তিনি এবং ও ! ২৮.

0
1917
তিনি এবং ও ! ২৮.
তিনি এবং ও ! ২৮.

তিনি এবং ও !

২৮.
নিদ্র বলল
– অদ্রি তো তেমন কিছুই বলেনি।
সুফি সাহেব হেসে বললেন
– উনি কখনওই অদ্রির সামনে বা বাসায় নেশা করতেন না। আর বিয়ে তো করেছিলেন অল্প বয়সী মেয়েকে। সেই মেয়ের সামনে ভদ্র সেজে বসে থাকতেন। অল্প বয়সী মেয়েরা আবেগ দ্বারা চালিত হয়। এদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কম থাকে।
অদ্রিও ঠিক তেমনি ছিলো।
বুঝেন ৪৫ বছরের লোক ১৮/১৯ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। বাপের বয়সী জামাই বুজঝেন?

নিদ্র সুফি সাহেবের প্রত্যেকটা কথায় শুধু অবাক হচ্ছে। মানুষের তো একটা সাধারণ জ্ঞান তো থাকে? এরকম মেয়ের বয়সী মেয়েকে? থাক এসব কোনো কথা না। আমাদের ধর্ম পাত্র – পাত্রীর বয়স নিয়ে এরকম কিছু বাধা দেয়নি।
মানুষ ভালো হলে যেকোনো বয়সের জীবনসঙ্গীর সাথে জীবন কাটানো যায়।
সুফি সাহেব সিগারেট ফেলে দিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বলতে শুরু করলেন
– প্রায় ২ মাস হয়েছে আমি ব্যবসার সাথে সংযুক্ত হয়েছি। অফিসে জরুরী মিটিং ছিলো যা শেষ হতে হতে রাত ১০ টা বেজে গেলো। আমি আর ইখলাস সাহেব বের হলাম সবার শেষে। বুঝেনই তো পার্টনারশিপ বলে কথা।
ইখলাস সাহেব আমাকে বললেন – চলো সুফি তোমাকে এক জায়গায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
আমি বললাম – আমার মা বাসায় একা। দেরি হলে তার কষ্ট হবে।
– আরে সুফি এই বয়সে যদি মা মা করো তাহলে কি আর চলে?
ওনার নিজস্ব গাড়ি ছিলো। গাড়িতে করে আমাকে নিয়ে উনি নিষিদ্ধপল্লীতে গেলেন।
উনি আমার দিকে দাঁত বের করে হেসে বললেন – চলো রসের মেলায় ঘুরে আসি।
আমি বললাম – আমি যাবোনা।
উনি ভ্রু কুঞ্চিত করে বললেন – কেনো হিজড়া নাকি তুমি? নাকি সমকামী? হিজড়া হলে তো খুবই খারাপ। জীবনের স্বাদ তো পেলা না।
আমি রেগে গিয়ে বললাম – আমার এসব পছন্দ না।
আমাকে জোড় করে টেনে নিয়ে গেলেন। কী যে বাজে পরিবেশ…..
সুফি সাহেব কী যেন ভাবলেন তারপর নিদ্রকে বললেন
– আপনার নামটাই তো জানা হলো না।
নিদ্র বলল
– আমার নাম নিদ্র।
– বাহ দারুণ নাম তো।
– তারপর কী হলো?
– তারপর আর কী? মেয়েদের বেহায়াপনা আর ইখলাস সাহেবের লুচ্চামি চোখের সামনে দেখতে হলো। তবে উনি মূলত একজন মেয়ের জন্য বেশি পাগল ছিলো। আর সেই মেয়ে যে কী পরিমাণ সুন্দরী আপনাকে বুঝাতে আমি পারবো না। এরকম সুন্দরী মেয়ে এই পরিবেশে বেমানান।
সেই মেয়ের কাছে উনি ইয়াবা সেবন করেই…… বুঝেনই তো।
নিদ্র বুঝতে পারলো না। সুফি সাহেবকে বললেন – আমি ঠিক বুঝলাম না।
– ড্রাগ সম্পর্কিত কোনো জ্ঞান আপনার আছে? মূলত ইয়াবা বিষয়ক?
– নাহ, আসলে কখনো ইন্টারেস্ট ফিল হয়নি।
– আমারো তেমন একটা জ্ঞান নেই। সিগারেট, গাঞ্জা এসব ব্যাপারেই একটু জানি। ইয়াবা সম্পর্ক এ ওনার কাছ থেকেই জানা।
ইয়াবার মধ্যে এক প্রকারের আছে যেগুলো সেক্স করার আগে সেবন করতে হয়। ওগুলো উত্তেজনাজনক মূলত। যাই হোক তুমি বাচ্চা ছেলে এতো জানতে হবেনা। তবে ওটার সাইড ইফেক্ট হচ্ছে, যে সেবন করবে তার একসময় পৌরষত্ব থাকবে না।
– ইখলাস সাহেবের কি তাই হয়েছিলো?
সুফি সাহেব প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল
– বাহ, ধরতে পেরেছো বটে।
– তাহলে বিয়ে করলেন কেনো?
– উনি বিয়ের ৬ মাস আগে থেকে বিভিন্ন ঝামেলার কারণে নারীসঙ্গ থেকে দূরে ছিলেন। এই কারণে নিজের অক্ষমতাটা ধরতে পারেননি। আর বিয়ের সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম মাকে নিয়ে।
– যদি থাকতেন, বিয়েটা ভেঙে ফেলতেন তাই না?
– হ্যা, অবশ্যই ভাঙতাম। এরকম ঠাণ্ডা মাথার শয়তানের সাথে কোনো মেয়েরই বিয়ে হওয়া ঠিক না।
– বিয়ের পর তো অদ্রিকে জানাতে পারতেন?
– উনি বিয়ের করেছেন সেটা আমাকে জানিয়েছেন বিয়ের ৬ মাস পর। বউকে তিনি বাসা থেকেই বের করতেন না। জানানোর কারণ টাও অতি বিশ্রী।
– আপনি সবকিছু খুলে কেনো বলেননি অদ্রিকে?
নিদ্রের কেনো যেন, সামনে বসে থাকা লোকটাকে সন্দেহ হচ্ছে। লোকটা মিথ্যে বলছে না তো?
সুফি সাহেব আরেকটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন
– আমাকে বিশ্বাস হচ্ছে না তো? আমি অদ্রিকে কখনওই একা পেতাম না। না হয় ওই কুটনি বুড়ি কান পেতে থাকতো না হয় সুফি সাহেব আমাকে ফোন দিতেন। সেই ফোন আমি রিসিভ করে রাখতাম। উনি আমাদের সকল কথাবার্তা শুনতেন।
নিদ্র বলল
– সেই বিশ্রী কারণটা জানতে পারি?
– অবশ্যই। অদ্রি বাচ্চাকাচ্চা চাইতো, বুঝেনই তো বিয়ে হলে মেয়েদের কোল ভরা চাই। আমাকে ইখলাস সাহেব একদিন বেশ আদরযত্ন করে খাওয়ালেন। তারপর বললেন, আমার বউটারে একটু সঙ্গ দাও সুফি।
কথাটা বলে উনি শয়তানের মতো করে হাসলেন।
আমি রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে বললাম – বুঝলাম না ঠিক কী বললেন?
– বুঝো না তুমি? আমার তো কিছুই নাই। এতো আকর্ষণীয় মেয়ে আমার পাশে বসে থাকে আর আমি কিছুই করতে পারিনা। আফসোস বুঝছো সুফি।
– তো আমি কী করতে পারি?
– এতো প্যাঁচানো বন্ধ করো তো। আমার বউটারে পটিয়ে যা করার করবা।
– আপনি তালাক দিলেই তো পারেন।
– মানুষ কী বলবে? আমার নানান কথা শোনার ইচ্ছে নেই।
– সেটা আপনার ইচ্ছা। কিন্তু আমি আপনার কথা মানতে পারবো না।
– তুমি আসলেই একটা হিজড়া।
নিদ্র সুফি সাহেবকে থামিয়ে দিয়ে বলল
– তো আপনি কেনো অদ্রির সাথে দেখা করলেন? আপনি তো চাইতেনই না তো কীভাবে কী?
নিদ্র অবিশ্বাসের সুরে কথাগুলো বলল।
সুফি সাহেব উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলেন। তারপর হাসি থামিয়ে বললেন
– শুনেন নিদ্র। আমি কখনওই মিথ্যা বলবো না আপনাকে। কারণ জানেন?
কারণ আপনাকে অদ্রি পাঠিয়েছে। আমার অভিমানী বোনটা পাঠিয়েছে। আমি তাকে কীভাবে মিথ্যা বলি?
হালকা চাঁদের আলোয় সুফি সাহেবের চোখের কোণায় জলকণা গুলোকে মুক্তোদানার মতো লাগছে।

চলবে……!

#Maria_kabir