তুই আমার অন্যরকম নেশা পর্ব-১০(ধামাকা-১)

0
3095

?#তুই_আমার_অন্যরকম_নেশা ?
#পর্ব-১০(ধামাকা-১)
#Jannatul_ferdosi_rimi(Writer)

ভারী লেহেঙ্গা ভারী গয়না আর ভারী ম্যাকাপ এ একেবারে নবুবধু সেঁজে বারান্দার এক কোণে দাড়িয়ে আছি চোখের জল আজ বাঁধ মানছে হ্যা আজকে আমার বিয়ে আর কারোর সাথে নয় আমানের সাথে একটা খুনীর সাথে নীচে বাবা কাকাই মামা সবার আতিথীয়তায় ব্যস্ত কালকে মৌ আপুর বিয়ে হওয়ার পর আজকেই আরেক মেয়ের বিয়েটা হচ্ছে সেটা অনেকে মেনে নিতে পারছে না (লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি) রিক-মিনি মুখ ঘুমড়া করে বসে আছে আমার চোখ থেকে যেন পানি ঝড়া থামছেই না আমার কাকিমনিও মেনে নিতে পারছে না কিন্তু আমার জন্য সব সহ্য করে নিচ্ছে কিন্তু আমার মামি -আর নানু বেশ খুশী কারনটা অবশ্য আমি জানি আর পায়েল আপু তার খুশী আর দেখে কে সেঁজে গুজে স্টেজে সেল্ফি নিচ্ছে অয়ন ভাইয়াকে কোথাও দেখছি না অয়ন ভাইয়ার সামনে যাওয়ার সাহস নেই আমার কি জানি মানুষটা কোথায় আছে বড্ড চিন্তা হচ্ছে চোখ বন্ধ করে নিলাম আর ভাবছি পরশুদিন এর কথা সবাই কন্ঠস্বরটা শুনে পিছনে ঘুরলাম আমি কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠি –আমান তুমি?

আমানঃ ইয়েস আমি

ইতিমধ্যে গেস্টরা প্রায় চলে গেছে অয়ন ভাইয়া প্রশ্নবোধক চাহনি তে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে আমি কি করবো কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা ভয়ে আমি শেষ বাবাই আমানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে
—তুমি?কে?
—-আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল
–অলাইকুমুসসালাম কিন্তু বাবা কে তুমি?
—আসলে আমি আপনার মেয়ের কাছে একজন স্পেশাল পার্সন সবাই অবাক দৃস্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে অয়ন ভাইয়া চোখ এতিমধ্যে লাল হয়ে রয়েছে অন্য একটা ছেলে এসে তার রিমিপরির স্পেশাল পার্সন কি সমপর্ক ওদের মধ্যে? এইসব চিন্তা অয়নের মধ্যে তাও নিজেকে সামলে নিয়ে আমানকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল
—কে হোন আপনি?
আমান বাঁকা হেঁসে
—সেটা না হয় রিমিই বলুক
অয়ন ভাইয়া রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে তখনি কাকিমনি বলে
—তুমি নিশ্চই রিমির বন্ধু রিমিমা তুই ঘরে গিয়ে কথা বল না হয়।

আমানঃ হ্যা আমার ও কিছু কথা আছে

রিমিঃ চলুন আমি আমার ঘরে চলে যাই আমান আমার পিছন পিছন আসে সবাই অবাক দৃস্টি নিয়ে তাঁকিয়ে আছে অয়ন নিজের হাত মুসঠিবদ্ব করে রেখেছে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেস্টা করছে কিন্তু মামিমা আর নানুমা ওনেক খুশী

মিসেস নিশিঃ মা কি বুঝতে পারছেন?।

লাইবা বেগমঃ যাহ বুঝছি এই ছেলেটার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নাহ অন্য কিছু আছে

মিসেস নিশি খুশী হয়ে বললেন
—তা হলে এইবার আমার ছেলের ঘাড় থেকে অলুক্ষনিটা নামবে?

লাইবা বেগমঃ তাই দোয়া করো বউমা

আমি দরজা লক করে আমানের দিকে উদ্দেশ্য করে বললামঅ
—আমান তুমি? কেন এসেছো? এখানে?।

আমান পকেটে হাত ঢুকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে…

—-দেখো রিমিপাখি তুমি আমাকে যতই না ভালোবাসো আমি তো একদিন তোমাকে ভালোবাসতাম তাই না(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)

—- কি চাও?
—প্রতিশোধ
—মানে?
—মানে তুমি বুঝতে পারছো না? তুমি সবার সামনে আমাকে খুনী প্রমান করেছো?(রেগে)আমার বাবার সম্মান নস্ট করেছো
—- একজন খুনীকে তার শাস্তির ব্যাবস্হা করিয়েছি এতে আমার আফসস নেই( রেগে)

আমানঃ তুমি বড্ড অবুঝ কখনো সত্যিটার বুঝার চেস্টা করো নি (মনে মনে)

আমান রেগে আমার দিকে তেড়ে এসে আমার গাল চেপে ধরলো

—আমান আমার লাগছে ছাড়ো
(লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

—লাগছে তাই না বেইবি কিন্তু যখন তুমি আমাকে খুনী বলো তখন কেমন লাগে?।
আমি চোখ মুখ শক্ত করে বললাম

—একজন খুনী কে এর থেকে বেশী আর কিছুই বলা যায়

আমান রেগে বললো
—হ্যা আর তোর অই অয়ন ও খুব সাধু না রে?।
—খবরদার আমান অয়ন ভাইয়ার নামে একটা বাজে কথাও বলবা না ?

আমান আমার গাল ছেড়ে দিয়ে বলল
—আমি খুনী তো তাই না তাহলে নিশ্চই তোমার আশিক অয়ন কে এই পৃথিবী থেকে সরাতে আমার বেশ টাইম লাগবে না

রিমিঃ আমান(করুন সুরে) আমার চোখ থেকে অটোমেটিক পানি পড়ছে

আমান বাঁকা হেসে বলল

—নিশ্চই তুমি চাওনা তোমার আশিক এর কোনো ক্ষতি করি?

আমি অসহায়ের দৃসটিতে চেঁয়ে বললাম

—-কি করতে হবে

আমানঃ আমাকে বিয়ে করতে হবে…!

এই কথাটা শুনে আমার পায়ের মাটি যেন সরে গেলো চোখের জল৷ বাঁধ মানছে আমান আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার চোখে পানি মুঁছে বলল
—বেইবি আমি তোমার চোখের জল সহ্য করতে পারি মা ইউ নো(বাঁকা হেঁসে)
আমি এক ঝটকায় অয়নের হাত ছাড়িয়ে নিলাম।

রিমিঃ আমাকে ছুবে না তুমি একটা অমানুষ (কাঁদতে কাঁদতে)

আমানঃ সে তুমি যাই বলো বিয়ে তো আমাকেই করতে হবে

লিভিং রুমে বাবাই–কাকাই কাকিমনি মামা মামি আর নানুমা রিক মিনি সবার মাঝেই নীরবতা অয়ন দরজা টেশ দিয়ে দাড়িয়ে আছে তার চোখ দিয়ে সবকিছু শেষ করে দিবে আমি আর আমান দাঁড়িয়ে আছি

বাবাইঃ তুই এইসব কি বলছিস?তুই আমান কে ভালোবাসিস

রিমিঃ হ্যা আর আমি আমানকে পরশুই বিয়ে করতে চাই তেমন ধুমধাম করে না

কাকাইঃ কিন্তু মা এতো তাড়াতাড়ি? এইসব কি?।

কাকিমনিঃ আমরা আস্তে ধীরেও তো?

রিমিঃ কাকিমনি আমি আমানকে ভালোবাসি সো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই আমার কথাটা শুনে মামি আর নানু কি যে খুশি তা বলে হয়তো তারা বুঝাতে পারবে না আমি ভাবছি অয়ন ভাইয়া কি করবে?

কিন্তু আমাকে সম্পুর্ন অবাক করে দিয়ে অয়ন ভাইয়া বলে উঠলো

—ফুপামনি আই থিন্ক ওরা যখন একে অপরকে ভালোবাসে সো তোমাদের মেনে নেওয়া উচিৎ ( এই কথাটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম অয়ন ভাইয়া এতো সহজে কি করে মেনে নিলো)

মামি আর নানুর খুশী দেখে কে

মিসেস নিশিঃ মা এইবার আমার ছেলেটার সুবুদ্ধি ফিরেছে

লাইবা বেগমঃ তা যা বলেছো বউমা

আমানও অবাক

আমানঃ ভেবেছিলাম রিমিকে বিয়ে করে যেমন রিমিকে শাস্তি দিবো ঠিক তেমনি অয়ন চৌধুরীর থেকে রিমিকে কেড়ে নিয়ে অয়ন চৌধুরী কে নিঃস্ব করবো আমার চিন্তা একেবারে ভুল আর কাকে বা কি বলছি এর কাজই তো মেয়েদের মন নিয়ে খেলা ( মনে মনে)

অয়ন ভাইয়া৷ আমার আর আমান এর কাছে এসে বললেন

—Congratulations both of

আমি চোখে পানি ছলছল করছে যেন এখনি পড়ে যাবে অয়ন ভাইয়া তার মানে আমাকে ভালোই বাসতো না ভালোই হয়েছে ভালোবাসে না তাহলে আমান আর অয়ন ভাইয়াকে কিচ্ছু করতে পারবে না

সবাই রাজিও হয়ে গেলো

রিক এর কথায় ভাবনার মাঝখানে ছেদ ঘটলো
—আপু বর এসেছে (আমি চোখ মুখ মুছে বললাম আসছি)
রিকঃ তুমি কাঁদছিলে তাই না দি?
রিমিঃ কই না তো
রিকঃ তুমি মিথ্যে বলছো তুমি তো অয়ন ভাইয়াকে ভালোবাসো
রিমিঃ নাহ আমি আমানকে ভালোবাসি
রিকঃ তাহলে তুমি কাঁদছো কেন?
রিমিঃ তোদের ছেড়ে যেতে হবে তো তাই

রিক আর কিছু বললো না আমাকে স্টেজে নেওয়া হলো আমান আমার পাশে মিনি আমার কাছে এসে বলল
–দেখ দি জিজু কত হ্যান্ডসাম

আমি নীচের দিকে তাঁকিয়ে চোখের জল ফেলছি আমান গোলডেন কালারের সেরওয়ানী পড়েছে আমার কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো

—দেখো জানেমান এইভাবে কান্না করলে লোকে কী ভাববে বলো তো তুমি কি চাও অয়নের

আমি তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে বলি
–দেখো আমান আমি কাঁদছি না

আমান বাঁকা হেঁসে বলে
—That’s like a good girl?

পায়েল আমার কাছে এসে বলে

—আমাকে ক্ষমা করে দিও বোন
—কিসের জন্য?
—সেদিনের জন্য
—আমি সব ভুলে গিয়েছি
—কিন্তু যাই বলো আমি কিন্তু তোমাদের জন্য খুব খুশি আফটার অল তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়েটা হচ্ছে

আমি বুঝতে পারছি পায়েল আপু কতটা হ্যাপি আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনেক কান্না পাচ্ছে তাও কাঁদতে পারছিনা সে যে কি কস্ট তা বলে বুঝানো যাবে অনেক সময় ভালোবাসার জন্য ভালোবাসার মানুষটাকে ত্যাগ করতে হয়

এদিকে একটা ফুলের সজ্জিত খাটে অয়ন পায়ের উপর পা দিয়ে ফোনে গেমস খেলছে যে তার কোনো চিন্তাই নেই হঠাৎ ই অয়নের ফোন বেজে উঠলো

অয়নঃ হ্যা বল
—–
অয়নঃ সব রেডি?
—-
অয়নঃগুড(বাঁকা হেঁসে)

অয়ন ফোনটি রেখে বলে
–পাখির খাঁচায় বন্ধি হওয়ার টাইম হয়েছে (ডেবিল স্মাইল)

?
?
?
আমার চোখ এখন শুধু একজনকেই খুঁজছে সে কোথায়? সে তো খুশীই হবে নাই বা কেন? আমাকে তো সে ভালোই বাসে না মন না চাইতেও আমার খুব অভিমান হচ্ছে কিন্তু কেন? আমি তো চাই অয়ন ভাই দূরে থাকুক ভালো থাকুক আমানের যা প্রতিশোধ নেওয়ার সে যেন আমার থেকে নেই

পায়েলঃ অয়ন কে খুঁজছো?
—অয়ন ভাইয়া কোথায়?
—ওর নাকি খুব আর্জেন্ট কাজ আছে তাই তাকে যেতে হলো
—ওহ (লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ম্যারেজ রেজিস্ট্রার চলে এসেছে আমি জানি কাকাই বাবাই রিক মিনি বা কাকিমনি কেউই এইভাবে বিয়ে নিতে পারছে না কিন্তু আমাকে তারা খুব ভালোবাসে তাই মেনে নিচ্ছে কাজী সাহেব রেজিস্ট্রি পেপার এগিয়ে দিলেন আমান আমার দিকে বাঁকা হেঁসে তাড়াতাড়ি করে সাইন করে দিলো এখন আমাকে এগিয়ে দিলো
আমার হাঁত-পা থরথর করে কাঁপছে তাও নিজেকে শক্ত করে কাঁপাকাঁপা হাতে যেইনা সাইন করতে যাবো অমনি…
চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে