#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 40 ( শেষ পর্ব )
জেরিন বার বার সাইফ কে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু কোনো ভাবেই সাইফের সাথে কনটাক্ট করতে পারছে। সাইফের ফোন অফ দেখাচ্ছে। আমান জেরিনের রুমে এসে দেখে জেরিন কাউকে বার বার ফোন দিচ্ছে। আমান বলে ওঠে,
–” জেরিন!”
কারো আওয়াজে জেরিন পেছনে তাকিয়ে দেখে আমান দাড়িয়ে আছে। আমানকে দেখে জেরিন বলে ওঠে,
–” আরে আমান! তুমি অফিস যাও নি?”
–” নাহ! আজ যাবো নাহ। তাহ তোমার কোনো প্রব্লেম হচ্ছে নাহ তোহ থাকতে।”
–” নাহ। প্রব্লেম কেনো হবে?”
–” হুম! আচ্ছা এর পরে কি করবে? মানে, তোমার হাসবেন্ডের কাছে ফিরে যাবে কি?”
–” আমান! আমি জানি, আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছিলাম। তোমার ভালোবাসার সাথে অন্যায় করেছিলাম। তাই হয়তো আজ আমার সাথে এমন হলো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমান, আমি এখনো তোমাকে নিয়ে ভাবি।”
–” তাই?”
–” হুম! সত্যি, আমি তোমার অভাব এখন বুঝতে পারি। আমান, আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই।”
–” তাহ, শুধু কি আমান কে বলবে নাকি আমাদেরও বলবে?”
কারো আওয়াজ পেয়ে জেরিন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আরসাল মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আবার আমানের দিকে তাকিয়ে দেখে আমানের মুখে কেমন ভয় লাগানো হাসি লেগে আছে। জেরিনের কেমন জানি ভয় লেগে উঠে। তাও নিজেকে সামলিয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল তুমি?”
–” হুম! তোমার হাসবেন্ড নাকি তোমার উপর অত্যাচার করছে?”
–” হুম!”
–” এই কারনে পুলিশ এসছে। তোমাকে হেল্প করতে। ইন্সপেক্টর ভেতরে আসুন।”
রুমের ভেতর পুলিশ আসতেই জেরিন মারাত্মক ভয় পেয়ে যায়। আর ভয়ে ভয়ে কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” পুলিশ কেনো?”
আরসাল মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমার হাসবেন্ড কে ঠিক করার জন্য।”
–” মানে?”
–” মানে টাহ আমি বলি?”
কথাটাহ বলতে বলতে আশা ভেতরে আসে। আশা এগিয়ে এসে জেরিনের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” জেরিন! তুমি তোহ একটা মেয়ে, একজনের স্ত্রী, নিজের অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে মিথ্যা, একটা মেয়ের ঘর ভাঙতে আসা, কিভাবে পারো?”
–” তুমি এইসব কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি নাহ।”
আরসাল জেরিনের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমাকে এক কথায় বুঝিয়ে দেয়। তেমার বস, সাইফ এখন জেলে।”
আরসালের কথাটাহ শুনতেই জেরিন চমকে আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল বলে ওঠে,
–” সাইফ আমাকে মারতে চেয়েছে এন্ড তোমাকে এই বাসায় পাঠিয়েছে আমান এবং আশার সংসার ভাঙার জন্য। এর আগেও একবার আশাকে রেপ করতে চেয়েছিলো। মোটামুটি বেশ কিছু কেসে এখন জেলে। পুলিশের কয়েক ঘা বাড়ি পড়তেই সব স্বীকার করে নেয়। তোমার মনে হতে পারে, তোমাকে আর সাইফ কে কেনো সন্দেহ করলাম? আসলে তুমি তোমার হাসবেন্ডের অত্যাচারের কথা বলে আমানের কাছে সাহায্য চেয়েছো, আমান তোমাকে সাহায্য করেছে। কিন্তু ব্যাপার টাহ আমাকে জানানোর পর তোমার ব্যাপারে একটু অনুসন্ধান চালাই, আর তাতে জানতে পারি তোমার হাসবেন্ড হসপিটালে এডমিট গত ৯ মাস ধরে।”
আরসালের কথা শুনতেই জেরিনের ভয়ে হাত পা কাঁপাকাপি শুরু করে দেয়। আরসাল আবার বলে ওঠে,
–” তখনই আমার তোমার উপর সন্দেহ হয়। তোমার কল লিস্ট চেক করি দেখি, সাইফের সাথে গত কয়েকদিন ধরে তোমার কন্টাক্ট আছে। ব্যাস, অল ক্লিয়ার। যাই হোক, সাইফ জেলে তোমার সাথে বাকি প্লান করার জন্য ওয়েট করছে।”
জেরিন কান্না করে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার কোনো দোষ নেই বিশ্বাস করো। আমার অনেক টাকার দরকার। আমার প্রচুর টাকার দরকার। আমার স্বামীর ট্রিটমেন্টের জন্য অনেক টাকা লাগবে। ওনি আমাকে বলেছিলো আমার স্বামী যতদিন নাহ সুস্থ হবে ততদিন ওনি ট্রিটমেন্টের টাকা দিবেন৷ যদি আমি এই কাজ টাহ করে দেয় তাহলে। আমার আর কোনো উপায় ছিলো নাহ। আশা বোন আমার, বিশ্বাস করো, আমি নিজ ইচ্ছায় তোমার সংসার ভাঙতে আসি নি। একটা সময় নিজের লোভে আমানের কাছে এসেছিলাম। কিন্তু আজ লোভে পড়ে নয়, নিজের স্বামীকে সুস্থ করার জন্য কাজ টাহ করতে বাধ্য হয়েছি। আমাকে এখন জেলে দিলে, আমার স্বামীকে কে দেখবে বলো। তোমরা আমার উপর নজর রেখো, আমার স্বামী সুস্থ হলে আমি তোমাদের দেওয়া শাস্তি মেনে নিবো। দয়া করো প্লিজ।”
আশা আমানের আর আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” পুলিশদের চলে যেতে বলো। ও তোহ আমাদের এখনো ক্ষতি করে নি। ও কোনোরকম ক্ষতি করার আগেই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। আর ও যাহ করতে এসেছিলো, একজন স্ত্রী হয়ে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য। যদিও কাজ টাহ অন্যায় ছিলো। যাই হোক, ওকে কোনো প্রকার শাস্তি দেওয়া উচিত নাহ। আর ওর স্বামীর চিকিৎসার সমস্ত খরচ আমরাই বহন করবো।”
জেরিন আশাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আশাও জেরিন কে জড়িয়ে ধরে।
★★★
আমানদের বাসায় আজ একটা অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে। ডক্টর শায়লা ২ দিন পরে রিপোর্ট বানিয়ে জানিয়েছেন, আশা মা হতে চলেছে। এই কথা শুনে আশা আর আমানের খুশির সীমা নাই। তাই আমানদের বাড়িতে আমান আর আরসালরা মিলে পারিবারিক হাসি খুশির আয়োজন করেছে। সবাই অনেক খুশি, আশার মা হওয়ার কথা শুনে।
রাতে চৌধুরী বাড়ির সবাই ফিরে আসে নিজেদের বাড়িতে। আরসাল বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। সেহের রুমে এসে আরসাল কে নাহ পেয়ে বারান্দায় উকি দিতেই দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। সেহের রুমের লাইট অফ করে দিয়ে, ব্লু সেডের ড্রিম লাইট অন করে দিয়ে, বারান্দায় গিয়ে আরসালকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল, সেহের জড়িয়ে ধরাতে মুচকি হেসে পিছন ফিরে সেহেরকে জড়িয়ে ধরে। সেহের আরসালকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলে ওঠে,
–” আরসাল আমার একটা বাবু চাই।”
আরসাল যেনো অবাক হয়ে যায়, সেহেরের মুখে আরসাল ডাক শুনে। আরসাল তাড়াতাড়ি সেহেরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে, সেহেরের মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” তুই আমাকে আরসাল বলে ডাকলি?”
–” তাহলে কি ভাইয়া বলে ডাকবো?”
–” একদমই নাহ আরসাল ইজ বেস্ট। যাই হোক কি বললি, বাবু লাগবে?”
সেহের লজ্জা পেয়ে আরসালকে জড়িয়ে ধরে আরসালের বুকে মুখ লুকায়। আরসাল সেহেরকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” সেহের আজ কি আমি আমার অধিকার টাহ পেতে পারি?”
সেহের কিছু নাহ বলে আরসালের বুকে একটা চুমু দিতেই আরসাল তার উত্তর পেয়ে যায়। আরসাল সেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে সেহেরের উপর আধশোয়া হয়ে সেহেরের কপালে একটা চুমু দেয়। সেহের জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আরসাল সেহেরের চোখের উপর চুমু দিয়ে, সেহেরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আরসাল যেনো আজ পাগল হয়ে যাচ্ছে সেহেরকে ভালোবাসার জন্য। এতোদিন তোহ মন টাহ দিয়েই আগলে রেখেছে। আজ সেহেরের শরীর টাও নিজের নামে করে নিতে চায় আরসাল। সেহেরের ঠোঁট থেকে সরে এসে সেহেরের গলায় মুখ ডুবায় আরসাল। সেহেরের শরীর থেকে শাড়ী ফেলে দেয় আরসাল। সরে যেতে থাকে দুইজনের মধ্যকার আবরন। একে অপরের সাথে মিলিয়ে নিতে চায় দুইজনে, আরসাল সেহেরকে নিয়ে নিজের ভালোবাসার নতুন স্বপ্ন বুনতে চায়। যেখানে শুধু সেহের আর আরসাল।
৬ বছর পর…………….
–” মাম্মাম! মাম্মাম!”
–” এই তোহ সোনা। তোমাকে খুজছিলাম তোহ আমি। কোথায় ছিলা তুমি?”
–” দিদার কাছে।”
–” আচ্ছা রুমে চলো।”
–” নাহ রুমে পাপা আছে। আমি পাপার কাছে যাবো নাহ।”
–” ওমা কেনো?”
–” আজ আমার বার্থডে। পাপা বলেছিলো আমার বার্থডে তে কোথাও যাবে নাহ। কিন্তু পাপা সকালেই কোথায় যেনো গিয়েছিলো। আমি খুজেই পাই নি।”
–” সেই জন্য আমার মা টাহ কি আমার উপর রাগ করেছে।”
আরসালের কথা শুনে ছোট্ট বাচ্চা টাহ মুখ ফুলিয়ে নেয়। এই হলো আরসাল আর সেহেরের এক মাত্র আদরের কন্যা অরশি। আরসালের জান অরশি। আজ অরশির চার বছর পূর্ণ হলো। দেখতে পুরো কিউটের ডিব্বা। আরসালকে সবসময় কাছে পেতে চায় অরশি। কিন্তু বিকালের বার্থডে পার্টির জন্য আরসাল একটু বাহিরে গিয়েছিলো কাজে, তাই অরশি রেগে আছে। আরসাল সেহেরের কোলের থেকে অরশিকে নিজের কোলে নিয়ে বলে ওঠে,
–” সরি মা! আর কখনো আমি এমন করবো নাহ। আর আজ আমি তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো নাহ।”
–” প্রমিস?”
–” প্রমিস!”
আরসাল অরশির গালে একটা চুমু দিতেই অরশিও আরসালের গালে চুমু দেয়।
সন্ধ্যায় চারিদিকে আলোয় ঝলমলে হয়ে আছে। সবাই সবার মতো হাসাহাসি মজা করছে। হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গিয়ে একটা লাইটের আলো পড়ে সিড়ির দিকে। সবাই সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় সেহের, আরসাল আর আরসালের কোলে অরশি। তিনজনেই সাদা ড্রেস পরা। যে কারোর মন খুশিতে ভরে যাবে এরোকম দৃশ্য দেখে। ওরা নিচে নেমে আসতেই সব লাইট জ্বলে উঠে। আর কেউ একজন বলে ওঠে,
–” Happy birthday my Princess.”
সবাই দরজার দিকে তাকাতেই দেখে রাহুল দাড়িয়ে আছে। অরশি “চাচ্চু” বলে দৌড়ে গিয়ে রাহুলের কোলে উঠে যায়। রাহুল অরশির প্রত্যেক জন্মদিনে দেশে আসে। অরশিও রাহুলকে খুব পছন্দ করে। প্রত্যেক জন্মদিনে অপেক্ষায় থাকে এইসময়ের। রাহুল অরশি কে কোলে করে নিয়ে কেকের সামনে দাড়ায়। অরশি, আরসাল আর রাহুলের মাঝে দাঁড়িয়ে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দেয়। এর মাঝেই আমান আর আশার ছেলে আরিয়ান এসে বলে ওঠে,
–” অরশি তুই সবাইকে কেক খাওয়ালি, আমাকে কেনো খাওয়ালি নাহ?”
–” তোমাকে আমি খাওয়াবো নাহ।”
–” কি বললি তুই? দাড়া।”
আরিয়ান একটা কেকের পিস তুলে অরশির হাত ধরিয়ে দিয়ে জোর করে নিজের মুখে তুলে নেয়। আর অরশির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই শুধু আমাকে খাওয়াবি। কারন #তুই_শুধু_আমার।”
কথাটাহ বলেই আরিয়ান বাইরে চলে যায়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সবাই আরিয়ান কে আরসালের সাথে তুলনা করে। কারন আরিয়ান অনেকটাহ আরসালের মতো হয়েছে। রাহুল আরসালের পাশে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” তোমার মেয়ে জামাই, আরসাল।”
–” হুম! কোনো সন্দেহ নাই।”
বলেই আরসাল আর রাহুল হেসে উঠে। রাহুল বিয়ে করে নি। একবার চেষ্টা করতে চেয়েছিলো, কিন্তু পারে নি সেহেরের জায়গা অন্য কাউকে দিতে। ইয়াশ বিদেশেই একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। আরসাল, সেহের, ইয়াশ অনেক বুঝিয়েছে রাহুলকে, কিন্তু রাহুল কোনো ভাবেই বিয়ে করতে রাজি হয় নি। আশফি আর নেহার একটা মেয়ে আছে, নাম নিশি। এইবার ২ বছর হবে।
রাতে সেহের অরশি কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজে পাশে শুয়ে আছে। আরসাল অফিসের কিছু কাজ কমপ্লিট করে বিছানার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আমার মা টাহ ঘুমিয়ে গেছে?”
–” হুম! আজ সারাদিন যাহ ছোটাছুটি করেছে, অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে।”
–” তাহ ঠিক! নাহলে তোহ ঘুমাতেই চাই নাহ।”
–” আর তাছাড়া আরিয়ানের নামে তোহ তার হাজার নালিশ।”
সেহেরের কথা শুনে আরসাল হেসে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমাদের আর মেয়ে জামাই খুজতে হবে নাহ।”
–” তাহ ঠিক।”
অরশি কে মাঝে রেখে আরসাল আর একপাশে শুয়ে অশরির কপালে একটা চুমু দিয়ে, সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” Thanks Seher. এরকম একটা মিষ্টি উপহার আমাকে দেওয়ার জন্য। আমার মেয়ে টাহ যে আমার জান।”
–” হুম! শুধু মেয়েটাই সব আর আমি কিছু নাহ তাই নাহ?”
–” আরে তুই তোহ আমার হার্ট, আর আমার মেয়েটাহ তোহ আমার হার্টবিট। হার্ট ছাড়া কি কখনো হার্টবিট হয়?”
–” আচ্ছা?”
–” হুম! সেহের একটা কথা বলি?”
–” হুম!”
–” #তুই_শুধু_আমার।”
সেহের একটা মুচকি হাসি দিয়ে আরসালের কপালে একটা চুমু একে দেয়। আরসালও সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। অরশিকে মাঝে রেখে আরসাল আর সেহের অরশির উপরে আস্তে করে হাত রেখে ঘুমিয়ে যায়।
🌹★★সমাপ্ত★★🌹