তুই শুধু আমার পর্ব-৩৪+৩৫

0
1769

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 34+35

চারিদিকে আলোয় ঝলমল করছে। আলোয় আলোয় ভরে গেছে চারাপাশ। সাথে বাজছে মিউজিক। খাবারের গন্ধে চারদিকে ভরে গেছে। সবাই সেজে উঠেছে নতুন পোশাকে, নতুন সাজে। রাহুল কে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই রাহুলের সাথে কথা বলছে, ফটো তুলছে। কিন্তু রাহুলের মন পড়ে আছে সেহেরের কাছে। সেহেরকে বধু বেশে একবার দেখার জন্য মনটাহ অনেক অস্থির অস্থির লাগছে।
বেশ কিছু সময় পর জিহাদ চৌধুরী মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মায়া যাও, সেহের মা কে নিয়ে আসো।”

–” হুম! যাচ্ছি।”
মায়া চৌধুরী আশার দিকে ইশারা করতেই আশা সেহেরের রুমে চলে যায় সেহেরকে নিয়ে আসার জন্য। আশা সেহেরের রুমে এসে দেখে সেহের কোথাও নেই। আশা ভাবে হয়তো ওয়াশরুমে আছে, তাই ওয়াশরুমের দরজা নক করতেই দরজা খুলে যায়। আশা ওয়াশরুম চেক করে দেখে সেহের নেই। আশা কেমন যেনো ভয় পেয়ে যায়। আশা তাড়াতাড়ি বারান্দা এবং অন্যান্য রুম চেক করে কিন্তু সেহেরকে কোথাও পায় নাহ। আশা অনেক ভয় পেয়ে যায়। আশা তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসে জিহাদ চৌধুরীর কাছে যেয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু!”

–” হুম! কি হলো তোকে নাহ বলা হলো সেহেরকে নিয়ে আসার জন্য?”

–” বড় আব্বু তোমার সাথে একটু কথা আছে।”

–” এখন?”

–” হুম! খুব ইম্পর্টেন্ট।”

–” আচ্ছা চল।”
আশা আর জিহাদ চৌধুরী কে একপাশে যেতে দেখে মায়া চৌধুরী আর আহিয়া চৌধুরীও এগিয়ে যায়, কারন আশাকে খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছে। আশা তাদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কোথাও নেই।”

আহিয়া চৌধুরী, মায়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী আশার কথা শুনে চমকে যায়। জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কি বলছিস এইসব?”

–” হ্যা! ঠিকই বলছি। আমি সব জায়গায় খুজেছি, কিন্তু সেহেরকে কোথাও পাই নি।”
তারা সবাই কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে নাহ। জিহাদ চৌধুরী পড়ে যেতে গেলেই আশা৷ আর মায়া চৌধুরী তাড়াতাড়ি ধরে বসে। আশা কান্না করে দিয়ে বলে ওঠে,
–” বড় আব্বু! শান্ত হও প্লিজ।”

–” কি হবে এখন? সেহের কোথায় গেছে? কি উত্তর দিবো আমি রাহুল আর মুবিন কে। বাড়ির সম্মান তোহ নষ্ট হয়ে যাবে। কি করবো আমি?”
আমান আশা, জিহাদ চৌধুরী, মায়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী কে এক জায়গায় দেখে তাদের দিকে এগিয়ে এসে দেখে আহিয়া চৌধুরী, আশা, মায়া চৌধুরী কান্না করছে। আমান ব্যাপার টাহ দেখে চিন্তিত মুখে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে? আশা কি হয়েছে?”

–” আমান, সেহেরকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে নাহ।”

–” What? কি বলছিস এইগুলো? সব জায়গা খুজেছিস ভালো করে?”

–” আমি বাড়ির সবা জায়গা খুঁজেছি। কিন্তু সেহেরকে কোথাও পাই নি।”
আমান কিছু নাহ ভেবেই আরসালের রুমে যায়, আরসালকে ব্যাপার টাহ জানানোর জন্য। আরসালের রুমে গিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যায় আমান। আরসাল কোথাও নেই। হঠাৎ আমানের চোখ যায় ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় লাগানো একটা কাগজের দিকে। আমান কাগজটাহ নিয়ে দেখে আরসালের লেখা। আমান কাগজটাহ পড়তে থাকে,
“””””আমি জানি তুই আমার রুমে আসবি। আমাকে খুজে লাভ নাই। আমি বাসায় নেই। আর সেহেরকে আমি আমার কাছেই নিয়ে এসেছি। চিন্তা করিস নাহ, আজ রাতেই বাসায় ফিরবো। আর সেহেরকে নিয়েই ফিরবো। তুই শুধু সবাইকে একটা কথা জানিয়ে দে, আরসাল সেহেরকে সাথে করে নিয়ে আসছে।””””””

★★★
সেহের আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতে চাইলেও পারছে নাহ। কারন অনেক আলো। সেহের আস্তে আস্তে উঠে বসে চোখ মুখ কুচকে মাথা চেপে ধরে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে চারপাশে তাকাতেই সেহের চমকে উঠে। ভালোভাবে খেয়াল করতেই সেহের বুঝে যায় এইটা ওদের বাগান বাড়ি। সেহের ভাবছে ও এখানে এলে কিভাবে। সেহের চোখ বন্ধ করে কিছু সময় আগের কথা মনে করতে থাকে।

কিছুক্ষন আগে……..

সেহের জানালা দিয়ে রাহুলের ওয়েলকাম দেখছিলো। হঠাৎ সেহেরের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে। সেহের ম্যাসেজ টাহ ওপেন করতেই দেখে আশার নাম্বার থেকে এসেছে। ম্যাসেজে লিখা আছে,” সেহের একটু বাসার পেছন সাইডে আই। তোকে কিছু কথা বলার আছে। প্লিজ তাড়াতাড়ি আই।” আশার এমন ম্যাসেজ দেখে সেহের কিছু নাহ ভেবেই বাসার পেছন দিকে যেয়ে বলে ওঠে,
–” আশা! আশা! কোথায় তুই?”

হঠাৎ কেউ একজন সেহেরের মুখে একটা রুমাল চেপে ধরে। তারপর আর সেহেরের কিছু মনে নাই।

বর্তমান…….

সেহের তাড়াতাড়ি চোখ খুলে বলে ওঠে,
–” বাসার সবাই এতোক্ষণে তোহ আমাকে খুজছে মনে হয়। হায় আল্লাহ! বাড়ির সম্মান শেষ হয়ে যাবে। আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌছাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”

সেহের তাড়াতাড়ি দরজা খুলতেই দেখে আরসাল। আরসালকে দেখতেই সেহের চমকে উঠে। আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি?”

–” কেনো? তুই কি অন্য কাউকে এক্সেপ্ট করছিলি নাকি?”

–” তুমি এখানে। যাই হোক, আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে হবে।”

–” কেনো ঐ রাহুলকে বিয়ে করার জন্য। তাহলে আমি এতো কষ্ট করতে কেনো গেলাম?”

–” মানে?”

–” তুই এখনো বুঝিস নি?”
সেহের আরসালের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কেনো করলে এমন?”

–” তুই কি ভেবেছিলি? তুই আমার চোখের সামনে অন্য একজন কে বিয়ে করবি আর আমি চুপচাপ সব মেনে নিবো? এতোই সহজ মনে হয় তোর?”

–” কি বলছো তুমি এইসব?”

–” আমি ঠিকই বলছি। তুই হয়তো ভুলে গেছিস আমি তোকে একটা কথা বলেছিলাম যে, #তুই_শুধু_আমার। সেহের শুধু আরসালের। এতো সহজে কি করে ছেড়ে দেয়। দেখ সময় বেশি নেই, নিচে বিয়ে পড়ানোর জন্য সবাই ওয়েট করছে, তাড়াতাড়ি চল। তারপর আমাদের বাসায় ফিরতে হবে।”
আরসাল সেহেরের হাত ধরতে গেলে সেহের কয়েক পা পিছিয়ে যায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের বলে ওঠে,
–” কি ভাবো বলোতো আমাকে? পুতুল? খেলার পুতুল মনে হয় আমাকে? যে যতক্ষণ ইচ্ছে হলো আমাকে নিয়ে খেললে, খেলা শেষ হলে ফেলে দিলে। আমি কারো খেলনা হতে পারবো নাহ। আমি একটা মানুষ! আমারও একটা মন আছে, নিজস্ব মানসম্মান আছে। তোমার যখন ইচ্ছে হয়েছিলো সবার সামনে বলেছিলে আমাকে হেট করো, আবার ইচ্ছে হলো আমাকে প্রপোজ করলে, আমার কাছে আসলে, আবার ইচ্ছে হলো আমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানালে, আবার আমাকে এইটাও বললে সব প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য করেছো, আর আজ আবার ইচ্ছে হলো কোনো কিছু চিন্তা ভাবনা নাহ করে আমাকে এখানে নিয়ে এলে, আবার এখন বলছো বিয়ে করতে। কি মনে করো তুমি নিজেকে? সব তোমার মর্জিতে চলবে? অন্য কারোর ইচ্ছার কোনো দাম নেই?”

–” সেহের আমার কথাটা শোন প্লিজ। হ্যা আমি মানছি, অনেক কিছু করেছি। কিন্তু সেহের তোকে বিয়ে করতে আমি যে অস্বীকার করেছিলাম এর জন্য যথেষ্ট কারন ছিলো। সেহের আমি নিজের ইচ্ছায় এইসব করি নি। দেখ আমি তোকে সব বলবো। আমাকে একটু সময় দে প্লিজ। কিন্তু এখন আমাদের এখানে বিয়ে করে বাসায় যেতে হবে। তারপর আমি তোকে সব বলবো, প্লিজ।”

–” কখনো নাহ। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই নাহ। আমি রাহুল ভাইয়া কে বিয়ে করবো।”
সেহেরের মুখে এই কথা শুনে আরসালের রাগ উঠে যায়। আরসাল শক্ত করে সেহেরের মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” তোর সাহস কি করে হয় এই কথা বলার? খুব শখ নাহ রাহুলকে বিয়ে করার? তোকে তোহ আমাকেই বিয়ে করতে হবে। আর সেইটাও কিভাবে, তাও আমি খুব ভালো করেই জানি। ভালো ভাবে বললাম কিন্তু তুই শুনবি নাহ, বোঝা হয়ে গেছে আমার। তাই আমাকে বাঁকা রাস্তা ধরতেই হবে।”

–” মানে? কি করবে তুমি?”

–” তুই যদি এখন এই বিয়েতে কোনো ঝামেলা করিস তাহলে, আমার একটা ফোনে রাহুলের লাশ মাটিতে পড়ে যাবে।”

–” কি? কি বলছো তুমি এইসব?”

–” এতো সময় খুব ভালো করে বোঝাতে চাইছিলাম তোকে। কিন্তু তুই আমার এতো ভালো ব্যাবহার মনে হয় নিতে পারছিলি নাহ। তাই এখন আমাকে আমার মতো কাজ করতে হবে।”

–” ভাইয়া প্লিজ। তুমি এমন কাজ করতে পারো নাহ।”

–” আমি কি করতে পারি আর নাহ পারি সেই ব্যাপারে তোর কোনো ধারনাই নেই। যাই হোক কয়েক সেকেন্ড সময় দিচ্ছি। ভেবে দেখ কি করবি? আমাকে বিয়ে করবি নাকি রাহুলের মৃত্যু দেখবি? আমি জানি তুই একটা নির্দোষ ছেলের পরিনতি এমন হতে দিবি নাহ। তাও দেখ। আমি ফোন দেয়।”
আরসাল ফোন বের করে কাউকে কল দিয়ে হ্যালো বলতেই সেহের চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি রাজি!”

সেহেরের কথা শুনতেই আরসাল ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। আরসাল সেহেরের হাত ধরে নিচে নিয়ে আসতেই দেখে কিছু মানুষ বসে আছে। সেহেরের দিকে এগিয়ে দেওয়া হলো একটা কাগজ। সেহের আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল সেহেরকে ইশারা করে কাগজটাতে সই করার জন্য। সেহের কি আর করবে? কোনো উপায়ই তোহ নেই। সাইন করে দেয় সেহের।

★★★
চৌধুরী ম্যানশন একদম নিরব হয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেও যেখানে বিয়ের আনন্দে ভরপুর ছিলো, এখন সেখানে পিনপিন নিরাবতা চলছে। আমান এসে সবাইকে আরসালের লিখে যাওয়া কথা বলাতেই ব্যাপারটাহ অন্যরকম হয়ে গেছে। নেহা রেগে ফায়ার হয়ে আছে। কারন আরসাল এমন কাজ করে কিভাবে, যেখানে সেহেরের এতো বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নেহা অপেক্ষা করছে আরসালের। কারন আরসালের সাথে কথা বলে কোনো সমাধান বের করতে নাহ পারলে সেহেরের ফটো ভাইরাল করে দিবে।
রাহুল চুপ করে বসে আছে। হ্যা, রাহুল এখনো বসে আছে। কারন রাহুল সেহেরের সামনাসামনি হতে চায়। রাহুল সেহেরের কাছের থেকে জানতে চায় যে, তার অপরাধ কি ছিলো? সে তোহ সেহেরকে জোর করে নি, তাহলে? যদি বিয়ে করবেই নাহ এমন ভাবনা থাকে তাহলে কেনো তাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো? কেনো অসম্মান করলো তাকে এবং তার ভালোবাসা কে? সব উত্তর চায় রাহুলের।
সবাই নিজের মতো করে ভাবনায় ব্যাস্ত। ঠিক তখনি দরজায় কলিংবেলের আওয়াজে সবাই চমকে উঠে। সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু দরজা খোলার মতো শক্তি পাচ্ছে নাহ। আশফি সবার দিকে একবার তাকিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে দেয় আশফি। দরজা খুলতেই সবার নজর যায় আরসাল আর সেহেরের দিকে। আরসাল আর সেহের ভেতরে আসে। নেহার চোখ যায় আরসাল আর সেহেরের হাতের দিকে, যেখানে আরসাল সেহেরের হাত ধরে রেখেছে। রাহুল এসে আরসাল আর সেহেরের সামনে দাড়ায়। সবাই তাকিয়ে আছে আরসাল, সেহের আর রাহুলের দিকে। রাহুল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে তোমাকে। ভেবেছিলাম এই সাজে সেহেরকে আমার রাজ্যের রানি বানাবো। আফসোস! ব্যার্থ চেষ্টা। আচ্ছা সেহের, আমি কি তোমাকে জোর করেছিলাম এই বিয়ে তে রাজি হওয়ার জন্য? বা আমি তোমাকে কখনো বলেছি, আমাকে বিয়ে করতেই হবে? বলি নি তোহ, তাই নাহ? তাহলে? তাহলে, কেনো আজ এই কাজ টাহ করলে? কেনো আমাকে আর আমার ভালোবাসা কে অপমান করলে? কেনো আমার স্বপ্ন কে এইভাবে ভেঙে দিলে? আমি তোহ কোনো অন্যায় করি নি। তাহলে?”

সেহের অশ্রুসিক্ত নয়নে রাহুলের দিকে তাকিয়ে আছে। রাহুলের চোখ ছলছল করছে, কিন্তু রাহুল পানি পড়তে দিচ্ছে নাহ, আটকে রেখেছে চোখের পানি। সেহের কিছু বলার আগেই আরসাল বলে ওঠে,
–” সরি রাহুল। কথাগুলো আমি বলছি। কারন সেহেরের কোনো দোষ নাই। কারন সেহের নিজ ইচ্ছায় এই বিয়ের আসর থেকে যায় নি।”

–” মানে?”

–” মানে সেহেরকে আমি সেন্সলেস করে নিয়ে গেছিলাম। আর ওকে নিয়ে গিয়ে আমি বিয়ে করি। সেহের তোমার সাথে কোনো বেইমানি করে নি। যাহ করার আমি করেছি। তাই সেহেরকে কোনো প্রকার দোষারোপ করো নাহ। কারন ওর কোনো দোষই নেই।”

–” কিছুই বলার নাই।”
রাহুল আর কিছুই নাহ বলে বেরিয়ে যায় চৌধুরী ম্যানশন থেকে। সবাই এখনো তাকিয়ে আছে আরসাল আর সেহেরের দিকে। জিহাদ চৌধুরী আরসালের সামনে দাড়াতেই আরসাল মাথা নিচু করে ফেলে। জিহাদ চৌধুরী আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তুমি সেহেরকে বিয়ে করবে কি নাহ? কিন্তু তুমি সেহেরকে বিয়ে করতে অস্বীকার জানিয়েছিলে। তাহলে আজ এরকম করার কারন কি, আরসাল?”

–” বাবা, আমি সরি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো নাহ। কারন তখন কিছু কারনে আমি বিয়ে করতে অস্বীকার করেছিলাম। কিন্তু কারন গুলো এই মুহুর্তে তোমাদের বলতো পারবো নাহ।”
কথা গুলো বলতে বলতে আরসাল নেহার দিকে শক্ত চোখে তাকায়। নেহাও অবাক + রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আরসাল আর সেহেরের দিকে। জিহাদ চৌধুরী আবার আরসালকে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আরসাল বলে ওঠে,
–” বাবা প্লিজ। আমি আর এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই নাহ। শুধু একটা কথা জানিয়ে দিচ্ছি। সেহেরকে আমি আজ বিয়ে করেছি। মানে চৌধুরী বাড়ির মেয়ের পাশাপাশি সেহের চৌধুরী বাড়ির বউ।”

আরসাল আর কারো দিকে নাহ তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। সেহের এখনো সেইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সেহের যেনো বুঝতেই পারছে নাহ। কি হচ্ছে তার সাথে। আহিয়া চৌধুরী মেয়ের এমন অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েন। আশা আহিয়া চৌধুরী কে সামলাতে থাকে। মায়া চৌধুরী সেহেরের সামনে দাড়াতেই, সেহের আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে নাহ। মায়া চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় সেহের। মায়া চৌধুরী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে নাহ। কার তার নিজের ছেলেই তোহ সেহেরের জীবন কে নাটকীয় বানিয়ে তুলছে।
নেহা যেনো কিছুতেই মানতে পারছে নাহ আরসাল আর সেহেরের বিয়ে। নেহা উপরে আরসালের রুমে গিয়ে দেখে আরসাল মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। নেহাকে দেখে আরসাল বাঁকা হাসি দেয়। আরসালের এমন হাসি দেখে নেহার মনে হচ্ছে, তার শরীরে কেউ আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। নেহা আরসালের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” তুমি যাহ করেছো তার পরিনাম কি হতে পারে, তাতোহ তোমার অজানা ছিলো নাহ। তারপরও এমন কাজ করলে।”

–” কি করবে নেহা? ফটো ভাইরাল করবে? কোন ফটো? একটু দেখাবে প্লিজ!”

–” কোন ফটো তোমার মনে নাই? আচ্ছা ওয়েট।”
কথাটা বলেই নেহা নিজের ফোন ওপেন করে দেখে সমস্ত ফাইল ফাকা। কোথাও কিছুই নাই। নেহা রাগী চোখে আরসালের দিকে তাকাতেই আরসাল বলে ওঠে,
–” এতো সহজ নেহা? আমার সাথে তুমি গেম খেলবা, আর আমি আরসাল তোমার গেমের গুটি হবো? তুমি ভাবলে কি করে? এতো সহজ নাহ। দেখলে তোহ কি হয়ে গেলো। নেক্সট টাইম এমোন কিছু করার ট্রাই করো নাহ, ফল ভালো হবে নাহ।”

নেহা আর কিছু নাহ বলেই নিজের রুমে এসে হাতে থাকা মোবাইল টাহ ভেঙে ফেলে। নেহা কিছুতেই রাগ সামলাতে পারছে নাহ। নেহা আয়নার সামনে দাড়িয়ে, নিজের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” এইটা তুমি ঠিক করো নি আরসাল। এর জন্য শুধু তুমি নও আরও অনেকে ভুগবে। তোমাকে এতো সহজে আমি ছাড়বো নাহ। তুমি তোহ আমার হবেই আরসাল। তোমাকে আমার হতেই হবে। কারন, #তুমি_শুধু_আমার। আর সেহের, তোমার জীবনে কাল হয়ে আসবো আমি। শেষ করে দিবো তোমাকে। এইবার দেখো আমি কি করি।”

নেহা জোরে হেসে দেয়। আবার আয়নার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার দাবার গুটি আমি পেয়ে গেছি সেহের। একই সাথে তোমার জীবন শেষ করবো আবার আরসালকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। Just wait and watch.”

সেহেরকে আরসালের রুমে বসিয়ে দিয়ে গেছে। আরসালের রুম তেমন সাজানো হয় নি। কিছু ক্যানন্ডেল আর বিছানায় কিছু গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেহেরকে একটা লাল কালারের নরমাল শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেহের জানালা দিয়ে একভাবে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হতে তাকিয়ে দেখে আরসাল এসেছে। আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকায় সেহের। আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই দেখে সেহেরকে কেমন যেনো উদাস দেখাচ্ছে। আর কারনটাও যে আরসালের অজানা নয়। আরসাল এগিয়ে সেহেরের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

আরসালের ডাক শুনে সেহের আরসালেরর দিকে শান্ত চোখে তাকায়। এই প্রথম সেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে নাহ। আরসাল তাও সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের, আমার তোকে কিছু বলার আছে।”

–” বলো! আর কি বলার আছে তোমার? বলো! আমাকে নিজের ইচ্ছে মতো চালিয়ে নিচ্ছোই। আমিও চলছি। এখন তোহ তুমি আমার স্বামী, আমার উপর তোমার সব অধিকার আছে। সামান্য কিছু কথা তোহ অনেক দুরের বিষয়। বলো, বলো।”

–” সেহের!”

–” আমাকে প্লিজ কিছু সময় আমার মতো থাকতে দাও। প্লিজ, হাত জোর করছি আমি।”

–” হ্যা! থাক তুই তোর মতো করে। যেভাবে তুই ভালো থাকিস। কিন্তু সেহের সেইদিন আমি যাহ করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি আর আজ যাহ করেছি তোকে ভালোবাসি তাই করেছি।”

কথাটাহ বলেই আরসাল বারান্দায় গিয়ে দরজা আটকে দেয়। সেহের সোফায় শুয়ে পড়ে কান্না করতে করতে।
আরসাল প্রায় মাঝ রাতে রুমে এসে দেখে সেহের সোফায় ঘুমিয়ে গেছে। আরসাল সেহেরকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দেয়। কম্বল টাহ টেনে দেয় সেহেরের শরীরের উপর। সেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে,
–” আমি জানি, আমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে। I am sorry. আমি আর কখনো তোকে কষ্ট দিবো নাহ। প্রমিস।”

কথাগুলো বলে আরসাল সেহেরের কপালে একটা চুমু একে দেয়।

★★★
সবাই ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে আছে। নেহা গতকাল রাতেই চৌধুরী ম্যানশন ছেড়ে চলে গেছে। সবাই চুপচাপ ব্রেকফাস্ট করছে। আশফিও ব্রেকফাস্ট করছে সবার সাথে। আশফির মন টাহ ভালো নেই। কারন গতকাল রাতে নেহা চলে গেছে। হঠাৎ এরোকম ভাবে চলে যাওয়ার কারন কি, নেহাকে জিজ্ঞাসা করেছিলো আশফি। কিন্তু নেহা সেরকম কিছু বলে নি। ব্রেকফাস্ট শেষে আশফি নিজের রুমে ডিভানে বসে বসে গেম খেলছে। হঠাৎ ফোনে একটা ম্যাসেজের শব্দ হতেই ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজটি দেখতেই, আর একমিনিট ও দেরি করে নাহ আশফি। বেরিয়ে যায় চৌধুরী ম্যানশন থেকে কোনো এক জায়গায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

★★★
আরসাল আজ অফিস যায় নি, নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। অনেক সময় হয়ে গেলো সেহেরকে দেখে নি আরসাল। তাই সেহেরের রুমে চলে যায় আরসাল। সেহেরের রুমে যেতেই দেখে সেহের বিছানায় বসে বসে কান্না করছে। আরসাল সেহেরের সামনে দাড়িয়ে সেহেরের মাথায় হাত দিতেই সেহের আরসালের দিকে তাকায়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এতো কষ্ট পাচ্ছিস আমাকে বিয়ে করে? আমি কি এতোটায় খারাপ? আচ্ছা যাই হোক, একটা কথা বলি, আমি কখনো তোর কাছে কোনো প্রকার অধিকার নিয়ে আসবো নাহ। যখন তুই নিজে বুঝবি, যে আমার কোনো দোষ নেই, বা আমাকে বলার সুযোগ টাহ দিবি নিজেকে বোঝানোর তারপর তোকে আমি কাছে টেনে নিবো। ততদিন তুই যদি তোর রুমে আগের মতো থাকতে চাস থাকতে পারিস। সমস্যা নেই। আমার রুমে তোকে আপাততো থাকতে হবে নাহ। টেক ইওর টাইম।”

আরসাল সেহেরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার সেহেরের চোখে পানি নাহ, মুখে হাসি দেখতে চাই।”

কথাটাহ বলেই আরসাল রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে এ কেমন মানুষ। আরসালকে যেনো আজ পর্যন্ত বুঝেই উঠতে পারলো নাহ।

★★★
সন্ধ্যা নেমে গেছে অনেক আগেই। এখন রাত। চারিদিকে যান্ত্রিক আলোয় ভরে উঠেছে। চৌধুরী ম্যানশনে সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। কেউ টিভি দেখছে আবার কেউ ফোন চালাচ্ছে। মেয়েয়া কিছু কাজকর্ম করে নিচ্ছে। সেহের বসে বসে টুকটাক মা চাচীর সাথে কথা বলছে।
হঠাৎ দরজায় কলিংবেলের আওয়াজে সবাই দরজার দিকে তাকায়। সাথী গিয়ে দরজা খুলতেই দুইজন মানুষ ভেতরে আসে। আর সবাই তাদের দুইজন কে দেখে চমকে যায়। কিভাবে সম্ভব এইটা?

চলবে………………🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে