যাক পান্জাবি হাতা অল্প ফোল্ড করে রাখা। হাতে ব্র্যান্ডের ব্ল্যাক ওয়াচ।গোলাপি ঠোঁট ফর্সা গাল আর ব্রাউন কালারের চোখের এই ছেলেটা যে কোনো মেয়েকেই ঘায়েল করতে পারবে এক মুহুর্তে।

বর্ষণ তো তার পরীকে দেখে এক মুহুর্তের জন্য পুরো দুনিয়াটাই ভুলে গিয়েছে। আশে পাশে যে আর কেউ আছে সেটা ভুলেই গিয়েছে।

নিপু হালকা কাশি দিতেই বর্ষণ চুলে হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বাইরে বের হয়ে যায়।
বর্ষাও বের হয় পিছে পিছে। ওরা বেরিয়ে যেতেই নিপু আর রমা বেগম উচ্চ স্বরে হাসতে থাকে।

নিপুঃ আম্মা জানো? এই পগল আর পাগলী দুইটা নিজেরাও জানেনা যে ওরা একে অন্যকে ছাড়া একটা মুহুর্ত ও থাকতে পারবেনা।

রমাঃ হুম, আমিও সেটাই চাই ওরা নিজেরা সেটা বুঝুক যে ওরা একে অপরের জন্য কতোটা ইম্পর্ট্যান্ট।

বর্ষণঃ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছু দুর গিয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখে বর্ষা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। বর্ষণ মিষ্টি করে হেসে আবার গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দেয়।

আবার কিছুক্ষণ পরে বর্ষণ বর্ষাকে ডেকে বলে- কিরে তুই কি এখনো রেগে আছিস আমার উপর?

বর্ষাঃ নাহ্! আমি কারও উপর রেগে নেই।
বর্ষণঃ সত্যি বলছিস তো?
বর্ষাঃ হুম এতে মিথ্যে বলার কি আছে।
বর্ষণঃ ফুচকা খাবি?

ফুচকার কথা শুনে বর্ষা চার হাতপা তুলে লাফিয়ে ওঠে। আবার একটু পরে আমতা আমতা করে বলে না মানে খাবোনা।

বর্ষা ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে বলে কেনো খাবেন না ম্যাডাম, সেটা কি জানতে পারি?

বর্ষা কিছু বললো না।

বর্ষণ একটা ফুচকাওয়ালাকে দেখে গাড়ি সাইড করে রেখে গাড়ি থেকে নেমে যায় আর বর্ষাকে বলে চুপ করে গাড়িতে বসে থাকতে।
বর্ষণ ফুচকাওয়ালা মামার সাথে কথা বলে গাড়ির কাছে আসতেই ফুচকাওয়ালা ও গাড়ির কাছে চলে আসে।

বর্ষণঃ মামা ঝাল কম দিয়ে এক প্লেট ফুচকা দাও।
বর্ষাঃ না মামা ঝাল বেশি করে দিয়েন। বর্ষণের কথা না শুনে অতিরিক্ত ঝাল দিয়ে ফুচকা খাচ্ছে বর্ষা। চোখে পানি চলে এসেছে তবুও ঝাল খেয়েই চলেছে।

একটু পরেই শুরু হয়ে গেলো বর্ষার চিল্লাপাল্লা। ঝাল লেগে হু হা শুরু হয়ে গেলো। ফুচকাওয়ালা মামা তো ছুটলো পানি আনতে।

বর্ষণ গাড়ি থেকে পানির বোতল বের করে পানি খাইয়ে দিলো তাতেও ঝাল কমেনি বর্ষার। ঝালে মুখ হা করে আছে বর্ষা।
বর্ষণ বর্ষার এমন অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে বর্ষার দুই গালে হাত রেখে মুখে ফু দিতে থাকে।
বর্ষা তো বর্ষণের এমন কান্ড দেখে বর্ষণের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে বর্ষার ঝাল কমে যায়। বর্ষণও ফু দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

দুজনই তাকিয়ে দেখে ফুচকাওয়ালা মামা পানির বোতল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
এতে বর্ষণের কিছু মনে না হলেও বর্ষা লজ্জা পেয়ে যায়।
বর্ষা গাড়িতে উঠে বসে। ফুচকাওয়ালা মামার বিল মিটিয়ে বর্ষণ ও গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আবার চলতে থাকে।

এমনিতে এতোটা ঝাল খায়না বর্ষা কিন্তু ঐ যে বর্ষণ বলেছে ঝাল কম খেতে। এখন তো বর্ষণের বিপরীত কিছু করতে হলে ঝাল খেতেই হবে। তাই বর্ষার এই ঝাল খাওয়ার বায়না।

বর্ষা গাড়িতে বসে ভাবছে বর্ষণের কিছুক্ষণ আগের কান্ডের কথা আর মুখ টিপে হাসছে।

চলবে….

(ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। রি চেইক হয়নি।)

হ্যাপি রিডিং 🥰

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে