#তি_আমো❤
#পর্ব_২০
Writer: Sidratul muntaz
🍂
আমি অবুঝের মতো প্রশ্ন করলাম,” সকালে কি হবে?”
ঈশান ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে দুশ্চিন্তা দমনের চেষ্টা চালিয়ে বললেন, “কিছু না। তুমি ঘুমাও। চোখ বন্ধ করো। আর কোনো কথা হবে না।”
“তাহলে আলোটা নিভিয়ে দিন?”
“কেনো?”
“আলো চোখে লাগলে আমি ঘুমাতে পারিনা।”
ঈশান বিব্রতবোধ নিয়ে বললেন,
“চেষ্টা করো। লাইট অফ করা যাবে না।”
“তাহলে আমার ঘুমও আসবে না।”
মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে লাইট বন্ধ করলেন ঈশান। সম্পুর্ন ঘর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হল। কালো রঙে নিমজ্জিত হল সবকিছু। ধবধবে ছেলেটাকেও এখন কুচকুচে মনে হচ্ছে। আমি অনুনাদিত কণ্ঠে বললাম,
“ঈশান আমার ভয় লাগছে। এতো অন্ধকার কেনো?”
ঈশান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আমার প্রতিটা কথাতেই আহত হচ্ছেন উনি। মনের আক্ষেপ প্রকাশ করতেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হতাশাজনক প্রশ্বাস ছাড়ছেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনের তিক্ত হয়ে উঠার প্রবণতা প্রকাশ পাচ্ছে। আমি গুটিশুটি হয়ে শুয়ে রইলাম। ঈশান আমার কাছে এসে কপালে চুমু দিলেন। উনার ভারী নিঃশ্বাসের স্রোত প্রবাহিত হলো আমার সারা মুখ জুড়ে। সাথে চিরচেনা পারফিউমের সুভাষটাও প্রখর হয়ে উঠল। আচ্ছা উনি কি পারফিউম মাখেন এটা? একদম নেশা ধরানো সুগন্ধি। মন চায় উনাকে জড়িয়ে ধরে মাতাল স্রোতে ডুবকি লাগাতে। একদিন জিজ্ঞেস করতে হবে, পারফিউমের ব্র্যান্ড কি? তারপর আমিও ইউজ করবো। তখন মনে হবে, ঈশান সারাখন আমার সাথে জড়িয়ে আছে। কি সুন্দর অনুভূতি! ভাবতেই ভাল্লাগছে। ঈশান আমার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললেন,
“ঘুমাও তারিন। ”
আমি চোখ বন্ধ করে স্বর্গীয় আয়েশ উপভোগ করতে ব্যস্ত হলাম। ঘুম আসলেও ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। কারণ ঘুমিয়ে গেলে তো এই আরামটা আর পাওয়া যাবে না। ঈশানকে এতো কাছ থেকে অনুভব করার সুযোগটাও মিস হবে। আমি চোখজোড়ার সাথে যুদ্ধ করে হলেও জেগে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটা সম্ভব হলো না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গভীর নিদ্রায় নিমজ্জিত হতে হল আমায়। ঘুম থেকে যখন জাগলাম তখন মনে হল যেন মাত্র পাচ মিনিটের ঘুম হয়েছে। কিন্তু আসলে ৫/৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। সেই খেয়ালও হয়নি। আমি চোখ মুখ কচলে ডানে বামে তাকাতেই বামদিকে চোখ আটকে গেল। আমার বামদিকে নিগুঢ় নিদ্রায়মাণ ঈশান নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছেন। আমি ঈশানকে ধাক্কালাম। উনি হালকা ভ্রু কুচকে উল্টো পাশে ঘুরলেন।আমি আবার ধাক্কা দিতেই অর্ধখোলা চোখে তাকালেন ঈশান। ঘুমো ঘুমো কণ্ঠে বললেন,
“প্লিজ ঘুমাতে দাও না তারিন। ডিস্টার্ব করো না।”
আমি গলা খাকারি দিয়ে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
“আমি এখানে কেনো? আর আপনিই বা আমার পাশে কেনো?”
আমার কথা শুনে ঈশান উজ্জল দৃষ্টিতে তাকালেন। এক ঝটকায় উঠে বসে আমার গাল স্পর্শ করে বললেন,
“বলো তো তোমার কেমন লাগছে এখন?”
আমি ঈশানের হাত সরিয়ে নিজেও কিছুটা দুরে সরে বসলাম। ভ্রু কুচকে বললাম,
“জানিনা। অদ্ভুত লাগছে। ”
ঈশান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন। নিজের মুখমন্ডল একবার মালিশ করে ঘড়ির দিকে তাকালেন। উনার দেখাদেখি আমিও তাকালাম। সাতটা বেজে দশমিনিট। ঈশান বিছানা থেকে নেমে গেলেন। দরজা খুলে বাহিরের পরিবেশে কয়েকবার চোখ বুলিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তারিন! তুমি এক দৌড়ে নিহার রুমে চলে যাবে হুম? ডানে-বামে কোনোদিকে তাকাবে না। একদম স্ট্রেইট নিহার রুম। গো।ফাস্ট। এখন কেউ নেই।”
আমি কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালাম। উনি কি বলছে আমার মাথায় ঢুকছে না। যেন শুন্য মস্তিষ্ক নিয়ে বসে আছি। মেমোরি ক্লিন করা হয়েছে আমার। তবে এখন একটা বিষয়ই শুধু মাথায় কুন্ডলী পাকাচ্ছে। ঘুমজড়ানো কণ্ঠে ঈশান কথা বললে মারাত্মক শোনায়। শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে। তার উপর ফোলা ফোলা চোখের লাল লাল দৃষ্টি আর এলোমেলো চুল, সবথেকে বেশি আকর্ষণীয় রুপ উনার। ঈশান আমার স্তব্ধতা দেখে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“কি হলো তারিন বসে আছো কেনো? যাও! কেউ দেখে ফেলার আগেই জলদি চলে যাও। নাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে তারিন!”
ঈশান করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পেলেও বিবেকশক্তির তাগিদেই ঈশানের কথামতো উঠে দাড়ালাম। ঈশান ব্যস্ত হয়ে অস্থির গলায় বললেন,
“শোনো! মাঝপথে কারো সাথে যদি বাইচান্স দেখা হয়েও যায়, তাহলে তুমি বলবে তুমি সারারাত নিহার রুমে ছিলে। আর.. আর এখন পানি খেতে বের হয়েছো। ঠিকাছে? ”
আমি মাথা দুলিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। ঈশান পেছন থেকে আওরাতে লাগলেন,
“ফাস্ট তারিন ফাস্ট। স্ট্রেইট নিহার রুমে।”
আর কোনো শব্দ আমার কর্ণকুহরে পৌছানোর পুর্বেই আমি নিহার দরজার কাছে স্থির হয়েছি। হাপাতে হাপাতে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলাম। ফিসফিস করে ডাকলাম,
“নিহু! নিহু দরজা খোল। আমি তারু। ”
নিহার আড়মোড়া ভাঙানোর আওয়াজ শোনা গেল। যেন গভীর ঘুমের প্রগাঢ় অভিলাষ থেকে জবরদস্তি টেনে তোলা হচ্ছে তাকে। আমি দরজা খোলার অপেক্ষা করলাম। কয়েক মিনিট পর নিহা দরজা খুলে আমার সামনে দাড়াল। চোখ চুলকাতে চুলকাতে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“কি হয়েছে?”
আমি নিহার কাধে হাত দিয়ে বললাম,
“সরি দোস্ত। এতো সকালে তোর ঘুমের ডিস্টার্ব করতে চাইনি। আসলে আমি..”
নিহার বিছানার দিকে চোখ যেতেই আমার কণ্ঠনালি স্থবির হয়ে এলো। সোনালি পাঞ্জাবি গায়ে সাফিন ভাইয়া সম্পুর্ণ বিছানা দখল করে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। অচিরেই হালকা সংকোচ বাসা বাধল মনে। এই সংকোচ ঠেকিয়ে আমি নির্বোধের মতো জিজ্ঞেস করলাম,
“উনি এখানে কেনো?”
নিহা ঝারি মেরে বলল, ” উনি এখানে কেনো মানে? উনি থাকবে না তো কি তুই থাকবি?”
আমি ভাবলেশহীন ভাবে বললাম, “আমারই তো থাকার কথা ছিল।”
তারপর নিহার হাত চেপে ধরলাম। অসহায়ের মতো জিজ্ঞেস করলাম, “এবার আমি কোথায় যাবো দোস্ত?”
“আমি কি জানি? যেখান থেকে এসেছিস ভালোয় ভালোয় সেখানে ফেরত যা। সকাল সকাল ঝামেলা করিস না।”
“নিহা? তুই আমাকে ঝামেলা বলছিস?”
“হ্যা বলছি। কালরাতে কয়বার ডেকেছিলাম তোকে? কয়বার নিষেধ করেছিলাম? আমি না করা সত্ত্বেও ছাদে কেনো উঠেছিলি তুই? ঈশান ভাইয়া! এবার যা ঈশান ভাইয়ার কাছে। ”
আমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে থেকে বললাম,
“দোস্ত তোর কথা আমার মাথায় ঢুকছে না।আমার তো নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না তখন। কি করছি কেনো করছি নিজেও বুঝিনি। প্লিজ এতোটা সেলফিশগিরি করিস না। আমারে ভেতরে ঢুকতে দে দোস্ত।”
“তুই কি যাবি? না লাত্থি খাবি? নাকি ঝাড়ুর বারি খাবি? কোনটা? ঝাড়ুটা কিন্তু বিছানার তলাতেই আছে। বাইর করতে বেশি সময় লাগবে না। তার আগেই মানে মানে কেটে পড়। যাহ!”
নিহা নির্দ্বিধায় দরজা আটকে দিল। আর আমি “দোস্ত দোস্ত” বলে চিল্লাতে লাগলাম। যখন বুঝলাম কোনো লাভ নেই, তখন নিজে থেকেই থেমে গেলাম। ইচ্ছে করছে হাত পা ছড়িয়ে কাদতে বসতে। এখন আমার মনে একরাশ আতঙ্ক । কেউ যদি আমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলে, কি জবাব দিবো আমি? ভেতরে নিহা-সাফিন আর বাহিরে আমি। দরজার সামনে দাড়িয়ে। এমন প্রশ্নের কেমন জবাব হতে পারে?ধুর এতো সাত-পাঁচ ভেবে কাজ নেই। আরো কত মেয়েরা আছে। ওদের সাথে গিয়ে শুয়ে থাকলেই হলো। এই ভাবনা নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার ছোট্ট আত্মায় কম্পন ধরিয়ে মা আমার সামনে এসে দাড়ালেন। মাকে দেখে আমি এতোটাই আকস্মিক ভয় পেলাম, যে মুখে হাত রেখে আর্তনাদের শব্দ তুললাম। মা আমাকে আপাদমস্তক একবার দেখে নিয়ে মুখ কুচকালেন। আমার বাহু শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে আসলেন রুমে। বিছানায় বুড়ি হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। মা দরজা বন্ধ করলেন। অতঃপর আমার কাছে এসে দাড়ালেন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এখনই হয়তো মা চড় বসাবেন আমার গালে। মা আমাকে ভুল বুঝছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ঠিকটা বুঝিয়ে বলার সাহসও যোগাড় করতে পারছি না। বুকের ভিতরটা নিভু নিভু করছে। মায়ের মনটা যদি এখন একবার পড়তে পারতাম, একবার জানতে পারতাম মা কি ধারণা করছে আমাকে নিয়ে? খুব ভালো হতো। মা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বিছানার কোণার দিকে হেটে গেলেন। ব্যাগটা উঠিয়ে আমার হলুদ কামিজটা বের করে বললেন,
“চেঞ্জ করে আয়।”
আমি যেন কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কাপা কাপা হাত দিয়ে জামাটা ধরলাম। তাৎক্ষণিক ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। দরজা বন্ধ করে এবার শান্তি। দরজার সাথে পিঠ লাগিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। চোখ দিয়ে অনর্গল পানি আসছে। নিজের থেকে ঈশানের জন্যই বেশি খারাপ লাগছে। আমার সাথে সাথে সবাই উনাকেও ভুল বুঝবে না তো? দরজায় করাঘাতের শব্দে আতকে উঠলাম আমি। বাধরুমের দরজায় না, রুমের দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে। ভাইয়ার গলার আওয়াজ পেলাম। হ্রৎপিন্ড দ্বিগুণ গতিতে স্পন্দিত হতে শুরু করল। মা দরজা খুলতেই ভাইয়া জোরালো গলায় বললেন,
“তারুকে পেয়েছো?”
মায়ের উত্তর শোনা গেল না। মা আর ভাইয়া কিছুক্ষণ গুজুরগুজুর করলেন। মা হঠাৎ উচ্চারণ করলেন,
“জলদি বের হো তারু। তারিফ তোর সাথে কথা বলবে।”
আমার আতঙ্ক তীব্র হল। শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছি। কোনো এক গায়েবি শক্তি যেন আমাকে ভেতর থেকে চেপে রেখেছে। আমি পোশাক পাল্টে বাহিরে বের হলাম। ভাইয়া বিছানায় বসে ছটফট করছিলেন। আমাকে দেখে উঠে দাড়ালেন। আমি শুকনো মুখে মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছি। ভাইয়া প্রথমেই যে প্রশ্ন করলেন,
“সারারাত কোথায় ছিলি তুই?”
আমি সামনের চুলগুলো কানে গুজলাম। মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মাও আমার উত্তরের অপেক্ষায়। আমি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে উত্তর দিলাম,
“ন নিহার ঘরে।”
ভাইয়া হুংকার দিয়ে বললেন,” তুই নিহার ঘরে ছিলি?”
আমি ভয়ে পিছিয়ে গেলাম। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকলো আমার। আরেকবার কম্পিত কণ্ঠনালি নিয়ে উচ্চারণ করলাম, “ন না, না না। নিহার ঘরে নয়। আমি মেঘলা, রিদিতা, তানিশা ওদের সাথে ছিলাম।”
ভাইয়া আগুন গরম দৃষ্টি নিয়ে একবার মায়ের দিকে তাকালেন। মা ও ভাইয়ার চোখাচোখি দেখে মনে হচ্ছে, আমি নিতান্ত অবিশ্বাস্য একটা কথা বলে ফেলেছি। ভাইয়া হাত ভাজ করে সরু চোখে আমার দিকে তাকালেন। আর বললেন,
“মিথ্যে বলিস না তারু। আমি খবর নিয়েছি। তুই ওদের সাথে ছিলি না। আর ওই পিচ্চি মেয়েটা তখন এমন কথা কেনো বলল?”
ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে আমার আর বুঝতে বাকি নেই যে পিচ্চি মেয়েটা আরিশা। ভয়ে প্রাণপাখি আমার ডানা ঝাপটাচ্ছে তবুও অসীম সাহস দেখিয়ে বললাম,
“কোন কথা ভাইয়া?”
ভাইয়া বিব্রত কণ্ঠে বললেন, “মেয়েটা বলছিল, “নিহাআপু আর সাফিন ভাইয়ার মতো ঈশান আর তারিন আপুরও কি আজ স্পেশাল নাইট? ওদেরও কি বিয়ে হয়েছে?””
কথাটা শুনে আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। চরম অস্বস্তি থেকে মাথা নিচু করে দাড়ালাম আমি। এমন কথায় কি রিয়েকশন দেওয়া উচিৎ জানা নেই আমার। হঠাৎ দরজায় কেউ টোকা দিল। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মোহনা আন্টি এসেছেন। ভাইয়া বিরক্তি দৃষ্টি নিয়ে মোহনা আন্টির দিকে তাকালেন। মোহনা আন্টি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললেন,
“ফ্যামিলি মিটিং হচ্ছে? আমার হুট করে চলে আসা উচিৎ হয়নি। কিন্তু একটা খুব ইম্পোরটেন্ট কথা না বললেই নয়। ”
ভাইয়া মোহনা আন্টির কথায় আগ্রহ দেখালেন না। চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালেন। যতদূর বুঝলাম, কালরাতে বাসায় সিডর, টর্নেডো, সুনামি সব একসাথে হয়েছিল। আর তারই পরিণাম এখন ভুগতে হচ্ছে। মা জোরপূর্বক হেসে মোহনা আন্টিকে বললেন,
“জী আপা। ভিতরে আসেন।”
মোহনা আন্টি বিভ্রান্তি নিয়েই ভেতরে ঢুকলেন। বিছানায় বসে ইতস্তত দৃষ্টিতে ভাইয়া আর মায়ের দিকে একবার তাকালেন। আমার দিকে তাকাতেই আমি মাথা নিচু করলাম। লজ্জা আর অপমানে মন চাইছে মাটি অথবা দেয়ালের সাথে মিশে যেতে। মোহনা আন্টি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তোমার নাম তারিফ তো? নাম ধরেই বলি। আমার ঈশানের বয়সী তুমি।”
তারিফ ভাইয়া তীব্র মেজাজি কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন,” হুম।”
মোহনা আন্টি বললেন,” দেখো তারিফ, আরিশা একটা বাচ্চা মেয়ে। কি বলতে কি বলে ফেলেছে… ওর কথা ধরে বসে থাকলে হবে? আর তারিন কিন্তু কাল ইচ্ছে করে নেশা করেনি। ওকে নেশা করানো হয়েছে। ওর ইনোসেন্সের সুযোগ নিয়ে কেউ এ কাজ করেছে। ঈশান স্বচক্ষে দেখেছে সেটা। আমাকে বলেছেও। ঈশান শুধু তারিনকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিল। তুমি যদি ভেবে থাকো আমার ছেলে তোমার বোনের অচেতন অবস্থার এ্যাডভান্টেজ নিয়েছে, তাহলে সেটা ভুল।আমার ছেলেকে অনেক ভালো করে চিনি আমি। যদি কেউ বলে ঈশান মানুষ খুন করেছে, তাও আমি বিশ্বাস করতে পারি। কিন্তু মেয়েদের অসম্মান? অসম্ভব! ”
তারিফ ভাইয়া রুষ্ট কণ্ঠে বললেন, “আপনি কি ছেলের গুণগান করতে এসেছেন? এতোকিছুর পরেও?”
মোহনা আন্টি বললেন,” না! একদমই না। আমি শুধু সত্যিটা বোঝাতে এসেছি। আমার ছেলে নির্দোষ। আর তারিনেরও এখানে কোনো দোষ নেই। আসলে পরিস্থিতিটাই এমন হয়েছিল, যে কারো কিছু করারই ছিল না! কালরাতে তারিনের অবস্থা তো আমি দেখেছি। কমপ্লিটলি আউট অফ মাইন্ড। ওই অবস্থা ও কি বলেছে, কি করেছে নিজেও বুঝেনি।”
ভাইয়া বলে উঠলেন, “আপনার ছেলে তো অবুঝ না। তাহলে সে কিভাবে..”
ভাইয়া নিজে থেকেই থেমে গেলেন। মোহনা আন্টি বললেন,
“আমি বুঝতে পারছি। তবে তারিনের কোনো ক্ষতি হয়নি এ বিষয়ে আমি কনফিডেন্ট। তবুও যদি তোমাদের আমার ছেলের উপর অভিযোগ থাকে, তাহলে আমি একটা প্রস্তাব দিতে চাই। তারিনকে আমার আগে থেকেই পছন্দ। আমি ঈশানের সাথে তারিনের বিয়ে দিব। যদি তোমাদের কোনো আপত্তি না থাকে।”
ভাইয়া ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, “আপনার ক্যারেক্টারলেস ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। এতোদূর ভাবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি আসতে পারেন। ”
মা ক্ষীণ কন্ঠে উচ্চারণ করলেন, “তারিফ!”
ভাইয়া হাত উঠিয়ে মাকে চুপ করতে বললেন। মোহনা আন্টি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ালেন। আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে তারিফ ভাইয়াকে বললেন,
“আমি ভালোর জন্যই প্রোপোজ্যাল টা দিয়েছিলাম। আরেকবার ভেবে দেখার.. ”
তারিফ ভাইয়া মোহনা আন্টির মুখের সামনে হাতজোড় করলেন। বললেন,
“আমাদের ভালো না ভাবলেও চলবে ম্যাডাম। ”
মোহনা আন্টি নিরাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে গেলেন। ভাইয়া তখন মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“সবকিছু গুছিয়ে নাও মা। আমরা একটু পরই বের হবো। আর আজকেই ঈশানের সাথে তারুর বিয়ে হবে।”
বলেই চলে গেলেন ভাইয়া। আমি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি। কি হলো এটা? ভাইয়া এইমাত্র ঈশানকে রিজেক্ট করলেন। আর এখনি আবার বলছেন ঈশানের সাথে আমার বিয়ে হবে?বেশ কিছুসময় বিষয়টা নিয়ে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে যা বুঝলাম, ভাইয়া হয়তো ভাবছেন এখানে দুটো ঈশান। একজন মোহনা আন্টির দুশ্চরিত্র ছেলে , আরেকজন আমাদের বাড়ির নিষ্পাপ ভাড়াটে। যদি এমনটাই হয়ে থাকে তাহলে তো কঠিন তালগোল পাকিয়ে গেল। কি হতে চলেছে চিন্তা করতে গেলেও আমার দুনিয়া ঘুরে আসছে।
🍂
চলবে
তি_আমো❤
#পর্ব_২১
Writer: Sidratul muntaz
🍂
নিহাদের ডাইনিং রুমের বিশাল ফিশ পন্ডের কাচের দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। রঙ-বেরঙের মাছগুলোর আপন খেয়ালে ভেসে বেড়ানো পর্যবেক্ষণ করছিলাম মনোযোগের সাথে। কেউ আমার বাম হাত টেনে ধরল। ফিসফিস করে বলল,
“তারিন!”
আমার ভাবনায় ছেদ পড়তেই মাথা তুলে তাকালাম। ঈশান বললেন, “চলো তারিন।”
আমি প্রশ্ন না করে উনার সাথে হেটে গেলাম। উনি আমাকে রুমে এনে দরজা বন্ধ করলেন। নিজে বিছানায় বসলেন। আমাকেও টেনে বসালেন। রাশভারী কণ্ঠে বললেন,
“তারিন, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। খুব বড়সড় একটা ব্লেন্ডার হয়ে গেছে। তারিফের মনে আমার আইডেন্টিটি নিয়ে বিরাট একটা মিস আন্ডারস্টেটিং ক্রিয়েট হয়েছে।”
আমি শান্ত গলায় বললাম,
“কি মিস আন্ডারস্টেটিং?”
ঈশান বড় করে শ্বাস ছাড়লেন। তারপর বললেন,
“ডিটেইলস বলছি শোনো। সকালে তারিফ এসেছিল আমার কাছে।তুমি চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই.. তোমার খোজ করতে এসেছিল।আমি বুঝালাম যে আমি তোমার বিষয়ে কিছুই জানিনা। তখন সে আমাকে আরিশার কথাগুলো বলল।আরিশার কাছে আমার নাম শুনেও তারিফ কিছুই ধরতে পারেনি। কারণ ডাকনাম এক হলেও, পুরো নাম তো আর এক নয়। সবাই যখন বলছিল ঈশান আরিশার কাজিন, মোহনা সরকারের ছেলের নাম, তখন তারিফ একবারের জন্যও ভাবেনি আমিই সে। তারিফের দৃঢ় বিশ্বাস, আমি কখনো তাকে মিথ্যে বলবো না। সেই বিশ্বাস নিয়েই ও আমাকে জিজ্ঞেস করতে এসেছিল। “তারায জোহান ঈশান”কে আমি চিনি কিনা। আমি সত্যিটা স্বীকার করতেই যাচ্ছিলাম কিন্তু তারিফের কথার জালে ফেসে আমি সেই সৎসাহস দেখাতে পারিনি। তারায জোহান, মানে আমার প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছিল তোমার ভাইয়া। আমি তখন কিভাবে সত্যিটা বলতাম তারিন? ভয় হচ্ছিল। ঠিক ওই মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছিল আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, তাহলেই কেবল তারিফ রিলেক্স হবে। শান্তি পাবে।ও হয়তো এই কথাটাই আমার থেকে প্রত্যাশা করে। আর আমি সেটাই করেছি। কিন্তু এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। তোমাকে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করলে কি আরো অনেক বড় ধোকা হয়ে যাবে না?”
“আচ্ছা আপনি কি বলতে চাইছেন? “ঈশান আহমেদ”মানে আমাদের বাড়ির আপনি আর “তারায জোহান ঈশান” মানে মোহনা আন্টির ছেলে সেটাও আপনি, এই আপনাকেই ভাইয়া আলাদা দুইজন ভাবছেন?”
ঈশান হতাশাজনক ভাবে মাথা নাড়লেন। আর বললেন,
“হ্যা। ঈশান আহমেদ বলে কেউ নেই। আমার বাস্তব নাম তারায জোহান ঈশান। এই অতি সত্যি কথাটাই আমি বলতে পারছি না তারিফকে।”
“কেনো বলতে পারছেন না?”
“বাস্তব “আমি” কে নিয়ে যে খুব নিকৃষ্ট ধারণা পোষণ করে তোমার ভাই। এই মুহুর্তে তার চোখে তারায জোহান খুব বাজে, ক্যারেক্টারল্যাস, কুরুচিপূর্ণ একজন মানুষ। আর ঈশান আহমেদ মানে ভরসার জায়গা। রাশি রাশি বিশ্বাস। এই বিশ্বাসটা ভেঙে দেওয়ার এ্যাবিলিটি আমার নেই তারিন!! কি করবো?”
“কিন্তু ভাইয়ার তো সত্যিটা জানা দরকার?”
“সেই সত্যি বলার সৎসাহস টাই তো আমার নেই। ভয় হচ্ছে। বড্ড বেশি ভয় হচ্ছে।”
“কিসের ভয়?”
“তোমার আমার দুরত্ব বাড়ার ভয়। তারিফ আমার মিথ্যের উপর এতোটা ভরসা করবে আমি কখনো ভাবিনি। মিথ্যার স্তর এতোই ভারী পড়ে গেছে যে তারিফের চোখের দিকে তাকিয়ে সত্যি বলার সাহসটা পর্যন্ত জমাতে পারছি না আমি। এর থেকে মরে যাওয়া সহজ মনে হচ্ছে। তারিফ যখন জানতে পারবে আমি “তারায জোহান ঈশান”। আর “ঈশান আহমেদ” নামে কেউ নেই তখন হয়তো সে হোপলেস হয়ে পড়বে। হয়তো জীবনে আর কাউকে বিশ্বাসই করবে না! আর সবথেকে বড় কথা আমার থেকে তোমাকে আলাদা করার জন্য উঠে পরে লাগবে। তার উপর তোমার দাদী তো আছেনই।উনি তো আবার পাত্রও ঠিক করে রেখেছেন। তারিফ যদি রাগের মাথায় তোমার বিয়ে দিয়ে দেয়?”
করুণ দৃষ্টিতে তাকালেন ঈশান। আমি চুপ করে আছি। ঈশান একটা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে মাথার চুল খামচে ধরলেন। এখনো বুড়ির কথাগুলো উনার মাথা থেকে যায়নি। আমার বিয়ের বিষয়টা নিয়ে এখনো বিষন্নতায় ভুগছেন উনি। বুড়িটা আসলেই একটা কুটনৈতিক। ঈশানকে এখন কদবেলের সাথে তুলনা করতে ইচ্ছে করছে আমার। উপরের দিকটা শক্ত খোলসে আবৃত হলেও ভিতরটা একেবারে নরম। ভরতা বানানো যায় খুব সহজেই। আমি উনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,
“আপনি এতো চিন্তা কেনো করছেন? হতাশ হবেন না প্লিজ। বিয়েটা তো আমাদের হচ্ছে। আপনি খুশি না?”
“হ্যা খুশি। কিন্তু এতোটাও খুশি হতে পারছি না, যতটা হওয়া উচিৎ। খুব অস্বাভাবিক লাগছে সব। এলোমেলো লাগছে। মমকেও কিছু জানানো যাচ্ছে না। পরে এর জন্য দারুণভাবে সাফার করতে হবে আমি নিশ্চিত। ”
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
“আপনিই যদি এতো টেনশন করতে থাকেন তাহলে আমি কি করবো?”
ঈশান শান্তচোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেন। কপালের এক পাশে হালকা চুম্বন করে বললেন,
“টেনশন করোনা। এভরিথিং উইল বি ফাইন। ইনশাআল্লাহ।”
আমি হেসে দিয়ে বললাম,
“আচ্ছা আজ কি সত্যিই আমাদের বিয়ে?”
ঈশানের স্পর্শ হালকা হল। আমি মাথা তুলে তাকাতেই উনি মুচকি হেসে আমাকে নিজের কোলের উপর বসিয়ে বলে উঠলেন,
“পাগল হয়ে যাবো তারিন। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম, “কেনো?”
ঈশানের উল্লাসী কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, “খুশিতে।”
আমি খিলখিল করে হেসে দিতেই ঈশান আমাকে বিছানায় ফেলে আমার উপর গা এলিয়ে দিলেন। আমি চোখ বড় করে আতঙ্ক নিয়ে বললাম,
“ঈশান কেউ চলে আসবে।”
“কেউ আসবে না মিষ্টি! দরজা বন্ধ।”
আমি সামনে দিকে ইশারা করে বললাম, “একি! আরিশা তুমি জানালায়?”
ঈশান তড়িৎ গতিতে উঠে বসে জানালার দিকে তাকালেন,” কোথায় আরিশা?”
আমি এতোক্ষনে উঠে দরজা খুলে ফেলছি। তাই দেখে ঈশান ক্ষীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন,
“দিজ ইজ নট ফেয়ার!”
আমি এক দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম। নিহার ঘরের দিকে যাচ্ছি। আর কিছুক্ষণ পরেই নিহার বিদায়বেলা। চলে যাবে বেচারি শ্বাশুরবাড়ি। আমার বিয়েতেও নিহার থাকা হবে না। একথা ভাবতেই ইমোশোনাল হয়ে যাচ্ছি আমি। নিহার রুমের পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিলাম। তখনই কানে আসল মোহনা আন্টির কণ্ঠ। উনার কথা শুনে আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে থেমে দাড়ালাম। কথাটা ছিল,
” তারিনের যে ছেলেটির সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তার সম্বন্ধে তুমি কিছু জানো নিহা? শুনলাম নাকি ওদের বাসার পেয়িং গেস্ট?”
নিহা হকচকিত হয়ে বলল, “না আন্টি। আমি তো তেমন কিছু জানিনা।”
“জানোনা? তুমি না প্রায়ই ওদের বাসায় যেতে? কখনো দেখোনি ছেলেটাকে? ”
নিহা অপ্রস্তুতি কণ্ঠে মাথা চুলকে বলল,
“হ্যা দেখেছিলাম আর কি। দু একবার চোখের সামনে পড়েছিল।”
“দেখতে কেমন? তারিনের সাথে মানাবে?”
“এতোকিছু তো খেয়াল করিনি আন্টি। ”
“কিছুই খেয়াল করোনি? শর্ট? নাকি হাইট আছে? কালো না ফরসা? চেহারা কেমন?”
“আন্টি আমি ঠিক করে বলতে পারবো না। ছেলে আসলে.. সবসময় মুখোশ পড়ে থাকতো তাই আমি দেখিনি।”
নিহার কথা শুনে কপালে হাত ঠেকালাম আমি। মেয়েটা কি উল্টা-পাল্টা বলে এগুলো?
আন্টি বললেন, “মুখোশ পড়ে থাকতো? এটা আবার কেমন? বাড়িতে কেউ মুখোশ পড়ে থাকে নাকি? মুখে ইনফেকশন নেই তো আবার?”
ভীত কণ্ঠে জানতে চাইল আন্টি। নিহা দ্রুত উত্তর দিল,
“না না! ছেলে আসলে খুব লাজুক। মেয়েদের সামনে মুখোশ পড়ে থাকে।”
মোহনা আন্টি ভ্রু কুচকে হাসলেন,” কি? এইটা আবার কেমন ছেলেমানুষ? নাকি হাফ মেয়ে?আচ্ছা তাই বলে তুমি কিছুই বলতে পারবে না? মুখ বাদ দিয়ে হাইট ওয়েট সম্পর্কে কিছু বলো? কত হবে হাইট? 5.5 এর উপরে হবে?”
“হাইট তো মনে হয় 6 ফিটেরও বেশি। আমি ঠিক বলতে পারছি না আন্টি।”
“6 এরও বেশি? তাহলে তো ঈশানের মতোই? গায়ের রং কেমন বলোতো? সুদর্শন?”
আরো আগ্রহের নিয়ে জানতে চাইলেন মোহনা আন্টি। নিহা আরো বেশি ভড়কে গেল। আমতা-অমতা করে বলল,
“আন্টি আমি আর কিছু বলতে পারবো না..ছেলেটা সবসময় গায়ে কালো কাপড় জড়িয়ে রাখতো। তাই কিছু দেখা যেতো না।”
মোহনা আন্টি চমকে গিয়ে বললেন,” মানে? এটা আবার কেমন?”
নিহা বলল, “জানিনা আন্টি! এমনই।”
মোহনা আন্টি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ আঙুল উঠিয়ে বললেন, “এই ওয়েট! এইটা পার্টির ওই অসভ্য ছেলেটা না তো?”
মোহনা আন্টির প্রশ্নে নিহা চরম বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, “মানে? ওই ছেলে হতে যাবে কেনো আন্টি?”
মোহনা আন্টি চিন্তিত কণ্ঠে বললেন, “হুম ওই ছেলেই হতে পারে। কারণ তারিন প্রথমদিনই বলছিল, ছেলেটা মুখোশ আর কালো কোর্টের মতো কাপড় জড়িয়ে ওকে কিডন্যাপ করতে এসেছে। তুমিও সেইম কথা বললে। কি সাহস ছেলের? আমি তো ভাবতেই পারছি না। দুর্দান্ত পরিকল্পনা করে ওদের বাড়ির পেয়িং গেস্ট হয়ে গেছে? আর এখন বিয়েও করে নিচ্ছে?”
মোহনা আন্টি ফট করে উঠে দাড়ালেন। হুংকার দিয়ে বললেন,
“বিষয়টা এখনি তারিনের ভাইকে জানাবো আমি।”
নিহা এতোক্ষণ হ্যাবলার মতো মোহনা আন্টির কথা শুনছিল, লাস্ট লাইনটা শুনেই চোখ বড় করে চেচিয়ে উঠে বলল,” না আন্টি! পাগল নাকি?”
মোহনা আন্টি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতেই নিহা কিছুটা নরম সুরে বললে,
“কি দরকার আন্টি ঝামেলা করার? থাক না বাদ দিন। ছেড়ে দিন।”
মোহনা আন্টি দ্বিগুণ তেজ দেখিয়ে বললেন, “ছাড়বো কেনো? সত্যিটা সবাইকে জানাতেই হবে।
আমার ছেলেকে রিজেক্ট করে কেমন ছেলের সাথে বোনের বিয়ে দিচ্ছে তারিফ? আর তাছাড়া এটা তারিনের জীবন-মরণের প্রশ্ন। মেয়েটার জীবন এভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যায়না! আমি অবশ্যই বলবো। আর নিহা? তারিন না তোমার বেস্টফ্রেন্ড? ওর এতোবড় বিপদে তুমি পিঠ বাচিয়ে পালাতে চাইছো? ছি! আমি তোমার কাছে এমন কিছু এক্সপেক্ট করিনি। তারিনকে জোর করে একটা অসভ্যের সাথে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বিয়ে আটকাতেই হবে। পারলে তুমিও আমার সাথে এসো। ”
শাড়ির কুচি হালকা উচু করে ক্ষিপ্রগতিতে বেরিয়ে আসলেন মোহনা আন্টি। আমি দেয়ালের সাথে মিশে দাড়ালাম। মোহনা আন্টি চলে যেতেই আমি নিহার ঘরে ঢুকে নিহার পিঠে উরাধুরা কিল শুরু করলাম। বলদামির একটা লিমিট থাকা উচিৎ। এই মেয়ে সেই লিমিটও ক্রস করে ফেলেছে।এবার তো মনে হচ্ছে প্রবলবেগে ঘুর্ণিঝড় শুরু হবে বাড়িতে।
🍂
চলবে