তি আমো পর্ব-০৪

0
1737

#তি_আমো❤
পর্ব – ৪
Writer: Sidratul muntaz

🍂
আবেগী ছেলেটাকে কিভাবে চিঠির উত্তর পাঠানো যায় সেটাই ভাবছিলাম। চট করে মাথায় আসলো নিহার নামটা। নিহার কাছে চিঠি পৌছে দিলে সে ঠিকই পিয়নের ভূমিকা পালন করে ঈশান পর্যন্ত চিঠিটা চালান করে দিবে। কিন্তু এতে আরেকটা ঝামেলা হতে পারে। এক্ষেত্রে নিহাকে জানাতে হবে যে তাদের অভদ্র সোসাইটির ভদ্রম্যান আমাকে কতটা ভদ্রতা সহিত প্রেম নিবেদন করেছেন। অবশ্য নিহার জানা উচিৎ। মিঃ আবেগচন্দ্রের ভদ্রম্যান সেজে থাকার মুখোশটা এবার বন্ধুমহলে খশে পড়ুক, এটাই তো আমি চাই। তৎক্ষণাৎ খাতা কলম ভাজ করে নিহাকে ফোন লাগাতে বসলাম। নিহা ফোনটা রিসিভ করেই সর্বপ্রথম যে বাক্য উচ্চারণ করল,

হ্যা তারু, বল? বাসায় সেইফলি পৌছেছিস?

হ্যা পৌছেছি।

কোনো ঝামেলা হয়নি তো? বাসায় ম্যানেজ করতে পেরেছিস?

ঝামেলা হতে হতে একটুর জন্য বেচে গেছি দোস্ত। তবে এখন সব নরমাল।

আমি জানতাম, ঈশান ভাইয়া যেখানে থাকবে সেখানে সব নরমাল না হয়ে পারে? উনি তো সব প্রবলেমের এক নম্বর সলিউশন। এজন্যই তো তোকে উনার সাথে পাঠিয়েছি। আর এখন নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। নাহলে এতোক্ষণেও তোকে ফোন না দিয়ে থাকতাম আমি ?

হুম! আমিও সেটাই ভাবছি। তুই একবারও কেনো ফোন করিস নি। এবার বুঝতে পারলাম কারণটা। এতো বিশ্বাস ঈশান ভাইয়ার প্রতি?

অবশ্যই। উনি নিজেই তো একটা বিশ্বাসের ভান্ডার। উনাকে বিশ্বাস না করে পারা যায়? আর তার প্রমাণ নিশ্চয়ই আজকে তুইও পেয়েছিস?

হ্যা! খুব ভালো প্রমাণ পেয়েছি। উনি যে আসলে কতটা বিশ্বাসের যোগ্য। শোন নিহা, তোকে একটা কথা বলবো। কিন্তু তার আগে তোকে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

কি প্রশ্ন দোস্ত?

তুই কি আমাকে বেশি বিশ্বাস করিস? নাকি ওই ঈশানকে?

এইটা আবার কেমন প্রশ্ন? দুজনকেই বিশ্বাস করি। তোরা দুজনই আমার খুব ক্লোজ। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর ঈশান ভাইয়া আমার কাজিন। বড়ভাই। কেনো বলতো?

তারমানে ঈশানকে বেশি বিশ্বাস করিস?

আহা! আমি সেটা কখন বললাম? তোকেও বিশ্বাস করি। এখন বল না কি বলবি? জলদি বল!

আজকে মেকআপ রুমে যেটা হল, ওইটার জন্য ঈশান ভাইয়াই দায়ী।

আমার কথা শুনে মনে হয় নিহা ঝটকা খেয়ে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে । তাই অপর পাশ থেকে কোনো আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। একদম সাইলেন্ট। প্রায় বিশ ত্রিশ সেকেন্ড পর নিহা মুখ খুলল। বলল,

আমিও এইটা গেস করেছিলাম। ঈশান ভাইয়াই হতে পারে।

নিহার উত্তরে এবার আমার ঝটকা লাগল। কিন্তু আমি ওর মতো সাইলেন্ট হলাম না। বরং উচ্চস্বরে বলে উঠলাম,

কি? তুই জানতিস?

জানতাম না। যাস্ট সন্দেহ হয়েছিল।

সন্দেহ হওয়ার পরেও তুই আমাকে উনার সাথে পাঠিয়ে দিলি? কিভাবে পারলি?

সন্দেহ হয়েছিল বলেই তো পাঠিয়েছি। কারণ তখন আমি আরো নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম। যদি আমার সন্দেহ সত্যি হয়, তাহলে ঈশান ভাইয়ার কাছে তুই আরো বেশি সেইফ থাকবি।

মানে?

তুই বোকা না তারু। তোর বোঝা উচিত। উনি তোকে ভালোবাসেন।

আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম,

তুই আগে থেকেই সব জানতিস?

হুম। তবে সরাসরি জানতাম না। সন্দেহ থেকে জানতাম।

কিভাবে? কবে থেকে তোর এই সন্দেহ শুরু?

তুই আমার বার্থডেতে আমার বাসায় এসেছিলি না? সারপ্রাইজ পার্টি? কেক ছোড়াছোড়ির পর যে সবাইকে গোসল করতে হয়েছিল? তুই আমাদের বাসায় রাত্রীযাপন করেছিলি। মনে আছে?

হ্যা মনে আছে। আর সেইদিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঈশান ভাইয়া আমাকে একটা চিঠি লিখেছেন। তোদের যে বারান্দার পাশে বিশাল কাঠগোলাপ গাছ আছে না? সেখানে হেটে হেটে আমি কফি খাচ্ছিলাম। তখনই নাকি উনি আমায় দেখেছিলেন।

উনি তোকে চিঠি লিখেছেন? কি লিখেছেন? আমাকে মেসেঞ্জারে দে তো ছবি তুলে?

আচ্ছা দিবো। তার আগে তোর সন্দেহের কারণটা বল।

আমার সন্দেহ হয়েছে কারণ সেদিন পাশের সাইট থেকে আমি ঈশান ভাইয়ার উপর নজর রাখছিলাম। আসলে আমি না। রিদিতা, তানিশা, সামিরা, ওরা নজর রাখছিল। তখন আমিও ওদের সঙ্গ দিচ্ছিলাম। উনি আমাদের বাসায় আসলে প্রায়ই কাঠগোলাপ গাছটার নিচে গিয়ে বসেন। উনার পছন্দের ফুল কাঠগোলাপ কিনা! উনি সেখানে বসে পাবজি খেলেন। কিংবা বিভিন্ন ইম্পোর্টেন্ট কাজ করেন। আর সেদিনও সেরকম কিছুই করছিলেন। কিন্তু তুই বারান্দায় আসতেই উনি সবকাজ বাদ দিয়ে তোর দিকে তাকাচ্ছিলেন শুধু। ব্যাপারটা এতোটাই চোখে লাগছিল, যে আমি সন্দেহ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।

কিন্তু আমার না একবারও মনে পড়ছে না যে সেদিন তোদের বাসায় ঈশান ভাইয়াও ছিল। ইনফেক্ট আমি তো উনাকে কখনো দেখিই নি। আজকেই প্রথম দেখলাম।

উনি সেদিন আমাদের বাসাতেই ছিলেন। তবে সাফিনদের সাথে। অন্য জায়গায়। মেয়েদের সাইডে আসেন নি। ছেলেদের সাথে ছিলেন বলে তুই দেখিস নি।

কিন্তু আমার সব ভাইয়াদের সাথে দেখা হয়েছে, সবার সাথে কথা হয়েছে, আলাপ হয়েছে। শুধু উনার সাথেই কথা হয়নি। কেনো?

কারণ উনি ইচ্ছে করেই আসেন নি।

সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি কেনো আসেন নি?

কারণ ওইখানে রিদিতা, তানিশা ওরা ছিল। তাই আসেনি।

রিদিতা, তানিশাকে নিয়ে উনার কি প্রবলেম?

কারণ রিদিতা, তানিশা উনাকে পছন্দ করে। আর উনি মেয়েদের সঙ্গ পছন্দ করেন না।

আমি মুখ কুচকে উচ্চারণ করলাম,

কেনো? গে নাকি?

কি আজাইরা কথা বলিস! গে হতে যাবে কেন? পছন্দ করেনা আর কি!

আজব তো! পছন্দ না করার কি আছে?

সেটা মোহনা আন্টি ভালো বলতে পারবে। উনাকে জিজ্ঞেস করিস। ( হালকা হেসে)

মোহনা আন্টি কে?

এতো জলদি ভুলে গেলি? আজ পার্টিতে কার সাথে গল্প করছিলি?

ওহ! মানে ঈশানের মা? ওই আন্টিটা? কিন্তু উনাকে আমি কোথায় পাবো?

আচ্ছা তারু শোন, কাল মোহনা আন্টি আমাকে আর সাফিনকে উনার বাসায় দাওয়াত করেছেন। আমরা উড বি কাপল তো! মোহনা আন্টি ট্রিট দিতে চান আমাদের। তুই যাবি আমাদের সাথে?

ধুর ! আমি আবার যাই কিভাবে? তোরা কাপল হিসেবে দাওয়াতে যাবি তোর ফুফুর বাসায়। সেখানে কি আমার যাওয়া চলে?

অবশ্যই তোর যাওয়া চলে। কারণ মোহনা আন্টি আমাকে স্পেশালি রিকোয়েস্ট করেছেন তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

সিরিয়াসলি?

হুম। এখন যাবি কিনা বল? মানে বাসায় ম্যানেজ করতে পারবি?

আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,

আন্টি মানে তোর মা যদি ভাইয়াকে ফোন করে বলে যে তোদের বাসায় দাওয়াত আছে, তাহলে ভাইয়া রাজি হলেও হতে পারে।

ঠিকাছে। তাহলে আমি মাকে দিয়ে ফোন করাবো। তুই রেডি থাকিস। একদম লেইট করবি না। সকাল দশটার মধ্যেই চলে আসবো আমি। আর এসে যেন তোকে তৈরি পাই।

আগে ভাইয়া রাজি হোক?

তারিফ ভাইয়া রাজি হবেই। ওটা আমার উপর ছেড়ে দে। তবে তোর ওই দাদীমা কোনো ভেজাল না করলেই হল।

না, ভাইয়ার কথার উপর বুড়িটা কিছু বলবে না।

নিহা প্রীতিকর হাসি দিয়ে বলল, ঠিকাছে। তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কাল দেখা হচ্ছে।

ওকে! কিন্তু মোহনা আন্টি হঠাৎ আমায় কেনো ইনভাইট করলেন সেটা বুঝতে পারলাম না।

সেটাও না হয় কালকে উনাকেই জিজ্ঞেস করিস? এখন রাখছি, বাই।

ওকে বায়।

আর মেসেঞ্জারে চিঠিটা দে।

ওকে বাবা। দিচ্ছি।

ওকে।

ফোনটা কেটেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম আমি। কাল তাহলে আবেগচন্দ্রকে নিজ হাতেই চিঠিটা দিতে পারবো। কেনো জানি ভেতরে ভেতরে ভীষণ এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে।

.

.

বিলাসবহুল সোফার নরম গদিতে বসে পুরো ড্রয়িং রুমটায় চোখ বুলাচ্ছি আমি। সম্পুর্ণ রুম এতোটাই বিশাল, যে চারদিকে ভালোমতো চোখ বুলাত গেলেও দশ মিনিট সময় লাগবে। আর ঘুরে দেখার কথা নাইই বললাম। ড্রয়িং রুমইটাই এতো বিশাল তাহলে না জানি সম্পুর্ন বাড়িটা কত আরও কত বিশাল হবে। হ্যা, আমি আবেগচন্দ্রের আবেগ দিয়ে তৈরি আলিশান বাড়ির কথাই বলছি। এই বাড়ি তৈরি করতে ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে সেই সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। তবে কারিগর যে নিজের মনের পরিপূর্ণ আবেগটাই ঢেলে দিতে সক্ষম হয়েছে বাড়ির কোণায় কোণায় সেটা বুঝতে আমার বাকি নেই। তাইতো বাড়িটা এতো সুন্দর। আর অতিরিক্ত সুন্দর বাড়িতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, অস্থির লাগছে, দিনেরবেলাও এখানে লাইট জ্বালাতে হয়। সূর্যের প্রাকৃতিক আলো বিলাশী পর্দা ভেদ করে ভেতরে আসতে বাধা পায়। অবশ্য সূর্যের আলোর প্রয়োজনও নেই এখানে। তার বিকল্প হিসেবে আছে নানান ধরণের লাইট, সেগুলোও সেইরকম স্পেশাল। আমার মাথা বরাবরই একটা ঝুলছে। তবে আমার মনে হচ্ছে, আস্তো এই ঝাড়বাতিটা এখনি খুলে পড়বে। আর সেটা অবশ্যই আমার মাথা বরাবর। মুভিতে যেমন হয়না? উপর থেকে ঝাড়বাতি খশে পড়ে, তারপর নায়ক নায়িকাকে হেচকা টান দেয়। অতঃপর একজন আরেকজনের উপর ফ্ল্যাট হয়ে যায়। তখনি শুরু হয় রোম্যান্স। ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে রোম্যান্স! বাম পাশে চোখ যেতেই দেখলাম ডাইনিং আর ড্রয়িং রুম বিভক্ত করে উপরের দিকে চলে গেছে একটা সিড়ি। সিড়িটাও যথেষ্ট কারুকার্যময়। কি সুন্দর! চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো দৃশ্য। সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলেই মনে হয় বেডরুম গুলো সারিবদ্ধভাবে পাওয়া যাবে। আর সেদিকটা নিশ্চয়ই খুব খোলামেলা হবে। দিনের আলোর দেখা পাওয়া যাবে। মোটামোটি আইডিয়া হচ্ছে। আরাম করে সোফায় হেলান দিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম আমি। এই বাড়িটার বিশেষত্ব কি? মানুষ কেনো এতো পয়সা খরচ করে এমন বাড়ি বানায়? কি লাভ? এতে কি সময়, শ্রম, টাকা, জায়গা এসবের অপচয় হয়না? আমার চিন্তাজগতে আঘাত হেনে একটা মেয়ে বলে উঠল,

আপু, জুস খাবেন?

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। ড্যাব ড্যাব চোখে মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করলাম। অতঃপর মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম খাবো না। খেয়ে কি হবে? মনে হচ্ছে খেতে গেলেই বমি চলে আসবে। একা একা বসে খাওয়া যায় নাকি? তার উপর এই আবদ্ধ ঠান্ডা পরিবেশে? পুরো রুম জুড়ে কেমন একটা স্মেইল ছড়িয়ে আছে। যেটা আমাকে আরো বেশি বিরক্ত করছে। আমার এই বিরক্তির সুচনা হল নিহা আর সাফিন নামক দুই সেলফিশ। নিজেরা তো রোমান্টিক কাপলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, টাইম স্পেন্ড করছে, আর আমি এখানে বসে বসে বিরক্ত হচ্ছি। কি বিরক্তিকর! ফ্রীতে একটা অ্যাডভাইজ দেওয়া যায়। সেটা হল, জীবনে কখনো ” কাবাব ম্যায় হাড্ডি ” হয়ে কোথাও যেতে নেই। যেমন আমার অবস্থাটাই কল্পনা করুন! নিহা আর সাফিন ভাইয়ার কাছে তো আমি এখন “কাবাব ম্যায় হাড্ডি”। তাইতো আমাক বিনা দ্বিধায় ইগনোর করে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওরা। আগে জানলে এখানে জীবনেও আসতাম না ধুর! হাটুতে ভর দিয়ে উঠে দাড়ালাম আমি। এখন আমার উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ হাটাহাটি করা। কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই আচমকা সামনে চলে আসলেন ঈশান। ঈশানকে হঠাৎ দেখে হালকা চমকে উঠলাম আমি। চোখ বড় করে তাকালাম। উনি এসবের তোয়াক্কা না করেই নির্বিকার ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার হাত ধরে টানতে লাগলেন। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই জোরপূর্বক টেনে নিয়ে আসলেন একটা সরু জায়গায় চোখের পলকেই। এই ছেলে এতো ওভারস্পিডে চলে কিভাবে ? তাও আবার আমাকে সাথে নিয়ে? আমি উনার সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করলাম। নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললাম,

প্লিজ ছাড়ুন আমাকে। এমন করছেন কেনো?

ঈশান বাকা ঠোটে হাসলেন। বললেন,

চিঠিতে কি লিখেছো? আমাকে মালি পদে বেশ ভালো মানাবে? একদম ঠিক বলেছো। আমি তো মালিই হতে চাই। তবে যেন তেন বাগানের মালি না। এই চমৎকার বাগানের মালি। ইশশশ কি সুন্দর! ( আমার মুখের কাছে ঝুকলেন)

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকালাম। উনার সাথে ধস্তাধস্তি জারি রেখে মুখ ফুলিয়ে বললাম,

এই কি বললেন? আমি বাগান?

উনি আমার হাত আরো শক্ত করে ধরলেন।এক ভ্রু উচু করে বললেন,

হ্যা! বাগানই তো। সাজানো ফুলের বাগান। এমন রেডিমেট একটা ফুলের বাগান থাকতে কষ্ট করে অন্য জায়গায় সাজাতে যাবো কেনো? আর পরিবেশবান্ধবের কথা বলছিলে না? আমাকে এবং আমার আশেপাশের মানুষদের নিয়ে যে তোমার এতো চিন্তা, সেটা জেনে ভালো লাগল। তবে আপাতত আমাকে নিয়ে চিন্তাটাই বেশি করা উচিৎ। তাতে তোমারই লাভ হবে। ( এক চোখ টিপে)

আমি মুখ হা করে তাকালাম। মুখ ভেঙে করুণ কণ্ঠে উচ্চারণ করলাম,

দেখুন আপনি যদি আমাকে এখনি না ছাড়েন তাহলে খুব খারাপ হবে।

ঈশান আমার আরো কাছে ঘেষে বললেন,

ময়রা হওয়ার কথা বলছিলে না? মিষ্টির দোকান দিয়ে বসবো? আর দোকানের নাম কি হবে? “হাসি দিয়ে তৈরি মিষ্টি?” না না, নামটা চেঞ্জ করতে হবে। নামটা হবে” মিষ্টি দিয়ে তৈরি হাসি।” মানে আমি মিষ্টি দিবো আর তুমি হাসি দিবে। মিষ্টি তৈরি করতে আমি জানিনা। তবে মিষ্টি দিয়ে কি করে হাসি তৈরি করতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি। দেখাবো প্রসেসটা?

দেখুন আপনি এসব কথা একদম বলবেন না। আমার ভয় লাগছে।

এখনি এতো ভয়? কিছুই তো করলাম না। মিষ্টি দেওয়ার প্রসেসটা আগে দেখাই! তারপর ভয় পেও?

আমি চোখ বড় করে বললাম, কামড়ে দিবো কিন্তু! খামচে দিবো না ছাড়লে!

ঈশান তাতেও হাসলেন। খুশি নিয়ে বললেন,

কুল! এতো ডিপে যাচ্ছো কেনো? কামড়াকামড়ি তো বিয়ের পরের ব্যাপার। এখন আগে হাসি তৈরির পদ্ধতিটা প্রয়োগ করে দেখি!

আমি চোখমুখ খিচে বন্ধ করে নিয়ে উচ্চারণ করলাম, মা….!

উনি কোনোকিছুর বাধ মানলেন না। আমার কানের কাছে এসে ঠোট ছোয়ালেন। এদিকে আমি যে পুরাই কম্পিত অবস্থায় দাড়িয়ে আছি। এরই মাঝে ভেসে আসলো মোহনা আন্টির কণ্ঠস্বর। সাথে নিহার গলার আওয়াজটাও শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে দুজন কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। আমি চোখ খুলে তাকাতেই ঈশানকে আর পেলাম না। তবে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে আমার। হাসি আসছে খুব। যেন তেন হাসি নয়, ভীষণরকম হাসি। মারাত্মক হাসি। পেট ফেটে হাসি আসছে। আমি হাসতে লাগলাম। উদ্ভট শব্দ করেই হাসতে শুরু করলাম। যাকে বলে ভুবন কাপানো হাসি! আমায় দেখে আন্টি নিহা থমকে দাড়ালেন। ভ্রু কুচকে অবাক চোখে তাকালেন। কিন্তু আমি যে হেসেই চলেছি। ওদের তাকানো দেখে আমার মনে হচ্ছে, আমি নিজেই পাগল হয়ে গেছি। উফফ, হাসি যে বাধ মানছে না! হাহাহা!
🍂

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে