তিনি এবং ও !
৪.
নিদ্র যে তাকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করার চেষ্টা করবে এটা অদ্রি ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে। অদ্রি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দিন পর তার আজকে একটু ভালো লাগছে। শুধু অনেক দিন না অনেক অনেক অনেক দিন। এই নতুন আসা মানুষ টা তাকে বিরক্ত করেই তার মাঝে ভালো লাগা সৃষ্টি করেছে। অদ্রির খুব ইচ্ছে করছে, খুব ইচ্ছে করছে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে। মাঝেমধ্যে যুক্তিহীন কাজ করতে তার ইচ্ছে করে কিন্তু করা আর হয়না। আজ সে করবে।
কিছুক্ষণ পর নিদ্র আবার তার দিকেই আসলো। এবার নিদ্র একটু হেসে বলল
– ইয়ে মানে আমার কাছে রশিদ চাচার মোবাইল নাম্বার নেই।
অদ্রি বলল
– বুঝলাম, তারপর??
– আপনার কাছে তো থাকবে। আমাকে দিবেন?
– যদি না দেই?
– কেনো দিবেন না?
– এইযে আমাকে বিরক্ত করছিলেন এখন আমি আপনাকে বিরক্ত করি?
নিদ্র মাথা চুলকিয়ে বলল
– মনে হয় পারবেন না।
– কেনো?
– কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত করতে হলে তার বিরক্ত হবার কারণ গুলো জানতে হয়। অর্থাৎ কোন বিষয়গুলো তাকে বিরক্ত করে সেগুলো জানতে হয়।
– আমি অবশ্য জানি না। কিন্তু আপনি কীভাবে জানলেন?
নিদ্র প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল
– মোবাইল নাম্বার টা?
অদ্রি বলল
– আচ্ছা আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি লিখে আনছি।
মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে নিদ্র রশিদ সাহেবকে ফোন দিলেন। প্রথমে একজন বয়স্ক মহিলা ফোন রিসিভ করলেন। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর রশিদ সাহেবকে পেলো। রশিদ সাহেব বললেন
– কে বলছেন?
– চাচা আমি নিদ্র!
– আরে বাবা তুমি? আমি ফোন করবো তার আগেই তুমি করে বসলা।
– চাচা আমাকে একটু বাজারে নিয়ে যেতে পারবেন?
– কী লাগবে বলো আমি এনে দেই।
– চাচা আমার আর ভালো লাগছে না এভাবে বাসার মধ্যে বসে থাকতে।
– তাহলে আমি আসতাছি। তুমি কী কী কিনবা, কোথায় কোথায় যাবা সব ঠিক করে ফেলো।
বিকাল ৪ টায় বের হলো রশিদ সাহেব আর নিদ্র। পুরো বাজার কয়েকবার রিভিশন দিয়ে নিদ্র যখন বাসায় ফিরল তখন রাত ৯ টা।
রশিদ সাহেব বাসার গেটে দিয়ে তার বাসায় চলে গেলেন।
নিদ্র কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে অদ্রি দরজা খুললো।
নিদ্রের হাতের ব্যাগপত্র আর রঙের কৌটা দেখিয়ে বলল
– আপনি একটু সাহায্য করুন না?
অদ্রি নিদ্রের হাত থেকে রঙের কৌটা নিয়ে বলল
– রাতে কী খাবেন বলে গেলেন না যে?
– বলেন কী? রান্না করেন নি? আমার তো খুবই খিদে পেয়েছে। আগে জানলে আমি খাবার কিনে আনতাম।
অদ্রি বলল
– আহা। পুরো কথা না শুনে এতো মন্তব্য করেন কেনো?
– আরে আপনি এতো পথ হাঁটলে বুঝতেন।
– হয়েছে হয়েছে। আমি আমার মতো রান্না করেছি।
– যাক আপনি আসলেই সাক্ষাৎ মা দূর্গা। একেবারেই চৈত্রের ফাটা মাঠে এক পশলা বৃষ্টির মতো।
রাতের খাবার টেবিলে অদ্রি আর নিদ্র বেশ গল্প করলো। দূর থেকে লিলি দেখছিল। সে তার আপামনিকে এই প্রথম এভাবে কথা বলতে দেখছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা তাতেই……
অর্ধেক চাঁদ টার দিকে অদ্রি তীব্রচোখে তাকিয়ে আছে। গতকালই এই চাঁদ টা সে এখানেই দেখেছে। কোনো পরিবর্তন নেই, থাকলেও খুব অল্প। এই চাঁদ টাই আস্তে আস্তে ছোটো হবে। একসময় চাঁদ টাকে আর দেখা যাবেনা। তখন পুরো পৃথিবী টা কালো অন্ধকারে ডুবে থাকবে রাতের বেলায়। তারপর একদিন আবার চাঁদ টাকে দেখা যাবে। আবার সে আস্তে আস্তে বড় হবে….. কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে কেনো হয়না এমন? মানুষ কেনো তার শৈশব কে বারবার ফিরে পায়না?কেনো যৌবন চলে যায়না?
হলে ভালো হতো অদ্রি ভাবে। অদ্রির চোখ আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। দুচোখের কোণ বেয়ে অশ্রুর ধারা বইতে শুরু করলো। এই একই ঘটনার দিনের পর দিন ঘটছে। অদ্রি প্রতিনিয়ত এক অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে নিশ্বাস ফেলছে। যেন,অপেক্ষা এক চিরসত্য মৃত্যু।
কতক্ষণ যে এভাবে কাটে অদ্রির কখনওই খেয়াল থাকেনা। একসময় সে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে।
অদ্রির মনে হলো কেউ তার রুমের দরজায় নক করছে। চোখ মুছে গায়ের জামা কাপড় ঠিক করে দরজা খুলে দেখে নিদ্র হাতে দুটো মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রি তার আপাদমস্তক দেখলো। পুরো শরীর রঙ লেগে আছে। এমনকি তার মুখেও বেশ রঙ লেগেছে। অদ্রি গভীর কণ্ঠে বলল
– এতো রাতে?
– হ্যা।ভেতরে ঢুকতে দিবেন না?
অদ্রি দরজার সামনের থেকে সরে দাঁড়ালো। তারপর বলল
– হ্যা আসুন কিন্তু বিছানায় বসবেন না।
– না বসবো না। আমি মেঝেতেই বেশ থাকতে পারি।
অদ্রি মাথার ঘোমটা আবার টেনে বলল
– আপনার গায়ে কাঁচা রঙ….
– কফি?
– কে বানিয়ে দিলো?
– আমার ১ বছর বয়সী কফি মেকার টা। বেশ কফি বানায়।
– নাহ আমি এখন খাবো না।
– আরে অদ্রি কফি কেউ খায় না, পান করে।
মেঝেতে বসে হাতের একটা মগ অদ্রি দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
– তো আপনি কাঁদছিলেন কেনো?
অদ্রি কফির মগ নিয়ে নিদ্রের থেকে একটু দূরে মেঝেতে বসে বলল
– কাঁদছিলাম না তো।
নিদ্র বলল
– আপনি মিথ্যে বলতে একদম এক্সপার্ট না। কারণ টা?
– আপনি আমার বাড়িঘরের কী করছেন? জানা যাবে?
– দেখুন প্রসঙ্গ পাল্টানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না।
বলার ইচ্ছা না হলে বলবেন না। আর আপাতত ওই রুমটা আমার। আমি যা ইছা করতে পারি।
– আমার বলার ইচ্ছা নাই।
– আপনার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে। তাই না?
– আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। হাজব্যান্ড আছে।
– আবারো মিথ্যে। হাজব্যান্ড থাকলে এতো রাতে আপনার বেডরুমে আমি বসে থাকতে পারতাম না।
– আপনি আপনার রুমে যান।
– আচ্ছা আপনি আমার একটাও প্রশ্নের উত্তর দিলেন না কিন্তু!
– উত্তর দিতে হবে এমন কোনো দায়বদ্ধতা আমার নেই।
– আপনি আইনজীবী হলে আমি ১০০% শিওর ১ টা কেসও হারতেন না।
– আর আপনার মতো মক্কেল পেলে আমার আইন পেশা ছেড়ে বনবাসে যেতে হবে।
– মনে পড়েছে! আপনার কাছে আমার বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিলো।
নিদ্র বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল।
অদ্রি বলল
– করুন, সীমিত জ্ঞানের আলোকে উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।
নিদ্র বলল
– শুনুন।
– হ্যা বলুন।
– শুনুন।
– হ্যা বলুন।
– শুনুন….
– দেখুন আপনি আরেকবার এরকম করলে আমি এখান থেকে উঠে চলে যাবো।
– বলছি। বাংলা চলচ্চিত্র এ দেখা যায় নায়িকা বা কেউ বনবাসে যায় বা পাঠানো হয়।
– হ্যা।তারপর?
– তারা তো এক কাপড়ে যায়। সাথে কোনো জামা কাপড় থাকেনা। বনেও কাপড় চোপড় দেয়ার মতো নেই।
– হ্যা। আপনার প্রশ্নটা তো বলুন।
– কিছুদিন পর দেখা যায় জামা কাপড়ে অন্য রঙের জোড়া তালি দেখা যায়। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে ” এই জোড়া তালি দেয়ার কাপড় পায় কোথায়? তারা সুই সুতাও বা কোথায় পায়?
চলবে…….!