#তি_আমো❤
পর্ব – ৩
Writer: Sidratul muntaz
🍂
আমি এখন অপরিচিত ছেলেটির গাড়িতে বসে আছি। ছেলেটা ঠিক আমার হাতের ডানপাশ বরাবর বসে গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কথা হয়নি আমাদের মধ্যে। শুধু একবার উনি জিজ্ঞেস করেছেন আমি কোথায় নামবো। আমি বলেছি বাজারের মাঝখানেই নামিয়ে দিলেই হবে। এতোবড় গাড়ি আমাদের গলিতে ঢুকবে না। আর তাছাড়া আশেপাশের মানুষ যদি দেখে, কোনো অচেনা ছেলে আমায় গাড়ি করে নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছে! অন দ্যা স্পট লংকাকান্ড শুরু হয়ে যাবে। এতো ঝামেলার থেকে বাজারে নেমে যাওয়াই ভালো। তবুও যদি শকুনি দৃষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পায়ে খুব চুলকানি হচ্ছে অনেকক্ষণ ধরে। যেন কিছু একটা বিধে আছে পায়ে। নিচু হয়ে পা টা চুলকাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু হল না। তার আগেই হঠাৎ ছেলেটা আমার সামনে একটা বোতল এগিয়ে দিয়ে বললেন,
পানি খাবে?
আমি ভ্রু কুচকে মাথা নাড়লাম। ছেলেটা কাধ নাড়িয়ে বললেন,
ওকে! আমিই খাই।
বোতলের মুখ খুলে পানি খাচ্ছেন উনি। কিন্তু গাড়ির এখনো চলছে। স্টেয়ারিং ও ঘুরছে। আমি একটু অবাক হয়ে জানতে চাইলাম,
গাড়ি এখনো চলছে কিভাবে?
ছেলেটা পানির ঢোক গিলতে গিলতে বললেন,
এটায় অটো ফাংশন সেট আছে। এমনিতেই ঘুরে।
আমি ভ্রু নাচিয়ে উচ্চারণ করলাম, ও!
ছেলেটা আবার স্টেয়ারিং এ হাত রেখে আমার দিকে তাকালো,
আচ্ছা একটা কথা বলো তো।
কি কথা?
তোমাদের বাসা এতো কাছে কেনো?
মানে?
মানে এইযে, পাচমিনিটও হয়নি রওনা দিয়েছি। এরই মধ্যে চলেও এসেছি। বাজারের কাছাকাছি আমরা।
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম। এই ছেলের আমাদের বাসা কাছে মনে হল? যেখানে আমার মনে হচ্ছে ঘণ্টা খানেক ধর দম বন্ধ অবস্থায় বসে আছি, সেখানে উনি বলছেন মাত্র পাচমিনিট? সামনের দিকে চোখ আটকাতেই বলে উঠলাম আমি,
ব্যাস ব্যাস! আর যেতে হবে না। এখানেই নামবো।
ওকে চলো নামি।
এই ওয়েট। চলো নামি মানে? আপনি কেনো নামবেন আমার সাথে?
আমি কেনো নামবো না তোমার সাথে? এতোটা রাস্তা তুমি একা যাবে নাকি? এই ভীড়ের মধ্যে? রাস্তার কি অবস্থা দেখেছো? তার উপর অন্ধকার।
ও হ্যালো! এটা না আমারই এলাকা ঠিকাছে? এইখানের প্রত্যেকটা মানুষ আমার ভাইয়াকে চিনে। এইখানে অন্তত আমার সেফটি নিয়ে কোনো প্রবলেম হবে না। বরং আপনি আমার সাথে নামলেই প্রবলেমটা হবে?
আমি নামলে প্রবলেম হবে? কেনো?
বাড়ে! এলাকার মানুষ দেখে নিবে না? তারপর কি ভাববে শুনি?
মানুষের ভাবাভাবিতে কি যায় আসে?
জানি। আপনার মানুষের ভাবাভাবিতে কিছু যায় আসবে না। তার প্রমাণ আমি আরো আগেই পেয়েছি। কিন্তু আমার যায় আসে। আমি তো একটা সাধারণ মেয়ে! মান সম্মানবোধ আছে আমার।
কথাটা শেষ করেই দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম আমি। পেছন থেকে ছেলেটা গলা উচিয়ে বলছিল,
তো আমার কি মান সম্মানবোধ নেই নাকি?
আমি শুনেও বা শোনার ভান ধরে হেটে আসলাম। কিন্তু বাসায় ঢুকতেই ঘটলো আরেক বিপত্তি। বুড়িটা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। কোমরে এক হাত রেখে শকুনি দৃষ্টি নিয়ে আমাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছে। ভয়ে আমার আত্মাটা এতোটুকু হয়ে আসল। প্রথমেই আমার মনে হল, ভাইয়া এখন বাসায় নেই। কারণ যদি ভাইয়া বাসায় থাকতো, তাহলে বুড়িটা এমন সদর দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকতে পারতো না। এটাই যে বিপদের আভাস! ভাইয়া থাকলেও বেচে যেতাম আমি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কুচুটে বুড়ির হাত থেকে নিস্তার নেই। শুকনো একটা ঢোক গিলে চেহারা স্বাভাবিক করে ভিতরে ঢুকে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু বাধ সাধলো বুড়িটা। দরজায় হাত ঠেকিয়ে বলল,
খাড়া! আগে ক কই গেসিলি?
আমি কপালের ঘাম আলতো করে মুছে বুড়ির দিকে শক্তচোখে তাকালাম। হাত পা অল্প অল্প কাপছে। তবুও অসীম সাহস দেখিয়ে বলে উঠলাম,
কোথায় আবার? কোচিং এ! আজকে স্পেশাল ক্লাস ছিল আমাদের। পুরো তিনঘণ্টার। ভাইয়াকে বলে গিয়েছিলাম তো। ভাইয়া সব জানে।
সত্য কইতাসোস? তোর চেহারার এই অবস্থা কেন?
ক কি অবস্থা? আরে ক্লাস করে এসেছি, কতটা পথ রিকশা ভাড়া বাচিয়ে হেটে আসতে হয়েছে জানো? খুব ক্লান্ত আমি। সরো তো ভেতরে ঢুকতে দাও।
বলতে বলতে ভিতরে পা রাখতে নিলে আরেকবার হাত ঠেকিয়ে বাধা দিল বুড়িটা।
এতোরাইতে বেলা কোচিং থাকে? আমারে শিখাস? এই চুল কতলা না এমনে এমনে পাকে নাই। সত্য কইরা ক কই গেসিলি?
আমি ভয় ভয় দৃষ্টি নিয়ে তাকাতেই মা ছুটে আসল। বুড়িকে উদ্দেশ্য করে বলল,
মা, আপনার জন্য চা বানিয়েছি। ভেতরে চলুন।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চা। এই তারু তুইও ভেতরে আয়।
আমি স্বস্তির হাসি দিয়ে ভিতরে আসতে নিবো তখন আবারো বুড়িটা হাত উঠিয়ে উচ্চারণ করল,
ওই খাড়া। ( মায়ের দিকে তাকিয়ে) তোমার কৌশল আমি বুঝি আয়শা। এমন কইরা মাইয়াডারে বাচাইতে চাইতাসো। কিন্তু তা হইবো না। আগে আমি ওর ব্যাগ খোলামু। ব্যাগো আসলেই বই খাতা আছে কিনা দেহন দরকার। ওই ব্যাগ ডা দে।
কথাটা শুনে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল আমার। আমি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম। মা আমাকে শান্ত থাকার ইশারা করে বুড়িকে বলল,
আহা থাক না মা। মেয়েটা বাহিরে থেকে এসেছে, খুব হয়রান। আগে তো ভেতরে আসুক। তারপর সব হবে।
না। কোনো ভেতরে আসাআসি নাই। আগে ওর ব্যাগ দেখমু তারপর চিন্তা করমু ভেতরে আইতে দেওন যায় নাকি। তারু ব্যাগ দে।
আমি ব্যাগটা আকড়ে ধরে বললাম,
না। আমি ব্যাগ কেনো দিবো? আমার ব্যাগে অনেক বই খাতা আছে, ইম্পোর্টেন্ট নোটস আছে। এসব এখন খুললে সব এলোমেলো হয়ে যাবে। তারপর আবার গুছাতে হবে। কোনো দরকার নেই।
বুড়ি উচ্চস্বরে ধমক দিল,
চুপপ! আমারে শিখাও? লেখাপড়া খালি তোমরাই করসো? আমগোর পোলাপান করে নাই? অযুহাত দেখাও? অযুহাত? তোমার অযুহাত দেহানি আমি বাইর করতাসি। বেশি বাড়সো না? ঠেং কাইট্টা ঘরে বসায় রাখমু। লেখাপড়া সব বন্ধ। তারপর অযুহাত বাইর হইবো তোমার।
বুড়ির ধমকে ব্যাগটা আমার হাত থেকে নিচে পড়ে গেল। বুড়ি মাথা নিচু করে ব্যাগটা তুলতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কেউ উচ্চারণ করল,
এনি প্রবলেম?
আমি তুমুল গতিতে পেছনে তাকালাম। আর তাকিয়েই আমার চোখ ছানাবড়া। এ তো দেখছি ওই ছেলেটা। পকেটে হাত গুজে খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। হায় আল্লাহ! এই মাল আবার এখানে কি করতে আসল? এবার তো সর্বনাশ নিশ্চিত। শেষ রক্ষাটাও বোধ হয় হলো না আর। ঠিক এই মুহুর্তে আমার ইচ্ছে করছে এই লম্বুটার ঘাসের মতো চুলগুলো টেনে টুনে ছিড়ে দিতে। উইথ আউট এনি রিজন! বুড়ির কথার আওয়াজে চমকে উঠে সামনের দিকে তাকালাম আমি। আমার ব্যাগটা হাতে নিয়ে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বুড়ি বলল,
তুমি কেডা?
ছেলেটা এক হাত পকেটে গুজেই অন্যহাতের এক আঙুল দিয়ে ভ্রু চুলকে বলতে যাচ্ছিল, আমি….
কিন্তু কথাটা শেষ করতে দিলাম না আমি। ফট করে তোতলানো কণ্ঠে বলে উঠলাম,
আমার স্যার! কোচিং এর স্যার।
আমার কথা শুনে মা আর বুড়ি দুজনেই ভ্রু কুচকালো। পেছনের ছেলেটার মুখের অবস্থা কি সেটা দেখতে পারলাম না। বুড়ি সন্দেহী দৃষ্টি নিয়ে বলে উঠল,
মাষ্টর? এতো জুয়ান মাষ্টর?
আমি বললাম,
হ্যা! উনিই তো আমাদের কোচিং এর ম্যাথ টিচার। আসলে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল কিনা আমি একা বাসায় ফিরছিলাম। আর স্যারের বাসাও এদিকেই। তাই আমাকে একটু এগিয়ে দিতে এসেছিলেন আর কি!
কথাটা শুনে বুড়ি চোখ বড় করে তাকালেও মাকে দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বাস করেছে। তাই মা একটা সন্তোষজনক হাসি দিল। কিন্তু বুড়িটা যে নাছোড়বান্দা। আমাকে অবিশ্বাস করবেই। তাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকাল। তাকিয়ে বলল,
তোমার বাসা কোন জায়গায়?
ছেলেটা গলা খাকারি দিয়ে বলল,
জ্বী, এইতো সামনে। এই গলির পরের গলিতেই।
আমার মনে হচ্ছিল এখনই হ্রৎপিন্ডটা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ছেলেটার উত্তর শুনে হালকা স্বস্তি পেলাম। যাক, মাথায় ঘিলু বলতে কিছু আছে তাহলে ছেলেটার। বুড়িটা হতাশ কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
ওহ! আইচ্ছা তাইলে ভেতরে আয়ো। এক কাপ চা খাইয়া যাও। ( মায়ের দিকে ঘুরে) আয়শা ভেতরে আনো ওগো।
ব্যাগটা মায়ের হাতে দিয়ে শাড়িটা হালকা উচু করে ঘরে ঢুকে গেল বুড়িটা। আমিও যেন হাফ ছেড়ে বাচলাম। মা একটা অমায়িক হাসি দিয়ে ছেলেটা কে বলল,
বাবা, ভেতরে আসো না। এক কাপ চা খেয়ে যাও।
ছেলেটা সংকোচ গলায় বলল,
না আন্টি। আজ থাক। অন্য আরেকদিন। আমার একটু তাড়া আছে।
আমি সঙ্গে সঙ্গে উচু গলায় উচ্চারণ করলাম,
হ্যা মা। কোনো দরকার নেই। উনার তাড়া আছে উনাকে যেতে দাও। এই আপনি যান তো?
মা অবাক হয়ে বলল,
তারু এসব কি? স্যারের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?
আমি ভ্রু কুচকে বললাম, আরে কিসের স্যার?
বলেই জিভ কাটলাম। নিজের মাথায় চাটি মেরেই জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
মানে, কিসের কথা বললাম? কিভাবে কথা বললাম? উনি নিজেই তো চলে যেতে চাইলেন।
ছেলেটা পেছন থেকে ইতস্তত কণ্ঠে বলল,
আচ্ছা আন্টি আমি আসি। আসসালামু আলাইকুম!
মা বড় করে হাসি টেনে বললেন, ওয়ালাইকুম আসসালাম। এসো বাবা!
ছেলেটা উল্টো দিকে ঘুরে হাটা দিতেই আমিও ঝড়ের বেগে মায়ের হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলাম। রুমে এসেই দরজায় খিল লাগিয়ে দিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলাম। আরেকটু হলেই ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম। খুব জোড় বেচে গেছি আজ। আল্লাহ তোমার দরবারে লাখ লাখ শুকুর। এখন আমার প্রথম কাজ হচ্ছে ব্যাগের জিনিস পত্র বের করে সব গুছিয়ে নেওয়া। ভারী ভারী জিনিস বের করে ব্যাগটাকে উল্টো করে একটা ঝাড়া দিতেই বেরিয়ে এলো একটা সাদা কাগজ। ভাজ করা সাদা কাগজ। আমি কৌতুহল নিয়ে কাগজটা ফ্লোর থেকে তুললাম। দেখে তো লভ লেটার মনে হচ্ছে। এটাও আবার ওই ছেলেটার কাজ না তো? যে একটু আগে আমার ম্যাথ টিচার হয়েছিল? নিজের মনেই হাসলাম আমি। আর তখনি চোখ আটকালো পায়ের দিকে। আমার পায়ে কালো রঙের একটা পায়েল জড়ানো। এতোক্ষণ একদমই খেয়াল করিনি আমি। সেজন্যই তো পা টা তখন থেকে কেমন চুলকাচ্ছে। এসবই যে ওই ঈশান নামের ছেলেটার কারসাজি তা বুঝতে আমার বাকি নেই। তবে পায়েল টা বেশ সুন্দর। আচ্ছা ছেলেটা কি আমাকে ভালোবাসে? বাসলেও কি? আমি তো বাসি না! বিছানায় গা এলিয়ে চিঠিটা মুখের সামনে মেলে ধরলাম। অসম্ভব সুন্দর চকচকে কালো অক্ষরের লেখাগুলো চোখে ভেসে বেড়াতে লাগল। হাতের লেখাও এতো সুন্দর হয় মানুষের? আমি চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।
ওহো মিষ্টি হাসির মেয়ে,
তুমি কি জানো? তোমার হাসিটা ঠিক কতটা মিষ্টি। আমার তো ইচ্ছে হয় সন্দেশ বানিয়ে খেয়ে নিতে। সাতক্ষীরার সন্দেশ। কিংবা সিরাজগঞ্জের পানতোয়া, অথবা ধানসিঁড়ির দই। কি? অবাক হচ্ছো? ভাবছো ছেলেটা বোধহয় পাগল, তাই এসব আবোল-তাবোল বকছে। হ্যা ঠিকই ভাবছো মিষ্টি মেয়ে! সত্যিই পাগল হয়ে গেছি আমি। পাগল তো তুমিই বানিয়েছো। কি দরকার ছিল সেদিন জোৎস্না রাতে ভেজা চুল ঝারতে ঝারতে বারান্দায় আসার? তোমার চুলের সেই অবাধ্য ঝাপটাগুলো এক নিরীহ ছেলের মনে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, সেই সর্বনাশের দায়ভার এবার কে নিবে শুনি? ছেলেটা যে পাগল হয়ে যাচ্ছে। কফি মগ হাতে বারান্দার প্রতিটি কোণ ঘুরে বেড়িয়ে তোমার আনমনে হেসে উঠার সেই অপরুপ দৃশ্য ছেলেটা যে ভুলতে পারছে না। জানো সেদিন কাঠগোলাপের সুভাষের চেয়েও প্রকট ছিল তোমার ওই চুলের সুভাষ। যা ওই অসহায় ছেলেটির জন্য তীব্র এক অত্যাচার। প্রেমে না পড়ে কি উপায় ছিল? তোমার চুলের প্রতিটি ভাজ যে এখন ছেলেটার কাছে একেকটি ভালোবাসার খোরাক। সেইরাতে জোৎস্না ঝড়ানো চাদের আলোও যে ফিকে পড়েছিল, তোমার ঝলমলানো হাসির কাছে। উদাসীন ভাবে যতবার তুমি কফিতে চুমুক দিচ্ছিলে, ছেলেটা যে আফসোসে আফসোসে মরে যাচ্ছিল, হিংসে করছিল কফি মগটাকে, ভীষণ হিংসে। তুমি অন্য কিছুতে ঠোটের উষ্ণ পরশ দিচ্ছো এই দৃশ্য যে ছেলেটার কাছে অসহ্য যন্ত্রণার। সে যেমন তোমার প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, তেমনি জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল। কিভাবে বোঝাবো তোমায়? এ যন্ত্রণা যে বয়ে বেড়ানো দায়। বড্ড দায়! তাইতো লিখতে বসেছি। মনের অশান্ত অনুভূতিগুলো প্রকাশ করার এক ব্যর্থ চেষ্টা বলা যায়। আর সেই চেষ্টায় আমি কতটুকু সফল জানিনা। শুধু এইটুকু জানি, এই প্রথমবার কারো প্রেমে নিজেকে বলীয়ান করেছি। দীর্ঘরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি কারো কল্পনায় মগ্ন থেকে। কারো মিষ্টি হাসির প্রেমে মনের জমানো আবেগ গুলো আমার আত্মসমর্পণ করেছে। এবার যে যখন তখন ইচ্ছে হয় চাদের আলোয় সেই স্নিগ্ধ মুখটা দেখার। মাদকময় সেই চুলের গন্ধে মাতাল হওয়ার। আরো অনেক কিছু ইচ্ছে হয় মিষ্টি মেয়ে। কিন্তু সবটা বললে আবার রেগে যেবে না তো? ভুল বুঝে চেচিয়ে উঠবে না তো? আজকে যেমন ভুল বুঝলে? খারাপ কোনো উদ্দেশ্য যদি থাকতো, তাহলে কি তোমায় এতো যত্ন করে তুলে আনতাম? এতো যত্নে তোমার পায়ে ভালোবাসার উপহার জড়িয়ে দিতাম? তুমি খুব আনমনা তারিন! তাইতো একটিবারও খেয়াল করলে না তোমার পায়ে জড়ানো আমার সেই উপহারটিকে। এসব আমি কেনো করেছি? জানতে চাও? তোমারই প্রেমে মিষ্টি হাসির মেয়ে! মায়াবী মুখের দুষ্টু মিষ্টি হাসিটা যে আমার বুকে ব্যথা হওয়ার কারণ। এই ব্যথা সারিয়ে তোলার দায়িত্বটা নিবে? তুমি ছাড়া যে আর কেউ পারবেই না। ভালোবাসি তোমায়। অনেক বেশি ভালোবাসি। বিশ্বাস না হয় তো আমার মনের শহরে একটিবার এসে ঘুরেই যাও না! কেমন আয়োজন করে ভালোবাসার বাগান সাজিয়ে রেখেছি, শুধু তোমারই অপেক্ষায়।
তোমাতে মাতাল আমি।
চিঠিটা সম্পুর্ণ শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম আমি। চিঠি তো নয় যেন আবেগের বস্তা। এতো আবেগ পায় কই মানুষ? আচ্ছা উনার আবেগী চিঠির একটা সোজা সাপ্টা উত্তর লিখে দিলে কেমন হয়? কিন্তু লিখলেও পাঠাবো কিভাবে? ঠিকানাও তো জানা নেই। আচ্ছা সেটা পরে ভাবা যাবে আগে লিখেই নেই। আমি খাতা কলম নিয়ে লিখতে বসে গেলাম,
মাননীয় আবেগচন্দ্র,
আপনার বস্তাপচা আবেগমার্কা চিঠিটায় চোখ বুলিয়ে আমার শুধু একটা জিনিসই মনে হয়েছে। সেটা কি জানেন? আপনার আসলে মজনু না হয়ে ময়রা হওয়া উচিৎ। কারণ মিষ্টি সম্পর্কে আপনার বেশ ভালো জ্ঞান আছে। উদাহরণ: সাতক্ষীরার সন্দেশ, সিরাজগঞ্জের পানতোয়া, ধানসিঁড়ির দই। আচ্ছা আপনি একটা কাজ করুন না? বিরাট একটা মিষ্টির দোকান খুলে বসুন। সেই দোকানের নাম হবে ” হাসি দিয়ে তৈরি মিষ্টি”। সকল জেলার বিখ্যাত বিখ্যাত মিষ্টির সমাবেশ থাকবে সেখানে। আর তা যদি না হয়, আপনার কাছে আরেকটা অপশন আছে। মালীর পদেও আপনাকে বেশ ভালো মানাবে। মনের শহরে ভালোবাসার বাগান না সাজিয়ে, নিজের শহরে একটা ফুলের বাগান সাজান না? পরিবেশবান্ধব হবে। এতেও ঢের লাভ আছে। অন্তত আপনি কোনো একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবেন। তখন আর আপনার মাথায় ওসব শয়তানি বুদ্ধি নাড়া দিবে না। এখন যেমন আজাইরা বসে থাকার কারণে আপনার সাইকো প্রবলেম দেখা দিচ্ছে, সেটা তখন আর হবে না! আর জানেনই তো? কথায় আছে ” অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা”। ফ্রীতে অনেক এডভাইস দিয়ে দিলাম মিঃ আবেগচন্দ্র! কাজে লাগিয়ে দেখবেন, ফলাফল আসতে বাধ্য। আজকের মতো তাহলে বিদায়? ভালো থাকবেন। আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।
চিঠি তো লিখে ফেললাম। এখন কথা হচ্ছে, পাঠাবো কিভাবে?
🍂
চলবে