তিনি এবং ও ! ৯.

0
1949
তিনি এবং ও ! ৯.
তিনি এবং ও ! ৯.

তিনি এবং ও !

৯.
রশিদ সাহেবের চলে যাবার পর নিদ্র বিছানায় চোখ বুজে শুয়ে রইলো। অদ্রির সাথে এভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি। আর সেও বা কেমন?
নিদ্র ভাবছে, অদ্রিও তো তার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারতেন। হাজব্যান্ডকে এতোই ভালবাসতো যে, ২য় বিয়ে তো দূরে থাক কোনো ছেলের সাথেও বন্ধুত্ব সম্পর্ক টুকু নেই।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে নিদ্র গভীর নিদ্রায় ঢলে পরলো। স্বপ্নবিহীন ঘুম ভাঙল খটখট আওয়াজে। কেউ একজন তার রুমে আছেন, এমনকি কিছু একটা করছেন। হাঁটা চলার শব্দ তার কানে আসছে। কে হতে পারে? শব্দটা চেনা চেনা লাগছে। ভাসা ভাসা কথা তার কানে আসলো। কিন্তু কথাটা সে বুঝতে পারলো না। তার ইচ্ছে করছে বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে কিন্তু সে তাও পারছে না। হাত, পা নাড়াতে পারছেনা।কণ্ঠস্বর আবারো ভেসে আসলো। সে এবার স্পষ্টত বুঝতে পারলো, তার মা বলছে
– নিড্রো, ওয়েক আপ বেবি।
তার মাই তাকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য ঘরে আওয়াজ করছিলো। নিদ্র আস্তে আস্তে বলল
– মা, ঘুমাতে দাও।
এই সময় তার মায়ের মুখখানা দেখতে ইচ্ছে করছেনা। মাঝেমধ্যেই এমন হয়। মাকে খুব ঘৃণা করে আবার মাঝেমধ্যে খুবই ভালবাসে।
দুপুরের খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে অদ্রি গোসল করতে তার ঘরে গেলো।রশিদ সাহেব নিদ্রকে ডাক দিতে যাবেন আর তখনি নিদ্র নিচে নেমে এলো। নিদ্রকে দেখে রশিদ সাহেব বললেন
– এই বয়সে ঘরে ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবে?
নিদ্র বলল
– একা একা ঘুরতে ভালো লাগেনা।
– আমার যে বাবা সময়ের অভাব। তুমি অদ্রিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলেই তো পারো?
– চাচা আপনি পাগল হয়ে গেছেন। ওনাকে নিয়ে ঘুরতে গেলে কেউ একজন জীবিত ফিরে আসবে। না হয় আমি আর না হয় উনি।
রশিদ সাহেব আৎকে উঠলেন এবং বললেন
– এমন কেনো হবে?
নিদ্র টেবিলে চেয়ার টেনে বসে বলল
– উনার সাথে আমার মিনিটে মিনিটে ঝগড়া লাগে।আমি কী না কী বলবো, উনি লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবেন। আর না হলে কোনো পুকুর বা খালে ফেলে দিলেন।
রশিদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন
– ব্যাটাছেলে মানুষ গায়ের জোরে সাঁতরে উঠে আসবা।
নিদ্র মন খারাপ করে বলল
– সেটাই তো পারিনা। আমার নাকি পানিতে দোষ আছে দাদী বলে। পানিতে নামলেই পানির দানব আমাকে তার কন্যার সাথে বিয়ে দিবেন। তারপর আজীবন পানির রাজ্যে আমাকে বসবাস করতে হবে।
রশিদ সাহেব হা হা হা হা করে হাসতে শুরু করলেন।বললেন
– তোমার দাদী যা বলেছেন, তুমি যে কতো সুন্দর সেটা দেখেই বলেছেন। এতো সুন্দর ছেলে নাজমুলের হতে পারে, আমার বিশ্বাসই হয়নি প্রথমে। পরে যখন……
রশিদ সাহেব আর কোনো কথা বলতে পারলেন না। তার কথার মাঝেই অদ্রি বলল
– লিলিকে দেখেছেন আপনারা?
নিদ্র টেবিলের উপর রাখা খাবারের বাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। যদিও বাটিগুলো ঢাকা। মূলত সে অদ্রিকে ইগনোর করতে চাচ্ছে। এই মেয়ে কথায় কথায় রেগে যায়। লুসি অবশ্য তেমন না। খুবই সুইট আর হাসিখুশি।কতদিন তাদের দেখা হয়না। এখন কী করছে লুসি? নিদ্র ভাবছে। এখন তো ওখানে রাত। হয়তোবা কেঁদে কেঁদে বালিশ ভেজাচ্ছে। আচ্ছা কাঁদলে ওর নাক লাল হয়ে যাবে। কতো কিউট লাগবে ওকে। জীবনের প্রথম প্রেমটা হয়তোবা এমনি হয়। নিদ্রের ভাবতেই অবাক লাগছে। সে প্রেমে পড়েছে লুসির।
রশিদ সাহেব আর অদ্রি কথা বলছে। সেদিকে নিদ্রের একদমই খেয়াল নেই। রশিদ সাহেব নিদ্রের হাতে ঝাকি দিয়ে বলল
– এই ছেলে?
সাথে সাথেই নিদ্রের হুশ হলো। নিদ্র বলল
– কিছু বলবেন?
রশিদ সাহেব খাবার প্লেটের দিকে ইশারা করে বলল
– খেয়ে নাও।
খাবারের দিক তাকাতেই অদ্রির দিকে চোখ পরলো। ঠিক তার উল্টো পাশে বসেছে। ধবধবে সাদারঙ এর থ্রিপিচ পড়েছেন। মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে ভাত মাখাচ্ছেন অদ্রি।
সাদারঙ অল্প বয়সী মেয়েকে ঠিক মানায় না। তার কাছে মনে হয়, অল্পবয়সী রা রঙিন পোশাক পড়বে। লিলি অদ্রির পাশে পানের বাটা রেখে চলে গেলো। রশিদ সাহেব বললেন
– অদ্রি, লিলি খাবে না?
অদ্রি মুখে খাবার রাখা অবস্থায় বলল
– ও খেয়েছে।
অদ্রি বুঝতে পারছে নিদ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকাটা তার কাছে অসহ্য লাগছে। অদ্রি বলল
– আপনার কিছু লাগবে? ডাল বা মাছ ভাজা?
নিদ্র বলল
– আপনি সাদারঙ পড়বেন না প্লিজ। অদ্রি আপনাকে সাদারঙ এ ঠিক মানায় না।
নিদ্র এই প্রথম অদ্রির নাম ধরে ডাকলো।
অদ্রি অবাক হলো, এই প্রথম নিদ্র তাকে নাম ধরে ডেকেছে। আর কী সাবলীল ভাবেই নামটা উচ্চারণ করলো। যেন, কতকালের চেনা………

চলবে…….!

#Maria_kabir