তুই শুধু আমার পর্ব-৩৬+৩৭

0
1865

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 36+37

চৌধুরী ম্যানশনে সবাই ড্রইংরুমে থমকে আছে। আরসাল যেনো কিছুতেই ব্যাপার টাহ মেনে নিতে পারছে নাহ। সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দুইজন ব্যাক্তির দিকে। আর তাদের সামনে দাড়িয়ে আছে আশফি এবং নেহা। নেহার পরনে লাল বেনারসি, গহনা, এক কথায় বধু বেশে দাঁড়িয়ে আছে নেহা। এইটা দেখে কারোর আর বুঝতে বাকি নেই যে আশফি আর নেহা বিয়ে করেছে। কেউ কিছু বলছে নাহ শুধু তাকিয়ে দেখছে আশফি আর নেহাকে। কিছু সময় পরে আরসাল আশফির সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” কি করলি এইটা? এইটা করার আগে কি একাবারও মনে হলো নাহ, বাসায় কাউকে অন্তত কথাটাহ বলা উচিত ছিলো?”

আশফি কিছুই বলে নাহ। কবির চৌধুরী আশফিকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কবির দাড়া! আশফি, তোর যদি নেহা কে পছন্দ হয়ে থাকে তুই আমাদের বলতে পারতি। তাহ নাহ করে এরকম ভাবে বিয়ে করে আসার মানে কি?”

আশফি তাও চুপ করে থাকে। আশফিকে চুপ থাকতে দেখে জিহাদ চৌধুরী আবার বলে ওঠে,
–” আশফি আমি তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি।”

আশফি তখনও চুপ করে আছে দেখে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! বলছি যে, যে কারনেই হোক আশফি নেহাকে বিয়ে করে এনেছে। মানে নেহা এই বাড়ির বউ। আর বাড়ির নতুন বউকে এভাবে রাখাটা চৌধুরী বাড়ির নিয়ম নাহ। আর তাছাড়া আজ নাহোক কাল তোহ আমাদের আশফিকে বিয়ে দিতেই হতো। আশফি যখন পছন্দ করে বিয়ে করেই ফেলেছে আমরা নাহ হয় বড় করে অনুষ্ঠান করে দিবো। আরসাল সেহেরের বিয়ের জন্য একটা অনুষ্ঠান করবো ভাবছিলাম। এইবার তাহলে একসাথেই অনুষ্ঠান করা হবে, আরও বড় করে। মেঝো, যাহ বউমা কে ঘরে তোল।”

মায়া চৌধুরীর কথা শুনে কেয়া চৌধুরী মাথা ঝাকিয়ে আশফি এবং নেহার সামনে এসে দাড়ায়। কেয়া চৌধুরী নিজের গলা থেকে চেইন খুলে নেহা কে পরিয়ে দেয়। আরসালের যেনো এইসব সহ্য হচ্ছিল নাহ, কারন কেউ নাহ জানলেও আরসাল তোহ জানে কি হতে পারে। আরসাল আর কারো দিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। নেহা আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দেয়।

★★★
আরসাল নিজের রুমে পায়চারি করছে। আরসালের খুব অস্থির অস্থির লাগছে। আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এই নেহার উদ্দেশ্য কি? আশফি কি করলি তুই এইটা? কি করতে চাইছে নেহা? উফ!”

চুল মুঠি ধরে বিছানায় বসে পড়ে আরসাল। সেহের কি মনে করে আরসালের রুমে আসতেই আরসাল কে এমব অবস্থায় দেখে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি ঠিক আছো?”

আরসাল মাথা তুলে সেহেরকে দেখে দাড়িয়ে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের তোকে আমার কিছু বলার আছে। প্লিজ নাহ করিস নাহ। একটু সময় দে আমাকে।”

–” কি হয়েছে?”
আরসাল নেহার সব কথা সেহেরকে বলে, কিভাবে নেহা সেহেরের ফটো দিয়ে আরসাল কে ব্লাকমেইল করেছিলো, কেনো আরসাল সেহেরকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানিয়েছিল, আরসাল নেহার সব কিছু হ্যাক করে সেহেরের ফটো গুলো ডিলিট করে সব বলে দেয়। সেহের যেনো হতভম্ব হয়ে গেছে আরসালের কথা শুনে। সেহেরের লজ্জা লাগছে এইসব কথা শুনে। কিভাবে একটা মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়ের ফটো নিয়ে এইসব করতে পারে ভেবেই পায় নাহ সেহের। আবার বিনা কারনে আরসালকে দোষী ভেবেছে সেহের, এইটা ভাবলেও সেহেরের কান্না পাচ্ছে। আবার আশফির কথা মনে আসলেও সেহেরের খুব কষ্ট হচ্ছে, ভাইটাহ যে নাহ যেনেই আগুনে ঝাপ দিয়েছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! কি হবে এখন?”

–” জানি নাহ। কিচ্ছু জানি নাহ আমি। আশফি এমন একটা কাজ করে ফেলবে কখনো ভাবি নি আমি। নাহ জানি, নেহা মাথায় কি পাকিয়ে এসেছে। ও অনেক নিচে নামতে পারে। আমি তোহ ভেবেছিলাম চলে গেছে আর আসবে নাহ। কিন্তু ও যে এই ভাবে ফিরে আসবে কখনো ভাবি নি।”

–” আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে নাহ। কি হলো এইটা? খুব ভয় করছে আমার।”

★★★
নেহা আশফির রুম ঘুরে ঘুরে দেখছে। কোনো সাজ নেই রুমটাতে। অবশ্য থাকবেই বাহ কিভাবে? নেহা ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” I am coming Arsal and Seher. গতকাল আমি এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। কারন তখন তুমি আমাকে যে কোনো সময় বের করে দিতে পারতে আরসাল। কিন্তু এখন পারবে নাহ। কারন এই বাড়ির উপর আমি অধিকার নিয়ে এসেছি। তোমার ভাইয়ের বউ হয়ে এসেছি। বোকা আশফি। প্রথম দিন থেকেই তুমি যে দূর্বল হয়েছো আমার প্রতি আমি তাহ বুঝতে পেরেছিলাম। আর আজ সেইটাকেই কাজে লাগালাম।”

নেহা শয়তানি হাসি দিয়ে আজকের দিনের কথা ভাবতে লাগলো।

Flashback…………

সকালে আশফির ফোনে নেহাই ম্যাসেজ করেছিলো। আশফি নেহার ম্যাসেজ পেয়ে দ্রুত চলে যায় নেহার দেওয়া ঠিকানায়। নেহা আশফিকে একটি কফিশপে ডাকে। আশফি কফিশপে এসে দেখে নেহা অনেকটাহ মন মরা হয়ে বসে আছে। আশফি নেহার সামনে গিয়ে অপোজিট চেয়ারে বসে বলে ওঠে,
–” নেহা!”

–” আশফি! তুমি এসেছো?”

–” হুম! কি হয়েছে নেহা? তুমি ঠিক আছো?”

–” হুম! আসলে তোমাকে একটা কথা বলার জন্য এখানে ডেকেছি।”

–” কি কথা নেহা?”

–” আমি বিদেশে চলে যাচ্ছি।”
কথাটা শুনতেই আশফির মাথায় যেনো বাজ পড়ে। আশফি তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
–” কেনো যাবা তুমি?”

–” কেনো যাবো নাহ বলো? বিডি তে কে আছে আমার? তোমরা? তোমাদের বাসায় আর কতদিন? কোন অধিকারে থাকবো আমি তোমাদের বাসায়? কেউ কি আছে যে আমাকে বউ বানিয়ে অধিকার তৈরি করে দিবে।”

–” নেহা তোমাকে একটা কথা বলতে পারি?”

–” বলো! যাহ মন চায় বলো। আমি তোহ তোমার কথা শুনবো জন্যই এখানে এসেছি। প্লিজ বলো।”

–” I love you Neha!”

–” মানে?”

–” মানে, আমি তোমাকে ভালোবাসি নেহা। কিন্তু কখনো বলতে পারি নি। আমি তেমাকে বিয়ে করতে চাই। তোমাকে আমার বাসায় থাকার অধিকার টাহ যদি আমি তৈরি করে দেই। তাহলে কি খুব একটা সমস্যা হবে তোমার?”
নেহা উঠে দাড়াতেই আশফিও দাড়িয়ে যায়। নেহা আশফিকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” আমিও তোমার প্রতি দূর্বল আশফি। আমিও চাইছিলাম তুমি এই কথাটা আমাকে বলো। Thanks!”

আশফিও নেহাকে জড়িয়ে ধরতেই নেহা আঙুল দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে আর মুখে ফুটে উঠে শয়তানি হাসি। তারপরেই নেহা আর আশফি বিয়ে করেই চৌধুরী ম্যানশনে আসে।

Present…………..

হঠাৎ দরজায় কারো আওয়াজে ধ্যান ভাঙে নেহার৷ নেহা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে আশফি এসেছে। নেহা আশফির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। আশফি এগিয়ে এসে নেহাকে জড়িয়ে ধরে। নেহাও জড়িয়ে ধরে আশফিকে আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” বেচারা আশফি। খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার জন্য। তুমি কি ভেবেছো? আমি তোমার সাথে সংসার করবো জন্য এই বাড়িতে এসেছি? ভুল! টোটালি ভুল! আমার উদ্দেশ্য তোহ এখন অনেকগুলো দাড়িয়েছে। আরসাল আর সেহেরের ভাঙন, সেহের সর্বনাশ, আরসালকে পাওয়ার চেষ্টা, এক কথায় সেহেরকে কষ্ট দেওয়া। যার জন্য আমি আমার আরসালকে হারিয়েছি।”

★★★
সেহের নিজের রুমে বসে আছে। কি করবে, নিজের রুমে থাকবে নাকি আরসালের রুমে যাবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। আরসালের উপর এতোদিন রাগ থাকলেও কিছুক্ষণ আগে আরসালের বলা কথাগুলো শুনে সেহেরের বুঝতে পারছে আরসালের কোনো দোষ নাই। তাই আরসালের উপর এখনো রাগ দেখানো মানে বিনা দোষে আরসালকে শাস্তি দেওয়া। এইটাহ তোহ ঠিক, সেহের এখনো আরসাল কে ভালোবাসে। রাহুলকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল শুধু মাত্র যেদের জন্য। রাহুল তোহ শুধু সেহেরের শরীর টায় পেতো, মন টাহ যে অনেক আগেই আরসাল নিয়ে গেছে। কি করবে সেহের? সব ভুলে আরসালের সাথে নতুন জীবন শুরু করাটাই কি উত্তম নই? যতই হোক আরসাল এখন তার স্বামী, যত যাই করুক নাহ কেনো আরসালকে ছেড়ে যাওয়ার তোহ কোনো উপায় নাই। তাছাড়া ছেড়ে কোথায় বাহ যাবে, আরসালকে যে বড্ড ভালোবাসে সেহের, ভালোবাসার মানুষ কে ফেলে যে কোথাও যাওয়ার উপায় নাই। সেহের কিছুক্ষণ নিজের রুমে পায়চারি করে, জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে আরসালের রুমের দিকে চলে যায়।

★★★
রাহুল নিজের রুমে বসা। সেইদিনে বাসর ঘরের সাজ এখনো রাহুলের রুমে আছে। রাহুল খুলতে দেয় নি সেই সাজ। মি. মুবিন অনেকবার খুলতে চেয়েছেন কিন্তু রাহুল খুলতে দেয় নি। মি. মুবিন রাহুলের এই অবস্থা মেনে নিতে পারছে নাহ। কারন রাহুল যে তার একমাত্র সন্তান। ছেলের কষ্ট হবে ভেবে কোনোদিন ২য় বার বিয়ের কথা মাথায়ও আনেন নি, অনেক আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন ছেলেকে। কোনো কিছুর কমতি রাখে নি, যাহ চেয়েছে সব দিয়েছেন। তাও আজ সেই ছেলে যদি এতো কষ্ট পায়, কোন বাবা সেইটা সহ্য করতে পারবে? সেইদিনের পর থেকে রাহুল অনেক চুপচাপ থাকে, রুম থেকেও খুব একটা বের হয় নাহ, বেশির ভাগ সময় সেহেরের সেই বড় ফটো টার সামনে বসে থাকে।
মি. মুবিন ড্রইংরুমে কারো জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ দরজায় কলিংবেলের আওয়াজে মি. মুবিন তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখে সে চলে এসেছে। মি. মুবিনের দিকে তাকিয়ে মানুষটাহ বলে ওঠে,
–” ফুপা, রাহুল কোথায়?”

–” রুমে, আমি আর পারছি নাহ ছেলেটার এই অবস্থা সহ্য করতে। প্লিজ তুই পারবি আমার ছেলেটাকে ঠিক করতে। তুই তোহ ওর বেস্ট ফ্রেন্ড, ওর সব কিছুর সাথী, প্লিজ আমার ছেলে কে ঠিক করে দে।”
মানুষটাহ আর কিছু নাহ বলে রাহুলের রুমের দিকে চলে যায়।
দরজায় কারো আওয়াজ পেয়ে রাহুল পিছন ঘুরে যাকে দেখে তাকে দেখে যেনো মুখে হাসি ফুটে উঠে রাহুলের। মানুষটার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ! তুই?”

হ্যা! মানুষটাহ ইয়াশ। রাহুলের মামাতো ভাই ইয়াশ৷ ইয়াশ যেমনই হোক নাহ কেনো, রাহুল আর ইয়াশ দুইজন দুইজনের জানের জিগার। ইয়াশ রাহুলের বিয়ের সময় বিদেশে ছিলো, তাই রাহুলের বিয়েতে আসতে পারে নি। পরবর্তীতে রাহুলের বিয়ের ঘটনা এবং রাহুলের বর্তমান অবস্থা জানতে পেরেই বিডি তে চলে আসে ইয়াশ। আর এখন এয়ারপোর্ট থেকে সোজা রাহুলদের বাসায় চলে এসেছে ইয়াশ। ইয়াশকে দেখেই রাহুল এগিয়ে এসে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরেই বলে ওঠে,
–” তুই বিদেশ থেকে কবে আসলি?”

–” আমার কথা বাদ দে। আগে তোর কথা বল। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখেছিস? কি হাল করেছিস নিজের? রাহুল একটা মেয়ের জন্য, রাহুল একটা মেয়ের জন্য এমন করছে। আমি জাস্ট ভাবতে পারছি নাহ। আচ্ছা কি আছে ঐ মেয়ের মধ্যে যে তুই এমন করছিসস?”

–” কি আছে? তুই বুঝবি নাহ। বাদ দে।”

–” মেয়েটাহ কই থাকে? আমি মেয়েটাকে দেখবো, আর মেয়েটার সব ডিটেইলস দে। দেখি কোন সে মেয়ে যার জন্য তুই দেবদাস হয়ে গেছিস।”

–” মেয়েটাকে দেখবি?”

–” হুম! দেখা।”

–” ঐ দেখ।”
রাহুলের দেখানো দিকে ইয়াশ তাকাতেই যেনো চমকে উঠে। কারন রাহুলের রুমের একপাশের পুরো দেয়াল জুড়ে সেহেরের একটা ফটো ঝোলানো আছে। ইয়াশ আস্তে আস্তে ফটো টার দিকে এগিয়ে এসে তাকিয়ে দেখে আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের! সেহেরের সাথে রাহুলের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এইটা কিভাবে সম্ভব? আমি বিদেশে যাওয়ার আগে যতটুকু খবর নিয়েছিলাম, তাতে জানতে পারি, আরসাল সেহেরকে ভালোবাসে। আর আরসালের বিদেশে যাওয়ার কারনটাও এই সেহেরই ছিলো। তাহলে রাহুলের সাথে সেহেরের বিয়ে ঠিক হয় কিভাবে?”

রাহুল এগিয়ে এসে ইয়াশের কাধে হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি দেখছিস এতো মনোযোগ দিয়ে?”

–” সেহেরের বিয়ে কার সাথে হয়েছে?”

–” ইয়াশ! তুই জানলি কিভাবে ওর নাম সেহের?”

ইয়াশ আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” মামা বলেছিলো। যাই হোক, কার সাথে বিয়ে হয়েছে সেহেরের?”

–” ওর কাজিন! আরসালের সাথে।”

–” কিভাবে?”
রাহুল ইয়াশকে সব বলে দেয়। ইয়াশের সেহেরের প্রতি এট্রাকশন কাজ করতো। যাহ সময়ের সাথে কেটে গেছে। কিন্তু ইয়াশ চেয়েছিলো সেহেরকে রেপ করতে, সেইদিনে অপমানের শোধ তুলতে। কিন্তু এখন ব্যাপার টাহ কমপ্লিটলি ঘুরে গেলো। রাহুল, তার জানের জিগার যখন এই সেহেরকে এতো ভালোবাসে তাহলে সেহেরের ক্ষতি নাহ, সেহেরকে সুস্থ ভাবে আনতে হবে। ইয়াশ রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই চিন্তা করিস নাহ। সেহের শুধু তোর। আর কারো নাহ। আমি সেহেরকে তোর কাছে এনে দিবো। বুঝলি?”

–” নাহ ইয়াশ! এইটা করিস নাহ। আমি শুধু চাই সেহের ভালো থাকুক। আমার খুশি আমার চাই নাহ, আমি সেহেরের খুশি দেখতে চাই। ভালবাসলেই যে তাকে পেতে হবে এমন কোনো কথা নাই। কিছু ভালোবাসা ত্যাগেই পূর্ণতা পাই।”
কথাগুলো বলেই রাহুল বারান্দায় চলে যায়। কিন্তু ইয়াশ সেহেরের ফটোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” সেহের! তোমার জন্য আমি মাইর খেয়েছি, সেইটা মেনেও নিয়েছি বাট তোমার জন্য আমার জানের জিগার দোস্ত এতো কষ্ট পাবে আমি সেইটা মেনে নিবো নাহ। রাহুল, তোমাকে সুখে দেখতে চায়। তুমি আরসালের কাছে সুখী হবে ঠিকই বাট আরসালই যদি এই পৃথিবীতে নাহ থাকে। তাহলে রাহুলই পারবে তোমাকে সুখী করতে৷ আর সেই ব্যাবস্থা আমি করবো।”

★★★
আরসাল নিজের রুমে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। হঠাৎ রুমের দরজা খোলার আওয়াজে তাকিয়ে দেখে সেহের এসেছে। আরসাল ল্যাপটপ টাহ পাশে রেখে দাড়িয়ে যায়। অনেকটাহ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেহরের দিকে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এমন ভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার কি আছে?”

–” তুই এখন আমার রুমে?”

–” তোমার রুম মানে? এইটা আমার স্বামীর রুম, তার মানে এই রুমে আমারও সমান অধিকার আছে। যাই হোক আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমোতে গেলাম।”
সেহের রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ব্লু সেডের ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আরসাল এখনো ওখানেই দাড়িয়ে আছে, সবকিছু যেনো আরসালের মাথার উপর দিয়ে গেলো। সেহের ঘুরিয়ে পেচিয়ে বললেও তাকে স্বামী বলেছে। মানে সেহের তাকে মেনে নিতে শুরু করেছে। আরসাল যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে নাহ। আরসাল ল্যাপটপ টাহ অফ করে দিয়ে বিছানায় গিয়ে সেহেরের মাথা টেনে নেয় নিজের বুকেট উপর। সেহের একটু সরে যেতে গেলেই আরসাল সেহেরকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে ওঠে,
–” স্বামীর কথা শুনতে হয়।”

সেহের কেমন যেনো শান্ত হয়ে যায় কথাটাহ শুনতেই। আরসাল সেহেরকে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। সেহেরও আরসালের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুম দেয়। সেহেরের মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সব শান্তি যেনো আরসালের বুকে এসে জমা হয়েছে। আর যে শান্তি উপভোগ করার একমাত্র অধিকার শুধু সেহেরের।

★★★
সকাল হয়ে গেছে। চারিদিকে রোদের ছোয়া ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই সুন্দর সকালে আরসাল কে জড়িয়ে ধরে শান্তির ঘুম দিচ্ছে সেহের। আর আরসাল, তার তোহ কখন ঘুম ভেঙে গেছে, কিন্তু তাকিয়ে আছে সেহেরের মায়াবী মুখের দিকে। আরসাল জানতো সেহেরকে সব কিছু বুঝিয়ে বললে সেহের বুঝবে। আর তাই হলো, তার সেহের আবার তার কাছে ফিরে এসেছে। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় সেহের। তাকাতেই দেখে আরসাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেহেরের কেমন যেনো লজ্জা লেগে উঠে আরসালের তাকানো দেখে। সেহের তাড়াতাড়ি সরে যেতে নিলেই, আরসাল সেহের কে টান দিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজে সেহেরের উপর আধশোয়া হয়ে, সেহেরের হাত বিছানায় চেপে ধরে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছো?”

–” নতুন সকাল! নতুন ভাবে শুরু করা উচিত।”

–” মানে?”
আরসাল কিছু নাহ বলে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের একটু কেঁপে উঠে। আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়। সেহের আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আরসাল সেহেরের বন্ধ চোখের পাতায় চুমু দিয়ে সেহেরের ঠোঁটে হালকা চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে। কোনোভাবে আরসালের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সেহের।
সেহের ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোতেই নেহার সাথে দেখা হয়। নেহা সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” Good morning Seher!”

–” তোমার জন্য আমার কাছে আপাততো সকাল টাহ গুড নাহ। তোমার এই নাটক আশফি ভাইয়া আর বাসার বাকি মেম্বার দের সামনে দেখিও। আমার সামনে নাহ। কারন, আমি সব জানি। আর এইটাও জানি কিভাবে নিজের স্বামীকে বদনজর থেকে বাচাতে হয়। আফসোস তোহ একটা জায়গায়। আমার সহজ সরল ভাইকে নিজের জালে ফাসিয়েছো। সুযোগ দিচ্ছি নেহা, নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি, নিজের মানসিকতা ঠিক করে আশফি ভাইয়ার সাথে সংসার করো। এইটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছি আশফি ভাইয়া তোমাকে খুব ভালোবাসে। তাই ভাইয়ার ভালোবাসাকে সম্মান দেও। নাহলে, সুযোগ কিন্তু আমি বার বার দেবো নাহ। পরে যেনো এমন নাহ হয়, আশফি ভাইয়াও তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিলো। মাইন্ড ইট!”
কথাগুলো বলেই সেহের নিচে চলে যায়। আর নেহা রাগী চোখে সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক তেজ হয়েছে তোমার। আমিও দেখি এই তেজ তোমার কতদিন থাকে?”

–” আরসালের বউ এর তেজ অফুরন্ত।”
কারো আওয়াজ শুনে নেহা পেছনে তাকিয়ে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসাল নেহার দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি আশফি কে বিয়ে কেনো করেছো, সইটা বোঝার আইডিয়া আমার আছে। আমার ছোট ভাইয়ের বউ, অধিকার নিয়ে এসেছো এই বাসায়। গুড থিংকিং। তুমি যাহ করেছো, আমিই তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিতাম। কিন্তু এই মুহুর্তে পারবো নাহ। কারন হাজার হোক ছোট ভাইয়ের বউ বলে কথা। নেহা তোমাকে সুযোগ এবং সময় দুইটায় দিচ্ছি। ঠিক হয়ে যাও। সুখে সংসার করো। নাহলে আশফি ভালোবাসলেও, আশফিই তোমাকে ঠাই দেবে নাহ। তাই নিজেই নিজের সংসার ভেংগো নাহ। I hope you are understand.”

কথাগুলো বলেই আরসালও নিচে চলে যায়। আর নেহা আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” বাহ! স্বামী স্ত্রী দুইজনেই ভালো উপদেশ দিয়ে গেলো। গুড! আগে আহে দেখো হোতা হে কেয়া।”

কথাগুলো ভাবতেই নেহার মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠে। পেছন থেকে আশফি এসে বলে ওঠে,
–” নেহা এখানে কেনো দাড়িয়ে আছো? নিচে চলো।”

–” হুম চলো।”

রিসোর্ট টি আলোয় আলোয় ভরে গেছে। চারিদিকে টুরি বাল্ব, ফুল, বেলুন, কালার পোপার, ডিজাইনিং কাপড় ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে। কাচের গ্লাসের রিন রিন আওয়াজেও ভরে গেছে চারপাশ। আজ আরসাল + সেহের এবং আশফি + নেহার রিসিপশন করা হচ্ছে। আর তার জন্য একটা রিসোর্ট হাউজ ঠিক করা হয়েছে। আরসাল, সেহের, আশফি, নেহা চারজনই স্টেজে বসে আছে। সবাই সবার মতো করে এনজয় করছে। সবাই আরসালকে রিকোয়েস্ট করে একটা গান গাওয়ার জন্য। আর আরসাল সেহেরকে রিকোয়েস্ট করে তার সাথে ডুয়েট করার জন্য। অবশেষে সবাই বললো ২কাপেল একসাথে গান গাইবে। আরসাল গিটার নিয়ে বাজানো শুরু করে দেয়।

সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,,,,,,জীবন এতো সুখের হলো,,,,,,,
,,,,,,,আমার পাশে তুমি আছো তাই,,,,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,,,,এক জীবনে এর চেয়ে বেশি,,,,,,
,,,,,,,,,আমার যে আর চাওয়ার কিছু নাই,,,,,,

সেহের ঃ ( মুচকি হেসে )
,,,,,,তোমার আমার ভালোবাসা শেষ হবার নই,,,,,,,,
,,,,,,,,,শুধু তোমায় কাছে চাই এই হৃদয়,,,,,,,

আরসাল ঃ ( মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

আমান ঃ ( নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

সবাই সবার মতো গান উপভোগ করলেও, কেউ একজন সবার চোখ ফাকি দিয়ে রিসোর্টে ভিতর ঢুকে পড়ে। লোকটা চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ যায় আরসাল আর সেহেরের দিকে। আরসাল আর সেহেরের দিকে চোখ যেতেই লোকটির মুখে বাকা হাসি ফুটে উঠে। লোকটা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে দিয়ে চলছে। লোকটার হাতে একটা গ্যাস লাইট আছে। গ্যাসলাইট টাহ খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে।

নেহা ঃ ( আরসালের সামনে দাড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,হুম.. দিন গেলো মাস গেলো,,,,,,
,,,,,,,,গেলো বহু বছর,,,,,,
,,,,,,,,,তবু যেনো শেষ হয় নাহ ভালোবাসার প্রহর,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,, ও ও ও ও ও,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,দিন গেলো মাস গেলো,,,,,,
,,,,,,,,গেলো বহু বছর,,,,,,
,,,,,,,,,তবু যেনো শেষ হয় নাহ ভালোবাসার প্রহর,,,,,

আশফি ঃ ( নেহার দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,তুমি আমার ঘরে আসো পূর্নিমা হয়ে,,,,,,,
,,,,,,,এ জীবন সাজিয়েছো তুমি পূর্নতা দিয়ে,,,,,,

সেহের ঃ ( আরসালের দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

আরসাল ঃ ( সেহেরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে )
,,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

লোকটা একটা জায়গা খুজে সেখানে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই গানের দিকে বিভোর হয়ে আছে। লোকটা হাতের গ্যাস লাইট দিয়ে সাজিয়ে রাখা কয়েকটা কাপড়ে আগুন জ্বালিয়ে দিতে শুরু করে।

নেহা ঃ ( আশফি এসে নেহার সামনে দাড়াতেই নেহা আশফির দিকে তাকিয়ে )
,,,,,,,,ও.. তুমি আমি ভালোবেসে,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,, থাকবো জীবন ভর,,,,,,,,,
,,,,,মরন যেনো আমাদের করে নাহ তো পর,,,,,,

সেহের ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,,,,,তোমায় নিয়ে সারাজীবন,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,কাটাতে যে চাই,,,,,,,,
,,,,,তুমি ছাড়া এ আমার আপন কেহ নাই,,,,,,

আরসাল ঃ ( চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে )
,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

আরসাল + আশফি ঃ ( চোখ বন্ধ করে )
,,,,,ওগো তোমায় নিয়ে,,,,,
,,,,,,,,,আমি পাড়ি দিয়ে,,,,,,,,
,,,,,,,,যেতে চাই সুখের ই দেশে হারিয়ে,,,,,,

গান শেষে সবাই হাত তালি দিয়ে উঠে। আর সেই লোকটি কয়েক জায়গায় আগুন লাগিয়ে গান শেষ হওয়ার আগে আগেই রিসোর্ট থেকে বের হয়ে যায়।

★★★
রাহুল ইয়াশের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু কথা কানে আসায় দরজার কাছে দাড়ায় আর শুনতে পায় ইয়াশ কাউকে বলছে,
–” ভালোভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিস।”

ফোনের ওপাশ থেকে বলে ওঠে,
–” জি স্যার! কয়েক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছি।”

–” কেউ তোকে দেখে নি তো?”

–” নাহ স্যার! কেউ দেখেনি। আমি একদম মুখ ঢেকে রেখেছিলাম আর সবাই গান শোনাতে বিভোর ছিলো কেউ দেখতে পায় নি।”

–” গুড! তাও তুই এই শহর থেকে কয়েক মাসের জন্য অন্য কোথাও চলে যাবি। তোকে যেনো কোথাও নাহ দেখি। সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকতে পারে। তাই তোকে যেনো কয়েকমাস এই শহরে নাহ দেখি।”

–” ওকে স্যার!”

–” এইবার চৌধুরী বাড়ির সব মারা গেলে সেহেরের আর কেউ থাকবে নাহ। তখন সেহের শুধু রাহুলের।”

–” কিন্তু স্যার। ওখানে তোহ বাকি সবার সাথে সেহের ম্যামও মারা যেতে পারে।”

–” আমাকে কি তোর এতোই বোকা মনে হয়? আমি লোক ঠিক করে রেখেছি। যখন চারপাশে ধোয়ায় ভরে যাবে, আমার লোক গিয়ে সেহেরকে সুন্দর ভাবে বের করে আনবে।”

–” Wow! Great idea.”

–” ইয়াহ, আচ্ছা যাই হোক তোকে যেইটা বললাম মাথায় রাখিস বাই।”
ইয়াশ ফোন টাহ কেটে দিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়। হ্যা! রিসোর্টে ঐ আগুন লাগিয়ে দেওয়া অচেনা ব্যাক্তিটিকে ইয়াশ পাঠিয়েছে।
ইয়াশ কথা বলে পিছনে ফিরতেই চমকে উঠে। কারন রাহুল ইয়াশের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
রাহুল ইয়াশের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি করেছিস তুই?”

–” কিছু নাহ।”

–” কিছু নাহ মানে কি? আমি নিজে শুনেছি তুই কাউকে জিজ্ঞাসা করছিলি আগুন লাগিয়েছে কি নাহ। ইয়াশ তুই কি করতে চাচ্ছিস? ওয়েট ওয়েট, আজ তোহ ওদের রিসিপশন পার্টি করা হচ্ছে। তুই ওখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিস? তাই নাহ? কি হলো চুপ করে আছিস কেনো বল?”

–” হ্যা! আমি পাঠিয়েছি। কি করতাম আমি? ছোট বেলা থেকে বাবা, মায়ের কাছে নাহ থেকে তোর কাছে থেকেছি। নিজের বুকের মাঝে বসিয়েছি তোকে। সেই তোর কষ্ট আমি দেখতে পারছিলাম নাহ। তাই আমি।”
ইয়াশ আর কিছু বলার আগেই রাহুল ইয়াশ কে একটা চড় মেরে দেয়। ইয়াশ গালে হাত দিয়ে রাহুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। রাহুল আরসালকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই আমার চেনা ইয়াশ নাহ। আমার চেনা ইয়াশ প্লেবয় হতে পারে। যে মেয়েদের সাথে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু কাউকে মারতে নাহ। ওহ গড! আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।”

রাহুল চলে যেতে নিলেই ইয়াশ রাহুলের হাত ধরে আটকিয়ে বলে ওঠে,
–” কই যাচ্ছিস তুই?”

–” রিসোর্টে! আমার হাত ছাড়।”

–” কখনো নাহ। ওখানে এখন তোকে আমি যেতে দিবো নাহ। কিছুতেই নাহ।”

–” ইয়াশ আমার হাত ছাড়।”
কথাটাহ বলে রাহুল ইয়াশের থেকে নিজের হাত ঝাড়ি দিয়ে ছুটিয়ে এনে গাড়ি নিয়ে রিসোর্টের দিকে যাত্রা শুরু করে। ইয়াশ পিছন থেকে চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” রাহুল, রাহুল দাড়া ইয়ার।”

কিন্তু রাহুলকে এভাবে চলে যেতে দেখে ইয়াশও গাড়ি নিয়ে রাহুলের পিছনে পিছনে রিসোর্টের দিকে যেতে থাকে।

★★★
গান শেষ হতেই, হঠাৎ সবার চোখ যায় রিসোর্টের চারদিকে আগুন ছড়িয়ে গেছে। সবাই ভয় পেয়ে যায়। আস্তে আস্তে ধোঁয়াতে চারপাশে ভরে যাচ্ছে। সেহের ভয় তে আরসালকে জড়িয়ে ধরে। আরসাল এক হাত দিয়ে সেহেরকে জড়িয়ে নেয়। সবার মাঝে একটা আতংক চলে আসে। আরসাল তাড়াতাড়ি ফোন বের করে দমকল বাহিনীদের কল করে। কিন্তু তারা আসতে আসতে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আরসাল সেহেরের মুখ তুলে দেখে সেহের অনেক ভয় পেয়ে গেছে এবং কান্না করছে। আরসাল সেহেরের মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” সেহের কান্না করা যাবে নাহ। শক্ত হতে হবে। সবাইকে বের করতে হবে। নাহ হলে সবাই মারা যাবো।”

–” কিন্তু কিভাবে? চারিদিকে কিভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দেখো।”

–” কিচ্ছু হবে নাহ। শোন তুই সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা কর।”
সেহের হ্যা বোধক মাথা ঝাকাতেই আরসাল, আমান আর আশফির সামনে গিয়ে বলে ওঠে,
–” আমান তুই মানুষদের শান্ত রাখার ট্রাই কর নাহলে বড় ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। আর আশফি তুই আগে আমাকে সব বাচ্চাদের এগিয়ে দিবি আমি বাইরে রেখে আসবো।”

আশফি আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বাইরে রেখে আসবি মানে কি? ডোরের দিকে তাকিয়ে দেখ পুড়ে যেতে পারিস?”

–” এখন এইসব ভাবার সময় নেই আশফি। কাম ফাস্ট।”
আশফি আরসালকে একটা একটা করে বাচ্চা কে ধরে দিচ্ছে আর আরসাল আগুন বাচিয়ে বাচ্চা গুলোকে বাইরে রেখে আসছে। দরজার ওখানে আগুনের প্রভাব বেশি হওয়ায় আরসালের অনেক জায়গায় আগুনের তাপ এবং আঁচে হালকা হালকা পুড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ব্যাথায় আরসালের কিছু হচ্ছে নাহ। আরসাল আর একটা বাচ্চা কে বাইরে রেখে আসতেই একটা গাড়ি এসে দাড়ায়। এবং গাড়ি থেকে রাহুল নেমে আসে। রাহুল আসার সময় নিজের গাড়িতেই কয়েকজন দমকলের লোক নিয়ে আসে। পরপরই পুরো দমকল বাহিনী চলে আসে। পাশাপাশি আরও একটা গাড়ি এসে থামে এবং সেই গাড়ি থেকে ইয়াশ বেরিয়ে আসে। ইয়াশকে এখানে দেখে আরসাল মারাত্মক আকারে অবাক হয়ে যায়। দমকলকর্মীরা সব মানুষ কে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসে এবং আগুন নিভিয়ে ফেলে। সেহের বাইরে আসতেই রাহুল আর ইয়াশ কে দেখে অনেক অবাক হয়ে যায়। রাহুলকে দেখে অবশ্য সবাই অবাক হয়ে যায়। রাহুল আস্তে আস্তে সেহেরের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” Seher! I am sorry.”

–” মানে? সরি, কিন্তু কেনো? আর তুমি এখানে কেনো?”

–” আসলে এই আগুন টাহ, মানে, আসলে এখানে আগুন।”

–” ওয়েট। তুমি এমন করে তোতলিয়ে বলছো কেনো? আর এই আগুন কি তুমি লাগিয়েছো? রাহুল ভাইয়া! তুমি এই আগুন তুমি লাগিয়েছো?”

–” সেহের!”
সবার মাথায় যেনো বাজ পড়ছে। একভাবে তাকিয়ে আছে রাহুলের দিকে। সেহের রাহুলের কলার্ট ধরে ঝাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ছিহ! তুমি এই জঘন্য কাজ টাহ করলে। আমাকে বিয়ে করতে পারো নিহ জন্য কাজ টাহ করেছো, তাই নাহ? ছিহ রাহুল ভাইয়া ছিহ! এতোটাহ নিচু মন তোমার। আমি ভাবতেই পারছি নাহ, আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম। যে কারনেই হোক, তোমাকে লাইফ পার্টনার বানাতে চেয়েছিলাম। ছিহ! কিভাবে করতে পারলে? লজ্জা করলো নাহ, এরোকম একটা নোংরা কাজ করতে?”

কথাগুলো বলতে বলতে সেহেরের চোখ যায় ইয়াশের উপর। সেহের আবার রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ এখানে কেনো?”

–” তুমি ইয়াশকে চিনো? ও আমার কাজিন।”
কথাটাহ শুনতেই আরসাল, সেহের অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়। সেহের জোরে হেসে দেয়। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহের হাসি থামিয়ে ছলছল চোখে রাহুলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এখন বুঝলাম, তোমার মন মানসিকতা এতোটাহ চিপ কেনো? কারন দুইজনই তোহ একই ব্লাডের। তুমি তোহ ইয়াশের থেকেও এগিয়ে আছো। ইয়াশ তোহ শুধু আমার ক্ষতি করতে চেয়েছিলো। আর তুমি? আমার পরিবার, পরিজন, আত্মীয়, স্বজন সবাইকে মেরে ফেলতে গিয়েছিলে। এখানে তোহ শুধু আমি আর আরসাল ভাইয়া দোষী তোমার কাছে। আর কেউ তোহ দোষী নাহ। এর আগের ফাংশনে অনেক রিলেটিভদেরই ইনভাইট করা হয় নায়। কিন্তু এই ফাংশনে করা হয়েছে। তাদের দোষ টাহ কি, বলতে পারো? কত ছোট ছোট বাচ্চারা রয়েছে, যারা এখনো পৃথিবী সম্পর্কেই কিছুই জানে নাহ, তারাই বাহ কি অন্যায় করেছে? আমার পরিবারও তোহ তোমার সাথে কোনো অন্যায় করে নি, তারা তোহ তেমাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসা দিয়ে গেছে। তাহলে তাদের কেনো মারতে চেয়েছো? আজ যদি ওদের কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো কি হতো তখন?”

সেহেরের প্রতিটাহ কথা যেনো রাহুলের বুকের ভিতর টাহ ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। সেহের নিজের চোখ মুছে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” I hate you. I hate of your mind. ছিহ! তুমি এতোটাহ নোংরা মনের আমি কোনোদিনও ভাবতে পারি নি। শুধুমাত্র প্রতিশোধের তাড়নায় আজ এতো বড় একটা জঘন্য কাজ করলে? ঘৃনা করি আমি তোমাকে। ঘৃনা করি তোমার নোংরা মন মানসিকতাকে। আমার তোহ ভাবতেও ঘৃনা লাগছে আমি তোমার মতো একটা চিপ মাইন্ডের ছেলের সাথে জীবন বাঁধতে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস ভাইয়া ঐদিন ঐ ঘটনা ঘটিয়েছিল, নাহলে তোহ তোমার মতো একটা ছেলেকে আমি বিয়ে করে ফেলতাম। I hate you. I hate your chip mind. লিসেন, তোমার এই খারাপ মুখটাহ যেনো আমি আর নাহ দেখি। আর কখনো আসবা নাহ আমার সামনে। আমি তোমাকে আর লাইফেও দেখতে চাই নাহ। তুমি আর কখনো আমার সামনে আসবা নাহ। I hate you. I hate you. Hate you.”

কথাগুলো বলে সেহের দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে। আরসাল রাহুলের সামনে দাড়াতেই রাহুল করুন চোখে আরসালের দিকে তাকালে, আরসাল কিছু নাহ বলে চলে যায়। আস্তে আস্তে সবাই চলে যায়। শুধু দাড়িয়ে থাকে রাহুল আর ইয়াশ। পোড়া রিসোর্টের সামনে শুধু ওরা দুইজন, আর কেউ নেই। রাহুল হাঁটুর উপর ভর করে ওখানে ধপ করে বসে পড়ে। রাহুলকে এভাবে বসে পড়তে দেখে ইয়াশ দৌড়ে এসে রাহুলের সামনে হাটু ভাজ করে বসে পড়ে। রাহুল একবার ইয়াশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। রাহুলের চোখে পানি ছলছল করছে আর মুচকি হাসছে, দেখে ইয়াশের বুকের ভেতরটাহ কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠে। ইয়াশের চোখে পানিতে ভরে যায়। ইয়াশ রাহুলের দিকে তাকিয়ে কান্না করে বলে ওঠে,
–” I am sorry Rahul. আমি বুঝতেই পারি নি এমন হবে। তুই এতো টাহ কষ্ট পাবি। আমি তোহ তের কষ্ট কে মুছে দিতে চেয়েছিলাম। সেই আমি কি নাহ, তোকে আরও বেশি কষ্ট দিয়ে দিলাম। কেনো তুই বললি নাহ বলতো, যে এইসব আমি করেছি তুই নাহ। I am so sorry Rahul.”

রাহুল আজ নিজেকে সামলাতে নাহ পেরে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি আর পারছি নাহ, ইয়াশ। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে নাহ। শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। যন্ত্রনা হচ্ছে। আর পারছি নাহ। আমি সেহেরকে ভালোবাসি। ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার বুকের ভেতর টাহ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সহ্য করতে পারছি নাহ। সেহের এখন আমাকে ঘৃনা করে। মেনে নিতে পারছি নাহ, এইটা আমি। কি করবো ইয়াশ। মেরে ফেল আমাকে প্লিজ।”

ইয়াশ আর কিছু নাহ বলে রাহুলকে জোরে জড়িয়ে ধরে রাখে।

★★★
সেহের বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আরসাল রুমে এসে সেহেরকে কোথাও পায় নাহ। আরসাল বারান্দায় উঁকি দিতেই দেখে সেহের দাড়িয়ে আছে। আরসাল সেহেরের পিছনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” সেহর!”

সেহের কারো আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে আরসাল দাড়িয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে?”

–” ভাইয়া! আমি কিছুতেই আজকের ঘটনা ভুলতে পারছি নাহ। রাহুল ভাইয়া এমন নাহ। নাকি সত্যিই এমন?”

–” প্লিজ শান্ত হ। যাহ হয়েছে, তাহ হয়ে গেছে।”
আরসাল এগিয়ে এসে সেহেরের শাড়ির নিচ দিয়ে হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সেহেরের মুখের উপর পড়া চুল গুলো কানের নিচে গুজে দেয় আরসাল। আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু দিতেই সেহের চোখ বন্ধ করে নেয়। আরসাল সেহেরকে রেলিং এর সাথে চেপে ধরে নিজেও সেহেরের সাথে মিশিয়ে দাড়ায়। সেহের জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আরসাল সেহেরের চুলের নিচ দিয়ে হাত দিয়ে সেহেরের মুখ কাছে নিয়ে এসে, সেহেরের ঠোঁটে হালকা করে চুমু দিতেই সেহের কেঁপে উঠে, আরসালের কলার্ট চেপে ধরে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই দেখে সেহেরের ঠোঁট কাপছে। আরসাল আর নিজেকে সামলে রাখতে নাহ পেরে সেহেরের ঠোঁটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দেয়। শুষে নিতে থাকে সেহেরের ঠোঁটের মিষ্টতা। হারিয়ে যাচ্ছে সেহের আরসালের ভালোবাসায়। আরসাল যেনো পাগল হয়ে যাচ্ছে সেহেরকে ছুতে পেরে। এক অজানা সুখে ভেসে যাচ্ছে দুইজন।
বেশ কিছু সময় পর আরসাল সেহেরের ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে। সেহের এখনো চোখ বন্ধ করে রয়েছে। আরসাল সেহেরের চোখ বন্ধ দেখে মুচকি হাসি দিয়ে সেহেরের বন্ধ চোখের উপর চুমু একে দেয়। এতে যেনো সেহেরের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আরসাল সেহেরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে, সেহেরের উপর আধশোয়া হয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক কষ্ট, নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক কষ্ট। বাট, তাও আমি তোকে এই মুহুর্তে নিজের করতে চাই নাহ। কারন সেই সময় এখনো হয় নি। যখন আবার তুই আমার কাছে এসে বলবি, আরসাল আমাকে নিজের করে নেও, তারপর আমি তোকে নিজের করে নিবো। ভাসিয়ে নিয়ে যাবো নিজের ভালোবাসার সাগরে। ভালোবেসে পূর্ণ করে দেবো তোকে। একটা কথা তোকে বলতে চাই, শুনবি?”

সেহের হ্যা বোধক মাথা ঝাকাতেই আরসাল বলে ওঠে,
–” সেহের, #তুই_শুধু_আমার।”

কথাটাহ শুনতেই সেহের মুচকি হাসি দেয়। আরসাল সেহেরকে বুকের উপর নিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। সেহের আরসালের বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমিয়ে যায়।

চলবে………………..🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে