তুই শুধু আমার
Faria Siddique
Part 4
In khan vila
আমরা রুদ্রদের বাড়িতে পৌঁছে গেলাম।রুদ্রের মা আমাকে বরন করে ভিতরে নিয়ে আসলো।
ভিতরে আসার সাথে সাথে রুশা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।
রুশাঃবল তো আমি কে??
আমিঃরুশা?
রুশাঃবাহ তুমি তো দেখি চিনে গেছ?
আমিঃহুম।
রুদ্রের মাঃতোর কথা শেষ হলে ওকে রুদ্রের ঘরে নিয়ে যা।একটু বিশ্রাম নিক।
রুদ্রঃআমি নিয়ে যাচ্ছি।
রুদ্রের বাবাঃরুদ্র তুই আমার সাথে আয়।
এই কথা শুনে রুদ্রের মুখটা কালো হয়ে গেল।
রুদ্র রুদ্রের বাবার সাথে চলে গেল।
আর রুশা আমাকে রুদ্রের রুমে নিয়ে আসল।
রুদ্রের রুমটা খুবই সুন্দর। ঠিক আমার রুমের মতো।
রুশাঃআচ্ছা ভাবি তোমার কোন ভাই নাই?
আমিঃকেন?
রুশাঃনা মানে লাইন মারতাম আরকি.
আমি হেসে দিলাম।
আমিঃআছে।কিন্তু ভিষণ রাগি,বদমেজাজি,জেদি।
রুশাঃকোন ব্যপার না।আচ্ছা তোমার ভাইয়ার সবচেয়ে প্রিয় কি?
আমিঃতার বোন।
রুশাঃতার মানে তুমি?
আমিঃহুম।
আমি আর রুশা অনেকক্ষন গল্প করলাম।
রুদ্রের বাবাঃতুমি কেন মেয়েটার সাথে এমন করলে?
রুদ্র কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রুদ্রের বাবাঃতুমি কি তাকে ভালবাসো?
রুদ্রঃনিজের থেকেও বেশি।
রুদ্রের বাবাঃতুমি কি সারাজীবন তার সাথে থাকতে চাও?
রুদ্রঃআমি চাইলেও এটা কি সম্ভব বাবা??
রুদ্রের বাবা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রুদ্রঃবাবা আমি ওকে ভালবাসি। আমি চাই ফারিয়া আমার কাছে সারাজীবন থাকুক।কিন্তু বাবা যদি ওর কোন ক্ষতি হয়ে যায় তখন আমি কি করে বেচে থাকবো?
রুদ্রের বাবাঃভালবাসার মানুষকে সাথে নিয়ে বাচতে শিখ রুদ্র।ফারিয়াকে যেকোনো পরিস্থিতিতে একা রেখে চলে যাস না।
রুদ্র কিছু না বলে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরল।
রুদ্রঃতুমি ভাবলে কি করে বাবা আমি আমার জানপাখিকে কখনও ছেড়ে যাব।আমি তো চাইছিলাম যাতে তুমি আমাকে এই কথাটা বলো।
রুদ্রের বাবাঃতবে রে….
এই বলে রুদ্রকে বই দিয়ে মারতে শুরু করল।
রুদ্রের বাবাঃশুন আমি কিন্তু এই বছরেই দাদু ডাক শুনতে চাই।
এমন সময় রুদ্রের মা এলো। আর উনি কথাটা শুনে ফেলল।
রুদ্রের মাঃলজ্জা শরম কিছু নাই তোমার ও তোমার ছেলে হয়।
রুদ্রের বাবাঃযাহ বাবা আমি কি করলাম।
রুদ্রের মাঃআচ্ছা হইছে।রুদ্র যা ফারিয়াকে নিয়ে খেতে আয়।
রুদ্রঃ আচ্ছা মা।
এই বলে রুদ্র রুমে চলে আসল।রুমে এসে দেখে রুশা বসে আছে।
রুদ্রঃএই ভুচি যা এখান থেকে।
রুশাঃকেন?
আমিঃআপনি এখানে কেন?
রুদ্রঃতুই যাবি রুশা?
রুশাঃওকে ভাবি চল
আমিঃহুম চল।
রুদ্রঃআমার বউকে নিয়ে কই যাচ্ছিস?(অবাক হয়ে)
রুশাঃভাবি আজকে আমার সাথে থাকবে।
আমি আর রুশা চলে যেতে নিলেই রুদ্র আমাকে কোলে নিয়ে নেয়।
আমিঃআমাকে নামান।(হাত পা ছুড়ে)
রুশাঃতুই সত্যিই একটা অসভ্য।।
এই বলে রুশা চলে গেল।আমি অসহায় ফেস করে থাকাতেই দেখি এই বজ্জাত আমার দিকে রাগিভাবে তাকিয়ে আছে।
রুদ্রঃতোমার কি আমাকে রাগাতে ভালো লাগে??(রাগি সুরে)
আমি এবার দ্বিগুণ রেগে গেলাম।
আমিঃআপনি পাইছেন কি আমারে?জোর করে বিয়ে করবেন আবার আমি কিছু বললে আমাকে শুধু শুধু ভয় দেখাবেন?আমাকে কি আপনার মানুষ মনে হয় না?আমার কি ইচ্ছা অনিচ্ছা বলতে কিছু নাই?আমি কি আপনার হাতের পুতুল যে যেমন ইচ্ছা তেমন করবেন আমার সাথে?(রেগে চিল্লিয়ে)
কথাগুলা বলেই আমি বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।মানে আমার রাগ কমানোর চেস্টা করতাছি আরকি।
আমি ভেবেছিলাম রুদ্র রেগে যাবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রুদ্র আমার কাছে পানি নিয়ে আসল।
রুদ্রঃসব রাগ ঝারা শেষ হইসে?এখন পানি খাও।
আমিঃখাব না।
রুদ্রঃনা খেলে রাগ যে কমবে না।
আমি আর কিছু না বলে পানি খেয়ে নিলাম।
রুদ্রঃগুড। এখন শুনো তুমি আমার বউ। আমার তোমার ওপর পুরা অধিকার আছে।তাই এসব কথা যেন আর না শুনি।আমি এতক্ষন কিছু বলি নাই কারন আমি চাইছিলাম তোমার রাগটা যাতে কমে।তা না হলে আমার বাচ্চা আসবে কি করে।(মুচকি হেসে)
আমি রাগিভাবে তাকিয়ে আছি।
রুদ্রঃওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আজ রাতে আর তোমাকে ছাড়ছি না।
আমার এবার ভয় লাগতে শুরু করলো।
রুদ্রঃএমন ফেস করে রাখলে রাত পর্যন্ত আর কন্ট্রোল রাখতে পারব না বউ।(বাকা হেসে)
আমিঃআপনার মনে হচ্ছে না আপনি একটু বেশি বেশি করছেন?(দাতে দাত চেপে)
রুদ্রঃ মনে তো হচ্ছে না।আচ্ছা আমি নিচে যাচ্ছি তুমি ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এস।
এই বলে রুদ্র চলে গেল।রুদ্র যেতেই আমি রাজকে কল দিলাম।
আমিঃকি খবর??
রাজঃমেম আপনার বোন আর বোনের বাচ্চার খোজ পেয়ে গেছি।
আমিঃকোথায় ওরা?(উত্তেজিত হয়ে)
রাজঃকিন্তু মেম আপনার বোন কোমাতে আছে।
আমার হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেল।আমি আর কিছু শুনতে পারলাম না।কান্না করতে লাগলাম।
আমি ওয়াশরুমে গিয়ে কান্না করতে লাগলাম।
আমিঃকেন কেন আমার সাথে সবসময় এমন হয়।আমি যেটা চাই না সেটাই কেন আমার সাথে হয়।না আমাকে ভেঙে পরলে চলবে না।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে আবার রাজকে কল দেই।
আমিঃরাজ তুমি আপুর খেয়াল রাখ।আমি কয়েকদিন পরে তোমার সাথে দেখা করতাছি।আর পিচ্ছিটার খেয়ালও রেখো।
রাজঃজ্বি মেম।
আমিঃআর আমার দুলাভাইরে একটু আদর যত্ন করার ব্যবস্থা কর।
রাজঃওকে মেম।
আমি কলটা কেটে দিয়ে ভাবতে লাগলাম
আমিঃযে আমি কখনও কাওকে ভয় পাই নাই সেই আমি ওই বজ্জাত অসভ্যকে এতো ভয় পাই!!(মনে মনে)
এসব ভাবছিলাম তখন রুশা এসে দরজা নক করে।
রুশাঃভাবি নিচে চল।
আমিঃহুম চল.
আমি নিচে গিয়ে দেখি সবাই বসে আছে।আমি গিয়ে রুদ্রের মা বাবাকে সালাম দিলাম।রুদ্রের বাবা আমাকে তার পাশে নিয়ে বসালেন।
রুদ্রের বাবাঃআমাদের বাড়ি তোর কেমন লাগছে মা?
আমিঃখুব ভালো বাবা।
রুদ্রের বাবাঃউম তুই আমাকে বাবা বলে ডাকবি না।
সবাই অবাক হয়ে গেল।আমিও অবাক হয়ে গেলাম।রুদ্র কিছু বলতে যেও বলল না।
আমিঃকেন?
রুদ্রের বাবাঃকারন আমি চাই না রুদ্র আর রুশা যেই নাম এ আমাকে ডাকে সেই নামে তুইও ডাকিস।
আমিঃকেন?
রুদ্রের বাবাঃ কারন আমি চাই আমার জন্য যারা স্পেশাল তারা আমাকে কোন স্পেশাল নামেই ডাকুক।
আমি এবার হেসে দিলাম।রুদ্র আর রুশা তো রাগিভাবে তাকিয়ে আছে।
রুশাঃতার মানে আমরা স্পেশাল না।
রুদ্রঃকি হল বল।
রুদ্রের বাবাঃকোন সন্দেহ আছে।।
আমি আর বাবা জোরে জোরে হাসতে লাগলাম।
আমিঃআচ্ছা তাহলে আমি তোমাকে বাডি বলে ডাকব।
রুদ্রের বাবাঃগুড।
রুদ্রের মাঃহয়েছে সবাই খেতে এস।
আমরা সবাই খেতে বসলাম।
রুদ্রের বাবাঃমা কিছু যদি মনে না করিস আমি তোকে খাইয়ে দেই।
আমিঃসত্যি।।(আনন্দিত হয়ে)
রুদ্রের বাবাঃহুম।
এই বলে বাডি আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
রুদ্রঃআর আমাদের??
রুদ্রের বাবাঃতোমাদের জন্য তোমার মা আছে।
রুদ্র আর রুশা অসহায় ফেস করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আর রুদ্রের মা আড়ালে চোখ মুছছে।
রুদ্রের মাঃএতদিনে আমার বাড়িতে খুশি এলো। সত্যি এই মেয়েটা সব পারে।
রুদ্রের বাবাঃআমি তোর কাছে একটা জিনিস চাইব দিবি??
আমিঃহুম।
রুদ্রের বাবাঃপ্রমিস?
আমিঃহুম
রুদ্রের বাবাঃআমার একটা দাদুভাই চাই।
এই কথা শুনেই আমার নাকে মুখে উঠে গেল।আমি কাশতে লাগলাম।
রুদ্র উত্তেজিত হয়ে পরল।তারাতারি আমাকে পানি খাইয়ে দিল।
রুদ্রঃতুমি ঠিকাছো বউ?
আমিঃহুম।
রুদ্রের বাবাঃতুই কিন্তু আমাকে প্রমিস করেছিস?
আমি অসহায় ফেস করে রুদ্রের মার দিকে তাকালাম।উনি বুঝতে পারল।
মাঃআহ সবাই খাও।খাওয়ার সময় এত কথা বল কেন?
তারপর খাওয়াদাওয়া শেষএ যে যার ঘরে চলে গেল।
রুমে এসেই রুদ্র দরজা বন্ধ করে দিল।আমার পাশে এসে বসল।
রুদ্রঃআমি ও যে একটা বাচ্চা চাই।আমিও বাবা ডাক শুনতে চাই।প্লিজ বউ আমি বাবা ডাক শুনতে চাই।
রুদ্রের অসহায় ফেস দেখে আমার করুনা হল।
আমিঃi need some time…..
রুদ্রঃসত্যি।(খুশি হয়ে)
আমিঃহুম।কিন্তু আপনার জন্য না আপনার বাবা মানে বাডির জন্য।
রুদ্র কিছু বলল না মুচকি হাসল।
আমিও কিছু না বলে শুয়ে পরলাম আর ভাবলাম
আমিঃআমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে আর রুদ্র আমাকে খুব ভালবাসে।আমার কি উচিত না তাকে ভালবাসা?রুদ্র আমাকে খুব ভালবাসে।ওর পরিবারের সবাই আমাকে খুব ভালবাসে।এখন এরাই আমার পরিবার।আমার উচিত তাদেরকে আপন করে নেওয়া আর রুদ্রকে ভালবাসা।হুম আমি রুদ্রকে এই কয়দিন এ ভালবেসে ফেলেছি।কাল থেকে আমি একজন ভালো স্ত্রী,ভালো বউমা,ভালো ভাবি হয়ার চেষ্টা করব।কাল থেকে শুরু হবে আমার আর রুদ্রের নতুন পথচলা।(মনে মনে)
এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
চলবে..………