তিনি এবং ও !
৩.
তাহলে এই মেয়েকে খুব সহজে রাগানো যাবে। মেয়েটার অভদ্র আচরণ কীরকম হতে পারে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে নিদ্রের। বড় বাটির এক বাটি নুডুলস নিয়ে নিদ্রের সামনে টেবিলে রাখলো। নিদ্র বলল
– চামচ ছাড়া খাবো কী করে?
মেয়েটা বলল
– আমি আনছি।
মেয়েটা চামচ এনে নিদ্রের সামনে রেখে বলল
– সকালে কী খাবেন?
নিদ্র চামচ বাটির মধ্যে দিয়ে বলল
– নুডুলস এতো ঝোল কেনো করলেন? এটা তো স্যুপ মনে হচ্ছে।
মেয়েটা বলল
– আপনি চুলায় যে পরিমাণ পানি দিয়েছিলেন তাতে ভাবলাম…….
– সকালে তো খাচ্ছি নুডুলস। দুপুরের জন্য রান্না করতে পারেন।
– কী কী খাবেন?
– বাংলাদেশী খাবার রান্না করবেন। এখন কী রান্না করবেন সেটা আপনার ইচ্ছা।
– একটা প্রশ্ন করবো?
নিদ্র নুডুলস মুখে দিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।
– আপনার নাম?
– নিদ্র। আপনার নাম টা বলবেন?আপনাকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে আমি ঝামেলায় পরে যাচ্ছি। বারবার মেয়েটি মেয়েটি বলতে হচ্ছে।
– আমাকে নিয়ে ভাবছেন? কিন্তু কেনো?
– সে পরে একদিন বলবো।
– আমার নাম অদ্রি।
– অদ্রি অদ্রি…….
অদ্রি কিছু একটা চিন্তা করে নিজেকে গুটয়ে নিলো।সে স্বভাবত এই বয়সের ছেলেদের সাথে কথা বলেনা।
এই লিলি, লিলি….? বলে অদ্রি সেই ১২-১৩ বছরের মেয়েটাকে ডাকতে লাগলো। নিদ্র বেশ মন দিয়েই নুডুলস খাচ্ছে। রান্না ভালো হয়েছে অন্ততপক্ষে তার চেয়ে। সে কোনোমতে পেট বাচানোর জন্য নুডুলস রান্না করতে পারে আর চা, কফি।
লিলি প্রায় দৌড়ে অদ্রির সামনে এসে দাঁড়ালো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
– বলেন আপা।
– আমার পানের বাটা কই?
নিদ্র বলল
– পানের বাটা কী?
লিলি বলল
– পানের বাটা হচ্ছে এমন একটা বাটি যেখানে পান খাবার সবরকম মশলা থাকে।
নিদ্র বলল
– পান খাবে কে? আমি ওসব খাইনা।
অদ্রি বলল
– আমি খাবো।
লিলি পানের বাটা এনে অদ্রিকে দিলো। অদ্রি পান বানিয়ে মুখে দিলো। অদ্রির মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারলো নিদ্র। নিদ্র বলল
– আপনার তো কষ্ট হচ্ছে। তাহলে খাচ্ছেন কেনো?
নিদ্রের কথার উত্তর দিতে গিয়ে অদ্রির পান গলায় ঠেকে যায়। এবং কাশতে শুরু করে।
অদ্রির এই অবস্থায় লিলি ইতস্ততভাবে দৌড়া দৌড়ী শুরু করলো। কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছেনা।
নিদ্র লিলিকে বলল
– পানি দাও।
লিলি এক গ্লাস পানি দিলো অদ্রির হাতে। এতকিছু হয়ে গেলো কিন্তু নিদ্র খুব স্বাভাবিক থাকলো। সে চেয়ার থেকে উঠলোই না। কিছু একটা সে ভাবছে।
দুপুরের খাবার নিদ্র একাই খেলো। কেউ তার সাথে খেতে বসলো না।লিলিকে ডেকে অদ্রির রুম কোনটা জেনে নিলো। খাওয়া শেষ করে দোতলার দক্ষিণ পাশের একদম কোণার ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় নক করলো। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে অদ্রি বলল
– কিছু লাগবে?
নিদ্র বলল
– আমাকে যে ঘরটা দেয়া হয়েছে ওটাকে আমি নিজের মতো সাজাতে পারি?
– হ্যা পারেন।
কথাটা বলেই নিদ্রের মুখের উপর দরজা আটকে দিলো। নিদ্র কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার নক করলো দরজায়। পূর্বের ন্যায় আবারো দরজা খুলে অদ্রি বলল
– কিছু বলবেন?
নিদ্র বলল
– আমি কি আমার মতো করে ঘরটাকে কালার করতে পারি?
অদ্রি বিরক্ত হয়ে বলল
– হ্যা পারেন।
দরজা আটকে দিয়ে অদ্রি ভাবলো এ আবার নক না করে?
আবারো দরজায় নক করলো নিদ্র। এবার দরজা খুলে বেশ রাগীস্বরে অদ্রি বলল
– কী সমস্যা আপনার? কী বলবেন সেটা একবারে বলা যায়না?
– আমি কি আমার ইচ্ছেমত আলমারি বা বুক সেলফ কিনে আনতে পারি?
– আপনার যা ইচ্ছা হয় করুন কিন্তু বাড়িঘর ভেঙে ফেলবেননা। আর প্লিজ কিছু বলার থাকলে বলুন।
– নাহ কিছু বলার নেই।
নিদ্র হাসতে হাসতে তার রুমে চলে গেলো। অদ্রি অবাক হয়ে তার চলে যাওয়া দেখছে। আর সে বুঝতে পেরেছে, আসলে ছেলেটা তাকে বিরক্ত বা রাগাতে চাচ্ছিলো। এবং ছেলেটি সফল ও হয়েছে।
চলবে…….!