#তি_আমো
#পর্ব_৫
Writer: Sidratul muntaz
🍂
আমার হাসির বহর দেখে আন্টি আর নিহাও খানিক হেসে নিয়ে নিজেদের পোশাক-পরিচ্ছদ আর চুলের ভাজ ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। মোহনা আন্টি আর নিহা হয়তো ভাবছে আমি তাদেরকে দেখে হাসছি। কিন্তু আসলে তো সেরকম না! আমি যে কেনো হাসছি, আমি নিজেও জানিনা। তবে হাসতে ভীষণ মজা লাগছে। বারবার দুই হাত তালির মতো করে বাজিয়ে হেসে উঠছি আমি। সামনে থাকা আস্তো দুজন মানুষ আমার দিকে বে আক্কেলের মতো তাকিয়ে আছে। তাই দেখে আমার আরো বেশি মজা হচ্ছে। মোহনা আন্টি এবার কিছু না বুঝতে পেরে আমার সাথে হেসে উঠলেন। নিহাও তাই করলো। দুজনই হাসি হাসি ভাব নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আর এদিকে আমি যে হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছি, দাড়িয়ে থাকা দায়। মোহনা আন্টি আমার এক কাধ টেনে ধরলেন। আমার বামহাতটা নিজের হাতের সঙ্গে জড়িয়েই হাসিমুখে একটু চিন্তার ভাজ ফেলে জিজ্ঞেস করলেন,
তারিন কি হয়েছে তোমার? এতো হাসছো কেনো?
আমি কি আর কথা বলার মতো অবস্থায় আছি? হেসেই তো যাচ্ছি। নিহাও আমায় বিপরীত পাশ থেকে ধরে আছে। হাসি যেহেতু একটা সংক্রামক রোগ, তাই আমার সাথে সাথে ওরাও কিছুটা হাসছে। তবে চিন্তাময় হাসি। দুজনই আমাকে দুই পাশ থেকে ধরে নিয়ে সোফায় বসালো। এবার শুরু হল আমার পাগলামী। উনারা আমায় সোফায় এনে বসাতেই আমি দুই পা উঠিয়ে কুজো হয়ে বসে পড়লাম। দুই হাত দিয়ে সোফার গদি মুষ্টিতে নিয়ে বলতে শুরু করলাম,
ওয়াও! কি সফট! নরম তুলতুলে। এতো মজা লাগে কেনো? মন চায় লাফাতে। একটু লাফাই?
আমার আচরণে আন্টি আর নিহা একবার চোখাচোখি করল। নিহা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলেও আন্টি কি একটা ভেবে বলে মাথা হেলিয়ে বললেন,
আচ্ছা লাফাও।
আমি সত্যি সত্যি সোফায় উঠে লাফাতে শুরু করলাম। লাফাতে লাফাতে উল্লাসের শব্দ করছি আমি। নিহা চরম অবাক হয়ে বিস্ফোরিত চোখে আমাকে থামাতে আসলেই মোহনা আন্টি আটকে দিল। ইশারা করে নিহাকে শান্ত থাকতে বলল। নিহা আন্টির ইশারায় শান্ত হয়ে গেলেও আমি শান্ত হলাম না। খপ করে সোফা থেকে নেমে গিয়ে এবার মোহনা আন্টির এক কাধ খামচে ধরলাম। তাই দেখে নিহা হালকা পাতলা একটা চিৎকার দিয়ে কয়েক কদম দুরে সরে দাড়ালো। আর আমি কি করছি? মোহনা আন্টির সো কলড কার্ল করা ব্রাউনিশ চুলে হাত বুলাচ্ছি। চুলগুলো গোছা বানিয়ে নিজের মুখের কাছে এনে সুরসুরি খাচ্ছি। মোহনা আন্টি মুখ কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করলেন। মহিলার ধৈর্য দেখে আমার অবাক লাগছে। উনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষনে ঝাটার বাড়ি খেতাম। বুড়ি এখানে উপস্থিত থাকলে তো ঝাটা পেটা করতে করতে আমায় আধমরা বানিয়ে ফেলতো। ভাবতো আমায় জিনে ধরেছে। এই ভয়ে কেউ কেউ হয়তো সামনেও আসতো না, কাছেও ঘেষতো না। কিন্তু মোহনা আন্টি সেরকম কেনো আচরণই দেখাচ্ছেন না। বরং ধৈর্য ধরে আমার প্রবলেমটা বোঝার চেষ্টা করছেন। সেই চেষ্টায় উনি আদৌ সফল কিনা জানিনা, তবে আমি আবার উরাধুরা হাসিতে মত্ত হয়ে মোহনা আন্টির দিকে প্রশ্ন ছুড়লাম,
আন্টি…! আপনার চুল গুলো কি খাওয়া যায়? আমি খাবো! ক্ষুধা লেগেছে। আপনার চুল নুডলসের মতো। তাই আমি খাবো।
অসহায়ের মতো মুখ করে তাকালাম আমি। তখন মোহনা আন্টির নিঃসংকোচ উত্তরটা ছিল,
না মা! চুল তো খাওয়া যায় না। তবে খাওয়ার জন্য এতো কিছু থাকতে তুমি চুল কেনো খাবে?
মোহনা আন্টির উত্তর শুনে আমি কাদো কাদো মুখ করে তাকালাম। বাচ্চাদের মতো হাত পা নাড়িয়ে বললাম,
না আমি চুলই খাবো। অন্যকিছু না। নুডলসের মতো চুল খাবো।
মাথা নিচু করে ঠোটে উল্টো ভাজ ফেলে বাক্যগুলো আওরাতে আওরাতে নিহার দিকে তাকালাম। নিহা তব্দা লেগে দাড়িয়ে আছে। একটু একটু কাপছেও। যেন কারেন্টের শক লেগেছে ওর। বিদ্যুৎ ওকে তীব্র বেগে নিজের দিকে টানছে। মোহনা আন্টি আমার কাধে হাত বুলিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন হয়তো। কিন্তু আমি বলতে দিলাম না। বলার আগেই নিহার পেছনে ঈশানকে দেখে চেচিয়ে উঠলাম। চোখ বড় করে আনন্দের সাথে উচ্চারণ করলাম,
সাদা গোল্লা? এটা তো পুরো সাদা গোল্লা। আমি ওই সাদা গোল্লাটা খাবো।
বলতে বলতে ঈশানের দিকেই ছুটে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ঈশান আমায় এমনভাবে দেখলেন, যেন ভুত দেখছেন। আমি ঈশানের দিকে তেড়ে যেতেই উল্টো দিকে ঘুরে দৌড় লাগালেন ঈশান। যাকে বলে একেবারে রাম দৌড়। পুলিশের ধাওয়া খেয়েও চোর এইভাবে দৌড়ায় না। উনার পালিয়ে যাওয়া দেখে আমি মুখ ভেঙে কেদে দিলাম। এক হাত দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে অন্যহাতে ইশারা করে বললাম,
সাদা গোল্লাটা চলে গেল। কেউ ধরতে পারলে না? এবার আমি খাবো কি করে?
নিহার চোখমুখ এবার অন্যরকম হয়ে গেছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সেও ঈশানের মতো উরাধুরা দৌড় লাগানোর সুযোগ খুজছে। আমি সোফায় ধপ করে বসে পড়লাম। কান্না কান্না ভাব করে দুই হাতে সোফার গদি খামচাতে খামচাতে বললাম,
সাদা গোল্লা এনে দাও, সাদা গোল্লা এনে দাও।
মোহনা আন্টি এবার মুখে বিরক্তি ভাব নিয়ে দ্রুতবেগে আমার কাছে আসলেন। আমি ভাবলাম সোফার গদি ছিড়ে ফেলার জন্য হয়তো আমাকে বকবেন উনি। কিন্তু এবারও আমার ধারণা ভুল হলো। উনি গদির দিকে নজর দিলেন না। আমি দুই হাত টেনে ধরে ইনিয়েবিনিয়ে দেখতে লাগলেন। নাকে পেচকী কেটে আফসোস করে বললেন,
ইশশ, হাতটার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো?
আমি সরল মুখ বানিয়ে হাতের দিকে তাকালাম। ধারালো সুতার আঘাতে হাত আমার ক্ষত বিক্ষত অবস্থা। তবুও আমার একটুও ব্যথা হচ্ছে না। একটুও না। আমি নির্বিকার ভঙ্গিতেই মোহনা আন্টির দিকে তাকালাম। উনার এক পশলা চুল আমার নাকের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। সাথে অদ্ভুত একটা শ্যাম্পুর স্মেইলে নাকে সুরসুরি অনুভূত হচ্ছে আমার। আমি হাচি দিয়ে বসলাম। হাচির শব্দে মোহনা আন্টি খানিক কেপে উঠে আমায় ছেড়ে দিলেন। এতোক্ষণ আমার সম্পুর্ন ভর মোহনা আন্টির উপর ছিল। তাইতো উনি আমায় ছেড়ে দেওয়া মাত্রই ফ্লোরে টপাস করে ঢলে পড়লাম। সব ঝাপসা ঝাপসা লাগছে…।
বালিশ থেকে মাথা তুলে তাকাতেই নিজেকে মোহনা আন্টির বেডরুমে খুজে পেলাম। আমি কি করে বুঝলাম এটা মোহনা আন্টির বেডরুম? কারণ দেয়ালে উনার বিশাল সাইজের একটা ছবি লাগানো। হাসি জমানো মুখের ছবি। মহিলা এতো সুন্দর হাসে কিভাবে? পুরুষ হলে উনার হাসির উপর ক্রাশ খেতাম। ঈশানেরও ছবির অভাব নেই। কোণায় কোণায় ঈশানের ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে। বড়বেলার ছবি, ছোটবেলার ছবি, মধ্যম বেলারও ছবি আছে। মানে যখন উনি আমার মতো টিনেজার ছিলেন। এত্তো কিউট! আমার মনে হচ্ছে আমি কোনো বেডরুমে না, ফটো স্টুডিওতে বসে আছি। তবে আঙ্কেলের কোনো ছবি চোখে পড়ছে না কেনো? মাথা ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকাতেই খুজে পেলাম আঙ্কেলকে। বিরাট ফ্রেমে বন্দী ছোট্ট পরিবারটার অসম্ভব মাধুর্যময় একটি ছবি। আন্টি চেয়ারে বসে আছেন, ঈশান ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে মায়ের কোলে চিবুক ঠেকিয়ে রেখেছে পরম শান্তিতে, আন্টির এক হাত ঈশানের মাথার চুলে নিবদ্ধ। আঙ্কেল চেয়ারের পেছনে দাড়িয়ে আন্টির মাথা বরাবর চিবুক ঠেকিয়ে রেখেছেন। সেও পরম স্বস্তিতে। আন্টি অন্য হাত দিয়ে আঙ্কেলের উরু স্পর্শ করে আছেন। কি অমায়িক দৃশ্য! তিনজনের মুখেই প্রাণোচ্ছল হাসি, আর সেই হাসিতেও অসম্ভব মিল, যেন বিধাতা একজন কে দেখে অন্যজনকে সৃষ্টি করেছেন। মনের মাধুরির সবটা ঢেলে সৌন্দর্যের বাগান তৈরি করে দিয়েছেন তাদের চেহারায়। মায়ের সাথে ছেলের, ছেলের সাথে বাবার, কি আশ্চর্য মিল! আমার চোখটা ভরে আসলো। ঝলমলে দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি আমি। ইশশ, ছবিটা এতো মনোমুগ্ধকর কেন? সবাইকে খুব আপন মনে হচ্ছে। বেশ আপন।
🍂
চলবে