তিনি এবং ও!
৩২.
– আপনাকে মৌরি পুকুরে চুবিয়েছে?
বেশ গম্ভীর স্বরেই প্রশ্নটা সুফি সাহেব নিদ্রকে করলেন।
নিদ্র তীক্ষ্ণ স্বরে বলল
– না, সেরকম কিছু করলে জানতে পারতেন।
সুফি সাহেব সিগারেট ফেলে দিয়ে কিছুক্ষণ জ্বলে থাকা শিখার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছু একটা ভাবছেন।
ফ্লাক্স থেকে চা ঢেলে নিলেন।
নিদ্রের কাছে সুফি সাহেবের এরকম ঢিলেমি একদম সহ্য হচ্ছেনা। তারপরও কিছুই করার নেই তার। তারই প্রয়োজন বেশি। আর মানুষ টা আজ খুব অসুস্থ, সারাদিন কিছুই সে খেতে পারেননি।
নীরবতা মানুষ কে কখনো খুব জ্বালায়। কখনো আরাম দেয়। কিন্তু এই মুহূর্ত তাকে খুব জ্বালাতন করছে।
সুফি সাহেব চায়ে লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন
– আমার মা সেইসময় খুব অসুস্থ। মায়ের অসুস্থতা নিয়ে আমি খুব চিন্তিত তার সাথে আবার অদ্রির বিষয়টা যোগ হয়। আমি প্রথমে তো না করলাম কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, খারাপ মানুষের অভাব এই পৃথিবীতে নেই। আমি না হয় ইখলাস সাহেবকে না করলাম কিন্তু সে তো টাকার বিনিময়ে অন্য কাউকে ব্যবহার করতে পারে। কী করবো ভেবে কূল পাচ্ছিলাম না। এরকমভাবে অন্য একটা মেয়ের সাথে আমি? মিলাতে পারছিলাম না।
সুফি সাহেব আবারো চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বুজে বসে রইলেন।
চোখ বুজা অবস্থায় বললেন
– আমি একটা মাস্টারপ্ল্যান করলাম। অদ্রির সাথে মিশবো ইখলাস সাহেবের প্ল্যান সাকসেসফুল করার জন্য না। ইখলাস সাহেবের কুকীর্তি প্রকাশের জন্য।
নিদ্র বলল
– অদ্রি যে আপনার কথাই বিশ্বাস করবে এরকম ভাবার কারণ?
– বৎস আমি আটঘাট বেঁধে নেমেছিলাম। কিন্তু ওই বুড়ি ঝামেলা পাকালো। বুড়ি তো পিছু ছাড়েই না।
– ইখলাস সাহেবের প্ল্যান অনুযায়ী তো আশেপাশে কাউকে জানানো যাবেনা। এরকম ছিলো?
সুফি সাহেব মুচকি হেসে বললেন
– তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে। আসল কথা হচ্ছে ওই বাড়ির মধ্যে এক বুড়ি ছাড়া চেনাজানা কেউই থাকতো না। দারোয়ান তো মেইন গেটের সাথের রুমের।অদ্রির সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম। বাড়ির মধ্যে ঘুরাঘুরি, দাবা খেলা বেশ চলতো।
অদ্রির সাথে ১ সপ্তাহ কথা বলার পর বুঝতে পারলাম, সে তার স্বামী মহোদয় কে খুব বিশ্বাস করেন।
এই ১ সপ্তাহে আমি অদ্রিকে পরোক্ষভাবে ইখলাস সাহেবের কথা বলেছি।
চায়ের কাপ পাটির উপর রেখে সুফি সাহেব বললেন
– অদ্রি মনে হয় এসব আকার ইঙ্গিত এসব বুঝেনা।মাথার মধ্যে প্যাচ না থাকলে অন্যের প্যাচ ধরা যায়না।
ওই বুড়ি বুঝতে পেরে ইখলাস সাহেবকে বললেন। ব্যাস তেলে বেগুনে সম্পর্ক। তিনি আমাকে ডেকে কী বলেছিলেন জানেন?
নিদ্র বলল
– আমি কীভাবে জানবো? আমি তো ওইসময় ছিলাম না আপনাদের সাথে বা আপনিও ইতোপূর্বে বলেননি।
– সায়ানাইড বিষ চিনো সুফি? তোমার মাকে খুব ভালোবাসো তাই না? আপনি না বড়োই ফাজিল সুফি সাহেব। আমার নামে আমার বউ এর কাছে কুটনামি করা তাই না?
– আপনার মা তখনো জীবিত ছিলো?
– হ্যা, হাসপাতালে ভর্তি ছিলো।তারপর আমার মাস্টারপ্ল্যান চেঞ্জ করলাম। কিন্তু সেটাও কাজে দিলোনা। ইখলাস সাহেব নিজেই লোক ভাড়া করে অদ্রিকে ইভটিজিং করিয়ে ছিলেন। যাতে ভয়ে বাসা থেকে বের না হতে পারে।
আর তার বাসায়ও কোনো আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী আসতো না। কারণ তো জানেনই। না জানলে বলুন আমি এক্সপ্লেইন করি?
– না না আমি বুঝেছি।
– নিষিদ্ধপল্লীর সেই সুন্দরীর কথা মনে আছে? গতকাল গল্পে বললাম।
– জি জি ইখলাস সাহেব তাকে ভালবাসতেন।
– এইতো মনে আছে। ওই মেয়ের কাছে যাওয়াআসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ওই মেয়েও তাকে খুব ভালবাসতো।ইখলাস সাহেব যে বিয়ে করেছেন, সেটা জানতে পারে। তারপর….. তারপর একদিন অফিসে এসে হাজির। ইখলাস সাহেবকে অনেক কথা বলেছিলো। তার সবকয়টি আমার মনে নেই। কিছুকিছু মনে আছে।
আমি আর ইখলাস সাহেব তার অফিসকক্ষে ব্যবসা সম্পর্কিত জরুরি কিছু কাজ করছিলাম।
পিওন এসে বলল – ইখলাস ভাই একজন মেয়েমানুষ আসছে। আপনার লগে দেখা করতে চায়।
ইখলাস সাহেব ইশারায় আসতে বলে দিলেন। যখন ওই মেয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো, আমরা দুজনই মোটামুটি অবাক।
ইখলাস সাহেব ঘামতে শুরু করলেন, এসির ঠাণ্ডা বাতাসেও।
জানো তো এসব মেয়েদের লাজলজ্জা কম থাকে।কী না কী বলে বসে তাই আমি উঠে চলে যাবো তখন ইখলাস সাহেব আমাকে বসতে বললেন।
মেয়ে বলল – বিয়ে করে আমাকে ভুলে গেলেন? এখন আর এই পুরাতন দেহের স্বাদ মিষ্টি লাগেনা?
ইখলাস সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললেন
– এসব নিয়ে পরে কথা হবে। এখন তোমার জায়গায় তুমি যাও।
– আপনি আজ প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে আমার কাছে আসেননি। কারণ টা কি জানতে পারি?
– হ্যা পারো। তবে এখানে না।
– কেনো না? আমার দেহের স্বাদ তো নিতে পারেন সেটা স্বীকার করতে পারেননা?
বউকেও তো ভোগ করেন। সেই একই তো হলো। স্বীকারোক্তি তেই তো পার্থক্য।
– বললাম না, এখানে এসব না।
– আমাকে সমাজে আপনার স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তা না হলে…..
– কী করবে শুনি?
– আমি আপনার বাচ্চার মা হতে চলেছি।
ইখলাস সাহেব বেশ বিরক্তি নিয়ে বললেন
– গাঁজাখুরি কথা বলবা না।
– ক্যান? আমার সাথে ঘুমান নাই আপনি?
– আচ্ছা তোমার কতো মাস চলে?
– ৫ মাস।
ইখলাস সাহেব হেসে বললেন
– তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। আমার আজ থেকে প্রায় ১ বছর আগেই ওই ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তারি পরীক্ষায় তাই ধরা পড়েছে। তোমার ওইধরনের কথা হাস্যকর।
জানেন নিদ্র মেয়েটা বেশ আস্তে আস্তে কথা বলছিলো। লাস্টের কথাগুলো শোনার পর মেয়েটার চেহারা দেখার মতো ছিলো। আর মেয়েটাও প্রথমে বলল ১ বছরের বেশি যায় না তার কাছে। পরে বলে ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট। হাস্যকর।
মেয়েটি রাগে ফুপাচ্ছিলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল
– তো ওই মা* খায়েশ মিটাও ক্যামনে?
সুফি সাহেব তিক্ত স্বরে নিদ্রকে বললেন
– বিশ্বাস করেন নিদ্র, আমি ছেলে হয়েও এধরনের বাক্য কখনো বলিনি বা ব্যবহার করিনি।
নিদ্র চোখ বুজে বলল
– আমি তো এই প্রথম শুনলাম।
চলবে…..!