#তুই আমার
#পর্বঃ৮
#Tanisha Sultana
হসপিটালের করিডোরে সবাই পাইচারি করছে। রিয়াকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রায় দুই ঘন্টা হয়ে গেছে। রিয়ার বাবা মা অনবরত কান্না করছে। রুশার বাবা মা তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। আবির পায়চারি করছে আর রুশা একপাশে জড়ো সরো হয়ে বসে আছে।।
কিছুখন পরে বাচ্চার কান্নার শব্দে সবাই দাঁড়িয়ে পরে। ডাক্তার বেরিয়ে আসে আর তার পেছনে নার্স একটা ফুটফুটে বাচ্চা আবিরের কোলে দিতে গেলে আবির রুশার দিকে ইশারা করে। নার্সটা রুশার কোলে বাচ্চাটাকে দেয়।
“ডাক্তার আমার বোন কেমন আছে
” আপনার এমনিতে ভালো আছে কিন্তু উনি মানসিক ভাবে অসুস্থ। ওনাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে
ডাক্তার চলে যায়।
আবিরের বাবা মা রিয়ার সাথে দেখা করতে যায়। রিয়া সুয়ে আছে আর কি জেনো বলছে আর হাসছে।
আবিরের বাবা রিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে
“মারে এখন কেমন লাগছে
” আমাকে মা বলছো কেনো। আমার বেবি আমাকে মা বলবে আর ওতো আমার পেটে। আমার বেবি হলে জয় আর আমাকে বকবে না খুব ভালোবাসবে
রিয়ার কথা শুনে বাবা মা আবার কান্না করে দেয়
“এই তোমরা কাঁদছো কেনো? আমার কান্নাকাটি একদম ভালো লাগে না। জয় এলে ওকে বলে দেবো তোমরা পচা খালি কাদো
” এই আপনারা বাইরে! যান পেসেন্ট কে বিরক্ত করছেন কেনো??
রিয়ার বাবা মা চোখ মুছতে মুছতে বাইরে চলে যায়।
রুশা বেবিকে কোলে করে জয়ের কবরের পাশে দাড়ায়।
“জয় দেখো তোমার ছেলে। একদম তোমার মতো দেখতে হয়েছে। তুমি তোমার ছেলেকে কোলে নেবে না আদর করবে না। দোয়া করো না ওকে। জয় কেনো চলে গেলে?? তোমার স্ত্রী তোমার সন্তান কোথায় যাবে বলো। ওরা তো তোমাকে ছাড়া খুব একা। মিছ ইউ জয়। ফিরে এসো না জয়।
” রুশা তুমি এখানে এসেছো কেনো??
আবিরের কথায় রুশা চোখ মুছে বলে
“জয়কে ওর ছেলেটা কে দেখাতে এসেছিলাম
” দেখানো হয়ে গেছে এবার চলো।
আবির রুশাকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।
কয়েকদিন কেটে যায়। এই কয়দিনে বাচ্চাটাকে রুশাই সামলিয়েছে। আজ রিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা হয়েছে।
সোফায় বসে আছে রিয়া। রুশা বাচ্চাটাকে রিয়ার কোলে দিতে গেলে রিয়া সরে যায়।
“এই তুমি একে আমার কোলে দেবে না জয় রাগ করবে তো। ওর জন্য তো জয় আমার ওপর রাগ করেছে।
দুরে নিয়ে যাও ওকে। আমি ওকে দেখতে চাই না।
রিয়া বাচ্চাটার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। রুশা বেবিকে নিয়ে চলে যায়। আর রিয়া জয়ের ছবির সামনে বসে নিজের মতো কথা বলতে থাকে।
রুশা রুমে এসে দেখে আবির সুয়ে আছে। রুশা আবিরের পাশে বসে য়
” আবির বাবুটাকে একটু কোলে নাও না আমি গোছল করবো
“রুশা আমার ভালো লাগছে না
” আবির বাবুটা কে এভাবে ইগনোর কেনো করো। জয় তো নেই আর রিয়া আপুর যে অবস্থা তাতে উনি ওর দায়িত্ব নিতে পারবে না। এখন তো ওর বাবা মা আমরা বলো। তুমি তোমার ছেলেকে কোলে নেবে না
“রুশা ও জয়ের
আবিরকে থামিয়ে
” ও আবির আর রুশার ছেলে। আর তুমি এখন ওকে কোলে নেবে
“রুশা প্লিজ
রুশা জোর করে বাবুটাকে আবিরের বুকের ওপর সুয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। বাবুটা কান্না শুরু করে দেয়।
জয় বিরক্তি নিয়ে বাবুটাকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে।
কিছুখন পরে রুশা বাবুর জন্য দুধ নিয়ে আসে। তারপর রুশা বাবুটাকে দুধ খাওয়ায় আর আবির দুধের বাটি ধরে রাখে।
আস্তে আস্তে বাবুটা রুশা আর আবিরের কাছে বড় হতে থাকে। আর রিয়া সারাদিন জয়ের ছবির কাছে বসে একা একা কথা বলে হাসে। কখনো রুমের বাইরে বের হয় না।
রুশা বাবুটার নাম দেয় রাইয়ান রহমান জীম। জয় আর রিয়া নামের সাথে মিলিয়ে।
দশ বছর পরে
আজ রুশা একটা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। জীম বাবুটাকে কোলে করে সারা বাড়ি ঘুরছে।
আবিরের মা বলে
” দাদুভাই বোনকে একটু আমার কাছে দাও
“আমার বোনকে আমি কারো কাছে দেবো না।
জীমের চোখের মনি জীমের এই বোন। সব সময় বোনকে নিয়ে মেতে থাকে। আবির তার মেয়ের নাম দেয় আফরা ইবনাত মিষ্টি।
দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে খুব সুখে দিন কাটছে রুশা আবিরের। আর রিয়া এখন মেন্টাল হসপিটালের ভর্তি।
________________সমাপ্ত______________
ধন্যবাদ এতোসময় ধয্য ধরে গল্পটা পড়ার জন্য।