তুই আমার পর্বঃ১

0
4937

#তুই আমার
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana

চার ঘন্টা যাবত কাজি অফিসের সামনে বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছে রুশা। কিন্তু সে আসে নি। সন্ধা হয়ে গেছে। কাজি অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। সব মানুষজন বাড়ি চলে যাচ্ছে কিন্তু রুশা ওখানেই বসে আছে।

মা তুমি এখনো বসে আছো যে বাড়ি যাবে না??

দারোয়ানের কথায় হুশ ফেরে রুশার৷ চারদিকে তাকিয়ে দেখে অন্ধকার হয়ে গেছে।

হুম চাচা যাবো।
“মা তোমাকে দেখছি দুপুর থেকে এক জায়গায় মাথা নিচু করে বসে আছো। কিছু কি হয়েছে?? আমাকে বলতে পারো
রুশা দারোয়ানের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে বলে

কিছু হয় নি। আমি এখনই চলে যাচ্ছি।
দারোয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুশা চলে আসে।
চারদিক অন্ধকার হয়ে গেছে। অন্ধকারের সাথে তাল মিলিয়ে রুশা হাঁটছে আর চোখের পানি ফেলছে। খুব অসহায় লাগছে। হাটতে হাটতে পা থেমে যায় রুশার। ধাপ করে বসে পড়ে। তিন বছরের ভালোবাসা, বিশ্বাস, ভরসা আজ সব শেষ হয়ে গেলো। রুশা নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। জয় তো কথা দিয়ে ছিলো ও আজ আসবে। তাহলে কেনো এলো না? কেনো ঠকালো? এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তার পাশে বসে পড়ে রুশা। রুশা আজ শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজে এসেছিলো জয় কে বিয়ে করবে বলে। কিন্তু জয় তো এলো না।

রুশা উঠে দাড়ায়। চোখের পানি মুছে একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যায়। নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ লুকিয়ে কান্না করে।
জয় আর রুশার সম্পর্ক তিন বছরের। কাল রাতে হুট করে জয় বিয়ের কথা বলে। রুশা প্রথমে রাজি হচ্ছিলো না। পরে জয়ের জোরাজোরিতে রাজি হয়ে যায়।

রুশা মা দরজা খোল কী হয়েছে তো?? মাকে বল

মায়ের ডাকাডাকিতে চোখের পানি মুছে দরজা খুলে দেয় রুশা।

কী হয়েছে তোর?? চোখমুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?? কাঁদছিলি না কী??
মায়ের কথায় মুখ ঘুরিয়ে নেয় রুশা।

মা কিছু হয়নি আমার। খুব ঘুম পাচ্ছে তুমি যাও তো
“তুই খাবি না?
” না আমি খেয়ে এসেছি।
রুশার মা কিছুখন রুশার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।
মা চলে যাওয়ার পরে আবার রুশা দরজা বন্ধ করে জয় কে ফোন দেয়। ছয় বার কল দেওয়ার পরে ফোন রিসিভ করে
হ্যালো কে বলছেন??
ফোনের ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ পায় রুশা।
জয় আছে??
“জয় কে কী দরকার?? আর আপনি কে??
” আমি রুশা। প্লিজ জয়কে একবার ফোনটা দিন।
“ওহহ তাহলে তুমিই সেই রুশা যে আমার স্বামী কে ভুলিয়ে ভালিয়ে আজ বিয়ে করতে চাইছিলো
” মানে কী বলছেন আপনি??

“আমি ঠিকি বলছি। জয় আমার স্বামী। আমি জয়ের বিয়ে করা বউ। কেনো জয় তো তোমাকে বলেনি ও বিবাহিত। না কি সব জানার পরেও তুমি আমার স্বামীকে ছাড়ছো না।

” আমি এসব কিছু জানতাম না।

“নাটক বন্ধ করো। একটা মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়ের সংসার ভাঙতে লজ্জা করে না। নিলজ্জ বাহায়া মেয়ে।
তোমার জায়গায় আমি হলে না এতোখনে মরে যেতাম। এরকম পাপী মুখ কাউকে দেখাতাম না।

রুশার খুব কান্না পাচ্ছে তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো

“দেখুন আপনি শুধু শুধু আমার সাথে বাজে বিহেব করছেন৷ আমি জানতাম না জয় বিবাহিত আর জানলে কখনো জয়ের দিকে ফিরেও তাকাতাম না। কপাল খারাপ ছিলো তাই আপনার এতোগুলো কথা শুনতে হলো

” একদম চুপ করো। ওই মুখে এখনো কথা বলছো। তোমার কী একটুও লজ্জা নেই। নিজে তো কখনো ভালো থাকতে পারবেই না। এইজন্য আমাদেরকেও ভালো থাকতে দিচ্ছো না। দেখো আমি তোমার কাছে হাত জোর করে রিকুয়েষ্ট করছি আমার স্বামীকে মুক্তি দাও। আর যদি মানুষ হয়ে থাকো তাহলে আর কখনো জয়ের সাথে কথা বলো না।।।

রুশা হাতে থাকা ফোনটা দেয়ালে ছুড়ে মারে। ফোনটা ভেঙে গুঁড়ো হয়ে যায়। ধাপ করে ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কান্না করে। মেয়েটার বলা কথাগুলো বারবর কানে বাজে। আমি কি এতোটাই খারাপ। আমি জয়ের মাথা খেয়েছি। আমি তো জয়কে ভালোবেসে ছিলাম।জয় আমাকে এইভাবে ঠকালো। এতো ভালো অভিনয় করতে পারে জয়। আমি তো সব সময় চাইতাম জয় ভালো থাকুক। ও যদি একবার বলতো ও বিয়ে করেছে আমি তো কিছু বলতাম না। তাহলে কেনো এমন করলো।

রুশা এসব ভাবছে আর কান্না করছে। হঠাৎ রুশার ব্যাগ থেকে কাচের চুরি বের করে। এই চুরিগুলো জয় কিনে দিছিলো। চুরি গুলো জোরে মুছরে ধরে যার ফলে চুরি গুলো ভেঙে যায়। রুশার হাতের অনেক যায়গায় কেটে যায়। তারপর ভাঙা চুরি দিয়ে ইচ্ছা মতো হাতে আঘাত করে।

রুশাআআআআআআআ

কারো চিৎকারে রুশা সামনের দিকে তাকায়। আর সামনের মানুষটাকে দেখে রুশার হাত থেকে চুরি পড়ে যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে