তিনি এবং ও!
৩১.
সুফি সাহেব বড় এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে ফেললেন। পান করলেন ব্যাপার টা তার কাছে ঠিক মানায় না এভাবে পানি খাওয়ার সাথে। এই নিয়ে সে ১১ তম গ্লাসের পানি গিললেন। তার স্ত্রী ভীতিবিহ্বল হয়ে তার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। সাধারণত খুব টেনশন আর রাগ না হলে ১ ঘণ্টায় এতো পানি তিনি খান না।
দেড় ঘণ্টার মাথায় তিনি পানিবমি করতে শুরু করবেন। আধা ঘণ্টা পানিবমির পর সে সহ্যা নিবেন। মৌরি ঘটনাটা ঘটার সময় ঘড়ি ধরে মাপে। তার এই বাসায় আসার পর সুফি সাহেবের মাসে চার বার এমনকি পাঁচবার এরকম হয়।মৌরি এমন কিছু করে বসে তাতে সুফি সাহেবের টেনশন বাড়বে আর তা না হলে রাগেগরগর করবেন।
প্রতিবারই দেড় ঘণ্টা সময় নেন সুফি সাহেব সহ্যা নেয়ার।
সুফি সাহেবের স্ত্রী অবশ্য বুঝতে পারছেন, মৌরি নতুন অতিথির সাথে কিছু একটা করেছে তার ফলে তার স্বামী টেনশনে এরকম করছেন।
মানুষ টাকে সে খুব ভালবাসে আর সম্মান করে কিন্তু তার বোন কখনওই তাকে সম্মান করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মুখ ভেংচি কেটে কথা বলে।
বাসায় যে এতো কিছু ঘটছে তার দিকে নিদ্রের কোনো খেয়াল নেই। নিদ্র, নিদ্রায় ব্যস্ত। সকাল ৮ টা পর্যন্ত অদ্রির সাথে একনাগাড়ে কথা বলার পর তার ঘুম যেন পিছু ছাড়ছেই না।
সে বেহুঁশ এর মতো ঘুমাচ্ছে।
সকাল ৯ টায়,
সুফি সাহেব নিদ্রের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করবে ঠিক তখন খেয়াল করলেন, দরজা খোলা। এক হাতে ট্রেতে দু কাপ কফি নিয়ে নিদ্রের রুমে ঢুকলেন। নিজ হাতে অতিথির জন্য কফি বানিয়েছেন। বিছানার উপর নিদ্র চার হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে ঘুমুচ্ছে। সুফি সাহেব বুঝতে পারলেন, মৌরি কিছু একটা করেছে। খুব সাবধানে কপালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলেন উষ্ণতা।
তার মতে শরীর একটু গরম হওয়া মানেই জ্বর আসা।
মৌরি তাকে পুকুরে চুবায় নাই তো?
ঘুম থেকে টেনে তোলাও ঠিক হবে না। কী করা যায়?
কফি ওভাবেই ঘরের মধ্যে রেখে চলে এলেন তার ঘরে।
মৌরিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর কিছুই জানতে না পেরে আরো বেশি টেনশনে পরে যান।
জ্বর যদি মেয়াদে চলে যায়? তখন?
এভাবে একজন মেহমান কে বিপদে ফেলা টা ঠিক হলোনা।
তারপর থেকে তার টেনশন বাড়তে বাড়তে পানি খাওয়া বাড়লো।
তারপর আর কী? সেই ঘটনা চক্র আবার ঘটবে ।
লিলি দর্জি বাড়ি থেকে নতুন জামা কাপড় নিয়ে বেশ হাসিহাসি ভাবেই বাসায় আসলো।
এতক্ষণে আপামনির ঘুম থেকে উঠে যাওয়ার কথা। সকালের নাস্তা তাহলে রেডি। এতদূর হেটে এসে তার খুব খিদে পেয়েছে।
কিন্তু বাসার মধ্যে প্রবেশ করেই তার মনে হলো আপামনি ঘুম থেকে উঠে নাই।
সরাসরি দোতলায় উঠে অদ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো লিলি। দরজা খোলা ছিলো।
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো, অদ্রি ঘুমুচ্ছে। গভীর ঘুমে সে পরে আছে বিছানায়। হাতের মুঠোর মোবাইল।
বিছানার একপাশে জামাকাপড় রেখে লিলি রান্নাঘরে চলে এলো।
এভাবে এইপ্রথম সে আপামনিকে এভাবে দেখলো।
ঘুমন্ত মুখখানা দেখে তার মনে হচ্ছিলো সে হাসছে। হাসিটার মধ্যে আনন্দ খেলা করছিলো।
সুফি সাহেব পানিবমি করতে শুরু করলেন। তার স্ত্রী মৌরিকে রাগ করতে শুরু করলেন। মৌরি খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো।
নিদ্রের ঘুম ভাঙলো বাচ্চার কান্নার শব্দে।
তার মনে হচ্ছে ৫ মিনিট হয়েছে ঘুমিয়েছে।
চোখ খোলার সাথে সাথে তার ফোনালাপ এর কথা মনে পড়লো।
খুব ভালোই কেটেছে সময়। অন্ততপক্ষে ওই বিরক্তিকর মেয়ে থেকে দূরে থাকতে পেরেছে।
সুফি সাহেব বিছানার উপর পরে আছেন, নিদ্র তার পাশে লাল রঙের চেয়ারে বসে আছে।
নিদ্রকে সে হাজার বার প্রশ্ন করেছেন, সুস্থ আছেন কিনা?
নিদ্র তাকে কয়েকশ বার বলেছে, সে সুস্থ!
নিদ্রের এদিকে বাসায় যেতে হবে।
গতকাল রাতে পুরোটা গল্প বলে দিলেই হতো।
তাকে এভাবে আটকে থাকতো হতোনা। এই একমাত্র মানুষ যিনি ইখলাস সাহেবের ব্যাপারে ভালো ভাবে জানেন।
আর কেউ জেনে থাকলেও নিদ্রের জানা নেই।
সুফি সাহেব বললেন
– আমি আজকেই আপনাকে বলে দিবো। আমার যতটুকু জানা আছে জানাবো।
নিদ্রের বলতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু তারপরও বলল
– না আপনি সুস্থ হন তারপর……
– না, আজ রাতেই আমি আপনাকে ছুটি দিয়ে দিবো। মৌরি আপনাকে খুব জ্বালাচ্ছে। ও না এমনি। বাসায় ছেলে মেয়ে কেউই আসতে পারেনা আমাদের এখানে।
বলুন কী করবো?
– বিয়ে দিয়ে দিন।
– দিয়েছিলাম। পাগলামি মানে এসব যা করে সেই কারণে তালাক হয়ে গেছে।
– আবার বিয়ে দিয়ে দিন।
– মাথা খারাপ। ওকে বিয়ে দিয়ে অন্য পুরুষের জীবন নষ্ট করবো নাকি?
প্রথম জনের যে,অবস্থা হয়েছিলো। পাগলের ডাক্তার দেখাতে হয়েছিলো। জানি না এখন তার কী অবস্থা।
সুফি সাহেব আর নিদ্র আগের রাতের মতোই ছাদে বসে আছেন।
নিদ্র অধীর আগ্রহে বসে আছে।
সুফি সাহেব সিগারেট হাতে নিয়ে ঝিমুচ্ছেন।
চলবে…….!