তিনি এবং ও !
৩০.
২ টা প্রশ্ন নিদ্রের মাথার মধ্যে ব্যথার সৃষ্টি করেছে।
মাথাব্যথা যেন ক্রমশ বাড়ছে। প্রশ্নের উত্তর মৌরি আর সুফি সাহেব জানেন। এই কৃষ্ণ সুন্দরী কখনওই সত্য বলবে না। সুফি সাহেবকে এখন এইসময় বিরক্ত করতেও ইচ্ছে করছে না নিদ্রের।
কিন্তু প্রশ্ন দুটোর উত্তর তার চাই। তা না হলে মাথাব্যথা কমবে না।
খুব বিশ্রী একটা সমস্যা নিদ্রের। কোনো প্রশ্ন মাথার ভেতর প্রবেশ করলেই হয় একবার। সঠিক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তার স্বস্তি হবেনা। এমনকি এই নিয়ে বেশি চিন্তা করলে মাথাব্যথা শুরু হবে।
এরকম অবশ্য অনেকদিন পর হলো। নিদ্র জানে এখন রেস্ট নেয়াটা খুব দরকার তার।
মৌরি নিদ্রকে চিমটি কেটে বলল
– কী? ভয় করছে নাকি?
এভাবে গায়ে হাত দেয়াটা নিদ্রের বেশ অপছন্দ। তার উপর অসহ্যকর একটা মেয়ে তাকে ছুঁয়েছে।
নিদ্র বেশ শান্ত মেজাজে বলল
– একটা শর্ত দিবো। যদি পূরণ করতে পারেন তাহলে আমি আপনার সাথে ঘুরতে বের হবো।
মৌরি তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
– কী আবার শর্ত ? আর আমিই বা মানবো কেনো?
নিদ্র শান্ত কণ্ঠে বলল
– আমিই বা ঘুরতে যাবো কেনো? যান তো এখান থেকে! আমি ঘুমাবো।
– যাবোনা। কী করবেন?
নিদ্র মৌরিকে উপেক্ষা করে বিছানার উপর শুয়ে পড়লো। এমনভাবে বিছানায় শুয়ে রইলো যেন দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি উপস্থিত নেই।
মৌরি ঠিক বুঝতে পারছেনা কী করবে? এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে তার নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। এই প্রথম কোনো পুরুষ তাকে অগ্রাহ্য করলো। তাকে এতোটা অপমান করলো।
মৌরি খুব অস্থির অনুভব করছে। সে নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে দরজা আটকে দিলো।
নিদ্রের মাথাব্যথা কিছুটা কমেছে। অনেক কষ্টে সে তার প্রশ্নগুলোকে ঘুম পাড়িয়েছে। এখন সে ঘুমাবে।
হঠাৎ অদ্রির সেই লাল টকটকে চোখ দুটি তার মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠলো।
অদ্রির লাল টকটকে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। নিদ্র ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলো পানি না, লাল রঙের তরল পদার্থ। তার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে, চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে।
অদ্রির ওড়না, জামা সেই রক্তে লাল হয়ে উঠছে ধীরেধীরে।
একসময় হুট করেই ক্যানভাস থেকে পুরো দৃশ্যটা উধাও হয়ে গেলো।
যেমন করে এসেছিলো ঠিক তেমনভাবেই।
নিদ্রের ঘুম আর হলোনা।
সহ্যা ছেড়ে উঠে বসলো। রশিদ সাহেবকে ফোন দিলো।
এবার প্রথম রিং এ ফোন রিসিভ হলো। ফোনের ওপাশ থেকে রশিদ সাহেব ঘুমে জড়ানো কণ্ঠে বলল
– কী বাবা? কোনো সমস্যা হয়েছে?
নিদ্র যথাসাধ্য চেষ্টা করলো নিজেকে শান্ত রাখার। তারপর বলল
– চাচা অদ্রির মোবাইল নাম্বার টা দিবেন?
রশিদ সাহেব কোনো প্রশ্ন না করেই বলল
– আচ্ছা আমি ম্যাসেজে পাঠাচ্ছি।
ফোন কেটে দিয়ে রশিদ সাহেব মেসেজে অদ্রির নাম্বার পাঠিয়ে দিলো।
অনেক সাধনার পর ম্যাসেজ দেয়া সে শিখেছে।
তারপর আবারো ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের ঘোরে ছিলেন বলেই কোনো প্রশ্ন না করেই কাজটা করেছেন। জাগ্রত থাকলে নিদ্রকে বিরক্ত করেই নাম্বার দিতেন।
বিছানার উপর মোবাইল টা প্রায় চিৎকার করে জানান দিচ্ছে যে, অদ্রিকে কেউ ফোন করেছে।
অদ্রি জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জীবনের পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখছিলো।
একটু পরেই ভোর হবে। দিগন্ত রেখায় অগণিত আলোকরশ্মি তার আভা ছড়াবে। সেই আভা অদ্রির জীবনে কখনওই আসেনি।
তার দিকে শুধু অন্ধকারই ধেয়ে আসে। অন্ধকার তাকে দিনদিন আরো বেশি অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রথমে সে নিজেই চাইতেন অন্ধকারে ভেসে যেতে কিন্তু আজকাল তার সহ্যশক্তি কমে যাচ্ছে।
মোবাইল ৩ বারের মতোন জানান দিচ্ছে কেউ ফোন করছে। অদ্রি অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফোন রিসিভ করে শুকনো কণ্ঠে বলল
– হ্যালো।
নিদ্র কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। এসময় ফোন করেছে সে অদ্রি যদি রাগ হয়? নিদ্র আস্তে আস্তে বলল
– আমি নিদ্র বলছিলাম।
অদ্রি যেন তার কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। নিদ্র তাকে ফোন করেছে?সেও কি রাত জাগছে? আমার মতোই? না না এসব আমি কীসব ভাবছি, অদ্রি নিজেকে শুধরালো। অদ্রি বলল
– হ্যা বলুন।
নিদ্র আড়ষ্টভাবে বলল
– আমি খুব বাজে স্বপ্ন দেখেছি।আমার এই ঠাণ্ডা পরিবেশেও খুব গরম লাগছে।
অদ্রি বলল
– স্বপ্নটা আমাকে বলুন। দেখবেন ভয় কিছুটা কমে যাবে।
নিদ্র, অদ্রির কথায় কিছুটা সহজ হলো। নিদ্র বলল
– আপনি কেঁদেছেন আবার তাই না?
অদ্রি থতমত খেয়ে গেলো। কীভাবে নিদ্র বুঝলো? নাকি সে আন্দাজে বলেছে?
অদ্রি কোনো উত্তর না দেয়াতে নিদ্র বলল
– আপনার লাল টকটকে চোখ বেয়ে লাল রঙের রক্ত গড়িয়ে পরছে। আপনার সাদা কামিজ, ওড়না রঙিন হয়ে যাচ্ছে।
এই স্বপ্ন আমাকে ঘুমাতে দিলোনা।
অদ্রি বলল
– চোখেরজল কখনওই রঙিন হয়না। কারণ কষ্টগুলো তো জীবনকে ফ্যাকাসে করে দেয়। জীবনের রঙটাকে চুষে খেয়ে ফেলে রাখে ফ্যাকাসে জীবনটাকে। সেই চোখেরজল কী করে রঙিন হয় বলতে পারবেন নিদ্র???
চলবে…….!